মুগ্ধতায় মুগ্ধ পর্ব-১০

0
694

#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_10
.
🍁
ভার্সিটির মাঠের মধ্যে বসে গল্প করছে তিথি আর মুগ্ধতা।সাথে যোগ দিয়েছে অনেকে।উপর তলা থেকে অপলকভাবে মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ।আজ মুগ্ধতা কে সত্যি অন্য রকম লাগছে।হোয়াইট ড্রেস আপ ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক এতেই মিষ্টি লাগছে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।মুগ্ধতা যার মুখে আজ পর্যন্ত মৃদু হাসি ছাড়া বিকট শব্দ করে হাসি দেখেনি মুগ্ধ।এইটুকু হাসিই যেন মুগ্ধ কে পাগল করার জন্য যথেষ্ট।মেয়েটার মুখে অদ্ভুত এক মায়া আছে যে মায়ায় আটকে গেছে মুগ্ধ।চাইলেও সেই মায়া থেকে বের হওয়া সম্ভব নয় ওর।মেয়েটা অন্য সবার থেকে একদম আলাদা কেমন চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে।তবে বেশ ঝগড়াটে সেটা প্রথম দেখাতেই বুঝতে পেরেছে ও।আজ পর্যন্ত খুব বেশি কারো সাথে কথা বলতেও দেখেনি।ক্লোজ ফ্রেন্ড বলতে একমাএ তিথি।তাছাড়া কয়েকজনের সাথে কথা বললেও ওটা জাস্ট ফর্মালিটি।এক ধ্যানে তাকিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে মুগ্ধতায় মুগ্ধ হচ্ছে মুগ্ধ।হঠাৎ কাঁধে কারো হাত পেয়ে চমকে উঠে মুগ্ধ।পেছন ফিরে তাকিয়ে হতবাক।সকলের উদ্দেশ্যে বলল…..
.
_____একি!তোরা সবাই।ভ্রু কুচঁকে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন…?
.
রিদিঃকি মামা!এখানে দাঁড়িয়ে কি দেখছো…?আকাশের চাঁদ আজ মাটিতে নেমে এসেছে নাকি…?
.
সকলের কথায় বেশ লজ্জা পেল মুগ্ধ।মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো…..
.
_____না রে বাবা! সেরকম কিছু না।এমনি এখানে দাঁড়িয়ে বাহিরটা দেখছিলাম।
.
মুগ্ধর কথায় ভুবন কাঁপানো হাসি দিয়ে উঠলো সবাই!আচমকা সকলকে হাসতে দেখে ভ্র কুঁচকে তাকালো মুগ্ধ।হাসি থামিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে হৃদয় বললো….
.
_____এমনি দাঁড়িয়ে ছিলিস তাও আমাদের ছাড়া!বিশ্বাস করতে পারছি না।যে মুগ্ধ বন্ধুদের ছাড়া এক মিনিটও থাকতে পারে না।সেই আজ এতক্ষণ ধরে এখানে আছে।তাছাড়া মুগ্ধতা যখন নিচে বসে আছে তখন তুই তো উপরে থাকবিই এটাই স্বাভাবিক।হঠাৎ স্নেহা বললো…..
.
_____এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে না দেখে সামনা সামনি বসিয়ে দেখছিস না কেন…?আন্টি অসুস্থ তোর বউ দেখার জন্য কতদিন ধরে তোকে বলে চলেছে এবার সেই ব্যবস্থা কর ভাই।
.
স্নেহার সাফ কথায় চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম মুগ্ধর।একটু তাকিয়ে ছিলো আর এই মেয়ে কিনা বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে গেলো।মুগ্ধ বললো…..
.
____এবার থামবি তোরা!!একটু দেখছিলাম কারণ ওকে দেখতে ভালো লাগে আমার।মুগ্ধতার দিকে মুখ করে ওই চোখ দুটোর দিকে তাকালে কোথায় যেন হারিয়ে যাই।ওর মুখখানা দেখলে অদ্ভুত এক প্রশান্তি পাই মনে।
.
কথাগুলো আনমনে বলে চলছে মুগ্ধ।রাতুল,হৃদয়,রিদি ও স্নেহা মুখ চেপে হাসছে।সেদিকে খেয়ালই নেই তাঁর।হঠাৎ রিদির কথা শোনে হুশ ফিরলো মুগ্ধর।
.
_____মেয়েটাকে ভালোবাসিস…?
.
স্নেহার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো মুগ্ধ!ভালোবাসা!!স্নেহার কথার প্রতিওোরে বললো মুগ্ধ…….
.
ভালোবাসি কিনা জানিনা!তবে ওকে আমার চাই।ওর দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হতে চাই।ওর হাতে ধরে চলতে চাই।কথাগুলো বলে চলেছে মুগ্ধ।হঠাৎ কারো গলা পেয়ে পেছন ফিরে তাকালো মুগ্ধ।…..
.
আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম মুগ্ধতার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছো তুমি।কিন্তু ভাইয়া মুগ্ধতা প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাস করে না।ভালোবাসার প্রতি ঘৃণা জমে আছে ওর।ভালোবাসার উপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে।কাউকে বিশ্বাস করে না।
.
তিথির মন্তব্য শোনে হতবাক সবাই।তাহলে কি মুগ্ধর ভালোবাসার ফুল ফোঁটার আগেই ঝরে যাবে।এটাই মুগ্ধর ফার্স্ট লাভ তবে কি ফার্স্ট লাভই জীবন থেকে মুছে যাবে।না কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না।তিথির কথার জবাবে স্নেহা বললো…..
.
____কি বলছো তিথি….?এটা যদি হয় তাহলে মুগ্ধর কি হবে।যদিও মুগ্ধ মুখে কিছু বলছে না।কিন্তু ওর আচার-আচরণে এটা স্পষ্ট ও মুগ্ধতাকে খুব ভালোবাসে।ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবে এটা জানি।কারণ কাউকে না পেলে কেউ মরে যায় না কিন্তু বিশ্বাস করো ভালো থাকবে না।
.
~~~আমি জানি আপু আর বুঝতেও পারছি।কিন্তু যেটা সত্যি সেটাই বলছি।আরো আগে ভাইয়াকে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভাইয়া যদি উল্টা পাল্টা কথা বলে তাই ভয়ে বলিনি।আজ সাহস যুগিয়ে বলতে এসে তোমাদের কথা শুনে আরো সাহস পেলাম।মুগ্ধতা কাউকে বিশ্বাস করে না আপু এটাই সত্যি।ভাইয়া মুগ্ধতা কে জয় করতে পারে তাহলে আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হবে না।কারণ আমি চাই মুগ্ধতা ভালো থাকুক।আমি সবসময় চাই এমন কাউকে যেন ও পাশে পায় যে নিজের থেকেও বেশি ওকে ভালোবাসে।ওকে ভালো রাখে আর আমি জানি তুমি ওকে খুব ভালো রাখবে।কিন্তু ভাইয়া মুগ্ধতা এসব মানবে না।
.
তিথির কথা শোনে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধ!নিচের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধতা কে একবার দেখে নিলো।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিথিকে উদ্দেশ্য করে বললো…..
.
____মুগ্ধতা কাউকে বিশ্বাস করে না…?আবার তোর কথা অনুযায়ী ভালোবাসায় বিশ্বাস করে না।তাহলে কি মুগ্ধতা….না মানে তুই কিছু মনে করিস না।ও কি কাউকে ভালোবাসত….? কেউ কি ওকে ঠকিয়েছে তিথি….?
.
মুগ্ধর কথা শোনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো তিথি।মুগ্ধ কে কীভাবে কথাটা বলবে বুঝতে পারছে না।তাও ওকে বলতে হবে….কারণ রঙিন স্বপ্ন দেখিয়ে যদি আদনানের মতো ওকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে চলে যায়।তখন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না তিথি।যদিও মুগ্ধ সেরকম ছেলে নয় তবুও মানুষ পরিবর্তনশীল প্রাণী।কখন কীভাবে কে বদলে যায় কেউ বলতে পারবে না।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো….
.
জানিনা ভাইয়া সত্যি টা জানার পর তুমি ওর সম্পর্কে কি ভাববে।আসলে ও একটা ছেলেকে ভালোবাসতো।ছেলেটাও ওকে পাগলের মতো ভালোবাসতো।বিয়েও ঠিক হয়েছিল কিন্তু বিয়ের দিন ছোট একটা বিষয় নিয়ে ওকে বিয়ের আসরে ফেলে চলে যায়।তারপর সবটা খুলে বললাম ভাইয়াকে।
.
সবকিছু শোনে বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধ।যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে সে অন্য কাউকে ভালোবাসতো।ভাবতেই বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।কি করবে এখন মুগ্ধ ভাবতে পারছে না।পাশ থেকে রাতুল বললো……
.
____আচ্ছা ছেলেটাকে ভালোবাসতো কিন্তু এত কিছুর পর নিশ্চয় আর সেই ভালোবাসা কাজ করবে না।তাই টেনশনের কোনো কারণ নেই।এখন মুগ্ধর ভালোবাসা দিয়ে ঠিক ওর মনে জায়গা করে নেবে।
.
তিথিঃহুম সেটা পারবে যদি ভাইয়া চায়।ভাইয়া ও খারাপ কোনো মেয়ে নয়।তাছাড়া আজকালকার মেয়েরা সম্পর্কে জড়িয়ে রিলেশনশের নামে নোংরামো করে বেড়ায়।কিন্তু ও সেরকম নয়।শুধু সম্পর্ক ছিলো আর কিছু নয়।এবার ডিসিশন তোমার….!!পাশ থেকে আনমনে রাতুল বললো….
.
____ভালোবাসার মানুষটাকে যখন চোখের সামনে দেখে তাঁকে ভালোবাসি কথাটা বুঝাতে না পারার মতো ব্যর্থতা আর কিছুতেই নেই।কেউ যদি বুঝতে না চায় পৃথিবীর কেউ তাঁর মনের কোণের ফিলিংটা বুঝাতে পারে না।এখন মুগ্ধতা যদি বুঝতে না চায় তাহলে মুগ্ধর কিছু করার নেই।
.
এখনও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধ।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতার দিকে।বড্ড ভালোবাসে মেয়েটাকে।এখন ওর কাছ থেকে দূরে সরে আসা কি আদৌও সম্ভব।না কিছুতেই সম্ভব নয়।ওর অতীত জেনে ওর প্রেমে পড়েনি মুগ্ধ।তাহলে আজ কেন ওর অতীত শোনে পিছিয়ে আসবে মুগ্ধ।কিছুতেই পিছাবে না।হঠাৎ সবাইকে অবাক করে বাঁকা হেসে বললো…..
.
____তোরা এত টেনশন করিস না!তিথি তুই তো জানিস যেভাবেই হোক আমার প্রয়োজন আমি ঠিক মিটিয়ে নেই।মুগ্ধতাকে আমার প্রয়োজন এটাও ঠিক মিটিয়ে নেবো আমি।ও পূর্বে একজনকে ভালোবাসত।এখন আমাকে ভালোবাসবে।
.
কনফিডেন্টলি কথাটা বললো মুগ্ধ।ওর কথা শোনে উপস্থিত সবাই অবাক।চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেছে।পাশ থেকে হৃদয় বললো…..
.
____এতটা কনফিডেন্টলি কথাটা বলছিস কি করে….?তোর কি মনে হয় একটা ভাঙ্গা মনের মেয়ে এত সহজে তোকে আপন করে নিবে!কক্ষনো নিবে না।
.
~~~উফ বললাম না এত চিন্তা করিস না।যা হবে পরে দেখা যাবে…!!আর শোন ভাঙ্গা মনের মেয়েরা কি পরে আর কাউকে ভালোবাসে না!!আশপাশ দেখে বল।ভাসে তো!!তাহলে মুগ্ধতাও ভালোবাসবে বলেই কাউকে কিছু না বলে চলে গেলো মুগ্ধ।হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সবাই।
.
.

দুপুর দুইটা…..
মিতুলের বাসার পাশের টং দোকানে বসে আছে আফিফ।এই সময়ে সেদিন মুগ্ধতা কে রাস্তায় পেয়েছিলো আফিফ।তাই সেই আশায় আজও এখানে এসেছে।আজ যে করেই হোক মিতুলের সাথে কথা বলতে হবে তাঁকে।কথাটা বলাটা প্রায় জরুরি হয়ে পড়েছে ওর কাছে।অনেক্ষণ বসে থাকার পরও মিতুলের দেখা পেলো না।বিরক্ত হয়ে বাসায় ফিরার কথা চিন্তা করলো পরক্ষণেই আবার ভাবলো মিতুলের সাথে কথা বলতেই হবে।প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ওর দেখা পেলো না।মিতুলের বাসায় ঢুকার সাহস করেও করে উঠতে পারলো না।তাই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলো আফিফ….!!
.
.
অধরার সাথে বসে গল্পে মেতেছে মুগ্ধতা।অনেকদিন পর প্রাণ খুলে হাসছে ও।পুরোনো দিনের মজার স্মৃতি গুলো মনে করে হেসে চলছে দুজনে।তখনই মুগ্ধতার ডাক পড়লো।আফিফের বাবা ডেকে পাঠিয়েছেন মুগ্ধতাকে।একান্তে মুগ্ধতার সাথে কথা বলতে চান উনি।
.
আঙ্কেলের রুমে দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধতা।রুমে আন্টিও আছেন।আফিফের বাবা কিছু বলবেন কিন্তু বলছেন না।রুমে পিনপতন নীরবতা।হঠাৎ নীরবতা ভেঙ্গে এক নিঃশ্বাসে বললেন আফিফের বাবা…….
.
~~~মুগ্ধতা আগামী সপ্তাহে তোমার বিয়ে….!!
.
.
#চলবে…….