#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 35 ( ধামাকা পর্ব ২)
🍁🍁🍁🍁
ড্রয়িং রুম জুড়ে পিনপিন নীরবতা। সায়নরা স্তব্ধ দৃষ্টিতে সীমা বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে। সীমা বেগম অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সিমথির দৃষ্টিতে একরাশ ক্রোধ ঘৃণা। সায়ন ইফাজ আগে থেকেই জানতো সীমা বেগম ওদের আপণ ফুফি বেঁচে নেই। কিন্তু কখনো সীমা বেগম কে সেই ভাবে হেলা করেনি। সিমথির প্রথম কথায় সায়ন, ইফাজ অবাক না হলেও পরবর্তী কথাগুলো শুনে হতবাক। সিমথি, রোজ, তরী ওরা সীমা বেগম কে আপণ ফুফি, মাসি বলেই জানতো।
ইফাজ : ছোট মা, ছোট বাবা আর আম্মুর মৃত্যুর পেছনে ত তুমি জড়িত।
ইফাজ কাঁপা কাঁপা গলায় কথাগুলো বলে সীমা বেগমের দিকে তাকায়। সীমা বেশি আগের ন্যায় চুপ।
সিমথি : এখন আর চুপ থেকে কি করবেন। নিজের অপরাধ টা অন্তত স্বীকার করুন।
সিমথি কটাক্ষ কন্ঠস্বর শুনে সীমা বেগম ছলছল দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি দৃষ্টি ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকায়।
সীমা বেগম : আমার তোদের প্রতি ভালোবাসাটা মিথ্যে ছিলো না রে মা।
সীমা বেগমের কথায় সিমথি তাচ্ছিল্যেকর হাসে। দাতে দাঁত চেপে সীমা বেগমের উদ্দেশ্য বলে উঠে,,,,
সিমথি : পাঁচ পাঁচ বার যেই ব্যক্তি আমাকে মা’রা’র চেষ্টা করে সেই ব্যক্তির ভালোবাসার শুদ্ধতা আমাকে শেখাতে আসবেন না। ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়েকে যেই ব্যক্তি ড্রাগসের মতো ভয়াবহ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে সেই ব্যক্তির ভালোবাসার সত্যিই তুলনা হয় না।
সীমা বেগম : তুই সবটা জানিস না।
সিমথি : আমি যতটুকু জানি আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট। আপনি মিসেস রহিমা বেগমের বোনের মেয়ে আপনি ছিলেন। অল্প বয়সেই আপনার মা মারা গেলে আপনার বাবা দ্বিতীয় বার বিয়ে করে। আপনার সৎ মা আপনাকে প্রতিদিন মা’র’তো। মিসেস রহিমা বেগম তখন আপনাকে এই বাড়িতে নিয়ে আসে। এখানে লেখাপড়া শিখেন আর বড় হতে থাকেন। আপনার বান্ধবী ছিলো আমার মা। মিসেস রহিমা বেগম জানতো আপনার মা তার সম্পত্তি আপনার নামে করে দিয়ে গেছে তার জন্য উনি চাইতো আপনাকে আমার বাবাইয়ের সাথে বিয়ে দিতে। কিন্তু বাবাই আমার মাকে পছন্দ করে এবং বিয়ে করে। আপনি নিজের হার মানতে পারেননি। আমার মাকে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মে*রে ফেলতে চান কিন্তু আপনি প্রতিবারই ব্যর্থ হন। তখন আপনি আন্ডারগ্রাউন্ডের এন.কে নামে একজন দাগি আসামীকে হায়ার করেন আমার মাকে মা’রা’র জন্য। কিন্তু আপনি জানতেন না এন.কে বাবাইয়ের শত্রু। আপনি তো চেয়েছিলেন আমার মাকে মা’র’তে তারপর বাবাই কে বিয়ে করতে। কিন্তু এন.কে আপনার প্ল্যানে পানি ঢেলে দুজনকেই মে”রে ফেলে আর সেটার নাম হয় কার এক্সিডেন্ট।
সিমথির কথায় সীমা বেগম ক্রোধে গর্জে উঠে।
সীমা : তোর মা আহনাফ আর আমার মাঝে এসেছিলো। আমি ছোট থেকেই আহনাফ ভালোবাসতাম কিন্তু ওই ভিখিরি এসে আহনাফ কে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে।
সীমা বেগমের কথায় সিমথি হাতের কাছে থাকা ফ্লাওয়ার ভার্স টা স্বজোরে ছুঁড়ে মারে। যা গিয়ে সীমা বেগমের পায়ের কাছে পড়ে। সবাই চমকে সিমথির দিকে তাকায়। চোখ দিয়ে অগ্নি বর্ষণ হচ্ছে সিমথির।
সিমথি : ভাষা সংযত করুন। কেউ আপনার কাছ থেকে আপনার ভালোবাসা কেড়ে নেইনি। ভালোবাসা কেউ কাড়তে পারেনা। আপনাকে বাবাই সবসময় নিজের বোনের মতো দেখতো। কিন্তু আপনি ভাই-বোনের মতো পবিত্র সম্পর্কে এসব নোংরা জিনিস টেনে এনেছেন।
সীমা বেগম : হ্যাঁ হ্যাঁ আমি সব করেছি কিন্তু এসব কাজে আমি একা নই আরো অনেকেই সামিল ছিলো। তোর মাকে আমিই মা’রতে টাকা দিয়েছি। তোকে ও আমিই মা’র’তে চেয়েছি। তরীকে ও আমিই ড্রাগস দিতাম আর যখন ও নেশার ঘোরে থাকতো তখন তোদের তিনজনের বিরুদ্ধে উস্কে দিতাম।
এতবছরে ভালোবাসার মানুষটার এমন নৃশংস রূপ দেখে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। সায়নরা বাকরুদ্ধ হতবাক। তরী অসহায় দৃষ্টিতে সীমা বেগমের দিকে তাকায়।
তরী : এসব করে কি লাভ হলো ভালো মা।
তরীর কথায় সীমা বেগম হাসতে শুরু করে আচমকা কেঁদে ওঠে।
সীমা বেগম : আমি আনন্দ পেয়েছি। আমি সুখে না থাকলে কাউকে সুখে থাকতে দেবো না। কিন্তু আমি তোদের সত্যিই ভালোবাসি।
সিমথি : মেন্টালি এবনরমাল উনি। অফিসারস ভেতরে আসুন।
অফিসারসহ কনস্টেবল রা ভেতরে আসে। সিমথি ইশারা করতেই দুজন মহিলা কনস্টেবল গিয়ে সীমা বেগমকে চেপে ধরে।
সীমা বেগম : এই ছাড় বলছি। সিমথি মা আমার ওদের ছাড়তে বল। আমি কোথাও যাবো না। আমি কোথাও যাবো না।
সিমথি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকায়। আজ কাছের মানুষটার চোখের পানিও সিমথির মন গলাতে ব্যর্থ। রাগ, ঘৃণা টায় যেনো পুরোটা মন ছেয়ে গেছে।
সীমা বেগম : আমার কথা শোন। আমি এসবে একা নয়। আরো কেউ আছে।
সিমথি : আর যেই থাকুক তাকে আমি খুঁজে নেবো। কিন্তু ভালোবাসার আড়াল থেকে আপনি আমাদের প্রত্যেক কে যেভাবে ক্রমাগত ঠকিয়েছেন। আমাদের বিশ্বাস ভেঙেছেন তার জন্য ফাঁসি ও কম হয়। আপনার ফাঁসি হবে কারণ তিনজন জীবিত মানুষকে খুন করার পেছনে আপনার অনেকটা সহমত আছে। তবে জীবনের শেষ মুহূর্তে আপনি অনুশোচনা করবেন। একটা বার আমাদের সাথে মাফ চাইতে ইচ্ছে করবে। সবাই আপনার সাথে দেখা করলে আপনার সাথে আজই আমার শেষ দেখা। জীবনে শেষ সেকেন্ড অবধি আপনি আমার সাথে কথা বলতে চাইবেন একটু দেখতে চাইবেন সেই সুযোগ টা আমি আপনাকে দেবো। আমি চাইলেই এতো বড় বিশ্বাস ঘাতকতার শাস্তি আপনাকে নিজের হাতে দিতে পারতাম। কিন্তু স্বার্থের জন্য হলেও ভালোবেসেছিলেন৷ সেটা নাটক হলেও আমরা সত্যি বলেই জানতাম। তাই আপনাকে পুলিশের হাতে তুলে দিলাম। অফিসারস নিয়ে যান উনাকে।
সিমথির কথায় অফিসার সীমা বেগম কে নিয়ে যায়। সায়নরা নির্বাক। রহস্য এখনো অনেক বাকি। কিন্তু কারোরই কথা বাড়ানোর মতো মন মানসিকতা নেই আপাতত। সিমথি রহিমা বেগমের দিকে তাকায়। রহিমা বেগম ভয়ে সেটিয়ে যায়।
সিমথি : আপনাকে ছাড় দিয়েছি। আপনি স্বার্থপর লোভী হলেও আমার বাবাইয়ের জন্মদায়িনী সেজন্য। এই বয়সে জেলের শক্ত রুটি খেতে পারবেন না তার জন্য ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু তেড়িবেড়ি করলে আপনার সো কল্ড বোনের মেয়ের পাশে আপনার জায়গায় হবে। গট ইট। বাড়ি ছেড়ে গেছি দুনিয়া ছাড়িনি। সো বি কেয়ারফুল।
সিমথির শান্ত গলার হুমকিতে রহিমা বেগম দমে যায়।
_________________
আদির মা : রাত দশ বাজতে চললো। সিমথি এখনো আসছে না কেনো। প্রতিদিন তো আটটায় বাড়িতে উপস্থিত থাকে।
শাওন : আদি তুই আজ একা চলে আসলি কেনো। সিমথির মনের অবস্থা জেনেও।
আদি : আমাকে কড়া গলায় বলে দিয়েছে আমি যেনো আজ হসপিটালের ত্রিসীমানায় ও না যায়। তারপর ও কিভাবে যাবো। একেই রণচণ্ডী হয়ে আছে আজ। সবই তো জানিস।
আদির কথায় সবাই দমে যায়। আদি নিজেই সবাই কে সব ঘটনা বিস্তারিত জানিয়েছে। আচমকা কলিং বেলের শব্দে সবাই চমকে যায়। মেহের গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজার ওপাশ থেকে সিমথির ক্লান্ত মুখশ্রী ভেসে ওঠে। মেহেরকে দেখে সিমথি ক্লান্তি মাখা হাসি দেয়।
সিমথি : এভাবে তাকিয়ে আছো কেন সবাই।
আদি : তোমার ব্ল্যাক শাড়ী পাল্টে লাল হলো কিভাবে৷
সিমথি : সিরিয়াসলি আদি। তোমার নজর শাড়িতে গেলো।
আদি : কার সাথে কি করেছো আবার৷
সিমথি : আরে না আমি প্রায় তিন মাস হলো মা’রা’মা’রি করিনা। এখন আর এসব করিনা ভদ্র মেয়ে হয়ে গেছি না আমি বিয়ের পর৷
কথাটা বলে সিমথি একটা ইনোসেন্ট মার্কা হাসি দেয়। এতকিছুর পরও সিমথিকে স্বাভাবিক দেখে সবাই বেশ অবাক হয়।
আদির মা : আচ্ছা এসব বাদ দে। কিন্তু তোর চুল ভেজা কেনো। বাইরে তো বৃষ্টি ও নেই।
সিমথি : আর বলো না মা বাইরে ডেঙ্গু জ্বরের ভীষণ উপদ্রব হয়েছে। হসপিটালে রোগীর জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। এখন সারাদিন এসব ভাইরাসে থেকে কি হসপিটালের ড্রেসে বাড়িতে আসবো। তারজন্যই ফার্ম হাউসে গিয়ে চেঞ্জ করে আসলাম তাই তো এতো লেট হলো।
মেহের : বাড়িতে এসেই তো চেঞ্জ করতে পারতে।
সিমথি : আপু বাড়িতে বাচ্চা কাচ্চা আছে। একটু সচেতন না হলে ডাক্তারি পড়ে কি লাভ হলো।
শাওনের মা : এই কথা বল। আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ফোন করে জানাবি তো।
সিমথি : ফোনের চার্জ শেষ।
আদির বাবা : আচ্ছা রুমে যা এখন। ফ্রেশ হয়ে আয়। খাবি তো নাকি।
সিমথি মাথা নাড়িয়ে উপরে চলে যায়। আদির বাবা সিমথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা শ্বাস ছাড়ে। এই বয়সেই মেয়েটা কতকি সহ্য করার শক্তি রাখে।
আদির বাবা : সিমথির সামনে আর কেউ আজকের ঘটনার রিপিট করিস না। ও নিজেকে সামলে নিয়েছে।
আদির বাবার কথায় সবাই সায় জানায়।
____________
আদি : সিয়াজান মন খারাপ
আচমকা আদির কথায় সিমথি পাশ ফিরে আদির দিকে তাকায়। আদির কথার মর্মার্থ বুঝতে পেরে হাসে। আদি বালিশে ভর দিয়ে সিমথির দিকে তাকিয়ে আছে। সিমথি মাথা নাড়িয়ে না জানায়।
সিমথি : নাহ। কিন্তু কষ্ট হচ্ছে। একটু জড়িয়ে ধরি তোমায়৷
সিমথির অনুরোধের স্বরে কথা শুনে আদির বুক মুচড়ে উঠে। একটানে সিমথিকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে মাথায় হাত বুলায়।
আদি : বিশ্বাস ঘাতকের জন্য কষ্ট পেতে নেয় সিয়াজান। তুই না আমার বাঘিনী বউ।
শেষের কথা টা আদি সিমথির মুড ঠিক করার জন্য বলে। তাতে কাজও হয়। আদির বলা শেষ কথায় সিমথি হেসে দেয়। বুক থেকে মাথা তুলে আদির দিকে তাকায়। হুট করেই আদির গলায় খামছি দেয়।
সিমথি : বাঘিনী হুট হাট খামছি দেয় বুঝি।
আদি : নাহ বাঘিনী তো হুট করে আক্রমণ করে। বাট তুই তো আমার কাছে থাকলে এমনিতেই বিড়াল হয়ে যাস। এই যে বিড়ালের ন্যায় খামছি মারলি।
সিমথি : আদি ( মুখ ফুলিয়ে) আমি বিড়াল নয়।
সিমথির মুখ ফুলানো দেখে আদি শব্দ করে হেসে দেয়।
চলবে,,,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)
#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 36
🍁🍁🍁
আদিদের ড্রয়িং রুমে আয়াশরা সবাই বসে আছে। বসে আছে বললে ভুল হবে বলা চলে অনসন করছে৷ ওদের দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আমরণ অনশন করবে বলে জানিয়েছেন। আয়াশরের সাথে যোগ দিয়েছে মেঘা, রোদেলারা। অনশনের মূললক্ষ্য ফ্যামিলি & ফেন্ড সার্কেল নিয়ে পিকনিক। সবাই রাজি থাকলে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে আদি আর সিমথি। এই নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে সবার মাঝে তুমুল মতবিরোধ হচ্ছে। সিমথি বাচ্চাদের মতো এদের পাগলামি দেখে বাকরূদ্ধ। পিকনিকের জন্য কেউ অনশন করে নাকি। বিরক্তি নিয়ে মেঘাদের দিকে তাকাতেই মেঘা রা মুখ ঘুরিয়ে নেয় ।
আদি : বাচ্চাদের মতো জেদ করছিস কেনো বলতো। এখন কি পিকনিকে যাওয়ার সময়।
আয়াশ : তো কি বিয়ে করে ছেলেপেলে নিয়ে যাবো। আর তোর সমস্যা কোথায় বউ রেখে তো যেতে বলছি না। বউ নিয়ে যাবি। তোর রোমাঞ্চে ও কেউ ব্যাঘাত ঘটাবে না৷ একদম বাচ্চা হওয়ার সুখবর বানিয়ে আসবি।
মা-বাবার সহ বড়দের সামনে আয়াশের এমন লাজহীন কথায় সিমথির বিষম উঠে যায়। মেহেররা মিটিমিটি হাসতে শুরু করে। আদির মা-বাবা সহ সবাই হতভম্ব। এই ছেলে সবসময় লাজহীন। লজ্জায় বড়রা উঠে চলে যায়।
রিক : আয়াশ তোর আক্কেল জ্ঞান কবে হবে। আঙ্কেল আন্টির সামনে কিসব বলছিলি।
আয়াশ : কি এমন বললাম। শোন আঙ্কেল আন্টি ও এ সময় পার করেছে নয়তো আদিরা আসলো কোথ থেকে।
সিমথি : আয়াশ ভাইয়া থামো তো। যেমন গার্লফ্রেন্ড তেমনই বয়ফ্রেন্ড। একদম খাপে খাপ জুটিয়েছে।
মেঘা : হুমম জুটাবো না। নয়তো জীবনে ও আন্টি ডাক শুনতে পারবি না বুঝলি🤭
মেঘার কথায় সিমথির বিরক্তি আকাশ ছুঁই ছুঁই। সোফা থেকে কুশন নিয়ে মেঘার দিকে ছুঁড়ে মারে।
সিমথি : নির্লজ্জ একটা৷ পারলে বিয়ের আগেই বাসর করে ফেলিস তুই।
সিমথির কথায় মেঘা কাশতে শুরু করে। বাকিরা শব্দ করে হেসে উঠে।
সিমথি : এখন কাশছিস কেনো। বাসর করার শখ জাগলে বেডরুমে যা নয়তো এখানেই কর। আমরা আটকাবো না আর দেখবো ও না।
মেঘা : মুখে লাগাম টান বান্ধবী। ( মিনমিনে স্বরে)
সিমথি : হাহ। তোমরা বলতে পারবা আমি প্রতিত্তোর করলেই দোষ।
রিক : সিমথি কথা ঘুরাচ্ছিস তুই। আগে যাবি কিনা বল।
রোদেলা : ওদের পারমিশন কে চাইছে ভাইয়া। যাবো মানে যাবো দ্যাটস ফাইনাল। ওরা না গেলে তুলে নিয়ে যাবো।
ইশান : ওহহ ভাবীজ্বি রাজি হয়ে যাও না। তুমি রাজি হলেই আদি ভাইয়া রাজি হবে।
সিমথি : তোমার ভাই কি আমার জন্য না করছে নাকি। উনার না করার পেছনের কারণ আমিও জানিনা।
সিমথির কথায় আদি ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
আদি : তোমার কি মনে হয়। আমি অন্য কারণে না করছি৷
সিমথি : আমি কিভাবে জানবো।
মেঘা : আরে ধ্যাতত যাবি কিনা বল। না গেলে না কর। রাগ উঠতাছে।
তিন্নি : ওহ কাকিয়া চলো না যায়৷ অনেক দিন হলো কোথাও যায় না। আমার ও শীতের বন্ধ দিয়েছে। চলো না যায় প্লিজ প্লিজ। ও কাকাই চলো নাহহহ।
তিন্নির কথায় সিমথি চুপ মেরে যায়। বেচারি অনেক আশা নিয়ে বসে আছে। এখন সেই আশা ভাঙতে সিমথির ও মন চাইছে না। অগত্যা রাজি হয়ে যায়।
সিমথি : ঠিক আছে যা যাবো। বাট অনলি দুইদিন।
সিমথির কথায় সবাই খুশি হলেও শেষের কথায় সবার মুখ চুপসে যায়।
আয়াশ : দিজ ইজ নট ডান। মাত্র দুইদিনে কি করবো। অন্তত পাঁচ ছয় দিন তো থাকবো।
আদি : তুই কি ওখানে গিয়ে বিয়ে করবি যে এতোদিন থাকবি।
রিক : ওই আদি তুই থাম বাগড়া দিস না মাঝে ।
রিকের কথায় আদি চুপ হয়ে যায় ।
সিমথি : কোথায় যাবে ঠিক করলে।
রোদেলা : সাজেক।
রোদেলার কথায় সবাই সহমত পোষণ করে।
সিমথি : ডেট ফিক্সড করে জানাস।
সিমথির কথায় সবাই সায় দেয় । তিন্নি আনন্দে লাফিয়ে উঠে সিমথির গালে চুমু খায়। সিমথি ও হেসে তিন্নিকে চুমু খায়। মেহেররা হেসে উঠে।
_________________
রাত দশটার দিকে ড্রয়িং রুমে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে। কাল রাতের দিকে সবাই পিকনিকে যাবে। তবে সেখানে কেবল ইয়াং জেনারেশন থাকবে। আদির মা-বাবা, চাচা-চাচী রা কেউই ওদের সাথে যেতে রাজি হয়নি। ওদের কথা ছোটদের মাঝে বড়রা গিয়ে কি করবে। অগত্যা আদিরাই যাচ্ছে। আড্ডার মাঝেই হঠাৎ ইশানের বাবা বলে উঠে,,,,
ইশানের বাবা : সিমথি
ইশানের বাবার কথায় সবাই থেমে যায়।
সিমথি : হ্যাঁ ছোট বাবা বলো।
ইশানের বাবা হাসফাস করতে শুরু করে। কথাটা বলবে কিনা ভাবছে। ইশানের বাবার অস্থিরতা দেখে সিমথি ভ্রু কুঁচকায়।
সিমথি : কিছু বলবে ছোট বাবা। তাহলে বলো।
ইশানের বাবা : আ আসলে তোর ভালো মা মানে মিসেস সীমা বেগম কে আমি যেই থানায় পোস্টে আছি সেই থানায় আনা হয়েছে। উনার শাস্তি হয়েছে জানিস কিছু।
ইশানের বাবা কথায় সিমথি হাসি মুখটা মুহূর্তে কালো হয়ে যায়। আদির বাবাসহ সবাই সিমথির দিকে তাকায়। সবার দৃষ্টি নিজের দিকে নিবদ্ধ দেখে সিমথি চোখ বুঁজে একটা শ্বাস ছাড়ে। নিজের আবেগ কে কন্ট্রোলে রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে,,,
সিমথি : আমি উনার খোজ রাখিনি ছোট বাবা। তাই কিছু জানিনা। কি শাস্তি পেয়েছে জানো।
ইশানের বাবা : ছয় মাস কারাবাস করার পর ফাঁসির অর্ডার দেওয়া হয়েছে।
ইশানের বাবার কথায় সিমথি মাথা নিচু করে নেয়। দমিয়ে রাখা আবেগ টা হঠাৎ জেগে উঠতে চাইছে। সিমথি সেটা দমিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করে।
সিমথি : ওহ।
সিমথি আর কিছু না বলে ফোন আসায় একটু সাইডে চলে যায়।
_______________
রাত আটটা বেজে বিশ মিনিট। আদিদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। এখনো সায়নরা এসে পৌঁছায় নি। ওদের জন্যই অপেক্ষা করছে সবাই। শীতে সবাই কিছুটা কাঁপা-কাঁপি করছে। শীতের সাথে হালকা হিলেম বাতাস ও বইছে। বাতাস যেনো সবার শীতটা আরেকটু বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিন্নি গুটি-শুটি সিমথির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সব মেয়ের পড়নেই আজ ওয়েস্টার্ন ড্রেস। ওদের সাথে তুহা ও যাচ্ছে। সিমথি জ্যাকেট থেকে হাত বের করে তিন্নির গালে হাত রাখে।। শ্যাম বর্ণের মুখশ্রী ঠান্ডায় শীতল হয়ে আছে। সিমথি তিন্নিকে কোলে তুলে নেয়।
সিমথি : তুমি গাড়িতে বসো সোনা। ঠান্ডা লাগছে তোমার৷
তিন্নি : হুমমম। খুউবব ঠান্ডা।
তিন্নির কথায় সিমথি হেসে তিন্নিকে গাড়ির সিটে বসিয়ে দরজা খোলা রেখে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। তখনই আদি, ইশান, শাওন লাগেজ নিয়ে এসে গাড়ির ডিকিতে তুলে দেয়। আদিবারা একজায়গায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। ওদের সাথে মেঘারা ও আছে। ইশান আর শাওন ওদের কাছে চলে যায়। আদি একবার ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সিমথির দিকে পা বাড়ায়।
আদি : এখানে একা একা কি করছো।
সিমথি : একা কোথায়। তিন্নি আছে তো।
সিমথির কথায় আদি গাড়ির ভেতর উঁকি দিয়ে দেখে তিন্নি ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। আদি হেসে তিন্নি জায়গায় বসে তিন্নিকে কোলে তুলে নেয়।
আদি : শীত করছে তোমার কাকাই।
তিন্নি মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। আদি তিন্নিকে নিজের জ্যাকেটের ভেতর ঢুকিয়ে জড়িয়ে ধরে। ঠান্ডায় ওম পেয়ে তিন্নি বিড়ালের বাচ্চার মতো গাপটি মেরে বসে থাকে।
আদি : সিয়াজান জ্যাকেটের চেইন লাগাও। কুয়াশা পড়ছে অনেক।
সিমথি : ইট’স টোটালি ফাইন। এতো ঠান্ডা ও না।
আদি : কোনো কথা শুনো না আমার। বড্ড অবাধ্য তুমি।
সিমথি : আপনি বাধ্য তাই।
আদি : এখন থেকে কথা শুনবে।
সিমথি : আগে যা শুনতাম এখন থেকে সেটাও শুনবো না হুহ।
আদি : মাইর দিবো।
সিমথি : পারলে তুলুন হাত৷
সিমথির কথায় আদি থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত তুলে। সিমথি চোখ বন্ধ করে নেয়। অতঃপর মাথায় কারো স্পর্শে সিমথি শব্দ করে হেসে উঠে। আদি সিমথির মাথায় হাত বুলিয়ে নিজেও হেসে দেয়।
আয়াশ : কি ভাই। সামনে ছোট বাচ্চা রেখেও তোদের রাসলীলা শেষ হয়না।
আদি : বন্ধু তুমি করলে প্রেম আর আমি করলেই রাসলীলা।
রিক : ওর ক্ষেত্রে সবই ঠিক আমাদের ক্ষেত্রে সবই ভুল। তাই নারে আয়াশ।
আয়াশ : তুই এমন ভাবে পেছনে লাগছিস মনে হচ্ছে তোর বাসর ঘরে সিসিটিভি লাগিয়ে রেখেছিলাম।
রিক : আহা তোর বাসর ঘরে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে না। আমাকে বললে আমিই তোদের লাইভ দেখাবো।
রিকের কথায় সবাই হেঁসে দেয়।
আদি : মনে রাখিস ডিরেক্ট লাইভ দেখানোর জন্য প্রস্তুত থাকিস।
রিক : এমন ভাবে বলছিস তুই তোর বাসর ঘরের লাইভ দেখাইছোস আমাদের।
আদি : আমার বাসর রাতে কিছু ই হয়নি জাস্ট ঘুম হয়েছে। এই ঘুমের লাইভ দেখে কি করতি তোরা বল। তাই তো দেখাইনি।
আদির কথার বলার ভঙ্গিমা দেখে সবাই হেসে উঠে।
_পিপপি
আচমকা আধো আধো বাচ্চার ডাকে সবাই হাসি থামিয়ে দেয়। সিমথি সামনে তাকিয়ে দেখে সায়নরা এসে গেছে। কথার ধান্দায় হয়তো কেউই গাড়ির আওয়াজ পায়নি। সায়নের কোলে ছোট্ট আদ্র সিমথির দিকে ঝুঁকে আসছে। ফর্সা মুখ টা ঠান্ডায় লাল হয়ে আছে বাচ্চাটার।
সায়ন : নে বোন। আমার ছেলে সারাদিনে আমাদের ও এতোবার মা-বাবা ডাকে না যতবার ওর পিপপি ডাক আসে।
সায়নের কথায় সিমথি হেঁসে দেয়। আদ্র কে কোলে নিয়ে শীতল গালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। হালকা উঁচু করে তুলে ধরে আদ্রকে।
সিমথি : পিপপি তুমি এসেছো। আমি কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি বলো তো। তোমার বাবাই একটা পঁচা। শুধু দেরী করে। তাই না সোনা।
ছোট বাচ্চা সিমথির কথার আগামাথা না বুঝে অবুঝ চোখে তাকিয়ে আছে। সায়ন সিমথির দিকে পিটপিট করে তাকায়। কি মেয়ে নিজের ছেলের কাছে ওর নামে বদ/না/ম করছে ওরই সামনে।
আয়াশ : এতোক্ষণ কি বউ নিয়া দরজা লাগাইয়া রোমান্স করছিলি ভাই তুই। আসতে এতোক্ষণ লাগে।
সায়ন : মুখে লাগাম টান শা/লা। সামনে বোনেরা আছে।
মেঘা : হয়েছে হয়েছে চলো চলো। অনেকক্ষণ হলো এবার গাড়িতে উঠো।
মেঘার কথায় সবাই গড়িতে উঠে বসে। অতঃপর গাড়ি স্টার্ট দেয়। প্রত্যেক গাড়িতে সবাই হৈচৈ এ মেতে উঠে। আয়াশদের গাড়ি থেকে গানের আওয়াজ ভেসে আসছে।
আাদি ড্রাইভিং করার ফাঁকে ফাঁকে সিমথির দিকে তাকাচ্ছে। সিমথি তিন্নিকে নিয়ে দুষ্টুমি করছে। আর মাঝে মাঝে হেসে উঠেছে দুজনই। আদি ঠোঁট কামড়ে হেসে মিরর দিয়ে পেছনে তাকায়। শাওন, মেহের, তুহা আর রোজ জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। এদিকে কারোরই নজর নেয়। আদি কিছু একটা ভেবে সিমথির দিকে তাকায়। অতঃপর সিমথির চুলে টেনে ধরে।
সিমথি : আহ আদি কি করছো।
আদি : আরেহ সবাই সবার মতো ব্যস্ত। আমার দিকে ও একটু নজর দাও সিয়াজান।
সিমথি : অ’স’ভ্য’তা’মি রাখো। তিন্নি দেখছে।
আদি : তো দেখুক আমি কি আর তোমাকে কিচ্ছি দিচ্ছি।
আদির কথায় সিমথি ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। এই ছেলে বুঝবে না। উল্টো চিল্লাবে। বেশকিছুক্ষণ পর তিন্নি নিজের ভর সিমথির উপর ছেড়ে দেয়। সিমথি তাকিয়ে দেখে তিন্নি ঘুমিয়ে গেছে। সিমথি সিটে মাথা হেলিয়ে আদির দিকে তাকায়। এই ঠান্ডায় ও গাড়ির জানালা খুলে রেখেছে আদি। যার দরুন চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ড্রাইভিং করছে। মাঝে মাঝে বাম হাতে চুলগুলো পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সিমথি আনমনে হেঁসে দেয়। তখনই আদি সিমথির দিকে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে ” কি হয়েছে “। প্রতিত্তোরে সিমথি মাথা নাড়িয়ে কিছু না বুঝায়। আদি হেসে সিমথির ডান হাত নিজের বাম হাতের মুঠোয় পুড়ে মিরর দিয়ে পেছনের সবার মতিগতি বেখেয়ালি দেখে সন্তপর্ণে সিমথির হাতের উল্টো পিঠে নিজের অধর জোড়া ছোঁয়ায়। অতঃপর হাত ধরে রেখেই ড্রাইভিং এ মনযোগ দেয়।
চলবে,,,,,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং। )
#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 37
🍁🍁🍁
আধঘন্টা আগে সবাই এসে রিসোর্টে উঠেছে। রিসোর্টের সবকিছু কাঠের তৈরি। রিসোর্টের পেছনে একটা বিশালকার মাঠ। সবাই নিজেদের নিজস্ব রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। এখন হালকা একটু রেস্ট নিয়ে বিকেলের দিকে সবাই ঘুরতে বের হবে। আজ আশেপাশে ঘুরাঘুরি করবে। কাল সকাল থেকে সবাই ঘুরাঘুরি স্টার্ট করবে। এতো লম্বা জার্নির পর কারোরই আজ আর বের হবার ইচ্ছে নেই। সিমথি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে আদি বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। দুদিকে দুহাত ছড়িয়ে চোখ বুঁজে আছে। গায়ে এখনো কাল রাতের পোশাক বিদ্যমান। প্রায় বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে আদির কোনো ভাবগতি না দেখে সিমথির মাথায় প্রতিবারের মতো আজও দুষ্টু বুদ্ধি উঁকি দেয়। সিমথি হাত থেকে টাওয়াল টা রেখে পা টিপে টিপে আদির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। অতঃপর ভেজা চুলের পানিগুলো আদির চোখে মুখে ছিটিয়ে দেয়। কিন্তু আদির তাতেও কোনো নড়চড় না দেখে সিমথি ভ্রু কুঁচকায়। বিছানায় বসে আদির দিকে ঝুঁকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। কি হলো ঘুমিয়ে গেলো নাকি এই ছেলে। আচমকা কোমড়ে কারো হেঁচকা টানে সিমথি বিছানায় শুয়ে পড়ে। তখনই আদির সিমথির উপর ঝুঁকে দুপাশে হাত দিয়ে সিমথি কে আটকে দেয়।
সিমথি : আদি এভাবে কেউ টান দেয়।
আদি : আমি দেই।
সিমথি : উঠো উপর থেকে। ফ্রেশ হতে যাও। একটু পরই নাস্তার জন্য ডাক পড়বে।
আদি : তখন সেটা দেখা যাবে। আগে এখনের টা দেখি
সিমথি : কি দেখবে।
আদি : পানি ছিটালে কেনো।
সিমথি : দেখছিলা তুমি জেগে আছো নাকি ঘুমিয়ে গেছো।
আদি : ডাক দিতে পারতে। এটা কোন সিস্টেম ব্যবহার করলে
সিমথি : আ আসলে তোমাকে ভীষণ কিউট লাগছিলো তাই ডাক দিইনি। যদি ডিস্টার্ব হয় তোমার ঘুমের। হিহিহি
আদি : দিন দিন ভীষণ দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো এটা জানো।
সিমথি : জানতাম না তো এখন জানি।
আদি : ফা/জি/ল
সিমথি : ফা/জি/ল হয় আর যায় হয় তোমারই তো।
আদি : তাই না।
সিমথি মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় অতঃপর শব্দ করে হেসে উঠে। সিমথি মাথা নাড়ানো দেখে আদি ঘাড় ঘুরিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেঁসে দেয়। সিমথি আদির হাসির দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। আদি যতবারই এভাবে রিয়াকশন দিয়ে হেসে দেয় ততবারই সিমথি থমকায়। বুকের ভেতর ধপধপ শব্দ ক্রমাগত বাড়তে শুরু করে। সিমথি একরাশ ভালো লাগা, একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে আদির গালে হাত ছোঁয়ায়। আদি চমকে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি হালকা উঁচু হয়ে আদির অধরে হালকা করে নিজের অধর ছোঁয়ায়। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে সিমথি নিজের কৃতকর্ম অনুধাবন করে বেডে মাথা হেলিয়ে চোখ বুঁজে নেয়। হঠাৎ করেই সিমথির নিজেকে হাঁপানির রোগী মনে হতে শুরু করলো। শ্বাস কেমন আটকে আসছে। আদি হতবাক হতভম্ব। এমন একটা সিচুয়েশনে সিমথির রিয়েক্ট দেখে সত্যিই আদির মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। অনিমেষ নয়নে তাকিয়ে থাকে সিমথি মুখের পানে। লজ্জায় ইতোমধ্যে সিমথির মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। বন্ধ চোখজোড়া ক্রমাগত কাপছে। গোলাপি ঠোঁটের দিকে নজর যেতেই আদি ঘোরে চলে যায়। আদি একটা শুকনো ঢোক গিলে সিমথির গলায় মুখ গুঁজে দেয়।
__________________
নাস্তা শেষে সবাই ঘুরছে। আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা। হিমের বাতাসে একেকজন কেঁপে উঠছে। সন্ধ্যায় আকাশে ইয়া বড় থালার মতো চাঁদ উঠেছে। আজকে আকাশ একদম পরিষ্কার। আকাশজুড়ে কেবল তাঁরার মেলা। হাজার হাজার তারার মাঝে একটা মাত্র চাদের আলোয় চারপাশ টা ঝলঝল করছে। আদিরা যে রিসোর্টে উঠেছে সেই রিসোর্টে আরো একটা ফ্রেন্ড সার্কেল এসেছে পিকনিক করতে। অবশ্য ওরা মাত্র চারজন। খাবার সময়ই ওদের সাথে সিমথিদের দেখা হয়েছে। আপাতত ওরা সবাই একজোট হয়ে আড্ডা দিচ্ছে। এই ঠান্ডায় সবাই আইসক্রিম খাচ্ছে। আইসক্রিম খাওয়ার ভূত মূলত সিমথির মাথায় চেপেছে। সায়ন, আদি বারণ করলে সিমথির কথায় সই হলো। সিমথি তালে সব কয়টা মেয়ে তাল মিলিয়েছে। যার দৃশ্য স্বরূপ এই ঠানৃডায় প্রত্যেকের হাতে আইসক্রিম। অবশ্য খারাপ লাগছে না।
আদি : কারোর শুধু ঠান্ডা লাগুক সবগুলোকে মজা বুঝাবো।
আদির কথায় সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়
সিমথি : কি করবেন।
আদি : সেটা তখন দেখতে পারবে। সায়ন তোর বোনের মাথার তাড় কি ছেঁড়া ছিলো ছোটবেলায়।
সিমথি : এটা বউ থাকতে সমন্দি কে কেনো জিজ্ঞেস করছো। বেচারা তোমার জ্বালায় ভাবীর হাত ধরে ও শান্তি পাচ্ছে না। আমাকে বললেই তো আমি উত্তর দিয়ে দেয়। তো তোমার উত্তর হচ্ছে আমার মাথার তাড় কখনোই ছেঁড়া ছিলো না।
সিমথির কথায় সবাই হেঁসে দেয়। মিম লজ্জায় মাটির দিকে তাকায়।
সায়ন : পরী তুই আমার বোন তো।
সিমথি : কেনো কেনো কেনো। তোর সন্দেহ আছে। থাকলে বল ডিএনএ টেস্ট করবো। যদিও আমি সিউর আছি তোকে মা-বাবাই অনাথ আশ্রম থেকে নিয়ে এসেছিলো। সো ডিএনএ পজিটিভ কখনো হবে না।
সায়ন : আমি তোর বড়। তুই আমার আগে পৃথিবীতে এসেছিস নাকি আমি।
সিমথি : এই বুদ্ধি নিয়ে তুই এতোবড় বিজন্যাস চালাস। ইফাজ ভাই সত্যি করে বলো তো হিসেবে গড়মিল পাওনাকি।
সিমথির কথায় ইফাজ ও তাল মিলায়।
ইফাজ : এতোদিনে আমার বোনের নজর পড়লো আমার বিজন্যাসের উপর। বিশ্বাস কর বোন প্রত্যেক মাসে মাসে হিসেবে গড়মিল হয়।
সিমথি : ওকে কি বুঝে রেখেছো। ওকে দিয়ে তো পিয়নের চাকরী করানো ভালো।
সায়ন : পরী।
ইফাজ : ওই তুই ওর দিকে এভাবে তাকাস কেনো। ও আমার বোন।
রোজ : দিজ ইজ নট ডান। সায়ন ভাইয়াকে তোরা সবাই একঘরে করে দিচ্ছিস। সায়ন ভাইয়া ভয় নেই তুমি চালিয়ে যাও আমি আছি তোমার পাশে৷
সায়ন : এই না হলে আমার বোন।
তরী : রেড রোজ আগে নিজে ঠিক করে হাঁটতে শিখ পরে না হয় অন্যের পাশে দাঁড়াস।
ইফাজ : হাঁটতে গেলে যে একশবার হোঁচট খায় সে নাকি দাঁড়াবে আরেক গা/ধার পাশে।
ইফাজের কথায় রোজ আর সায়ন বাদে সবাই হেঁসে দেয়। রোজ গাল ফুলিয়ে সিমথির দিকে তাকায়।
রোজ : সিমথিপু তোমার ভাই আমাকে ইনসাল্ট করছে।
সায়ন : রেড রোজ বাদ দে। এরা কি বুঝবে আমাদের। ইনসাল্ট করলেই কি আর আমরা গায়ে মাখবো নাকি। ওদের মতো আলুপরেটা আমরা কত খেয়েছি।
সিমথি : ওয়াট ইজ আলু পরোটা। ভাইয়া তুই কি সত্যিই পা/গ/ল হয়ে যাচ্ছিস।
সায়ন : আলু পরোটা কখন বললাম।
ইফাজ : পল্টিবাজ একটা।
সিমথি : এহেম এহেম সেই দলে কিন্তু তুমি পড়ো ইফাজ ভাইয়া ।
ইফাজ : মানে
সিমথি : ওই যে পল্টিবাজ।
ইফাজ : যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।
ইফাজের কথায় সবাই হেসে দেয়।
আয়াশ : চলো লুডু খেলি বাজি ধরে।
আয়াশের কথায় সবাই সহমত হলেও মেঘা, রোদেলা, তুহিন, তন্ময় চারজন একত্রে চেঁচিয়ে উঠে।
_ কাভি নেহিইইইইই
আচমকা চারজনের চেঁচানো তে সবাই ঘাবড়ে যায়। সিমথি ঠোঁট কামড়ে হেঁসে দেয়। কারণ এখানে কেবল ওদের চেঁচানোর মানে সিমথিই জানে।
রিক : এভাবে চেঁচালে কেনো তোমরা।
মেঘা : নাহ নাহ লুডু খেলবো না৷
তুহিন : জিন্দেগী তে ও খেলবো না।
আদি : কিন্তু কেনো।
তন্ময় : সিমথির সাথে আমরা পারবো না। ওর একেকটা চাল পুরো কলিজায় এসে লাগে।
তন্ময়ের কথায় আয়াশরা বোকার মতো একে অপরের দিকে তাকায়। সিমথির দিকে তাকাতেই মেঘা রা আতঙ্কে ঢোল গিলে। এখনো লন্ডনের লুডু খেলার কথা ওদের মনে আছে। বাজি ধরে খেলেছিলো। সিমথি সেদিন জিতেছিলো। তাই সিমথি ওদের ডেয়ার দিয়েছিলো ভয়ানক। লন্ডনের যেই দিকটায় ওরা থাকতো সেদিকের জায়গা টা বেশ নির্জন ছিলো। রাত হলে ভূতের রাজপ্রাসাদ মনে হতো ওই জায়গা টা। আর বাঙালি হয়ে ভূতে ভয় না পেলে ইজ্জত থাকবে না। কোলাহল মুক্ত একটা নিরিবিলি জায়গায় দোতলা বিল্ডিং। নিচ তলায় থাকতো তন্ময় আর তুহিন সাথে একজন ওখানকার রুমমেট। আর দ্বিতীয় তলায় সিমথি, মেঘা, রোদেলা। বিল্ডিংয়ের বাম দিকে একটা বিলাশ মাঠ ছিলো। সেখানে পাশেই কয়েকটা কবর ও ছিলো। শীতের রাতে হারার ডেয়ার স্বরূপ সেদিন পুরো দুই ঘন্টা ওই কবরের পাশে মাঠে থাকতে হয়েছিলো ওদের। চারজনকে আলাদা আলাদা জায়গা ঠিক করে দিয়েছিলো সিমথি নিজে। সেদিন রাতে কি ভয়টায় না পেয়েছিলো ওরা চারজন। ভয় পাওয়ার কারণ সিমথি ওদের ভয় দেখিয়েছিলো। সেদিনের পরদিন সকালে সবাই কানে ধরেছিলো আর কোনোদিন লুডুর নাম ও নেবে না।
রিক : আরেহ সবাই এমন রিয়াকশন দিচ্ছো কেনো।
তন্ময় : আ আমি লু লুডু খেলবো না। তোমরা খেলো ভাই। আমি র রুমে যায়।
তন্ময়ের তোতলানো দেখে মেঘা, রোদেলা, তুহিন ও তোতলানো শুরু করে। ওদের অবস্থা দেখে আয়াশর হতভম্ব। সিমথি শব্দ করে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে আদির বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে দেয়। তবুও হাসি থামার নাম নেই। আচমকা সিমথির হাসিতে সবাই থমকায়। এতোদিনের পরিচয়ে সিমথি প্রথম প্রাণখোলা ভাবে হাসছে। কিন্তু এভাবে হাসার কারণ কেউই উদঘাটন করতে পারছে না।
তুহিন : হা/রা/মি হাসবি না। তোর জন্য লুডু খেলার উপর আমাদের আতঙ্ক জন্মেছে।
সিমথি : চুপ কর। বলদের গুষ্টি।
মেঘা : সিয়ু খারাপ হবে। বলদ বলবি না।
সিমথি : তোরা বলদ নাকি তোরা তো সাথে একেকটা ভীতু।
রোদেলা : চুপপ ফা/জি/ল।
রোদেলার ধমকে সিমথি মুখে আঙ্গুল দেয়। কিন্তু পরক্ষণেই আবার হেসে উঠে। মেঘা, তন্ময়, রোদেলা, তুহিন রাগান্বিত দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি অনেক কষ্টে হাসি থামায়।
সায়ন : পা/গ/লের মতো বিহেভ শুরু করলি কেনো। চল খেলা স্টার্ট করি।
তুহিন : তোমরা খেলো। এই সিমথির সাথে আর জীবনেও লুডু খেলবো না।
আয়াশ : কিন্তু কেনো।
সিসিমথি : আসলে একদিন,,,
মেঘা : ওই চুপ। ইট’স সিক্রেট বলা যাবে না।
মেঘার কথায় আয়াশ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সিমথিও চুপ মেরে যায়।
মিম : আচ্ছা। সিক্রেট কিছুতে আগ্রহ দেখিয়ে লাভ কি। খেলা শুরু করি।
সিমথি : আরেহ ইয়ার কাম অন। কতবছর আগের কাহিনি এখনো মনে নিয়ে বসে আছিস। আচ্ছা যা প্রমিস এবার এমন কিছু করবো না। তবুও খেলাটা বিগড়ে দিস না।
তন্ময় : পাক্কা তো।
সিমথি : একদম।
সিমথির কথায় মেঘারা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। অতঃপর সবাই খেলা শুরু করে। সবাই দুইটা গ্রুপে ভাগ হয়ে নেয়। ছেলে Vs মেয়ে। খেলবে চারজন। কিন্তু বাকিরা পাশ থেকে উৎসাহ দেবে। চাইলে পার্টনার চেঞ্জ করতে পারবে। সিমথি&আদিবা, আদি& সায়ন, চারজন মেইন খেলোয়াড়। পরবর্তীতে যার খুশি সে চাইলেই পার্টনার চেঞ্জ করতে পারবে। খেলা শুরু হলে একে একে সবার গুটি উঠে যায়। সবাই পাশ থেকে ওদের পার্টনার কে চিয়ার আপ করছে।
আয়াশ : আদি ভাই আমার। মেয়েদের কাছে কোনো ভাবে হারিস না।
মেঘা : হাহ। সিমথি কে হারিয়ে দেখাও পারলে।
রিক : এতো কনফার্ম হইও না মেরি সিস।
রোদেলা : আরে বকবক রাখ তো। এদের কথায় কি আমরা হেরে যাবো। ছেলেরা অলরেডি মেয়েদের কাছে হেরে বসে আছে।
রোদেলার কথার মাঝেই আদিবা চেঁচিয়ে লাফিয়ে উঠে বাচ্চাদের মতো।
আদিবা : ভাইয়ার গুটি খেয়েছি ইয়াহহহহ।
আদি : এতো খাবার খেয়ে পেট ভরে না। শেষ পর্যন্ত গুটি খেলি।
সিমথি : আদি আপনি ও তো একটু আগে আমার গুটি খেলেন। তো আপনার ও কি খাবার খেয়ে পেট ভরেনি।
আদিবা : বেশ হয়েছে লাগ আরোও আমার পেছনে।
আদি : বউ আমার অথচ সাপোর্ট করে বিরোধী দলের হয়ে । পুরাই রাজাকার।
সিমথি : আপনি পাকিস্তান হলে আমি রাজাকার। একদম মেইড ফর ইচ আদার। প্রবলেম নেই। আর খেলার জায়গা নো রিলেশন।
আদি ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে সায়নের দিকে তাকায়। সায়ন হেসে খেলার মনযোগী হতে ইশারা করে। এরই মাঝে সায়ন আদিবার দুই গুটি ওর হাতে ধরিয়ে দেয়। আদিবা কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে সায়নের দিকে তাকায়।
আদিবা : সায়ন ভাইয়া দিজ ইজ নট ডান ওকে।
সায়ন : খেলায় নো রিলেশন বুঝলি।
সায়নের কথায় সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ওর কথায় ওর পার্টনার কে ফেরত দিচ্ছে। জালিম একটা।
এভাবে একে একে আদিবা আর সায়নের সব গুটি উঠে যায়। বাকি রয়ে যায় সিমথি আর আদির গুটি। দুইজনেরই দুই দরকার। সিমথি আদির দিকে তাকায় আদি ও সিমথির দিকে তাকায়। সবার দৃষ্টি ওদের দুজনের দিকে। সিমথি ঠোঁট কামড়ে হাসে। আদি অসহায় দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়।
তুহা : নাউ মেয়েরা এবার উইন হবেই। ভাবীজ্বি আমার একটা দুই প্লিজ তোলো৷
ইশান : আদি ভাই বউয়ের দিকে রোমান্টিক দৃষ্টিতে পরে তাকাস আগে আমাদের মান – ইজ্জত বাঁচা। একটা দুই
আদি বিরক্তি নিয়ে ইশানের দিকে তাকায়।
আদি : দুই কি আমার দ্বিতীয় বউ লাগে যে আমি চাইলেই আমার কাছে চলে আসবে।
আদির কথায় সিমথি হেসে উঠে।
আদি : সিয়াজান হাসবা না। খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়ে হাসে। নিষ্ঠুর মেয়ে।
আদি কথায় সবাই হেসে চেঁচিয়ে উঠে।
_ ওহহোহহহ সিয়াজানননন।
রোদেলা : হায় ডাকটা পুরা দিলে লাগছে।
শাওন : ভাই রোমান্টিকতা পরে করো আগে দুই তোলো।
সূর্য : আচ্ছা আফিন তোর কি মনে হয়। কে জিতবে।
আফিন : বলতে পারছি না। দুইজনই দুর্দান্ত খেলে। আর কি অবস্থা দেখ স্বামী – স্ত্রী বিরোধী দলে।
আফিনের কথায় সূর্য সহ ওর বাকি দুই বন্ধু ও হেসে উঠে। এদের সাথেই সিমথিদের আলাপ হয়েছে। একই রিসোর্টে উঠেছে তাই আর দূরে থেকে কি লাভ। একসাথে সবাই এনজয় করতে পারবে ভেবে সূর্য রা ও ওদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে ওদের সাথে যোগ দেয়। তারমধ্যে আফিন, আহানরা ও সিমথির সাথে কথা বলতে চাই।
এর মধ্যেই সিমথি নিজের চাল চালে। আদি সাথে সাথে চোখ বুঁজে নেয়। মনে মনে চাইছে দুই উঠুক। কারণ সিমথি কে হারতে দেখতে ওর একদম ভালো লাগবে না। আদির দোয়ায় কবুল হলো সিমথির দুই আসলো কিন্তু সিমথি মুহুর্তেই দৃশ্যপট পাল্টে দিলো। হাত দিয়ে ছক্কা ঘুরিয়ে দুইয়ের জায়গায় পাঁচ রাখলো। আয়াশরা সবাই বাকরুদ্ধ। মেঘারা চিৎকার করতে নিলেই সিমথির কাজে আওয়াজ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। সূর্য সমেত ওর তিন বন্ধুও হতবাক সিমথির কাজে। প্রায় মিনিট খানেক পর সবকিছু নিরব শুনে আদি চোখ খুলে। ছক্কায় পাঁচ দেখে হতাশ হয়। সিমথির দিকে তাকায়। দৃষ্টি স্বাভাবিক ঠোঁটের কোণায় হাসি।
সিমথি : এবার আপনার পালা মারুন।
আদি ঢোক গিলে। পুনরায় চোখ বুঁজে নেয়। মনে মনে উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা জানায় দুই যেনো না উঠে। ছক্কা মারতেই লুডু বোর্ডে এসে চার পড়ে। আদি এখনো চোখ বুঁজে আছে। সিমথি আদির দিকে তাকায়। ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু একটা বলছে আদি। সিমথি আগের মতোই হাত দিয়ে ছক্কা ঘুরিয়ে চারের জায়গায় দুই নিয়ে আসে। উপস্থিত সবাই বাকরুদ্ধ। সিমথি জীবনে প্রথম বার নিজে যেছে নিজের হার এনেছে এটা তন্ময়দের কাছে আজ ফাস্ট। আয়াশরা, সূর্যরা অপলক দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকিয়ে আছে। সবার মনে একটা প্রশ্ন এতোটা ভালো একটা মেয়ে কিভাবে বাসতে পারে।
সিমথি : কংগ্রাচুলেশনস মিস্টার আদিত্য চৌধুরী আদি। সিমথি জাহান সিয়া কে হারানোর ক্ষমতা রাখেন আপনি। আম ইমপ্রেসড।
সিমথির কথায় আদি চোখ খুলে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি হাসি মুখে আদির দিকে তাকিয়ে আছে। সবকিছু কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। আদি সবার দিকে তাকায়। সবাই কেমন স্ট্যাচু হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। লুডু বোর্ডের দিকে তাকিয়ে দেখে ছক্কায় দুই ঝলঝল করছে। আদি সিমথির দিকে তাকায়। মনে মনে ব্যথিত হলো। নিশ্চয় ওর সিয়াজান কষ্ট পাচ্ছে। আদির মুখটা মুহূর্তেই কালো হয়ে যায়।
মেহের : কিন্তু সিমথি
সিমথি : আহ মেহের আপু। সবাই এভাবে স্ট্যাচু কেনো হাত তালি দাও। ছেলেপক্ষ জিতেছে উইনার দের সংবর্ধনা স্বরূপ একটা হাত তালি তো প্রাপ্য তাই না।
বলেই সিমথি হাত তালি দেয়। সিমথির সাথে মেঘারাও সামিল হয়। মেঘারা তো জানে সিমথির কাছে আদি কি। তাই এটা নিয়ে অবাক হওয়াটা বোকামি ছাড়া কিছু না। আদি কিছু না বলেই উঠে চলে যায়। সিমথি আদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসে। ওর জামাইজানের মুড অফ হয়ে গেছে বউ হারাতে। সিমথি আদির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাকি সবার দিকে তাকায়। সবাইকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
সিমথি : ওহ হ্যালো গাইস আম সিমথি নট ভূত। এভাবে কি দেখছো সবাই।
আয়াশ : তুই ইচ্ছে করে হারলি।
সিমথি চুপ হয়ে যায়।
শাওন : আদি কে জানালে ও কষ্ট পাবে। ছেলেটা তোমাকে জেতাতে চেয়েছিলো।
সিমথি : আর আমি উনাকে।
শাওনরা চুপ মেরে যায়। সিমথি উঠে দাঁড়ায়।
সিমথি : কখনো কখনো হেরে গিয়ে জেতার আনন্দ পাওয়া যায় বুঝলে আয়াশ ভাইয়া। আর তোমার বন্ধু কাছে আমি আট বছর আগেই হেরে বসে আছি। তোমার বন্ধুই একমাত্র ব্যক্তি যে আমার হৃদয় কাঁপাতে পেরেছে। তাহলেই ভাবো কিছু তো স্পেশাল আছে উনার মধ্যে যে সিমথি জাহান সিয়ার মতো কঠিন মনের মানুষ কে ভালোবাসার জোয়ার ভাসাতে পারে। সো এই হারটা আমার জন্য নয়। বরং হেরে গিয়ে ও আমি জিতে গেছি কারণ তোমার বন্ধুকে আমি পেয়ে গেছি। উনাকে পাওয়া মানেই সব পাওয়া হয়ে গেছে আমার এসব লোক দেখানো জেতার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ আমি ইতোমধ্যে জিতে গেছি। যায় হোক তোমারা উনাকে বলো না এসব। আসছি। হিম পড়ছে রাত ও হয়েছে ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও ডিনার করতে হবে তো।
সিমথি চলে যায়। আয়াশরা সবাই সিমথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আদির জন্য সিমথির ভালোবাসার সত্যি তুলনা হয়না। আদি সত্যিই লাকি পার্সন কারণ ও সিমথির মতো একজন ভালোবাসা পেয়েছে। জীবনে ভালোবাসাটায় দরকার। টাকা পয়সা তো সবই একদিন শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ভালোবাসা এটা কমে না বরং বাড়ে যদি মানুষ দুটো সত্যি কার অর্থে ভালোবাসার মানে বুঝে। যেমন উদাহরণ স্বরূপ আদি সিমথিকেই তুলনা করা যায়। দুজনই চেয়েছিলো দুজনই জিতুক। যদিও একজন হেরেছে কিন্তু খেলা শেষে দিন শেষে হেরে গিয়ে ও সিমথি জিতে গেছে ভালোবাসার কাছে।
চলবে,,,,,