#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 38
🍁🍁🍁
রিসোর্টের পাশে পাহাড়ি রাস্তার ধারে এসে সিমথি থামে। এদিক টা বেশ আঁধার। তবে চাঁদের আলোয় আবছা দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যে পাথরের ছোট ছোট টুকরো পায়ে লাগছে। সিমথি নিজের থেকে কিছু টা দূরে আদিকে একটা পাথরের উপর বসে থাকতে দেখে স্মিত হাসে। এতক্ষণ খোঁজা খুঁজি করে সিমথি হাঁপিয়ে গেছে। আর মহাশয় এখানে বসে জোসনা বিলাশ করছে। সিমথি ধীর পায়ে গিয়ে আদির সামনে দাঁড়ায়। আদি মুখ তুলে সিমথির দিকে তাকায় আবারো মুখ নামিয়ে নেয়। সিমথি আদির থুঁতনি ধরে মুখ উঁচু করে। কপালে নিজের অধর জোড়া ছোঁয়ায়।
সিমথি : এখানে কি করছো। আমি খুঁজছি তোমায়।
আদি : _______
সিমথি : জামাইজান কি হয়েছে তোমার।
আদি মুখ তুলে সিমথির দিকে তাকায়। অতঃপর মুখ গোমড়া করে বলে,,,
আদি : সরি।
সিমথি : বাট ওয়াই।
আদি : আমি ইচ্ছে করে তোমাকে হা,,
সিমথি : হুশশ। আদি আমি আপসেট নই। তোমার কাছে আমার হার-জিতের কোনো মানেই হয় না। আমি তো তোমার কাছে বার বার হারতে রাজি। হেরে গিয়ে ও আমি জেতার আনন্দ পেয়েছি আদি। তুমি আর আমি আলাদা নয়৷ আমার হারাতে তুমি যেমন কষ্ট পাচ্ছো তোমার জেতায় আমি তেমন আনন্দ পাচ্ছি। প্রতিটা মানুষকে যদি আনন্দ , কষ্ট এই দুইটাকে অপশন হিসেবে দেওয়া হয়। তাহলে সবাই আনন্দ টাকেই বেছে নেবে। তাহলে তুমি কেনো পারছো না। আদি তুমি জিতেছো এতে আমি মন থেকে খুশি। আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। তুমি অযথা মুড অফ করে রাখলে আমার আনন্দ টাই মাটি হয়ে যাবে। লক্ষ্মী সোনা একটু হাসো।
আদি সিমথির দিকে প্রখর দৃষ্টিতে তাকায়। না হাসির মাঝে কোনো মিথ্যে নেই। একদম জীবন্ত হাসি। আদি সিমথির হাত টেনে নিজের কোলের উপর বসায়। সিমথি হেসে আদির গলা জড়িয়ে ধরে।
আদি : সত্যি রাগ করোনি।
সিমথি : নাহ
আদি : সত্যি তো
সিমথি : উফফস নাহহ রে বাবা।
আদি : আমি তোমার বাবা নই।
সিমথি : ওপপ তোমাকে বাবা বানাতে যাবো কেনো। বাবা বানানোর জন্য কি এভাবে পেছনে পেছনে ঘুরতাম নাকি আর এতো গুলো থাপ্পড় খেয়েছিলাম। বাপরে যেই শক্তি তোমার।
সিমথির কথায় আদি হেসে সিমথিকে আরেকটু নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে ডান গালে অধর জোড়া ছোঁয়ায়।
আদি : মিসেস আদিত্য চৌধুরী আপনি জিতে গেছেন আমাকে পেয়ে। আপনাকে থাপ্পড় মেরে আদর করার ক্ষমতা রাখে আপনার স্বামী। কতটা বীরপুরুষ দেখেছেন।
আদির কথায় সিমথি হেসে উঠে দাঁড়ায়।
সিমথি : বীরপুরুষ বলেই তো বন্ধুর ভয়ে গুটিয়ে যান।
আদি : সিয়াজান ( মুখ ফুলিয়ে )
সিমথি হেসে আদির গাল টিপে হেসে দেয়।
সিমথি : ওলে আমাল কুচুপুচু।
তন্ময় : আপনাদের প্রেমালাপ শেষ হলে ডিনারে আসুন।
আচমকা তন্ময়ের কথায় সিমথি আদি পেছন তাকায়। সায়নদের সবাই কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওরা ও এগিয়ে যায়।
সিমথি : প্রেমালাপ করছিলাম না হা/রা/রি
তুহিন : তো কি করছিলি।
সিমথি : তোকে বলবো কেনো। শোনার বয়স লাগে বুঝলি। তোর বয়স কম।
তুহিন : তো,,,
সিমথি : খেতে চল নয়তো ধাক্কা মেরে ফেলে দেবো।
সিমথির কথায় তুহিন নাক ফুলিয়ে হাঁটা লাগায়। মেয়েদের মতো তুহিনের নাক ফোলানো দেখে মেঘারা হেঁসে দেয়।
______________
রাতের খাবার-দাবার শেষে সবাই কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে যার রুমে যায়। আদি এসে সিমথি রুমের সাথে এটাচ করা ছোট্ট বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেলকনিতে যায়। পেছন থেকে সিমথি জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুঁতনি রাখে।
সিমথি : বাড়িতে কথা বলা শেষ সবার।
আদি : হুমমম।
সিমথি : আদি
আদি : বলো
সিমথি : আমি মা/রা/মা/রি ছাড়তে পারিনি পুরোপুরি।
সিমথির কথায় আদি হাসে। আদি জানতো সিমথি কথা বেশিদিন পেটে চেপে রাখতে পারতো না। তাই হলো।
আদি : তো কি হয়েছে। ( চুলে মুখ ডুবিয়ে)
সিমথি : আদি আমি একটা দরকারী কথা বলছি। আর তুমি
আদি : আমি রোমান্স করছি। তুই বল আমি শুনছি।
সিমথি ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। আদিকে ছাড়িয়ে আদির দিকে মুখ করে তাকায়।
সিমথি : আদি আমি কি বলছি আপনি শুনছেন।
আদি এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে সিমথির দিকে তাকায়।
আদি : তোর কি মনে হয় আমি এসব জানিনা। যেখানে তোর সাথে সবার জীবনের ঝুঁকি সেখানে তুই এভাবে পিছু হটবি আর আমি ও বিশ্বাস করবো। আমি সবসময় এটা বিশ্বাস করি তুই নিজের জীবন দিয়ে হলেও তোর আশেপাশের প্রত্যেককে রক্ষা করবি। সো এসব বাদ দে আর আমাকে আমার কাজ টা করতে দে।
আদির কথায় সিমথি হালকা হেসে আদির আরেকটু নিকটে গিয়ে দাঁড়ায়। অতঃপর আদির দুহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আদির দিকে দৃষ্টি দেয়।
সিমথি : আমি জীবিত থাকতে আপনার বা আমার আপনজনদের আমি কোনো ক্ষতি হতে দেবো না আমার এই পেশার জন্য। নিজের জীবন দিয়ে হলেও আপনাদের আমি রক্ষা করবো। আদি আমাদের বিয়ের আগে মা আমার এই পেশার জন্যই বিয়েতে রাজি হয়নি। আমি মাকে তখনই বলেছিলাম আমি এই জগৎ ছাড়তে পারবো না। আমি যদি একবার এই জগৎ ছাড়ি কিংবা নিজের এই অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলি তাহলে ওরা আমার আপনজনদের ক্ষতি করতে দুবার ভাববে না। আমি এমন একটা কাজে নিজেকে জড়িয়েছি চাইলেও ছাড়তে পারবো না। আমাকে যেকোনো একটা অপশন বাঁচতে হবে। হয় হিংস্রতা নয়তো মৃত্যু। তবে আমি এটুকু বলতে পারি আদি আমি থাকতে তোমার কোনো ক্ষতি হবে না। নিজের জীবন দিয়ে তোমাকে বাঁচাবো। বিশ্বাস করো তো আমায়।
আদি হেঁসে মাথা নাড়িয়ে সিমথির মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে। এই মেয়ে টা আদির রক্ষা কবচ এটা আদি নিজেও জানে। এটা ভেবেই আদি চোখ বুঁজে হাতের বাঁধন আরো নিবিড় করে প্রশান্তির শ্বাস ছাড়ে। সিমথি দুহাতে আদিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এই মানুষটাকে সিমথি অনেক ভালোবাসে। ওর আট সাত বছরের কষ্টের সাধনার ভালোবাসা এখন আট বছরে রূপ নিয়েছে। এই ভালোবাসার গভীরতা অনেক। দুজনই দুজনের হৃৎস্পন্দন শুনতে পাচ্ছে। আকাশের চাঁদ ও ওদের ভালোবাসার গভীরতায় হাসছে।
__________________
মেঘের রাজ্য সাজেক। বর্তমানে ভ্রমণ পিসাসু মানুষের কাঙ্ক্ষিত জায়গা সাজেক। কথায় আছে যেখানে মেঘ ছোঁয়া যায়। সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত দেখা যায় পাহাড়ে দাঁড়িয়ে। সাজেক এমন একটা অপূর্ব জায়গা যেখানে একদিনে দেখা মিলে প্রকৃতির তিনটি রূপ। কখনো বা খুবই গরম আবার কখনো হঠাৎ বৃষ্টি ভিজিয়ে দেবে আবার কখনো মেঘের ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় চারপাশ। সাজেকে সকালের সময়টা কেউই মিস করতে চাইনা। মেঘের খেলাসমেত সূর্যোদয়ের আলোর মেলা সকালেই বসে। সূর্যোদয় দেখার জন্য সবচেয়ে বেস্ট জায়গা হ্যালিপেড। হ্যালিপেড থেকে খুব সুন্দর সূর্যোদয় দেখা যায়। সাজেকে এসে সূর্যোদয় দেখা মিস করতে চাইনা কোনো পর্যটকই। তেমন সায়নরা ও ভোরেরই সবাই উঠে পড়েছে। ওদের সাথে সূর্যরা ও যাবে। কাল রাতেই সবাই ঠিক করেছে হ্যালিপেড সূর্যোদয় দেখার বিষয়টা। সবাই রিসোর্টের বারান্দায় বসে আদিদের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু আদি বা সিমথি কারোরই আসার নাম নেই। এমনকি কেউই ফোন ধরছে না।
সায়ন : আদিবা, তুহা তোরা একটু দেখে আয় তো।
সায়নের কথায় আদিবা আর তুহা সায় দিয়ে আদিদের রুমের দিকে যায়। কিছুক্ষণ ডেকেও কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় দুজনই ফিরে আসে।
আদিবা : ওদের তো সাড়াই পাওয়া যাচ্ছে না।
আয়াশ : কি ভাই ঘুমের ট্যাবলেট খাইছে নাকি এরা।
মেহের : দুজন তো এমন রেসপন্সিবেল না।
মেঘা : ওরা আদো রুমে আছে তো।
সূর্য : আমি একটা কথা বলি
সূর্যর কথায় সবাই সূর্যের দিকে তাকায়। সবাই কে এভাবে তাকাতে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায় বেচারা।
শাওন : পারমিশন নেওয়ার কি আছে বলো।
সূর্য : রিসোর্টের ম্যানেজারের কাছে অনশ্যই ডুবলিকেট চাবি আছে তো চাবি দিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখলেই তো হয়।
আফিন : আরে পা’গ’ল নাকি এভাবে কারো বেড রুমে কিভাবে যাওয়া যায়।
ইফাজ : নাহ নাহ কথাটা সূর্য ঠিকই বলেছো। আমরা বরং বাইরে দাঁড়াবো মেয়েদের মধ্যে যেকোনো একজন গেলেই হবে।
রোদেলা : কিন্তু
ইফাজ : রোদ এখানে কিন্তু করে লাভ নেই এতো ভাবাভাবি করলে আর সূর্যোদয় দেখতে হবে না।
ইফাজের কথায় সহমত হয় সবাই। আয়াশ আর আফিন গিয়ে ম্যানেজারকে ঠেলে তুলে চাবি নিয়ে আসে। মেঘা আর মেহের চাবি দিয়ে রুমের লক খুলে ভেতরে আসে। কিন্তু রুমে কাউকে না পেয়ে দুজনই অবাক হয়।
মেঘা : আরে ভেতরে তো কেউই নেই।
মেহের : দাঁড়াও ওদের ডাকছি।
অতঃপর মেহের গিয়ে সায়নদের জানায়। সবাই হুর মুড়িয়ে ভেতরে আসে।
আয়াশ : গেলো কোথায় দুইজন।
তন্ময় : কিছু হলো নাকি আবার।
তুহিন : আরে নাহ সিমথি এখানে আছে আন্ডারগ্রাউন্ডের কেউ জানে না। সিমথি সব দিকে যোগাযোগ বন্ধ আছে। সিম পাল্টে এসেছে। তুই যেটা মিন করছিস সেটা কিছুতেই হবে না৷
তুহিনের কথায় মেঘা ও সায়ন দেয়।
মেঘা : তন্ময় তুহিন ঠিকই বলেছে। সিমথি অনেক সর্তকতা অবলম্বন করে এসেছে।
ইশান : আরে তোমরা বারান্দা খুঁজেছো।
ইশানের কথায় সবাই ইশানের দিকে তাকায়।
মেহের : না তো।
তরী : কিন্তু ওরা বারান্দায় থাকলেও তো ডাক শুনতো।
আফিন : নাহ বাইরে থেকে ডাকলে সেই ডাক বারান্দায় যায় না।
তরী আফিনের দিকে তাকায়। দুজনের দৃষ্টি মিলতেই তরী দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
অতঃপর সবাই বারান্দায় যায়। ছোট্ট বারান্দার একপাশে কিছু ফুলের টব আরেক পাশে একটা বেতের সোফা আর সামনে বেতের টেবিল। সোফায় চোখ যেতেই আদির মাথার অংশ দেখতে পেয়ে সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। অতঃপর সায়ন রেগে কিছু বলার জন্য ওদের সামনে যেতেই থমকে যায়। এমন সুন্দর দৃশ্য কখনো দেখেছে কিনা সায়নের জানা নেয়। কিন্তু এমন ঘটনা সায়নের সাথে ও বহুবার ঘটেছে তখনও কি ওদের এতোটা সুন্দর সুখী দম্পতি মনে হতো। সায়নকে থেমে যেতে দেখে একে একে সবাই ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আদির বুকে মাথা গুজে সিমথি ঘুমিয়ে আছে। বাম হাতে আদির শার্টের কিছু অংশ মুঠো করে রেখে। আদি সিমথির মাথার উপর নিজের মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। একহাতে সিমথিকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে অন্যহাত নিজের কোলের উপর। দুজনকে দেখে মনে হচ্ছে কত শান্তির ঘুম দিচ্ছে।
আয়াশ : আমরা এদের নিয়ে টেনশন করছি আর ওরা শান্তির ঘুম দিচ্ছে দুইজনই হা/রা/মি।
রিক : যায় বল মুহুর্তটা কিন্তু দুর্দান্ত।
কথাটা বলেই রিক ফটাফট করেটা ছবি তুলে নেয়। রিকের দেখাদেখি মেঘাসহ অনেকেই নিজের ফোনের ওদের ছবি তুলে নেয়। সায়ন এখনো মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। মনের কোনো একজায়গায় প্রশান্তির হাওয়া বইয়ে। ওর পরী যোগ্য মানুষের হাত ধরেছে এটা ভেবে। সায়ন আজ সম্পূর্ণ নিশ্চিত আদির থেকে সিমথিকে আর কেউ বেশী সুখে রাখতে পারবে না। আদিই সিমথির জন্য যোগ্য জীবনসঙ্গী।
রোজ : এবার তো এদের উঠাও। সূর্যোদয় দেখে যত খুশি ঘুমাক ওরা।
সিনহা : মনে তো হচ্ছে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে সামনে দেখো কফির কাপ।
সিনহার কথায় সবাই বেতের ছোট্ট টেবিলের দিকে তাকায়। হয়তো সিনহার কথায় সত্যি। এদিকে কানে কারো কথা বলার আওয়াজ পৌঁছাতেই আদির ঘুম পাতলা হয়ে আসে। নড়তে চাইলে মনে হলো কেউ ওকে ঝাপটে ধরে বুকে মাথা দিয়ে রেখেছে। বাতাসের সাথে সিমথির শরীরের মেয়েলি ঘ্রাণ নাসারন্ধ্র দিয়ে পৌঁছাতেই আদি বুঝতে পারলে ওর বুকের উপর জায়গা করে নেওয়া মানবী আর কেউ নয় ওর সহধর্মিণী ওর ভালোবাসার সিয়াজান। কিন্তু পরমুহূর্তেই মাথায় ক্যাচ করে কয়েকজনের গলার স্বর। আদি পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। চোখ খুলেই সায়নদের হাস্যজ্জ্বল মুখটা ওর চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আচমকা ওদের সবাই কে দেখে আদি চমকায়। ধরফড়িয়ে উঠতে নিলে সায়নের শাসানোতে থেমে যায়।
সায়ন : একদম উঠবি না। আমার বোনের আরামের ঘুমটা নষ্ট করবি না
আদি : তোরা এখানে কি করছিস।
তিন্নি : কাকাই কাকিয়া কি অসুস্থ।
আচমকা তিন্নির কথায় আদি তিন্নির দিকে তাকায় একবার আরেকবার সিমথির দিকে তাকায়। কি একটা অবস্থা এই ছোট বাচ্চার সামনে এভাবে লজ্জায় পড়তে হলো তাও এতোবড় গবেট গুলোর জন্য। মেহের জিভ কেটে শাওনের দিকে তাকায়। শাওন রাগী দৃষ্টিতে মেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে। যার অর্থ তিন্নি এখানে কি করছে। আদি সবগুলোর দিকে রাগি চোখে তাকায়।
আদি : আজ তোরা বেঁচে গেলি আমার বুকের ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটার জন্য। নয়তো তোদের এমন ক্লাস নিতাম এমন গা/ধা/মি দ্বিতীয় বার করতি না। ( ফিসফিসিয়ে )
আদির কথায় সবাই মুখ টিপে হাসে। বেচারা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে তারমধ্যে তিন্নির প্রশ্নে ও থতমত খেয়ে গেছে। আয়াশরা ভালোই মজা লুটছে।
মেঘা : বাই দ্য মেডিকেল রোড সিমথির ঘুম তো পাতলা আমাদের এতো কথা ওর কানে যাচ্ছে না কেনো।
আদি : ওর কানে হেয়ারফোন লাগানো।
আদির কথায় সবাই সিমথির কানের দিকে তাকায়। কালো হেয়ারফোন দেখে সবাই ব্যাপার টা বুঝতে পারলো৷।
ইফাজ : ঠিক আছে এখন আমরা বাইরে যাচ্ছি সিমথিকে উঠিয়ে বাইরে আসো।
আদি মাথা নাড়িয়ে সব-কয়টা কে বিদায় হতে বলে। সবাই হেসে বেরিয়ে যায়। আদি সবাই কে যেতে দেখে নিজের বুকে ঘুমিয়ে থাকা সিমথির দিকে তাকায়। কাল রাতে গল্প করতে করতে এখানেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো সিমথি। তারজন্য আদিও আর বিছানায় যায়নি। সিমথির কপালের চুলগুলো সরিয়ে একটা চুমু আঁকে অতঃপর ওকে ডাক দেয়।
চলবে,,,৷
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)
#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 39
🍁🍁🍁
আদির ডাক শুনে সিমথি চোখ কুঁচকে শার্টের মুঠো আরো শক্ত করে ধরে বুকে মুখ গুঁজে। আদি হালকা হেসে সিমথির এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে কান থেকে হেয়ারফোন টা খুলে টেবিলের উপর রেখে পুনরায় ডাক দেয়।
আদি : সিয়াজান ওঠো। সূর্যোদয় দেখার জন্য সবাই বসে আছে। এখন না গেলে আয়াশরা হামলা চালাবে।
সিমথি হাড়মোড়া ভেঙে আদির দিকে তাকায়। ঘুমঘুম চোখে আদির দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।
সিমথি : গুড মর্নিং জামাইজান।
আদি : হুম মর্নিং। ওঠো এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
প্রায় মিনিট বিশেক পর আদি আর সিমথি রুম থেকে বের হয়। ওদের বের হতে দেখে আয়াশ তেড়ে যায়।
আয়াশ : তোদের আরো রোমান্স বাকি ছিলো নাকি ভাই৷
আয়াশের কথায় আদি প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে ভাবলেশহীন উত্তর দেয়,,,
আদি : রোমান্স করতে দিলি কোথায়। সবগুলো মিলে রুমে হামলা দিলি।
রিক : ছ্যাঁ ছ্যাঁ ছ্যাঁ পোলাপাইন গুলা লাজহীন হইয়া যায়তাছে। বড় ছোট জ্ঞান নাই। আমি হইলে বউ নিয়া দরজা দিতাম না।
আদি : তোর রোমান্সের জন্য দরজা ওয়ালা রুম লাগে বলে তো জানতাম না। তুই তো খোলা জায়গায় ও পারিস।
আদির কথায় রিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।
সায়ন : হয়েছে চল এবার।
আদি : আরে দাঁড়া তোর সাথে বোঝাপড়া এখনো বাকি।
সায়ন : আমি কি করলাম
আদি : লজ্জা করে না তোর বোন আর বোনের জামাইয়ের প্রাইভেসি টাইমে হামলা করিস। ছিহ সায়ন। তোর বাসরের সময় কি সিয়াজান হামলা করেছিলো তার প্রতিশোধ নিচ্ছিস।
সায়ন : থুরীই না জানতাম আমি। আর লজ্জার কি আছে। আমি কি এমন দেখেছি।
এদের কথাবার্তায় সিমথির বিরক্তি আকাশ ছুঁই ছুঁই।সিমথি এবার সবগুলোকে ধমকে উঠে।
সিমথি : ওই থামবি তোরা৷ গেলে হাঁটা লাগা নয়তো যে যার রুমে যা। সকাল সকাল ঘুম ভেঙে নাটক শুরু করেছে।
সিমথির ধমকে সবাই কিছু টা ঘাবড়ে যায়। সায়ন আমতা আমতা করে কিছু বলতে নিলে সিমথির চোখ রাঙানো দেখে থেমে যায়।
সিমথি : মেঘা মুখটা দয়া করে অফ কর। নয়তো সাজেক ভ্যালির সব মশা তোর মুখটাকে নিজেদের আশ্রয়স্থল ভেবে ঢুকে যাবে। গা/ধার দল। আমার বরের বুকে আমি ছিলাম পরপুরুষের সাথে তো আর দেখিসনি এমন রিয়েক্ট করছি আমি অন্যকারোর সাথে ছিলাম। আজব লোকজন নিয়ে ঘুরি আমি।
সিমথির কথায় মেঘা মুখ বন্ধ করে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি মিমের কোল থেকে আদ্র কে নিয়ে সামনের দিকে হাঁটা লাগায়। অগত্যা সবাই ওর পেছন পেছন হাঁটা লাগায়।
বর্তমানে সবাই পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যে সূর্য উঠবে। সবাই যে যার মতো আনন্দ করতে ব্যস্ত। কেউ সেলফি তুলছে কেউ সবকিছু ভিডিও করছে। সিমথি ফোন হাতে নিয়ে কিছুটা সাইডে যায়। একবার ওদিকটার খবর নেওয়া দরকার। যদিও অনিলের উপর আস্থা আছে সিমথির।
সিমথি : হুমম অনীল ওদিকের কি হাল
________
সিমথি : উনাকে আমি এসে দেখছি
______
সিমথি : এই এমপি বেশি বাড় বাড়ছে। সামনে নির্বাচন একে বলো নিজের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে চাইলে যেনো বেশি না উড়ে। বেশি উড়লে মুখ থুবড়ে পড়বে।
______
সিমথি : আচ্ছা বাকিটা আমি এসে সামলে নেবো। রাখছি।
সিমথি ফোন কেটে আবারো আদিবার পাশে এসে দাঁড়ায়।
আদিবা : আর কতক্ষণ বউমণি।
সিমথি : হুমম পাঁচ
তুহা : চার
মেহের : তিন
তরী : দুই
মেঘা : এক
রোজ : সিমথিপু ভাইয়া ওই দেখো
রোজের চেঁচানো তে সবাই আকাশের দিকে তাকায়। মুহুর্তে ইয়া বড় এক সূর্য নিজের কিরণ ছড়িয়ে উদিত হয়। মুহুর্তের মধ্যে সূর্যের আলোয় চারপাশটা হলদেটে আভায় পরিণত হয়। সবার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে যায়। সিমথি সবার রিয়াকশন দেখে হাসে। উত্তেজনায় আদিবা পাশের জনের হাত খামছে ধরে। আচমকা হাতে ধারালো নখের আছড়ে সূর্যের ধ্যান ভাঙে। ভ্রু কুঁচকে নিজের হাতের দিকে তাকাতেই একজোড়া মেয়েলি হাতের সন্ধান মেলে। সূর্য চোখ তুলে সামনের রমণীর দিকে তাকায়। বিস্ময়ে রমণীর মুখ কিছু টা হা হয়ে আছে। আর উত্তেজনায় বারংবার সূর্যের হাত খামছে ধরছে। সূর্যের শিড়দাঁড়া বেয়ে শীতল হাওয়া বয়ে যায়৷ প্রথম থেকে এই রমণীর উপর সূর্যের একটা টান অনুভূত হয়েছিলো। মেয়েটা ভীষণ বাচ্চা স্বভাবের। কিন্তু অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সে।
সূর্য আদিবার কানের কাছে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,,,,,
সূর্য : আমার হাত টা আপনার নখের আছড়ে ক্ষত বিক্ষত করার ফন্দি এটেছেন নাকি।
কানের সামনে আচমকা ফিচেল কন্ঠস্বর আদিবার হুশ ফিরে। ঘাড় ঘুরিয়ে সূর্যের দিকে তাকায়। আদিবার বোকার মতো তাকানো দেখে সূর্য মনে মনে হাসে।
সূর্য : তা ম্যাডাম আমার রক্ত চুষা হলে হাতটা ছাড়তে পারেন। মনে তো হচ্ছে চামড়া উঠিয়ে ফেলেছেন।
সূর্যের কথায় আদিবা সূর্যের হাতের দিকে তাকায়। অতঃপর দ্রুত নিজের হাত সরিয়ে নেয়। ইশশ হাতটা লাল হয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। লজ্জায়, অনুশোচনায় আদিবা মাথা নিচু করে নেয়।
সূর্য : সুন্দরী রমণীদের জন্য লজ্জা পাওয়া বয়কট ঘোষণা করা উচিত সরকারের। কারণ লজ্জাবতী রমণী লাজুক রাঙা মুখশ্রী তাগড়া তাগড়া যুবকের বুকে সাইক্লোন তুলতে সক্ষম।
আদিবা চমকে সূর্যের দিকে তাকায়। সূর্য হেসে অন্যপাশে গিয়ে আফিনদের সাথে দাঁড়ায়। সেখান থেকে আদিবার আশ্চর্য মুখখানি দেখে সূর্য হাসে।
আয়াশ : মেঘা বউ আমার মুখ টা অফ রাখো।
এতো সুন্দর একটা মোমেন্টে আয়াশের ফাউ প্যাচাল শুনে মেঘা বিরক্তি নিয়ে তাকায়।
মেঘা : চুপ থাকো তো। বউ বউ বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে অথচ বিয়ের খবর নেই। চি/টা/র একটা
আয়াশ : এমন ভাবে বলছো তোমাকে দুই বাচ্চার মা বানিয়ে এখন অস্বীকার করছি।
মেঘা : আয়াশ
আয়াশ : এই শুনো তোমার ওই হি/ট/লা/র বাপ কে দেখে আমার কলিজা কাঁপে।
মেঘা : ও মা তাই। তা প্রপোজ করার সময় মনে ছিলো না।
আয়াশ : উফফস ঝগড়া করো না। একটু রোমান্টিক কথা ও তো বলতে পারো।
মেঘা : আগে বিয়ে করো তারপর রোমান্টিক কথা শোনার স্বাদ জাগাও। আদি ভাইয়া আর সিমথিকে দেখেছো। এতকিছুর পরও কি সুন্দর ভালোবাসা ওদের।
মেঘার কথায় আয়াশ হেসে মেঘার মাথায় হাত বুলায়।
আয়াশ : ওদের ভালোবাসার নিদর্শন ইউনিক। প্রত্যেকের ভালোবাসার ধরণ আলাদা। কিন্তু ওদের ক্ষেত্রে আমার মনে হয় দুজন দুজনকে একই নিয়মে ভালোবাসে। সিমথির ভালোবাসা ছিলো প্রথমে প্রকাশিত আর আদির ভালোবাসা ছিলো গোপনীয়। আর যখন আদি প্রকাশ্যে ভালোবাসতে আরম্ভ করলো তখনই সিমথি নিজের ভালোবাসা গোপনে মনে কোনে জায়গা দিলো। কিন্তু এখন দেখো ওদের দেখে কেউ বলবে না ওদের মাঝে এতো গুলো দিন গেপ গিয়েছিলো।
আয়াশের কথায় মেঘা আয়াশের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে সিমথি আর আদির দিকে তাকায়। দুজন দুদিকে দাঁড়িয়ে আছে। আদির দৃষ্টি সিমথির দিকেই।
মেঘা : জানো আয়াশ আদির ভাইয়ার উপর আমার ভীষণ রাগ হতো। সিমথি আমার কাছে অনেক আপণ৷ ওর চোখের পানি আমি কখনো সহ্য করতে পারিনা। কিন্তু আদি ভাইয়াকে ভালোবাসার পর থেকে সিমথিকে প্রচুর কাঁদতে হয়েছিলো। তখন আমার ইচ্ছে করতো আদি ভাইয়াকে খু/ন করে ফেলি। এমন আগুন সুন্দরী মায়াবী একটা মেয়েকে কেউ কিভাবে দিনের পর দিন এভয়েড করতে পারে। যেখানে সব ছেলে সিমথির জন্য পাগল ছিলো সেখানে সিমথি কেবল একটা ছেলের জন্য পাগল ছিলো। তবুও কিভাবে সিমথিকে এতোটা কষ্ট দিতো ভাইয়া। ফ্রেন্ড সার্কেলের সবার মধ্যে সিমথি ছিলো হাস্যজ্জ্বল একটা মেয়ে। যে সবাই কে হাসাতো। এখন হয়তো গম্ভীর হয়ে গেছে কিন্তু আমাদের সামনে সিমথি পুরনো লুকে থাকে। হঠাৎ সিমথির এভাবে কষ্ট পাওয়াটা আমরা কেউই সহ্য করতে পারতাম না। মনে হতো আদি ভাইয়া সিমথির জীবনে না আসলেই বোধহয় ভালো হতো। কিন্তু এখন মনে হয় আদি ভাইয়া আর সিমথি একে অপরের জন্য। শত বাঁধার পরও সিমথি নিজের ভালোবাসা পেয়েছে আমরা ভীষণ খুশি হয়েছি। এই মেয়েটার কষ্ট আমরা কেউ সহ্য করতে পারিনা।
আয়াশ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এদের অতীত বিষাক্ত হলেও বর্তমান রঙিন। এই ভালোবাসার মাঝে কোনো ঝড় না আসুক এটাই সবার কাম্য।
নিজের পেছনে কারো অস্তিত্ব অনুভব করে সিমথি পেছন ফিরে তাকায়। আদিকে দেখে ভ্রু কুঁচকায়।
আদি : আচ্ছা তোকে যদি এখান থেকে ধাক্কা মারি কি হবে।
আদির কথায় সিমথি চমকায়। কিন্তু সেটা বেশীক্ষণ স্থায়ী থাকলো না। ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটিয়ে একবার পাহাড়ের নিচের দিকে তাকায়। আপাতত সিমথি পাহাড়ের কার্নিশে দাঁড়ানো। নিচে পড়লে ডাল-ভাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ১০০ তে ৯৮।
সিমথি : ম/রে যাবো।
আদি হেসে সিমথির বাম হাত ধরে পেছনের দিকে হেলিয়ে দেয়।
সিমথি : আদি কি করছো। ( হালকা চেঁচিয়ে)
সিমথির চেঁচানো তে সবাই ওদের দিকে তাকায়। সবাই হতভম্ব।
সায়ন : এ এই আদি পরী পড়ে যাবে তো।
আদি : ফেলতেই তো চাইছি।
আদির কথায় সবাই বাকরুদ্ধ। এই ছেলের মাথা নির্ঘাত খারাপ হয়ে গেছে।
ইশান : ভাইয়া এটা কোন ধরনের ফাজলামো। পাহাড়গুলো পিচ্ছিল হালকা। যেকোনো সময় স্লিপ খাবি তোরা।
ইশানের কথায় আদি কর্ণপাত না করে সিমথিকে আরেকটু নিচে দিকে ঝুকায়। আদির দিকে তাকিয়ে সিমথি হাসে।
সিমথি : কি হলো হাত ছেড়ে দেন। ধরে রাখলেন কেনো।
আদি : তোমার ভয় করছে না।
সিমথি : না তো ( মাথা নাড়িয়ে)
আদি : যদি তোমাকে ছেড়ে দেয় সত্যি সত্যি।
সিমথি : তো এতক্ষণ কি মিথ্যে মিথ্যে অভিনয় করছিলেন। ( মুখ টিপে হেসে)
আদির হাত কাঁপছে। মৃ/ত্যু/র মুখে দাঁড়িয়ে ও সিমথির মুখে হাসি। যেখানে সিমথি জানে বাই এনি চান্স আদির হাত ফসকে গেলে মৃ/ত্যু অবধারিত। আদি চোখ জ্বালা করছে গলা শুকিয়ে আসছে। আদির অবস্থায় সিমথি শব্দ করে হেঁসে দেয়। আয়াশরা হতবাক। স্বামী-স্ত্রী দুইজনই পা/গ/ল।
আদিবা : ভাইয়া হ্যাভ ইউ গন ম্যাড। তোর হাত কাপছে ভাইয়া যে-কোনো সময় হাত ছুটে যেতে পারে। শাওন ভাইয়া ওকে আটকাও।
সিমথি : আচ্ছা আমিই হাত ছাড়িয়ে নেই কি বলেন।
আদি চমকে সিমথির দিকে তাকায়। মুহূর্তেই মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সিমথি এখনো হাসছে। কালো লং টপসের দুপাট্টা বাতাসে উড়ছে সেইসাথে চুলগুলোও উড়ছে। সূর্যের আলোয় চুলগুলো লালছে বর্ণের দেখাচ্ছে। আচমকা আদির হাত ঢিলা হতে শুরু করে। আদির চমকে সিমথির দিকে তাকায়।
সিমথি হেসে হাতের মুঠো আবারো শক্ত করে ধরে।
সিমথি : আমাকে খু/ন করতে এসে তো নিজেই খু/ন হয়ে যাচ্ছেন।
রিক : দুইটাই বড্ড উন্মাদ। আদি মার খাবি শা/লা ওকে উপরে তোল। পাহাড়ের শেষ কিনারায় মেয়েটা যেকোনো সময় পড়ে যাবে।
আচমকা আদির হাতের বাঁধন ছুটে যায়। আদি নিজেও সামনের দিকে কিছু টা ঝুঁকে যায়।
আদি : সিয়াজাননননন
আয়াশরা আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকায়। মুহুর্তের মধ্যে মেঘা, রোদেলা, তরী, রোজ শব্দ করে কেঁদে ওঠে।
চলবে,,,,
#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 40
🍁🍁🍁
মুহুর্তেই হাস্যজ্জ্বল পরিবেশ টা থমথমে হয়ে যায়। উপস্থিত সকলের চোখে -মুখে এখনো আতঙ্ক বিরাজমান। সবাই একত্রে পাহাড়ের নিচের দিকে তাকায়। গভীরতার মাপ টা বোধহয় জানা নেই কারোরই। এখান থেকে পড়লে জীবিত ফেরা দুষ্কর। সবাই নিচ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে দৃষ্টিপাত করে। আতঙ্কে সবার শরীর কাঁপছে।
আদি চোখ বুঁজে নিজের বুকে থাকা রমণীকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। ভয়ে সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। বুকের ভেতর ঢিমঢিম শব্দ হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগের ঘটনা বারংবার চোখ সামনে ভেসে উঠছে।
আচমকায় আদির হাত থেকে সিমথির হাত ছুটে যায় পিছলিয়ে। আদি নিজেও কিছু টা ঝুঁকে পড়ে। সিমথির এক পা শূন্যে ভেসে যায়। আদি তৎক্ষনাৎ সিমথির ডান হাত টেনে নিজের দিকে টান দেয়। এতে করে সিমথি চিটকে এসে আদির বুকে পড়ে। আদি পেছনের দিকে দুপা পিছিয়ে যায়। সিমথিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
সম্পূর্ণ দৃশ্যপট চোখের সামনে ভাসতেই আদির হাতের বাঁধন আরেকটু গভীর হয়। নিজের উপর নিজের চরম রাগ হতে শুরু করে। আদি তো চেয়েছিলো সিমথিকে ভয় দেখাতে। ভেবেছিলো একটু মজা করবে। কিন্তু এমন একটা বিপদের সম্মুখীন হবে এটা কেউই ভাবেনি। আদি ভাঙা গলায় বলে উঠে,,,,,
আদি : কাউকে এতোটা বিশ্বাস করিস না সিয়াজান। তুই জানতিস আমি হাত ছাড়লে নিচে পড়ে যাবি তবুও কেনো নিজেকে বাঁচানোর ট্রাই করলি না।
সিমথির নিজের কাঁধে তরল কিছু অনুভব করে চমকে উঠে। ওর সিক্স সেন্স বলছে আদি কাঁদছে। সিমথি আদিকে ছেড়ে মেহেরের দিকে কিছু একটা ইশারা করে। মেহের সিমথির ইশারা বুঝতে পেরে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।
মেহের : চলো আমরা নিচে নামতে থাকি ওরা আসুক।
মেহেরের কথায় সবাই একবার ওদের দিকে তাকিয়ে নিচে নামতে শুরু করে।
সিমথি ওদের চলে যেতে দেখে আদির হাত টেনে পাহাড়ের মাঝে আসে। অতঃপর নিচে বসে পড়ে পাশে আদিকে ও টান দিয়ে বসায়। আদি চুপচাপ বসে পড়ে। নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছে আদির। আজ ওর জন্য সিমথির অনেক বড় একটা বিপদ হয়ে যেতো।
সিমথি : আমি তো ভাবতাম আপনি ভীষণ সাহসী। আফটার অল আপনি আমার বর। কিন্তু এতোটুকুতেই যে শীতলক্ষ্যা নদী বানিয়ে ফেলতে জানেন এটা তো আমি জানতাম না।
সিমথির কথায় আদি সিমথির দিকে তাকায়। সিমথির দৃষ্টি আদির দিকেই। আচমকা আদি সিমথিকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে দেয়। সিমথি হতবাক। ছেলে মানুষ সহজে কাঁদে না এটা সিমথি জানতো। কিন্তু এই ছেলে এভাবে কাঁদছে কেনো তাহলে।
আদি : এতো ভালোবাসিস কেনো আমাকে।
সিমথি : কারণ আপনি ভালোবাসার যোগ্য
আদি : আমি অনেক খারাপ সিয়াজান। আমার জন্য আজ তোর এতোবড় একটা ক্ষতি হতো। আমি কেবল তোকে কষ্টই দিলাম
সিমথি : আপনি খারাপ আমি তো ভালো তাই না। আর আপনার দ্বারা যদি একটু আধটু ভুল না হয় তাহলে আপনি যে আমাকে এতো ভালোবাসেন এটা কিভাবে জানতাম বলুন।
আদি : আমি তোকে তোর মতো ভালোবাসতে কেনো পারলাম না।
সিমথি : উফফস আদি তুমি কান্না থামাও। নয়তো এখন সত্যি সত্যি ধাক্কা মারবো। এমন ভাবে কাঁদছো যেনো আমি সত্যি সত্যি ম/রে গেছি।
আদি : সিয়াজান ( ধমকে)
সিমথি : এইইই তুমি আমাকে ধমকাচ্ছো।
আদি : এসব বাজে কথা একদম বলবি না।
সিমথি : আচ্ছা এবার কান্না থামান। আপনি যে এতো ছিচকাদুনে আগে জানতাম না তো।
আদি : জানলে কি করতে
সিমথি : কি আর করতাম আরো কয়েক বছর আগে বিয়ে করে আপনাকে বড় করতাম। ট্রেনিং দেওয়াতাম বউকে কিভাবে ভালোবাসতে হয়। কোথায় আমি পড়ে যেতে নিচ্ছিলাম তো আমি কাঁদবো আর আপনি আমাকে বুকে জড়িয়ে চুমু খাবেন আর সান্ত্বনা দেবেন। তা না আপনি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাদছেন আর আমি সান্ত্বনা দিচ্ছি। হায় কপাল ( কপালে হাত দিয়ে)
আদি : আমি তো বুকে জড়িয়ে চুমু খেতাম। তা তুই কি আমাকে চুমু খেয়েছিস। আর বুকে তো আমিই জড়ালাম৷ নে এবার চুমু খা।
আদির কথায় সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
সিমথি : ধ্যাততত অসভ্য লোক একটা। একটু আগে কাঁদছিলেন আর এখনই অ/স/ভ্য/তা/মি শুরু হয়ে গেলো।
সিমথির কথায় আদি হেসে উঠে। সিমথি চোখ মুখ কুঁচকে উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর হাঁটা লাগায়। পেছন পেছন আদি হাসতে হাসতে আসে। দূর থেকে ওদের আসতে দেখে সায়নরা স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে।
____________
সাজেকে সর্বত্র মেঘ, উচুঁ-নিচু পাহাড়ের সমাহার।
সাজেক পিসাসু মানুষের সবচেয়ে কৌতুহলী জায়গা হচ্ছে কলাংক পাহাড়। সাজেকের রুইলুই পাড়া থেকে ট্রেকিং করে কলাংক পাহাড়ে যাওয়া যায়৷ বর্তমানে সবাই সিমথিরা সবাই সেই পাহাড়ের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। এখানে পর্যটকদের পাহাড়ে উঠতে অবশ্যই বাঁশের লাঠি ব্যবহার করতে হয়। ইশান আর আয়াশ দুজন মিলে গিয়ে সবার জন্য লাঠি আর পানি নিয়ে আসে। পাহাড়ের কিছুটা পিচ্চিল হওয়ায় সবাই বেশ সাবধানতা অবলম্বন করে উপরে উঠছে। নিচে থেকে গেলো মিম, আদ্র আর মেহের। মূলত মেহের এসব লাঠি সাঠি নিয়ে উঠতে পারে না। আর মিম আদ্র কে নিয়ে উঠতে পারবে না তারজন্য।
মেঘা : ইয়ার কালকেই তো চলে যাবো
সিমথি : কেনো আরো থাকার ইচ্ছে আছে।
রোদেলা : এমন একটা জায়গা কে ছাড়তে চাই বল।
সিমথি : আমি ছাড়তে চাইছি।
তরী : তুই হলি রোবট মানুষ যার মধ্যে কোনো অনুভূতি শক্তি নেই।
আদি : এটা বলো না শালিকা। তোমার এই রোবট বোনই আমার মতো মাসুম বাচ্চা কে ওর জালে ফাঁসিয়েছে।
পেছন থেকে আদির কথায় সিমথি ব্যতিত সবাই হেঁসে দেয়। সিমথি চোখ পিটপিট করে পেছন ফিরে আদির দিকে তাকায়। আদি চোখ টিপে ঠোঁট কামড়ে হেঁসে দেয়।
আদি : সিয়া জান আমাকে দেখার জন্য পুরো সময় পরে আছে সামনে যাও।
সিমথি : নির্লজ্জ লোক একটা। আমি আপনাকে জালে ফাঁসিয়েছি। কি অশ্লীল কথাবার্তা।
আদি : আমি নির্লজ্জ এটার প্রমাণ তো তুমি প্রতি দিন-রাতই পাও।
আদির কথায় সিমথি হাতে লাঠি উঠিয়ে আদির দিকে এগুতে নিলে আদির ধমকে থেমে যায়।
আদি : মারবো টেনে একটা। ফাজিল একপা এগুলে ধাক্কা মারবো। পাহাড় পিচ্চিল দেখিস না। পরে গেলে তোর হাড়গোড় ও খুঁজে পাবো না। মারামারি পরে করিস।
সিমথি : মারবো টেনে একটা। এটা ওটা ঢং করার জায়গা পায় না। আমি কি একা পড়বো নাকি আপনাকে নিয়েই পড়বো। হুহহ
আদিকে ভেঙিয়ে সিমথি হাঁটতে শুরু করে। আদি অসহায় দৃষ্টিতে সায়নের দিকে তাকায়।
সায়ন : ক্ষেপিকে ক্ষেপিয়েছিস এর মাশুল খুব সুন্দর ভাবে দিতে হবে।
আদি : আমার শ্বাশুমা কি ওরে পেটে নিয়ে আগুন খেয়েছিলো কথায় কথায় এমন আগুন হয় কেনো। তোর বোনের জন্য দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা আমার বাড়িতে ফায়ার সার্ভিস রাখতে হবে। ওর তেজের আগুনে কখন আমি ঝলসে যায় তখন তো ফায়ার সার্ভিসের কর্মীর প্রয়োজন আমাকে বাঁচানোর জন্য।
আয়াশ : ভাই তুই এখনই মরে যা। সিমথির তেজের আগুনে না ঝলে পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়।
আদি : তোদের আঙ্কেল মামা ডাক শোনানোর জন্য হলেও আমাকে বাঁচতে হবে। ইউ নো না আমি আবার মহান পুরুষ। কত মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইফাজ : আদি ভাই চুপ যাও। তোমার দুই সমুন্দি এখানে আছে। আমাদের সামনে আমাদের বোনকে নিয়ে এমন কথা বলা সাজে না।
আদি : এমা ইফাজ ভাইয়া আমি তো তোমাদের কথা ভেবেই বললাম।
আফিন : এই ভাই সূর্য সিমথি ম্যামকে আমরা যেমন রাগী বদমেজাজি ভাবতাম উনি ততটা ও না তাই না।
সূর্য : সেটাই তো। উনি বাইরে একজন আর ভেতরে সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন।
সায়ন : এই সূর্য তোমরা এতো পিছিয়ে পড়লে কেনো।
আহান : আসছি ভাইয়া।
অতঃপর সবাই আবার হাঁটা লাগায়। এই পর্যন্ত সিমথি একবারো ও আদির দিকে তাকায়নি। আদি ফোন বের করে সিমথিকে টেক্সট করে সিমথি সিন করে রেখে দেয়।
সিমথি : আহ নেকামো। সবার সামনে ধমকে চুপিচুপি সরি বলছে। নাটক ( বিড়বিড় করে)
আদি : আদি আব তু গায়া। ঘুমন্ত বাঘিনী জেগে উঠেছে। এতোদিন তো ভালোই রোমান্টিক মুডে ছিলো এখন আবার রণচণ্ডী লুক নিচ্ছে কেনো। ( মনে মনে)
অতঃপর সবাই পাহাড়ের চুড়ায় উঠে দাঁড়ায়। সাদা সাদা মেঘ চারদিকে উড়ে বেড়াচ্ছে। মুহুর্তেই আবার সবুজে ঘেরা দৃশ্য ভেসে আসছে। আদিবারা সবাই মেঘ ধরতে ব্যস্ত হয়ে যায়। আদি সিমথিকে একপাশে মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খারাপ লাগে। তখন ওভাবে না বকলেই হতো। কিন্তু সিমথি ওভাবে তেড়ে আসাতে একটা বিপদ হতে পারতো তাই তো আদি বকলো।
আচমকা গালে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শে সিমথি চমকায়। গালে হাত দিয়ে ভেজা কিছু অনুভব করে সামনে তাকাতেই চোখ পড়ে একদলা মেঘ সিমথির চারপাশে উড়ছে আর কিছু মেঘ গায়ে এসে মিলিয়ে যাচ্ছে। সিমথি হেসে উঠে। আদি মুগ্ধ দৃষ্টিতে সিমথির হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটা অল্পতেই খুশি।
_________________
রাতের দিকে সবাই বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করেছে। পাহাড় থেকে ঘুরে আসার সময় সবাই মুরগী নিয়ে এসেছে। ছেলেরা আপাতত বারবিকিউ তৈরি করতে ব্যস্ত। মাঠের মাঝখানে আগুন জ্বালিয়ে তাতে আস্তো মসলা মাখানো মুরগি গুলো পুড়াচ্ছে। মুরগির সাথে আছে বাঁশের কোরল আর নান রুটি। মেয়েরা বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে। আদি কাজের ফাঁকে ফাঁকে সিমথির দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু সিমথি একবারের জন্য আদির দিকে তাকায়নি।
আদি : আমার অভিমানী অর্ধাঙ্গিনী তোর অভিমানের স্রোতে আমি ভেসে যাচ্ছি। এটা কি তুই সত্যিই বুঝতে পারছিস না। ( মনে মনে)
সায়ন : এহেম এহেম তোর চোখের দৃষ্টি টা এদিকে আন ভাই চিকেন তো পুড়িয়ে ফেলছিস।
আদি : তোর বোন যে আমার অন্তর পুড়াচ্ছে সেদিকে তো তোর খেয়াল নেই।
ইফাজ : সিমথি যতটা রাগী, বদমেজাজি। আপন মানুষের কাছে ততটা আহ্লাদী। তুমি ওভাবে ধমক দেওয়ায় অভিমান হয়েছে। আবার ও অল্পতেই খুশি। এখন বাকিটা দেখার দায়িত্ব তোমার।
ইফাজের কথায় আদি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। অতঃপর কিছু একটা মনে হতেই ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠে। সায়ন সেদিকে তাকিয়ে হাসে। ওর যা বোঝার বুঝে গেছে।
আফিন : তুই কি দ্য কিলার কুইনের ননদের প্রেমে পড়েছিস নাকি সূর্য।
আচমকা আফিনের কথায় সূর্য হকচকিয়ে যায়। আদিবার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকায়। আফিন আর আহানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঘাবড়ে যায়। আমতা আমতা শুরু করে। কি বলবে সাতাশ বয়সী যুবক হয়ে একুশ বয়সী একটা বাচ্চার মেয়ের প্রতি ভালোবাসাময় অনুভূতি অনুভব করছে। এটা শুনলে ওর দুই বন্ধু নির্ঘাত জীবন হারাবে।
আহান : কি রে চুপ কেনো।
সূর্য : ক কি আ আবোল তাবোল বকছিস। আ আমি আসছি।
সূর্য কথা কাটাতে উঠে চলে যায়। আদিবা আড়চোখে সূর্যর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আটকে রাখা নিঃশ্বাস ছাড়ে। সূর্যকে এভাবে সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদিবার শ্বাস আটকে আসছিলো। ভাগ্যিস সূর্য উঠে গেছে নয়তো অক্সিজেনের অভাবে হয়তো মা/রা/ই পড়তো আদিবা।
অতঃপর রাতে খাওয়া-দাওয়ার পার্ট চুকিয়ে সবাই বারোটা অবধি আড্ডা দেয়। কাল সন্ধ্যার দিকে সবাই রওনা হবে এটা ঠিক করে যে যার রুমে যায়।
সিমথি নিজের রুমে এসে থমকায়। পুরো রুম অন্ধকার। ব্যাপার কি। আদি তো প্রায় মিনিট চল্লিশের মতো হবে এসে গেছে। তবে বোধহয় ঘুমিয়ে গেছে। সিমথি গাল ফুলিয়ে লাইটের সুইচের দিকে অগ্রসর হয়। তখনই পুরো রুমে লালচে লাইটের আলো ছড়িয়ে পড়ে। সিমথি চমকায়। পুরো রুম গোলাপ দিয়ে ডেকোরেশন করা। বাতাসের সাথে চেনা ঘ্রাণ নাসারন্ধ্রে পৌঁছাতেই সিমথি চোখ বুঁজে শ্বাস নেয়। এসবকিছু আদির পাগলামি। সিমথি পেছন ফিরে থমকায়। আদি নেভি ব্লু শার্ট পড়ে পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। লাল আলোয় মুখ টা ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে। সিমথি একটা শুকনো ঢোক গিলে। নিজেকে শান্ত করে ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু আদির গলায় চির পরিচিত আবৃত্তি শুনে থমকায়।
” পরের জন্মে বয়স যখন ষোলই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো
মনে থাকবে।
সিমথি নিশ্চুপ আদি সিমথি ঝাকায়।
আদি : কি হলো মনে থাকবে
সিমথি : মনে থাকবে
” বুকের মধ্যে মস্তো বড় ছাদ থাকবে শীতল পাটি বিছিয়ে দেবো।
সন্ধ্যে হলে বসবো দুজন
একটা দুটো খসবে তাঁরা
হঠাৎ তোমার চোখের পাতায়
তারার চোখে জল গড়াবে
ক্লান্ত কবি গান গাইবে
তখন আমি চুপটি করে
দু’চোখ ভরে থাকবো চেয়ে
মনে থাকবে?
সিমথি : মনে থাকবে।
আদি সিমথির পেছন দাঁড়িয়ে চুলে মুখ গুঁজে
এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেনো
এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে যেনো
মনে থাকবে?
সিমথি : ম মনে থাকবে
এই জন্মের পরিপাট্য সবার আগে ঘুচিয়ে দেবো
তুই কাঁদলে গভীর সুখে
এক নিমিষেই সব টুকু জল চুষে নেবো
মনে থাকবে?
সিমথি : মনে থাকবে।
আর যা কিছু হই বা না হই পরের জন্মে তিতাস হবো
দোলমঞ্চের আবির হবো শিউলিতলার দুর্বো হবো
শরতকালের আকাশ দেখার অন্তহীন সকাল হবো
মনে থাকবে?
সিমথি : মনে থাকবে
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে বলতে ভীষণ লজ্জা করছে
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে বলতে ভীষণ লজ্জা করছে
ভীষণ ভীষণ লজ্জা করছে
পরের জন্মে তোমায় নিয়ে
মনে থাকবে
সিমথি : মনে থাকবে
এই জন্মের দূরত্ব টা পরের জন্মে ঘুচিয়ে নেবো
মনে থাকবে
আবেগে সিমথি অভিমান ভুলে আদিকে ঝাপটে ধরে গলায় চুমু খায়। অতঃপর ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে
সিমথি : মনে থাকবে।
চলবে,,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)