#গল্পের_নাম_ভালোবাসাময়_প্রহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:১৪
তন্নি পার্কে বসে আছে তখনই একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে বয়স ৬/৭ বছর সে এসে তন্নিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~আ’ই মিস ইউ তন্নি।
তন্নি মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~আমিও তোমাকে অনেক মিস করেছি আমার সোনা।
অতঃপর দুজনই পার্কের চেয়ারে বসে নানান কথা বলছে কিছুক্ষন পর সেখানে একজন বয়স্ক মহিলা উপস্থিত হলো।সেই মেয়েটি মহিলাটিকে দেখে হাতের ইশারায় তাদের কাছে আসতে বললো মহিলাটি তন্নির কাছে পাশের চেয়ারে বসে হাপিয়ে হাপিয়ে বললেন,
~প্রভা,তুমি আমাকে একা ফেলে এভাবে চলে আসলে কেন?
রাত বুঝতে পারলো সেই মেয়েটির নাম প্রভা। প্রভা মুখে হাত দিয়ে হেসে হেসে বললো,
~দেখেছো তন্নি দাদী বুড়ো হয়ে গেছে।
বলেই হি হি করে হেসে উঠলো তন্নি প্রভার গাল টেনে বললো,
~তুমি তো অনেক দু/ষ্ট।
প্রভা বললো,
~আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তোমার সাথে তো আমার কোনো কথা নেই ৩দিন তুমি আমার সাথে দেখা করো নি।
তন্নি কান ধরে প্রভার সামনে হাঁটু গে/ড়ে বসে বললো,
~সরি আর এরকম হবে না।
প্রভা হেসে তন্নির কান থেকে হাত সরিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
~তুমি তো জানো দাদী আর তন্নি ছাড়া প্রভার জীবনে কেউ নেই।
প্রভার কথা শুনে তার দাদী আর তন্নির চোখে পানি টলমল করে উঠলো।রাতের মনটাও নিমিষে খা/রা/প হয়ে গেলো এতটুকুন একটা বাচ্চা মেয়ের মুখে এতো বড় একটা কথা রাত সিদ্ধান্ত নিলো সে তন্নিকে সব জিজ্ঞেস করবে।তন্নি চোখের কোন মুছে প্রভার হাত ধরে বললো,
~আজ থেকে তুমি আর দাদী দুজনই আমার সাথে থাকবে আমার বাসায়।
প্রভা বেশ খুশি হয়ে গেলো কথাটা শুনে প্রভার দাদী বললেন,
~না না এসব তুমি কী বলছো?
তন্নি বললো,
~দাদী প্রভা আমার বোন আমি ওকে খুব ভালোবাসি সেদিন রাতে যখন ও আমায় ফোন দিয়ে কা/ন্না করলো আমি সেদিনই ঠিক করে ফেলেছিলাম প্রভা আর আপনি আমার সাথে থাকবে।
আমি বাবা, মা, আপুর সাথেও কথা বলে নিয়েছি তারা বলেছে আপনাদের আজকেই আমাদের বাসায় চলে আসতে।
প্রভার দাদী কিছু বলবে তার আগে রাত আড়াল থেকে বের হয়ে বললো,
~আমাদের বাসায়ও আসতে পারেন এতে তন্নি হেরে যাবে আর আমাবস্যার রাত জিতে দেবে।
তন্নি পিছন ফিরে দেখলো রাত দাড়িয়ে আছে তাকে দেখে তন্নি একটু অবাকই হলো সে বললো,
~রাত ভাইয়া,তুমি এখানে?
রাত প্রভাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
~এতো পরীর মতো একটা মেয়ের সাথে দেখা করতে তুই একা একা আসতি আমাকে নিয়ে এলে কী হতো?
প্রভা রাতের গলা জড়িয়ে বললো,
~তুমিই সেই আমাবস্যার রাত?
রাত হেসে প্রভার গাল টিপে বললো,
~হ্যাঁ আমিই আমাবস্যার রাত।
তন্নি দাদীকে উদ্দেশ্য করে বললো,
~দাদী, আপনি আর প্রভা আজই আমার সাথে যাবেন। আমি আপনাদের নিয়ে যাবো আর আপনাদের জিনিসপত্র কাউকে পাঠিয়ে দিবো নিতে।
রাত বললো,
~আমার গাড়িতে চলো সবাই।
তন্নি অমত করলো না সবাই গাড়িতে উঠে বসলো রাত গাড়ি স্টার্ট দিলো তন্নি প্রভা আর দাদীর সাথে কথা বলতে ব্যস্ত।রাত আড়চোখে তন্নিকে দেখছে তার মনে হচ্ছে তন্নি হুট করে বড় হয়ে গেছে।রাত এ ভেবে সস্বতির নিশ্বাস ছাড়লো যে তন্নির কারো সাথে কোনো রিলেশন নেই।বাসায় পৌছে সবাই নেমে পরলো তন্নি প্রভা আর দাদীকে ভিতরে দিয়ে এসে রাতের কাছে এসে বললো,
~তুমি কীভাবে জানলে আমি সেই পার্কে গিয়েছি?
রাত বললো,
~ওখান দিয়ে যাচ্ছিলাম তোকে দেখলাম তাই সেখানে দাড়িয়েছিলাম।
তন্নি বললো,
~মিথ্যে কথা তুমি অন্য কিছু মনে করেছো।
রাত বললো,
~এসব কিছুই না তুই বল প্রভার কাহিনি কী?
তন্নি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~১বছর আগে তন্নির বাবা-মায়ের মৃ/ত্যু হয় বাস আ্য/ক/সি/ডে/ন্টে।তখন থেকে দাদী আর প্রভা এই পৃথিবীতে একা ল/ড়া/ই করছে।আমার সাথে প্রভার দেখা হয় কলেজে আসার পথে এই ছোট্ট মেয়েটি ফুল হাতে দাড়িয়ে ছিল অনেক খারাপ লেগেছিলো পরে তার ব্যাপারে সব জানলাম এই হচ্ছে প্রভার গল্প।
রাত তন্নির সকল কথা শোনার পর তাকে জড়িয়ে ধরলো এতে তন্নি একটু অবাক হলো রাত তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~তুই বড় হয়ে গেছিস তন্নি খুব বড়।
রক্তিম অধরাকে নিয়ে বাসায় পৌছে নিজ হাতে অধরাকে খাইয়ে দিলো এরপর তাকে শুইয়ে দিয়ে নিজে ফ্রেশ হয়ে এসে অধরার পাশে শুয়ে পরলো।অধরা ঘুমে বিভোর রক্তিম তার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে রক্তিম অধরার কপালে,গালে ঠোঁট ছুইয়ে বালিশে মাথা এলিয়ে দিলো তখনই দরজায় কেউ টোকা দিলো রক্তিম অতি সাবধানে উঠে দরজা খুলে দেখলো তার মা দাড়িয়ে আছে মুখটা মলিন করে।রক্তিম রুম থেকে বের হয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বললো,
~মা কী হয়েছে?
রক্তিমের মা বললেন,
~দিবা এসেছে সাথে একটা ছেলেও এসেছে।
রক্তিম মুচকি হেসে বললো,
~দিবা বিয়ে করেছে মা সেই ছেলেকে তারা ২দিন পর আমেরিকা চলে যাবে।
রক্তিমের মায়ের মুখে আবার হাসি ফুটলো সে বললো,
~আমি তো ভ/য় পেয়ে তোর কাছে চলে আসলাম যাই রান্নাঘরে জামাইর জন্য রান্না করি।
রক্তিম বললো,
~আমি অধরাকে নিয়ে আসছি।
রক্তিম অধরাকে জাগিয়ে তুললো এরপর তাকে নিয়ে দিবার কাছে। অধরাকে দিবা দেখে অবাক হলো অতঃপর রক্তিম তাকে সব বুঝিয়ে বললো সব কথা শুনে অধরা খুশি হয়ে গেলো।রোদ্দুর একটা ব্যাগ বের করে অধরাকে দিয়ে বললো,
~আপনার জন্য উপহার বিয়ের সময় তো উপস্থিত থাকতে পারিনি তাই এখন দিয়ে দিলাম।
অধরা বললো,
~আমি তো আপনাদের কিছুই দিতে পারলাম না।
রক্তিম বললো,
~সমস্যা নেই ওদের যখন বেবি হবে সেসময় দিয়ে দিবো।
বেবির কথা শুনে দিবা লজ্জা পেয়ে বললো,
~বেবির কথা আসলো কোথা থেকে এসব পরে ভাববো আমরা।
রাত আর তন্নি প্রভাকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলো প্রভাকে দেখে অধরা ছাড়া সবাই একটু অবাক হলো।প্রভা গিয়ে সোফায় বসে পরলো রক্তিম রাতকে বললো,
~এই মেয়েটা কে?
রাত রক্তিমকে সব বলে দিলো রক্তিম তন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~খুব ভালো কাজ করেছিস তুই।
তন্নি মুচকি হাসলো তারা সবাই আড্ডায় মেতে উঠলো সাদিয়াও তাদের সাথে আড্ডায় বসে পরলো। রক্তিম দিবাকে একা ডেকে বললো,
~দিবা,কালকে আমি সব প্রমাণ হাতে পেয়ে যাবো আর কোর্টে দিয়ে আসবো।
দিবা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~কালকে আমি চলে যাবো রক্তিম।
রক্তিম বললো,
~তুমি ২দিন পর যাচ্ছিলে?
দিবা বললো,
~নাহ রক্তিন এই শহরটা আমার কাছে বি/ষা/ক্ত লাগছে তাই জলদি চলে যাচ্ছি।
রক্তিম বললো,
~যেটা ভালো মনে করো তোমরা।
রাতের খাবারের পর দিবা আর রোদ্দুর চলে গেলো রক্তিম অধরা রুমে এসে শুয়ে পরলো দুজনই ক্লান্ত তাই ঘুমিয়ে পরলো।রাতের চোখে আজ ঘুম নেই হঠাৎ করেই তার তন্নির কথা অনেক মনে পরছে সে বিছানা ছেড়ে উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।একবার ভাবলো ফোন করবে কিন্তু পরক্ষনেই এ চিন্তা বাদ দিলো পুরো রাত সে না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিলো।
সকালবেলা রক্তিম রির্পোট নিতে চলে যায় ডাক্তার সকল রির্পোট দেখে বললেন,
~মিস্টার রক্তিম আপনার ওয়াইফ একদম ঠিক আছে সে যখন পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে আপনারা চাইলেই বেবি প্ল্যানিং করতে পারবেন।
রক্তিম মুচকি হেসে বললো,
~ধন্যবাদ ডাক্তার।
বলেই সে রির্পোট নিয়ে সোজা থানায় চলে গেলো আগের সেই ডাক্তারের নামেও কে/স করলো পুলিশ অফিসার তাকে ভরসা দিলো খুব দ্রুতই পদক্ষেপ নিবে।রক্তিম আজ অনেক খুশি সবকিছু একদম ঠিক হয়ে গেছে কোনো সমস্যা আর বাকি নেই এখন বউ সুস্থ হলেই হানিমুনে দৌড় দিবে সে।
১মাস পর,
অধরা এখন পুরোপুরি সুস্থ সেই খুশিতে সে আজ নিজেই নেমেছে রান্না করতে।রক্তিম অফিসে তাই তাকে সারপ্রাইজ দিতে সে নেমে পরেছে তন্নিকে বলেছে রুমটা ভালো মতো সাজাতে।সকল রান্না শেষে অধরা রক্তিমের দেওয়া সেই শাড়িটা পরে নিলো নিজেকে সাজিয়ে নিলো সে রক্তিমের মা অধরা আর রক্তিমের খাবার রুমেই পাঠিয়ে দিলো।অধরা এখন শুধু রক্তিমের অপেক্ষা করছে রাত ১২টা গাড়ির আওয়াজ শুনে অধরা গিয়ে দরজার সামনে দাড়ালো সবাই ঘুমিয়ে পরেছে।কলিংবেল বাজতেই সে দরজা খুলে দিলো রক্তিম মুখ তুলে অধরার দিকে তাকাতেই সকল ক্লান্তি চলে গেলো সে বললো,
~আজ কী আমায় ঘা/য়ে/ল করার জন্য এভাবে সেজেছো।
রক্তিমের কথা শুনে অধরা লজ্জা পেয়ে গেলো রক্তিম ব্যাগটা সোফায় ফেলে অধরাকে কোলে তুলে নিলো অধরা বললো,
~কী করছেন নামান আমায়?
রক্তিম কোনো কথা না বলে রুমের দিকে চললো হয়তো তাদের “ভালোবাসাময় প্রহর” চলে এসেছে।
চলবে