#মৃণালিনী
#পর্ব ২৮
যথেষ্টই বেলা হয়েছিলো, আপাতত শ্যাম সুন্দর নিমরাজি হয়েছেন দেখে আর বেশিক্ষন কথা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলো না সৌম্য, পাছে নতুন কোনো ওকালতি বুদ্ধিতে তিনি আবার নতুন কোনো সমস্যা তৈরি করেন। মনের মধ্যে একটু হলেও ভয় কাজ করছিলো তার, পাছে বাবার আবার মত পরিবর্তন হয়ে যায়। তার ইশারায় কুমুদ এবং মৃণালিনী ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো, শ্যাম সুন্দর নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। দোতলা থেকে নেমে এসে শাশুড়ির পিছু পিছু রান্না ঘরে ঢুকলো মৃণাল, সৌম্য থাকার দিনগুলো তে রান্নার চাপ একটু বেশি পড়ে বামুন দিদির ওপরে, তাই সবাই হাতে হাতে তাঁকে সাহায্য করার চেষ্টা করে।
পারুল বালা ওখানে বসেই জপ করছিলেন, জপ করতে করতেই হাতের ইশারায় বামুন দিদি কে বিভিন্ন রকমের পদ বুঝিয়ে চলেছিলেন। কুমুদ এবং মৃণাল কে একসঙ্গে ঢুকতে দেখেই কুমুদ এর দিকে রান্না দেখার জন্যে ইশারা করেই খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়ে আবার জপ করতে শুরু করলেন। কুমুদ বামুন দিদির কাছে এগিয়ে গেলেন, মৃণাল ওখানেই পিঁড়ি নিয়ে বসে, কুটনো কাটার জন্যে তরকারির ঝুড়ি নিজের দিকে টেনে নিলো।
করুণা মসলা বাটছিল, মৃণাল কে ওখানে তরকারির ঝুড়ি টেনে নিয়ে বসতে দেখেই অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো, তার মুখভঙ্গি তে ঔদ্ধত্যের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠছিলো। মৃণাল লক্ষ্য করছিলো, পারুল বালাও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তার দিকে, গত দুদিনের ঘটনায় তিনি করুণার ওপরে যথেষ্টই ক্ষুব্ধ ছিলেন।
একেনের বাটনা আর লাগবে নি, তুই আমিষ হেঁসেলে চলে যা দিকি, হারুর মা প্যাজ, রসুন নে বসেচে, ওর হাতে হাতে এট্টু এগগে দে,
ভাই ঝির দিকে তাকিয়ে বললেন বামুন দিদি, এখানে নিরামিষ পদের রান্না সেরেই তাঁকে আমিষ হেঁসেলে ঢুকতে হবে। আমিষ পদ রেঁধে নিরামিষ হেঁসেলে ঢুকতে গেলে তাঁকে কাপড় ছাড়তে হয়, নিরামিষ থেকে আমিষের হেঁসেলে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। তাই এদিকের কাজ সেরে তবেই তিনি ওদিকের হেঁসেলে ঢোকেন। করুণা উঠে দ্রুত পায়ে কোনো দিকে না তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো।
বেলা গড়াচ্ছিল, হাতের কুটনো শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকালো মৃণাল, সৌম্যর দ্বিতীয় দফার চায়ের সময় হয়ে এসেছিলো। মেসে থাকার সুবাদে এই একটি বদ অভ্যাস তার ছিলো, সকাল থেকে অন্তত বার তিনেক চা তার চাইই। মৃণাল বামুন দিদির দিকে তাকালো,
দিদি, তোমার উনুন খালি হলে একটু চা বসাবো,
বামুন দিদি মাথা নাড়লেন, তাঁর প্রায় হয়েই এসেছিলো, তিনি আমিষ হেঁসেলে যাবার জন্যে তৈরী হচ্ছিলেন, এদিক ওদিক তাকিয়ে চায়ের বাসন, ছাঁকনি খুঁজতে লাগলেন।
তুমি চলে যাও দিদি, আমি দেখে নিচ্ছি,
বামুন দিদি বেরিয়ে চলে যাবার পরে উঠে এলো মৃণাল, কিন্তু হাজার খোঁজা খুঁজি সত্বেও চা এর বাসন খুঁজে পাওয়া গেলো না। হারুর মা সামনে দিয়েই ঝাঁটা হাতে যাচ্ছিলো, মৃণাল কে বাসন খুঁজতে দেখে কুমুদ তাকে ডাকলেন,
ও হারুর মা, চায়ের বাসন কই? পুকুরে মাজতে গিয়ে ফেলে এলে নাকি!
হারুর মা মাথা নাড়লো,
না গো মা, বাসন তো মেইজে এনিছি, করুণা তো বাসনের ঝুড়ি আমার হাত তে নে নেলো, এরপর তো আমি আর জানি নি। ওরে জিগিয়ে দেকো দেকি!
কুমুদ করুণার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকলেন, কিন্তু তার সাড়া পাওয়া গেলো না।
থাক মা, আমি দেখে নিচ্ছি, ও আশে পাশেই কোথাও আছে নিশ্চয়ই,
শাশুড়ি কে থামিয়ে দিয়ে দ্রুত পা চালালো মৃণাল, হেঁসেলের উনুনের আঁচ প্রায় পড়ে এসেছিলো, বেশি দেরি হলে আর চা করা সম্ভব হবে না। আমিষ হেঁসেলের উনুনে চা বড়ো মা করতে দেবেন না তখন আবার জনতা স্টোভ জ্বালাতে হবে। বামুন দিদি ইতিমধ্যেই আমিষ রান্না শুরু করে দিয়েছিলেন, করুণা সেখানে ছিলো না।
বামুন দিদি করুণা কে দেখেছো?
বামুন দিদি ঘাড় নাড়লেন,
না তো বউমা, আমি এসে তারে দেকিনি কো! সে বোধ করি তার আগেই কাজ সেরে চলে গেচে গো,
করুণা কে কোথাও পাওয়া গেলো না, কিন্তু বাসনের ঝুড়ি আমিষ হেঁসেলের বারান্দায় রাখা ছিলো। সে কোথায় গেলো সেটুকু ভাবার মতো সময় আর মৃণালের ছিলো না, উনুনের আঁচ পড়ে যাবার ভয়ে প্রায় দৌড়ে বাসন নিয়ে ফিরে এসেই তাড়াতাড়ি চা বসালো মৃণাল।
সকালে জলখাবারের পরে দোতলার ছাদের কোণে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে ছিলো সৌম্য, হাতের জ্বলন্ত সিগারেট পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিলো। কি করে এবার বড়ো মার কাছে বিমলের প্রসঙ্গে কথা তোলা যায় ভাবতে গিয়েই সে একটু অন্য মনস্ক হয়ে পড়েছিলো, হটাৎ করেই করুণার গলার আওয়াজে তার চমক ভাঙলো,
আপনার চা!
সৌম্য পেছন ফিরে তাকালো, করুণা চায়ের কাপ তার দিকে বাড়িয়ে দাঁড়িয়েছিলো। অনেকদিনই করুণার সৌম্যর জন্যে চা আনা বন্ধ হয়েছিলো, আজকাল মৃণালিনী নিজেই তার জন্যে চা নিয়ে আসে, তাই আজ করুণা কে দেখেই তার মুখে হালকা বিরক্তির রেখা ফুটে উঠলো। সে হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিয়ে, কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
বউ দিদি কি ব্যস্ত নাকি?
কেনে? বউ দিদি আমারে পাইঠে দিলেন, আমার করা চা কি আপনি খাবেন নি? চা কেমন হয়েছে কইলেন নি তো!
আচমকা এই কথায় সৌম্য চমকে উঠে করুণার মুখের দিকে তাকালো, আজ পর্যন্ত কোনোদিনই চা এনে করুণা তাকে এই ভাবে জিজ্ঞেস করে নি। করুণা একটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে সৌম্যর চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলো, অস্বস্তিতে চোখ সরিয়ে নিয়ে সৌম্য ছোট্ট করে উত্তর দিলো, ” ভালো”। তারপরেও করুণা ওখানে দাঁড়িয়েই পায়ের নখ ছাদের মেঝে তে ঘষতে লাগলো, এবার অবাক হলো সৌম্য,
দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? কিছু বলবেন?
করুণা ঘাড় কাত করলো,
আমার কিছু কতা ছিলো, যদি অনুমতি দেন তালে বলি!
সৌম্য মনে মনে অবাক হলো, করুণা এইভাবে আগে কখনই ওর সঙ্গে কথা বলেনি, মুখে বললো,
বলুন, কি বলতে চান!
করুণা চোখ মুছলো,
বউ দিদি আমারে দু চক্ষে দেখতে পারে নি, উনি কয়েছেন, আমি মিছে কতা কই! উনি আমারে একান তে তাইরে দেবার চেষ্টা করছেন, আমি গরীব মানুষ, বাড়ি গেলে বাপ মা খেতে দিতে পারবে নি! উপায় তাকলে কবেই চলে যেতুম, লাথি ঝ্যাটা খেয়ে পড়ে থাকতুম নি!
সৌম্য বিস্মিত দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো, করুণা তারই কাছে মৃণালের নামে অভিযোগ করছে! করুণার স্পর্ধা দেখে সে এতটাই অবাক হয়ে গেলো যে তার মুখে আর কোনো কথা সরছিলো না। অনেকক্ষন চুপ করে থাকার পরে সে গম্ভীর গলায় বললো,
আমার মনে হয়না কোনো কারণ ছাড়াই বউ দিদি এগুলো করেছে, এর পেছনের কারণটা আমি আগে মৃণালের কাছে জানবো তার পরে এই বিষয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলবো। একতরফা কথা শুনে আমি কোনো মতামত দিতে পারবো না!
করুণা মুখ তুলে তাকালো, সে হয়ত আশা করেনি যে সৌম্য এরকম কিছু বলতে পারে, তার মুখে একটা হতাশ ভাব ফুটে উঠলো। সৌম্য আর কিছু বলার আগেই সে তড়িঘড়ি বলে উঠলো,
উনি ইচ্ছে করেই করছেন এসব, বড়ো মা আমারে ভালোবাসেন, তাইতে ওনার রাগ, তিনি বড়ো মা কে জব্দ করার জন্যই আমায় একান তে তাইরে দিতে চান!
মুহূর্তের মধ্যে ধৈর্য্য হারালো সৌম্য, সে যথেষ্টই শান্ত এবং ধৈর্য্যশীল, কিন্তু এই মুহূর্তে তার পক্ষে শান্ত থাকা অসম্ভব হয়ে উঠছিলো। কড়া গলায় করুণার দিকে তাকিয়ে বললো,
আপনি বোধ হয় আপনার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন! ভবিষ্যতে এ বিষয়ে যা করার আমি বড়ো মার সঙ্গে আলোচনা করে করবো, ফলাফল আপনি খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবেন!
বড়ো মার সঙ্গে আলোচনা করার কথায় করুণার মুখ শুকিয়ে গেলো, এ ব্যাপারে পারুল বালার সঙ্গে সৌম্য আলোচনা করতে পারে এটা সে একটুও আশা করেনি। বেশ কিছুদিন ধরে সৌম্যর ব্যক্তিগত কাজ করতে করতে তার এক প্রকার ধারণা জন্মেছিলো যে সৌম্য তাকে অন্য দের তুলনায় একটু আলাদা চোখেই দেখে, তাই তার কাছে বউ দিদির নামে অভিযোগ করার সাহস সে সঞ্চয় করেছিলো। এখন ঘটনা প্রবাহ অন্য দিকে গড়াতে দেখে সে তার একমাত্র ব্রহ্মাস্ত্র চোখের জল বের করে ফেললো, হাত জোড় করে বললো,
বড়ো মা কে বলবেন নি, উনি জানতে পারলে আর রক্ষে রাখবেন নি। এ বাড়ি থেকে তাইরে দিলে আমায় গলায় দড়ি কলসি দিতে হবে!
এই কথায় একটু হলেও থমকে গেলো সৌম্য, কিন্তু তার করুণা কে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই বিরক্তি লাগছিলো। হাতের ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চা টা এক চুমুক দিয়েই মুখ বিকৃত করে করুণার দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বললো,
এটা নিয়ে যান!
মৃণাল দোতলায় নিজের ঘরে চা নিয়ে উঠে এসে সৌম্য কে দেখতে পেলো না। ছাদের দরজা খোলা দেখে সৌম্য হয়তো ছাদে আছে ভেবেই সে ছাদের সিঁড়ি তে পা দিলো। খোলা দরজার সামনে এসেই সে করুণা এবং সৌম্যর কথোপকথন শুনতে পেয়েছিলো। করুণা হাত বাড়িয়ে কাপ নিয়ে চোখের জল মুছে কিছু বলতেই যাচ্ছিলো, চায়ের কাপ হাতে বউ দিদি কে ছাদে উঠে আসতে দেখে চমকে উঠে চুপ করে গেলো।
করুণার চমকে ওঠা সৌম্য বা মৃণাল কারোর চোখই এড়ালো না, করুণার হাতে চায়ের কাপ দেখেই মৃণালের ভ্রু কুঁচকে গেলো।
তুই দাদার জন্যে চা করে নিয়ে এসেছিস! আমাকে বলার প্রয়োজনও মনে করিস নি তাই তো?
কড়া গলায় বললো মৃণালিনী, করুণা থতমত খেলো,
তুমি জানতে না ও চা নিয়ে এসেছে! তুমি ওকে পাঠাও নি!!
সৌম্য একদম হতবাক হয়ে গেলো। মৃণাল কোনো উত্তর দিলো না, করুণা হটাৎ তার অজান্তে সৌম্যর জন্যে চা নিয়ে ছাদে উঠেছে কেনো বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো। তার মনের মধ্যে আশঙ্কার একটা চোরা স্রোত বইতে লাগলো, সে করুণা কে উদ্যেশ্য করে রূঢ় গলায় বললো,
তুই কি স্টোভ জ্বালিয়ে ছিলি? নিরামিষ ঘরে তো আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম, তোকে তো চা করতে দেখলাম না!
করুণা চুপ করে থাকলো, সে স্টোভ জ্বালিয়েছে এটা স্বীকার করা যত টা কঠিন তার পক্ষে ছিলো, ঠিক ততটাই কঠিন ছিলো আমিষ হেঁসেলে সে চা করেছে এটা স্বীকার করা। দুটোর কোনো একটাও যদি পারুল বালা জানতে পারেন তাহলে আর তার রক্ষা থাকবে না। নিরামিষ উনুনে আগুন থাকতে অহেতুক কেরোসিন তেলের অপচয় তিনি কিছুতেই সহ্য করবেন না। আর আমিষ রান্না ঘরের উনুনে সে চা করেছে এটা জানতে পারলে তাকে এই মুহুর্তেই বাড়ি থেকে তিনি বার করে দেবেন।
গত কালই এঁটো কাপড়ে জল তোলার জন্যে ইতিমধ্যেই পারুল বালা তার ওপরে ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন, তাতে তার না বলে বাড়ি যাওয়া আরও বেশি করে ইন্ধন যুগিয়ে ছিলো, এখন নতুন করে তার এই অকাজ জানতে পারলে ঠিক কি কি তিনি করতে পারেন তার মোটামুটি সব আন্দাজই করুণার ছিলো। তাকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মৃণাল আরও ক্ষিপ্ত হচ্ছিলো, খানিকটা ধৈর্য্য হারিয়ে সে রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে বললো,
এরপর থেকে ভবিষ্যতে যে কাজ গুলো আমার, সেগুলো যখন তুই করবি, তখন আমাকে জিজ্ঞেস করেই করবি, এটা যেনো দ্বিতীয় বার বলার দরকার না পড়ে তোকে,
এতো কথার পরেও করুণা ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো, তাকে এখনও ওই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজেকে সামলে নিয়ে ঠান্ডা গলায় বললো মৃণাল,
এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? যা, নিচে যা! তোর পিসি তোকে রান্না ঘরে খুঁজছে!!
করুণা আর দাঁড়ালো না, সে দ্রুত পায়ে সিঁড়ির দিকে এগোলো, তার চলে যাওয়ার দিকে মৃণাল এবং সৌম্য দুজনেই বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। মাত্র কদিন আগেই পিসির হাত ধরে চৌধুরী বাড়িতে আশ্রয় নিতে আসা গ্রাম্য তরুণীটির এই অভাবনীয় পরিবর্তন তাদের কে অবাক করছিলো।
ক্রমশ
#মৃণালিনী
#পর্ব ২৯
করুণা চলে গেছে বেশ কিছুক্ষন, নীচের থেকে তার গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, ছাদে দাঁড়িয়েই শুনতে পাচ্ছিলো মৃণালিনী। পাশে দাঁড়িয়ে সৌম্য চায়ে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে কোনো কথা না বলেই, মুখটা একটু গম্ভীর হয়ে আছে। স্বামীর গাম্ভীর্যের কারণ আন্দাজ করার চেষ্টা করছিলো মৃণাল, এমন সময়ে সৌম্য নিজেই কথা বললো।
করুণার বাড়িতে কে কে আছে মৃণাল? ওদের অবস্থা কি খুব খারাপ? আমি ওর সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু জানিনা।
মৃণাল একটু অবাক হলো, সৌম্য আজ হটাৎ ওর সম্বন্ধে জানতে চাইছে! মনের ভাব প্রকাশ করতে না দিয়েই বললো,
যা শুনেছি, বাবা মা আছেন, আর ওই পিসি, এর বেশি আর কিছু আমিও জানিনা, হটাৎ এ প্রশ্ন কেনো?
মেয়েটি আমাকে একটু অবাক করেছে আজ, একটু প্রগলভ লাগলো, আগের মতো মুখ চোরা নেই আর। চা কেমন খেতে হয়েছে জানতে চাইছিলো!
একটু চুপ করে থেকে সৌম্য আস্তে করে উত্তর দিলো, মৃণালের মনের মধ্যে জেগে ওঠা অস্বস্তিটা নতুন করে ফিরে এলো আবার।
তুমি তখন জিজ্ঞেস করছিলে না, ওকে আমি চা দিয়ে পাঠিয়েছি নাকি, আমি কিন্তু পাঠাই নি জানো! বড়ো মা আমার সামনেই বসেছিলেন, উনিও যদি জানতেন যে ও চা করে নিয়ে এসেছে আমাকে বলতেন নিশ্চয়ই। তারমানে ও বড়ো মারও অজ্ঞাতে তোমার জন্যে চা করে এনেছে!
একটু অন্য মনস্ক গলায় বললো মৃণালিনী, সৌম্যর মুখের মধ্যে দুশ্চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো। খানিকক্ষন চুপ করে থেকে বললো,
তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো, তুমি কি কোনো কারণে ওর ওপরে বিরক্ত হয়েছ? ওকে নাকি বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইছো! ও এই কথাগুলো আমার কাছে অভিযোগ করছিলো! ওর কথার ভঙ্গি একটু অন্য রকম ছিলো, ঠিক কি রকম সেটা তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।
মৃণাল একদম অবাক হয়ে গেলো, করুণা ওর অজ্ঞাতে চা নিয়ে এসে ওরই সম্পর্কে সৌম্যর কাছে অভিযোগ করেছে এটা জানার পরে ও এতটাই ক্ষুব্ধ হলো, যে এই মুহূর্তে ঠিক কি করা উচিত সেটা ভেবে উঠতেই পারছিলো না। খানিকক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিয়ে ও সৌম্যর কাছে গত দুদিনের করুণা এবং হারুর সমস্ত কাহিনী খুলে বলতে লাগলো। করুণার কাছ থেকে পাওয়া দলিলের কথা শুনে সৌম্যর মাথায় প্রায় আকাশ ভেঙে পড়লো, কিন্তু এই মুহূর্তে কোনো প্রমাণ ছাড়া বড়ো মার সামনে আলোকের স্বরূপ প্রকাশ করা যথেষ্টই মুশকিল। খানিকক্ষন চুপ করে থেকে সে মৃণালের দিকে তাকালো,
করুণা কে বাড়ি পাঠিয়ে লাভ নেই, তাতে আলোক দা সতর্ক হয়ে যাবেন। তার থেকে বড়ো মার কাছে ওর বিয়ের কথা বলি, তাতে যদি বাধ্য হয়েও আলোক দার নাম সামনে আসে। আমার মনে হয়না এমনিতে করুণা এতো বড়ো বিপদের ঝুঁকি নিতে চেয়েছে, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ নিশ্চয়ই আছে! কারণ টা সম্ভবত আলোক দাই। নিজের বিয়ের কথা শুনলে ও বিয়ে আটকাতে চেষ্টা করে আলোক দার দ্বারস্থ হয় কি না দেখা যাক!
মৃণাল একটু ভাবলো, তারপর একটু চিন্তিত ভাবেই বললো,
কিন্তু তাহলে হারু! হারু কি জন্যে এসব করছে! ও কিন্তু করুণা কে সত্যিই খুব ভালোবাসে! ওর জন্যে কতো বড় ঝুঁকি নিয়েছে বলো তো! করুণা বেশ চালাক চতুর মেয়ে তো! হারু ওকে ভালোবাসে এটা বুঝেই তাহলে ও হারু কে নিজের কাজে ব্যবহার করছে! আমার সত্যি ছেলেটার জন্যে খারাপ লাগছে গো!
সেতো আমারও লাগছে মৃণাল। হারু কতো ছোটো বয়স থেকে আমাদের বাড়িতে আছে জানো! একসময় ওর বাবা আমাদের জমিতে ভাগে চাষ করতো, বাবা মারা যাবার পর না খেয়ে থাকছিলো প্রায়। শেষ পর্যন্ত বড়ো মা বাবা কে বলে ওদের কে ঘরে নিয়ে আসেন। ছোটো বেলায় সারাক্ষন আমার পেছন পেছন ঘুরে বেড়াতো। ছেলেটা একটু সরল, সাদা সিধে, মনের দিক থেকে খুব ভালো। আর করুণার কথা ই যদি বলো, সেও কি খুব চালাক! আসলে তো বোকা ই দেখছি, ও ও তো আলোক দার কথামতই চলছে! হারুর সঙ্গে ওর আর ফারাক কোথায়! আসল ধুরন্ধর তো আলোক দা! করুণা কতো বড়ো বোকা বলতো! বোকা না হলে কেউ আমার কাছে তোমার নামে অভিযোগ জানাতে আসে!
খানিকটা বিরক্তির গলায় বললো সৌম্য, করুণার চোখের দৃষ্টি তার একটুও ভালো লাগেনি তখন।
এটা নিয়ে আমিও তখন থেকেই ভাবছি! ও হটাৎ করে এরকম একটা কাজ করতে গেলো কেনো!! এটাও আলোক দার শেখানো নয় তো?
তোমার কি মনে হয় আলোক দা ওকে এই ভাবে আমার সঙ্গে কথা বলতে বলেছে? তোমার আড়ালে এসে?
মৃণাল এর কথায় অবাক গলায় বললো সৌম্য, তারপর একটু গম্ভীর হয়ে গেলো।
আমার মনে হয় এর পর থেকে তুমি আর কোনো কাজে, আমি থাকলে ওকে ঘরে পাঠিও না, যদি অসুবিধা হয় বা বড়ো মা কিছু আপত্তি করেন, তাহলে আমাকে জানিও, আমি বড়ো মার সঙ্গে কথা বলে নেবো। এমনিতেও ওর হাব ভাব খুব একটা ভালো ঠেকছে না বড়মার সঙ্গে সরমা র ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা মিটে গেলে একবার এটা নিয়েও বসতে হবে।
মৃণাল ঘাড় নাড়লো, দুজনেই চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়েছিলো, হটাৎ করেই নীচ থেকে আসা পোস্ট ম্যানের সাইকেলের ঘণ্টার আওয়াজ শোনা গেলো। ছাদের থেকে নিচের দিকে ঝুঁকে তাকালো সৌম্য,
টেলিগ্রাম! একটু নিচে আসুন,
বলে হাতে ধরা টেলিগ্রাম টা উপরের দিকে তুলে দেখালো পোস্ট ম্যান। টেলিগ্রাম শব্দ টা শুনেই মৃণালের হাত পা থর থর করে কাঁপতে লাগলো, বাবার সুস্থতার কামনায় সে বার বার মনে মনেই ঈশ্বরের কাছে জোড় হাতে প্রার্থনা করতে লাগলো। সৌম্য প্রায় দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো, সিঁড়ি দিয়ে নামার ক্ষমতাও মৃণালিনীর ছিলো না, সে খানিকটা অসহায় ভাবে ছাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
গোটা বাড়িতে একটা হৈ চৈ পড়ে গেলো, দোতলা থেকে শ্যাম সুন্দর এবং আলোকও নেমে এলো, পারুল বালা এবং কুমুদ কপালে হাত ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ঠাকুর নাম জপ করতে লাগলেন। একটু পরেই নীচের থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো, নিজেকে কোনো রকমে শক্ত করে মৃণালিনী সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে এসে দাঁড়ালো। পারুল বালার বড়ো ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ এসেছিলো, তাতে পারুল বালার চোখে হালকা জলের রেখা দেখা গেলেও কুমুদ জোরে জোরেই কাঁদতে লাগলেন।
কয়েক মুহূর্ত এই ভাবে কেটে যাবার পরে সবাই আস্তে আস্তে ধাতস্থ হলো, পারুল বালা কে কিভাবে বাপের বাড়ি পাঠানো যায় তার আলোচনা চলতে লাগলো। সৌম্যর কাল ফিরে যাওয়া, তাই আলোকের অনুপস্থিতিতে বাড়িতে শ্যাম সুন্দর ব্যতীত কোনো পুরুষ মানুষ থাকবে না এটা একটা বড়ো চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ালো। শ্যাম সুন্দরের যথেষ্ট বয়েস হয়েছে, শুধু তাঁর ভরসায় এতো জন মহিলা কে রেখে যাওয়া খুব বেশি যুক্তিযুক্ত হবে কিনা সৌম্য চিন্তা করতে লাগলো।
পারুল বালা মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলেন, সৌম্য বললো,
বড়মা তুমি আর আলোক দা চলে যাও, আমি ছুটির দরখাস্ত সুরেশের হাত দিয়ে বিমলের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি, ও কলেজে জমা দিয়ে দেবে। তোমরা ঘুরে এসো নিশ্চিন্তে, তোমরা না ফেরা পর্যন্ত আমি এখানেই থাকবো।
আলোকের মুখের ভাব পরিবর্তন হলো, সম্পর্কে মৃত ব্যক্তি তার জ্যাঠামশাই হলেও পিসির সঙ্গে বাড়ি যাবার একটুও ইচ্ছে তার ছিলো না। এখানে তার আরও বেশি আকর্ষণ আছে। সে তাড়াতাড়ি বলে উঠলো,
তোমার কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত থাকার দরকার নেই, একদিন থাকলেই হবে, আমি বরং পিসি কে পৌঁছেই কাল ফিরে আসবো।
পারুল বালা সাথে সাথেই আপত্তি জানালেন,
না না সে হবে নে, তুমি একেবারে কাজ সেরেই এসো বাছা! ওসব অশুচ গায়ে এধার ও ধার করতে হবে নে! আমি ও বাড়ি থাকবো, তুমি একেনে, ছোটো ওসব একা হাতে সামলাতে পারবে নে! ওসব হব্যিশ্যির ঝক্কি কম নাকি!
আলোক চুপ করে গেলো, করুণা মুখ শুকনো করে দাঁড়িয়ে আছে মৃণাল লক্ষ্য করলো। হঠাৎই এতো দ্রুত পট পরিবর্তন হলো যে সরমা র বিয়ে বা করুণা কে নিয়ে বড়ো মার সঙ্গে আলোচনা কোনো কিছুই আর হয়ে উঠলো না। এতো কিছুর মধ্যেও মৃণালের মনের মধ্যে আনন্দের স্রোত বইতে লাগলো, পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো হটাৎ করে সৌম্য কে বেশ কিছুদিনের জন্যে কাছে পাওয়ার সুযোগ পেয়ে সে ভেতরে ভেতরে যথেষ্টই আনন্দিত হলো।
কিছুক্ষনের মধ্যেই আলোক পারুল বালা কে নিয়ে বাড়ির উদ্যেশ্যে রওনা হলো, তাঁরা বেরিয়ে যাবার পর পরই সৌম্য কলেজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লেখা ছুটির দরখাস্ত হাতে সুরেশের বাড়ি যাওয়ার জন্যে বেরিয়ে পড়লো। শ্যাম সুন্দর দোতলায় নিজের ঘরে ফিরে গেলেন, বামুন দিদি কে বাকি রান্না বুঝিয়ে দিয়ে কুমুদও নিজের ঘরে বিশ্রাম নিতে গেলেন।
মৃণাল নিজের ঘরে ফিরে এসে ঘর গোছ গাছ করতে লাগলো। রবিবার দিন তার ঘরের চেহারা অন্য দিনের থেকে কিছুটা আলাদাই থাকে। যেহেতু সৌম্য থাকে, তাই সকালের ঘরের কাজ তার প্রায় কিছুই করা হয়ে ওঠে না। পারুল বালা বেরিয়ে যাবার পরে যেনো বাড়ি সম্পূর্ন নিস্তব্ধ হয়ে পড়লো, তিনি যে বাড়ির কতো টা জুড়ে থাকেন সেটা মনে মনেই অনুভব করতে পারছিলো মৃণাল। আস্তে আস্তে সমস্ত কাজ কর্ম সারা হয়ে যাবার পরেও যখন সৌম্য ফিরে এলো না তখন ঘরের পেছনের দিকের জানলার গরাদে মুখ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো মৃণাল।
হালকা শীতের আমেজ জড়ানো রোদ ঝলমলে নিস্তব্ধ উঠোনের দিকে চোখ রেখে অন্য মনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো মৃণালিনী, মাঝে মাঝে গোয়াল থেকে ভেসে আসা গরুর ডাক ছাড়া কোথাও কোনো শব্দ নেই। রান্না ঘর থেকেও কোনো আওয়াজ আসছে না, সম্ভবত বামুন দিদির রান্না শেষ হয়ে গেছে। আলোক কে হটাৎ করেই চলে যেতে হওয়ায় কিছুটা হলেও মনে মনে নিশ্চিন্ত হয়েছিলো মৃণাল, তাই আজ করুণা কে নজরে রাখার কোনো প্রয়োজনও তার ছিলো না। আলোকের না থাকা এবং সৌম্যর হটাৎ করেই থেকে যাওয়া সব মিলিয়ে আজ মন অনেকটাই ভালো ছিলো তার।
বউমা, তোমায় কিচু কবার চেলো!
চমকে উঠে পেছনে তাকিয়েই সে হারুর মা কে দেখতে পেলো, অন্য মনস্ক ভাব কাটিয়ে হারুর মায়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো মৃণালিনী,
ওই মেয়ে কে বাড়ি পাইঠে দাও, বউমা,
হারুর মা মুখে নাম উচ্চারণ না করলেও সে কার কথা বলছে তা বোঝা মৃণালের পক্ষে খুব বেশি অসুবিধাজনক ছিলো না। সে মাথা নাড়লো,
তা বললে কি হয় বউ? সে এমন কি দোষ করেছে বলো! তাড়িয়ে দিলে তো না খেয়ে মরবে! আর বামুন দিদি কতদিন এ বাড়িতে আছেন বলো তো? তিনি কতো কষ্ট পাবেন, সেটাও ভাবো একটু,
হারুর মা চুপ করে রইলো, সেটা হয়ত বামুন দিদির কথা ভেবেই। দুজনেই প্রায় একই সময় থেকে এখানে আছে, সেই ভাবনাই হয়ত তাকে কিছুটা হলেও দুর্বল করলো।
হারু খুব ভালো ছেলে, তুমি ওকে নিয়ে একটুও চিন্তা করো না। করুণা এখানেই থাকবে, কিন্তু তাতে হারুর কোনো বিপদ হবে না তুমি নিশ্চিন্ত থাকো,
ওই তেই তো ভয় মা গো! সে যে ওই মেয়ের কতায় ওঠচে আর বসচে,
মৃণাল এর কথা শেষ হবার আগেই তাড়াতাড়ি বলে উঠলো হারুর মা, মৃণাল একটু হাসলো,
তুমি ওকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও, আমি বুঝিয়ে বলবো,
মাথা নেড়ে চলে গেলো হারুর মা, মৃণাল বিছানায় বসার আগেই হারু দৌড়ে এলো,
বউ দিদি, আমারে ডাকতে ছেলে? মা কইলো,
হ্যাঁ, রে আলোক দা চলে গেছে, দাদা নিজের কাজে ব্যস্ত থাকে, এখন কিন্তু তোর ওপরে অনেক দায়িত্ব, বুঝলি তো?
হারু মাথা নাড়লো,
করুণা তোকে আর কিছু রাখতে দেয়নি তো?
হটাৎ করেই জিজ্ঞেস করলো মৃণাল, হারু একটু চমকে উঠলো,
না, বউ দিদি, দেয় নে। আগের কাগজগুলো ও আমাকে দেয় নে বউ দিদি, আমি নিজেই চেয়ে নিচিলাম। ও আলোক দাদা বাবু কে কইছিলো ওর রাখার জায়গা নেই, তা তিনি শুনতে ছিলেন না, তাই আমি আমারে দে দেতে কয়েলাম।
মৃণাল মাথা নাড়লো,
হ্যাঁ, সে ভালোই করেছিস, ও আর কোথায় বা রাখতো!
আলোক দাদা বাবু খুব বাজে মানুষ বৌ দিদি, আমি জানি, উনি করুণা কে ভুল বুঝিয়ে এসব করাতেছেন,
মৃণাল অনেকটাই নিশ্চিন্ত হলো, হারুর সততা ওকে মুগ্ধ করছিলো, আস্তে করে হারুর মাথায় হাত রাখলো মৃণাল,
করুণাও ভালো মেয়ে, শুধু খুব বোকা বুঝলি তো? আমি জানি তুই ওকে খুব ভালো বাসিস, তাই চোখে চোখে রাখবি সব সময়। আলোক দা ওকে আর কিছু রাখতে দিলেই আমাকে জানাবি। বড়ো বাবু যদি জানতে পারেন করুণা এসব করছে তাহলে ওকে বাড়ি থেকে দূর করে দেবেন, তুই সেটা হতে দিস না কিন্তু!
হারু মাথা নাড়লো, সে বেরিয়ে যাবার আগেই সৌম্য ঘরে এসে ঢুকলো, তাকে দেখে একগাল হাসলো হারু,
দাদা, আজ রস পাড়ি?
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, এখন আমি অনেকদিন আছি, প্রতিদিনই খাবো কিন্তু,
শুধু দাদা এলেই পাড়িস হারু, কই বউ দিদি কে তো খাওয়াস না! আমিও তো খেজুর রস খেতে খুব ভালোবাসি,
মৃণাল হেসে বললো, হারু লজ্জা পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
হারুর সঙ্গে তোমার গোপন কথা হচ্ছিলো বুঝি!
হাসতে হাসতে বললো সৌম্য, মৃণালও মুচকি হাসলো।
সুরেশ দা কে দিয়ে এলে? উনি কি কালই কলকাতা যাবেন?
সৌম্য মাথা হেলালো, তারপর একটু চিন্তিত গলায় বললো,
হ্যাঁ, কাল ভোরের ট্রেনেই চলে যাবে, তাহলে রাতে ফিরে আসতে অসুবিধা হবে না। সুরেশ আমাকে বার বার আলোক দার কথা বাবাকে বলার জন্য বলছে! কি করবো ঠিক বুঝতে পারছি না। আজ ও মনোরমা কাকিমার ছেলে বিভাসের কথা বলছিলো, বিভাস নাকি এখন এখানেই থাকছে! কলকাতায় থেকে খুব বেশি চাকরি বাকরির সুবিধা হয় নি বোধ হয়! এই ক্লাবের ব্যাপারে ওর উদ্যমই বেশি, আর ওই জমিতে ওদেরও কিছুটা অংশ আছে, তাই আলোক দাও ওকে যথেষ্টই গুরুত্ব দিচ্ছেন।
মৃণালও চিন্তিত হলো, সেদিনের মনোরমা কাকীমার সঙ্গে বড়ো মার কথোপকথনের দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সেদিনের পর থেকেই যে তিনি পারুল বালার ওপর বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন সেটা মৃণাল জানে, চৌধুরী বাড়ি কে হেনস্থা করতে তিনিও এই সুযোগের সদ্ব্ব্ব্যবহার করেন কি কে জানে!!
ক্রমশ