মনের উঠোন জুড়ে পর্ব-১৯

0
340

#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_১৯

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-” আই লাভ ইউ নির্জন ভাই। আপনি কেন বুঝেন না আমি আপনাকে কতোটা ভালোবাসি? আপনাকে ঠিক কতোটা নিজের করে চাই? শিক্ষার মধ্যে কি এমন আছে যা আমার মধ্যে নেই?আই রিয়েলি লাভ ইউ বলে আবৃত্তি নিজের ফোনে থাকা নির্জনের একটা ছবি বুকের মাঝে কিছুক্ষণের জন্য চেপে রেখে বললো,মনে হচ্ছে আপনি বাস্তবে আমার সাথে রয়েছেন।আপনাকে হয়তো সামনাসামনি এই কথাগুলো বলার সাহস কখনোই আমার হবে না।তাই তো রোজ রাতে আপনার ছবির সাথে আমি কথা বলি।ছবির সাথে কথা বলেই যেন আমি সুখ খুঁজে পাই। কিন্তু আপনি যে অন্য কারো মাঝে সুখ খুঁজতে ব্যস্ত থাকেন নির্জন ভাই।যা অন্যায়। শিক্ষা বিবাহিত।আর এই সত্যিটা আমি খুব শীঘ্রই আপনার সামনে নিয়ে আসবো।আপনার আর আমার মাঝে একটাই দেয়াল রয়েছে ।সেটা হলো শিক্ষা। কিন্তু একবার যদি ভাইয়া আর শিক্ষার মধ্যে মাখোমাখো প্রেম টা জাগিয়ে দিতে পারি ,তাহলে আমার রাস্তা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।তখন আমার আর নির্জনের মাঝে কোনো বাধা থাকবে না। নির্জন ভাই আপনি শুধু আমার হবেন , একান্তই আমার। কিন্তু ওরা দুজন একজন তেল আর একজন পানি।তেল আর পানি কখনো এক হয় না এইটা আমি খুব ভালো করে জানি। কিন্তু যেভাবে হয় হোক ওদের দুজনকে আমার এক করতেই হবে। কিন্তু কিভাবে আমি এই তেল আর পানি কে এক করবো? উফ্ কিছু বুঝতে পারছি না বলে আবৃত্তি মাথা ধরে বিছানায় বসে পড়ে। তৎক্ষণাৎ আবৃত্তির ফোন বাজছে শুরু করে। ফোনের স্ক্রিনে বর্ণ নামটা জ্বলজ্বল করতে দেখে আবৃত্তি মুচকি হেসে বলে, ইয়েস আইডিয়া পেয়েছি।এই বর্ণ মির্জা আমাকে সাহায্য করবে তেল আর পানি কে এক করতে । আবৃত্তি ফোন রিসিভ করে বলে, আই নিড ইউর হেল্প বর্ণ।প্লিজ হেল্প মি।”

-” এইভাবে বলছো কেন আবৃত্তি? তোমার জন্য আমি নিজের জীবন টাও বিলিয়ে দিতে পারি। সেইখানে সামান্য সাহায্য করতে পারবো না এইটা তুমি ভাবলে কি করে? বলো না হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?”

__________________________________

-” রাতে সাহিত্য বাড়ি ফিরে কোথাও শিক্ষা কে দেখতে না পেয়ে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে কাজ করছে এমন সময় আবৃত্তি খাবার নিয়ে সাহিত্যের রুমে আসে। আবৃত্তি কে দেখে সাহিত্য বললো, তুই খাবার এনেছিস কেন? শিক্ষা কোথায়?”

-” শিক্ষা দাদুর রুমে। দাদু আজ আবার বাথরুমে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে। শিক্ষা তেল গরম করে মালিশ করে দিতে গিয়েছে। তুমি কি এতো কাজ করো বলো তো? সারাদিন অফিসে পড়ে থাকো। আবার রাতে ফিরে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ো। শুধু কাজ কাজ করে বেড়ালে হবে? নিজের শরীর, নিজের আপনজনের ও খেয়াল রাখতে হবে। খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। তুমি তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।”

-” তুই টেবিলের উপর রেখে যা।আমি খেয়ে নিবো।”

-” আবৃত্তি খাবার টেবিলের উপর রেখে না গিয়ে ঠাঁয় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলো।যা দেখে সাহিত্য বললো,কি ব্যাপার? যাচ্ছিস না কেন? তোকে তো বললাম আমি পরে খেয়ে নিবো।”

-” একচুয়ালি ভাইয়া তোমাকে কিছু বলার ছিলো।”

-” আমার কান খোলা আছে। তুই বলতে থাক।”

-” আমার ফ্রেন্ড বর্ণ কে কি তুমি চিনো? ঐ যে মন্ত্রীর ছেলে।ওর বোন নম্রতা তোমার সাথে কাজ করে।”

-” হ্যাঁ চিনি তো। কিন্তু কি হয়েছে?”

-” বর্ণ শিক্ষা কে পছন্দ করে। ইনফ্যাক্ট ভালোবাসে। শিক্ষা কে বিয়ে করতে চায়। তুমি তো আর শিক্ষা কে ভালোবাসো না।তাকে স্ত্রীর মর্যাদা ও দাও না। তুমি হয়তো শিক্ষা কে কিছুদিন পরে ডির্ভোস ও দিয়ে দিবে। তখন মেয়েটার কি হবে একবার ও ভেবে দেখেছো?বর্ণ শিক্ষার ব্যাপারে সবকিছু জানার পরেও শিক্ষা কে বিয়ে করতে চায়ছে।আমি ভাবলাম বিষয় টা তোমাকে জানানোর দরকার তাই বললাম।বর্ণ সত্যি অনেক ভালো ছেলে। পার্সোনাল ভাবে বর্ণ কে আমারো ভালো লাগে।”

-” তোর যখন এতোটা ভালো লাগে নিজে বিয়ে কর না। অন্যের ব‌উকে কেন এসবের মধ্যে টেনে আনছিস?পুরান পাগলের ভাত নেই, আবার নতুন পাগলের আমদানি ‌হয়েছে।”

-” কি বললে তুমি? অন্যের ব‌উ মানে? তুমি শিক্ষা কে নিজের ব‌উ বলে স্বীকার করছো ভাইয়া?”

-” মানে আমি বলতে চাইছি যেভাবেই হোক শিক্ষার সাথে আমার বিয়ে টা হয়েছে।এটা তো আমি অস্বীকার করছি না।তাকে ব‌উ বলে মানলে ও সে আমার স্ত্রী আর না মানলেও সে আমার স্ত্রী।আর র‌ইলো ডির্ভোসের কথা। তুই খুব ভালো করে জানিস আমাদের বংশে দ্বিতীয় বিয়ে করার কোনো নিয়ম নেই।তাই শিক্ষা কে ডিভোর্স দেওয়ার কোনো প্রশ্নেই আসে না।তবে শিক্ষা যদি না থাকতে চায় , আমি কখনো ওকে জোর করবো না।কারণ জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসা,সংসার এসব কিছু হয় না। আমার মনে হয় শিক্ষা আমার সাথে থাকতে চায় না।তাই তো বর্ণ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসার সাহস পেয়েছে।”

-” আবৃত্তি জিভ কে’টে বললো ,হায় আল্লাহ! এসেছিলাম তেল আর পানি কে এক করতে এখন দেখছি আমার জন্যই তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। আবৃত্তি আমতা আমতা করে বললো, শিক্ষা ভালো মেয়ে ভাইয়া। তুমি বরং শিক্ষার সাথে একবার কথা বলে সব ঠিকঠাক করে নাও।”

-” আমি শিক্ষার সাথে অনেক অন্যায় করেছি‌।ওর কাছে যাওয়ার কোনো মুখ নেই আমার। তবু ও আজ আমি শিক্ষা কে সরি বলতে চেয়েছিলাম । কিন্তু শিক্ষা ইগো দেখিয়ে নিজে না এসে তোকে পাঠিয়েছে।সব বুঝি আমি। দিন দিন আমার বয়স বাড়ছে, ভুঁড়ি বাড়ছে।তাই তো এখন আর আমাকে ওর ভালো লাগে না।সে এখন নতুন নতুন ভার্সিটি তে গিয়েছে নতুন নতুন ছেলেদের দেখা পেয়েছে, তাদের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, হাসি ঠাট্টা করছে। এখন আবার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব ও আসছে। ঠিক আছে আমি ও ওকে সরি বলবো না। আমি চাই শিক্ষা নিজে থেকে আমার কাছে আসুক।”

-” আবৃত্তি মনে মনে বললো, আমার মনে হয় না শিক্ষা কখনো নিজে থেকে তোমার কাছে আসবে। শিক্ষা কে তুমি কম অপমান অবহেলা করো নি। ভালোবাসার মানুষের দেওয়া অবহেলা কতো যন্ত্রণাদায়ক এটা তুই হাড়ে হাড়ে টের পাবে ভাইয়া।আর এভাবেই তোমাদের দুজনের ইগোর কাছে চাপা পড়ে যাবে তোমাদের ভালোবাসা।আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও। আমি পারলাম না তোমাদের এক করতে।”

__________________________________

-” শিক্ষা ভেবেছিলো সাহিত্য হয়তো তার সত্যি টা জানার পর তাকে সরি বলবে।তার সাথে করা অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চায়বে ।এই আশায় শিক্ষা সাহিত্যের অফিসে ইচ্ছা করে একথা সেকথা বলে লেট করছিলো।যদি একবার সাহিত্য এসে সরি বলে। কিন্তু শিক্ষা যখন দেখলো সাহিত্য কিছু বলছে না ,তখন শিক্ষা আকাশ সমান অভিমান নিয়ে অফিস থেকে চলে আসে।বাড়ি ফিরে নিজের মনকে শান্তনা দিয়ে বলে, তুই শুধু শুধু মন খারাপ করছিস শিক্ষা।তখন সরি বলে নি তো কি হয়েছে? দেখবি তোকে ফোন করে ঠিকই সরি বলবে। কিন্তু না। শিক্ষার ধারণা মিথ্যা প্রমাণ করে দুপুর গড়িয়ে বিকাল , বিকাল গড়িয়ে রাত এসে যায়। কিন্তু সাহিত্যের ফোন আসে না।এতে শিক্ষার অভিমানের পাল্লা আরো ভারী হয়ে ওঠে। শিক্ষা ঠিক করে সে আর সাহিত্যের রুমে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুমোতে যাবে না। শিক্ষা জাকিয়া জেসমিনের পায়ে তেল মালিশ করে দিয়ে তার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে।যা দেখে জাকিয়া জেসমিন বলে ,কিরে সতীন এইখানে শুয়ে পড়লি ক্যান? আমার পায়ের ব্যথা এখন কমে গেছে। আমি একা একা পারবো সবটা সামলে নিতে। তুই দাদুভাইয়ের কাছে যা।”

-” না দাদী। আমি আর তার কাছে যাবো না।মেয়ে হয়ে আর কতো বেহায়া হবো বলো তো? অনেক বেহায়া হয়েছি ,আর না।মেয়ে বলে কি ফেলনা হয়ে গিয়েছি নাকি? এখন সে নিজে থেকে আমাকে না চায়লে আমি ও তাকে চাইবো না ব্যাস।”

-” বুঝেছি আদর সোহাগে কম পড়ছে বুঝি?”

-” তুমি বুড়ি চুপ থাকো। তোমার জন্য এতো বেহায়া হয়েছি আমি। এখন কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করো না তো।নিজে ঘুমাও আর আমাকে ও ঘুমোতে দাও বলে শিক্ষা সাহিত্যের একটা শার্ট বুকের মাঝে চেপে ধরে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।

চলবে ইনশাআল্লাহ।।