মাফিয়া ক্রাশ বর পর্ব-৩১+৩২

0
2450

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ৩১
কিন্তু রুহিকে ভুল প্রমাণ করে কিছুক্ষণের মধ্যে ল্যাপটপের স্ক্রিনে কিছু প্রিয় মানুষের চেহারা ভেসে উঠে। রুহি সবাইকে দেখে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ অভিদের বুকে মুখ রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়। অভিদ মুচকি হাসি দিয়ে এক হাতে রুহিকে জড়িয়ে নেয়। ল্যাপটপে রুহির মা, বাবা, রাইমা,নিলা, মিশু, ফুপি, অনি, তুষার, জিহান সবাই ভিডিও কলে রয়েছে। ওদের দেখেও মনে হচ্ছে সবাই খুব অবাক হয়েছে। ওদের কাউকেই জানানো হয়নি কেনো কল করা হয়েছে। রুহিকে দেখে সবাই অবাক হয়েছে আর খুশিতে কান্না করে দিয়েছে।

রুহির আম্মু কান্না করতে করতে অবাক হয়ে বলে
” রুহি !! রুহি কোথায় ছিলি এতো দিন ??”
মিশু কান্না গলায় বলে
” রুহি কেমন আছিস তুই ?? তুই কোথায় আমাকে বল আমি এখনি আসবো তোর কাছে।”
অনি নাক টানতে টানতে বলে
” ভাবি, ভাবি তাড়াতাড়ি আমাদের কাছে এসো তোমাকে কতো মিস করছি আমরা। তুমি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে ?? জানো সবাই কতো খুঁজেছে তোমায় !!” একে একে সবাই তাদের কথা বললো কিন্তু রুহি অভিদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে চুপচাপ শুনে গেলো কোনো কথা বললো না। সবাই রুহির কথা বলার অপেক্ষায় আছে। রুহি ভাঙা গলায় তার অধর জোড়া নাড়িয়ে বলে
” কেমন আছো তোমরা সবাই ??” সবাই আরও কেঁদে উঠলো রুহির প্রশ্নে। রাইমা চোখ মুছতে মুছতে বলে
” তোমাকে ছাড়া কেউ ভালো থাকতে পারছে না। তুমি কোথায় চলে গিয়েছো বলো তো ??আমাদের ছেড়ে কি করে থাকতে পারছো ??” রুহি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রাখলো।
রুহির আব্বু অভিদের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে
” রুহিকে কবে, কোথায় আর কিভাবে পেয়েছো তুমি ??”

অভিদ গলা ঝেড়ে রায়হানের দিকে একবার তাকিয়ে বলে
” পাঁচদিন হয়েছে রুহিকে খুঁজে পেয়েছি আমরা।” সবাই আশ্চর্য হয়ে যায় অভিদের কথায়। ফুপি রেগে বলে
” মানে কি এতো দিন হয়েছে গিয়েছে মেয়েটাকে পেয়েছিস আর আমাদের জানানোর প্রয়োজন বলে মনে করলে না ??” অভিদ মাথা চুলকে রুহির দিকে তাকায়। জিহান ভ্রু কুচকে রুহির দিকে কিছুক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে। রায়হান সেটা দেখে এক ভ্রু নাচিয়ে বলে
” এভাবে কি দেখছো ?? এতোদিন পর বোনকে দেখেও কথা বলছো না কেনো ”
জিহান একপলক রায়হানের দিকে তাকিয়ে আবার রুহির দিকে তাকায়। সন্দেহ গলায় বলে উঠে
” তোর গায়ে এতো দাগ কিসের ??আর কপালেও ব্যান্ডেজ, মুখে কাটা দাগ !! এসব কিসের ??” জিহানের কথায় সবাই রুহিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখে সত্যি রুহির গায়ে অনেক দাগ। নিলা অবাক হয়ে বলে
” হ্যা সত্যি তো!! আর তোর গায়ে হসপিটালের ড্রেস কেনো ??” ল্যাপটপে সবাই রুহির চারপাশ যতো টুকু দেখতে পারলো ততো টুকু দেখে নেয়। তুষার অবাক হয়ে বলে
” ভাইয়া, ভাবি চারপাশ দেখে তো হসপিটালই মনে হচ্ছে তোমরা হসপিটালে কেনো?? ভাবি তোমার কি হয়েছে ??” রুহি ভয়ে ঢোক গিলে মাথা উঁচু করে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ চোখের পলক ফেলে রুহিকে শান্ত থাকতে বলে।

অভিদ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” ওসব পরে বলবো তার আগে আরেকটা জিনিস দেখাতে চাই। এখানে রুহিকে একা নয় আরেক জনকেও পেয়েছি।” বলে তীক্ষ্ণ ভাবে জোতির দিকে তাকায়। জোতি মাথা নিচু করে ফেলে অভিদের এমন দৃষ্টি দেখে। ল্যাপটপ রুহিদের দিকে ঘুরানো থাকায় জোতিকে কেউ দেখেনি। তবে অভিদের কথা শুনে অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে ব্যাক্তিটাকে দেখার জন্য। অভিদ ল্যাপটপে ঘুড়িয়ে জোতির দিকে তাক করে। জোতি টলমল চোখে সবার দিকে তাকায়। জিহানরা কেউ রুহির সাথে জোতিকে আশা করেনি। সেইদিনের ঘটনার পর জোতিকে তারা একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিলো। এতদিনে কয়েকবার মনে করলেও খোজ নেয়নি।,
জিহান অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে বলে
” তুই !! তুই নিউজিল্যান্ড কি করছিস ?? ওখানে কি করে গেলি ??” অনি জোতিকে দেখে রেগে বলে
” তুমিই কি ভাবির সাথে কিছু করেছো তাই না ?? তোমার সাহস কি করে হয় আমার ভাবির ক্ষতি করার। আর এখানে কি করছো তুমি ?? ভাইয়া তোমাকে এলাও করছে কি করে ??” ফুপি অনির দিকে ঘুরে ধমক দিয়ে বলে
” অনি !! এভাবে কেউ কথা বলে ?? তোমার বড় হয় না ??” অনি রাগটা দমিয়ে বলে
” ফুপি, তুমি ওকে চেনো না ?? আগেও ভাবিকে কতো খারাপ খারাপ কথা শুনিয়েছে। এখন আবার ক্ষতি করতে চেয়েছে নাহলে নিশ্চই নিউজিল্যান্ডেই ওকে ভাবির সাথে পাওয়া যেতো না !! আর ও তেমন মানুষ নয় যে ভাবিকে বাঁচাতে বা খুঁজতে চলে যাবে।” ফুপি জোতির দিকে তাকিয়ে একটু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বলে
” কিন্তু ওর গায়েও তো রুহির মতো দাগ রয়েছে তবে জোতির গায়ে একদম হালকা আর অল্প তাই ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। আর রুহির গায়ে তো অনেক !! রুহির গুলো একদম গভীর ক্ষতর মতো বোঝা যাচ্ছে।”

জোতি মাথা নিচু করে কান্না আটকে রাখার চেষ্টা করছে। ধরা গলায় বলে
” রুহির ক্ষতি করতে গিয়েছিলাম তাই আজকে আমার এই অবস্থা। রুহি ক্ষতি কর‍তে গিয়ে নিজেও বিপদে পরেছি আর রুহিকে তো বিপদে ফেলেছিলামই। আমার জন্যই আজকে রুহির এই অবস্থা।” বলে চোখের পানি ফেলে দেয়। সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। জোতি এমন কিছু করতে পারে তাদের ধারণার বাইরে ছিলো।আবার অবাক হয়েছে জোতি নিজের মুখে সেটা স্বীকারও করতে শুনে। রুহির আব্বু হুংকার দিয়ে বলে
” তুই আমার মেয়ের সাথে কি করেছিস ?? ”
অভিদ ল্যাপটপ ঘুড়িয়ে বলে
” আপনারা একটু শান্ত হন। রায়হান সব বলবে আপনাদের।” অভিদ রায়হানকে ইশারা করতেই রায়হান এসে ল্যাপটপ নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে পাশের রুমে চলে গেলো সাথে আখিল, আশিক, জোতিও গেলো। রুহি এখনও অভিদকে জড়িয়ে ধরে আছে কান্না থামলেও হিচকি থামেনি। অভিদ রুহিকে হালকা ছাড়িয়ে হাত এগিয়ে টেবিলের উপর থেকে পানি নিয়ে রুহির মুখের সামনে ধরলো। রুহি একটু পানি খেয়ে গ্লাস সরিয়ে দেয়। অভিদ পানিটা রেখে রুহিকে আস্তে করে শুয়ে দিলো। রুহি শুয়ে মন খারাপ করে বলে
” আমাকে বাড়িতে নিয়ে চলুন না। এখানে সারাদিন শুয়ে থাকতে ভালো লাগে না। বাড়িতে গিয়ে একটু হাটাচলা করবো, ঘুরবো।” অভিদ রুহির মাথায় হাত রেখে চুলে হাত বুলাতে থাকে। রুহির মন খারাপ দেখে কিছুক্ষণ চুপ থেকে ধীর গলায় বলে
” ঠিকাছে ডক্টরের সাথে কথা বলে কালকে তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবো।” রুহি কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থাকে অভিদের দিকে।এতো সহজে অভিদ তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে যাবে জানতো না।

রুহি খুশি হয়ে দ্রুত উঠতে গেলেই শরীরের ব্যাথায়
কুকড়ে আহ করে উঠে আবার ধপ করে শুয়ে পরে। ধপ করে শোয়ায় আবার পিঠে ব্যাথা পেয়ে আরও জোড়ে আহহ করে উঠে। অভিদ ভয় পেয়ে গেলো রুহির চিৎকার শুনে। অস্থির হয়ে বলে
” কি হয়েছে ? ব্যাথা করছে ?? ডক্টর ডাকবো ??”
রুহি মাথা নেড়ে বিরবির করে বলে
“নাহ ঠিকাছি আমি। উঠতে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি।”
অভিদ রেগে চেচিয়ে বলে
” কিহ, এতো কেয়ারলেস কেনো তুমি ?? জানো শরীরে ব্যাথা আছে তবু লাফালাফি করছো। তোমার কি মনে হয় এতো লাফালাফি করলে তোমাকে আমি বাড়িতে নিয়ে যাবো ?? আর এক বার লাফালাফি করতে দেখলে দরকার পরলে সারাজীবনের জন্য এখানে থাকার ব্যবস্থা করে দেবো বুঝেছো ??” রুহি বাচ্চাদের মতো মুখ করে মাথা নাড়ায়। অভিদ রেগে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। উদ্দেশ্য ডক্টরের সাথে কথা বলতে যাবে।

রুহি মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পরে রুহি দেখলো কেবিনের বাইরে একজন গার্ডকেও দেখা যাচ্ছে না। রুহি একটু ভয় পেয়ে গেলো কাউকে না দেখে। রুহি ভয় পেয়ে হাত বাড়িয়ে পাশ থেকে অভিদের মোবাইলটা নিয়ে রায়হানের নাম্বারে কল দেয়। সেই মুহূর্তে হঠাৎ করে কেবিনের দরজা খুলে যায়। রুহি তাকিয়ে দেখে একটা ডক্টরের ড্রেস, মাস্ক পরা লোক দাঁড়িয়ে আছে। রুহির ভ্রু কুচকে এলো কারণ অভিদের কথা মতো রুহির কেবিনে সেই ডক্টর আর নার্স ছাড়া আর কেউ এখানে আসতে পারবে না। রুহি মোবাইলটা পাশে রেখে বলে
” কে আপনি ?? আপনাদের তো এখানে আসা নিষেধ। তাহলে এখানে কি করছেন ??”
লোকটা এগিয়ে আসতে আসতে মাস্ক খুলতে খুলতে বলে
” সবার নিষেধ থাকলেও আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না এখানে আসা থেকে।” বলে মাস্কটা খুলে রুহির দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দেয়। মাস্ক খোলার পর ডক্টরের পোশাক পরা সিহাবকে দেখে রুহির আত্মা কেপে উঠলো। রুহির গলা শুকিয়ে শব্দ বের হওয়া বন্ধ করে দিলো। রুহি ভয়ে শরীরের সব ব্যাথা নিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করলো। সব ব্যাথা সহ্য করে কোনো রকমে উঠেও গেলো। সিহাব মুখে শয়তানি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে রুহির দিকে। রুহি ভয়ে কাপাকাপা গলায় বলে
” আ আপনিহ, আ আপপনি এএখানে ককি করছেন?? ককি করে ভভেতরে ঢুকেছেন ??”

সিহাব আর হাটা থামিয়ে গালে হাত দিয়ে ভাবার ভান করে বলে
” ঠিকই তো আমি কি করে এসেছি ?? আমি !! আরে হ্যা !! আমি তো সব গার্ডদের বললাম আপনাদের স্যারের উপর কে যেন এটাক করেছে এটা শুনে সবাই চলে গেলো। আর আমি আমার অপূর্ণ কাজটা পূরণ করার জন্য এলাম তোমার কাছে।” বলে একটা ইনজেকশন বের করলো। রুহির বেডের ডান পাশে আসতে আসতে বলে
” জানো এটা কি ?? উফফ আমিও না বোকা তুমি জানবে কি করে !! এটা একটা ইনজেকশন। আর এটা যদি তোমাকে দেই তাহলে তোমার শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ তিন মিনিটের মধ্যে কাজ করা বন্ধ করে দেবে, তুমি কথাও বলতে পারবে না। আর মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে তুমি !! তুমি তো মারাই যাবে। আর আমার অপূর্ণ কাজটাও পূর্ণ হবে।” বলে হেসে দেয়। রুহি ভয়ে জোড়ে একটা চিৎকার করে উঠে। আস্তে আস্তে বেডের বাম দিকে যেতে থাকে। আর সিহাব এগোতে থাকে। রুহি ভয় পেয়ে কেঁদে কেঁদে অভিদের নাম নিয়ে ডাকতে থাকে।

এদিকে রায়হান অভিদের ফোন পেয়ে রিসিভ করে হ্যালো বলতেই রুহি আর সিহাবের সব কথা শুনতে পায়। ইনজেকশনের কথা শুনতেই রায়হান বসা থেকে উঠে দৌড়ে বেড়িয়ে যায়। রায়হানকে এভাবে বেরোতে দেখে আখিলরা অবাক হয়ে গেলো। তারাও রায়হানের পেছনে গেলো। রুহির পাশের রুমেই রায়হানরা ছিলো। রায়হান রুহির কেবিনের সামনে এসে দেখে গার্ডরা কেউ নেই। রায়হান দ্রুত কেবিনে ঢুকে গেলো। দরজা খুলে দেখে সিহাব রুহির হাত চেপে ধরে আছে ইনজেকশন দেওয়ার জন্য। রায়হান হুংকার দিয়ে বলে উঠে
” সিহাব !!!!!!” চিৎকার শুনে সিহাব দরজার দিকে তাকায় আর রায়হানকে দেখে ভয় পেয়ে গেলো। রুহি ভাইয়া বলে কেঁদে দেয়। জোতি গিয়ে রুহিকে ধরে। রায়হান এসে সিহাবের রুহিকে চেপে ধরা হাতটা জোড়ে চেপে ধরে ছাড়িয়ে নেয়। পরে অন্যহাতে থাকে ইনজেকশনটা ছাড়িয়ে নেয়।
আখিল এসে সিহাবের কলার ধরে কেবিনের বাইরে নিয়ে মারতে থাকে। আশিক, রায়হানও আখিলের সাথে সিহাবকে মারতে থাকে।

অভিদ ডক্টরের সাথে কথা বলে এসে রুহির কেবিনের সামনে আসতেই দেখে রায়হান, আখিল, আশিক কাউকে ধরে মারছে। অভিদ দ্রুত এগিয়ে এলো। ওদের কাছে গিয়ে দেখে ওরা সিহাবকে মারছে। অভিদ সিহাবের ছবি দেখেছিলো তাই ওকে চিনতে ভুল হলো না। রায়হান অভিদকে দেখে বলে
” অভিদ তাড়াতাড়ি রুহির কাছে যা। ” অভিদের মনে ভয় ঢুকে গেলো সিহাব রুহির কিছু করেছে কিনা ভেবেই কেবিনে ঢুকে গেলো। গিয়ে দেখে রুহি জোতিকে ধরে কাঁদছে। অভিদ রুহির কাছে গিয়ে অস্থির হয়ে বলতে থাকে।
” তুমি কাদছো কেনো ?? ঠিকাছো তুমি ?? সিহাব কি করেছে ??” অভিদকে দেখে রুহির কান্না দ্বিগুণ বেরে গেলো। অভিদের বুকে আছড়ে পরে শব্দ করে কাঁদতে থাকে। জোতি কাপাকাপা গলায় বলে
” সিহাব কিসের একটা ইনজেকশন দিচ্ছিলো কিন্তু রায়হান ভাইয়া এসে বাঁচিয়ে নিয়েছে।” অভিদ ভয় পেয়ে রুহিকে আরও শক্ত করে নিজের বাহুডোরে আগলে নেয় রুহিকে।

সিহাব তিনজনের সাথে কিছুতেই পারছে না। মারতেও পারছে না আর মার থেকে নিজেকে বাচাতেও পারছে না। হঠাৎ করে জোর লাগিয়ে তিনজন ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। আখিল এগিয়ে আসতেই সিহাব পা দিয়ে লাথি দেয়। আখিল কয়েকপা পিছিয়ে পরে যেতে নিলেই রায়হান আর আশিক ধরে নেয়। সিহাব সুযোগ বুঝে বাইরের দিকে দৌড় দেয়। আখিল সিহাবকে পালাতে দেখে রেগে চেয়ারে লাথি মারে। তখন গার্ডরা সবাই দৌড়ে আসে। রায়হান ওদের দেখে রেগে যায়। একজনের গালে একটা থাপ্পড় মেরে দেয়। চেঁচিয়ে বলে
” কোথায় ছিলে তোমরা ?? অপরিচিত লোকের কথা শুনে বোকার মতো সেই কথা বিশ্বাস করে বাইরে চলে গেলে। রুহি আমাকে ফোন না করলে আর আমি না আসলে তোমাদের বোকামোর জন্য আরেকটু হলেই রুহির প্রাণটাই চলে যেতো। অপদার্থ কোথাকার।এর পর থেকে ঠিক মতো কাজ না করলে সব কয়টাকে মেরে ফেলবো।” বলে হনহন করে কেবিনে ঢুকে গেলো। আখিল রেগে ওদের সামনে গিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” তোমাদের বোকামোর জন্য আজকে রুহির মানে ভাবির প্রাণ চলে যেতে পারতো। রায়হান না আসলে হয়তো বাচানোই যেতো না। পরের থেকে সব খেয়াল রাখবে।” বলে কেবিনে ঢুকে পরে। গার্ডরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থেকে সব কথা শুনে। আশিক ওদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে বলে
” সবাই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছো কেনো ?? এবার অভিদ স্যারের রাগ দেখতে না চাইলে তাড়াতাড়ি সবাই সবার জায়গায় দাড়াও ” সব গার্ডরা তাদের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেলো। আশিক সবার দিকে তাকিয়ে কেবিনে ঢুকে গেলো।

রুহি কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। তখন ব্যাথা নিয়ে উঠায় আবার ব্যাথা পেয়েছিলো শরীরে। অভিদ রুহির চোখ মুছে দিয়ে বলে।
” কান্না থামাও এতো কাঁদলে অসুস্থ হয়ে পরবে তো।” বলতে বলতে খেয়াল করলো রুহির কান্না একেবারে থেমে গিয়েছে আর ভরও ছেড়ে দিয়েছে। রায়হান বলে
” অভিদ রুহি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।” অভিদ রুহির মুখ সামনে এনে দেখে সত্যি রুহি সেন্সলেস হয়েগিয়েছে। অভিদ আরও ভয় পেয়ে রুহিকে সেন্সলেস দেখে।অভিদ হালকা করে রুহির গাল চাপড়ে ডাকতে থাকে। আশিক গিয়ে ডক্টরকে ডেকে আনে। ডক্টর আসতেই অভিদ রুহিকে শুয়ে দেয়। ডক্টর রুহিকে দেখে বলে
” উনি ভয় পেয়ে আর শরীরে হয়তো আবার ব্যাথা পেয়ছে তাই দুর্বল হয়ে সেন্স হাসিয়েছে। রাতের আগে সেন্স ফিরে আসবে।” বলে চলে যায়।
অভিদ রায়হানের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” এবার আর আমি কোনো সময় দিতে চাইনা। ওদের সব সুখ দুঃখে পরিণত করতে চাই।”
রায়হান বলে
” কিন্তু কি করবি ভেবেছিস ?? আমাকে বল তাহলেই তো কিছু করতে পারবো ”

অভিদ বাকা হেসে বলে
” আমার সব প্ল্যান আগে থেকেই তৈরি। এবার শুধু এপ্লাই করার বাকি। কালকে থেকে কাউন্টাউন শুরু। ”

চলবে…

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ৩২

অভিদ বাকা হেসে বলে
” আমার সব প্ল্যান আগে থেকেই তৈরি। এবার শুধু এপ্লাই করার বাকি। কালকে থেকে কাউন্টাউন শুরু। ” বলে রুহির দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

আজকে রুহিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। কালকের ঘটনার পর রুহি একপ্রকার ভয়ে গুমরে গিয়েছে। পাশে কেউ না থাকলেই ভয়ে কান্না করে উঠে। অভিদকে থাকতেই হয় পাশে নাহলে অন্য কাউকে। রুহি হাটতে পারে না দেখে ডক্টর রুহির পায়ের সহ পুরো শরীর টেস্ট করিয়েছিলো। কালকে রাতে টেস্ট রিপোর্ট পেয়েছে। রুহির পায়েও অনেকবার মারা হয়েছে যার কারণে পা ভেঙে গিয়েছে। অনেকটা প্যারালাইজড এর মতো তবে তেমন নয়। পা অবশ হয়ে থাকে। পায়ে ভর দিলে বা দাঁড়াতে গেলে প্রচুর ব্যাথা করে উঠে। ডক্টর বলেছে রুহি পুরোপুরি ঠিক হতে কিছু সময় লাগবে।আর বলেছে হাটার এবং পায়ের এক্সারসাইজ করার চেষ্টা করতে।

রুহি তৈরি হয়ে বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে চুপ করে। অভিদ একটা হুইল চেয়ার নিয়ে এসে বেডের পাশে রেখে রুহির কাছে এসে বলে
” নামতে পারবে ?? একবার চেষ্টা করে দেখো!! আমি ধরছি তোমাকে।” রুহি মাথা নেড়ে অভিদের হাত ধরে ধীরে ধীরে বেড থেকে তার পা গুলো নামায়। অভিদের হাতটা শক্ত করে ধরে তাতে ভর দিয়ে নেমে ফ্লোরে পা রাখার চেষ্টা করে। অবশ হওয়া দুই পা ফ্লোরে রেখে দাঁড়াতে গেলেই পরে যেতে নেয়। অভিদ দ্রুত গতিতে রুহির দুই বাহুতে ধরে পরে যাওয়া থেকে আটকে নেয়। রুহি ভয়ে অভিদকে ধরে জোড়ে জোড়ে দুইবার শ্বাস নিলো। অভিদ উত্তেজিত হয়ে বলে
” ঠিক আছো তুমি ?? ব্যাথা করছে ??” রুহি মাথা নাড়িয়ে বলে
“হ্যা, তবে ঠিকাছি আমি। দাঁড়াতে পারছি না আমি। সারাক্ষণ পা অবশ লাগে আর দাঁড়ালেই খুব ব্যাথা করে” অভিদ রুহিকে বেডে বসিয়ে দিয়ে বলে
” ঠিকাছে আর দাঁড়াতে হবে না তোমাকে। আমি বসাচ্ছি।” বলে রুহিকে কোলে তুলে নেয়। রুহি অভিদে গলা জড়িয়ে ধরে। অভিদ রুহিকে চেয়ারে বসিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে বলে
” মনে করে দেখো এখানে আর কিছু আছে কিনা তোমার !!” রুহি ভাবতে ভাবতে বলে
” আমার কি থাকবে ?? আমি তো কিছুই আনি নি আর যা ছিলো গার্ড রা গুছিয়ে নিয়ে গিয়েছে।” অভিদ হালকা হেসে বলে
” ওকে।” পেছন থেকে রুহির চেয়ার টেনে নয়ে যেতে থাকে। রুহি কেবিন থেকে বেরনোর সময় পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেখে নেয়। এতোদিন হসপিটালে থাকতে খারাপ লাগলেও এই রুমের প্রতি একটু মায়া পরে গিয়েছে। অভিদ রুহিকে নিয়ে লিফটে উঠে পরে সাথে গার্ডরা রয়েছে। রায়হান নিচে ওয়েট করছে আর জোতি, আখিল, আশিক সবাই বাড়িতে রয়েছে।

লিফট থামতেই অভিদ রুহিকে নিয়ে বেড়িয়ে পরে। রুহিকে নিয়ে গাড়ির সামনে আসতেই গার্ড গাড়ি খুলে দেয়। রুহিকে বসিয়ে অভিদ ঘুরে এসে পাশে বসে পরে। রায়হান গিয়ে ফ্রন্ট ছিটে বসে।
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলতে থাকে নিজের গতিতে। রুহি গাড়ির জানলায় মাথা ঠেকিয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করছে।
আজকের আকাশটা অনেকটা মেঘলা মেঘলা। এরকম একটা আবহাওয়া রুহির নিতান্তই খুব পছন্দের। মেঘলা আকাশে বৃষ্টির আগে আর মাঝে গাছপালা নুয়ে দেওয়ার মতো বাতাস। বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর ভেজা মাটির গন্ধ আর কদম ফুলের ঘ্রাণ চারপাশটা অন্যরকম একটা পরিবেশ তৈরি করে। বৃষ্টির মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া। গম্ভীর, হাসি খু্শি মানুষরা তাদের কষ্ট বা আনন্দ ভাগ করতে পারে বৃষ্টির সাথে। বৃষ্টি মানেই একটা আলাদা আনন্দ,অনুভূতি প্রকাশ পায়। তবে এটা নিউজিল্যান্ড হওয়ায় বাংলাদেশের মতো মাটির স্পর্শ পাবে না।
এসব ভাবতে ভাবতে রুহির জোতিদের কথা মনে পরে। রুহি রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলে
” ভাইয়া জোতিরা আসেনি কেনো আজকে ??”
রায়হান লুকিং গ্লাসের মাধ্যমে রুহির দিকে তাকিয়ে বলে
” আজকে তুমি প্রথম বাড়িতে যাচ্ছো তাই ওরা তোমার ওয়েলকাম করার জন্য বাড়িতে রয়েগিয়েছে। রুহি কিঞ্চিত হাসি দিয়ে আবার বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।

অভিদ অনেক্ষণ থেকে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। রুহির নিশ্চুপ থাকা মুগ্ধকর চেহারা দেখে বুঝতে পারছে রুহি এই আবহাওয়া কতো উপভোগ করছে। মেঘলা আকাশের হালকা বাতাসে রুহির আধখোলা চুল গুলো বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে উড়ছে রুহু জানলায় মাথা ঠেকিয়ে বাইরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এইরকম একটা দৃশ্যে যে কোনো নারীকেই অপরুপ করে তুলতে পারে। হয়তো প্রিয় মানুষটার কাছেই সেই নারীকে অপুরুপ করে তোলে। যেমনটা অভিদের কাছে রুহিকে অপুরুপ করে তুলেছে। রুহি তো বরাবরই অভিদের কাছে অপুরুপ নারী। অভিদ রুহির হাতটা নিজের হাতের মাঝে পুরে নেয়। রুহি চমকে হাতের দিকে তাকায়। অভিদের হাতে নিজের হায় দেখে হালকা হাসলো। অভিদ রুহির চোখে চোখ রেখে ধীর গলায় বলে
” ভালো লাগছে তোমার ??” রুহি কিছুক্ষণ চুপ থেকে ঘার ঘুড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বলে
” হুমমম। খুব ভালো লাগছে। এতোদিন হসপিটালে এক ঘরে বিসে থেকে এসব কিছুই দেখতে পারিনি ।” অভিদ মুচকি হেসে রুহির হাতটা আরও জোরালো ভাবে আকড়ে ধরে। রায়হান দুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো। সামনে ঘুরে আবার নিজের ফোনে মনোযোগ নিক্ষেপ করলো। মিশুর সাথে কথা বলছে। মিশু রুহিকে দেখে খুব খুশি। কালকে থেকে রায়হানের সাথে কিথা বললেই জিজ্ঞেস করে রুহিকে নিয়ে কখন আসবে। রায়হান শুধু হাসে মিশুর কথায়।
রুহি বাইরের দিয়ে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে
“এতদিন একটা বন্ধ ঘরে পরে ছিলাম। যেখানে এরকম পরিবেশ দেখারই সুযোগ পেতাম না। স্বাধীন মতো নিজের ইচ্ছে গুলো পূরণ করার ক্ষমতা ছিলো না আর প্রিয় মানুষদের কাছে ছুটে যাওয়ার মতো ক্ষমতাও ছিলো না। আজকে খুব খুশি আমি। আজকে কেনো যেদিন থেকে ওই বন্ধ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আপনার কাছে এসেছি সেদিন থেকেই আমি খুশি।” ভেবেই প্রশান্তির হাসি দিলো।

ঘন্টা একের পরে হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো। রুহি অবাক হয়ে বলে
” কি হলো গাড়ি থামলো কেনো ??” রায়হান হেসে বলে
” আমরা বাড়িতে এসে পরেছি।” রুহি চোখ বড় বড় করে তাকায়। বাড়িতে দেখার জন্য উৎসাহিত করে বসে আছে। অভিদ রুহিকে এতো এক্সাইটেড দেখে মনে মনে হাসলো। রুহিকে নামিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে ভেতরে নিয়ে জেতে থাকে। রুহি হা করে সব দেখতে থাকে। একটা খুব সুন্দর দুতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি। কাচের কারণে নিচতলায় ড্রইংরুমের ভেতরের সব দেখা যাচ্ছে বাইরে থেকে। খুব সুন্দর করে সাজানো। বাইরে বাগানে সব দেশি, বিদেশি হাজার রকমের গাছ রয়েছে যেগুলো কোনোদিন দেখেনি সেগুলোই বেশি। একই ফুলের বিভিন্ন রঙের ফুলও রয়েছে। কয়েকটায় একটা গাছেই কয়েকজাতের ফুল ফুটেছে আবার একটা গাছে একই ফুল অনেক রঙের। একটা দোলনাও রয়েছে বড় একটা সুইমিংপুলও রয়েছে। বলতে গেলে অসাধারণ একটা জায়গা। এক নিমিষেই কারো মন ভালো করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
অভিদ রুহিকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই ওদের উপর ফুল পড়তে থাকে। রুহি অবাক হয়ে উপর তাকায়। তারপর সামনে তাকিয়ে দেখে ফ্লোরে খুব সুন্দর করে রঙ আর ফুল দিয়ে ডিজাইন করে welcome লেখা। অভিদ রুহিকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই আস্তে আস্তে জোতি, আখিল, আশিক উপস্থিত হয় সাথে অনেক সার্ভেন্ট আর গার্ড। সবাইকে রুহিকে ওয়েলকাম জানায় আর সবাই গিফট দেয়। রুহি তো অবাক এতো কিছু দেখে অভিদও অবাক। অভিদ এসবের কিছুই জানতো না।

রুহি অবাক হয়ে বলে
” এতো কিছু !! এতোসব কদার দরকার ছিলো না।” আখিল পকেটে হাত গুজে বলে
” কে বলেছে দরকার ছিলো না ?? তুমি প্রথম এই বাড়িতে পা রেখেছো তাই সেলেব্রেশন তো বানতাহে ইয়ার !! আমরা জাস্ট এতো টুকুই করেছি অভিদ হলে তো মনে হয় ব্যান্ড, ঘোড়া বাজিয়ে তোমার ওয়েলকাম করতো। তাই না অভিদ ??” অভিদ কপাল কুচকে ইনোসেন্ট মুখ করে বলে
” হ্যা ভাই। আমি তো এর থেকেও বেশি কিছু করতে চেয়েছিলাম বাট আমার বউ তো আমাকে এতো বেশি ভালোবাসে যে আমাকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারতো না। বউয়ের পাশেই বসে থাকতে হতো তাই আমি কিছুই করতে পারিনি।”
অভিদের এমন কথায় রুহি প্রচুর লজ্জা পেলো। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেলো রুহি মাথা নিচু করে বসে থাকে। সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে রুহিকে দেখে। অভিদ সবার সাথে রুহির পরিচয় করিয়ে দিয়ে রুহিকে নিয়ে নিজের রুমে এলো। রুহি রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখে নেয়। রুমটাও খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। অভিদ ফ্রেশ হয়ে রুহিকে ফ্রেশ করিয়ে রুহিকে বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলো। বাড়ি দেখে দুজনে লাঞ্চ করে নেয়। অভিদ রুহিকে নিয়ে রুমে এসে আসতেই রুহি দেখে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রুহি আরও খুশি হয়ে গেলো বৃষ্টি দেখে।

রুহি উৎফুল্ল ভাবে অভিদকে বলে উঠে
” আমাকে ব্যালকনিতে নিয়ে চলুন না !! একটু ভিজবো।” অভিদ চোখ রাঙিয়ে বলে
” মানে কি ?? এই অসুস্থ শরীরে তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে ?? আর ইউ ক্রেজি ??” অভিদের শেষের কথা শুনে রুহির মিনে একরাশ বিরক্তি ভর করলো। রুহি মুখ ফুলিয়ে বলে
” ক্রেজি হওয়ার কি আছে ?? একটু ভিজবো প্লিজ !!” অভিদ রেগে বলে
” চুপ আর ভেজার কথা বললে তোমাকে আমি আবার হসপিটালে নিয়ে যাবো কিন্তু ?? গরমের সময়ও তো ব্ল্যাংকেট গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো। আর এখন এতো অসুস্থ হয়েও বৃষ্টিতে ভিজতে চাইছো ?? জানো এখন বৃষ্টিতে ভিজলে তোমার কি হবে ?? মারাত্মক জ্বর, ঠান্ডা আসবে। আর তুমি সুস্থ হওয়ার বদলে আরও অসুস্থ হয়ে যাবে।আর তখন অসুস্থ শরীর নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে কি করে ??” রুহি অভিদের সব কথা মন দিয়ে ভেবে নিলো। পরে মন খারাপ হয়ে যায় রুহির। অভিদ রুহিকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে কিছু সময় চুপ করে বসে থাকলো। হঠাৎ করে গম্ভীর গলায় বলে
” আচ্ছা ঠিকাছে নিয়ে যাচ্ছি তবে ভিজতে পারবে না শুধু বারান্দায় বসে বৃষ্টি বিলাস করবে। ডান!!”
অভিদের কথায় রুহির মন খারাপ গলে জল হয়ে মন ভালো হয়ে গেলো। রুহি খুশি হয়ে বলে
” ওকে,ডান। আমি ভিজবো না শুধু বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো” অভিদের ছোট ছোট চোখে রুহির দিকে তাকায়। রুহি তার ঠোটের মাঝে আঙুল দিয়ে বাচ্চাদের মতো চুপ করে যায়।অভিদ মুচকি হেসে রুহিকে বারান্দায় নিয়ে আসে। রুহিকে রেখে প্রথমে ব্যালকনির কাচের গ্লাস গুলো টেনে অফ করে দিলো। পরে রুহিকে বারান্দায় এনে রেলিঙ এর কাছে বসায়।
রুহি বারান্দায় তাকিয়ে দেখে এই জায়গাটাও খুব সুন্দর করে সাজানো। একটা দোলনা রয়েছে। সাইডে ফুল দিয়ে মুড়ানো। রুহি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। অভিদ রুহিকে দেখে হেসে রুহিকে কোলে তুলে দোলনায় বসিয়ে দেয় পরে নিজেও রুহির পাশে বসে পরে। রুহি দোলনায় বসে বসে বৃষ্টি বিলাস করতে থাকে। আর অভিদ রুহি বিলাস করতে থাকে। মানুষকে কি বিলাস করা যায় নাকি ?? যায় না তো তবে হয়তো প্রিয় মানুষের মন পরা যায়। অভিদ রুহিকে দেখতে থাকে রুহির মন পরতে থাকে। বাইরের বৃষ্টি দেখতে দেখতে একসময় রুহি অভিদের হাত জড়িয়ে কাধে মাথা রেখে বাইরে তাকিয়ে থাকে। অভিদ মুচকি হাসি দিয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে থাকে।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে। বৃষ্টিও কিছুটা থেমে গিয়েছে। কিছুটা বলারও কারণ রয়েছে। কারণ বাইরে এখনও ঝিরঝির বৃষ্টি পরছে। রুহি অনেক্ষণ ব্যালকনিতে থেকেছে। কিছুক্ষণ আগে শীত শীত অনুভব হওয়ায় অভিদকে রুমে নিয়ে আসতে বলে। রুমে এসে বিছানায় শুয়ে দিতেই রুহি নিজেকে ব্ল্যাংকেটে মুড়িয়ে নিয়ে ঘুম দেয়। অভিদ রুহির পাশেই শুয়ে ছিলো। রুহি একা থাকলে ভয় পাবে তাই নিজেও শুয়ে ছিলো। রুহি ঘুমিয়ে পরায় নিস্তব্ধতা বজায় রেখে অভিদ ধীরেসুস্থে উঠে যায়। রায়হানের নাম্বারে কল দিতেই কিছুক্ষণ পর জোতি আসে রুমে। অভিদ জোতিকে দেখে ফিসফিস করে বলে
” রুহির সাথে থাকবে। আমি কিছু কাজে যাচ্ছি আর আমার আসার আগে রুহি উঠে আমাকে খুঁজলে বলবে আমি নিচে গিয়েছি। ওকে দেখে রাখবে আর কিছু করবে না ওর সাথে।” শেষের কথাটা গম্ভীর গলায় বলে। জোতি মাথা নেড়ে রুহির পাশে শুয়ে পরে। অভিদ দরজা ভিরিয়ে বেড়িয়ে যায়।

নিচে আসতেই দেখে রায়হান, আখিল, আশিক বসে আছে। অভিদ তাদের কাছে গিয়ে সোফায় বসে গম্ভীর গলায় বলে
” সেই মেয়েদের কি খবর ?? ওরা নিজেদের বাড়িতে পৌছেছে তো।” রায়হান সামনের দিকে ঝুকে হাটুর উপর দুই হাত ভর করে রেখে শান্ত গলায় বলে
” সব মেয়েগুলোকে পৌছে দেওয়া হয়েছে।”
অভিদ এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে বাকা হেসে বলে
” ওদের কি অবস্থা ??”
আখিল বাকা হেসে বলে
” ওদের অবস্থা এখনও খুবই ভালো। কালকে রাতেই ঘুমের মাঝে কিডন্যাপ করা হয়েছে।” আশিক চিন্তিত হয়ে বলে
” কিন্তু ভাইয়া আপনার পরের প্ল্যান কি ??”
অভিদ সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়। বাড়ি থেকে বের হতে হতে বলে
” সেটা ধাপে ধাপে জানবে সবাই। এখন চলো আমরা সবাই একটু ওদের ওয়েলকাম করে আসি!!” রায়হান, অভিদ, আখিল, আশিক বের হয়ে গেলো বাড়ি থেকে। বাড়ি পেছনের গেস্টহাউজ এর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে একজন গার্ড এসে ভেতর থেকে দরজা খুলে দিলো। চারজন বাকা হেসে ভেতরে ঢুকে। গার্ড দরজা বন্ধ করে দেয়। অভিদ গেস্টহাউজের একটা অন্ধকার রুমের দিকে পা বাড়ায়। অভিদ দরজাটা খুলতেই পেছন থেকে কিছুটা আলোর রশ্মি এসে অন্ধকার রুমে থাকা বন্দি দুজন ব্যাক্তির উপর পরে।

অভিদ ভেতরে রুমে ঢুকে লাইট অন করে দিলো। রায়হান, আখিল, আশিক ভেতরে এসে ঢুকলো। সামনের দিকে তাকিয়ে চারজন হাসলো। সামনে সিহাব আর যাবেদ খান বাধা অবস্থায় পরে আছে।

চলবে..