#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ৩৭
রায়হান বিস্ময় নিয়ে বলে
” হোয়াট !! কিন্তু এতো গার্ড থাকা সত্ত্বেও পালালো কি করে ?? উফফ এই স্টুপিড গার্ডদের তো কিছু একটা করতেই হবে। ” বলে নিজেও চিন্তিত হয়ে যায়। দুজনই সামনে কি হবে সেটা ভাবার চেষ্টা করছে। সিহাব কিছু করার আগেই ওকে ধরতে হবে।
বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই অভিদ রুহির দিকে তাকিয়ে বলে
” রুহি দেখো বাড়ি এসে পরেছি নামবে না ??” অভিদের কথায় রুহির কানেই গেলো না। রুহি দুর্বল শরীর নিয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। রায়হান গাড়ি থেকে নেমে অভিদের পাশে এসে জানলার দিকে ঝুকে রুহির দিকে একপলক তাকিয়ে অভিদকে বলে
” রুহির খারাপ লাগায় ঘুমিয়ে পরেছে তুই রুহিকে এমনি নিয়ে আয়। ” বলে গাড়ি খুলে দেয়। অভিদ রুহিকে কোলে তুলে বের হয়। সবাই গাড়ি থেকে বের হয়ে বাড়িরে ঢুকে।। বাড়ির দরজা খোলাই ছিলো। অভিদ বাড়িতে ঢুকতে দেখতে পেলো ফুপি, তুষার সোফায় বসে অফিসের ব্যাপারে কথা বলছে আর অনি সোফায় শুয়ে আছে এক পা টেবিলের উপর আরেক পা সোফার হাতলের উপর। অনি টিভি দেখছে আর মোবাইল টিপছে। আখিল অনিকে দেখে চোখ কপালে তুলে ফেললো। অনি এক মনে দুইটাই কাজই করে যাচ্ছে। অভিদ সবাইকে দেখে উঁচু গলায় বলে
” বোনু !!” ফুপি, তুষার নিজের কথার মাঝে অভিদের ডাক শুনে অবাক হয়ে গেলো। দুজন অবাক হয়ে দরজার দিকে তাকালো।দুজন দাঁড়িয়ে গেলো, দাঁড়ানোর সময় তুষারের কোল থেকে ফাইল পরে গেলো। অনি অন্যমানস্ক হয়ে একবার দরজার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। সেকেন্ডের মতো সময় যেতেই অনির খেয়াল আসে। অনি আবার দরজার দিকে তাকাতেই চোখ, মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। হাত থেকে মোবাইল ফেলেই দৌড়ে ভাইয়া বলে চিৎকার করে রায়হানের গলায় ঝুলে পরলো। অভিদ অবাক হয়ে বলে
” আমাকে রেখে তুই আগে রায়হানকে জড়িয়ে ধরলি কেনো” অনি দাঁত কেলিয়ে বলে।
” ভাইয়া!! তোমার কোলে ভাবি ঘুমিয়ে আছে।” অনির কথায় অভিদ রুহির দিকে তাকায়।
রুহি আগের মতোই অভিদের বুকে লেপ্টে ঘুমিয়ে আছে। অভিদ রুহিকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। ফুপি, তুষার ওদের সামনে এসে হাসি মুখে বলে
” কি তোরা আজকে আসবি আমাদের জানাবি তো নাকি ?? আর রুহি ঘুমিয়ে আছে যে ??”
অভিদ রুহিকে অনির রুমে শুয়ে দিয়ে গায়ে ব্ল্যাংকেট দিয়ে বাইরে এসে বলে
” রুহির জ্বর হয়েছে। কয়েকবার বমিও করেছে তাই অসুস্থ হয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে।” ফুপি চোখ পাকিয়ে বলে
” মানে কি ?? মেয়েটার এই অবস্থা আর তোরা ওকে এভাবেই নিয়ে এসেছিস !! সুস্থ হলেই তো আসতে পারতি।” অভিদ সোফায় বসে বলে
” তোমার আদরের বউ মা আমার ঘাড় মোষ চিবিয়ে খেয়েছে বাড়িতে আসার জন্য। আজকে অসুস্থ হয়েও আসতেই হবে। আমি হাজার বার মানা করার পরো শুনেনি।” ফুপি রুহির উপর ভিষন রাগ হলো। রেগে বলে
” এই অসুস্থ শরীর নিয়ে আসার কি দরকার ছিলো বুঝলাম না। দুইদিন পরে আসলে কি বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে যেতো ??” বলে আখিলের দিকে চোখ যেতেই চোখ, মুখে হাসি ফুটলো। আখিল, আশিক, জোতির কাছে গিয়ে বলে
” আরে তোমরা এখনও দাঁড়িয়ে আছো কেনো ?? বসো, বসো তোমরা বসো। আমি তোমাদের জন্য সব ব্যাবস্থা করছি। তোমরা সবাই এতোটা পথ জার্নি করে এসেছো ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি রুহির মা, বাবাকে ফোন করছি। আর অভিদ ডক্টরকে আসতে বল।” বলে রান্নাঘরে ছুটে গেলো। অভিদ আখিলের দিকে তাকিয়ে বলে
” এসো তোমাদের রুম দেখিয়ে দিচ্ছি তোমরা সেখানে ফ্রেশ হয়ে নাও আর জোতি তুমি অনির সাথে যাও অনি তোমাকে রুম দেখিয়ে দেবে। সেখানে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে পরে নিচে এসো। মা, বাবা আসবে। যাও”
অনি জোতিকে একটা রুম দেখিয়ে দেয়। আর অভিদ আখিল,আশিককে রুম দেখিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। রায়হান গার্ডদের লাগেজ গুলো সবার রুমে দিয়ে আসতে বলে তুষারের দাথে কথা বলতে বলতে রুমে চলে যায়।
অভিদ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ডক্টর এসে পরেছে। অভিদ ডক্টরের সামনে গিয়ে বলে
” আসসালাম ওয়ালাইকুম আংকেল !!” ডক্টর হাসি মুখে সালামের উত্তর দিয়ে বলে
” তো এতদিন কোথায় ছিলে ??” অভিদ পকেটে হাত গুজে বলে
” নিউজিল্যান্ড ছিলাম অফিসের কাজে আর কিছু কাজে। আচ্ছা চলুন আপনার রোগির কাছে নিয়ে যাই।” ডক্টর হেসে বলে
” হুমম চলো।” অভিদ ডক্টরকে নিয়ে রুহির রুমে গেলো। ডক্টর রুহির চেকাপ করে পেশার মাপার বেল্টটা খুলতে খুলতে বলে
” তোমার ওয়াইয়ের শরীর খুবই দুর্বল। জার্নির সময় বমি করায় আরও দুর্বল হয়ে গিয়েছে। আর উনি খাওয়া-দাওয়া কম করে। ওয়াইফকে ভালো করে খাওয়াবে আর খেয়াল রাখবে। দুই দিন ভালো করে খাওয়া দাওয়া করলে আর রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। এখন ঘুম থেকে উঠলে সুপ বা কিছু খাবার খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিও।” অভিদ শান্ত গলায় বলে
” ঠিকাছে আংকেল।” গার্ড ডক্টরকে নিয়ে বেড়িয়ে যায়। অনি রুহির পাশে বসে ছিলো অভিদ অনির পাশে বসে বলে
” তুই বিয়েতে নিজ ইচ্ছায় রাজি হয়েছিস তো ??”
অনি অবাক হয়ে গিয়েছে হঠাৎ এই প্রশ্ন করায়। অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” কেনো ভাইয়া তুমি কি রাজি না ??” অভিদ হালকা মাথা নেড়ে বলে
” নাহ সেটা বলিনি। আমি বলছি যে তুই কি সবাই রাজি হয়েছে বলে রাজি হয়েছিস নাকি নিজের ইচ্ছায় !!” অনি মুখে লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলে
” দুইটাই ” অভিদ মুচকি হেসে বলে
” তাহলে ভালো। আচ্ছা রায়হানের রুমে যা সেখানে কয়েকটা লাগেজ আছে। লাগেজে সবার জন্য গিফট আছে। তুই তোর গিফট দেখে নে পছন্দ হয়েছে কিনা !!” অনি খুশিতে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায় আর দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায়। অভিদ অনির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো। দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে রুহির পাশে এসে বসলো। রুহির ক্লান্ত মাখা মুখটা দেখে অভিদের খারাপ লাগছে। মনে মনে ভাবছে
” তোমাকে যদি বেধে আটকে রাখতাম তাহলে আর সিক হতে না। তোমার সাথে রাগি ভাবে কথা না বললে তুমি আমাকে ভয় পাও না। এখন থেকে সব সময় তোমার সাথে রেগে কথা বলতে হবে।” ভেবে মুখটাকে গম্ভীর বানিয়ে রাখলো। ভেবে নিলো আজকে থেকেই রুহিকে রাগের মাধ্যমে ভালোবাসা দেখাবে অবদার মেনে মেনে আর ভালোবাসবে না , রুহির কোনো অযৌতিক আবদার মানবে না।
রুহির ঘুম ভাঙতেই দেখতে পেলো পাশে অভিদ বসে আছে। রুহি উঠে বসতে নিলেই মাথাটা ভার ভার মনে হলো। উঠতে না পেরে আবার শুয়ে পরলো। অভিদ মোবাইল দেখছিলো রুহির দিকে তাকাতেই দেখলো রুহি তাকিয়ে আছে উপরের দিকে। অভিদ মোবাইল রেখে রুহির পাশে গিয়ে ধীর গলায় বলে
” ঘুম ভেঙেছে !! দেখি উঠে বসো।” অভিদ রুহিকে উঠিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো। রুহি মুখে হাত দিয়ে কাশতে থাকে। অভিদ পাশ থেকে পানি নিয়ে রুহিকে খাইয়ে দেয়। রুহির পানি খাওয়া শেষ হতেই অভিদ পানির গ্লাস টা রেখে দেয়। রুহি চারপাশে তাকিয়ে আফসোস সুরে বলে
” আমরা কখন এসেছি ?? আমাকে ডাকলেন না !! আমি সবার সাথে কথা বলতাম” অভিদ
রাগি গলায় বলে
” জ্বরে দুর্বল হয়ে সারা রাস্তা ঘুমিয়ে ছিলো। আবার সবার সাথে দেখা করবে। হুহ আর কোনোদিন যদি এরকম জেদ করেছো !! তাহলে দেখবে কি করি তোমাকে।” রুহি মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। অভি রুহির মুখ ফুলানো দেখে বলে
” মুখ ফুলানো ছাড়া আর কি করতে পারো ?? কিছু হলেই তো মুখ ফুলিয়ে রাখো।” রুহি অভিদের কথা শুনে কাঁদোকাঁদো মুখ করে তাকায়।অভিদ বিছানা থেকে নামতে নামতে বলে
“অনিকে পাঠাচ্ছি তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি সার্ভেন্টকে তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসতে বলছি।” রুহি দ্রুত বলে
” আরে আমি এখন কিছু খাবো না। আমার এখন খিদে নেই।” অভিদ দাঁতে দাঁত চেপে গম্ভীর গলায় বলে।
” যেটা বলেছো সেটা মুখেই রেখে দাও। তোমার আর কোনো কথা আমি রাখবো না। রেখেছি বলেই আবার বিছানায় শুয়ে আছো। চুপচাপ ফ্রেসগ হয়ে নাও আমি খাবার আনছি।” রুহি অভিদকে দেখে ভয়ে চুপ করে গেলো। অভিদ রুম থেকে বেড়িয়ে অনিকে পাঠিয়ে দিলো।
অনি রুমের আসতেই রুহিকে নিয়ে মেতে উঠে। দুজন কিছুক্ষণ গল্প করে রুহি ফ্রেশ হয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পরে একজন সার্ভেন্ট এসে রুহির খাবার রেখে যায়। অভিদ এসে রুহির পাশে বসে খাবার নিয়ে। অনি দুজনকে একা রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। অভিদ রুহির মুখের সামনে খাবার নিতেই রুহি মুখ ঘুড়িয়ে বলে
” আমি সত্যি বলছি আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। পরে খেয়ে নেবো প্লিজ !!” বলে অভিদের দিকে তাকায় মুখ চুপসে গেলো। অভিদের রক্তিম চোখ গুলো দেখে আর কিছু বলার সাহস হলো না। মুখ খুলে খাবারটা মুখে পুরে মুখ কুচকে খেতে থাকে। আরও কিছু খাবার খেয়ে বলে
” আর না প্লিজ। এবার আমি মরেই যাবো।” রুহির মুখে মরার কথা শুনে অভিদের বুকে কথাটা তীরের মতো লাগলো। নিজেকে ঠিক রেখে রেগে রুহিকে ধমক দিয়ে বলে
” চুপ !! একটা লথা বললে থাপ্পড় মারবো চুপচাপ খেয়ে নাও।” রুহি অভিদের ধমক শুনে লাফিয়ে উঠে। হাটু গুটিয়ে বসে ভয়ে মাথা নারে। অভিদ রুহিকে আবার খাইয়ে দিতে থাকে। রুহি খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে বলে
” আউ, আব্বু, রাইমা, মিশু ওরা কি আসবে ??” অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” হুম। ফুপি বলেছে ইম্পরট্যান্ট কিছু কথা আছে তাই সবাইকে নিয়ে আসতে। ওরা সবাই আসছে।” খাওয়া শেষে অভিদ রুহির মুখ মুছিয়ে দেয়। সার্ভেন্ট এসে খাবার প্লেট নিয়ে যায়।
অভিদ রুহির কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরে। রুহি ভয়ে ভয়ে অভিদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। অভিদ রুহির দুই হাত ধরে ঠোট ছোঁয়াতেই রুহির ভয় কেটে গেলো।
চলবে… wait for next part….