ভয়ংকর সে পর্ব-২৬+২৭

0
286

#ভয়ংকর_সে #পর্ব_২৬
#M_Sonali

সকালের নাস্তা শেষ করেই, দশটার মধ্যে শ্রাবনের সাথে বেরিয়ে পড়েছে সবাই। সকলের উদ্দেশ্য শ্রাবণের বাড়ি। রতন মিয়া এবং রত্না বেগমকে থামানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছে চাঁদনী। সে কিছুতেই চায় না তারা ওদের সাথে আসুক। কিন্তু তাদের সাথে কিছুতেই পেরে ওঠেনি সে। আর তাছাড়া তার কথা কেউ বিশ্বাস করছেনা। চাঁদনী যেন এক আকাশ টেনশন মাথায় নিয়ে বসে আছে গাড়িতে। তার মাথায় শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরছে। যার উত্তর পাচ্ছেনা সে। শ্রাবণ তার বাবা এবং দাদির সাথে কি করতে চলেছে? কি উদ্দেশ্য আছে তার।

ওকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে শ্রাবণ হালকা গুতা দিয়ে বলে উঠলো,

“এত চিন্তা করো না। তুমি যেটা ভাবছো তার কোনো কিছুই হবে না। রিলাক্সে থাকো চাঁদ পাখি।”

চাঁদনী ওর কথায় বেশ অবাক হলো। ওর মুখের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকালো। কিন্তু মুখে কিছু বলল না। আবার ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি রাখলো। এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো সে। কিছুক্ষণ পরেই চাঁদনী খেয়াল করল তার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। সে রতন মিয়া ও রত্না বেগমের দিকে তাকিয়ে দেখল তারা অলরেডি ঘুমিয়ে পড়েছে। চাঁদনী অনেক চেষ্টা করল নিজের ঘুমটাকে তাড়ানোর। কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠলো না। কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমের দেশে হারিয়ে গেল সে।

ওরা সবাই ঘুমিয়ে পড়তেই শ্রাবনের মুখে ফুটে উঠল রহস্যময় হাসি। সে চাঁদনীর কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে মনে মনে বলল,

“চাঁদ পাখি তোমার দেখার জন্য অনেক কিছু বাকি সামনে। তোমার সাথে এমন কিছু ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে যার ধারণাও তোমার নেই।”

কথাগুলো ভেবে রহস্যময় হাসি দিল সে। সাথে সাথে চোখগুলো জ্বলজ্বল করে উঠলো তার।
,
,
,
গাড়িতে জোরে একটা ঝাকি লাগায় ঘুম ভেঙে গেল সবার। সবাই দ্রুত ধড়ফড়িয়ে ওঠে তাকাল সামনের দিকে। দেখলো তারা একটি বিশাল বড় বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িটা এতটাই সুন্দর যে এর আগে যেন তারা এমন বাড়ি কোথাও দেখেনি। চাঁদনী বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল বাড়িটার দিকে। সেইসাথে ভয়ে তার শরীরের প্রতিটা লোম দাঁড়িয়ে গেল। সে বুঝতে পারছে না তারা কোথায় চলে এসেছে। চাঁদনী বাড়ির দিক থেকে চোখ সরিয়ে আশেপাশে দৃষ্টিপাত করল। দেখল বাড়িটার চারিপাশে শুধু গাছপালা দিয়ে ভরা। কোথাও কোনো জনমানবের চিহ্ন নেই। সে বুঝতে পারল না বাড়িটা আসলে কোথায়।

তখনই পাশ থেকে রতন মিয়া বলে উঠলো,

“শ্রাবণ বাবা আমরা কোথায় এসে পড়েছি। এটা কোন জায়গা? আর এই বাড়িটা কার। এত সুন্দর বাড়ি আমি জীবনেও দেখিনি।”

উনার কথার উত্তরে শ্রাবণ মৃদু হাসল। গাড়ি থেকে নিচে নেমে দাঁড়িয়ে বাড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,

“এটাই আমার বাড়ী বাবা। আপনারা আমার বাড়িতে এসেছেন। দীর্ঘ এক দিন জার্নি করার পর এখানে এসে পৌঁছেছেন আপনারা।”

ওর কথা শুনে যেন আরো বেশি অবাক হয়ে গেলো সবাই। সবাই হা করে তাকিয়ে রইল সামনের দিকে। রতন মিয়া আবারও প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বললো,

“দীর্ঘ একদিন মানে? আমরা একদিন ঘুমিয়েছি?”

“হ্যাঁ বাবা আমরা গতকাল সকালে রওনা দিয়েছিলাম। আজ সকালে এসে পৌঁছেছি।”

ওর কথায় কি বলবে ভেবে পাচ্ছি না কেউ। রতন মিয়া এবং রত্না বেগম একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। সেই ফাকে চাঁদনী গাড়ি থেকে নেমে শ্রাবণের পাশে এসে দাঁড়াল। সে চারদিকে চোখ বুলিয়ে একবার দেখে নিল। শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

“এই বাড়ির আশেপাশে কোন বাড়িঘর নেই কেন? আর এই বাড়িটা কোথায় অবস্থিত? মানে বাংলাদেশের কোথায় এটা?”

ওর প্রশ্নে শ্রাবণ মৃদু হাসলো। ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে আবারো বাড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,

“এটা চিটাগাং এর একটি দুর্বৃত্ত এলাকায় অবস্থিত। এখানে আশেপাশে অনেক দূর দূরান্ত অব্দি কোন বাড়িঘর নেই।”

কথাটি বলেই একটি রহস্যময় হাসি দিল শ্রাবণ। তারপর আবারও বাড়ির দিক থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারলো। কিন্তু ওর এই চোখ টিপ যেনো চাঁদনীর শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বইয়ে গেল। অজানা আতঙ্কে কেপে উঠলো তার মনটা। ততক্ষণে রতন মিয়া এবং রত্না বেগম গাড়ি থেকে নেমে এসে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। শ্রাবন আর সময় বিলম্ব না করে বলে উঠলো,

“আপনারা কি এভাবে বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকবেন? চলুন ভিতরে যাওয়া যাক। কিছু খেয়ে বিশ্রাম করবেন।”

কথাটি বলেই সে হাঁটা শুরু করল সামনের দিকে। ওকে হাটতে দেখে কোনো উপায়ান্তর না দেখে তারাও ওর পিছু পিছু হাটতে লাগলো। যদিও চাঁদনীর যেন পা উঠছে না সামনে এগোতে। নিজের জন্য নয় সবচাইতে বেশি ভয় পাচ্ছে দাদি এবং বাবার জন্য। কি হতে যাচ্ছে সেটা ভেবেই যেন শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে তার।

বাড়ির বাইরে থেকে যতটা সুন্দর ভিতরটা যেন তার চাইতেও মারাত্মক সুন্দর। বাসার মধ্যে ঢুকতেই যেন অবাক এর শীর্ষে পৌঁছে গেল সবাই। রতন মিয়া ও রত্না বেগম হা করে এদিক ওদিক তাকিয়ে থাকতে শুরু করলো। কিন্তু চাঁদনী এসব দেখে মোটেও গলছে না। তার মনে যেন যতটা সময় যাচ্ছে তত ভয় বেড়ে যাচ্ছে। সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা শ্রাবণ কি করতে যাচ্ছে।

সকলের ভাবনায় ছেদ কাটিয়ে শ্রাবন বলে উঠলো,

“আপনারা সবাই ফ্রেশ হয়ে আসুন। খাবার রেডি করা আছে। সবার হয়তো অনেক ক্ষুধা লেগেছে। পুরো এক দিন জার্নি করে এসেছি সবাই।”

ওর কথার উত্তরে সবাই ওর দিকে ফিরে তাকাল। টেবিলের দিকে তাকিয়ে যেন আরো বেশি অবাক হয়ে গেল। পুরোটা টেবিল ভরে নানা রকম খাবার সাজিয়ে রাখা। ফলমূল থেকে শুরু করে রান্না করা খাবার সবকিছুই আছে। এবার চাঁদনী সুযোগ বুঝে প্রশ্ন করে উঠল,

“এ বাসায় তো অন্য কাউকে দেখছি না। তাহলে এত খাবারের আয়োজন কে করল শ্রাবণ?”

ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ কিছু বলার আগেই ভেতর থেকে দুজন লোক বেরিয়ে আসতে আসতে বলল,

“এসব কিছুর আয়োজন আমরা করেছি ম্যাম। স্যার আমাদের আগেই ফোন করে বলেছিল আপনাদের আসার কথা। তাই সবকিছু রেডি করে রেখে দিয়েছি। যেন আপনাদের এসে কোনো কষ্ট করতে না হয়।”

লোক দুটির দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হলো চাঁদনী। কারণ লোক দুটিকে দেখে মনে হচ্ছে তারা কোন ভ্যাম্পায়ার নয়। তারা সত্যি কারের মানুষ। হয়তো বাবুর্চি। তারা বাবুর্চির মতোই পোশাক পড়ে আছে। বোঝাই যাচ্ছে এসব কিছুর আয়োজন তারাই করেছে। চাঁদনী আর বলার মত কোন ভাষা পেলো না। কিন্তু রত্না বেগম এবং রতন মিয়াকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তারা ধীরে ধীরে ভীষণরকম অবাক হচ্ছে। সেইসাথে হয়তো কিছুটা সন্দেহ বাসা বেধেছে তাদের মনে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

#ভয়ংকর_সে #পর্ব_২৭
#M_Sonali

শ্রাবণের বাসাতে দুইজন বাবুর্চি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন কাজের লোক রয়েছে। যারা সবাই কোন না কোন কাজে নিযুক্ত। তাদের মধ্য থেকে একজন রত্না বেগম এবং রতন মিয়া কে তাদের রুম দেখিয়ে দিলো। ফ্রেশ হওয়ার জন্য। কিন্তু ওনারা এক রুমেই ঢুকে গেল দুজন। রুমের মাঝে ঢুকে রত্না বেগম বেশ গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,

“রতন তুই কিছু বুঝতে পারছিস? আমার যেন কেমন সব কিছু সন্দেহজনক লাগছে।”

উনার কথার উত্তরে রতন মিয়া জানালার কাছে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,

“কিসের সন্দেহ মা? কি বলতে চাইছো তুমি?”

রত্না বেগম ও উনার পিছু পিছু গিয়ে জানালার কাছে দাড়ালো। বাইরের দিকে দৃষ্টি রেখে দেখল শুধু গাছ আর গাছ চারিপাশে। তাছাড়া অন্য কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এবার রত্না বেগম গম্ভীর গলাতেই বলতে শুরু করল,

“তুই আমার কথা বিশ্বাস করিস আর না করিস। কিন্তু আমার মন বলছে কোন না কোন গড়বড় নিশ্চয়ই আছে। চাঁদনী সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলেনি। আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আমাদের জামাই মানে শ্রাবণ এর মাঝে কোন একটা ঝামেলা নিশ্চই আছে। চাঁদনীর কথা শোনার পর থেকেই আমার কিছুটা সন্দেহ ছিল। কিন্তু সে সন্দেহটা আরো প্রবল হচ্ছে সময় বাড়ার সাথে সাথে।”

এত টুকু বলে থামলেন উনি। উনাকে থামতে দেখে রতন মিয়া একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে উঠলেন,

“সন্দেহ যে আমার হচ্ছে না তেমন কিন্তু নয় মা। আমার বারবার মনে হচ্ছে জামাই এর মাঝে কোন গড়বড় আছে। কিন্তু তাই বলে কি আমাদের চাঁদনীর কথা মেনে নিলে চলবে বলো? ও তো শ্রাবণকে একদম ভ্যাম্পায়ার বলে চালিয়ে দিচ্ছে। কোন মানুষ কি কখনো ভ্যাম্পায়ার হতে পারে? আর তাছাড়া ভ্যাম্পায়ার বলতে দুনিয়াতে কিছু নেই। এটা বেশ ভালো করেই জানি। তাহলে ওর কথার উপর ভিত্তি করে তো জামাইকে সন্দেহ করতে পারি না। এমনও তো হতে পারে আমরা যেসব ভাবছি তেমন কিছুই নয়। শুধু শুধু আমরা ওকে সন্দেহ করছি। আচ্ছা যাই হোক। তারপরেও আমি দেখছি জামাইয়ের খোঁজখবর নিয়ে। তার ওপর কড়া নজর রাখবো। তুমি চিন্তা করো না।”

ওনার কথায় বেশ আশ্বস্ত হলেন রত্না বেগম। কিন্তু তবুও ওনার মনের সন্দেহটা গেল না। সেও মনে মনে ঠিক করল শ্রাবণের উপর নজর রাখবে। যেভাবেই হোক সত্যিটা খুঁজে বের করবে।

তারপর সবাই ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে চলে গেল। খাওয়া দাওয়া করতে। সবাই টেবিলের চারপাশে গোল হয়ে বসে খাবার খেতে শুরু করল। খেতে খেতেই রতন মিয়া শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আচ্ছা বাবা তোমাকে একটি কথা জিজ্ঞেস করবো করবো বলে করা হয়নি। বলছি তুমি যে বললে যে তোমার দাদা তোমাকে অনেক সম্পত্তি দিয়ে গেছেন। এবং একটি পাঁচতলা বাড়ি ও। কিন্তু তখন তো এটা বলোনি যে তোমার সেই বাড়িটা এতদূরে। যেখানে কি না একদিনের রাস্তা পার হয়ে আসতে হয়!”

উনার কথার উত্তরে শ্রাবণ মুচকি হেসে স্বভাবিক ভাবে উত্তর দিলো,

“আসলে বাবা তখন তো সেভাবে আপনাদের সাথে কথা হয়নি। আর আপনি ওরকম ডিটেইলস জিজ্ঞেস করেননি। তাই বলা হয়নি। যাইহোক বাড়িটা আপনাদের পছন্দ হয়েছে তো।”

ওর কথার উত্তরে রতন মিয়া কিছু বলার আগেই পাশ থেকে রত্না বেগম বলে উঠল,

“হ্যা নাতজামাই তা আমাদের বাড়িটা অনেক পছন্দ হয়েছে। কিন্তু তুমি একটা কথা বলতো, যেখানে পুরো এক দিন অর্থাৎ 24 ঘন্টার রাস্তা পার হয়ে এখানে এসেছি। আমরা কি তাহলে গাড়ির মধ্যে পুরো 24 ঘন্টাই ঘুমিয়ে ছিলাম? এতটা সময় কখনো ঘুম পাড়া সম্ভব না। তবুও আমাদের একবারের জন্যও ঘুম ভাঙলো না কেন বলোতো?”

উনার কথার উত্তরে এবারও শ্রাবণ স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিল,

“আসলে দাদি কি বলুন তো, আপনারা হয়তো অনেক বেশি ক্লান্ত ছিলেন। আর ওই গাড়িটা ছিল এসি লাগানো। তাই গাড়িতে আরামছে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছেন। আর শুধু আপনাদের কি বলবো আমি নিজেও তো ঘুমাতে ঘুমাতে এসেছি। জানেন ড্রাইভার না থাকলে হয়তো গাড়িতে ঘুমিয়েই পার হয়ে যেত আমাদের।”

কথাটি বলেই হেসে দিল শ্রাবণ। কিন্তু তবুও যেন রত্না বেগমের মন ভরল না। সে আবারও প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলে উঠলো,

“আচ্ছা সব কিছুই বুঝলাম তুমি যেটা বলছো হয়তো সেটাই সত্যি। কিন্তু আমি একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারছি না। তোমার দাদু যদি সত্যিই বাড়িটা তোমাকে দিয়ে থাকে। তাহলে তো বাড়িটা অনেক পুরনো হওয়ার কথা। কিন্তু এই বাড়িটার প্রতিটা দেওয়াল সবকিছু একদম ঝকঝকে চকচকে। কোন জায়গায় যেন পুরনো হওয়ার কোন চিহ্ন টুকুও নেই। যেন একদম নতুন তৈরি করা হয়েছে বাড়িটা।”

“আসলে দাদি আপনি ঠিকই বলছেন। এই বাড়িটা একদম পুরনো ছিল। কিন্তু আপনাদের প্রথমবার আমার বাড়িতে নিয়ে আসব বলে আমি বেশ কিছু লোক লাগিয়ে নতুন করে রং করিয়েছি সবকিছু। তাই এমন নতুনের মত লাগছে। তা ছাড়া আর কিছুই নয়।”

ওর কথার উত্তরে কেউ কিছু বলার আগেই সকলের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে চাঁদনী বলে উঠল,

“আচ্ছা আপনার কথা না হয় সব কিছুই আমরা মেনে নিলাম। কিন্তু আপনি এটা বলুন, আপনার দাদু বাংলাদেশে এত জায়গা থাকতে এমন একটা জায়গায় এসে বাড়ি করেছিল কেন? এ বাড়ির আশেপাশে তো কোন জনমানবের চিহ্ন টুকুও নেই। শুধু গাছপালা আর জঙ্গলের মতো। এটা আসলে কোন জায়গায় সেটাও সঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছে না।”

ওর এমন প্রশ্নে শ্রাবণ মৃদু হাসল। কারণ সে ভাল করেই জানে চাঁদনী জেনে বুঝে তাকে এমন প্রশ্ন করেছে। যেন সবার মনে তার প্রতি সন্দেহ হয়। সে আবার স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিয়ে রতন মিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

“আসলে বাবা উকিলের মুখে শুনেছি আমার দাদু নাকি নিরিবিলি অনেক পছন্দ করতেন। উনি একজন প্রকৃতি রসিক মানুষ ছিলেন। আর তাই এমন একটি প্রকৃতির মাঝে বাড়ি করেছেন তিনি। নিরিবিলি স্থানে। আপনারা খাওয়া-দাওয়া করে উঠুন। আপনাদের নিয়ে পুরো এলাকাটা ঘুরে আসবো। এলাকাটা খুব সুন্দর। আশেপাশে কোন বাড়িঘর না থাকলেও বেশ কিছুটা দূরে অনেক বাড়িঘর রয়েছে। সাথে সমুদ্র দেখিয়ে আনব। সবাই তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া করে নিন। চলেন সবাই মিলে ঘুরতে যাব।”

ওর এমন কথায় চাঁদনীর আর কিছু বলার জায়গা থাকল না। সে কোনভাবেই ওর আসল রূপটা তার বাবা এবং দাদির সামনে আনতে পারছে না। সেই সাথে এটাও বুঝতে পারছে না শ্রাবণ আসলে কি করতে চাইছে।

সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বেড়িয়ে পড়ল এলাকা ঘুরে দেখার জন্য। বাইরে গিয়ে পুরো এলাকাটা ঘুরে দেখানো শ্রাবণ। সত্যিই এলাকাটা অসম্ভব সুন্দর। ওদের বাড়ির আশেপাশে বাড়িঘর না থাকলেও কিছুটা দূরে গেলে অনেক বাড়িঘর বাজার সবই আছে। বাইরে থেকে ঘুরে এসে রতন মিয়া ও রত্না বেগমের মনের সন্দেহ দূর হয়ে গেল। তারা আবারো শ্রাবনের কথায় বিশ্বাস করে নিল। চাঁদনী শত চেষ্টা করেও তাদের বোঝাতে পারলাম না ওর আসল রূপটা।
,
,
,
তিন দিন পর,
আজ রতন মিয়া এবং রত্না বেগম চলে গেছে নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। চাঁদনীকে সেখানেই রেখে গেছেন। যাওয়ার আগে অবশ্য শ্রাবণ বারবার করে বলেছিল সাথে গিয়ে এগিয়ে দিয়ে আসবে। কিন্তু রতন মিয়া বলছে ড্রাইভার তাদের পৌঁছে দিয়ে আসবে। উনাদের ইচ্ছেমত ডাইভারের সাথে গাড়িতে করে পাঠিয়ে দিয়েছে ওনাদের। গত তিনদিন অনেক ভালোভাবে কেটেছে সকলের। রতন মিয়া ও রত্না বেগমের বিশ্বাসটা যেন আরো বেশি প্রকট হয়ে গেছে শ্রাবনের উপর। কারণ এ কয়েক দিনে সে তাদের বিশ্বাস অর্জন করেছে। চাঁদনীর কথা হয়তো আর কোনদিন বিশ্বাস করবে না কেউ। কিন্তু এ কয়দিনে অদ্ভুত ভাবে শ্রাবণ স্বামীর অধিকার নিয়ে ওর কাছে যায়নি। বরং ওর থেকে দূরে দূরে থেকেছে।

বাবা এবং দাদি চলে যাওয়ায় জানালার ধারে চুপচাপ মন খারাপ করে বসে আছে চাঁদনী। নানা রকম প্রশ্ন বাসা বেঁধে আছে তার মনে। সে যেমন ভেবেছিল তেমন কিছুই হয়নি। বরং এই কয়েকদিনে চাঁদনীরও মনে হয়েছে যে শ্রাবণ কোনো ভ্যাম্পায়ার নয়। সে একজন সাধারন মানুষ। তার আচরণগুলো ঠিক তেমনি ছিল। তবুও মনের ভিতরকার খুঁতখুঁতানি কোনোভাবেই দূর হয়নি তার। সে জানলার ধারে বসে একমনে তাকিয়ে আছে বাইরে থাকা গাছপালা গুলোর দিকে। মনটা তার ভীষণ রকম খারাপ।

হঠাৎ তীব্র ঠান্ডা বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ে গেল চাঁদনীর। সে হালকা কেঁপে উঠল। আশেপাশে চোখ মেলতেই দেখল শ্রাবণ মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চাহনিতে নেশা ভরা। এমন চাহনি দেখে বেশ ভরকে গেল চাঁদনী। সে উঠে দাড়িয়ে সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে ওর হাত চেপে ধরলো শ্রাবণ। একটানে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো ওকে। মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো এক হাত দিয়ে সরিয়ে কানের পিঠে গুঁজে দিল। আবেগী গলায় বললো,

“এভাবে পালাচ্ছো কেন? আর কত পালাবে আমার থেকে? এখন তো আমি ছাড়া তোমার আশেপাশে আর কেউ নেই। এখন অন্তত একটু ভালবাসো!”

চাঁদনী কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না। কারণ ঠান্ডায় তার কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। শ্রাবণের শরীরটা অসম্ভব রকমের ঠান্ডা। যেন একটি মৃত শরীর জড়িয়ে আছে তাকে। শ্রাবণ সেটা বুঝতে পারলো। দ্রুত তাকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেল। হালকা মন খারাপ করে বললো,

“স্যরি চাঁদ পাখি। আমার শরীর একটু বেশি’ই ঠান্ডা। তুমি সহ্য করতে পারবে না।”

কথাটি বলে মন খারাপ করে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেল শ্রাবন। ওকে এভাবে চলে যেতে দেখে বেশ অবাক হলো চাঁদনী। সেইসাথে আরো বেশি অবাক হলো একটি কথা ভেবে। এর আগেও শ্রাবণ তাকে স্পর্শ করেছে। তার কাছাকাছি এসেছে। কিন্তু কখনই এত ঠান্ডা অনুভব হয়নি তার। তাহলে আজ কেন তার শরীরটা এত বেশি ঠান্ডা। যে সে তাকে সহ্যই করতে পারছে না। কথাগুলো ভেবে অবাক হলো সে। তবুও কোন কিছু না ভেবে সে আবার জানালার ধারে বসে বাইরে দৃষ্টিপাত করল।

ওর রুম থেকে বেরিয়ে সোজা একটি বদ্ধ রুমের সামনে এসে দাঁড়াল শ্রাবণ। রুমটার দরজায় তালা দেওয়া। সে এদিক-ওদিক তাকিয়ে পকেট থেকে চাবি বের করে তালা টা খুলল। রুমের মাঝে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো ভেতর থেকে। লাইট জ্বালাতেই দেখা গেল পুরো রুমের মাঝে তাকে তাকে নানা রকমের বই সাজিয়ে রাখা। সে এগিয়ে গেল সামনে থাকা একটি পুড়নো বই এর কাছে। বইটা হাতে তুলে নিল সে। বইয়ের উপরে একটি ভয়ানক ভ্যাম্পায়ারের মুখের ছবি আকা। তার উপর হাত বুলিয়ে সেটা খুলল। তারপর একে একে পৃষ্ঠা উল্টে মাঝখানে একটি পৃষ্ঠায় গিয়ে আটকে গেল সে। খুব মনোযোগ সহকারে কিছু একটা পড়লো। তারপর বইটা নিয়ে আগের জায়গায় রেখে মুহূর্তেই ভ্যাম্পায়ারের রুপ ধারণ করলো সে। আগের চাইতে এখন অনেক বেশি ভয়ানক দেখতে লাগছে তাকে। এই মুহূর্তে তার রক্ত চাই-ই চাই। সে দ্রুত জানালা খুলে জানালা ভেদ করে একটি বাঁদরের রূপ নিয়ে উড়ে গেল।

এত দ্রুত গতিতে উড়ে যাচ্ছে যে প্লেন ও তার সাথে পারবেনা। উড়তে উড়তে একটি জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে থামল সে। সেখানে গিয়ে আবারও ভ্যাম্পায়ার রূপে ফিরে এলো। আশে পাশে তাকাতেই দেখল একটি বিশাল জঙলি মহিষ ঝাক। তারা পাতা খাচ্ছে। সে আর দেরী না করে দ্রুত ছুটে গেল সেই মহিষগুলোর কাছে। আর একটি মহিষকে ধরে নিজের ধারালো দাঁত গুলো ঢুকিয়ে দিলো তার গলায়। মুহূর্তের মাঝে মহিষের শরীরের সমস্ত রক্ত চুষে নিলো। সাথে সাথে মহিষটা সেখানে পড়ে মারা গেল। মহিষটার অবস্থা দেখে আশেপাশের মহিষগুলো ভয়ে এদিক ওদিক ছুটতে লাগলো।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

রিচেক করা হয়নি বানানে ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই। ধন্যবাদ