মিশেছো আলো ছায়াতে পর্ব-২০+২১+২২

0
386

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 20

🍁🍁🍁

সিমথি : রোদু ভাবী তোর মুড অফ।

রোদেলা : খবর দার ভাবী বলে ডাকবি না।

মেঘা : কেনো ভাবী।

রোদেলা একটা কলম নিয়ে মেঘার দিকে ছুঁড়ে মারে। কলম টা গিয়ে মেঘার কপালে লেগে নিচে পড়ে যায়। মেঘা কপালে হাত দিয়ে রোদেলার দিকে তাকায়।

মেঘা : হা/রা/মি একটা।

তুহিন : কি ব্যাপার রোদু সোনামণি। বরের সাথে ঝগড়া লাগছে আবার।

রোদেলা : কে বর কিসের বর কোথাকার বর। আমি ওই ইফাজ টিফাজ কে বিয়ে করবো না। হি/ট/লা/র একটা।

সিমথি : ইফাজ ইজ নরমাল বাট টিফাজ ওমা গো কি ভালোবাসা। ইফাজ ভাই কে আজ কাল এসব নামে ও ডাকিস নাকি।

রোদেলা : বইন চুপ যা। কিসের ভালোবাসা৷ তোর ভাই তিনদিন ধরে আমাকে কোনো ফোন দেয় না। এমনকি আমার কথা ওর মনে ও পড়ে না। আগে যদি জানতাম তোর ভাই এমন পাল্টি খাবে জীবনে ও এনগেজমেন্ট করতাম না।

মেঘা : তো কি ডিরেক্ট বিয়ে করে। বাসর ঘরে চলে যেতি।

তুহিন : এতোদিনে তাহলে তিন বাচ্চার মা ও হয়ে যেতি। হাউ নাইস।

তুহিন আর মেঘার কথায় সিমথি শব্দ করে হেসে উঠে। রোদেলা কটমট দৃষ্টিতে তিনজনের দিকে তাকিয়ে বকতে বকতে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। হঠাৎ দরজার সামনে কারো সাথে ধাক্কা লাগতেই রোদেলা চেঁচিয়ে উঠে।

রোদেলা : আশ্চর্য খাম্বা আসলো কোথ থেকে। সিমথি আজকাল তোর কেবিনে খাম্বা ও রাখিস।

ইফাজ : এটা খাম্বা না তোমার হবু বর।

ইফাজের কন্ঠস্বর শুনে রোদেলা লাফিয়ে সরে দাঁড়ায়। আঙ্গুলের নখ কামড়ে আড় চোখে ইফাজের দিকে তাকায়। ইফাজের রাগান্বিত দৃষ্টি দেখে সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নেয়।

রোদেলা : সি সিমথি আ আমি আসছি।

রোদেলা বেরিয়ে যেতে নিলে ইফাজ হাত চেপে ধরে। রোদেলা আড়চোখে সিমথি দের দিকে তাকায়। সিমথিদের মুচকি হাসতে দেখে চোখ পাকিয়ে তাকায়।

রোদেলা : সিয়ু তোর ভাই কে হাত ছাড়তে বল। আমার কাজ আছে।

সিমথি : এই পক্ষের কথা ওই পক্ষ আবার ওই পক্ষের কথা এই পক্ষে পাচার করার সময় নেই।

ইফাজ : সিমথি ওর কাজ গুলো পেন্ডিং করে রাখতে বল। দুই ঘন্টা পর এসে করলে এমন কিছুই হবে না। আপাতত তোর বান্ধবী কে নিয়ে যাচ্ছি।

সিমথি : তোমার বউ তোমার ইচ্ছে।

সিমথির কথায় ইফাজ আলতো হেসে সিমথির দিকে তাকায়। মেঘা আর তুহিন দুষ্টুমির স্বরে রোদেলাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,,

_ বেস্ট অব লাক দোস্ত। তোর দুই ঘন্টার জার্নি শুভ হোক।

রোদেলা : এই হাত ছাড়ুন গুন্ডাদের মতো হাত ধরবেন না ওকে।

ইফাজ : ভালোই ভালোই চলো বলছি। বাধ্য করো না লোকসমাগমের মাঝে তোমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে। বোন আসছি।

ইফাজের কথায় রোদেলা দমে যায়। বাধ্য মেয়ের মতো গুটিগুটি পায়ে ইফাজের সাথে যায়। ইফাজ আর রোদেলা বের হতেই সিমথির কেবিনে হাসিতে ফেটে পড়ে তুহিন আর মেঘা। সিমথি মুচকি হেসে ল্যাপটবে দৃষ্টি দেয়।

সিমথি : এবার তোরা যা। সারাক্ষণ শুধু আড্ডা আর আড্ডা।

সিমথির কথায় তুহিন আর মেঘা হেসে নিজেদের কেবিনে চলে যায়।

নৌরিন : ম্যাম আসবো।

সিমথি : ইয়েস কাম।

নৌরিন : ম্যাম আপনার নামে পার্সেল আছে।

নৌরিনের কথায় সিমথি ভ্রু কুঁচকে নৌরিনের হাতে থাকা পার্সেলের দিকে তাকায়।

সিমথি : পার্সেল আমার নামে। কে দিলো।

নৌরিন : জানি না ম্যাম। কিছু তো লেখা নেই।

সিমথি : ওকে রেখে যাও। আমি দেখছি।

নৌরিন পার্সেল টা রেখে চলে যায়। সিমথি কিছুক্ষণ পার্সেল টার দিকে তাকিয়ে থেকে পুনরায় নিজের কাজে মন দেয়।

বেশকিছু ক্ষণ পর সিমথির ফোনে নোটিফিকেশনের শব্দ হয়। সিমথি ফোন হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে একটা ম্যাসেজ।

” পার্সেল টা খোলে দেখো। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। ”

সিমথি ফোনটা সাইডে রেখে পার্সেল টা হাতে নেয়। দুপাশ চেক করে পার্সেল টা খুলতে শুরু করে। পার্সেল টা খুলতেই সিমথি চমকে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে। হন্তদন্ত হয়ে ফোন হাতে নিয়ে আননোন নাম্বারে কল লাগায়। কিন্তু নাম্বার টা বন্ধ পায়। বেশ কয়েক বার কল লাগায় কিন্তু ফলাফল একই। হঠাৎ আরেক টা ম্যাসেজ আসে।

” প্রিয় মানুষ দের বাঁচাতে চাইলে যেই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছো সেটা থেকে বেরিয়ে আসো। নয়তো একে একে সবাই কে হারাবে। আজকের আ্যটাক টা শুধু ট্রেইলার আগামীদিন ডিরেক্ট শুট করবো কপাল বরাবর। ”

সিমথি ম্যাসেজ টা পড়ে শুকনো ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে নেয়। সায়নের নাম্বারে কল লাগায় কিন্তু ওপাশে কোনো রেসপন্স না পেয়ে ঘাবড়ে যায়। পার্সেল টা সরিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়ে। সিমথি বের হতেই তুহিনের সাথে দেখা হয়।

তুহিন : সিয়া কি হলো। কোথায় যাচ্ছিস।

সিমথি : আসছি আমি। এদিকটা একটু সামলে রাখিস।

তুহিন কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সিমথি বেরিয়ে যায়। সিমথির এমন অদ্ভুত ব্যবহারের মানে বুঝতে না পেরে তুহিন সিমথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

আদি : যদি ঠিক সময় না আসতাম আমরা কি হতো । সে বিষয়ে কোনো সেন্স আছে তোর।

আদির কথায় সায়ন হাসে।

সায়ন : কি আর হতো রাস্তায় ম/রে পড়ে থাকতাম।

রিক : থা/প্প/ড় লাগাবো। মিম জানলে কি হবে জানিস। মেয়েটা ভেঙে পড়বে।

সায়ন : মিমকে আমি সামলে নেবো। ভয়টা মিম কে নিয়ে নয় পরী কে নিয়ে।

রিক : সিমথি যদি জানে কি যে হবে।

আদি : লোক গুলোকে চিনিস তুই।

সায়ন : তোর কি মনে হয়। আমি গু/ন্ডা/দের সাথে উঠবস করি।

আদি : ভাই-বোন দুইজনই এক মাটির। কথার উল্টো জবাব না দিলে হয় না।

সায়ন : আমার বোন আবার কি করলো।

রিক : আহ থামবি তোরা।

আচমকা দরজা খোলার শব্দে সায়নরা দরজার দিকে তাকায়। দরজায় দাঁড়ানো ব্যক্তি কে দেখেই সায়নরা একে অপরের দিকে তাকায়।

সায়ন : প প পরী।

সায়নের কথায় পাত্তা না দিয়ে সিমথি সোজা সায়নের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সায়নের অবস্থা দেখে সিমথির থমথমে মুখটা লালবর্ণ ধারণ করতে শুরু করে। সিমথি সায়নের কপালে ব্যান্ডেজের উপর হাত রাখে।

সিমথি : আমাকে জানালি না কেনো। ( শান্ত গলায়)

সিমথির শান্ত গলার স্বর শুনে সায়ন ঢোক গিলে। ঝড় আসার পূর্বাভাস দিচ্ছে।

সায়ন : প পরী রেগে যাস না।

সিমথি : আমি রেগে নেই।

সায়ন : তোর চোখ-মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে বোন। আমার কিছু হয়নি।

সিমথি : আনন্দে চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে। তোর কিছু হয়নি সেটা আমি দেখছি।

সিমথির কথায় সায়ন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সিমথির কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না সায়ন। তবে সায়ন বেশ বুঝতে পারছে সিমথি প্রচন্ড রেগে আছে। সিমথির ফোন বেজে ওঠে। সিমথি সায়নের দিকে তাকিয়েই ফোন রিসিভ করে।

সিমথি : আপনাকে পরে ফোন করছি। তখন না হয় হিসেব টা বরাবর করবো। বাট ইন দিজ মোমেন্ট ডোন্ট ডিস্টার্ব মি। আম বিজি নাউ।

সিমথি ফোন টা কেটে দেয়। দৃষ্টি এখনো সায়নে ব্যান্ডেজ করা জায়গা গুলোতে। আচমকায় সিমথি পাশের চেয়ারে বসে পড়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে নেয়। সায়ন আস্তে করে উঠে দাঁড়ায়। সিমথির পাশে দাঁড়িয়ে অক্ষত হাত দিয়ে সিমথির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সিমথি জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু মন আজ নিয়ন্ত্রণ হারাতে বসেছে।

সায়ন : পরী।

সিমথি : তোর কি মনে হয় আমি রেগে আছি।

সায়ন : ন নাহ নাহ।

সিমথি চোখ খুলে সায়নের দিকে তাকায়। কিছু সময়ের ব্যবধানে চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। সায়নরা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়৷

সায়ন : বোন

সিমথি : আমি রেগে আছি ভাইয়া। অনেক রেগে আছি। আরো বেশি রাগ হচ্ছে কারণ আমি রাগ প্রকাশ করতে পারছি না। না আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি। ভাইয়া আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। কিছু বল ভাইয়া প্লিজ।

সিমথির কথায় সায়ন শুকনো ঢোক গিলে। সায়নের বুঝতে বাকি নেয় সিমথির রাগ মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে।

সায়ন : বোন প্লিজ শান্ত হ। আমার ভয় লাগছে এবার।

সিমথি : বাড়ি চলে যা ভাইয়া। প্লিজ প্রশ্ন করিস না। বাড়ি যা। আমার নিজেকে কন্ট্রোল করতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমি চাই না আমার দ্বারা তোরা কেউ আঘাত পাস। রিক ভাইয়া প্লিজ এখান থেকে চলে যাও এখন তোমরা।

সায়ন : কিন্তু,,

সিমথি : ইফাজ ভাইয়া কিছু ক্ষণ পর চলে আসবে যা তোরা।

রিক : সায়ন চল।

সায়ন ও আর দ্বিমত না করে বেরিয়ে যায় রিকের সাথে। আদি এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। সিমথি চেয়ারে পুনরায় হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে নেয়।

সিমথি : ছাড়বো না আপনাকে। যেই হোন না কেনো আপনি। প্রতিটা আঘাতের মাসুল গুণে গুণে তুলবো। আমার নীরবতা দেখেছেন এতোদিন। এবার কঠোরতা দেখবেন। আমার ভাইয়া আমার জীবন। সেই জায়গায় আঘাত করে অনেক বড় ভুল করেছেন। পস্তাতে হবে আপনাকে চরম পস্তাতে হবে। ( বিড়বিড়িয়ে)

আদি : সিয়াজান।

সায়ন : এক মিনিট আদি কোথায়।

সায়নের কথা রিক থতমত খেয়ে যায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে আদিকে খোঁজার ভান করে।

সায়ন : কি রে বল।

রিক : আ আসলে ওর একটা ইমার্জেন্সি কল এসেছে। তাই আমাদের যেতে বলেছে। ও কল এটেন্ড করে আসবে। তুই চল আদি তো আর ছোট বাচ্চা না। পৌঁছে যাবে। চল

রিকের কথাকে সত্যি মনে করে সায়ন ও কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসে।

সিমথি : ভাইয়া কে কোথায় পেয়েছিলেন।

আদি : রাস্তায়।

সিমথি : ওহ।

বেশকিছু ক্ষণ দুজনের মাঝে নীরবতা নেমে আসে পুনরায়।

সিমথি : ধন্যবাদ ৷

আদি চমকে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি সচরাচর কাউকে ধন্যবাদ বা সরি বলে না। আদি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে সিমথির দিকে এগিয়ে যায়।

আদি : ধন্যবাদ কোনো দিলে।

সিমথি : ভাইয়াকে সেফ করার জন্য।

আদি : ওহহহ। বাট আমার ধন্যবাদ চাই না।

সিমথি : এজ ইউর উইশ। আমি সবাই কে যেতে বলেছি। আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো।

আদি : একটু আগেই তো বললি আমার ইচ্ছে।

সিমথি ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। অদ্ভুত ভাবে রাগ টা কমতে শুরু করে।

আদি : বাড়ি যাবি না।

সিমথি : নাহ। হসপিটালে যাবো। আপনি বের হোন।

আদি : চলো তোমায় পৌঁছে দিই।

সিমথি : নো নিড। আমি যেতে পারবো।

আদি : এটা আমিও জানি। আমার বউ একাই একশো।

সিমথি : আমি আপনার বউ না।

আদি : তুই আমার বউ শুধু আমার।

সিমথি : তাহলে শ্রেয়া কে?

চলবে,,,,

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 21

🍁🍁🍁

সিমথি : তাহলে শ্রেয়া কে?

সিমথির কথায় আদি ভ্রু কুঁচকায়। এই শ্রেয়া টা আবার কে।

আদি : শ্রেয়া কে?

আদির প্রশ্নে সিমথি ধপ করে চোখ খুলে আদির দিকে তাকায়। আদির চোখে মুখে বিস্ময়। কি আশ্চর্য সিমথির চোখে ও বিস্ময়। সিমথি থেমে থেমে জিজ্ঞেস করে,,,

সিমথি : শ্রেয়া কে জানেন না।

আদি : জানলে কি জিজ্ঞেস করতাম।

সিমথি : মজা করছেন আমার সাথে।

আদি : তুমি কি আমার মজার মানুষ। তুমি তো ভালোবাসার মানুষ।

সিমথি : হিইই ফ্লাটবাজি কমিয়ে করেন। শ্রেয়ার কথা এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে ভুলে গেলেন।

আদি : আধো ও কোনো শ্রেয়া কে চিনতাম নাকি। আমার তো মনে পড়ছে না।

সিমথি : মিথ্যে বলবেন না।

আদি : ধ্যাত বা* মিথ্যে বলছি না। তুই চিনলে বল।

সিমথি : আপনার ক্রাশ।

আদি : আমার ক্রা,,,, এক মিনিট এক মিনিট তুই কি ওই শ্রেয়ার কথা বলছিস।

সিমথি : আজ্ঞে জ্বি।

আদি : আমার কবে কার ক্রাশ ছিলো।

সিমথি : কি মিথ্যুক রে বাবা। আমি যখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়তাম তখনই তো একদিন আয়াশ ভাইয়া কে বলেছিলেন শ্রেয়া আপনার ক্রাশ। ওর গলার ওই তিলে আপনি বার বার ক্রাশ খান। চোখের মায়ায় পড়ে যান ব্লা ব্লা। পুরো কলেজের মানুষ জানতো। ছিহহ কি বাজে নজর।

আদি : ওর গলায় তিল ছিলো বুঝি।

সিমথি : আপনার কি মনে হয়। আপনার মতো আমি ওর শরীর স্কেন করেছি।

আদি : হোপ ভাষা ঠিক কর। আর শ্রেয়া ফ্রেয়া কারোর উপরই ক্রাশ খায়নি। আয়াশকে তোর কথা বলেছি আর শা*লা বুঝেছে উল্টো।

সিমথি : একদম মিথ্যে বলবেন না।

আদি : আরে বাবা সত্যি। তোর গলায় যেই তিল টা আছে আমি ওটার কথা বলেছি।

আদির কথায় সিমথি গলায় নিজের তিলের উপর হাত রাখে। চোখ পাকিয়ে আদির দিকে তাকায়।

সিমথি : ছিহহহ। এই ছিলো আপনার মনে। বন্ধুর বোনের উপর কুদৃষ্টি দিতেন। আমি আজই ভাইয়াকে বলবো।

সিমথির কথায় আদি হেসে দেয়।

আদি : কি বলবে। ভাইয়া তোর ওই বন্ধু আদি আমার গলার তিলের উপর ক্রাশ খেয়েছে। আপাতত আমাকে তার বাচ্চার মা বানানোর প্ল্যানিং করছে। এটাই বলবে। তাহলে এখনই বলো। আমারই সুবিধা।

আদির কথায় সিমথির কান গরম হয়ে যায়। আদির থেকে চোখ সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়।

সিমথি : আপনার মাইন্ড আর ভাষা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কন্ট্রোল করুন এগুলো। বোন হয় আপনার আমি মাইন্ড ইট।

আচমকায় আদি সিমথিকে টেবিলের সাথে চেপে ধরে। সিমথি আশ্চর্য হয়ে আদির দিকে তাকায়। আদি হেসে উঠে।

আদি : তুই চলে আয় আমার কাছে। ভাষা মাইন্ড দুইটাই কন্ট্রোলে চলে আসবে। আর তোমাকে দেখলে আমি এমনিতেই কন্ট্রোললেস হয়ে যায়। আর বাকি রইলো বোনের কথা। বন্ধুর বোনকে বউ বানানো যায় নট বোন। সো সেই সম্পর্কে তুই ও আমার বউ হবার যোগ্য নট বোন।

আদির একবার তুই একবার তুমি ডাকে সিমথি হাপিয়ে উঠে। আচমকা সিমথি হালকা হেসে আদির দিকে তাকায়। সিমথির হাসি মাখা মুখে দিকে আদির মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আচমকায় চেঁচিয়ে উঠে।

আদি : মাগো এভাবে কেউ পা দিয়ে পাড়া দেয়। পা ছিলে গেছে মনে হয়।

সিমথি : হুটহাট কাছে আসতে হাত ধরতে নিষেধ করেছি না। আপনি মানা শুনেন না কেনো। নেক্সট আসলে জায়গা মতো দেবো। অস’ভ্য লোক একটা।

আদি : আমি যদি সভ্য হয় তাহলে পৃথিবীতে নিঝুম আসবে কিভাবে।

সিমথি : হু ইজ নিঝুম ( অবাক হয়ে)

আদি : আমাদের মেয়ে। আইমিন তোমার আর আমার মেয়ে।

আদির কথায় সিমথি বিষম খায়। তলে তলে এই ছেলে এতদূর চলে গেছে। সিমথি আদিকে বকতে বকতে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

সিমথি : অ*স*ভ্য নি*র্ল*জ্জ ঠোঁট*কাটা লোক একটা। সিমেথি শেম অন ইউ। কিভাবে এমন ছেলের প্রেমে পড়েছিলি। ছিহ ছিহ। ( বিড়বিড় করতে করতে)

সিমথির পেছন পেছন আদি ও বের হয়ে। সিমথির ফেস রিয়াকশন দেখে আদি হাসতে হাসতে শেষ। আচমকা কারো হাসির শব্দে সকল স্টাফ রা তাকায়। সিমথিকে দেখেই সবাই উঠে দাঁড়ায়। সিমথি সবার দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে আদির দিকে তাকায়। সিমথির তাকানো দেখে আদি হাসি থামায়। সিমথি সামনে ফিরতেই আদি পুনরায় ঠোঁট চেপে হাসতে হাসতে বের হয়।

_______________

মেঘা : সিমথি তো আমাকে এসব জানালো না। আমাকে কেনো আমাদের কাউকেই জানায় নি।

আয়াশ : হয়তো ওর ইচ্ছে হয়নি। এসব নিয়ে আর বলার।

মেঘা : তার মানে সব শেষে এটাই দাঁড়ায় আদি ভাইয়াও সিমথিকে ভালোবাসে। তাই তো।

আয়াশ : ইয়েস মেডাম।

মেঘা : উফফস আয়াশ তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না আমি মানে আমি কত্তোটা খুশি হয়েছি। তোমাকে সামনে পেলে সোজা

আয়াশ : কি করতে কিস করতে নাকি।

মেঘা : ধ্যাত। জড়িয়ে ধরতাম।

মেঘার কথায় আয়াশ ফোনের ওপাশ থেকে হেসে উঠে। মেঘা ঠোট কামড়ে হেসে দেয়।

আয়াশ : মেঘপরী। ( আদুরে গলায়)

মেঘা : হ হুমম ব বলো।

আয়াশ : তোমার কন্ঠ কাঁপছে কেনো।

মেঘা : ক কই। বলো কি বলবে।

আয়াশ : দেখা করবে আজ।

মেঘা : কিন্তু,,

আয়াশ : প্লিজ তিনদিন হলো দেখিনা৷ কষ্ট হয় তো আমার।

আয়াশের আবদারী ভঙ্গিমার কথা শুনে মেঘা ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবে।

মেঘা : ঠিক আছে। তবে রাতের দিকে টাইম হবে। এখন অনেক প্রেশার আছে।

আয়াশ : আমার তাতেই হবে। আমি জানিতো আমার বউ টা অনেক ব্যস্ত মানুষ। যতটুকু সময় দেবে আমি সেটাতেই হ্যাপি। ( খুশি হয়ে)

আয়াশের কথায় মেঘা হেসে উঠে। মেঘার সাথে ফোনের অপর পাশে আয়াশ ও হেসে দেয়। অতঃপর বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে আয়াশ মেঘা দুজনই ফোন কেটে দেয়। মেঘা পেছনে ফিরতেই রোদেলাকে গাল ফুলিয়ে করিডোর দিয়ে যেতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। অতঃপর কিছু মনে পড়তেই হেসে দেয়।

মেঘা : বেচারীকে ইফাজ ভাইয়া সেই লেবেলের ডোজ দিয়েছে আজ।

মেঘা আর দেরী না করে দ্রুত নিজের কেবিনের দিকে অগ্রসর হয়। চাপ আছে আজ। যেভাবেই হোক তাড়াতাড়ি সব কাজ শেষ করে আয়াশের সাথে দেখা করতে হবে। কথাগুলো মনে মনে ভেবে কেবিনে বসে।

নৌরিন : ম্যাম পার্সেল টা কে দিয়েছে জানেন কিছু।

সিমথি : না নৌরিন। এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বলো না। স্পেশালি তুহিনদের।

নৌরিন : সিউর ম্যাম।

সিমথি : আজকের সিডিউল টা সেন্ড করো আমাকে। আমি এক ঘন্টার মধ্যে হসপিটালে পৌঁছে যাবো।

নৌরিন : ম্যাম ম্যাম

সিমথি : কিহ বলো।

নৌরিন : কোথাও যাবেন এখন।

সিমথি : একটা কাজ আছে। তোমাকে যা বললাম তা করো৷ এখন ছাড়ছি।

নৌরিন কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সিমথি ফোন কেটে দেয়। এই মেয়েটাকে সিমথি চোখ বুঁজে বিশ্বাস করতে পারে। প্রচন্ড বিশ্বস্ত। কথাগুলো মনে মনে আওড়িয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে কটেজের দিকে নেয়। বেশকিছু ক্ষণ পর নিদিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে।

সিমথি : ডাক্তার কি এখনো জীবিত নাকি মৃত।

অনিল : এ্যাঁ ( ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে)

অনিলের বলা শব্দ টা শুনে সিমথি বিরক্তি নিয়ে অনিলের দিকে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে ধরে।

সিমথি : এতেগুলো বছর পেরিয়েছে মা*রা যেতেই পারে। অস্বাভাবিক কিছুই না।

অনিল : ম্যাম উনি এখনো জীবিত। তবে রিটার্ইন হয়েছে কিছু বছর আগে। উনার ফ্যামিলিতে আপাতত উনি, উনার দুই ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। হাসবেন্ডের সাথে কোরিয়ায় শিফট করছে। দুইজন ছেলের একজন পেশায় সিআইডি অফিসার। অন্য একজন এখন মাস্টার্স করছেন। বড় ছেলের নাম শাহরিয়ার শুভ্র। আর ছোট ছেলের নাম শাহরিয়ার শাহিন। উনার স্ত্রী তিন বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন। ব্যস এটাই উনার বায়েডাটা।

সিমথি : এক মিনিট উনার বড় ছেলের নাম কি বললে।

অনিল : শাহরিয়ার শুভ্র।

সিমথি : ওহ নাইস। সিআইডি টিমের একজন বিচক্ষণ অফিসারের বাবা নিজেই কুকর্মের সাথে লিপ্ত। শুভ্র বা শাহিন উনারা কেউ উনার বাবার ব্যাপারে জানে।

অনিল : আমি যতদূর খোঁজ নিয়ে জেনেছি শুভ্র ছোট থেকেই হোস্টেলে থাকতো। শাহিন ওর বাবা-মায়ের সাথেই থাকতো কিন্তু শাহিন যখন নবম শ্রেনিতে পড়তো তখন ওকে ও হোস্টেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর শাহিন এখন একা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ঢাকা মিরপুরের দিকে থাকে। তবে মিরপুর কত নাম্বারে থাকে সেটা অজানা। মূলত শাহিনকে উনি সবার কাছ থেকে আড়াল করেই রেখেছে।

সিমথি : শাহিন বা শুভ্র ওরা কেউই আমার শত্রু বা বন্ধু কিছুই নয়। ওরা সম্পূর্ণ আলাদা। তবে মিস্টার ডক্টর আফজাল কে আমার প্রয়োজন। উনার খোজ নাও।

অনিল : সিউর ম্যাম৷ আফজাল সাহেব এখন গ্রামের বাড়ি আছেন। দু-এক দিনের মধ্যে ঢাকায় পুনরায় আসবেন।

সিমথি : আসতে তো উনাকে হবেই। তবে হুমম এই টিপকস টা কেবল তুমি আর আমিই জানবো। অন্য কেউ যেনো জানতে না পারে।

অনিল : সিউর ম্যাম।

সিমথি : যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উনাকে ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করো। আর খোঁজ চালিয়ে যাও।

অনিল : জ্বি ম্যাম।

সিমথি : বাই দ্য ওয়ে তোমার বোন এখন কেমন আছে।

অনিল : জ্বি ম্যাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।

সিমথি : কিছু লাগলে জানিও। আর ওর খেয়াল রেখো।

অনিল মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। সিমথি পুনরায় বেরিয়ে যায় ৷ অনিল সিমথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে পড়ে যায় সিমথির সাথে প্রথম পরিচয়ের দিনটি। অনিল মুচকি হেসে নিজেও বেরিয়ে পড়ে। বাসায় ছোট্ট বোন টা আছে। কালই অপারেশন হয়েছে। এখন ওকে একা থাকতে দিলে চলে না।

________________

পৃথিবী থেকে সূর্যের বিদায় হয়েছে অনেক্ক্ষণ। বর্তমানে আকাশে চাঁদ উঠেছে। অম্বর জুড়ে কালো সাদা মেঘ ধোঁয়ার মতো ভাসছে। সিমথি কেবলই ওটি থেকে বের হয়। তখনই দেখা হয় তরীর সাথে। সিমথি থেমে যায়।
সিমথিকে দেখে তরী ও থেমে যায়। সিমথির তরীর ক্লান্ত মুখশ্রীর দিকে তাকায়। দেখেই বুঝা যাচ্ছে দুপুরে কিছু খায়নি। তরীও সিমথির শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। একটা সময় দুজনের মধ্যে কতটা মিল ছিলো। কতটা কাছে ছিলো। আর এখন দুজন একই ছাঁদের নিচে থেকে ও যেনো হাজার হাজার দূরত্ব। তরী দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। সিমথির অগোচরে চোখের কার্নিশের পানির কণা টুকু মুছে নেয়। সিমথি সবটা দেখেও নিশ্চুপ। কিছুই বলার নেই। কারণ কিছু সম্পর্কে কিছু মানুষের উপর অধিকার বা দায়িত্ব খাটানো যায় না। সিমথি তরীকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।

তরী : সায়ন ভাইয়ার কি হয়েছে জানিস।

তরীর কথায় সিমথি দাঁড়ায়। তরীর দিকে না তাকিয়েই জবাব দেয়।

সিমথি : ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট।

তরী : তুই জানতিস।

সিমথি : হুমমম।

তরী : আমাকে বললি না।

সিমথি : তোকে বলার মতো সম্পর্ক না আমাদের।

তরীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সিমথি চলে যায়। সিমথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তরী ও চলে যায়।

রাত তখন এগারোটার কাছাকাছি। সিমথি হসপিটাল থেকে বের হয়। মেঘা রা অনেকটা আগেই চলে গেছে। হাতের এপ্রোন টা গাড়িতে রেখে ড্রাইভিং সিটে বসে। গাড়ি স্টার্ট দেয়।

আচমকা গাড়ি ব্রেক কষতে গিয়ে সিমথি খেয়াল করে ব্রেক কাজ করছে না। সিমথি হকচকিয়ে যায়। শটকার্টে যাওয়ার জন্য এই রোড ধরেছিলো। সামনেই একটা রেলিং ভাঙা ব্রিজ আছে। আবার অনেকগুলো গাছ ও আছে। গাড়ি ব্রেক না কাজ করলে গাড়ি সোজা সেখানে গিয়ে পৌঁছাবে। রাস্তায় দু একটা গাড়ি ছুটছে ৷ সিমথি ভিউ মিররে পেছনের সবটা দৃশ্য দেখে নেয়। পেছনে তিনটে গাড়ি আছে। সামনেও কয়েটা গাড়ি। সিমথি আপ্রাণ চেষ্টা করছে গাড়ির ব্রেক কষার কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সিমথি ডান হাতে স্টেয়ারিং ধরে বাম হাতে কপাল চেপে ধরে। মনে পড়ে যায় মা-বাবার মৃ’ত্যু’র সেই ভয়ানক ঘটনা। সিমথি অনবরত ঘামতে শুরু করে। গাড়ির এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দেয়৷ পাশের সিট থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে পানিটুকু খেয়ে নেয়। নিজেকে শান্ত করে শক্ত করে স্টেয়ারিং চেপে ধরে হর্ন বাজাতে শুরু করে।

চলবে,,,,

( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 22

🍁🍁🍁

হঠাৎ ই সিমথির ফোন টা বেজে ওঠে। সিমথি স্টেয়ারিং ডান হাতে চেপে পাশের সিট থেকে ফোনটা তুলে নেয়। ফোনের স্কিনে আদির নাম্বার দেখে ফোনটা পুনরায় রেখে দেয়। মনযোগ দেয় সামনে রাস্তার দিকে। অন্যদিকে আদি সিমথি কে অনবরত ফোন দিয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সিমথি ফোনটা তুলে কলটা রিসিভ করে।

সিমথি : আদি এখন ব্যস্ত আছি। ফারদার কল করবে না।

সিমথি হালকা ঝাঁঝালো কণ্ঠে আদি খানিকটা থমকায়। আচমকা সিমথির কথাগুলো মস্তিষ্কে নাড়া দিতে ঠোঁটের কোণে অপূর্ব এক হাসি ফুটে উঠে। কতগুলো বছর পর আদি সিমথির মুখে নিজের নাম শুনতে পেলো।সেই সাথে আগেকার মতো তুমি ডাকটা ও। আদি দ্রুত ঢোক গিলে।

আদি : শুনো শুনো

সিমথি : কিহ তাড়াতাড়ি বলো।

আদি : তুমি খেয়াল করলে আমাকে তুমি বলে সম্বোধন করেছো। সেই সাথে নাম ধরে ও ডাকলে। ব্যাপার কি হুমমম।

আদির কথায় সিমথি এক মুহুর্তের জন্য থমকায়। কখন আদিকে তুমি বলে সম্বোধন করলো। আর কখনই বা নাম ধরে বললো। মস্তিষ্কে হালকা চাপ দিতেই কিছুক্ষণ পূর্বে নিজের বলা কথাগুলো মনে হয়। নিজের উপর হালকা রাগ হয়। টেনশনে আদির সাথে আগের মতো বিহেভ শুরু করেছে। নট ডান। তবে আপাতত সামনের পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাগটা নিজের মাঝেই মাটি চাপা দেয়। আপাতত ফোন টা ছাড়া দরকার। গাড়ি কন্ট্রোল করা পসিবল হচ্ছে না। যখন তখন একটা বড়সড় এক্সিডেন্ট হতে পারে। আদি যদি কোনো ভাবে এসবের আঁচ পায়। তাহলে সায়নের জানতে এক সেকেন্ড ও বিলম্ব হবে। কথাগুলো মনে মনে আওড়িয়ে আদির উপর হালকা রাগ দেখায়।

সিমথি : এসব উদ্ভট কথা বলার জন্য ফোন করেছেন। কিসের ব্যাপার থাকবে। টেনশনে তুমি বলেছি। অর নাথিং। কি ভাবেন নিজেকে। নাউ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি। আম বিজি।

আদিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সিমথি ফোনটা কেটে দেয়। আদি হাস্যজ্জ্বল মুখ টা মুহূর্তের মধ্যে অমাবস্যার আঁধারের মতো ঢেকে যায়। আদি এক মুহূর্তের জন্য ভেবেছিলো সিমথি হয়তো আদিকে মেনে নিয়েছে। কিন্তু আদি যে এই মুহুর্তে সিমথিকে ফোন দিয়ে এই কথাগুলো শুনবে সেটা ভাবেনি। আদি তো একটা ভালো নিউজ দেওয়ার জন্য ফোন করেছিলো। কিন্তু সিমথি যে ডিস্টার্ব হবে এটা আদি কল্পনায় ও ভাবে নি। আদির বুকে চাপা আর্তনাদ আর আদির না বলা ভালো সংবাদ টা সিমথির অজানায় রয়ে গেলো। অন্যদিকে সিমথির এমন ব্যবহারের কারণ আর সিমথি জীবনে আসন্ন বিপদের কথাগুলো ও আদির কাছে অজানা রয়ে গেলো।

সিমথি : আম সরি আদি। সরি ফর মিস বিহেভিয়ার।

আচমকা সামনে মালবাহী এক বিশাল ট্রাক আসতে দেখে সিমথি দিশেহারা হয়ে পড়ে। না গাড়ির স্পিড বাড়ানো যাচ্ছে আর না কমানো যাচ্ছে। তবে গাড়ির স্পিড বিপদজনক মাত্রায় ছাড়িয়েছে। এই মুহুর্তে এই গাড়ির সামনে যদি কোনো মানুষ আসবে তাহলে তার বাঁচার সম্ভাবনা শূন্য। তেমনি গাড়িটা যদি কিছুর সাথে ধাক্কা খায় তাহলে গাড়ি সম্পূর্ণ গুড়িয়ে যাবে। ভেতরে থাকা ব্যক্তি আর জীবিত বের হতে পারবে না। সিমথির গাড়ি আর মালবাহী ট্রাকের মধ্যকার দূরত্ব হবে চার হাত।

সিমথি : কি আজব মালবাহী ট্রাকের ড্রাইভার কেনো গাড়ি টা সাইড করছে না। এতোক্ষণে তো বুঝার দরকার উনার সামনে গাড়িটা ব্রেক ফেইল করেছে। প্রাণের মায়া নেই নাকি।

সিমথি ফোনটা হাতে নেয়।

সিমথি : ড্যাম ইট।

রাস্তা জুড়ে পিনপিনে নীরবতা। নীরব রাস্তায় মুহুর্তে মানুষের ভীড়ে গিজগিজ হয়ে গেছে। সবার দৃষ্টি সামনে প্রজ্জ্বলিত গাড়ি টার দিকে। গাড়িটায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। এর থেকে কিছু দূরত্বে ট্রাক টা অচল হয়ে পড়ে আছে। ট্রাকে ড্রাইভার লাফ দেওয়ায় উনি প্রাণে বেঁচে আছেন তবে জখম হয়েছে মারাত্মক। উপস্থিত জনগনের মধ্যে কেউ কেউ বলছে গাড়িটার ভেতরে যিনি বসে ছিলেন তিনি আর বেঁচে নেই। এতোবড় এক্সিডেন্ট হলে কেই বা বাঁচতে পারে। বেশকিছু ক্ষণের মধ্যে ওখানে এসে পুলিশরা হাজির হয়। এক্সিডেন্ট কেস হওয়ায় পুলিশ কে তো আসতেই হতো।

পুলিশ : ফায়ার সার্ভিস কল করো। আগুন নেভানো হলে গাড়িটা চেক করো ভেতরে কি কি আছে।

ঘড়ির কাটায় তখন বারোটা বেজে পনেরো মিনিট। খান বাড়িতে কারোর চোখে ঘুম নেই। সায়ন বারংবার সিমথির ফোনে কল করছে কিন্তু ফোনটা বন্ধ পাচ্ছে। ইতোমধ্যে সায়ন হসপিটালে ফোন দিয়ে জানতে পেরেছে সিমথি নাকি এগারো টার দিকেই বেরিয়ে যায়। তাহলে তো এতোক্ষণে বাড়ি পৌঁছে যাওয়ার কথা। সংশয় নিয়েই একে একে মেঘা, তুহিন, রোদেলা, তন্ময় দের ফোন করে। কিন্তু কারোর সাথেই নাকি দশটার পর থেকে সিমথির কোনো যোগাযোগ নেই। এসব শুনে সায়ন আরো ছটফট করছে। মেয়েটার বিপদের শেষ নপই। তারমধ্যে আবার এই মেয়ে মাফিয়া গ্যাঙের সদস্য। শত্রুর কম কি। সায়ন কে এতোটা অস্থির হতে দেখে বাকিরা ও চিন্তায় পড়ে যায়। কারণ সিমথি দায়িত্ব জ্ঞানহীন নয়। ওর যেদিন লেট হয় সেদিন ফোন করে জানিয়ে দেয়। ওর ফোনে চার্জ না থাকলেও কোনো না কোনো ভাবে জানায়। তবে আজ এতোটা লেট হবার কারণ কি।

সায়ন : এতো রাত হয়ে গেলো। মেয়েটা কোথায়।

রহিমা বেগম : এই মেয়ের কিছু হইবো না। ওই সবাই রে মা/ই/রা শান্তি পাইবো। দেখগা এত্তো রাতে কিতা করতাছে।

এরকম পরিস্থিতিতে রহিমা বেগমের কথায় সবাই বিরক্ত হয়। সায়ন রাগান্বিত সুরে বলে ওঠে,,,

সায়ন : খবরদার দাদি। একবার বলেছো বলেছো। ফারদার এসব মুখেও এনো না। মাথা গরম হয়ে আছে। পরীর মানে বাজে কথা বললে তোমার সাথে আমার সম্পর্ক কি সেটা ভুলে যাবো।

নীলয় খান : আচ্ছা মা সিমথিকে নিয়ে কিসের এতো তিক্ততা তোমার বলবে।

ইফাজ : উনার তিক্ততা কোথায় সেটা উনি নিজেও জানে না। আব্বু উনাকে চুপ করতে বলো।

রহিমা বেগম : দেখলি দেখলি তোর পোলা ডা ও আমারে শাসায়।

নীলয় খান : ইফাজ আমি কথা বলছি তো। তুৃমি চপ থাকো।

ইফাজ : মাফ করো আব্বু। উনার সাথে সিমথি কে নিয়ে দয়া করে কোনো কথা বলো না। কজ সিমথির সম্বন্ধে কোনো ভালো কথা উনার মাথায় ও আসে না।

রহিমা বেগম : একটা মাইয়া বাড়ির কতগুলা রে ঘুরাইতাছে। এই মাইয়া জন্মই নিছে ধ্বংস করার জন্য। ছোট বউ মা নিজে আছিল একখান অপয়া। জন্ম দিয়া গেছে আরেক অপয়া। এই মাইয়া,,,,

আচমকা বিকট শব্দে রহিমা বেগমের কথা মুখে আটকে যায়। উপস্থিত সবাই চমকে ফ্লোরে পড়ে থাকা ফ্লাওয়ার ভার্সের দিকে তাকায়। সায়ন রক্তবর্ণ দৃষ্টিতে রহিমা বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে। রহিমা বেগম ভয়ে ঢোক গিলে। সায়ন পাশের সোফায় স্বজোরে এক লাথি মারে। অতঃপর চেঁচিয়ে উঠে।

সায়ন : আপনার মুখে লাগাম টানুন মিসেস খান। আমি লাগাম টানতে আসলে আপনার জন্য ভালো হবে না। সবসময় চুপচাপ থাকি মানে এই না আমি কিছু জানিনা বা বুঝি না। সিমথি আর আমার মাকে কেনো আপনার পছন্দ নয় সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। কিন্তু আপনার পছন্দে আমার কিছু যায় আসে না। মনে ধরলে এ বাড়িতে থাকবেন নয়তো দরজা খোলা আছে। কাকে কাকে সাথে নিয়ে যাবেন যেতে পারেন।

রহিমা বেগম ফুঁসে ওঠে। কিছু বলতে নিলেও কারোর ঈশারায় থেমে যায়। চুপচাপ উঠে নিজের রুমে চলে যায়।

সীমা বেগম : সায়ন বাবা শান্ত হ। সিমথি কে আরেকটা ফোন করে দেখ কি বলে।

সীমা বেগমের কথায় সায়ন জোরে শ্বাস ফেলে। ধপ করে সোফায় বসে পড়ে। মা-বাবার শেষ স্মৃতি সিমথি। সিমথির কিছু হলে সায়ন শেষ। ছোট থেকে মেয়েটাকে যথাসম্ভব আগলে রেখেছে। তবুও মেয়েটা ওর অজান্তেই অনেকটা কষ্টের মধ্যে গিয়েছে। আচমকা সায়নের ফোন বেজে ওঠে। সায়নের মুখে হাসি ফুটে উঠে। সায়ন দ্রুত ফোন হাতে নেয়। কিন্তু সিমথির জায়গায় মেঘা নাম দেখে মুখটা আবারো আঁধারে ঢেকে যায়।

সায়ন : হুমম বল।

মেঘা : ভাইয়া ভাইয়া সিমথির কোনো খোঁজ পেলে।

সায়ন : নাহ। তুই খোঁজ নিয়েছিস

মেঘা : এভাবে কেউ কিভাবে উধাও হয়ে যেতে পারে। ও তো কটেজের দিকে ও যায়নি। আমি খোঁজ নিয়েছি।

মেঘার কথায় সায়নের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। বহুকষ্টে নিজেকে সামলায়।

সায়ন : ওহ।

মেঘাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন টা কেটে দেয়। সায়নের মুখ দেখে সবাই আবারো হতাশ হয়। মিম সায়নের কাঁধে হাত রাখে। সায়ন ছলছল চোখে মিমের দিকে তাকায়। মিমের চোখে ও অশ্রু টলমল করছে।

সায়ন : কোথায় গেলো ও।

সায়নের ভাঙা গলায় মিমের বুকের ভেতর মোচড় মেরে উঠে। সায়নের নিজের শরীরের অবস্থা ও ভালো নয়। ডক্টর বলেছিলো রেস্ট নিতে। কিন্তু রেস্ট তো দূরে থাক এখনো রাতের খাবার টায় খায় নি।

মিম : ফিরে আয় বোন। নয়তো তোর ভাইয়া শে/ষ হয়ে যাবে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তন্ময়রা হাজির হয়। সায়ন রা বসে না থেকে বেরিয়ে পড়ে সিমথির খোঁজে। সব জায়গা খুঁজতে খুঁজতে প্রায় দুইটার কাছা কাছি।

তন্ময় : সিমথি এতোটা কেয়ারলেস না। কি হলো।

তুহিন : বুঝতে পারছি না। আগে যদি জানতাম এমন হবে। তবে আমি নিজেই ওকে পৌঁছে দিতাম।

তন্ময় : সায়ন ভাইয়ার দিকে তাকানো যাচ্ছে না রে।

তন্ময়ের কথায় তুহিন সায়নের দিকে তাকায়। গাড়ির সিটে বাইরের দিকে মুখ করে বসে আছে দরজা খোলে। দৃষ্টি আকাশের দিকে। সায়নে পাশে বাইরে ইফাজ দাঁড়িয়ে আছে। ওদের থেকে কিছু টা দূরে তন্ময় আর তুহিন দাঁড়ানো। রাত গভীর হওয়ায় রাস্তা নির্জন হয়ে আছে। ওর

তন্ময় : আদি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করবো জানে কিনা।

তুহিন : এতো রাতে কল দেবো। মনে হয় ঘুমাচ্ছে।

তন্ময় : পরে যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে জানিস তো।

তুহিন : তাহলে ফোন দে। ডিরেক্টলি জিজ্ঞেস করিস না বুঝলি।

তুহিনের কথায় তন্ময় সায় দেয়। অতঃপর কল লাগায় আদির ফোনে। কিন্তু আদির ফোন ও বন্ধ বলছে। তন্ময় বার কয়েক ফোন দেয় কিন্তু আদির ফোন বন্ধ বলছে। আদিকে ফোন দিলে হয়তো সিমথির ব্যাপারে কিছু জানতে পারতো।

তন্ময় : ফোন অফ।

তন্ময়ের কথায় তুহিন ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। অতঃপর সায়নদের দিকে এগিয়ে যায়।

তন্ময় : ভাইয়া চলো অন্যদিকে দেখি।

তন্ময়ের কথায় সায়নের কোনো হেলদোল নেই। ইফাজ সায়নের দিকে তাকায়।

ইফাজ : সায়ন চল। আর কতক্ষণ বসে থাকবি।

সায়ন : কিন্তু পরী।

ইফাজ : ওকে খুঁজে পাবো। আর সিমথি কি দুর্বল। খান বংশের রক্ত বইছে ওর শরীরে। খান রা কি এতো দুর্বল। এতো সহজ সিমথির ক্ষতি করা।

ইফাজের কথায় সায়ন কিছু বলে না। ড্রাইভিং সিটে বসে। স্টেয়ারিং এ হাত দিতেই পকেটের ফোনটা বেজে ওঠে। আননোন নাম্বার দেখে রিসিভ করে।

________________

অফিসার ইকবাল : সবই তো বুঝলাম কিন্তু গাড়িটা ব্রেক ফেইল করেছে নাকি করানো হয়েছে তার খোঁজ নাও। আর গাড়িতে যতদূর সম্ভব বোম ফিট করা ছিলো। নয়তো এতোবড় ব্লাস্ট হওয়া সম্ভব ছিলো না।

জাফর : তবে স্যার গাড়ির ভেতর কিন্তু কাউকে পাওয়া যায়নি।

ইকবাল : তা ঠিক। আবার হতেও পারে ব্লাস্টে সাথে আগুনে পুড়ে গেছে।

জাফর : একটা জলজ্যান্ত দেহ এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে পুড়তে পারে।

ইকবাল : গাড়িটা তো ফরেনসিকে পাঠানো হলো। দেখি এবার রিপোর্ট কি বলে। আমি গাড়ির নাম্বার চেক করিয়েছি। আর গাড়ি টা হচ্ছে সিমথি জাহান সিয়ার।

জাফর : ওয়াটট। উনাকে এভাবে মা/রা/র প্ল্যান কে করতে পারে।

ইকবাল : সিমথি জাহান সিয়া আর উনার ভাই সায়ন খান৷ ওদের শত্রুর অভাব নেই। উনার মা-বাবা কে ও নাকি নির্মম ভাবে মে/রে ফেলা হয়েছিলো। সিমথি জাহান সিয়ার বাবা পেশায় একজন আর্মি অফিসার ছিলে। অত্যন্ত নিষ্ঠাবান, সত্যবাদী। প্রশাসনের গর্ব ছিলেন। আর উনার ওয়াইফ ছিলো একজন লয়ার।

জাফর : উনাদের কে মে/রে/ছে জানেন।

ইকবাল : নাহ খোজ চলছিলো। কিন্তু কেসের নাকি কুল কিনারা পাওয়া যায়নি। তাই কেস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। আমার বাবা উনার আন্ডারে ছিলেন। তখন কয়েকবার বাবার সাথে উনাকে দেখেছিলাম। উনার ব্যবহারে সবাই প্রচন্ড অবাক হতো। এতোটা মার্জিত ব্যবহার কিভাবে কেউ করতে পারে। উনার কেস সল্ভ করার স্কিল ছিলো অসাধারণ।

জাফর : কেনো মারা হয়েছিলো ওদের।

ইকবাল : বাবার কাছে শুনেছিলাম আহনাফ স্যার একটা গুরুত্বপূর্ণ কেসের তদারকি করছিলেন। মিশন টা অনেক বিপদজনক ছিলো। বেশ কয়েকবছর পর যখন কেসের সবকিছু আহনাফ স্যারের হাতে চলে আসে শুধু সাবমিট করা বাকি ছিলো তখনই প্রতিপক্ষ আহনাফ স্যার আর উনার ওয়াইফ কে মে/রে ফেলেন।

জাফর : সেই কেসের কি হলো।

ইকবাল : সব প্রমাণ ছিলো আহনাফ স্যারের কাছে। আহনাফ স্যারের কাছে একটা চিপ ছিলো। সেই চিপ সব প্রমাণ ছিলো। অপরাধীরা আহনাফ স্যারকে প্রথমে কিডন্যাপ করেছিলো। উনাকে প্রচুর মে/রেছিলো। কিন্তু চিপের কোনো হদিস জানতে পারেনি। তারপরই কয়েকদিন পর উনার আর উনার ওয়াইফ এর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। যার ফলে কেস টা তখন ক্লোজ হয়। আহনাফ স্যারের মৃ/ত্যু/র পর ওই গ্যাঙের সদস্যদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। হঠাৎ ই সবাই নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু গত দশ বছর ধরে আবার সেই গ্যাং তাদের কালো ব্যবসা শুরু করেছে। কিন্তু আহনাফ স্যারের পরিণাম দেখে কেউ এগুতে সাহস পাচ্ছে না। এখনো পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই আরেকজন আহনাফ স্যারের অপেক্ষায় আছে। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো আহনাফ স্যারের ছেলে বা মেয়ে কেউ আহনাফ স্যারের পেশায় আসবে কিন্তু উনারা এসবে আর জড়ায়নি। শোনা গেছে উনার বড় চাচা উনাদের এসবে জড়াতে দেয়নি। তবে সিমথি জাহান সিয়া এই পেশায় নিজেকে না জড়ালে ও সাধারণ মানুষ কে এখন কম হেনস্তা হতে হয়। গত চার বছর ধরে সিমথি জাহান সিয়া মাৈিয়া জগতে পা রাখতেই বাইরের দৃশ্যপট সম্পূর্ণ বদলে গেছে। যে শহরে আগে প্রতিদিন কোনো না কোনো অঘটন হতো তা এখন কমেছে। কিন্তু এই ভালো হয়তো সিমথির কপালে ছিলো না। তাই হয়তো উনাকেও আহনাফ স্যারের মতোই সরাতে চাইছে।

জাফর : তারমানে এখানে সিমথি জাহান সিয়া কে মা/রা/র জন্য এতোসব প্ল্যান করা হয়েছে।

ইকবাল : আমার তো তাই মনে হচ্ছে। তবে সিমথি জাহান সিয়া কে পাওয়া গেলেই সবটা জানা যাবে।

ওদের কথার মাঝেই ওখানে এসে সায়নরা হাজির হয়। সায়নদের দেখে অফিসার ইকবাল এগিয়ে যায়।

ইকবাল : মিস্টার সায়ন আমিই আপনাকে ফোন করেছিলাম।

সায়ন : হুম জানি। কিন্তু এখানে কেনো।

ইকবাল : এখানে কিছু ক্ষণ আগে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। একটা গাড়ি ব্লাস্ট হয়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি গাড়িটা সিমথি জাহান সিয়ার মানে আপনার বোনের।

ইকবালের কথায় সায়ন দু পা পিছিয়ে যায়। চোখে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। যা ভাবছিলো তাই হলো।

তন্ময় : সি সিমথি কোথায়।

ইকবাল : উনাকে গাড়িতে পাওয়া যায়নি। হয়তো আগুনে পু,,,

বাকি টুকু বলার আগেই সায়ন কলার চেপে ধরে।

সায়ন : একদম না। আমার পরীর কিছু হয়নি। কিছু না।

সবাই মিলে সায়নকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু সায়ন হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে ইকবালের কলার আরো জোরে চেপে ধরে।

_ ভ ভা ভাইয়া

চলবে,,,,,

( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং)