#মৃণালিনী
#পর্ব ২৬
হারুর আবার বাড়ি গিয়ে ফিরে আসতে যথেষ্টই বেলা হলো, মৃণাল অধীর আগ্রহে তার জন্যেই ঘর লাগোয়া বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলো। ছেলে ফিরে আসার আগেই হারুর মা তার পেছনে এসে দাঁড়ালো,
বউমা, হারু আমার ছোটো ছেলে, অতো কিছু বোঝে নে! ওই মেয়ে ওর মাতা ঘুরিয়ে দিয়েছে!
আহ! বউ চুপ করো! হারু কিছুই করেনি, করুণাও কিছু করেনি। ও ছেলে মানুষ সকাল সকাল কাজ সেরে পাড়ায় গিয়েছিলো, তোমাকে এ ব্যাপারে মাথা ঘামাতে হবে না, তুমি নিজের কাজে যাও!
এক ধমকে হারুর মা কে থামিয়ে দিলো মৃণালিনী, করুণার খুঁত খুঁজে বার করতে পারলেই যে নিজের ছেলে কে বাঁচাতে গিয়ে করুণার কথা বড়ো মার কানে তুলে দেবে হারুর মা সেটা ভালোই বোঝে মৃণাল। এই মুহূর্তে করুণা কে ধরিয়ে দিয়ে ওর কোনো লাভ নেই, তাতে যে আলোক আরও বেশি করে সতর্ক হয়ে যাবে এটা বুঝেই এই প্রসঙ্গ আর টেনে নিয়ে যেতে চাইলো না মৃণালিনী।
বউমা র ওপরে কতো টা বিশ্বাস রাখা যায় ভাবতে ভাবতেই হারুর মা স্থান ত্যাগ করলো। একটু পরেই আবার বস্তা কাঁধে হারু কে বাড়িতে ঢুকতে দেখেই তাকে ইশারায় ওপরে উঠে আসতে বললো মৃণালিনী। ঘরে ঢুকে হারু বউ দিদির হাতে কয়েকটা গোটানো কাগজের তাড়া তুলে দিলো, ওগুলো কে যত্ন সহকারে সেগুন কাঠের আলমারি তে তুলতে তুলতেই হারুর দিকে ফিরলো মৃণাল,
বস্তায় ঘুঁটে আছে তো? যা সাধন আচাজ্জি র বাড়ি দিয়ে আয়, জিজ্ঞেস করলে বলবি বড়ো মা পাঠিয়েছে।
মাথা নেড়ে আবার বস্তা কাঁধে তুলে নিলো হারু, ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতেও ফিরে তাকালো,
বউ দিদি করুণা কে তাড়িয়ে দিওনি গো!
মৃণাল মৃদু হাসলো,
দেবো না, যদি না তুই ওকে বলে দিস যে কাগজ গুলো তুই আমাকে দিয়ে দিয়েছিস।
ও যদি জিজ্ঞেস করে!
বলবি তোর কাছেই আছে, যেদিন ও চাইবে সেদিন আমি তোকে এগুলো ফেরত দিয়ে দেবো! ও চাইলেই তুই ওগুলো আমার কাছ থেকে চেয়ে নিবি কিন্তু, বুঝলি?
ফেরত দিয়ে দেবে!
খানিকটা অবিশ্বাসের ভঙ্গিতেই ঘাড় হেলালো হারু, ও বেরিয়ে যাওয়ার পরেই ঘরের দরজা বন্ধ করে আলমারি খুলে বসলো মৃণাল। দু তিনটে খামের মধ্যে বেশ কিছু টাকা ছাড়াও, দু একটা ছোটো খাটো হিসাবের ছেঁড়া পাতা, আর সঙ্গে শরিকি জমির গোটানো দলিল, একটা একটা করে খুলে খুলে দেখছিলো মৃণাল। টাকাগুলো যে প্রায়শই না মিলতে থাকা হিসেবেরই অংশ সেটা ছেঁড়া হিসেবগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো। এসবের হিসেব মৃণাল এবং শ্যাম সুন্দর দুজনেই জানেন।
ওকে একটু হলেও অবাক করলো জমির দলিলটা, ওটা দেখেই সৌম্যর সে রাতে বলা কথাগুলো মনে পড়ছিলো মৃণালের। ওর বন্ধু যে সৌম্য কে ঠিক খবরই দিয়েছিলো সেটা দলিল দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু সেগুলো হটাৎ করুণা নিজের কাছে রাখতে রাজি হলো কেনো সেটাই ভেবে যাচ্ছিলো মৃণালিনী। কিন্তু করুণা যথেষ্টই চালাক চতুর, হারুর মতো বোকা সে নয়, তাই তার কাছ থেকে কোনো খবর বার করা অতো সহজ হবে না বুঝতেই পারছিলো ও।
এই করতে করতেই বেলা হয়ে গেলো, নিচের থেকে আসা বড়ো মার হাঁক ডাক, থালা বাসনের আওয়াজ যখন কানে আসতে লাগলো তখন দুপুরের খাওয়ার সময় হয়ে গেছে বুঝেই তাড়াতাড়ি কাগজ পত্র আলমারিতে তুলে রাখতে লাগলো মৃণাল। কাজ সেরে দরজা খুলে বেরিয়েই হারুর মুখোমুখি হলো সে, হারু মাথা নিচু করে বউ দিদির দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো।
কি রে! তুই এখানে দাঁড়িয়ে কেনো! কিছু বলবি?
একটু অবাক গলায় বললো মৃণাল, মুঠো করা হাতে ধরে থাকা ঘুঁটের দাম ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে একটু কুণ্ঠিত গলায় বললো হারু,
বউ দিদি টাকাটা একটু তুমি কত্তা মা কে দিয়ে দেবে? আমার ভয় করছে!
হেসে ফেললো মৃণাল, বড়ো মা কে ভয় করেনা এমন লোক কেই বা আছে এ বাড়িতে, সেও কি কম ভয় পায়!
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শান্তিপূর্ন ভাবেই মিটে গেলো, আজ শ্যাম সুন্দর নেই, সৌম্য রাতে ফিরবে তাই বাড়িতে শুধুই মহিলারা। পুরুষদের খাওয়া হয়ে যাওয়ার জন্যে কোনো অপেক্ষা ছিলো না, তাই সবাই একসঙ্গেই বসে ছিলো। করুণা আজ খুব তাড়াতাড়ি নিখুঁত ভাবে তার কাজ করে যাচ্ছিলো, খুব দ্রুত এঁটো মুছে, হেঁসেল তুলে সে খাওয়ার জায়গা পরিষ্কার করে ফেললো। কুঁয়ো থেকে জল এনে যখন সে কলসি তে ভরছিলো তখন কুমুদ অবাক হলেন।
ওমা! এতো তাড়া কিসের তোর! ওবেলার কাজ এবেলায় সেরে ফেলছিস যে বড়ো!
বিকেলে বড়ো হিম পড়ে গো ছোটো মা! ঠাণ্ডায় জল তুলতে যেতে মন চায় নে,
পারুল বালা ওখানেই দাঁড়িয়েছিলেন, কুমুদ আর কিছু বলার আগেই কড়া গলায় বললেন,
তা ভালো! কাজ সেরে রাকলে খেতি কি!! তবে এঁটো কাটার বিচের কি সব ছেড়েচো মা! একোনো তো হিম পড়ে নে, তবে তুমি খাওয়া কাপড়ে কোন সাহসে জল তুলে চলে এলে? পারুল বালা একনো মরে নে!
মুখ শুকিয়ে গেলো করুণার, বিকেলবেলায় প্রায় প্রতিদিনই পারুল বালার অগোচরে এই খাওয়া কাপড়েই জল তোলে সে, মৃণাল লক্ষ্য করলেও সে এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। কিন্তু আজ সে কত্তা মার মুখোমুখি পড়ে গিয়েছে, এঁটো কাপড়ে জল তোলা তিনি কখনই মেনে নেবেন না। তাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে নখ খুঁটতে দেখে তার পিসি এগিয়ে এলো,
ও জল ফেলে দে, কলসি পুকুর তে মেজে নতুন জল তুলে নে আয়! বড়ো বাড় বেড়েছে তোর, বাপ মা খেতে দিতে পারছিলো নি, তাই কত্তা মার হাতে পায়ে ধরে তোরে নে এলুম, তা তুই তো একেনে থাকবি নি বলেই ঠিক করেচু দেকছি! কোনো কাজে মন নেই তোর, তোকে বাড়ি দিয়ে আসি চল!
প্রায় তেড়ে ভাই ঝি কে মারতে এগিয়ে আসা বামুন দিদি কে কোনোক্রমে ঠেকিয়ে দিলেন কুমুদ,
আহ! বামুন মেয়ে! করো কি! এতো বড়ো মেয়ের গায়ে হাত তুলতে আছে কখনও! যাও মা, সকরি কাপড় ছেড়ে কলসি মেজে ফেলো দিকি!
করুণার দিকে ঘুরে বললেন তিনি, চোখ মুছতে মুছতে করুণা চলে গেলো। পারুল বালা তখনও কোমরে হাত দিয়ে বিরক্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছেন, বামুন দিদির দিকে তাকিয়ে বললেন,
ও মেয়ের সংসারে মন উটেছে! তোমার দাদা কে পাত্তর দেকতে বলো!!
বামুন দিদি সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন, তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন,
লোকের জমিতে খেটে খায় কত্তা মা, আমার দাদার কি আর মেয়ের বে দেবার খেমতা আছে গো! ওসব আমি তোমার ওপরেই ছেড়েছি, একখান গতি তোমায় করতেই হবে কত্তা মা, না বললে শুনবো নি!
আমার হয়েছে যত জ্বালা, নিজের মেয়ের গতিই করতে পারলুম নে, তায় আবার পরের!! হতচ্ছাড়া শিবু তো আর এধার মাড়ালো নে সেই তেকে! তার বাপ দাদাও হয়েছে তেমনই, নিজের বাড়িতে আই বুড়ো মে বসিয়ে রেকে, তারা পরের উবগার করে বেড়ায়!
করুণার বিয়ের কথায় নতুন করে সরমার বিয়ের চিন্তা ফিরে এলো পারুল বালার, এই মুহূর্তে করুণা কে ছেড়ে শিবু ঘটকের সঙ্গে শ্যাম সুন্দর এবং সৌম্যর গুষ্টিরও তুষ্টি করতে লাগলেন তিনি। কথা অন্য দিকে ঘুরে গেলো, বামুন দিদি আপাতত তার ভাই ঝির বিয়ে নিয়ে কোনো আলোচনা হবার আশু সম্ভাবনা নেই দেখেই ওখান থেকে বিদায় নিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তেই হারু ওখান দিয়ে যাচ্ছিলো, তাকে দেখেই পারুল বালার সকালের কথা মনে পড়লো,
এই যে, নবাব পুত্তুর! সাত সকালে কোন চুলোয় গিয়েছিলে?
হারু ঘাড় চুলকাচ্ছিল, পারুল বালা তার উত্তরের জন্যে মোটেই অপেক্ষা করেছিলেন না,
ঘুঁটের ট্যাকা কই! নাকি শওর বাড়ি তোমার! দান করে এয়েচ!
হারু বউ দিদির দিকে তাকালো, মৃণাল তাড়াতাড়ি এগিয়ে এলো, আঁচলের খুঁটে বেঁধে রাখা ঘুঁটের দাম পারুল বালার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
আপনি বিশ্রাম নিচ্ছিলেন বড়ো মা, তাই আমার কাছে দিয়েছিলো,
দু পা পিছিয়ে গেলেন পারুল বালা,
তোমার আর কোনো দিনও বিচের বুদ্ধি হবে নে মা গো! সাত জাতের ছোঁয়া ট্যাকা আমার হাতে দেচ্ছ! যাও আমার কাঠের সিন্দুকের বাস্কে রেকে দাও!! তোমার জন্যেই এই অবেলায় আবার নাইতে হবে দেকচি!
আজ পারুল বালা সবার ওপরেই রেগে ছিলেন, তাই কেউ আর কথা বাড়ানোর চেষ্টা করলো না। ইতিমধ্যেই পাড়ার মহিলা মহল দুপুরের গল্পে যোগ দিতে এসে পড়েছিলো, তাদের দেখেই কুমুদ পানের বাটা হাতে ছাদের দিকে এগোলেন, মৃণাল এবং সরমাও তাঁর পেছন ধরলো। সরমা আর মৃণাল কে ছাদের সিঁড়িতে পা দিতে দেখেই তাঁর রাগ গিয়ে এবার সরমা র ওপরে পড়লো,
এই যে মা, আমি কোতা বে বে করে হেদিয়ে মরছি, আর উনি চললেন নাচতে নাচতে গপ্পের আসরে! পাড়ার মেয়ে এসে নেকা পড়া শিকে চলে গেলো, আর উনি বউ দিদির সঙ্গে সেঁটে তেকেও দু পাতা উল্টে উঠতে পারলেন নে একনো!
সরমা ওখানেই দাঁড়িয়ে পড়ে ভীত দৃষ্টিতে বউ দিদির দিকে তাকালো, কুমুদ এবার বড়ো জার দিকে ঘুরে চাপা গলায় বললেন,
আহ দিদি! থামো! ওখানে মনোরমা রয়েছে, সে শুনলে এখনই পাঁচ কান হতে দেরি হবে নে। তোমার সম্মান থাকবে তালে!
পারুল বালা থমকে গেলেন, মনোরমা কে মনে মনে তিনিও ভয় পান। এই গ্রামে তার মতো কথা ছড়ানোর দক্ষতা অন্য কারোর নেই। যে পারুল বালা সেদিনই পড়াশুনার এতো বিরোধিতা করেছিলেন সেই তিনিই আজ সরমা কে পড়ার কথা বলছেন এটা জানলে গোটা গ্রামে ছড়িয়ে দিতে মনোরমা একটুও দেরি করবে না। বিশেষ করে সেদিনের কথোপকথনে মনোরমার সঙ্গে বিভার মায়ের তাল ঠোকাঠুকি তে তিনি বিভার মায়ের পক্ষেই সায় দিয়েছিলেন সেটি মনোরমা ভোলেন নি। তাই আর কথা না বাড়িয়ে এবার জায়ের পেছন পেছন তিনিও ছাদের দিকে পা বাড়ালেন।
তারা সকলে একসাথে ছাদে পা দিতেই সকলে নড়ে চড়ে বসলো, সবাই বিভিন্ন দিকে সরে গিয়ে তাদের বসার জায়গা করে দিতে লাগলো। পারুল বালা নিজের নির্দিষ্ট জায়গায় বসতেই বাটা থেকে সাজা পান বার করে এগিয়ে দিলেন বিভার মা, সেদিনের পর থেকেই মুখরা পারুল বালার প্রতি একটু বেশীই প্রসন্ন হয়ে আছেন তিনি। বিভার মায়ের বাড়ানো পান হাতে নেবার আগেই মনোরমার তির্যক মন্তব্য ভেসে এলো,
দাও দাও, পান টা দাও দিকি আগে বিভার মা, আজ আমাদের বড়ো গিন্নি বড্ড রেগে আচেন গো! মেয়ের বে র চিন্তায় তাঁর ঘুম উড়েচে!
মৃণাল চমকে উঠলো, বড়ো মার গলার স্বর যে শাশুড়ি থামানোর আগেই এখান অবধি পৌঁছে গেছে সেটা বুঝেই বড়ো মার মুখের দিকে উদ্বিগ্ন দৃষ্টি তে তাকালো, এরপর তিনি কি করেন সেই ভয়েই সে ভীত হয়ে উঠলো। পারুল বালা ততোক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়েছেন, বাড়িতে বকা বকি, ধমক দেওয়া বড়ো মার খোলস ছেড়ে ততোক্ষনে তিনি চৌধুরী বাড়ির বড় গিন্নির রূপে ফিরে গিয়েছেন। বিভার মায়ের বাড়ানো পান মুখে তুলে, ঠান্ডা গলায় চোখ বন্ধ করে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বললেন,
বাইরের নোকের বাইরের নোক হয়েই থাকা ভালো মনোরমা, গেরস্থের নিজেদের কতায় নাই বা কতা কইলে! বাড়িতে আই বুড়ো মেয়ে তাকলে তার বে র কতা উঠবেই। তাবলে কি পাড়া পড়শীও সে ব্যাপারে নাক গলাবে! নিজের ছেলের তো দুটো চারটে পাসের গপ্পো শুনিয়ে গেলে সেদিন, তারপরও সে কেনো আই বুড়ো হয়ে ঘুরে বেড়ায় সেকি আমরা তোমায় জিগিয়েছি কখনো?
একদম জোঁকের মুখে নুন পড়লো, মনোরমা এক মুহূর্তে গুটিয়ে গেলেন, বিভার মায়ের মুখের হাসি চওড়া হলো। এরপরেই প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিলেন কুমুদ, গল্প অন্য দিকে ঘুরে গেলো, কিন্তু তারপরেও সারা সময় মনোরমা আর মুখ খুললেন না। ছাদে গল্প চলছিলো, ঘুঁটের পয়সা পেয়ে যাওয়ায় যে বড়ো মা আর সকালের বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবেন না সেটা বোঝা যাচ্ছিলো। বড়ো মা যে টাকার কথা ভুলবেন না সেটা বুঝেই মৃণাল হারু কে ঘুঁটে দিয়ে আসতে পাঠিয়েছিল, সকালের বলা মিথ্যে সত্যি বলে প্রমাণিত হওয়ায় হারু এ যাত্রা বেঁচে গেলো।
প্রায় বিকেলের দিকে শ্যাম সুন্দর ফিরে এলেন, তিনি বাড়িতে ঢুকতেই সেদিনের মতো মজলিশ বন্ধ হলো। কুমুদ নিচে নেমে গেলেন স্বামীর হাতের সামনে গামছা, ধুতি এগিয়ে দিতে, বামুন দিদি রান্নাঘরে ঢুকলেন কত্তা বাবুর ভাত বাড়তে, পারুল বালা এসে বারান্দায় পেতে রাখা চাটাই এ বসলেন। খাবার জায়গায় আসন পেতে জলের গেলাস রাখার জন্যে করুণা কে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলনা। বার দুয়েক ডাকাডাকির পর তাকে খুঁজে না পেয়ে বড়ো মা যাতে জানতে না পারেন তাই মৃণাল নিজেই আসন পেতে জলের গেলাস রেখে দিলো।
তাকে আসন পাততে দেখে ঘুরে তাকালেও মুখে কিছু বললেন না পারুল বালা, মৃণাল কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত হলো। করুণার সাহস দেখে সে মনে মনে অবাক হচ্ছিলো, এতো কিছুর পরেও যে সে কাউকে না জানিয়ে কোথাও যেতে পারে সেটা তার ধারণারও বাইরে ছিলো।
সন্ধ্যে হয়ে গেছে, বারান্দায় দাঁড়িয়ে সৌম্যর ফেরার জন্যে অপেক্ষা করছিলো মৃণাল, ঝক ঝকে জ্যোৎস্নায় আজ গ্রাম বড়ো উজ্জ্বল, অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে রাস্তা, উদগ্রীব হয়ে সেদিকেই তাকিয়ে ছিলো। হটাৎ করেই রাস্তার ধারের এক পাশে দাঁড়ানো দুটি ছায়া মূর্তির দিকে চোখ গেলো, অবয়ব স্পষ্ট না হলেও তাদের মধ্যে একজনকে করুণা বলে চেনাই যাচ্ছিলো, তাদের ভালো করে লক্ষ্য করে ওঠার আগেই, সৌম্যর গাড়ির হেড লাইট রাস্তায় স্পষ্ট হবার সঙ্গে সঙ্গেই ছায়ামূর্তি দুটি উধাও হয়ে গেলো।
সময় বদলেছে, স্বামী কে দেখে এখন আর রান্না ঘরে ঢুকতে হয় না মৃণাল কে, বড়ো মা এখন তার ব্যাপারে খুব বেশি কথা বলা ছেড়েই দিয়েছেন। ছেলে কে দেখেই কুমুদ এগিয়ে গেলেন, মৃণালও পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। হারুর মা মালপত্র নামিয়ে রাখছিলো গাড়ি থেকে, কিন্তু করুণা কে কোথাও দেখা গেলোনা।
পারুল বালা সৌম্যর আনা জিনিসপত্র তাঁর ঘরে নিয়ে যাবার জন্যে হাঁক ডাক করে তার খোঁজ করতে লাগলেন, কিছুক্ষন পরেই হন্তদন্ত হয়ে সে উদয় হলো। বাইরের দরজা দিয়ে তাকে ভেতরে ঢুকতে দেখেই মৃণাল সামনে এগিয়ে গেলো,
তুই রাস্তার ধারে কার সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলি?
করুণা যেনো আকাশ থেকে পড়লো!
আমি! আমি তো বাড়ি গিয়েছিলাম বউ দিদি! বিশ্বেশ না হয় পিসি কে জিজ্ঞেস করে দেখো!
বামুন দিদি মাথা নাড়লেন,
হ্যাঁ, বউমা ও তো আমায় বলে গিয়েছিলো গো! কদিন ধরেই বাড়ির জন্যে মন কেমন করছিলো, তাই আমিই বলে ছিলুম একটু বাপ মার সঙ্গে দেখা করে আসতে।
তাই নাকি! তা তুমি আবার কবে থেকে তাকে অনুমতি দেবার সাহস পেলে বামুন মেয়ে?
পারুল বালা কে এগিয়ে আসতে দেখেই চুপ করে গেলেন বামুন দিদি, করুণার মুখ ভয়ে শুকিয়ে গেলো।
বড্ড সাহস বেড়েচে তোর! পিসি কে জিজ্ঞেস করে বাড়ি চলে যাচ্ছিস যে বড়ো!
তোমাকে খুঁজে পাইনি গো বড়ো মা! তাই পিসি কেই বলে.…
করুণা কে এক ধমকে থামিয়ে দিলেন পারুল বালা,
আবার মিছে কথা! আমি কি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছিলুম! আর আমি বাদে কি বাড়িতে নোক নেই নাকি! বউ দিদি, ছোটো মা কেউ বাড়ি ছিলো নে বুজি!! আর সে কতাও থাক না হয়! বউ দিদি কি মিছে কথা কইছে? ভুল দেকেচে সে? তার কি আমার মতন বুড়ো মানসের চোক!
এবার কুমুদও এগিয়ে এলেন,
দুকুরে তালে তুই বাড়ি যাবি বলে কাজ সারছিলি?
করুণা একটু থতমত খেলো, সে কিছু উত্তর দেবার আগেই তার পিসি বলে উঠলো,
না গো ছোটো মা, ওই তকনি বকুনি খেয়ে এট্টু মন খারাপ করে বইসে ছেলো তাই আমিই তাকে বাড়ি পাইঠে দিলুম। বাপ মা কে দেখে এলে যদি মনটা এট্টু ভালো হয়!
আহ! বড়ো মা! ছেড়ে দাও! অনেক রাত হয়েছে!
বিরক্ত গলায় এবার বলে উঠলো সৌম্য, সারাদিন পরে বাড়িতে ফিরেই এইসব কথোপকথন তার একটুও ভালো লাগছিলো না। সৌম্যর কথায় আপাতত এই প্রসঙ্গ শেষ পর্যন্ত চাপা পড়লো। করুণা আর একটুও দেরি করলো না, চট পট দাদার আনা জিনিসপত্র তুলে ঘরে ঢোকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। পারুল বালা ভ্র কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন, কিন্তু সারাদিন পরে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরা সৌম্যর কথার বিরুদ্ধে আর কোনো কথা বললেন না।
মৃণালও আপাতত চুপ করে গেলো কিন্তু মনের সন্দেহ তার ঘুচলো না, দুপুরবেলায় সে তাড়াতাড়ি কাজ মিটিয়ে কোথায় গিয়েছিলো জানার আপাতত কোনো উপায় নেই। সৌম্য কে নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সে প্রসঙ্গ ধামা চাপা পড়লো।
ক্রমশ
#মৃণালিনী
#পর্ব ২৭
সৌম্য জামা কাপড় ছেড়ে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে নিচে নেমে এলো। শ্যাম সুন্দর ছেলের সঙ্গে একসাথে বসে খাবেন বলেই অপেক্ষা করছিলেন, আজ আলোকও সন্ধ্যে বেলায় বাড়িতেই ছিলো, তাই সবাই একসাথেই খেতে বসলো। আলোক কে এই সময় বাড়িতে দেখে মনে মনেই একটু বিস্মিত হলো মৃণালিনী, অন্য দিন আলোক সাধারণত বেশ অনেকটা দেরি করে বাড়িতে ঢোকে, তার কিছু বন্ধু বান্ধব তৈরি হয়েছে এখানে,তাদের সঙ্গে তার চণ্ডী পণ্ডপে তাসের আড্ডা বসে।
আসন পেতে জলের গেলাস রাখতে রাখতে আলোক এবং করুণার মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় হলো, মৃণাল লক্ষ্য করছিলো। সে হারু কে খুঁজছিলো, সন্ধ্যের দেখা ব্যক্তিটি হারু না আলোক সেটা জানার জন্যে ব্যস্ত হয়ে ছিলো মৃণালিনী।
বিকেল থেকেই মনোরমার কথায় বিরক্ত হয়েছিলেন পারুল বালা, তাই রাতে খেতে বসে দেওর পো র সামনে কথা পাড়লেন,
বোনের বে নিয়ে কিচু ভাবচো বাছা? সময় তো থেমে নেই! এবার কিচু ব্যবস্তা করো!
সৌম্য এবং শ্যাম সুন্দর দুজনেই খেতে খেতে মুখ তুলে তাকালো।
তোমার শিবু ঘটক কি বলছে? কোনো খবর দিতে পারছে না?
গম্ভীর গলায় বৌদির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন শ্যাম সুন্দর, পারুল বালা মাথা নাড়লেন,
সে ব্যাটার মুকে আগুন! কোনো কাজ যদি তাকে দে হয়! আরে পারবে নে সে কতা বল! তা না সে তার কতো কতা! শিককিত মেয়ে চায়! আসুক সে আর কোনোদিনও এধারে!
সরমা বৌদির দিকে তাকালো, মুখে তার খুশির ছাপ স্পষ্ট, মৃণালিনী মনে মনেই হাসলো, সেই যে গিয়েছেন শিবু ঘটক আর এবাড়ির চৌকাঠ মাড়ান নি। এখনও পর্যন্ত এ পাড়ার কারুর জন্যেই ভালো পাত্রের সন্ধান আনা সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে। সৌম্য চুপ করেই তার বাবা আর বড়ো মা র কথোপকথন শুনছিল, সত্যিই যে বোনের জন্য ভালো পাত্রের সন্ধান পাওয়া বেশ দূরহ হয়ে উঠছে, তাঁদের কথা থেকেই আন্দাজ করতে পারছিলো সে।
রাতে হেঁসেল মিটিয়ে ঘরে যেতে যথেষ্টই দেরি হয় মৃণালের, সে যখন কাজ শেষ করলো তখন হারু খেতে বসেছিলো। বামুন দিদি, করুণা আর হারুর মা রান্না ঘরে খাচ্ছিলো, হারু একা বারান্দায়। ওকে একা খেতে দেখেই মৃণাল সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,
তুই সন্ধ্যে বেলায় কোথায় ছিলি?
মৃণাল এর প্রশ্নে থালা থেকে মুখ তুলে তাকালো হারু,
বাবুর ঘরে ছিলাম বউ দিদি, পা টিপছিলুম আর রেডিও তে গান শুনছিলুম, কেনে বউ দিদি?
মৃণাল মাথা নাড়লো
না, কিছু না! এমনি! তুই খা! বাইরের দোরে খিল দিয়েছিস তো?
হারু ঘাড় হেলালো, মৃণাল আস্তে আস্তে ওপরে উঠে এলো। হারু সত্যি কথাই বলছে বুঝতে পারলো, শ্যাম সুন্দরের ঘরে ও ছিলো এতো বড়ো মিথ্যে বানিয়ে বলার মতো সাহস হারুর নেই। তাছাড়া রাতে খেতে বসে করুণা এবং আলোকের দৃষ্টি বিনিময় অনেক কিছুই পরিষ্কার করছিলো, করুণার সঙ্গে দেখা লোকটি যে আলোকই সে বিষয়ে সে অনেকটাই নিশ্চিন্ত হলো।
ঘরে ঢুকে দেখলো সৌম্য টেবিলে বই খুলে বসে আছে, ওকে দেখেই লন্ঠন নিভিয়ে দিতে বললো। রাতে শুয়ে বউয়ের কাছে নিজেই আজ বোনের বিয়ের প্রসঙ্গ নতুন করে উত্থাপন করলো সৌম্য, এতদিনে সে এই প্রসঙ্গ নিয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে।
এইবার এই ব্যাপারটা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে মৃণাল, এবার বড়ো মাও বুঝেছেন সরমার পাত্র পাওয়া যথেষ্ট মুশকিল।
মুচকি হাসলো মৃণালিনী,
ও আমি তোমার ওপরেই ছেড়ে দিয়েছি। যে করেই হোক বিমলদার সঙ্গে বিয়ে হওয়া চাই কিন্তু!
সৌম্য হাসলো, সে বরাবরই বিমল কে ভালো পাত্রের তকমাই দিয়ে এসেছে। কিন্তু তার বাবার কাছে বিমলের সম্পত্তিটাই বেশি বিচার্য হবে তার চরিত্রের থেকেও। তাই সে এ নিয়ে কথা বলতে চায় নি কখনো, কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেকটাই তার অনুকূলে, এই সম্বন্ধটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এর থেকে উপযুক্ত সময় আর হতে পারে না।
কাল বাবার সঙ্গে কথা বলবো এ বিষয়ে, বাবা কে রাজি করাতে পারাটাই আসল কাজ। বড়ো মা কে ঠিক বুঝিয়ে ফেলবো, ওনার অমত হবে না। কিন্তু হটাৎ বড়ো মা এতটা সরমার বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন কেনো বলতো? নতুন করে কিছু ঘটলো নাকি?
সৌম্যর প্রশ্নে মৃণাল হেসে ফেললো, সবিস্তারে গত কয়েকদিনের দুপুরের বিভার মা, মনোরমা এবং বড়ো মার মধ্যে হওয়া কথোপকথন স্বামীর কাছে বলতে লাগলো। বড়ো মা যে বাস্তবিকই ভয় পেয়েছেন এটা বুঝেই সৌম্যর মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। বড়ো মার বোনের পাত্র না পাওয়ার সুযোগে কি করে কার্যোদ্ধার করা যায় সে মনে মনে ভাবতে লাগলো।
একই সঙ্গে মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগলো মৃণালিনীও, সৌম্যর সফলতার ওপরেই সরমার ভাগ্য জড়িয়ে আছে।
বাবা, ভেতরে আসবো?
পরেরদিন সকালে চায়ের পরেই বাবার ঘরে ঢুকে এলো সৌম্য, শ্যাম সুন্দর হাতের কাগজ রেখে ছেলের দিকে তাকালেন, এতো সকালে এ ঘরে ছেলের উপস্থিতির কারণ বোঝার চেষ্টা করছিলেন।
সরমার জন্যে একটা ভালো পাত্রের সন্ধান ছিল, এতদিন সে ভাবে ভাবিনি, কিন্তু কাল বড়ো মা বলতে আমারও মনে হলো,
কুমুদ তখনও নিচের রান্না ঘরে নামেন নি, পাশের ঘর থেকে ছেলের গলার আওয়াজ পেয়ে এঘরে এসে উপস্থিত হলেন, স্ত্রী কে আসতে দেখে হাত নেড়ে খাটে বসতে বললেন শ্যাম সুন্দর, বৌমার কথায় ইদানিং তিনি স্ত্রীর মতামত কেও গুরুত্ব দিতে চেষ্টা করছেন।
আমার বন্ধু বিমলের কথা বলছিলাম, সরকারি চাকরি করে, শিক্ষিত আর আমাদের পাল্টি ঘরও,
একটু কেশে গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে বললো সৌম্য, বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে তাঁর মুখের অভিব্যক্তি আন্দাজ করার চেষ্টা করতে লাগলো।
বিমল! কিন্তু সে তো অন্যের সংসারে মানুষ! বাড়ি ঘর বলতেও কিছু নেই! সরমা ওই ভাবে থাকতে পারবে না। না না সৌম্য, তুমি মাঝে মাঝে বড্ড অবাস্তব কথা বলে ফেলো!
বিরক্ত গলায় বলে উঠলেন শ্যাম সুন্দর, কুমুদ চুপ করে থাকলেন, বাপ মা হারা ছেলেটিকে তাঁর নিজের খুব বেশি অপছন্দ নয়। বরং মাঝে মাঝেই ছেলের সঙ্গে সে যখনই বাড়িতে আসে তিনি যথাসাধ্য ভালো মন্দ করে খাওয়াতেই চেষ্টা করেন।
কেনো বাবা, আপনার তো অনেক আছে, আপনিই বাড়ি ঘর করে দেবেন না হয়, তবে সে প্রস্তাবে যদি বিমলদা রাজি হয় তবেই! তাঁর আত্মসম্মান বোধ কে আঘাত না করেই কিন্তু! শুধু বাড়ি ঘর না থাকা বাদে এর থেকে ভালো ছেলে কি আপনি সরমার জন্যে আর পাবেন? অন্য সব দিক থেকে দেখলে বিমলদার থেকে উপযুক্ত পাত্র আর কে আছে!
এতক্ষন ধরে শ্বশুরের ঘরের বাইরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকা মৃণালিনী, ক্রমশই পরিস্থিতি স্বামীর হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে আর ধৈর্য্য রাখতে না পেরে ঘরে ঢুকে এলো।
ঠিক বলেছে বউমা, আমরাও বিমল কে খুব পছন্দ, কি ভালো ছেলে,
বউমা কে বলতে দেখেই নিজের পছন্দের কথাও এই সুযোগে জানিয়ে দিলেন কুমুদ। এবার একটু চিন্তা করলেন শ্যাম সুন্দর,
আমরা সরমা কে ওই ভাবে মানুষ করিনি বউ মা, ও অনেক আদরে মানুষ হয়েছে। ওই ভাবে ভাড়া বাড়িতে ও গোটা জীবন কাটাতে পারবে না,
ভাড়া বাড়িতে সারা জীবন কেনো কাটাবে বাবা! বিমল দা নিশ্চয়ই বিয়ের পরে সরমা কে ভালোভাবেই রাখবেন, ওনার প্রতি আমার এই বিশ্বাস আছে। আর বাবা, টাকাটাই জীবনে সব হয়না, সরমা মনের দিক থেকে ভালো থাকবে কিনা এটা জানাও জরুরী। ও পড়াশুনা শেখেনি, শুধু টাকার জোরে ওর বিয়ে হয়ত আপনি দিয়ে দিতে পারবেন কিন্তু পরে যদি সেই টাকার চাহিদা সারাজীবন আপনি পূরণ করতে না পারেন তাহলে ও শ্বশুর বাড়িতে কখনই ভালো থাকবে না। সেখানে বিমল দা আপনার ছেলের বন্ধু, ছোটো থেকে ওনাকে আপনি দেখেছেন, এতো ভালো ছেলে, সব দিক ভেবে দেখলে এর থেকে বেশী সরমা কোথাও ভালো থাকবে না। আপনি বিচক্ষণ মানুষ, আপনি নিজেই সব টা বোঝেন, তাই ঝোঁকের মাথায় এতো ভালো পাত্র হাতছাড়া না করে একটু সময় নিয়ে ভাবলে ভালো হতো না বাবা!
ঠিক আছে, সবাই যখন বলছো, তখন না হয় বৌদির সঙ্গে একটু আলোচনা করি।
খানিকটা হলেও সম্মত হলেন শ্যাম সুন্দর,শ্বশুর মশাইয়ের নিমরাজি হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো মৃণালিনী, কিন্তু বড়ো মার সঙ্গে আলোচনার ফল কি হতে চলেছে, এটা ভেবেই চিন্তিত হচ্ছিলো সে।
ক্রমশ