#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 32
🍁🍁🍁
_ মেয়ের মা-বাবা কি শিক্ষা দিয়েছে। শুনেছি ছোটবেলায় নাকি মারা গেছে। তা মা-বাবা ছাড়া মেয়ের চরিত্র আর কতই ভালো হতে পারে।
ড্রয়িংরুম জুড়ে পিনপন নীরবতা। আদির মা- চাচীরা হতভম্ব দৃষ্টিতে সিমথি আর মহিলাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সিমথির পাশে মেহেরসহ আয়াশরা সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সবার মনে রাগ থাকলেও চোখে ভয়। সিমথির দৃষ্টি এখনো মেঝেতে। হাবভাব দেখের বোঝার উপায় নেই সিমথির মনে কি চলছে। আদি কেবলই সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো। কিন্তু প্রতিবেশী মহিলাদের কথায় সিঁড়ির কাছেই ওর পা থেমে যায়। রাগান্বিত দৃষ্টিতে মহিলাদের দিকে তাকায়। আদি কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিতেই সিমথি আলতো হেসে মহিলাদের দিকে মাথা উঁচু করে তাকায়। সিমথির মুখের ভাবভঙ্গি দেখে সবাই কেঁপে ওঠে। ঠোঁটের কোণায় হাসি থাকলে ও ফর্সা মুখ টা ইতোমধ্যে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। চোখ দুটো দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন ঝড়ছে। ফর্সা মুখে কপালের নীল শিরা ভেসে ওঠেছে। সিমথি উঠে দাঁড়ায়। জোরে একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করে। অতঃপর শীতল কণ্ঠে শুধায় ,,,
সিমথি : নতুন বউয়ের হাতে রান্না খেতে চান বললেই তো হয়। অনুগ্রহ করে দেড় ঘন্টা বসুন ব্রেকফাস্ট করুন। নতুন বউয়ের রান্না খেয়েই বাড়ি ফিরবেন কেমন।
সিমথির এমন ঠান্ডা গলার উত্তরে সবাই হতভম্ব হতবাক হতবুদ্ধি। এতোটা শান্ত স্বভাব এ যেনো ঝড় আসার পূর্বাভাস দিচ্ছে। আদি হাসে। আয়াশ দের পাশে এসে দাঁড়ায়।
সিমথি : মেহের ভাবী উনাদের চা মিষ্টি দাও। আর আমার সাথে একটু রান্না ঘরে আসো। কোথায় কি আছে এটা তো আর আমি জানি না।
সিমথির কাজে সবাই চরম অবাক হচ্ছে। আদির মা আমতা আমতা করে বলে,,,
আদির মা : সিমথি মা তোমার রান্নাঘরে যেতে হবে না। আপা চলো আমরা,,
সিমথি : মা
সিমথি কন্ঠে মা ডাকে আদির মা কেঁপে ওঠে। ডাকটায় কিছু তো একটা ছিলো। মায়াভরা দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়।
সিমথি : আজ আমিই রান্না করবো।
সিমথি রান্নাঘরের দিকে যায়। সিমথির পেছন পেছন মেহেরসহ আদির চাচীরা ও যায়। মেয়েটা রান্না পারে কিনা আদোও কেউই জানে না। আদির বাবারা হেসে নিজেদের রুমে যায়। আদি, আয়াশরা একে অপরের দিকে তাকায় অতঃপর হেসে উঠে। আজ বাড়িতে কিছু একটা হতে চলেছে এটা সবাই বুঝতে পারছে। আয়াশরা তিনজন প্রতিবেশী মহিলার দিকে তাকিয়ে আফসোস করতে করতে অন্যদিকটায় চলে যায়।
ঘড়ির সময় ধরে দেড় ঘন্টা পর সিমথি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে। আয়াশরা সিমথির দিকে তাকায়। আদির মা- চাচীরা সোফা থেকে উঠে সিমথির কাছে যায়। রান্নাঘরে কাউকেই থাকতে দেয়নি সিমথি। রান্নার সবকিছু বের করে দেওয়ার পরপরই ওদের বের করে দেয়। আদির মা এসে নিজের শাড়ীর আঁচল দিয়ে সিমথি মুখের ঘামটুকু মুছে দেয়। সিমথি আবেশে চোখ বুঁজে নেয়। আজ কতকাল পর মা মা গন্ধ টা পাচ্ছে। হঠাৎ সব ক্লান্তি যেনো নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো কর্পূরের ন্যায়।
মেহের : এই নাও পানি খাও।
সিমথি : রান্নাঘরে প্রচুর গরম আপু ( গাল ফুলিয়ে)
সিমথির কথায় মেহের হেসে মাথায় হাত বুলায়। মেহেরের কোনো বোন নেই। তাই সবসময় চাইতো জা থাকুক। তাকে নিজের বোনের মতোই আদর করবে। আজ বিয়ের এতোবছর পর বোধহয় মেহেরের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। কথাটা মনে মনে ভেবে সিমথির মুখের দিকে আবারো তাকায়। দেড় ঘন্টার ব্যবধানে মুখটা পুরো লাল হয়ে আছে। আদিরা এসে সিমথির পাশে দাঁড়ায়।
আদি : বেশি গরম লাগলে রুমে যাও। গোসল করে আসো।
সিমথি : নাহ। আগে এনাদের নতুন বউয়ের রান্না খাওয়ায়।
কথাটা বলে সিমথি তিনজনের দিকে তাকায়। অতঃপর আবারো আলতো হেসে দেয়।
সিমথি : চাচী কাকি আন্টি যায় হোন খেতে আসুন। আমি সার্ভ দুঃখিত খাবার বাড়ছি।
খাবার টেবিলে বসে আছে তিনজন। খাবারের রঙ দেখে তো ভালোই মনে হচ্ছে। দেড় ঘন্টায় ভালোই খাবার রেঁধেছে। সাদা ভাত, মুরগীর মাংস, মাছের তরকারী, বেগুন ভাজা। সিমথি তিনজনকে খাবার দিয়ে আদির পাশে এসে দাঁড়ায়। ততক্ষণে আদির বাবারা ও চলে আসে।
ইশান : উহুমমম কিয়া খুশবুউউউ।
ইশানের কথায় সিমথি হালকা হাসে।
সিমথি : কি হলো খাওয়া শুরু করুন। ভয় নেয় খাবারে জামাল গোটা মিশায়নি। আফটার অল আমি একজন ডাক্তার হয়ে এমন দুর্নীতি করতে পারিনা।
সিমথির কথায় উপস্থিত সবাই মুখ চেপে হাসে। সিমথি একটা চেয়ার টেনে ওদের পাশে বসে দাঁত কেলিয়ে হাসে। অতঃপর চোখের ইশারায় খেতে বলে। অগত্যা তিনজনই খেতে শুরু করে। বেগুন ভাজা দিয়ে ভালোভাবে খেলেও ঝামেলা হয় মাংসের তরকারী দিয়ে এক নলা মুখ দিতেই তিনজনের জিভ পুড়ে যাওয়ার অবস্থা। তিনজনই কোনোমতে খাবারটা গিলে পানি খাওয়ার জন্য গ্লাসে হাত দিতে নিলে সিমথি গ্লাসগুলো সরিয়ে দেয়।
সিমথি : খাওয়ার মাঝে যদি শুধু পানিই খান তাহলে এগুলো কিভাবে খাবেন আন্টিইইই। তাই নো ওয়াটার অনলি ইটিং।
সিমথির কথায় তিনজনই অসহায় দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। তা দেখে সিমথি হাসে। অতঃপর আবারো খাবারের দিকে ইশারা করে। আদির ফুফি ( তোহার মা) আদির মায়ের কানে ফিসফিসিয়ে বলে,,,
আদির ফুফি : ভালোই জব্দ করছে ভাবী। এদের এমনই শিক্ষা পাওয়া দরকার।
শাওন : আমি কেইস টা বুঝিনি।
মেহের : দেখতে থাকো তাহলেই বুঝবে। সিমথি যখন নীরব ছিলো তখনই বুঝেছিলাম ঝড় আসার পূর্বাভাস দিচ্ছে ও।
মেহেরের কথায় সবাই হেসে আবারো ওদের দিকে মনযোগ দেয়। তিনজনই খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে। সিমথি তা দেখে খানিকটা রাগী স্বরে বলে উঠে,,,
সিমথি : খাবার সামনে রেখে বসে আছেন কেনো। খাবার নষ্ট করার ধান্দায় থাকলে সে চিন্তা বাদ দেন। খাবার নষ্ট আমার একদম অপছন্দের। এই খাবারে যদি স্বয়ং আরশোলা এসেও পড়ে তবুও এগুলো আপনাদেরই খেতে হবে। সো তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করুন।
সিমথির কথায় তিনজনই করুন দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে খেয়ে নেয়। সিমথির ভাবসাব দেখে আয়াশদের পেটে হাসি চাপিয়ে রাখা দায় হয়ে গেছে। তিনজন মহিলা অগত্যা আবার খেতে আরম্ভ করে। কিন্তু মাংসের ভাব অল্প খেয়ে আবারো সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় খেতে বলে। তখন ওদের মধ্যে একজন বলে উঠে,,,
_ খাবারে প্রচন্ড ঝাল। আর খেতে পারবো না।
মিহলার কথায় আদিরা এতোক্ষণে কেসটা ধরতে পারে। খাবার না খাওয়ার কারণ তাহলে ঝাল। সিমথি হেসে উঠে দাঁড়ায়। শাড়ির আঁচল ঠিকঠাক দেখে তিনজনের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।
সিমথি : যাদের কথায় এতো ঝাঁঝ তারা ঝাল খেতে জানেনা এটা আমি কিভাবে জানবো বলুন। জানলে ঝাল কমিয়েই দিতাম। কি আর করবেন এই প্রথম সিমথি জাহান সিয়া কোনো আউট পার্সনের জন্য রেঁধেছে। খেতে তো আপনাদের হবেই। নিন নিন তাড়াতাড়ি শেষ করুন। ঘুম পাচ্ছে আমার আপনাদের খাবারের নমুনা দেখে। কতটা সময় ওয়েস্ট করছেন আমার আপনাদের কোনো আইডিয়া আছে। দশমিনিটে খাবার কমপ্লিট করুন। গো ফাস্ট।
শেষের কথাটা একটু জুড়ে ধমকে বলায় সবাই খানিকটা কেঁপে ওঠে। তিনজন মহিলা ভয়ে এবার খেতে শুরু করে। ওরা তো ভেবেছিলো বিয়ে হওয়ায় হয়তো এই মেয়ে নরম মাটি হয়ে গেছে। তাইতো এতো গুলো কথা শুনিয়ে দিয়েছিলো। সিমথি জাহান সিয়া ভয়ানক এটা জানতো কিন্তু খু:না’খু’নি ছাড়াও কথায় আর কাজেও কেউ এতোটা ভয়ানক হতে পারে এটা বোধহয় ওদের জানা ছিলো না। সিমথি আবারো চেয়ারে বসে পড়ে। একটা চামচ নিয়ে হাতে ঘুরাতে শুরু করে।
সিমথি : আপনাদের প্রথম প্রশ্ন আমার গয়ের রঙ আরেকটু ফর্সা হবা উচিত ছিলো তাই না।
সিমথির কথায় ওদের গলায় খাবার আটকে যায়। আয়াশরা একবার মহিলাদের দিকে তো একবার সিমথির দিকে তাকায়।
সিমথি : আমার জানামতে বাঙালি মেয়েদের তুলনায় আমার গায়ের রঙ যথেষ্ট ফর্সা। আর ফর্সা দিয়ে কি করবেন। আমা র চেহারায় তো আর ওরা আয়নার মতো নিজেদের দেখবে না এম আই রাইট।
সিমথির কথায় তিনজনই চুপ হয়ে যায়।
সিমথি : আপনাদের দ্বিতীয় প্রশ্ন আমার নাক বোঁচা। কিন্তু আমার দাদু বলতো আমার নাক একদম খাঁড়া। তা আমার নাক আরো খাড়া দিয়ে উনারা বা আপনারা কি করবেন। আমার নাকে কি জামা-কাপড় মেলবেন নাকি।
সিমথির কথায় আয়াশরা এবার শব্দ করে হেসে উঠে। বেচারী মহিলাদের অবস্থা এখন ছাইড়া দে মা কাইন্দা বাঁচি। সিমথি আয়াশদের দিকে তাকায়। এদের হাসি দেখে সিমথির ও হাসি উঠছে।
সিমথি : তৃতীয় প্রশ্ন রান্নাবান্না এটা আপনারা নিজেরাই চেক করছেন। তা কেমন হলো জানাবেন। আর হুমম আমি রান্না জানি। প্রায় সাত বছরের কাছাকাছি আমি বিদেশে ছিলাম। তখন নিজের রান্না নিজেই করতাম। বাইরে খাবার কিংবা বাড়িতে বুয়া রেখে তার হাতে রান্না করা খাবার আমার একদম অপছন্দের। আপনাদের চতুর্থ প্রশ্ন চুলগুলো ছোট। আর লম্বা চুল দিয়ে কি করবে উনারা। অবশ্যই আমার চুল দিয়ে রুম ঝাড়ু দেবে না। তাই না মা
কথাটা বলে আদির মায়ের দিকে তাকায়। আদির মা সিমথির কথায় সায় দেয়।
সিমথি : আপনাদের পরবর্তী প্রশ্ন আমি আদির থেকে শর্ট। আমি আদির বুক বরাবর পড়ি। আর আদির হাইট ছয় ফিট৷ আমার হাইট যথেষ্ট। আমাকে আর লম্বা দিয়ে কি করবে। অবশ্যই বাড়ির সিলিং পরিষ্কার করবো না আমি।
এবার আয়াশসহ বড় ছোট সবাই শব্দ করে হেসে উঠে। আদি হাসতে হাসতে সোফায় বসে পড়ে। আদিবারা একেকজন একেক জায়গায় বসে পড়ে।
সিমথি : আপনাদের পরবর্তী প্রশ্ন মেয়ের চরিত্র কেমন। আমার চরিত্র নিয়ে আপনাদের কাছে আমি সার্টিফিকেট চাইনি। আপনারা ভালো এটার সার্টিফিকেট আমাকে দেখান। আমার শ্বাশুড়ি আমার হাতের রান্না খেতে পারবে। এতোটা অকর্মা আমি না।
সিমথির মুখের ভাবভঙ্গি এখন গাম্ভীর্য হয়ে গেছে। শান্ত চোখ আচমকায় লাল বর্ণ ধারণ করে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
সিমথি : হাউ ডেয়ার ইউ। আপনাদের সাহস হয় কি করে আমার মা-বাবার শিক্ষা নিয়ে কথা বলার। আপনার কি আমার আট-দশ টা মেয়ের মতো সরল সোজা মনে হয়। নতুন বউ বলে ভেবেছেন যা খুশি তাই বলে যাবেন আর আমি চুপচাপ শুনবো। তাহলে শুনে রাখুন আমার মা-বাবার অপমান যেই ব্যক্তি করে তাকে আমি ছেড়ে কথা বলিনা। আপনাদের আমি আবারো মনে করিয়ে দেয় আমি মেহের ভাবী নই। মেহের ভাবীকে যা তা বলেছিলেন বলে আমাকেও বলবেন। আমি সিমথি জাহান সিয়া। খান বংশের মেয়ে আমি। আমার রক্তে হিংস্রতা। গট ইট। এবার খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিদায় হোন তো। রাগ মাথায় চড়ে গেছে।
শেষ কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে ওখান থেকে সরে এসে আদিবার পাশে দাঁড়ায় । বেচারী মহিলারা অপমানিত হয়ে খাওয়া ছেড়ে উঠতে চাইলে সিমথি আবারো চোখ গরম করে তাকায়। তাই বসে গপাগপ খেতে শুরু করে। তিনজনের চোখ দিয়েই ইতোমধ্যে পানি পড়তে শুরু করেছে। ওদের খাওয়া দেখে সিমথি ঠোঁট কামড়ে হেসে সবার দিকে তাকায়। আদির বাবা এসে সিমথির পাশে দাঁড়ায়।
আদির বাবা : ভালো জব্দ করেছিস মা। এই যা তোমায় তুই বলে ফেললাম। সবাই কে বলে অভ্যাস হয়ে গেছে তো। কিছু মনে করো না।
আদির বাবার কথায় সিমথি গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে,,,
সিমথি : কিন্তু আমি তো রাগ করেছি।
আদির বাবা : ইচ্ছে করে বলিনি ভুল হয়ে গেছে।
সিমথি : তোমাকে তো শাস্তি পেতে হবে। আমার ডিরকশেনারিতে সরির জায়গা নেই।
সিমথির কথায় আদির বাবার মুখ টা ছোট হয়ে যায়। ভুল করে তুই বলে ফেলেছিলো। আয়াশরা হতবাক হতবুদ্ধি হয়ে সিমথির দিকে তাকিয়ে আছে।
সিমথি : তোমার শাস্তি হলো আমাকে এখন থেকে তুই করেই ডাকবে। ডাকটা আমার ভালো লেগেছে।
সিমথির সিরিয়াস মুডে ফাজলামো দেখে সবাই বোকা বনে যায়। আদি ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। সবাই কি ভাবলো আর কি হলো। সবার রিয়াকশন দেখে সিমথি শব্দ করে হেসে উঠে।
সিমথি : আরে বাবা আমি তো এভাবেই বলেছিলাম। সবার বেলায় তুই ডেকে আপন করে নেবে আর আমার বেলায় কেনো তুমি ডাকবে আমি কি দুদিনের জন্য এসেছি নাকি। হুহহ।
সিমথির কথায় সবাই হেঁসে দেয়। আদি ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে।
এরই মাঝে তিনজন খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। ঝালে অবস্থা কাহিল। সিমথি ওদের অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসে। ইশান আগুনে ঘি ঢেলে দেয়।
ইশান : তা আন্টিগণস রান্না ভালো হয়েছে।
ইশানের কথায় মহিলারা একে অপরের দিকে তাকায়। রান্না ভালো হলেও ঝাল অতিরিক্ত ছিলো। কেউ কিছু না বলে দ্রুত বাড়ি ত্যাগ করে। এদের পালানো দেখে আয়াশরা এবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। ইশান হাসতে হাসতে বলে উঠে,,,
ইশান : আমার মমতাজের ওই গান টা মনে পড়ছে। পোলা তো নয় একখান আগুনেরই গোলা
ইশানের কথায় রিক হাসতে হাসতে বলে,,,
রিক : এটার মেইল ভার্সন করলে কি হয় বলতো
আয়াশ : মেয়ে তো একখান আগুনেরই গোলা।
সিমথি ঠোঁট কামড়ে কেবল হাসে।
_________________
সময় গড়ালো নিজের মতো। সিমথি আদির বিয়ের দুই মাস ও হতে চললো। এরই মাঝে সায়ন মিমের কোল আলো করে একজন ছেলে জন্ম নেয়। নাম আদ্র। বয়স একমাস। সিনহা ও তিনমাসের প্রেগন্যান্ট। সিমথি এখন এগারোটায় হসপিটালে যায় আবার আটটায় চলে আসে। লাইফস্টাইলে অনেকটায় পরিবর্তন এসেছে। সিমথির প্রতিটা পদক্ষেপে আদির মায়ের আপসোস হয়। না জেনে বুঝে মেয়েটাকে এতোটা নিচ করার জন্য। সিমথি কেবলই হসপিটাল থেকে ফিরেছে। ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। সিমথি আর আদি এসে ওদের দিকে তাকায়।
সিমথি : তোমাদের হাসির শব্দ রাস্তায় চলে যাচ্ছে।
ইশান : আরেহ ভাবীজি আসেন আসেন।
সিমথি : কি ব্যাপার দেবরজি। বলুন শুনি।
বলেই সোফায় ধপাস করে বসে পড়ে। তা দেখে আদির মা এসে রাগী চোখে সিমথি আর আদির দিকে তাকায়।
সিমথি : কি ব্যাপার মা বাবা কি আজ নতুন আরেকটা বিয়ে করে সতীন এনেছে। এমন রণচণ্ডী কেনো তুমি৷
সিমথির কথায় মেহেররা ঠোঁট টিপে হাসে। এসব হাসি মসকরা এখন নিত্যদিনের সঙ্গী।
আদির বাবা : তুই বললে তোর জন্য আরেকটা মা নিয়ে আসি।
সিমথি : আমাকে কেনো বলছো। বললেই হয় তোমার বিয়ের শখ হচ্ছে। আমার কাছে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসে। লাগলে বলো এনে দেবো আমার স্টেপ মা কে।
আদির মা এসে সিমথি কান মলে ধরে।
আদির মা : পা*জি হয়ে যাচ্ছিস তুই দিন দিন। আমি না তোর মা হয়।
সিমথি : থুরীই না বললাম তুমি আমার কাকি হও।
আদির মা : মা’র খাবি। যা ফ্রেশ হয়ে আয়। তারপর আড্ডা দে। আদি তুই ও যা।
সিমথি : যাচ্ছি তো। কান ছাড়ো লাগতাছে।
আদির মা সিমথির কান ছাড়ে। সিমথি হাসতে হাসতে সিড়ির দিকে পা বাড়ায়। পেছন পেছন আদিও আসে। আচমকা সিমথি থেমে পেছনে তাকিয়ে হালকা কাশি দেয়। শাওনরা সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি দুষ্টু হেসে আদির বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,
সিমথি : বাবা তুমি আরেক টা বিয়ে করে নাও। আমার নতুন মা চাই। নতুন দেবর বা ননদ চাই।
আদি মা তেড়ে যেতেই সিমথি দৌড়ে উপরে চলে যায়। পেছন পেছন আদিও হাসতে হাসতে যায়। শাওন অট্টহাসিতে মেতে উঠে।
_____________
সিমথি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সায়নের সাথে কথা বলছিলো তখনই পেছন থেকে আদি এসে সিমথিকে জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ গুঁজে দেয়। সিমথি চমকে তাকায়। কান থেকে ফোন সরিয়ে আদির দিকে ফিরে তাকায়,,,
সিমথি : কি করছেন কথা বলছি তো। ( ফিসফিস করে)
আদি : তো বলোনা। আমি কি তোমাকে ডিস্টার্ব করছি নাকি।
সিমথি ভোতা মুখে আবারো কথা বলায় মনযোগী হয়। কিন্তু আদির জ্বালায় বেচারী কথা বলতে পারছে না। কখনো চুল ধরে টানছে তো কখনো চুমু খাচ্ছে আবার চিমটি দিচ্ছে।
সিমথি : আচ্ছা ভাইয়া আজ রাখছি। কাল আসবো আমি। গুড নাইট।
ওপাশ থেকে সায়নের কথা না শুনেই সিমথি ফোন কেটে আদির দিকে তাকায়।
সিমথি : কি হয়েছে টা কি আপনার।
আদি : হয়েছে তো অনেক কিছুই। কিন্তু বলতে বা করতে কই দিচ্ছিস।
সিমথি : আপনি আমাকে আবার তুই বললেন
আদি : তুই আমাকে যতবার আপনি বলবি আমিও ততবার তুই ডাকবো।
সিমথি : আমি আপনার বউ হয়।
আদি : আমিও তোর বর হই।
সিমথি মুখ ফুলিয়ে আদির দিকে তাকায়। আদি হেসে সিমথি পিঠ নিজের বুকে ঠেকিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। বাতাসে এখন শীতের গন্ধ। আর কিছুদিন পরই হয়তো শীতের আগমন ঘটবে। আদি মাথাটা একটু নিচু করে সিমথির দিকে তাকায়। এই মেয়েটা জীবনে আসার পর রঙিন জীবনটা যেনো আরো রঙিন হয়ে গেছে। সারাক্ষণ হাসি-হাসি কাটে ওর। এই হাসির কারণ কে কোনো উপায়েই আদি হারাতে চাই না। কথাগুলো মনে মনে আওড়িয়ে আরেকটু নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে সিমথিকে। সিমথির ঠোঁটের কোণার হাসি আরো চওড়া হয়।
চলবে,,,,,
#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 33
🍁🍁🍁
পাত্র হিসেবে নিজের প্রাক্তন কে দেখে রাগে তরীর সারা শরীর কাঁপতে শুরু করে। রাগ টা নিজের মাঝে চেপে সোফায় বসে। পাশেই রহিমা বেগম হাসতে হাসতে পাত্রের মায়ের সাথে কথা বলছে। সিঁড়ির একপাশে আদি, সিমথি, রোজ, ইফাজ, সায়ন দাঁড়ানো। সিমথির কোলে আদ্র। সিমথি মূলত আদ্রর সাথে টুকুর টুকুর করছে। আদি ভ্রু কুঁচকে একবার তরীর জন্য আসা পাত্র রুদ্রর দিকে তাকাচ্ছে আবার সিমথির দিকে তাকাচ্ছে । ছেলেটার ভাবসাব মোটেও সুবিধার না। কেমন করে যেনো সিমথির দিকে তাকাচ্ছে। আদি কনুই দিয়ে সিমথিকে গুতা দিতেই সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
সিমথি : গ’রুর মতো গুতাচ্ছেন কেনো।
সিমথির কথায় আদি চোখ রাঙিয়ে তাকায়। সিমথি ঠোঁট চেপে হাসে।
সিমথি : কি হয়েছে জামাইজান। রাগো কেনো বলো বলো শুনি।
সিমথির মুখে জামাই জান শুনে আদির শরীরে শীতল হাওয়া বয়ে যায়। এটা প্রতিবারই হয়। যখনই সিমথি ওকে জামাইজান বলে সম্বোধন করে তখনই আদি বুকে প্রশান্তি নেমে আসে।
আদি : সিয়াজান আই নিড এ কিস।
আচমকা আদির এহেন কথায় সিমথি বিষম খায়। ইফাজ রা অবাক হয়ে সিমথির দিকে তাকাতেই সিমথির বোকা বোকা হাসি দেয়। অতঃপর আদির দিকে চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়।
সিমথি : আদি তুমি দিন দিন চরম মাত্রায় অ’স’ভ্য হয়ে যাচ্ছো৷
আদি : হুহ। নিজে জামাইজান বলে আমাকে এলোমেলো করতে পারবে আর আমি আদর চাইলেই দোষ।
সিমথি : ইইইই চুপ করুন। ভাইয়ারা শুনলে লজ্জায় পড়তে হবে।
সায়ন : কি ফুসুরফাসুর শুরু করেছিস বলতো।
আদি : এক বাচ্চার বাপ হয়ে ছিস। কিন্তু কমনসেন্সের অভাব।
সায়ন : মানে।
সিমথি : আহ ভাইয়া ছাড় তো।
রোজ : আপু ওই গা’ঞ্জা’খোরের সাথে কি তরী আপুর বিয়ে হবে নাকি।
সিমথি : আমি কি জানি৷ ( ঠোঁট বাঁকিয়ে)
কথাটা বলে কিছুক্ষণ পরের মুহুর্ত টা ইমাজিন করে সিমথি হাসে। হঠাৎ রুদ্র সিমথির দিকে এগিয়ে আসে। তা দেখ সিমথি হাসে। আদি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। এই ছেলে ওর বউয়ের দিকে আসছে কেনো।
রুদ্র : হেই সুন্দরী কেমন আছো।
সিমথি : দেখে কি আমাকে খারাপ মনে হচ্ছে।
রুদ্র : না তবে আগের থেকে একটু বেশিই সুন্দর আর হ,,,
সিমথি : এদিকে নজর দিস না। আমার হাতের মারের স্বাদ ভুলে গিয়ে থাকলে আমি আবার মনে করিয়ে দিতে জানি।
সিমথির কথায় রুদ্র হাসে। ঠোঁটে হাত বুলিয়ে সিমথির পা থেকে স্কেন করে। শাড়ীতে আগের থেকে আরো বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।
রুদ্র : তা বাদ দিলাম তোমার কথা। কিন্তু যাকে এতোদিন আমার হাত থেকে বাঁচালে সে এখন আমার কব্জায়। কি করবে।
সিমথি : পেছনে ফিরে দেখ।
সিমথির কথায় রুদ্র পেছনে ফিরতেই ঠাস করে গালে একটা থাপ্পড় পড়ে ৷ রুদ্র হতবাক হতবুদ্ধি হয়ে তরীর দিকে তাকিয়ে আছে। তরীর চোখ লাল হয়ে আছে। মাত্রাতিরিক্ত রাগে শরীর থরথর করে কাপছে। সিমথি বাদে রহিমা বেগম সহ সবাই হতবিহ্বল। তরীর রুদ্রর কলার টেনে ধরে।
তরী : কু’লা’ঙ্গা’র তোর সাহস হয় কি করে। আমার সাথে বিয়ের আলাপ নিয়ে আসিস। আমাকে কি তোর বোকা মনে হয়। এখনি তোর ফ্যামিলি নিয়ে বিদেয় হ। নয়তো ব্যাট বল খেলবো তোকে নিয়ে।
তরীর কথায় সিমথি হেসে আদির বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে তরীর দিকে দৃষ্টিপাত করে।
তরী : তোর মতো নরকের কীটের জন্য আমি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষটার সাথে এতো বাজে বিহেভ করেছি। আর সেই তুই আবার বিয়ের আলাপ নিয়ে আসিস। বিয়ে করবি তুই আমায় তাই না। তোর বিয়ের শখ জন্মেরমতো গুছিয়ে ভেবে শা/লা ল/ম্প/ট
কথাগুলো বলে তরী রুদ্র কে একের পর এক থাপ্পড় মারে। বেচারা রুদ্র হতবাক হতবুদ্ধি হয়ে মার খেতে থাকে। সিমথি আদির বাহু খামছে ধরে হাসি আটকায়। আদি ঠোঁট কামড়ে চোখ বুঁজে নেয়। এই মেয়ে আস্তো একটা বিড়াল প্রজাতির। হুটহাট কামড়ে ধরে আবার হুটহাট খামচে ধরে। রোজ মিটিমিটি হাসতে শুরু করে। সায়ন আর ইফাজ গিয়ে তরীকে ছাড়িয়ে আনে।
তরী : ভাইয়া তোমরা ছাড়ো আমায়। আজ ওকে আমি মে/রেই ফেলবো।
সায়ন : তরী বোন আমার থাম কি করছিস কি।
ইফাজ : আরে পা/গ/ল নাকি এভাবে হাত-পা ছুড়ছিস কেনো।
রুদ্রর বাবা : এসব কি মিসেস খান। ডেকে এনে এভাবে অপমান করার মানে কি।
রহিমা বেগম : তরী হচ্ছে টা কি। এমন বে/য়া/দ/বি করছিস কেনো। আর ছেলে দেখতে যথেষ্ট সুদর্শন। আমি তোর সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছি।
তরী : মাই লাইফ মাই ডিসিশন। আমি বাদর না যে তোমরা ঢুগঢুগি বাজাবে আর তার তালে তালে আমি নৃত্য করবো। আর তুমি আমাকে না বলে কিভাবে ওর মতো একটা লু/ই/চ্ছা/র সাথে বিয়ে দিতে চাও।
সীমা বেগম : তরী ভাষা সংযত করে কথা বল।
রুদ্রর মা : এমন মেয়ে আমরাই নিজের ঘরে নেবো না। এই রুদ্রর বাবা চলো চলো।
রুদ্রর মায়ের কথায় তরী তেতে উঠে।
তরী : আপনার এই ছেলের গলায় কেনো ভালো ঘরের মেয়ে জুটবে না। আর আপনি কি আমাকে রিজেক্ট করবেন আমি আপনার এই কু/লা/ঙ্গা/র ছেলেকে রিজেক্ট করেছি। এই যে এতোক্ষণ বসে বসে এতো কিছু গিললেন বিনা পয়সায় এটা ও মাফ করে দিলাম। যান ভাগেন এবার৷ নয়তো ঝাটা পেটা করে বের করবো।
তরীর কথায় রোজ শব্দ করে হেঁসে দেয়। সিমথি আদির বাহু কামড়ে ধরে হাসি আটকায়। আদি ঠোঁট কামড়ে চোখ বুঁজে আহত স্বরে বলে,,,,
আদি : সিয়াজান কি করছো।
তরীর অপামনে রুদ্রর মা- বাবা নাক ফুলিয়ে চলে যায়। রুদ্র যাওয়ার আগে সিমথি আর তরীর দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে যায়।
সীমা বেগম : এসব কোন ধরনের ব্যবহার তরী। ওরা কি ভাবলো।
তরী : যে যেমন তার সাথে তেমনই করতে হয়। তাই না সিমথি আপু।
তরীর কথায় সিমথি দ্রুত আদিকে ছেড়ে সরে দাড়ায়। অতঃপর ভাবলেশহীন উত্তর দেয়।
সিমথি : আমি কি জানি।
রোজ : তোমার কথাগুলো সেই ছিলো।
বলেই রোজ আবার হাসতে শুরু করে।
সীমা বেগম : রোজ হাসবে না। সবার আদরে আদরে মাথায় চড়ে বসেছো। বড় ভাইয়া নেই বলে সাহস বেড়ে গেছে।
সিমথি : তেমন সবার বিশ্বাসে আপনিও তো আঘাত আনতে জানেন তাই না। আর আমি সবাই কে নিষেধ করেছি রোজের সাথে এভাবে কথা বলবেন না কেউ। রোজ এই বাড়ির সবার ছোট তাই ও সবার আদরের। কথাটা মাথায় রাখবেন।
সিমথির গম্ভীর কণ্ঠে বলা কথায় সীমা বেগম দমে যায়। অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়।
সীমা বেগম : আমার সাথে এভাবে কথা বলিস কেনো। কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছিস।
সিমথি : কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছেন সেটা আমার থেকে আপনি বেশি ভালো জানেন৷
সিমথির কথায় সীমা বেগম চমকে সিমথির মুখের দিকে তাকায়। সায়নরা পরিস্থিতি বুঝার জন্য অপেক্ষা করছে৷ সীমা বেগম সিমথির তাচ্ছিল্য বাণী শুনে শুকনো ঢোক গিলে। সিমথি ঠোঁট হেলিয়ে হাসে।
সিমথি : কি হলো। এতবছরের কুকর্ম ধরা পড়ে গেলো কি না সেটার ভয় পাচ্ছেন। ভয় নেই যথা সময়ে আপনার শাস্তি আপনি পেয়ে যাবেন।
সীমা বেগম : সিম,,,
সিমথি : আপনার সাথে কথা বলতে ও আমার রুচিতে বাঁধে। ভালোবাসার আড়ালে ছুড়িঘাত করেন। এমন বিশ্বাসঘাতক হয়েও আমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তার জন্য শুকরিয়া আদায় করুন। আল্লাহ হাফেজ।
সিমথির রহস্যময়ী কথার মানে কেউ না বুঝলে দুইজন ব্যক্তি বুঝতে পেরেছে। তারা শুকনো ঢোক গিলে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি কথা না বাড়িয়ে আদ্রর কপালে চুমু একে সায়নের কোলে দিয়ে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায়।
_______________
সিমথি : কে তেল দেবে মাথায়।
সিমথির কথায় সোফার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা আদির মা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
আদির মা : আমি তোকে বলছি। মেহের আদিবাকে ও দিয়ে দিছি। এখন তোর মাথায় দেবো।
সিমথি : এ্যাহহহ আমি তেল দেয় নাহহ। পেত্নীর মতো লাগে।
আদি : ঠিকই বলেছো এমনিতে তো পেত্নী লাগে আর চুলে তেল দিলে তো পুরাই তেঁতুল গাছের পেত্নী লাগবে।
সিমথি : পেত্নী গাছেই থাকে আপনার পেটে থাকে না।
মেহের : মেঝো মা আমাদের তেল দিয়ে দিয়েছো ধরে বেধে এখন সিমথিকে না দিলে খারাপ হবে।
সিমথি : ভাবী এমন করো না। আমি লাস্ট কবে তেল দিয়েছি নিজেই ভুলে গেছি। তেল দিলে আমার মাথা ব্যথা করে, মাথা ঘুরায়, বমি বমি পায়। আহহ কতগুলো রিজনের জন্য তেল দেয়না।
শাওনের মা : সব তেল না দেওয়ার ধান্দা।
সিমথি : বড় মা তুমি অন্তত আমার পক্ষে থাকো।
আদির মা : সিমথি এদিকে আয়। চুলগুলো তেল না দিলে সব পড়ে যাবে। তখন টাকলা হয়ে যাবি।
আদি : জাস্ট ইমাজিন তোমাকে টাকলা হলে কেমন লাগবে।
সিমথি : আদি কলার কাদি ( দাঁতে দাঁত চেপে)
সিমথির কথায় ইশানরা হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ায়।
ইশান : ভাই থাম তোরা। ভাবী জৃবি তোমার দলে আমরা আছি। তুমি এগিয়ে যাও। আমরা আছি তোমার পাশে।
তিন্নি : হ্যাঁ কাকিলা এগিলে তাও
সিমথি : আগাবো কিভাবে সামনে তো সোফা দেবর জ্বি।
আচনকা মাথায় তরল কিছু অনুভব করে সিমথি মাথায় হাত দেয়। হাত সামনে আনতেই ঠোঁট কামড়ে চোখ বুঁজে নেয়।
সিমথি : আহহহহ বাবাই তেললল ( চেঁচিয়ে)
সিমথি চোখ গরম করে পেছনে আদির দিকে তাকায়। আদি বিজয়ী হেসে তেলের বাটিটা মেহেরের হাতে ধরিয়ে দৌড় লাগায়।
সিমথি : এ্যাহহহ আদি।
সিমথি গাল ফুলিয়ে সোফায় বসে পড়ে। আদির মা এসে সিমথির পুরো মাথা তেলে মাখিয়ে দেয়। সিমথি ইনোসেন্ট ফেস করে পাখির মতো টুকুর টুকুর করে সবার দিকে তাকায়। ছোট থেকে মাথায় তেল দেওয়া নিয়ে সিমথির চরম এলার্জি।
আদির মা : এখন কত সুন্দর লাগছে দেখতো।
সিমথি : এমনিতে কি বান্দর লাগে। ( নাক মুখ কুঁচকে)
আচমকা সিমথির ফোনটা বেজে উঠে। ফোনের স্কিনে অনিলের নাম দেখে সিমথি ফোনটা রিসিভ করে।
সিমথি : হুমমম বলো।
_____
সিমথি : এটা আমি জানি৷ আর কোনো ক্লু থাকলে বলো।
_____
সিমথি : ওকে কাল দেখা করো। আর হুমম বি কেয়ারফুল।
_____
সিমথি কান থেকে ফোন সরিয়ে আদির মায়ের পেটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুঁজে নেয়। এতটা ভালোবাসার পর ও কেউ কিভাবে এতোটা ক্ষতি করতে পারে সিমথির তা জানা নেয়। তবে শত্রু সবসময় কাছের মানুষ জন হয়। এটা সিমথি বুঝে গেছে। এখন কাল সকাল হবার অপেক্ষা অনেক হিসেব বাকি আছে।
চলবে,,,,,
#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 34 ( ধামাকা পর্ব ১)
🍁🍁🍁🍁
ঘুমের মাঝে চোখে পানি পড়ায় আদি চোখ মুখ কুঁচকে নেয়। ওপাশ ফিরে ঘুমাতে চাইলে উন্মুক্ত পিঠে পুনরায় পানি পড়াতে বিরক্তিতে আদি পিটপিট করে তাকায়। চোখের সামনে কালো শাড়ি পরিহিত রমণীকে চুল মুছতে দেখে মুহূর্তে বিরক্তির জায়গায় একরাশ মুগ্ধতা এসে গ্রাস করে। আদি বালিশের উপর উপুর হয়ে গালে হাত দিয়ে সিমথির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ সিমথির চোখ আদির দিকে যেতেই দৃষ্টি থেমে যায়।
সিমথি : এভাবে কি দেখছো।
আদি : তোমাকে।
সিমথি : দেখাদেখি হলে এবার উঠুন। সকাল হয়েছে।
সিমথির কথায় আদি ফোঁস করে একটা শ্বাস ছাড়ে। এই মেয়ে একবার আপনি তো একবার তুমি সম্বোধন করে। ভালোই লাগে সিমথির এই সংমিলিত ডাকগুলো। বেড ছেড়ে উঠে রোজকার অভ্যাসনুযারী সিমথিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে থুতনি রাখে। সিমথি হেসে আয়ানার দিকে তাকায়।
আদি : ভালোবাসি।
প্রতিত্তোরে সিমথি লাজুক হেঁসে মাথা নিচু করে নেয়।
আদি : সিয়াজান ভালো মায়ের সাথে এমন বিহেভ কেনো করো। আগে তো ভীষণ ভালোবাসতে উনাকে।
আদির কথায় সিমথি থমকায়। লাজুক ভাব কেটে মুহুর্তের মধ্যে মুখশ্রী জুড়ে কালো মেঘের ন্যায় গাম্ভীর্যতা নেমে আসে। আদির দিকে ফিরে তাকায়।
সিমথি : আগে ভালোবাসতাম এখন বাসি না ভাবলেন কেনো।
আদি : তোর চোখে উনার জন্য রাগ আর ঘৃণা দেখতে পাই আমি।
সিমথি : আপনি আমার চোখের ভাষা বুঝেন।
আদি : তোর চোখে নিজের জন্য রাগ ঘৃণা দেখেছিলাম। আর তোর চাহনী দেখে আমি তোর মন পড়তে জানি।
সিমথি : যাকে ভালোবাসা যায় তাকে ঘৃণা করা যায়না জামাইজান। আপনার জন্য আমার মনে সর্বদা রাগ&অভিমান র ভালোবাসার সংমিশ্রণে একটা অনুভূতি ছিলো। যেটাকে তুমি ঘৃণা ভাবতে সেটা আমার অভিমান ছিলো।
আদি : আমার প্রশ্নের উত্তর পায়নি আমি।
সিমথি : আচ্ছা আদি তুমি জানো আমি তোমাকে ভালোবাসি। হঠাৎ যদি কোনোদিন আমার কোনো খারাপ কিছু তোমার সামনে আসে কিংবা আমার জন্য যদি কখনো তোমার মা-বাবার কিছু হয় তখন ও কি তুমি আমাকে এভাবেই ভালোবাসবে।
আদি : সিয়াজান মা-বাবা আর বউ তিনজন ব্যক্তির ভালোবাসার মধ্যে তফাৎ আছে। আমার মা-বাবা আমাকে না দেখেই ভালোবেসেছে তাই তাদের প্রতি আমার ভালোবাসাটা অনেক গভীর। আর তুই আমার সম্পর্কে কোনো কিছু না জেনে একদেখায় ভালোবেসেছিস তাই তোর ক্ষেত্রে আমার ভালোবাসা প্রকাশ করার কোনো অপশন জানা নেই। মা-বাবা একটা সময় থাকবে না যেনো আমার জীবনে ভালোবাসার প্রথম দুই ব্যক্তি ওরা। তাই ওদের কেউ ক্ষতি করতে চাইলে তাকে আমি ছেড়ে দেবো এমনটা না।
সিমথি : আপনার প্রশ্নের উত্তর আপনার বলা কথায় আছে। খুঁজে নিন।
সিমথি আদিকে পাশ কাটিয়ে নিচে চলে যায়। আদি সিমথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সিমথির কথাগুলো পুনরায় রিপিট করে। অতঃপর খালি রুমের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই মেয়ের কথার মানে বোঝা এতোটা ইজি না।
________________
হঠাৎ বাড়িতে পুলিশের আগমনে মিম, রোজ রা হতবাক। এই সময় বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ ও নেই। ইফাজ, সায়ন দুইজনই অফিসে। নীরব খান কাজের সূত্রে দেশের বাইরে। বাড়িতে কেবল মিম, রহিমা বেগম, রোজ আর সীমা বেগম।
মিম : জ্বি কাকে চান বলুন।
অফিসার : সীমা বেগম আছে।
অফিসারের কথায় সীমা বেগম শুকনো ঢোক গিলে। মিম রা সবাই হতবাক। অফিসার হঠাৎ সীমা বেগমের কথা জিজ্ঞেস করার কোনো কারণই কেউ খুঁজে পাচ্ছে না।
রোজ : ভালো মাকে দিয়ে আপনারা কি করবেন।
অফিসার : উনার বিরুদ্ধে চার্জ আছে। আমাদের সাথে যেতে হবে।
অফিসারের কথায় সীমা বেগমের শ্বাস আটকে যাওয়ার অবস্থা । মিম রা হতবাক হতবুদ্ধি। রহিমা বেগম নিজেও ভয় পেয়ে যায়। মিম দ্রুত সায়নকে ফোন করে সব জানায়। অতঃপর সিমথিকে ফোন করে। মিমের ফোন পেয়ে সিমথির হাসি চওড়া হয়। এই সময়টার অপেক্ষায় ছিলো সিমথি।
মেঘা : তুই কিছু একটা করতে চলেছিস সিমথি। আমাদের কাছে সেটা লুকাচ্ছিস।
সিমথি : বিধির বিচার।
সিমথির কথার মানে মেঘারা বুঝতে না পেরে একে অপরের দিকে তাকায়। ততক্ষণে তরী সিমথির কেবিনে আসে। তরীকে দেখে সিমথি হাসে। যেন এমনটা হবে এটা সে আগে থেকেই জানতো।
তরী : সিমথি আপু ভালো মা কে পুলিশ এরেস্ট করতে এসেছে।
তরীর কথায় সিমথি বাদে মেঘারা চমকায়। চমকওত দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। কিন্তু সিমথি হাবভাব নরমাল দেখে তুহিনদের ভয় দ্বিগুণ হয়ে যায়। কিছু একটা আচঁ করতে পেরে তুহিন, রোদেলা, মেঘা একে অপরের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করে। সিমথি বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়। সিমথির পেছন পেছন তরীও বেরিয়ে যায়। তুহিন, রোদেলা মেঘাকে ঠেলে সিমথির পেছন পেছন পাঠায়। এই মুহূর্তে সবার একসাথে হসপিটাল থেকে বেরুনো ঠিক হবে না ভেবেই সবাই মেঘাকে পাঠায়।
” সকালে জানতে চেয়েছিলে না মিসেস সীমা বেগম কে ঘৃণার পেছনে কারণ। তবে সায়ন ভাইয়ার বাড়িতে আসতে চাইলে আসতে পারো। কারণ সমেত লাইভে সব দেখতে পাবে। ”
মিটিংয়ের মাঝে ম্যাসেজের শব্দে আদি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়। এই সময় আবার কে ব্যাঘাত ঘটালো। শাওন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়। মনে মনে গর্দভ বলে গালিগালাজ করে। মিটিংয়ের সময় ফোনটা সাইলেন্ট মুডে রাখতে হয় এটাও ভুলে যাওয়ার জন্য। আদি মিটিং থামিয়ে ফোন হাতে নিয়ে স্কিনে সিয়াজান নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসতে দেখে বিরক্তির জায়গায় কৌতুহল জন্মায়। হঠাৎ এই সময় সিমথির ম্যাসেজ দেখে খানিকটা অবাকই হয় আদি। কৌতুহলের বশে ম্যাসেজে ক্লিক করে। ম্যাসেজ টা পড়ে আদি থমকায়। সকালে সিমথির কথায় আদি কিছু টা হলেও আচঁ করেছিলো এর পেছনে বড় কোনো কারণ আছে। এখন আদির সংশয় বিশ্বাসে পরিণত হয়। শাওনকে পাশে ডেকে কিছু একটা বলে মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
ততক্ষণে বাড়িতে সায়ন এবং ইফাজ ও চলে আসে। সায়ন এসেই পুলিশের সাথে কথা বলতে শুরু করে।
সায়ন : কিসের ভিত্তি তে আপনারা ভালো মাকে এরেস্ট করতে এসেছেন।
অফিসার : উনার বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইফাজ : কিন্তু কে এনেছে।
অফিসার : আপনাদের বোন।
সায়ন : আমাদের বোন মানে কার কথা বলছেন।
অফিসার : সিম,,,,
_ আমি করেছি।
আচমকা সিমথির কন্ঠস্বরে সবাই দরজার দিকে তাকায়। অফিসার নিজের কথা পুনরায় পেটে চালান দেয়। সায়নরা হতভম্ব হতবাক হতবুদ্ধি। সিমথির কথার মানে কেউই বুঝতে পারলো না।
সায়ন : মানে কি বলছিস এসব।
সিমথি : মানে টা খুব সিম্পল ভাইয়া। আমি উনার বিরুদ্ধে কেইস ফাইল করেছি।
মিম : কিন্তু কেনো। না মানে তুমি ভালো মা
সিমথি : ভাবীপু রিলাক্স। আমি আছি এখানেই পালিয়ে যাবো না।
সায়ন : পরী হেয়ালি করিস না। এসবের মানে।
সিমথি : অফিসারস্ গিভ মি টুয়েন্টি মিনিটস্ প্লিজ।
অফিসার : সিউর ওয়াই নট।
অফিসার কনস্টেবল সহ বাড়ির বাইরে যায়। ততক্ষণে আদিও চলে আসে।
সায়ন : এবার বল এসবের মানে কি।
সিমথি : পাপের শাস্তি। খু’ন করলে তো শাস্তি স্বরূপ কারাগার বাসই হয় তাই না।
ইফাজ : মানে ( চমকে)
সিমথি : সেটা তোদের সো কল্ড ভালো মা’কেই জিজ্ঞেস কর।
সিমথির কথায় সায়ন, ইফাজ, রোজ, তরী চারজনই অনুভূতি শূন্য দৃষ্টিতে সীমা বেগমের দিকে তাকায়। সীমা বেগম মাথা নিচু করে নেয়। সেটা দেখে সায়নরা বুঝতে পারলো সিমথি অকারণে কিছু করেনি।
সায়ন : ভালো মা পরী এ এসব কি বলছে।
______
ইফাজ : কি করেছো তুমি
_____
সিমথি : বুক ফুলিয়ে বলার মতো কিছুই করেনি উনি। তাই চুপ করে আছে।
এতোক্ষণে রহিমা বেগম মুখ খুলেন,,৷
রহিমা বেগম : দেখলি তো কইছিলাম এই মাইয়া একদিন সব্বাই রে শেষ কইরা দিবো।
রহিমা বেগমের কথায় সিমথি রক্তলাল চোখে রহিমা বেগমের দিকে তাকায়। অতঃপর গম্ভীর কণ্ঠে বলে,,,
সিমথি : আপনার বয়স টা কে রেসপেক্ট করছি আমি। তাই বলে ভাববেন না নিজের কুকর্মের কথা আমি এখনো অজ্ঞাত। তাই মুখ টা বন্ধ রাখুন।
রহিমা বেগম দমে যায়। সীমা বেগম কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,,,
সীমা বেগম : সিমথি মা আমার তুই সবটা না জেনে আমাকে ভুল বুঝছিস। ডায়েরির একপাতা পড়ে সব বোঝা যায়না।
সীমা বেগমের কথায় সিমথি হাসে।
সিমথি : আমি সম্পূর্ণ টা জেনেই এসেছি। যেমন ভাবে জেনেছি আপনি আমাদের আপণ ফুফি না তেমন এটাও জেনেছি মা-বাবার কার এক্সিডেন্টের পেছনে আপনার সংযোগ আছে। তেমন এটাও জেনেই এসেছি আপনি আমাকে পাঁচ বার মা/র/তে চেয়েছিলেন। আবার এটাও জেনেই এসেছি আপনি সাত বছর ধরে তরীকে ড্রাগস দিয়ে নিজের কার্য সিদ্ধি করতে চেষ্টা করেছেন। আবার বড় মায়ের আগুনে পুড়ে মৃত্যুর পেছনেও আপনার সংযোগ আছে।
চলবে,,,,,