#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 26
🍁🍁🍁
আদি : মেঘা একটু প্রাইভেসি দেওয়া যাবে আমাদের।
আচমকা আদির কন্ঠস্বর শুনে সিমথি চমকে যায়। সিমথিসহ সবাই পেছনে তাকায়। কেবিনের দরজার সামনে আদি পাশে ইশান দাঁড়িয়ে আছে । আদির দৃষ্টি এখনো সিমথির দিকে সীমাবদ্ধ। সিমথি নিজের দৃষ্টি আড়াল করে। এতোদিনের না বলা কথাগুলো নিজের বোকামির জন্য আজ আদি শুনে ফেলেনি তো ৷ কথাটা মাথায় আসতেই সিমথি এপ্রোন হাতে নেয়।
সিমথি : আ আমার একটা ও ওটি আছে আমি আসছি।
সিমথি ইশানের দিক দিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলে আদি সিমথির হাত চেপে ধরে। সিমথি থমকায়। রাগ না উঠলে মুখে কঠোরতা এঁটে আদির দিকে দৃষ্টিপাত করে। হাত ছাড়াতে নিলে আদি হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরে।
সিমথি : হাত ছাড়ুন ভাইয়া। যখন তখন ধরতে নিষেধ করেছি না।
আদি : মেঘা তোমরা যাবে নাকি আমি ওকে নিয়ে যাবো।
আদির কথা শুনে মেঘারা বেরিয়ে যায়। মেঘাদের সাথে ইশান ও বের হয়। আদি পা দিয়ে কেবিনের দরজা লাগিয়ে দেয়। দরজা লাগার শব্দে বাইরে মেঘারা কিছু টা কেঁপে ওঠে।
সিমথি : হাত ছাড়ুন। এসব অসভ্যতামি আমার একদম ভালো লাগে না।
আদি : আর কতো৷
আদির কাতর স্বরে সিমথির সমস্ত কথা কন্ঠনালীতে আঁটকে যায়। এই মানুষ টা কে চাইলেও সিমথি কষ্ট দিতে পারে না। সিমথি শান্ত দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়। আদির চোখ লাল হয়ে আছে। আচমকায় সিমথির মনে প্রশ্ন জাগে আদি কি কেঁদেছে। কিন্তু কেনো। ভীষণ ইচ্ছে করছে জিজ্ঞেস করতে আদি কাদলো কেনো। কিন্তু মস্তিষ্ক চাইছে না এতে করে যদি আদি সিমথির দুর্বলতা টা বুঝে যায়। তবুও মন কি আর মস্তিষ্কের কথা শুনে। মস্তিষ্কের বিরুদ্ধে গিয়ে সিমথি প্রশ্ন টা করেই ফেলে।
সিমথি : আপনি কেঁদেছেন।
সিমথির কথায় আদি ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটিয়ে তুলে। সিমথি র আরেকটু নিকটে এসে দাঁড়ায়। কানের পেছনে চার আঙ্গুল রেখে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে সিমথি ডান গাল আঁকড়ে ধরে।
আদি : বিয়ে করবি আমায়।
আদির কথায় এমন সিরিয়াস মোমেন্টেও সিমথি ভ্যাবাচ্যাকা খায়। কি জিজ্ঞেস করলো আর কি উত্তর দিলো।
সিমথি : আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি।
আদি : সব কথা বলতে নেই। কিছু বুঝতে হয়। তুই তো আমাকে বুঝিস। চোখ দেখেই নাকি মনের কথা পড়তে জানিস৷ তবে আজ কেনো বুঝেও পোড়াচ্ছিস।
আদির কথায় সিমথি চোখ নামিয়ে নেয়। দুপা পিছুতে চাইলেও পারে না আদি আটকে দেয়।
আদি : সিয়া জান আজ অন্তত চুপ থাকিস না। একবার নিজের মুখে স্বীকার কর। একবার বল ভালোবাসিস৷
অতঃপর দুজনের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় হয়। সিমথি অনুভব করে ওর বুকের ভেতর টা চিনচিন করছে। চোখের পানি আটকাতে এলোপাতাড়ি দৃষ্টি ফেলতে আরম্ভ করে।
সিমথি : আপনার মা জানে।
আদি : কি
সিমথি : আপনি আমার কাছে এসেছেন।
আদি : তুই মায়ের জন্য আমায় ছেড়ে দিচ্ছিস। মাকে আমি সামলে নেবো।
সিমথি : আপনার মা মানবে না।
আদি : তুই আমার জন্য কি কি করতে পারবি।
সিমথি : ডাক্তারি ছাড়তে পারবো না।
আদি : আমাকে তোর এতোটা নিচ মনে হয়।
সিমথি : নাহ। আপনি জিজ্ঞেস করলেন তাই বললাম।
আদি : তুই কিভাবে জানিস আমাদের বাড়ির কথা।
সিমথি : সকালে মেহের ভাবী ফোন করেছিলো। উনিই বললো। আদি ভাইয়া আপনি আপনার মায়ের কথা মেনে নেন। মায়েরা কখনো সন্তানের খারাপ চাইনা।
আদি : আমি তোকে ভালোবাসি।
সিমথি থেমে যায়। দৃষ্টি নামিয়ে নেয় মেঝেতে।
সিমথি : আপনি হসপিটালে কখন এসেছেন
আদি : তোর সব কথায় শুনেছি।
সিমথি : _______
আদি : বিয়ে করবি আমায়।
সিমথি : আপনার মা,,
আদি : আমি তোর উত্তর জানতে চেয়েছি। হুম অর নো। যদি হ্যাঁ হয় তবে নেক্সট টাইম আমি তোর সামনে আসবো। আর যদি না বলিস এখনো তাহলে এতোটা দূরত্ব বাড়াবো তুই তখন চাইলে আমাকে পাবি না।
আদির কথায় সিমথির বুক কেঁপে ওঠে। সিমথি আহত দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়। কি করবে এখন। হঠাৎই সিমথির মন বেঈমানী করে বসলো। মন বলে উঠলো,,, অনেক তো হলো অন্যের জন্য বাঁচা অন্যের জন্য ত্যাগ করা এবার না হয় একটু নিজের জন্য বাঁচ। যতটুকু সেকেন্ড নিঃশ্বাস চলবে সেটা না হয় নিজের ভালোবাসার জন্যই হোক। যদি মৃত্যু আসে তখন নাহয় দেখা যাবে।
আদি : কি হলো বলো।
সিমথি আদির দিকে তাকায়। দুজনের মাঝে দূরত্ব হবে কয়েক ইঞ্চি। সিমথি হাসে। একটু এগিয়ে দূরত্ব টুকু মুছে দেয়। মন বড্ড বেহায়া হয়ে গেলো হুট করেই। মনের কথা শুনেই আদির বুকে মাথা ঠেকায়। একটা ক্লান্তির শ্বাস ছাড়ে। সমস্ত ক্লান্তি যেনো মুহুর্তের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
সিমথি : একজন বোন হিসেবে , একজন বান্ধবী হিসেবে, একজন ডাক্তার হিসেবে, সর্বোপরি একজন মানুষ হিসেবে আমার বাঁচা হয়ে গেছে আদি। এবার বাকি সময় টুকু আমি তোমার হয়ে বাঁচতে চাই। সম্পূর্ণ একটা হালাল বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাই। শেষ নিঃশ্বাস তোমাকে দেখে ফেলতে চাই। আমি ক্লান্ত আদি। এতো সবকিছুর ভীড়ে নিজেকে তোমার মাঝে খুঁজে পেতে চাই। তোমাকে নিয়ে আবারো পা’গ’লা’মি তে মেতে থাকতে চাই। একটু মানসিক শান্তি দেবে আমায়।
আদি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি নিজের বুকে জায়গা করে নেওয়া মানবীর দিকে। ছোট বাচ্চা যেমন কাউকে আঁকড়ে ধরে সিমথিও তেমনটায় করছে। সিমথির বলা কথাগুলো এখনো আদির কানে ঘুঘুরের ন্যায় বাজছে৷ আদি ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে। চোখে পানি ঠোঁটের কোণায় হাসি অদ্ভুত এক তৃপ্তিকর অনুভূতি হচ্ছে আদির। হাত উঁচু করে সিমথিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। সিমথি হাসে। অনেক সাধনার কোনো দুর্লভ বস্তু পেলে মানুষের মুখে যে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে সিমথি ক্ষেত্রেও তাই হলো। দুর্লভ হুম দুর্লভই তো। আদি সিমথি অনেক সাধনার পুরুষ। দুহাত পেছনে নিয়ে আদিকে জড়িয়ে ধরে।
আদি : ভালোবাসি
সিমথি : আমিও
আদি : কি আমিও
সিমথি : ভালোবাসি
সিমথির মিনমিনে স্বর শুনে আদি হেঁসে ওঠে। সিমথিকে আরেকটু শক্ত করে আঁকড়ে ধরে চুলের ভাঁজে ওষ্ঠদ্বয় ছোঁয়ায় অতঃপর চোখ বুঁজে নেয়। এতোদিনের কষ্টের মাঝেও সিমথি যেনো আজ আদিকে এক আকাশ সম খুশি উপহার দিয়েছে।
______________
বাড়িতে হাসিমুখে আদিকে ঢুকতে দেখে মেহের’রা ভ্রু কুঁচকে আদির দিকে তাকায়। আদির মা – চাচীরা কিচেন থেকে আদির মতিগতি খেয়াল করছে। আদি গুনগুন করতে করতে রান্নাঘরে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে খেয়ে বোতল টা আবারো ফ্রিজে রাখে। অতঃপর মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খায়। আদির এমন আচরণে উপস্থিত সবাই হতভম্ব। উপস্থিত সবাই বলতে মেহের, আদির মা- চাচী- কাকি। শাওন অফিসে। ইশান হসপিটাল থেকে বেরিয়ে ভার্সিটি চলে গেছে আর আদিবা ও ভার্সিটি। আদির বাবা আর বড় চাচা অফিস। আর ছোট পুলিশ কাকা ও কাজে বেরিয়ে গেছে। আর ছোট্ট তিন্নি স্কুলে।
আদি : ওহহহ মা শুনো না।
আদির বাচ্চাদের মতো ডাক শুনে আদির মা ছেলের মনভাব বুঝতে পেরেও চুপ থাকে। নিজের মাকে চুপ থাকতে দেখে আদি গাল ফুলিয়ে মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
আদির মা : আরে কি করছিস গায়ে আগুন লেগে যাবে তো।
আদি : তো লাগুক তোমার কি। তুমি তো বলেই দিয়েছো তোমার কেবল একটাই মেয়ে।
আদির মা : তাহলে রংঢং করছিস কেনো।
আদি : কি আজব ত্যাজ্য পুত্র তুমি করেছো আমি তো আর ত্যাজ্য মা করিনি তোমাকে। এমন ভাবে গাল ফুলিয়ে আছো মনে হচ্ছে বাবা তোমাকে মুখে দশটা ফুসকা একসাথে ঢুকিয়ে দিয়েছে।
আদির কথায় মেহের, শাওনের মা আর ইশানের মা হেসে দেয়। আদির মা চোখ রাঙিয়ে আদির দিকে তাকায়।
আদির মা : তোকে ত্যাজ্য করার আমি কে। সিমথি তো আছেই।
আদি : আহা মা তুমি জেলাস। কি আশ্চর্য তুমি কি চাও না তোমাকে কেউ দাদিমা বলুক। সিমথি থাকলেই বা কি ওর উপর তো আমার বউ বউ ফিল আসে। আর তুমি তো আমার মা। এখন সিমথির উপর তো আর মা মা ফিল আসে না। তো ও থাকলেই কি তোমার অভাব পূরণ করার জন্য আমাকে ছোট বেলার মতো ফিডার খাইয়ে মা মা ফিলিংস আনবে বলো।
আদির মা : দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছিস।
আদি : নির্লজ্জ না হলে এই জীবনে কি দাদিমা ডাক শুনতে পাবে।
আদির মা : থাপ্পড় খাবি ফা’জি’ল।
আদি : আচ্ছা বাবা বাদ দাও। আপাতত মুড অন। থাপ্পড় খাওয়ার শখ নাই। এখন আমাকে খাইয়ে দাও দেখি। অনেক খিদে পেয়েছে। সকালেও খায়নি। তুমি কতটা নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছো জানো।
আদির মা : আমি কেনো খাওয়াতে যাবো সিমথি কে গিয়ে বল।
আদি : তোমার বিহেভ দেখে মনে হচ্ছে তুমি আর সিমথি সতীন লাগো
আদির এবারের কথায় আদির মা আদির পিঠে থাপ্পড় মারে। আদি হেসে উঠে।
আদি : এখন বলো খাওয়াবে নাকি অফিস চলে যাবো।
আদির মা : গিয়ে বস আমি আসছি।
আদি তৃপ্তির হেসে সোফায় গিয়ে বসে টিভি অন করে। মেহের ও গিয়ে আদির পাশে বসে আদিকে পরোখ করা শুরু করে। আদি হুটহাট মুচকি মুচকি হাসছে। মেহের আদিকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে আবারো মুখের দিকে তাকায়।
আদি : দেবরকে এভাবে স্কেন করছো ভাবী দিজ ইজ নট ডান।
মেহের : তোমার কি হয়েছে বলোতো ভাইয়া।হঠাৎ এতো খুশি।
আদি : হয়েছে তো কিছু কিন্তু তোমায় বলবো কেনো।
মেহের : ভাইয়া ( মুখ ফুলিয়ে)
আদি : কি ব্যাপার ভাবী ভাইয়া আজ আদর দেয়নি নাকি। এভাবে গাল ফুলিয়ে বসে আছো।
মেহের : মেঝো মাহহহহ তোমার ছেলে দেখো কি বলছে।
এরই মাঝে আদির মা ছেলের জন্য খাবার নিয়ে আসে। এতোদিনের মান-অভিমানর পালা যেনো মুহুর্তের মধ্যে একদম শেষ হয়ে গেছে। আদির মা আদির সাথে সাথে মেহেরকে ও খাইয়ে দেয়।
আদি : হয়েছে হয়েছে আর খাবো না। লেট হয়ে যাচ্ছে তোমার বর আবার গেলে আমার ব্যান্ড বাজাবে বুঝলা মা। ছোটবেলায় দাদি মুখে মধু দেয়নি বুঝলা। আর বিয়ের পর তুমিও কম কম আদর করেছো এর তেজ আমার উপর দেখাচ্ছে।
আদির মা : মার খাবি। মা হয় তোর।
আদি : তুমি তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
আদির মা : হয়েছে আর পাম দিতে হবে না। আর একটু খেয়ে যা।
আদি : নাহ মা। যাচ্ছি এখন।
আদির মা : যাচ্ছি নয় আসছি বলতে হয়।
আদি : আসছি। ( হেসে)
যাওয়ার আগে মেহেরকে ইশারায় কিছু বলে যায় কিন্তু মেহের শত চেষ্টায় ও আদির ইশারা বুঝতে সক্ষম হলো না।
সিমথি : হা করে তাকিয়ে না থেকে কাজে যা।
তুহিন : এতোক্ষণ দরজা দিয়ে কি করলি তোরা।
তন্ময় : কি বইন খুব শীঘ্রই আঙ্কেল ডাক শুনবো নাকি।
সিমথি : আগে আমারে আন্টি ডাক শোনা। বিয়ে করলি নয়মাস হতে চললো। ওর তো অন্তত পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্সির দরকার ছিলো কিন্তু এখনো তো এসবের কিছু শুনলাম না। সিনহার উপর এতো অবিচার সহ্য করা যায় না। বেচারীর জন্য নতুন জামাই দেখতে হবে।
মেঘা : হ রে বইনা ঠিক কইছোস।
তন্ময় : লাজ লজ্জা সব খাইয়া বসে আছোস নাকি।
সিমথি : দ্য গ্রেট জার্নালিস্ট তন্ময় এহমাদের মুখে অশুদ্ধ ভাষা নট গুড।
রোদেলা : তোরা কি বুঝতে পারছিস সিমথি কথা ঘুরাচ্ছে।
সিমথি : ভাবী ইফাজ ভাইয়া বলেছিলো আজ আমার সাথে বাড়ি যেতে। তোকে না দেখে নাকি উনার মন ভরে না। বুঝলি আর জ্বালাস না আমার ভাই টাকে। আমার ভাইয়ের ও তো ইচ্ছে হয় হাফ বউ কে ফুল বউ করে কাছে পাওয়ার।
রোদেলা : এসব নষ্টালজিক মার্কা কথাবার্তা একদম বলবি না ফাজিল।
রোদেলার কথা সিমথি শব্দ করে হেসে দেয় । সবাই বিস্ময় নিয়ে সিমথির দিকে তাকায়। ওদের বিস্ময় মাখানো রিয়াকশান দেখে সিমথির হাসি বেগ বাড়ে বৈ কমেনা।
________________
শহর জুড়ে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। রাত তখন আটটা। তবুও রাস্তায় যানবাহনের চলাচল দেখে মনে হচ্ছে কেবল সন্ধ্যা ঘনিয়েছে। সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ বাড়ি ফিরছে নিজ কর্মস্থল থেকে।
শাওন : আদি ভাই আমার কেস টা কি বল তো।
আদি : কিসের কেস।
ইশান : আসলেই সিমথির কেবিমন থেকে বের হবার পর থেকেই তোর মুখে হাসি কি হয়েছে সত্যি করে বল ভাইয়া।
আদি : ভাবী হয় তোর। নাম ধরে বলিস কেনো। আর তো মাত্র কিছু দিন ভাবী বলা প্রেকটিস কর।
আদিবা : ওহ আচ্ছা।
আচমকা আদির কথা ব্রেনে যেতেই আদিবারা সবাই একত্রে চেঁচিয়ে উঠে। আদি কান চেপে ধরে। সবাই আদির দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকায়। একে একে সবগুলো এসে আদিকে ঘিরে ধরে।
মেহের : সি সিমথি মেনে নিয়েছে। মানে ওর রাগ-অভিমান সব শেষ
প্রতিত্তোরে আদি কেবল হাসে। তাতেই সবাই যা বুঝার বুঝে যায়। ফলে সকলের ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে ওঠে। যাক সিমথি তো রাজি এবার মেঝো মা কে রাজি করানো টা ইজি হবে।
দশটায় সবাই ডিনার টেবিলে বসে খাওয়ায় মনযোগ হয়। কিন্তু মেহের দের জ্বালানোর ঠেলায় বেচারা আদি খেতেও পারছে না উঠতে ও পারছে না। অসহায় মুখ করে সবার দিকে তাকায়। যার অর্থ আর কত জ্বালাবি। কেবিনের ভেতরে কি ঘটেছে সেটা তোদের কিভাবে বলবো।
আদির মা : আমরা কালই সিমথিদের বাড়িতে যাবো। ওদের বিয়ের কথা বলতে।
আচমকা আদির মায়ের কথায় আদির মুখের খাবার গিলার আগেই বিষম খায়। সবাই আদিকে রেখে আদির মায়ের দিকে তাকায়। সবার চোখে-মুখে বিস্ময়ের পাহাড়। এদিকে বেচারা আদি কাশতে কাশতে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
চলবে,,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ৷)
#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 27
🍁🍁🍁
রাত আট টা বেজে পনেরো মিনিট। সিমথি মাত্রই হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরেছে। সামনে চোখ তুলে সায়নকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। সায়নের হাতে কুন্তি দেখে কুঁচকানো ভ্রু আরো কুঁচকে যায়। সায়নের পাশেই ইফাজ আর রোজ দাঁড়িয়ে আছে।
সিমথি : কি ভাই কোনো হেশেল টেশেলের প্রতিযোগিতায় কুন্তি হাতে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য সিলেক্টেড হয়েছিস নাকি।
সিমথির কথায় সায়ন সহ সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সায়ন হতভম্ব গলায় বলে,,,,
সায়ন : মানে
সিমথি : না মানে কুন্তি হাতে দাঁড়িয়ে আছিস তাই আর কি
সায়ন : চুপ ফাজিল। কুন্তি দিয়ে তোকে মা’র’বো তাই দাঁড়িয়ে আছি ।
সিমথি : বংশের নাম উজ্জ্বল করবি দেখছি। সিরিয়াসলি কুন্তি দিয়ে কখনো মা’র খেয়েছি বলে তো মনে পড়ছে না।
সায়ন : বোন ( চেঁচিয়ে)
সিমথি : ওকে ওকে কুল কুল। বল কি হয়েছে এমন বোম হয়ে আছিস কেনো।
সায়ন : কয়টা ফোন দিয়েছি তোকে।
সিমথি : ওহহহ আসলে আ আমি না ওটি তে ছিলাম তো তোর ফোন ধরতে পারিনি। পরে যখন ফোন হাতে নেয় তো দেখি অফ হয়ে ছিলো। সরি ভাইয়া।
সায়ন : তোকে আজ তাড়াতাড়ি আসতে বলেছিলাম না।
সিমথি : কেনো আমাকে কি ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে যে তাড়াতাড়ি আসবো। আজব।
সায়ন কিছু বলার আগেই রুবিনা রান্নাঘর থেকে ছুটে আসে।
রুবি : হ আফামণি একদম হক কথা কইছো। জানো আইজকা,,,,
সায়ন : রুবিইই ( দাঁতে দাঁত চেপে)
সায়নের ডাক শুনে রুবি ঢোক গিলে। সিমথি ভ্রু কুঁচকে একবার সায়নের দিকে তাকায় একবার রুবির দিকে তাকায়। তো আবার ইফাজ – রোজের দিকে তাকায়। বাড়ির পরিবেশ টা ও কেমন যেনো লাগছে।
সিমথি : কি হয়ে খোলসা করে বলবে কেউ। বড় আব্বু, তোদের ভালো মা, তোদের দাদিমা, তোদের আদরের বোন তরী আর ভাবীপু কোথায়।
সায়ন : রুমে যা। বিছানায় জামা-কাপড় রাখা আছে ওগুলো পড়ে এখনই নিচে আসবি।
সিমথি : কিন্তু ভাইয়া
সায়ন : পরী রাগ তুলিস না। যা বলছি।
সিমথি : ধ্যাত যাচ্ছি। কোনো আবোলতাবোল ড্রেস দেখলে ডিরেক্ট পুড়িয়ে ফেলবো মাইন্ড ইট। আর আউল-ফাউল কোনো কিছু নিচে দেখলে দেখিস কি করি।
কথাগুলো বলে সিমথি নাক মুখ কুঁচকে রুমে চলে যায়। সিমথি যেতেই সায়ন রুবির দিকে চোখ গরম করে তাকায়। বেচারি সায়নের তাকানো দেখেই দৌড়ে রান্নাঘরে চলে যায়। সায়ন হেসে ইফাজ আর রোজের দিকে তাকায়। তখনই সায়নের বড় আব্বু, ভালো মা আর মিম বেরিয়ে আসে।
সিমথি রুমে এসে ফোন চার্জে লাগায়। অতঃপর বেডের দিকে চোখ যেতেই চোখ কপালে। হঠাৎ মুচকি হেসে বেডের দিকে এগিয়ে যায়। সায়নের রাখা ড্রেস টার উপর হাত বুলিয়ে হাতে নিয়ে নেয়।
বেশ কিছুক্ষণ পর ড্রেস টা পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুলগুলো ছেড়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে চুলগুলো কোমড়ের নিচে নেমে আসে। চোখে হালকা কাজল লাগায়। আর ঠোঁটে হালকা পিংক লিপস্টিক লাগিয়ে নিজেকে আয়নায় পরোখ করে নেয়।
সিমথি : নট ব্যাড। ভালোই লাগছে তোকে সিমথি।
কথাটা বলে নিজে নিজেই হেসে দেয়। অতঃপর সায়নকে দেখানোর উদ্দেশ্য নিচে নেমে আসে। নিচে এসেই সায়নসহ মিমদের ও দেখতে পায়। সিমথি দৌড়ে সায়নের কাছে যায়।
সিমথি : ভাইয়া ভাইয়া ভাইয়া দেখতো আমাকে কেমন লাগছে
সিমথির কন্ঠে সায়ন সহ সবাই সিমথির দিকে তাকায়। সায়ন সিমথির দিকে স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ফর্সা গায়ে নেভি ব্লু শাড়িটা একদম ফুটে উঠেছে। সাথে চুলগুলো ছাড়া। হাতে কিছু কাের ব্লু চুড়ি আর কানে ব্লু ইয়ারিং মুখে কোনো কৃত্রিমতা ছাড়াও হালকা কাজল আর লিপস্টিক যেনো মেয়েটার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সায়ন হেসে উঠে। ছোট্ট বোনটা অনেক বড় হয়ে গেছে।
সায়নকে চুপ থাকতে দেখে সিমথি সায়নের হাত ঝাঁকায়।
সিমথি : ভাইয়য়য়য়া ( চেঁচিয়ে)
সায়ন : ক কি কি কি হয়েছে চেঁচাস কেনো।
সায়নের কথায় সিমথি দুপা পিছিয়ে যায়। অতঃপর শাড়ির আঁচল হাওয়ায় উড়িয়ে একটা ঘুরান্টি দেয়।
সিমথি : দেখ আমি শাড়ি পড়েছি। বল বল কেমন লাগছে।
সিমথির কার্যকলাপ দেখে সায়ন, ইফাজ, রোজ হেসে উঠে। তরী ও আনমনে হেসে দেয়। সিমথির ছোট থেকেই শাড়ীর উপর আলাদা ঝোঁক। শাড়ি পড়তে ওর ভীষণ ভালো লাগে এটা বাড়ির সবাই জানে। আগে যখন তিনবোন শাড়ি পড়তো তখন সিমথি বরাবর বাড়ির সবাই কে বার বার বলতো দেখ দেখ আমি শাড়ী পড়েছি। আমাকে বউ বউ লাগছে না।
সিমথি : তোরা হাসছিস কেবল কিছুই বলছিস না। ধ্যাতত ( গাল ফুলিয়ে)
_ মাশাল্লাহ ভীষণ সুন্দর লাগছে মা তোমায়।
আচমকা অপরিচিত কন্ঠে সিমথি পেছনে তাকায়। পেছনে তাকাতেই সিমথি টাস্কি খায় আদিদের ফ্যামিলির সবাই কে দেখে। সিমথি মুখ হা করে একবার মেহেরের দিকে তাকায় তো একবার আদির মায়ের দিকে তো একবার চাচীর দিকে। এভাবে সবার দিকে একে একে তাকায়। শেষে আদির দিকে তাকাতেই চোখ থেমে যায়। ব্লু কালার শার্ট আর কালো প্যান্ট পরিহিত যুবকের দৃষ্টি দেখে সিমথির বুকের ভেতর কেঁপে ওঠে। সারা শরীরে হিমশীতল বাতাস বয়ে যায়। আদি শুকনো ঢোক গিলে। সিমথিকে এই রূপে নজরকাঁড়া সুন্দর লাগছে। আচমকা সিমথির হুশ আসতেই থতমত খেয়ে যায়। মুখের হা বন্ধ করে সায়নের পেছনে গিয়ে লুকায়।
সিমথি : হারামি ভাই আমার। ড্রয়িং রুমে এতো মানুষ আমাকে বলবি না ( ফিসফিসিয়ে দাঁত চেপে)
সায়ন : আসলে তো দেখতিই তাই বলিনি। ( ফিসফিসিয়ে)
সিমথি : উনারা এখানে কেনো ( পুনরায় ফিসফিসিয়ে)
সায়ন : তোদের বিয়ের কথা বলতে।
সিমথি : কিহহহহ ( হালকা চেঁচিয়ে)
মিম : এই তোমাদের গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর হলে থামো তো।
সায়ন : ওহ হুমম।
আদির বাবা : সিমথি মা এদিকে এসো।
সিমথি : এ্যাঁ
হঠাৎ তিন্নি মেহেরের কোল থেকে নেমে দৌড়ে সিমথির কাছে চলে যায়। সিমথির দুপা জড়িয়ে ধরে।
তিন্নি : তুমি আমাল কাকিমা হবে।
তিন্নির কথায় সবাই মিটিমিটি হাসে। সিমথি জোর পূর্বক হেসে তিন্নির কাছে হাঁটু গেড়ে বসে।
সিমথি : তিন্নি সোনা কেমন আছো।
তিন্নি : ভালো।
সিমথি : আ আমি একটু আসছি।
ইফাজ : এই কোথাও যাবিনা গেলেই শাড়ি পাল্টে ফেলবি।
সিমথি : ভাই হয়ে এমন খুরাফাতি গিরি করছো কেনো আমার সাথে। এটার জন্য আমাকে এতো তাড়াতাড়ি আসতে বলেছিলি তুই ভাইয়া।
সায়ন হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। সিমথি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এখন কি করবে। কিছু একটা ভেবে আদির মায়ের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। এতে আদির মা কিছু টা থতমত খেয়ে যায়। তবুও নিজেকে সামলে হাসে।
সিমথি : আপনারা এখানে বিয়ের কথা বলতে এসেছেন।
শাওনের বাবা : হুমমম। একদম পাকা কথা বলতে এসেছি।
সিমথি : আপনি রাজি তো আমার মতো মেয়েকে নিজের একমাত্র ছেলের বউ করতে। আন্টি আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি।
আচমকা সিমথির গম্ভীর কণ্ঠে সবাই থতমত খেয়ে যায়। সায়নরা একে অপরের দিকে তাকায়। একটু আগেই তো হাসিখুশি ছিলো। সায়ন কপাল চাপড়াই।
সায়ন : এই মেয়ের মাথায় কখন কোন ভূত চাপে গড নোজ। ( বিরবিরিয়ে)
সিমথি : আমি কি আপনার নীরবতাকেই আপনার উত্তর ভেবে নেবো।
সিমথির কথায় এবার আদির মা উঠে এসে সিমথির সামনে দাঁড়ায়। আলতো হেসে সিমথির গালে হাত রাখে। মেয়েটার মুখে মায়ায় ভরা। কেউ যদি গভীর দৃষ্টিতে তাকায় তাহলে এই মেয়ের মায়ায় পড়তে যেকেউ বাধ্য।
আদির মা : হুমম আমি রাজি। প্রথমে একটু অমত করেছিলাম কারণ তোমার পেশা টা আমার একটু নয় অনেকখানি অপছন্দের ছিলো। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম আমার ছেলের খুশি মা হয়ে কেনো কেড়ে নেবো। তুমি মেয়ে হিসেবে যথেষ্ট ভালো। আর বাদ বাকি রইলো তোমার পেশা তোমার ডাক্তারি ,,,
সিমথি : আমি ডাক্তারি টা ছাড়তে পারবো না আন্টি। আমি ডাক্তার হবো এটা আমার বাবাইয়ের স্বপ্ন ছিলো। আর নিজের স্বার্থের জন্য কখনো আমার বাবাইয়ের স্বপ্ন আমি ভাঙতে পারবো না। এই জায়গা টায় আসতে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। বাবাই হয়তো আমার কাছে নেয় কিন্তু আমার বাবাইয়ের স্বপ্ন টা আমার কাছে আছে। এটা আমি কখনো ছাড়তে পারবো না। এতে যদি আমার বিয়ে আপনার ছেলের সাথে না ও হয় আমি রাজি। আমার কাছে সবার আগে আমার বাবাইয়ের স্বপ্ন বাকিসব পরে। এবার ডিসিশন ইজ ইউর। হয়তো আমি নিজের লাইফ টা একটু পাল্টাতে পারবো বিয়ের পর বাট আমি ডাক্তারি কোনো শর্তে ছাড়তে রাজি নয়।
সিমথির কথায় আদির গলা শুকিয়ে আসে। একবার মায়ের দিকে তো একবার সিমথির দিকে তাকায়। দুজনই দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। ড্রয়িং রুম জুড়ে পিনপিনে নীরবতা। সবার চোখে মুখে আতঙ্ক। হঠাৎ সবাই কে অবাক করে দিয়ে আদির মা নিজের গলা থেকে একটা চেইন খুলে সিমথির গলায় পড়িয়ে দেয়।
আদির মা : এটা আমার শ্বাশুড়ি মা আমি যেদিন প্রথম বিয়ে করে বাড়িতে পা রেখেছিলাম সেদিন দিয়েছিলো। আমার শাশুড়ি মা আমাদের তিন বউকেই এমন চেইন দিয়েছিলো। এটা আমাদের বাড়ির নিয়ম। প্রত্যেক ছেলের বউকে সোনার চেইন দিয়ে মুখ দেখার। আমার শ্বাশুড়ি মাকে উনার শ্বাশুড়ি দিয়েছিলো। আর উনি ছেলের বউ হিসেবে আমাকে দিয়েছিলো। আমি আজ বাড়ির বউ হিসেবে এটা তোমাকে আগাম দিয়ে রাখলাম। এই যে এটা দিলাম এখন থেকে এটার ঐতিহ্যে রক্ষা করার দায়িত্ব তোমার চৌধুরী বাড়ির দ্বিতীয় বউ হিসেবে।
আদির মায়ের কথায় সিমথি স্তব্ধ হয়ে যায়। সিমথি ভেবেছিলো হয়তো আদির মা রাগারাগি করে চলে যাবে কিন্তু এটা কি হলো। মুহুর্তেই আদির থেমে যাওয়া দম আবারও চলতে শুরু করে। ঠোঁটের কোণায় ফুটে উঠে একটা প্রাপ্তির হাসি। নীরব খান, সীমা বেগম এগিয়ে গিয়ে আদির মা-বাবার সাথে বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে শুরু করে। আদিবারা খুশিতে চেঁচিয়ে উঠে। মেহের, আদিবা, ইশান, রোজ এসে সিমথিকে ঘিরে ধরে। আদির মা হেসে সোফার দিকে অগ্রসর হয়। সিমথি এখনো অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
শাওনের বাবা : তাহলে সামনের মাসে প্রথম শুক্রবার বিয়ের আয়োজন করা হোক। কি বলেন আপনারা।
নীরব খান : অবশ্যই কেনো নয়।
সীমা বেগম : ছেলে-মেয়ে রাজি আমরা কেনো ভিলেন হবো।
দূর থেকে রহিমা বেগম সবকিছু দেখে মুখ বাকায়।
রহিমা বেগম : তা এমন অপয়া মাইয়ারে নিয়া কি নিজের পোলাডারে অকালে হারইতে চাইতাছেন নাকি আপনারা।
আচমকা রহিমা বেগমের কথায় সবাই চমকে উনার দিকে তাকায়। সিমথি হেসে উঠে। এটারই অভাব ছিলো। রহিমা বেগম সিমথিকে হাসতে দেখতে চোখ রাঙিয়ে তাকায়।
রহিমা বেগম : ওই মাইয়া হাসোস কেরে। আমি খারাপ কিতা কইছি। তোর লাইগাই তো আমার আহনাফ টা,,,
নীরব খান : আহ মা থামবে তুমি।
সিমথি : বড় আব্বু বলতে দাও উনাকে। নয়তো এসিডিটি হবে।
রহিমা বেগম : সিয়া। আমার লগে ফাজলামি করবি না। আর হাসতাছোস কেন ক আগে।
সিমথি : আপনার সাথে আমার ফাজলামি করার স্বভাব না আর না সেই সম্পর্ক আমি তৈরি করেছি।
রহিমা বেগম : আমি তোর দাদি লাগি
সিমথি : মানি না।
রহিমা বেগম : কি কইলি। সায়ন তুই তোর বইনরে,,,
সিমথি : ভাইয়া আমি রুমে যাচ্ছি। উনি এখান থেকে গেলে ডাক দিস আবার আসবো। আপাতত মেজাজ চটাতে চাইছি না।
রহিমা বেগম : তুই আমারে দেইখা পথ বদলালে কি হইবো তোর গায়ে তো আমার রক্তই বইছে। পারবি সেই রক্ত বদলাইতে।
সিমথি : আমার জানামতে আপনি এই বাড়ির মেয়ে না বউ ছিলেন এখন শ্বাশুড়ি, দাদি ব্লা ব্লা হয়েছেন।এ বাড়ির পুরুষদের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক আর মেয়েদের সাথে। আপনার সাথে আমার রক্তের নয় বংশের মিল আছে। যায় হোক আমি আসছি।
রহিমা বেগম কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সিমথি মাছি তাড়ানোর মতো হাত উড়িয়ে চলে যায়।
তরী : নানি আজকের দিনটা অন্তত চুপ থাকো। প্লিজ রুমে যাও।
রহিমা বেগম : তোর আবার কিতা হইলো।
সীমা বেগম : মা তুমি কি যাবে।
রহিমা বেগম ভেংচি কেটে চলে যায়। নীরব খান সবার দিকে তাকিয়ে হাত জোর করে মাফ চাই।
নীরব খান : কিছু মনে করবেন না। আসলে সিমথির চেহারার সাথে ওর মায়ের চেহারার কিছু টা মিল থাকায় মা সিমথির সাথে এমন করে। তবে সিমথির চেহারা মায়ের মতো হলেও স্বভাবে বাবার মতোই হয়েছে। আহনাফের তেজ ছিলো আমাদের বাবার মতো। আহনাফের রাগের সাথে, কাজে সাথে আমাদের বাবার মিল পাওয়া যেতো। আহনাফের সাথে এখন সিমথির মিল আছে। তবে বলা বাহুল্য সিমথির তেজ, রাগ, বিচক্ষণতা সবই আহনাফের থেকে একটু বেশি। আসলে মা তানিশা কে ( সিমথির মা) আহনাফের বউ করতে চাইনি। মায়ের পছন্দ ছিলো অন্য একজন মেয়ের। তানিশারা একটু গরিব ছিলো। তাই মায়ের তানিশাকে পছন্দ ছিলো না। তো এজন্যই মা আর সিমথির মধ্যে কখনো মন বা মতের মিল হয় না। এজন্যই মা এমন করে। মায়ের হয়ে আমি আপনাদের কাছে মাফ চাইছি।
শাওনের বাবা : আরে না না আমরা বুঝতে পারছি ভাইসাব। সবাই পছন্দ এক হয় না। আর আমাদের সিমথিকে ভীষণ পছন্দ।
এভাবে কথাবার্তা চলতে থাকে। আদিবারা এই ফাঁকে আদি কে নিয়ে সিমথির রুমে চলে যায়। সায়ন রান্নার দিকটা দেখতে চলে যায়। একমাত্র বোন বলে কথা।
আদিবারা পা টিপ টিপে সিমথির রুমে প্রবেশ করে। পুরোটা রুম একদম সাজানো গোছানো।
ইশান : ভাই আমার রুম জীবনে এতো পরিপাটি থাকে না।
আদিবা : তুমি তো জঙ্গলি একটা।
আদিবার কথায় ইশান আদিবার মাথায় চাটি মারে। আদিবা চোখ গরম করে তাকাতেই ইশান বোকার মতো হেসে দেয়।
মেহের : সিমথি কোথায়।
সিমথি : মেহের ভাবী আমি বারান্দায়।
সিমথির আওয়াজে সবাই বারান্দায় যায়। সিমথি ওদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পেছন ঘুরে রেলিঙে ভর দিয়ে দাঁড়ায়। অতঃপর আদির দিকে তাকায়।
সিমথি : আপনার মা হঠাৎ রাজি হয়ে গেলো কিভাবে। কি কীর্তি করেছেন শুনি তো।
আচমকা সিমথির এহেন কথা আদি চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়।
আদি : কেনো তোর বিয়েতে আপত্তি নাকি।
সিমথি : কথা প্যাঁচাবেন না তো জিলাপির মতো। এন্সার দেন।
আদি : জানিনা রে। কাল রাতে হুট করে ডিনার টেবিলে মা বললো।
সিমথি : এ্যাঁ
মেহের : হুমমম। আমরা ও তোমার মতোই অবাক হয়েছিলাম। হঠাৎ কি হলো বুঝলাম না।
সিমথি : ভাবার বিষয়। সে যায় হোক আপনি আমাকে জানালেন না কেনো আজ আসবেন। আর কখন আসলেন বলুন তো।
আদি : যখন সায়ন কুন্তি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলো তখন।
সিমথি : ওহ আচ্ছা। কিহহহহ
আদি : জ্বী ম্যাডাম। আমি তো ভেবেছিলাম দু একটা পড়বে আপনার পিঠে।
সিমথি : ভাইয়া আমাকে কখনোই মারেনি। আর আজ মারবে এটা ভাবেন কেনো হুহহ।
আদি : সেই কখন থেকে আপনি আপনি করছিস একটু তুমিও তো বলতে পারিস।
সিমথি : পারবো না।
আদি : কালকে তো ঠিকই বলেছিলি।
সিমথি : বলেছিলাম বুঝি। কি জানি শর্ট টাইম মেমোরি লস হয় আমার বুঝলেন।
আদি : ফাজলামি করছো আমার সাথে
সিমথি : আপনি কি আমার বেয়াই লাগেন যে ফাজলামি করবো। আপনি তো আমার,,,
আদি : কি লাগি তোর বল
আদির দিকে তাকিয়ে সিমথি ঠোঁট কামড়ে দুষ্টুমি মাখা হাসি দেয়। অতঃপর আদির দিকে দু পা এগিয়ে যায়।
সিমথি : আপনি তো আমার ভাইয়া বন্ধু ভাইয়য়য়য়া লাগেন। তাইনা ভাইয়া।
সিমথির কথায় আদিবারা হেসে দেয়। আদি চোখ পাকিয়ে সিমথির দিকে তাকায়। বিনিময়ে সিমথি একটা টেডি স্মাইল দেয়।
চলবে,,,,,
( কেমন হচ্ছে জানাবেন। ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ)
#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 28
🍁🍁🍁
বেশ কিছুদিন ধরেই মিম খেয়াল করছে সিমথি কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। আগে হসপিটাল থেকে ফিরে সবার সাথে আড্ডা দিতো কিন্তু এখন কেমন নিজের ধ্যানেই থাকে। মনে হচ্ছে কোনো কিছু নিয়ে ভীষণ ডিপ্রেশনে আছে। সিমথি হসপিটালের উদ্দেশ্য বের হয়ে মিম কে এমন অন্য মনস্ক দেখে ভ্রু কুঁচকায়। আচমকা মিমের হাতের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠে।
সিমথি : ভাবীপু ( চেঁচিয়ে)
আচমকা সিমথির চেঁচানো তে মিম চমকে যায়। সিমথি দৌড়ে এসে মিমের হাত থেকে নাইফ টা ফেলে দেয়। অতঃপর মিমকে ধীরে ধীরে ড্রয়িংরুমে নিয়ে আসে। সিমথির চেঁচানো তে বাড়ির সবাই ইতোমধ্যে উপস্থিত হয়ে পড়েছে। সিমথি মিমকে সোফায় বসিয়ে সবার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায়।
সায়ন : কি রে কি হলো।
সিমথি : ভাবীপু এই অবস্থায় কিচেনে কি করছিলো। আমি এখন না আসলেই একটা অঘটন ঘটে যেত। মিনিমান সেন্স নেই তোদের। ভাবীপুর প্রেগন্যান্সির সাত মাস চলছে। এখন ভাবীকে একা একা চলাফেরা করতে দিস কেনো। তারউপর এই গরমে কিচেনে কি করছে। রুবি আপু রুবি আপু
রুবিনা : জ্বি বড় আফামণি কও
সিমথি : তোমাদের কাজ করতে প্রবলেম হচ্ছে। একা সব দিকে সামাল দিতে পারছো না। তো আমাকে বলো আমি তোমাদের জন্য হেল্পিং হ্যান্ড নিয়ে আসবো।
রুবিনা : ছিহ ছিহ কিতা কও। ভাবীরে অনেকবার বারণ করছি কিন্তু হুনে নাই আমার কথা। জোর কইরা রান্নাঘরো গেছিলো।
সিমথি রাগী দৃষ্টিতে এবার মিমের দিকে তাকায়। মিম মাথা নিচু করে নেয়।
সিমথি : বেশি বউগিরি দেখাতে তোমাকে কেউ বলেনি। তোমার সাথে আরেকজনের অস্তিত্ব আছে এটা মাথায় রেখে যা করার করবে। ফারদার আমি যেনো এসব না দেখি গট ইট।
ইফাজ : আচ্ছা চুপ যা বোন। নেক্সট টাইম আমরা খেয়াল রাখবো। হ্যাপি।
প্রতিত্তোরে সিমথি কিছু না বলে কেবল একটা শ্বাস ফেলে রাগটা দমন করে। সিমথি বেরিয়ে যেতে নিলে সীমা বেগম এসে সিমথির সামনে দাঁড়ায়।
সীমা বেগম : খেয়ে যা কিছু। সকাল সকাল না খেয়ে যাওয়া একটা বাজে স্বভাব হয়ে গেছে তোর।
সীমা বেগম কে দেখে সিমথির দমে যাওয়া রাগ টা পুনরায় মাথা চাড়া দেয়।
সিমথি : ভাইয়া আসছি।
সীমা বেগম হতাশ দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সীমা বেগমের দৃষ্টি উপেক্ষা করে সিমথি চলে যায়।
তুহিন : এই মেঘা কবে আসবে বল তো।
রোদেলা : সত্যি। কতদিন হলো গ্রামে গিয়েছে এখনো আসার নাম নেই।
সিমথি : আরে ইয়ার গ্রামের পরিবেশ ছেড়ে কেউ এই কোলাহল যুক্ত শহরে আসতে চাই।
হঠাৎই সিমথির ফোন বেজে ওঠে। তুহিন আর রোদেলা মিটিমিটি হেসে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি গলা ঝেরে তুহিন আর রোদেলার দিকে একবার তাকিয়ে নিজের কেবিনে চলে যায়।
তুহিন : যায় বল আদি ভাইয়া আর সিমথি মধ্যে সব ঠিক হয়েছে এতেই আমি খুশি।
রোদেলা : আমি ও। আর বিশদিন পরই তো বিয়ে। উফফস কত কিছুর পর দুজন এক হবে বল। আমার তো অনেক আনন্দ হচ্ছে।
তুহিন : হুমমম এখন যে যার কেবিনে না গেলে বেডে শুইয়ে থাকা রোগীরা হরতাল শুরু করবে। চলুন এবার।
তুহিনের কথায় রোদেলার হাসি মুখটা চুপসে যায়। দুজনই যে যার কাজে লেগে যায়।
আদি : ফোন ধরতে এতোক্ষণ লাগে।
সিমথি : আমার লাগে।
আদি : ওয়াটএভার। আজ দেখা করবে।
সিমথি : প্রতিদিনই তো করেন। আজ আবার স্পেশাল নাকি।
আদি : প্রতিদিন আধঘন্টা ও থাকিস না এটা বুঝি দেখা করা হলো। তুই ঝগড়া করতে করতেই বিশ মিনিট পার করে দিস।
সিমথি : কেনো ঝগড়া না করলে কি করতেন ওই সময়টায়।
আদি : কি করতাম এটা মুখে বলা যায় নাকি করে দেখাতে হবে। আজ দেখিস
সিমথি : হাহ। বাই দ্য ওয়ে আপনার মাকে জিজ্ঞেস করেছেন হুট করে রাজি হলো কেনো।
আদি : না। আমার এসব জানার দরকার নেই৷ আর জামতেও চাইনা। আমি আর পেছনে তাকাতে চাই না। এবার কেবল তোকে নিয়ে সামনে এগুতে চাই। সিয়াজান
সিমথি : বলো শুনছি।
আদি : আমার লাইফ থেকে অনেকগুলো বছর চলে গেছে।
সিমথি : আপনার বোকামির জন্য।
আদি : সে যায় হোক। এবার কেবল সামনের দিনগুলো রঙিন করে কাটাবো। যেখানে সবটা জুড়ে থাকবে আমাদের ভালোবাসা আর আমাদের একটা সুখের সংসার।
আদির কথায় সিমথি হাসে। অতঃপর কিছু ক্ষণ কথা বলে ফোন কেটে দেয়।
_____________
মেহের : মেঝো মা শুনো
হঠাৎ মেহেরের কথায় আদির মা মেহেরের দিকে তাকায়।
আদির মা : হুম বল কি বলবি।
মেহের : তুমি কিন্তু এখনো বলোনি হুট করে ভাইয়া আর সিমথির রিলেশন কেনো মেনে নিলে।
আদির মা : কেনো তোরা খুশি হোসনি।
মেহের : মেঝো মা আমরা ভীষণ খুশি তবে
আদির মা : আর কোনো কিন্তু নয়। সামনে বিয়ে হাতে এখনো মেলা কাজ বাকি আছে। আত্মীয় স্বজনদের জানাতে হবে তার উপর বিয়ের শপিং কত কাজ। আর তোরা এসব নিয়ে কপনো পড়লি।
আদির মায়ের কথায় মেহের হতাশ হয় আবারো৷ এখনো পর্যন্ত হঠাৎ আদির মায়ের রাজি হওয়া টা কেনো জানি কেউ হজম করতে পারছে না।
তরী : রোদেলা আপু আসবো।
রোদেলা : আরে তরী তুই। হুমম আয়।
তরী : তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।
রোদেলা : সিমথিকে নিয়ে নাকি।
রোদেলার কথায় তরী চমকায়। তরীর রিয়াকশন দেখে রোদেলা হাসে। কারণ রোদেলা জানতো দু এক দিনের মধ্যে তরী ওদের কাছে আসতো।
তরী : আ আসলে মানে
রোদেলা : সরাসরি বলে ফেল কি জানতে চাস। তবে হুমম সিমথিকে জানতে দিস না। সিমথি তাহলে রেগে যাবে। আমাদের বার বার নিষেধ করেছে তোকে এসব জানাতে।
প্রতিত্তোরে তরী মাথা ঝাকায়।
তরী : সিমথি আপু তো রুদ্র কে ভালোবাসতো। তাহলে আদি ভাইয়ার সাথে বিয়ে তে রাজি হলো কেনো।
রোদেলা : কে বললো তোকে সিমথি রুদ্র কে ভালোবাসতো।
তরী : রোদেলা আপু প্লিজ মিথ্যা বলো না।
রোদেলা : আমার মিথ্যে বলে সিমথিকে ইনোসেন্ট প্রমাণ করার কোনো দরকার নেই। কারণ সিমথি ইনোসেন্টই। আর ওই জা’নো’য়া’র তোকে বলেছে না এসব বাজে কথা।
তরী : হুমমম। রুদ্র আমাকে নিজেই বলেছে। সিমথি আপু নাকি রুদ্র কে বলেছে ও রুদ্র কে ভালোবাসে। তার জন্যই তো রুদ্র আমাকে ইগনোর করতো।
রোদেলা : আর তুই ও বিশ্বাস করে নিলি। নিজের বোনের উপর বিশ্বাস নেই। ওকে একবার এসে জিজ্ঞেস করা উচিত বলে মনে হয়নি তোর।
তরী : আমার কাছে প্রমাণ ছিলো। রুদ্র আর সিমথি আপুর অনেকটা ক্লোজলি একটা ভিডিও ছিলো।
রোদেলা : ভিডিও টা আছে তোর কাছে।
তরী : না আমি তো ডিলিট করে দিয়েছি। আর ফোন চেঞ্জ করেছিলাম তো।
তরীর কথায় রোদেলা নিজের ফোন ঘেটে কিছু একটা বের করে তরীর সামনে ধরে। তরী ফোনের স্কিনে তাকাতেই চমকে উঠে।
রোদেলা : এটাই সেই ভিডিও।
রোদেলার কথায় তরী মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।
রোদেলা : রুদ্র অনেক চালাক ছেলে বুঝলি। তাইতো কেবল পেছনের দিক টার ভিডিও অংশ তোকে পাঠিয়েছে। নে এবার এই ভিডিও টা দেখ।
রোদেলা নিজের ফোন টা তরীর হাতে দেয়। তরী ফোনের স্কিনে চোখ রাখে। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রুদ্র সিমথির সাথে বাজে আচরণ করছিলো আর সিমথির অনেকটা কাছাকাছি গিয়েছিলো। আর রুদ্র সিমথির পজিশন দেখে পেছন থেকে যে কেউ বলবে ওরা একে অপরকে চুম্বন করছে। কিন্তু সামনে তো সিমথি রুদ্র কে থাপ্পড় মেরেছিলো। রুদ্র থাপ্পড় খেয়ে সিমথির দিকে এগুতে গেলে সিমথি পুনরায় আরেকটা থাপ্পড় লাগায়। সেই থাপ্পড়ে রুদ্র তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়।
রোদেলা : রুদ্র তোর সাথে রিলেশনে থাকাকালীন সিমথিকে প্রপোজ করেছিলো। সিমথি তখনও জানতো না তুই আর রুদ্র রিলেশনে আছিস। সিমথি তখন আদিকে ভালোবাসতো। একদিন আমরা কলেজে পৌঁছাতেই রুদ্র সিমথির সাথে বাজে বিহেভ করে আর অনেক বাজে বাজে কথা বলছিলো। সিমথি রেগে থাপ্পড় মেরে বসে। তখন রুদ্র রেগে বলেছিলো সিমথির থাপ্পড়ের বদলা নিতো। তারপর রুদ্র নিজেই এসব ভিডিও রঙচঙ মাখিয়ে তোর সামনে প্রেজেন্ট করে আর তুই সিমথিকে ভুল বুঝিস। তোর মনে আছে লাস্ট দিন তুই রুদ্রর সাথে ডেটে গিয়েছিলিস। ওইদিন রুদ্রর বাজে মতলব ছিলো। সিমথি তার কিছু দিন আগে জানতে পেরেছিলো তুই রুদ্রর সাথে রিলেশনপ আছিস। তন্ময় আর তুহিন খোঁজ নিয়ে জানতে পারে রুদ্র একাধারে অনেকগুলো মেয়ের সাথে রিলেশন করতো আর নিজের বেড পার্টনার করতো। তোকে নিয়েও রুদ্রর এই পরিকল্পনায় ছিলো। তাই সেদিন যখন তুই রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলি তার আগেই রুদ্রর সাথে সিমথি মিট করতে গিয়ে ছিলো। আর তুই গিয়ে দেখেছিলি সিমথি আর রুদ্র একই টেবিলে বসে কথা বলছে। ব্যস তুই আর কিছু না দেখে না বুঝে চলে এসেছিলি। তুই কেবল সিমথিকে দেখেছিলি কিন্তু আমাদের দেখতে পাসনি। তুই চলে আসার পর ওই রেস্টুরেন্টে রুদ্রর সাথে সিমথির প্রচুর ঝামেলা হয়। একপর্যায়ে তুহিন তন্ময় রুদ্র কে মারতে শুরু করে। মারতে মারতে রুদ্র প্রায় আধমরা হয়ে গিয়েছিলো। সেদিন সিমথি রুদ্র কে ওয়ার্ন করেছিলো তোর থেকে দূরে থাকতে। তুই হয়তো জানিস না সিমথি এতো বছর রুদ্রর থেকে তোকে প্রটেক্ট করেছে। তুই সিমথির সম্বন্ধে কেবল ভুল ধারণা পুষে রেখেছিস।
এতোটুকু বলে রোদেলা থামে। আড়চোখে তরীর দিকে তাকায়। বেচারীর মুখে অনুশোচনা ফুটে উঠেছে স্পষ্ট। রোদেলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ভুল বুঝাবুঝি একটা সুন্দর সম্পর্ক কিভাবে নষ্ট করে দিতে পারে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বোধহয় সিমথি আর তরী।
রোদেলা : সিমথি ক্লাস টেন থেকে আদি ভাইয়া কে ভালোবাসতো। সিমথি আদি ভাইয়া ছাড়া অন্য কোনো ছেলের কথা চিন্তা ও করতে পারে না। আর সেখানে রুদ্রর মতো একটা ছেলেকে সিমথি পছন্দ করবে। সিমথির চয়েজ এতোটা নিম্ন না। আর শোন। তোর মা-বাবার মৃত্যুর পেছনে সিমথির কোনো ভূমিকা নেই। কারো মৃত্যু উপরওয়ালার হাতে। তোর বাবা সিমথিকে বাচাতে গিয়ে মা’রা গেছে এটা সম্পূর্ণ তোর ভুল ধারণা। এসব ভুল ধারণা মাথা থেকে বের কর। আর কারো যুক্তি তে চলিস না। বড় হয়েছিস বুঝতে শিখ। কে তোর ভালো চাই আর কে তোর খারাপ চাই৷ দ্যাটস ইট৷
তরী কিছু না বলে চুপচাপ কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। এতোবছর একটা ভুল ধারণা মনে পুষে রেখেছিলো। একটা বাজে ছেলের জন্য নিজের বোনের সাথে দিনের পর দিন এতো বাজে বিহেভ করে গেলো। এখন কিভাবে গিয়ে সিমথির সামনে দাঁড়াবে। এজন্যই সিমথি সেদিন বলেছিলো সত্যিটা জানলে নিজেকে মাফ করতে পারবো না। সত্যিই তো নিজেকে এখন কিভাবে মাফ করবো। আর সিমথি তো কখনো মাফ করবে না।
চলবে,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)