প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা : আফরিন ইসলাম
পার্ট : ৮
সিজন :৩
খোলা আকাশের নিচে আর মুক্ত বাতাস ঘেরা পরিবেশে ভালোবাসার মানুষটার ঘাড়ে মাথা রাখতে কার না ভালো লাগে ৷ হোক সেটা ক্ষনিকের জন্য ৷তবুও ভালোবাসার মানুষের কাছে থাকতে খুব ভালো লাগে ৷ প্রীতি খুব শক্ত করে নির্ঝরকে ধরে রাখলো ৷নির্ঝরের কাধেঁ মাথা রেখে সময়টা অনুভব করতে লাগলো ৷ক্ষনিকের কাছে আসা যদি প্রেমিকা হৃদয়কে প্রশান্তি দেয় তাহলে ক্ষতি কি ৷ তবুও পিপাসা কাতর হৃদয়ে একটু সুখের সময় হয়ে আসুক ভালোবাসা ৷
কিছু সময় পর নির্ঝরের বাইক থেমে গেল ৷নির্ঝর বলল
আপনার বাসাটা কোথায় প্রীতিলতা ৷আপনার এলাকায় তো চলে এসেছি ৷কিন্তু এখন কোন দিকে যাব ৷
প্রীতির কোনো হুশ নেই ৷সে চোখ বন্ধ করে এখনো সময়টা অনুভব করছে ৷প্রীতির সাড়া শব্দ না পেয়ে নির্ঝর পেছনে তাকালো ৷আর প্রীতি এখনো নির্ঝরের কাধেঁ মাথা দিয়েই আছে ৷নির্ঝর হাতটা প্রীতির মাথায় রেখে ডাক দিল ৷
প্রীতি আপনি কি ঘুমিয়ে গেছেন ৷আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন আপনি ৷
নির্ঝরের কথায় প্রীতির হুশ ফিরলো ৷ সে খানিকটা থতমত খেয়ে গেল ৷তবুও নিজেকে সামলে নিল সে ৷ প্রীতি নিজের চুল ঠিক করে কিছুটা হাসলো ৷তারপর বলল
আপনাকে আর যেতে হবে না ৷আমি নিজেই যেতে পারবো ৷ আপনি এবার যেতে পারেন ৷ আমার বাসা কাছেই ৷আপনি আর কষ্ট করবেন কেন ৷
ঠিক আছে আপনি যেমন ভালো বোঝেন ৷আর হ্যা কাল কল করলে এখানে চলে আসবেন ৷আমরা একসাথে শপিং যাবো ৷
ওকে ৷
নির্ঝর আর কথা বাড়ালো না ৷ প্রীতিকে নিজের খেয়াল রাখতে বলে নির্ঝর রওনা দিল বাড়ীর দিকে ৷ আর প্রীতি নির্ঝরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল ৷
নির্ঝর চলে যেতেই প্রীতির মোবাইলে একটা কল এলো ৷প্রীতি ফোনটা রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে বলল
প্রীতি মা আমি ফাদার বলতে ছিলাম আশ্রম থেকে ৷
জ্বি ফাদার বলুন ৷বাচ্চাদের চিকিৎসার কি খবর ৷
বাচ্চাদের চিকিৎসার সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে ৷কয়েক জনের চিকিৎসা শুরু হয়ে গেছে ৷
খুব ভালো ৷ওদের স্কুলের কাজ কেমন চলছে ফাদার ৷
ঐটাও শুরু হয়ে গেছে ৷তুমি একদিন এসে দেখে যাও মা ৷
যাব একদিন সময় করে ৷এখন রাখছি কেমন ৷
প্রীতি ফোনটা রেখে সিআইডি অফিসের দিকে রওনা দিল ৷নির্মম ভাবে খুন করা খুনীকে খোজাঁ হচ্ছে ৷প্রীতিও সেই খুনীকে খুজছে ৷মানুষ কখনো নিজের ছায়াকে বন্দি করতে পারে না ৷কিন্তু সেই ছায়ার পিছনেই মানুষ যখন ছুটে চলে তখন ৷তখন তা নিজেকে আড়াল করার এক অভিনব কৌশল হয়ে দাড়ায় ৷অপরাধী অপরাধ করে ৷আবার অপরাধীকে ধরতেও চায় ৷ যেমনটা এখন প্রীতি করে যাচ্ছে ৷
রাত ঘড়িতে বারোটা ৷প্রীতি নিজের ঘরের বারান্দা থেকে কৌশলে বের হয়ে গেল ৷বাড়ী থেকে সরাসরি বের হতে গেলে সবার নজরে পড়বে ৷কেউ যাতে সন্দেহ না করে তাই লুকিয়ে বেড়িয়ে পড়লো প্রীতি ৷বাড়ী থেকে কিছুটা দূরে রাখা বাইকটাতে উঠে গেল ৷বাইকটা স্টার্ট দিয়ে নিজের উদ্দেশ্য পূরনে চলে গেল ৷প্রীতির বাইকটা যেয়ে থামলো বিশাল একটা বিল্ডিং এর সামনে ৷বিল্ডিংটা এখন অন্ধকারে ঢাকা ৷প্রীতি গেটের দিকে তাকিয়ে দেখলো দারোয়ান ঘুমিয়ে আছে ৷ দেওয়াল টপকে অতি সাবধানে ভেতরে ডুকলো সে ৷তারপর নিজের ব্যাগ থেকে কিছু জিনিস বের করলো ৷প্রীতি খুব সাবধানের সাথে চাবি ছাড়াই তালা খুলে ফেললো নিজের কলা কৌশলকে কাজে লাগিয়ে৷তারপর ভেতরে ঢুকে খুব সাবধানে দরজা লাগিয়ে দিল ৷কারন আর যাই হোক ধরা সে পড়বে না কোনো মতেই ৷
প্রীতি সিড়ি দিয়ে চার তলায় চলে গেল ৷সিসি টিভি যেখানে আছে সেখান থেকে প্রীতি যায় নি ৷তারমধ্যে অন্ধকার থাকায় কাজটা একটু সহজ হয়েছে তার জন্য ৷প্রীতি পুরনো ফাইল রাখার জন্য যেই স্টোর রুম আছে ঐখানে চলে গেল ৷প্রীতি তার প্রয়োজনীয় ফাইলটা খুজতে লাগলো ৷খুজতে খুজতে এক সময় সে হাপিয়ে গেল ৷এত এত ফাইল খুজে সেই ফাইলটা পেল না সে ৷দিশেহারা হয়ে যখন প্রীতি নিজের চুল খামচেঁ ধরল ৷ঠিক সেই সময় তার চোখ গেল সবার উপরে থাকা একটা ফাইলের দিকে ৷ফাইলটা ধুলোয় ঢেকে গেছে ৷প্রীতি পাশে থাকা ছোট টুল টা দিয়ে উপরে উঠলো ৷তারপর ফাইলটা নামিয়ে আনলো ৷হাত দিয়ে উপরে পরে থাকা ধুলো গুলো সরিয়ে নিল সে ৷তারপর ফাইলটা খুলতেই তার চোখ চকচক করে উঠলো ৷হ্যা এটাই সেই ফাইল যার জন্য আশরাফ খান তার বাবাকে ছাড়ে নি ৷যেটার জন্য তার বাবাকে মরতে হয়ে ছিল ৷চৌদ্দ বছর আগে এই ফাইলটাই তাদের বাসা থেকে নিয়ে এসে ছিল আশরাফ খান ৷ এই ফাইলের প্রতি পাতায় তার বাবার সাথে করা অন্যায়ের প্রমান আছে ৷প্রীতি ফাইলটা নিজের ব্যাগে ভরে নিল ৷প্রীতি নিজের মুখটা ঢেকে নিল ৷তারপর বেড়িয়ে গেল ৷সব কিছুই ঠিক ছিল কিন্তু সমস্যা হলো যখন সে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচ তলায় এলো ৷তার সামনে গার্ড দাড়িয়ে আছে বন্দূক নিয়ে ৷মূলত প্রীতি ভেতরে যাওয়ার অনেকক্ষন পরে গার্ডের ঘুম ভেঙ্গে যায় ৷সে ঘুম থেকে উঠে ভেতরে আসে পানি খেতে ৷কিন্তু একি তালা যে খোলা ৷তাহলে কি ভেতরে কেউ আছে ৷গার্ড দ্রুত আশরাফ খানকে কল করে ৷আর নিজে বন্দুক নিয়ে দাড়িয়ে থাকে ৷কারন ক্রিমিনাল আর যাই হোক তাকে পালাতে হলে নিচেই আসতে হবে ৷কেননা উপর থেকে পালানোর কোনো রাস্তা নেই ৷গার্ড প্রীতিকে বলল
আর এক পা নড়লে একদম গুলি করে দেব ৷ স্যার এসেই তোর ব্যবস্থা করবে ৷
চলবে…..