মনের উঠোন জুড়ে পর্ব-১৫

0
401

#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_১৫

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-” সাহিত্য কি প্রিয়া কে ভালোবাসে আবৃত্তি ম্যাম?”

-” আর ইউ ক্রেজি শিক্ষা? ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া হোয়াট ডিড ইউ সে? তোর ভাগ্য ভালো যে তুই প্রশ্ন টা আমাকে করেছিস,ভাইয়া কে নয়। ভাইয়া যদি তোর এই কথা শুনতো এতোক্ষণে তোর জিভ টেনে ছিঁড়ে দিতো।”

-” ভুল তো কিছু বলি নি আমি।প্রিয়া আপুর বাড়ি গিয়ে আমি সবটা নোটিশ করেছি। সাহিত্য বারবার প্রিয়ার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিলো। এমনকি সাহিত্য যখন ব‌উয়ের কথা বললো তখন ও প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলেছিলো।”

-“ভাইয়া তো আমার দিকে ও তাকাচ্ছিলো ।তার মানে তো এটা নয় যে ভাইয়া যার যার দিকে তাকিয়েছিলো তাকে তাকে মিন করে কথাটা বলেছিলো।তোকে সবসময় আমি চালাক ভাবতাম কিন্তু তুই যে এতো বোকা এটা জানতাম না। অনেক সময় আমরা নিজেদের চোখে যা দেখি সেটা সঠিক হয় না শিক্ষা।তোর ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। হ্যাঁ ভাইয়া প্রিয়ার দিকে তাকাচ্ছিলো এটা দেখার জন্য যে প্রিয়া পাখির দিকে গরম চোখে তাকিয়ে আছে কিনা?তাকে বকা দিচ্ছে কি না ?ভাইয়া আমাকে আর প্রিয়া কে কখনো আলাদা করে দেখে না।প্রিয়া কে নিজের আরো একটা বোন মনে করে। প্রিয়া নিজেও ভাইয়াকে সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে। তাছাড়া প্রিয়া আমাদের সাথে পড়ে এমন কোনো ছেলে কে ভালোবাসে।যার ব্যাপারে আমাকে কখনো কিছু বলে নি। কিন্তু আমি সেটা বুঝতে পেরেছি। প্রিয়া খুবই সহজ ,সরল ভালো একটা মেয়ে। আর তুই তাকে সন্দেহ করছিস। ছিঃ শিক্ষা তোর থেকে এটা আমি আশা করি নি। কিন্তু শিক্ষা একটা বিষয় আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না।”( লেখিকা নূন মাহবুব )

-” কি?”

-” বাই এনি চান্স ভাইয়া যদি প্রিয়া কে পছন্দ করেও তোর সমস্যা কোথায়? তুই কি প্রিয়ার প্রতি জেলাস ফিল করছিস?”

-” মোটেই না।”

-” ওহ্ এই ব্যাপার ? তাহলে সেদিন প্রিয়াদের বাড়িতে ভাইয়া যখন বিয়ের কথা বলছিলো তখন কে ভাইয়া কে মেসেজ দিয়েছিলো ?”

-“শিক্ষা আমতা আমতা করে বললো আমি জানি না।আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন?”

-” আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম তুই ভাইয়া কে মেসেজ করে বলেছিলি যে ,কারো যদি ব‌উয়ের দরকার হয় আরো তিনটা বিয়ে করতে পারে। আমার তার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই।এর অর্থ দ্বারা কি বোঝানো হয় শিক্ষা? আবৃত্তি শিক্ষার থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে বললো, জানি এই প্রশ্নের উত্তর তোর কাছে নেই।বিকজ তুই ভাইয়ার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছিস? ইনফ্যাক্ট দূর্বল হবারি কথা। কারণ তোরা যে একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ।যে বন্ধনে দুই পক্ষ না চায়লে ও এক পক্ষ অপর পক্ষের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে।যাই হোক রাত প্রায় এগারোটা বাজতে চলেছে।আ’ম ফিলিং ভেরি স্লিপিং। আমি ঘুমোতে গেলাম। তুই ভাইয়ার জন্য একটু অপেক্ষা কর। ভাইয়া এক্ষুনি চলে আসবে।আর হ্যাঁ এখন থেকে আমাকে আবৃত্তি ম্যাম নয়, আবৃত্তি আপু বলে ডাকবি। আফটার অল আমি তোর দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র ননা .. আবৃত্তি বাকিটা বলার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো।বেলের আওয়াজ শুনে আবৃত্তি বললো, বোধহয় ভাইয়া এসেছে। আমি উপরে যাচ্ছি। তুই গিয়ে দরজা খোল। শিক্ষা এসে দরজা খুলে দেখে সাহিত্য বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কেমন যেন বিধ্বস্ত, রাগান্বিত মনে হচ্ছে।হয়তো কোনো কারণে রেগে আছে। সাহিত্যের এই অবস্থা দেখে শিক্ষা জিজ্ঞেস করলো, আপনার কি হয়েছে সাহিত্য? সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো? শিক্ষার কথায় পাত্তা না দিয়ে সাহিত্যে হনহন করে নিজের রুমে চলে গেল। প্রায় দশ মিনিট পরে শিক্ষা সাহিত্যের রুমে খাবার নিয়ে এসে দেখে সাহিত্য ল্যাপটপে কাজ করছে। শিক্ষা বিছানার পাশে রাখা ছোট টেবিলের উপর খাবার রেখে দরজার বাইরে পা রাখার আগেই সাহিত্য এসে শিক্ষা কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো, বাবা তোকে ভার্সিটি তে কি জন্য পাঠিয়েছে‌ শিক্ষা?”

-” ভার্সিটি তে মানুষ কেন যায়? নিশ্চয় পড়াশোনা করার জন্য যায়। আমি ও তার ব্যতিক্রম ন‌ই।”

-” হ্যাঁ পড়াশোনা করার জন্য পাঠিয়েছে।তার মানে এটা নয় যে পড়াশোনার নাম করে তুই ছেলেদের হাত ধরে ঘুরে বেড়াবি, তাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলবি। তাদের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করবি।তুই তো দেখছি অনেক ফাস্ট।মাত্র দুই দিন ভার্সিটি তে গিয়েছিস এর‌ই মধ্যে বয়ফ্রেন্ড জুটিয়ে ফেলেছিস?দ্যাটস গ্ৰেট।”

-“শিক্ষা চিৎকার করে বললো মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ। সত্যি টা না জেনে আপনি আমার উপর মিথ্যা অভিযোগ করতে পারেন না সাহিত্য।”

-” চিৎকার করবি না শিক্ষা। কোনটা মিথ্যা বলছি আমি? আমি নিজে চোখে দেখেছি তুই একটা ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলি।তার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলি।”

-“আমার যা ইচ্ছা হয় তাই করবো। আপনার সমস্যা কোথায়?”

-” তোর ইচ্ছা মতো তুই চলতে পারবি না শিক্ষা।”

-” আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য ন‌ই। আমার মন যা বলবে আমি তাই করবো।”

-” অবশ্যই তুই বাধ্য।বিকজ আ’ম ইউর হাজব্যান্ড ।”

-” হা হা হা ।হাসালেন মিস্টার সাহিত্য শিকদার। হাজব্যান্ড অর্থ জানেন তো? শুধু মাত্র তিন কবুল আর একটা কাগজে নিজের নাম লিখে দিলেই স্বামী হ‌ওয়া যায় না। স্বামী হচ্ছে একটা বিশ্বাস ভরসার জায়গা। কিন্তু আপনি কি করলেন?আমাকে বিশ্বাস করা তো দূরের কথা আমাকে ক্রি’মি’না’ল খু’নি মনে করেন।কোনো অপরাধ না করেও আপনার চোখে আমি অপরাধী। প্রতিনিয়ত আমাকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করান।আর এখন আসছেন স্বামীর অধিকার ফলাতে। লজ্জা হওয়া উচিত আপনার।”

-“হ্যাঁ আমি তোকে ক্রি’মি’না’ল খু’নি মনে করি। এর পিছনে যথেষ্ট কারণ আছে।তাই বলে আমি যে তোর স্বামী এইটা তো তুই অস্বীকার করতে পারিস না।”

-” হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি আমার স্বামী।আজ থেকে তিন মাস বিশ দিন পঁয়তাল্লিশ মিনিট চব্বিশ সেকেন্ড আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু সেই বিয়ে ছিলো শুধুমাত্র নামের বিয়ে।বিয়েতে না আপনি রাজি ছিলেন না আমি।বিয়েটা সম্পূর্ণ ঐ জাকিয়া বুড়ির প্ল্যান ছিলো।ঐ বুড়ি বিয়ের আগে বাংলা সিনেমার দাদীদের মতো এমন ভাব করলো যেন আ’জ’রা’ই’ল তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে তার জান কবজ করে নিয়ে যাবে। আমাদের বিয়েটা দেখে সে শান্তি তে ম’র’তে চায়। কিন্তু যেই বিয়ে টা হলো তক্ষুনি বুড়ি আমার জীবন টা নষ্ট করে দিতে নিজে সুস্থ্য হয়ে গেল। তাছাড়া আপনি বাসর রাতে বলে দিয়েছিলেন ,এই সম্পর্কের কোনো মূল্যে নেই আপনার কাছে। আপনি সংসারের মায়ায় কখনো পড়তে চান না। সত্যি বলতে আমি নিজেও হাঁফিয়ে উঠেছি। আমি আর এই মিথ্যে সম্পর্ক বয়ে বেড়াতে পারছি না।আই জাস্ট কান্ট টেক ইট এনি মোর। আমি মুক্তি চাই এই মিথ্যে সম্পর্ক থেকে ।”

-” সাহিত্য রেগে গিয়ে শিক্ষার গাল চেপে ধরে বললো, মুক্তি পাওয়ার এতো তাড়া কিসের? ওহ্ বুঝতে পেরেছি ভার্সিটি গিয়ে নতুন নতুন ছোঁয়া পেয়েছিস তাই তো এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে চায়ছিস? তবে তুই ও কান খুলে শুনে রাখ আমি তোকে মুক্তি দিবো না। বিষ যখন পান করেছিস গলা তো জ্বলবেয়। এভাবেই জ্বলে পুড়ে ছারখার হতে থাকবি তুই।আমি বেঁচে থাকতে আমার থেকে মুক্তি পাবি না তুই। আমি কখনো মুক্তি দিবো না তোকে।মাইন্ড ইট।”

-“শিক্ষা তৎক্ষণাৎ সাহিত্যে কে কিক মে’রে নিচে ফেলে সাহিত্যের বুকের উপর চড়ে তার গলায় ছু’রি ধরে বললো,বিষ তো শুধু আমি একা পান করি নি, তুই ও করেছিস।তাই হিসাবমতে জ্বলতেও দুজনকেই হবে। তুই খুব ভালো করে জানিস মুখের সাথে সাথে সাথে আমার হাত ও খুব ভালো চলে। তুই আমাকে আঘাত করবি,আর আমি মুখ বুজে সহ্য করবো? নেভার।আমাকে করা প্রত্যেক টা আঘাত তোকে আমি ফিরিয়ে দিবো।একটু আগে তুই কি জানি বললি? ও হ্যাঁ তুই বেঁচে থাকতে আমি তোর থেকে কখনো মুক্তি পাবো না তাই তো? তাহলে এক্ষুনি ম’রা’র জন্য প্রস্তুত হ। আমি এখন এই মুহূর্তে তোর থেকে মুক্তি চাই।”

-“সাহিত্য কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো ,কি চায়ছিস তুই?”

-” তোর র’ক্ত দিয়ে গোসল করতে। তবেই আমার শান্তি মিলবে।”

-“কে তুই?”

-“তোর মৃ’ত্যুদূত অফিসার, তোর মৃ’ত্যুদূত বলে সাহিত্যের গলা বরাবর ছু’রি চালিয়ে দিলো শিক্ষা। মূহুর্তের মধ্যে তাজা র’ক্তে রঞ্জিত হলো সাদা সাদা টাইলস।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।।