#মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥
#Labiba_Islam_Roja
#Part_15
.
🍁
চিন্তিত মুখে শুয়ে আছে মুগ্ধতা।কি করে কি করবে বুঝতে পারছে না।যতবার উঠার চেষ্টা করছে ততবারই আরো চেপে ধরছে মুগ্ধ।যেন ঘুমে নয় জেগেই আছে ও।কিছুটা নড়েচড়ে ওকে জড়িয়ে আবারও শুয়ে পরছে।উপায়ান্তু না দেখে ওকে ডাকতে শুরু করলো মুগ্ধতা।কিন্তু কথাগুলো যেন কানেই যাচ্ছে না ওর।তবুও বিরক্ত গলায় এক নাগারে ডেকে চলেছে….!!
.
~~~এই যে শুনছেন….?
.
কয়েকবার ডাকার পর বিরক্তি ভরা চোখে পিটপিট করে তাকিয়ে আবারও চোখ বন্ধ করে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো মুগ্ধ…..
.
_____না শুনতে পাচ্ছি না!ঘুমিয়ে আছি বলে আবারও চোখ বন্ধ করে মুগ্ধতা কে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
.
মুগ্ধুর এমন ব্যবহারে থ হয়ে গেলো মুগ্ধতা।আজব যদি ঘুমিয়েই থাকেন তাহলে কথা বলছে কি করে।আর ঘুমাবি ঘুমা না তাতে আমার কি! আমাকে ছেড়ে ঘুমালেই তো হয়।কর্কশ কন্ঠে আবারও বলে উঠলো মুগ্ধতা…..
.
~~~আরেহ!ঘুমিয়ে আছেন যখন তখন কথা বলছেন কি করে।ঘুমে নেই তাই তো কথা বলতে পারছেন।এই যে শুনুন আমাকে ছেড়ে দিয়ে তবে ঘুমান।আমি আপনার কোলবালিশ নই যে ইচ্ছে মতো চেপে ধরবেন বুঝছেন…!!
.
____ধুর তুমি আমার কোলবালিশ হতে যাবে কেন…?তুমি আমার বউ!একমাএ বউ।যাকে আমার যেরকম ইচ্ছা সেরকম ভাবেই ধরতে পারি।
.
মুগ্ধর কথায় শকড মুগ্ধতা।ঘুমের মধ্যে মানুষ স্বাভাবিকভাবে এত কথা বলে কি করে…?তাহলে সত্যি সত্যি উনি ঘুমে নয় জেগে আছেন।রাগে সারা শরীর রিরি করছে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো…..
.
~~~~আপনি আমাকে ছাড়বেন কি না…?দেখুন ভালো হচ্ছে না কিন্তু!
.
কোনোকথা না বলে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়লো মুগ্ধ।অনেক্ক্ষণ বকবক করার পরও কোনোকথা বললো না।অনেকক্ষণ পর বললো মুগ্ধ……
.
_____এই তুমি এত নড়াচড়া করো কেন…?স্থির হয়ে শুয়ে থাকতে পারো না।নিজে ঘুমাবে না বলে অন্যকেও ঘুমাতে দেবে না। ভারী হিংসুটে মেয়ে তো তুমি।
.
ওর কথায় ক্ষেপে গেলো মুগ্ধতা।ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো…..
.
~~~আপনার ঘুম পাচ্ছে তো ঘুমান না।কে মানা করেছে।আমি শুধু বলছি আমাকে ছাড়েন আমি এখন উঠবো।তারপর আপনি যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ ঘুমান।সারাদিন সারারাত চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ৭২ ঘন্টা ঘুমান আমি ডাকা তো দূরে থাক ফিরেও তাকাবো না।কিভাবে নির্লজ্জের মতো শুয়ে আছেন।ছাড়ুন আমায়।
.
চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে হাত ছেড়ে দিলো মুগ্ধ।একটু আলগা হতেই এক লাফে উঠে বসলো মুগ্ধতা।প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিলো।আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে হয়তো নিশ্বাস আটকেই মারা যেত সে।মুগ্ধ এখনও শুয়ে আছে।আধো আধো চোখে মুগ্ধতার অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে।হঠাৎ চোখ বুজা অবস্থায় বলে উঠলো মুগ্ধ……
.
_____আচ্ছা আমাকে কি তোমার কাঠ মনে হয়…?জানো সারারাত আমার বুকে শুয়ে ছিলে।একচুলও নড়তে দাও নি আমায়।তাই এই সাত সকালে তোমার উপর শোধ তুললাম।এবার ঠিক আছে বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।
.
মুগ্ধর কথায় অবাকের সপ্তম আকাশে পৌঁছালো মুগ্ধতা।মুগ্ধতা সারারাত ওর বুকে শুয়ে ছিলো।মোটেও না।যদি এটা হয় তাহলে কি লজ্জা!কি লজ্জা!লজ্জায় লাল হয়ে গেলো মুগ্ধতা।তখনই আবার মুগ্ধ বললো……
.
~~~এত লজ্জা পাচ্ছ কেন…?জানো লজ্জা পেলে তোমাকে দারুন দেখায়।আমার সামনে কখনও কোনোকিছুর জন্য লজ্জা পেও না।পেলে কিন্তু খবর আছে।কারণ তোমার লজ্জা রাঙ্গা মুখ দেখলে…..কথাটা শেষ করেও করলো না।আটকে গেলো।
.
মুগ্ধতা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।লজ্জা পেলেও দোষ।আজব লোক তো।
.
_____এই যে শুনুন।আমি নিজেকে খুব ভালো করে চিনি।আমি কখনও কারো উপর হাত পা তুলি না সেই জায়গায় আপনি বলছেন।না না সব মিথ্যা।এইসব আপনি করেছেন আর এখন দোষ দিচ্ছেন আমায়।
.
~~~~আমিও নিজেকে খুব ভালো করে চিনি বুঝছো যে ছেলে কোলবালিশ ছাড়া ঘুমায় সে কিনা তোমাকে জড়িয়ে ঘুমাবে!ইম্পসিবল ।তাছাড়া তোমার অনেক পরে আমি ঘুমিয়েছি।আমি ঘুমাতেই দশ মিনিটের মাথায় ধুরুম করে আমার বুকে এসে শুয়ে পড়লে।তারপর সারারাত নড়তে না দিয়ে কি অত্যাচারটাই না করলে উফ!।আচ্ছা এটা অস্বীকার করার কি আছে বুঝতে পারছি না।
.
_____কারণ আছে!!যেই কাজটা আমি করিনি সেটার দায়ভার কেন আমি নিতে যাবো।নিব না!
.
~~~তোমার যা ইচ্ছা তাই করো।আমি ঘুমাবো আর ডিস্টার্ব করো না।সবাইকে বলো আমার ঘুম ভাঙলকে উঠে পরবো।
.
.
♥
সকালের ফোনের টুংটাং শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো মিতুলের।এই মূহুর্তে এই শব্দটাকে পৃথিবীর সবথেকে বিচ্ছিরি আর বিরক্তিকর মনে হচ্ছে ওর।প্রথম বার রিং হয়ে কেটে গেলো।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেকেন্ডবার কল আসলো এবার কানের মধ্যে বালিশ চেপে শুয়ে পড়লো।আবার কি ভেবে চোখ খুলে অলস হাতে ফোন নিলো।ফোনের স্কিনে আফিফের নাম দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো ওর।ফোন রিসিভ করে আধো আধো গলায় বললো
.
____হ্যালো…..
.
অপর পান্ত থেকে বললো…..
.
~~~শুভ সকাল।কি মহারাণী মনে হয় এখনও ঘুমিয়ে আছো।
.
আফিফের কথায় মুচকি হাসলো মিতুল।হাসির রেখা ধরে রেখে বললো…..
.
_____হুম!!শুভ সকাল।আপনি এত সকালে…?এনি প্রবলেম…?
.
~~~আফিফ কিছুটা হাসলো।এখন আপনার জন্য সকাল হলেও আমার জন্য প্রায় দুপুর।বেলা এগারোটায় সকাল কোথায় পাবে হুম।আর হ্যাঁ আমি বুঝি শুধু নিজের প্রবলেমের জন্যই কল করি(অভিমানী সুরে)।এমনি বুঝি কল দেই না
.
নিজের বলা কথায় নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো মিতুল।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এগারোটার কাটা ছুঁইছুঁই।
.
_____আরে বাবা আপনি কথাটা ওইভাবে নিচ্ছেন কেন…?আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম তাই কবে যে এতটা বেলা হয়েছে বুঝতে পারিনি ভাবলাম সকাল হয়েছে সবে আর তার মধ্যেই আপনার কল।তাই বলছিলাম।
.
~~~হুম!! অবশ্য প্রবলেম একটা আছে।
.
_____কি প্রবলোম…?
.
~~~আজ মুগ্ধতার রিসেপশন সেখানে আমাদের সাথে তুমিও যাবে!
~~~সরি সরি!কিছু মনে করবেন না।আসলে আমি আজ যেতে পারবো না।আপনারা যান এনজয় করেন।
.
_____সত্যি আসবেন না…?
.
~~ ~ নাহ!সম্ভব হলে যেতাম।কিন্তু বুঝতেই পারছেন।
.
মিতুলকে আর জোর করলো না আফিফ।কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দিলো।মেয়েটা আসছে না শুনে নিমিষেই বুক ভারী হয়ে উঠলো ওর।তাহলে কি মিতুল ওকে চায় না।তাই ওর সঙ্গে থাকতে চায় না বলে আসতে চাইলো না।আফিফ কি তবে মরীচিকার পেছনে ছুটছে। যা ওর নয় তাকে আকড়ে বাঁচতে চাইছে।নাহ আর কিছু ভাবতে পারছে না আফিফ।আজ বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার।কিভাবে মুখের উপরে বলে দিলো আসতে পারবে না।ও কি বুঝে না কেন আফিফ এসব করে।হাজারো অভিযোগ মিতুলকে ঘিরে।যেই অভিযোগ গুলো জমা পড়েছে আফিফের মনের ডাক বাক্সে।
বেলা বারোটা…!! ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে এক ঝাঁক তরুন-তরুণী।যারা নিজেরা গল্পে আড্ডায় মেতে উঠেছে।রিদি,স্নেহা,রাতুল,হৃদয় সবাই এসেছে।তাঁদের সাথে যোগ দিয়েছে মোহনা।মুগ্ধতা রান্নঘরে দাঁড়িয়ে আছে।ওর শ্বাশুড়ির কড়া হুকুম তার বৌমা যেন কোনো কাজ না করে।তবুও ট্যাঠার মতো দাঁড়িয়ে আছে।এখন পর্যন্ত মুগ্ধ উঠার নাম গন্ধ নেই।এই নিয়ে তিনবার মুগ্ধ কে তোলার জন্য ওর মা পাঠিয়েছেন মুগ্ধতা কে।কিন্তু বরাবরই ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে সে।রান্নাঘরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎ তিথিকে দেখে দৌড়ে এগিয়ে গেলো মুগ্ধতা।দুজন দজনকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করলো।এতক্ষণে নিজের আপন বলতে কাউকে পাশে বসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো মুগ্ধতা।এই মেয়েটা ওর সুখ দুঃখের সাথী।ওর খারাপ সময়গুলোতে ওকে অনেক সাপোর্ট করেছে।পাশে থেকেছে।সাহস যুগিয়েছে।বন্ধু শব্দ টা ছোট হলেও এর মর্মাত অনেক।একজন ভালো বন্ধু আয়নার মতো যার মধ্যে নিজের প্রতিবিম্ব দেখা যায়।
.
সকলের সাথে আড্ডায় মেতেছে মুগ্ধতা আর তিথি।সোফার এক কোণায় তিথির পাশে গুটি-শুটি মেরে বসে আছে ও।সিনিয়র সবার সামনে এভাবে বসে ইজিলি কথা বলতে পারছে না।হয়তো হঠাৎ হওয়ায় এমন হচ্ছে।এদিকে তিথির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতুল।তিথি মেয়েটাকে দেখলেই রাতুল কেমন পাগল হয়ে যায়।যেন নিজের মধ্যেই থাকে না।ওর মধ্যে হারিয়ে যায়।তিথি মেরুন কালারের ড্রেস পড়েছে।ছোট ছোট ভ্রু যোগলোর মাঝখানে সাদা সাদা ডাগর ডাগর চোখ।হালকা পাতলা ঠোঁট।হঠাৎ রাতুলকে ঠ্যাস দিয়ে রিদি বলে উঠলো……
.
___আচ্ছা তোর ব্যাপারটা কি বলতো…?যখনই তিথি সামনে আসে তখনই হা হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকিস কেন….?তোদের মধ্যেও কিছু চলছে নাকি…..?
.
ওর কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো রাতুল।রিদি বুঝে ফেলেছে নাকি সর্বনাশ।
.
~~~ধ্যাৎ এমনি তাকিয়ে ছিলাম।শুধু তাকালেই কিছু চলতে হবে নকি পাগলি কোথাকার।
.
______তুই কিছু বলছিস না তো!ডোন্ট ওরি আমি ঠিক জেনে যাবো দেখে নিস।
.
রিদির প্রতিওোরে আর কিছু বললো না রাতুল।এখন কথা বাড়িয়ে কোনো লাভ নাই।রিদি একবার সন্দেহ করেছে মানে সব বের করে তবেই ছাড়বে।হঠাৎ সবাইকে অবাক করে তিথিকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়লো রিদি……
.
~~~এই তিথি তুমি নাকি প্রেম করছো…?
.
রিদির কথায় হালকা বিষম খেলো তিথি।তিথির মুখের দিকে বোকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।বেস্টু প্রেম করছে আর মুগ্ধতা জানে না।ওকে জানায় নি অথচ রিদি জেনে গেছে হাউ স্টঞ্জ!তিথি আর মুগ্ধতা দুজনে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো আর মাথা নাড়িয়ে সে প্রেম করছে না বলে মুগ্ধতা কে আশ্বস্ত করলো।
.
_____তোমায় এই কথাটা কোন রাম ছাগল বলল আপু…?আমি প্রেম করছি নিজেও জানি না আবার আমার বেস্টুও জানে না।এ কেমন প্রেম আপু।
.
তিথির কথায় ভুবন কাঁপানো হাসি দিয়ে উঠলো সবাই।হাসি থামিয়ে হৃদয় বলল……
.
~~~রাম ছাগল!!কি সুন্দর নাম তাই না রিদি।এটা যার বিয়া তার খবর নাই,পাড়া পরশীর ঘুম নাই হয়ে গেলো না রিদি।
.
সকলের কথায় খুব বিরক্ত রিদি।কই ভেবেছিলো কিছু একটা বের করবে তা আর হলো না।তাই বললো…..
.
_____কোন এক রাম ছাগল হবে।তবে আমাকে বলে নি ডিরেক্ট তোমরা প্রেম করছো।আসলে ওই রাম ছাগলের হাবভাব দেখে আমি আন্দাজ করেছি।
.
~~~আন্দাজে কোনো কথা বলো না আপু।জেনে শুনে তারপর বলবা।আর হ্যাঁ রাম ছাগল টা কে গো…?
.
রাতুলের দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো রিদি।মুখ ছোট করে বসে আছে।তিথি এভাবে সবার সামনে রাম ছাগল বানিয়ে দিলো।এখন চিন্তায় পড়েছে রাতুল যদি ওর নামটা বলে দেয়।আর রিদি যেই ধরণের মেয়ে বলে দিতেও পারে।চোখ মুখের ইশারায় নাম বলতে বারণ করছে রাতুল।তাও রাতুলকে ভয় দেখাচ্ছ……
.
_____রাম ছাগলটার নাম…..ধুর বোকা মেয়ে রাম ছাগল তে রাম ছাগলই হয়।ওদের আবার আলাদা কোনো নাম হয় নাকি।
.
এতক্ষণে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো রাতুল।যাক অবশেষে বলেনি।
.
মুগ্ধতা কে উদ্দেশ্য করে আবারও মুগ্ধ কে ঘুম থেকে তোলতে বললেন ওর মা।তিনবার গিয়ে ও ব্যর্থ এবারও যদি ব্যর্থ হয়।কিন্তু না এবার আর ব্যর্থ হলে চলবে না।যেভাবেই হোক এখন ওকে তুলবেই তুলবে।রুমে গিয়ে বার দুয়েক ডেকে একটা কান্ড ঘটালো মুগ্ধতা।মুগ্ধতা এমন কিছু করতে পারে ভাবতেও পারেনি মুগ্ধ…..!!
.
.
#চলবে……