মাফিয়া ক্রাশ বর পর্ব-৩৯

0
2226

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ৩৯

রাতে রুহি টিভি দেখতে দেখতে বলে
” আচ্ছা আমি ভার্সিটিতে কবে থেকে যাবো ??” অভিদ মাথা ঘুড়িয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” মাত্র এসেছো এখনি সব করে ফেলিবে নাকি ?? আগে পুরোপুরিভাবে সুস্থ হও তার পর তোমাকে ভার্সিটিতে যেতে দেওয়া হবে।” রুহি মাথা নেড়ে আবার টিভি দেখায় মনোযোগ দেয়। রুহির অভিদের কাধে মাথা রেখে টিভি দেখতে থাকে। অভিদ একি ভ্রু উঁচু করে রুহির দিকে থাকে। রুহি পা থেকে পর্যন্ত ব্ল্যাংকেট দিয়ে ঢেকে অভির সাথে মাথা রেখে টিভিতে Golmal junior কার্টুন দেখছে। রুহি টিভি দেখলে সব সময় এই কার্টুনটা আর হিন্দি সিরিয়াল দেখে অন্য কোনো নাটক বা কিছু দেখে না। অভিদ জিজ্ঞেসু চোখে রুহির দিকে তাকিয়ে বলে
” আচ্ছা তুমি অন্য মেয়েদের মতো স্টার জলসা, জি বাংলা এই সব নাটক দেখো না কেনো ??” রুহি টিভিতে তাকিয়েই বলে
” এমনি ” অভিদের ফোন আসতেই অভিদ ফোন নিয়ে বেড়িয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে কার্টুন শেষ হতেই রুহি টিভি অফ করে দেয়। ব্ল্যাংকেট সরিয়ে আস্তে আস্তে খাট থেকে নামতে থাকেক। রুহির এক পা একটু ভালো হলেও অন্য পা এখনও তেমন একটা ভালো হয়নি তাই স্টিক নিয়ে হাটতে হয়। রুহি বিছানার শেষ প্রান্তে বসে পাশ থেকে স্টিকটা এনে স্টিকের ভেতরে বাম হাত ঢুকিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আয়নার সামনের ছোট টুলে বসে চুল গুলো বেধে নিলো। চুল বাধা শেষে হেটে আলমারির কাছে গিয়ে সেখান থেকে একটা চাদর বের এক হাতে কোনো রকমে গায়ে জড়িয়ে নেয়। রুমের লাইট গুকো অফ করে রুম থেকে বেড়িয়ে ছাদের দিকে চলে যায়।

অভিদ কথা শেষ করে রুমে এসে দেখে রুমের লাইট অফ অভিদ লাইট জ্বালিয়ে চুমে চোখ বুলিয়ে দেখে নেয় রুহি আছে কিনা। রুহিকে না দেখে বান্দার দিকে যেতে নিলেজ দেখে বারান্দার থাই গ্লাসের দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ। অভিদ রুমের লাইট অফ করে বাইরে গিয়ে গলার স্বর উঁচু করে ডেকে উঠে
” রুহি !! কোথায় তুমি ?? রুহি ? রুহি !!” অভিদ ডাকতে ডাকতে সব জায়গা খুঁজে নেয়। রুহিকে কোথাও না পেলে মনে ভয় জেগে উঠলো। অভিদ ভয় নিয়ে রায়হানকে ডাকতে গিয়েও ডাকলো না। উপরের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে
” ছাদে তো দেখা হয়নি। ছাদে দেখে আসি।” বলে ছাদের দিকে দ্রুত পা বাড়ায়। ছাদের দরজার সামনে আসতেই দেখতে পেলো রুহি ছাদের দোলনায় চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসে আছে আর দোলনাটা নিজেই হালকাভাবে দুলছে।অভিদ রেগে দাঁতে দাঁত চেপে নিচু গলায় বলে
” বজ্জাত মেয়ে আমাকে না বলে টেনশনে ফেলে এখানে এসে দোলনায় দোলা খাওয়া হচ্ছে !! দাড়াও !!” অভিদ ধীর পায়ে রুহির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। রেগে বিকট ধমক দিয়ে বলে উঠে
” রুহি !! আমাকে না বলে এসে এখানে দোল খাচ্ছো !! আর ওদিকে যে আমি টেনশনে আরেকটু হলেই মরে যেতাম সেটার ঝেয়াক আছে তোমার ।”

রুহি অনেক্ষণ হয়েছে ছাদে এসেছে। দোলনায় বসে চাঁদ দেখতে দেখতে মাত্রই চোখে ঘুম নেমে এসেছিলো তাই কখন ঘুমিয়ে পরেছে খেয়াল নেই। অভিদের এমন বিকট ধমক শুনে একপ্রকার লাফিয়েই উঠেছে। ধপ করে চোখ খুলে সামনে অভিদের অগ্নিলাভার মতো চোখ, মুখ দেখে রুহি ভয় লেয়ে গেলো। তাড়াহুড়ায় দোলনা থেকে নামতে গেলেই ভাঙা পা টা গাউনে লেগে ধপ করে পরে গেলো ফ্লোরে। দোলনা থেকে এভাবে পরে যাওয়ায় দোলনাও জোড়ে নড়ে উঠে। রুহি উঠে বসতেই দোলনা গিয়ে খুব জোড়ে রুহির মাথায় বারি খায়। অভিদ চমকে রুহিরকে আরেকটা বাড়ি দেওয়ার আগেই দোলনা ধরে নেয়। রুহি ফ্লোরে পরে হাতে,পায়ে ব্যাথা পেয়েছে এখন আবার দোলনার বারি খেয়ে ব্যাথায় ঠোট উল্টিয়ে কেঁদে দেয়।অভিদ দোলনা থামিয়ে রুহির কাছে বসে অস্থির হয়ে রুহির গালে হাতে মাথায় দেখতে দেখতে বলে
” কোথায় ব্যাথা পেয়েছো ?? পাখি ?? পায়ে ব্যাথা পেয়েছো নাকি হাতে ব্যাথা পেয়েছো ?? মাথা লেগেছে ?? বলো না।” এরকম কথা বলতে থাকে আর হাত পা দেখতে থাকে। রুহি অভিদের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে থাকে। অভিদ রুহির উত্তর না পেয়ে রুহিকে কোলে তুলে আবার দোলনায় বসিয়ে দিলো। রুহি হিচকি তুলে কান্না করছে আর চোখের পানি ফেলছে। অভিদ রুহির দিকে তাকিয়ে আবার ধমক দিয়ে বলে
” কথা বলছো না কেনো ?? কোথায় ব্যাথা পেয়েছো ??” রুহি কান্না করতে করতে মাথা হাতে আর পায়ে দেখায়। অভিদ রুহির হাত ধরে সামনে এনে দেখে হাত খানিকটা ছিলে গিয়েছে। পায়ে আগে থেকেই ব্যাথা তাই অভিদ পাও চেক করে নেয়। পায়ে কিছু হয়নি আগের ব্যাথা থেকেই এভাবে পরে যাওয়া ব্যাথা পেয়ছে। মাথায় দেখে বারি খাওয়া জায়গা টা ফুলে লাল টমেটো হয়ে গিয়েছে। অভিদ উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে যেতে যেতে বলে
” রুহি একদম নড়বে না আমি এখনি আসছি।” বলে দৌড়ে চলে গেলো। রুহি এক হাত দিয়ে হাত ধরে আছে আবার সেই হাত দিয়ে পা ধরে শব্দ করে ঠোট উলটে বসে বসে কাঁদছে।

কিছুক্ষণ পরে অভিদ আবার আগের মতো দৌড়ে রুহির কাছে আসলো। রুহির পাশে বসতেই রুহি দেখলো অভিদের হাতে Ice cube রয়েছে। রুহি কাঁদতে কাঁদতে বলে
” বরফ দিয়ে কি করবেন আপনি ??” অভিদ রুহির দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে।
” আমার মাথায় ঢালবো।” বলে রুহির মাথায় ব্যাথার জায়গায় বরফ দিয়ে ডলতে থাকে। রুহি আস্তে আস্তে কান্না থামিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে অভিদের দিকে তাকিয়ে থাকে। অভিদ কিছুক্ষণ মাথায় বরফ দিয়ে আবার হাতে ঘষতে থাকে। হাতে বরফ দিতে দিতে বলে
” সরি !! আমি তোমাকে এভাবে ধমক দেওয়ায় তুমি পরে ব্যাথা পেলে। সরি পাখি !! আর তুমি আমাকে না বলে এসেছো কেনো ?? জানো আমি তোমাকে কোথাও না পেয়ে কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ?? ছাদের কথা মনে পরতেই এখানে এসেছি। আর এই পা নিয়ে এখানে আসার কি দরকার ছিলো ??” রুহি কাঁদোকাঁদো গলায় বলে
” এতো গুলা প্রশ্ন একসাথে করছেন কেনো। একটা একটা করে করুন !! সব ভুলে যাচ্ছি।” অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
” আচ্ছা বলো আমাকে না বলে এখানে এসেছো কেনো ?? জানো তোমাকে না পেয়ে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম !!” রুহি মাথা নিচু করে বলে
” আপনি তো ফোনে কথা বলতে বাইরে গিয়েছিলেন আর আমার কার্টুন শেষ হয়ে গিয়েছিলো তাই ভাবলাম ছাদে ঘুরে যাই।” অভিদ আবার এখই আভাবে বলে উঠে
” ছাদে এসেছো কেনো এই পা নিয়ে ?? বারান্দায় কি দোলনা ছিলো না ?? নাকি আকশ দেখা যায় না সেখান থেকে কোনটা ??” রুহি ঠোট উল্টে বলে
” একটু ছাদে আসতে ইচ্ছে করলো তাই এসেছি আর আপনাকে না বলে আসবো না। সরি।” রুহির বাচ্চাদের মতো মুখ করে কথা গুলো শুনে অভিদ নিঃশব্দে হাসলো। বরফ দেওয়া শেষ করে অভিদ রুহিকে নিয়ে চন্দ্র বিলাশ করতে থাকে। বাতাসের তালে তাল মিলিয়ে অভিদ চুল গুলো উরছে। রুহি লোভ টা সামলাতে না পেরে অভিদের অগোছালো চুল গুলো ঠিক করে দিতে থাকে। অভিদ আকাশের থেকে চোখ ফিরিয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে হাসলো। বাতাসের কারণে আবার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে গেলো। রুহি ভ্রু কুচকে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে আবার ঠিক করে দিতে লাগলো। আবার চুল গুকো নষ্ট হয়ে গেলো। বারবার এমন হওয়ায় রুহি হার মেনে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলো। অভিদ রুহিকে দেখে শব্দ করে হেসে দিলো। রুহি ভেংচি দিয়ে আকাশে দিকে তাকালো।

কিছুক্ষণ পরে রুহি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে
” আপনার মনে আছে সেই দিনের কথা !! আমরা তো সেইদিনও ছাদে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছিলাম। দিনটা খুব সুন্দর ছিলো।” বলে অভিদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো। অভিদ রুহির দিকে তাকিয়ে রুহির মাতাল করা মুচকি হাসিটা দেখতে থাকে। সেইদিনের কথা মনে করে কি করে হাসছে সেটাই ভাবছে অভিদ মনে মনে বলে
” সেইদিনটা তো সুন্দরই ছিলো তবে শেষ পর্যন্ত আর বাকিটা সুন্দর করতে পারলাম না। হাতের নাগালে সব চলে গেলো।” ভেবে রুহির দিকে দেখে রুহি মন খারাপ করে বসে আছে। অভিদ ভ্রু কুচকে বলে
” কি হয়েছে মন খারাপ হয়েছে কেনো ??” রুহি অভিদের দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
” সেই দিনটা শেষ পর্যন্ত সুন্দর হতে পারলো না !!” রুহির ছলছল চোখের তাকানো অভিদের বুকে তোলপার করে দিলো। অভিদের আবার সিহাবের কথা মনে পরে গেলো। অভিদ চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে রুহিকে টেনে বুকে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। রুহি অভিদের বুকে এক হাত রেখে অন্য হাত দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। দুজন সারা রাত চন্দ্র বিলাশ করে শেষ রাতের দিকে রুহির অভিদের বুকে মাথা রেখে আর অভিদ দোলনায় হেলান দিয়ে রুহিকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

সকালের রোদের প্রখর দুজনের মুখে পরতেই রুহি মুখ কুচকে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। অভিদ আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুলে চারপাশে তাকায়। চারপাশ দেখে ভ্রু কুচকে আসে একটু পর মনে পরে রাতে এখানেই ছিলো দুজন। অভিদ মাথা নিচু করে রুহির দিকে তাকায়। রুহি রোদ থেকে বাচার জন্য বারবার এক পাশ থেকে অন্য পাশে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। রুহির এখনও ঘুম ভাঙেনি আবার গায়ে জ্বর রয়েছে। অভিদ রুহিকে কোলে তুলে নিচে রুমে এসে পরলো। রুহিকে শুয়ে দিয়ে ওয়াসরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখলো রুহি গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে। অভিদ রুহির কাছে এসে রুহির কপালে হাত দিয়ে দেখে রুহির জ্বর বারছে। অভিদ হাত থেকে টাওয়াল টা রেখে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে নেমে এলো।
সকাল ৯ টা বাজে সবাই এখানে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। সবাই টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছে। অভিদ সার্ভেন্টকে ডেকে বলে
” শেফকে বলো একটু সুপ বা চিকেন স্টু করতে” সার্ভেন্ট মাথা নেড়ে রান্নাঘরে চলে গেলো। তুষার হেসে বলে
” ভাইয়া আজকে এতো দেড়ি উঠলে যে ?? একাই নিচে নেমে এলে ভাবি কোথায় ??”অভিদ গম্ভীর গলায় বলে।
” রুহির জ্বর এসেছে আবার তাই ঘুমিয়ে আছে।” ফুপি চিন্তিত হয়ে বলে
” সে কিরে রুহি রাতে জ্বরে মেডিসিন খায়নি ??” অভিদ মাথা চুকলে বলে
” মনে হয় খায়নি তাই আবার জ্বর এসেছে।”
রায়হান ক্ষিপ্ত স্বরে বলে
” এই মেয়েটা সব কিছুতেই হেলা ফেলা করছে আজকাল। একবার মেডিসিন খায়না আরেকবার খাবার খায় না।” অভিদ কোমড়ে দুই হাত রেখে বলে
” আর বলিস না। আমি ভেবেছিলাম বিয়ে করেছি আমার বউ সারাদিন আমার যত্ন নেবে কিন্তু আমার বউ দেখি সবার থেকে বেশি বেশি ভালোবাসা পেয়ে নিজেই সব কিছু হেলাফেলা করে অসুস্থ হয়ে থাকে আর সবাই ওর যত্ন নেয়।”
ফুপি, রায়হান একটু রাগ নিয়ে থাকলেও অভিদের কথায় রায়হান সহ সবাই ফিকফিক করে হেসে দেয়। অভিদ বিরক্ত মুখ করে বলে।
” তোমরা হাসছো কেনো ?? আরও বেশি বেশি করে ভালোবাসা দাও। আর রুহি প্রতিদিন বাচ্চাদের মতো নিজেএ যত্ন না নিয়ে অসুস্থ হয়ে থাকুক।” বলে উপরে চলে যায়। সবাই এখনও হেসে যাচ্ছে।

অভিদ রুমে এসে এসি কমিয়ে দিলো। রুহির মেডিসিন বের করে রাখে। কিছুক্ষণ পরে সার্ভেন্ট এসে রুহির খাবার দিয়ে চলে যায়। অভিদ রুহিকে উঠিয়ে হেলান বসিয়ে দেয়। রুহিকে ঘুমের মাঝেই খাবার খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দেয়। খাওয়া শেষ করে মুখ মুছিয়ে আবার শুয়ে দেয়। রুহি আগের মতো গুটিয়ে ঘুমিয়ে পরে। অভিদ নিচে গিয়ে খাবার খেতে থাকে। রায়হান এসে বলে
” অফিসে কবে থেকে যাবি ??” অভিদ মাথা উঠিয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলে
” কালকে থেকে যাবো। কালকে গিয়ে দেখবো এতোদিন না থাকায় অফিসের চেহারা কেমন হয়েছে। then next day থেকে আবার আগের মতো কাজ শুরু করবো।” রায়হান মাথা নেড়ে বলে
” ওকে। তাহলে আজকে ছুটি কাটি নেই আমি।” বলে নাচতে নাচতে রুমে চলে গেলো। অভিদ হালকা হাসলো, অভিদ জানে রায়হান এখন মিশুর সাথে কথা বলবে। অভিদ খাওয়া শেষে রুমে এসে পরলো। রুহির পাশে বসে রুহির কপালে হাত দিয়ে দেখে নেয় জ্বর আছে কিনা। জ্বর আস্তে আস্তে কমে আসছে দেখে অভিদ সস্তির নিশ্বাস ফেললো। অভিদ ল্যাপটপ নিয়ে বসে পরলো। অফিসের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে নিলো আর বললো কালকে থেকে অফিসে যাচ্ছে। তারপর সব গার্ডদের সাথে কথা বললো। আবার কোনো অনৈতিক কাজ চলছে কিনা সেটাও জেনে নিলো। তাদের কথা অনুযায়ী এখনও তেমন কিছু শুরু হয়নি। অভিদ আলাদা ফোর্স লাগিয়ে দিলো সিহাবকে খোজার জন্য।

দুপুরের দিকে রুহির ঘুম ভাঙলো। রুহি উঠে দেখে অভিদ, অনি, তুষার, রায়হান পাশে বসে গল্প করছে। রুহি হাই তুলে উঠে বসলো হালকা শীত শীত লাগছে তবে সেটাকে পাত্তা দিলো না।
ঘুম ঘুম গলায় বলে
” কি গল্প করছো তোমরা ??” রুহির কথায় সবাই রুহির দিকে তাকালো। তুষার চোখ ছোট ছোট করে বলে
” এই যে আমাদের আদরের ভাবি উঠেছেন তাহলে ?? নিজের খেয়াল রাখতে পারেন না !!মাথা টমেটোর মতো লাল আর ফুলে হয়ে আছে কেনো ??” রায়হান ক্ষিপ্ত স্বরে বলে
” আবার কোথায় পরে গিয়েছো বলোতো ?? তুমি নিজের প্রতি এতো অবহেলা করছো কেনো। সারাজীবন অসুস্থ হয়ে থাকবে ?? সুস্থ হতে হবে তো নাকি !!” রুহি বলে উঠে
” আমি কোথায় অবহেলা করি !! এখন আমার পায়ের কারণে একটু এমন হচ্ছে। পা ঠিক হলে আমি আর পঙ্গুর মতো থাকবো নাই। তখন এমনি সুস্থ হয়ে যাবো।” বলে অভিদের দিকে তাকাতেই রুহির গলা শুকিয়ে গেলো। অভিদ বাকা হেসে তাকিয়ে আছে। রুহি অভিদের এমিন চাহনি দেখে ঢোক গিললো। অভিদের এটা অন্যরকম বাকা হাসি যেটা দেখে রুহি বুঝতে পারলো অভিদ রেগে গয়েছে রুহির কথায়। রুহি আমতা আমতা করে বলে
” আ আমি ফ্রেশ হয়ে আসে। আপনারা গল্প করুন।” বলে বিছানা থেকে নেমে কোনো রকমে ওয়াসরুমে ঢুকে হাফ ছেড়ে বাচলো।
সবার সাথে গল্প করে মজা করে, রুহির বাড়িতে, জোতির বাড়িতে ফোন করে, মিশুর সাথে কথা বলে এভাবেই আজকের দিনটা চলে গেলো। পরের দিন থেকে অভিদের অফিসে যাওয়া শুরু হলো। অভিদের রাগি ভাব, গম্ভীর ভাবে কথা বলা কিছু হলেই আগের মতো বকা ঝকা করা এভাবেই অফিস টা আবার আগের মতো হয়ে গেলো।
এভাবেই এক সাপ্তাহ হয়ে গেলো অভিদ, রায়হান বাড়িতেও আগের ফ্রমে ফিরে এলো। রুহি আবার অভিদকে আগের মতো ভয় পায় যদিও আগের থেকে একটু কম। তবে ভয় পায়। এতো ভয় পাওয়ার মাঝেও রুহির আরেক বায়না শুরু হয়েছে রুহি ভার্সিটিতে যাবে।

চলবে..wait for next part….