#মৃণালিনী
#পর্ব ৩২
সরমা চলে গেছে, আস্তে আস্তে আত্মীয় স্বজন রাও বিদায় নিয়েছে, বাড়ি মোটামুটি খালি হয়ে এসেছে। দিন দুই পরের কথা, তুলসী তলায় সন্ধ্যে দেখিয়ে ওপরে ওঠার সময় নিচে আজ চাটাইয়ে কুমুদ একাই বসেছিলেন দেখে মৃণাল এগিয়ে এলো।
মা, আজ বড়ো মা এখানে আসেন নি? শরীরটা কি একটু বেশিই খারাপ আজ?
হ্যাঁ, গো আমিও এই এলুম মা, এসে দিদি কে দেখলুম নে। দুপুরে তো শরীর ভালই ছিলো, একসঙ্গে বসে তো সবাই খেলুম তখন!
একটু চিন্তিত গলায় বললেন কুমুদ, মৃণাল আর অপেক্ষা করলো না,
আপনি বসুন মা, আমি বরং একটু বড়ো মা র খোঁজ নিয়েই আসি,
কুমুদ ঘাড় নাড়লেন, মৃণাল আস্তে আস্তে বড়ো মার দরজার সামনে উপস্থিত হলো।
বড়ো মা ভেতরে আসবো?
অন্ধকার ঘরে লন্ঠন এখনও জ্বালিয়ে দিয়ে যায়নি হারুর মা, নিশ্চিদ্র অন্ধকারের মধ্যে কিছুই ঠাওর করতে পারছিলো না মৃণাল। কিছুক্ষন পরেও কোনো উত্তর না আসায় অনুমতি ছাড়াই এই প্রথম বার বড়ো মার ঘরে পা দিলো সে। অন্ধকার ঘরে হাতড়ে হাতড়ে বিছানার পাশে বসে পারুল বালার কপালে হাত রেখেই চমকে উঠলো, জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে গা, চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছেন পারুল বালা।
সঙ্গে সঙ্গেই চিৎকার করে উঠলো মৃণালিনী, তার হৈ চৈ শুনে লন্ঠন নিয়ে হারুর মা ছুটে এলো, ওপর থেকে নেমে এলো সৌম্য। শ্যাম সুন্দরের নির্দেশে আলোক তাড়াতাড়ি সাইকেল নিয়ে ড্রাইভার কে তার বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে গেলো। ড্রাইভার এসে গাড়ি বার করলো, পারুল বালা কে পাশের গ্রামের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলো।
ডাক্তার বাবু তাঁকে পরীক্ষা করে কলকাতায় নিয়ে যাবার জন্যে বললেন। তাঁকে কলকাতা নিয়ে যেতে বলায় সৌম্য, মৃণাল এবং হারুর মা কেও সঙ্গে নিয়ে যাবার কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে গাড়ি ঘোরাতে বললো আলোক কে। গাড়ি বাড়িতে ঢুকতে দেখেই সবাই দৌড়ে এলো। শ্যাম সুন্দর ওখানেই উপস্থিত ছিলেন, তিনি বউমা কে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথায় সম্মতি দিলেন। অধ্যাপক হিসেবে তাঁর বেয়াই এর পরিচিতি যথেষ্টই বেশি তা তিনি জানেন। তাঁর অনেক ছাত্র ছাত্রী দেশে বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছে, তিনি মৃণাল কে সঙ্গে নিয়ে যাবার কথায় আপত্তি জানালেন না।
তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও মৃণাল, তোমার হয়ে গেলেই আমরা বেরিয়ে পড়বো, বেশিক্ষন দেরি করা যাবে না কিছুতেই। আর বড়ো মার জিনিস পত্র করুণা কে একটু গুছিয়ে দিতে বলো,
স্বামীর কথা শুনেই দৌড়ে ওপরে উঠলো মৃণাল, দ্রুত আলমারি খুলে তার জামা কাপড় তোরঙ্গের মধ্যে ফেলতে লাগলো। হটাৎ করেই তার করুণার কথা মনে পড়লো, তাকে বড়ো মার জিনিস পত্র গুছিয়ে দেবার জন্যে বলতে হবে। করুণা কে ডাকতে বাইরে বেরিয়েই তার ছাদের খোলা দরজার দিকে নজর গেলো। এতো রাতে ছাদের খোলা দরজা মৃণালিনীর মনে সন্দেহের উদ্রেক করলো, ধীরে ধীরে সে ছাদের দরজার দিকে এগোলো। দরজার সামনে আসতেই খুব নিচু স্বরে আলোকের গলা ভেসে এলো,
তোমাকে যে কাগজ গুলো রাখতে দিয়েছিলাম, কোথায় রেখেছো সেগুলো? জায়গামতো আছে তো? ওগুলো ছাড়া কিন্তু কিছুই করা যাবে না!
সব ঠিক আছে গো, যেমনটি তুমি কোয়েছ, তেমনটিই রেখেছি। কাক পক্ষীও টেরটি পাবে নি। ওসব এ বাড়িতেই নেই কো!
তাহলে কাল সকালে ওগুলো বাড়িতে এনে রেখো, ওরা হয়ত আবার পরশুই ফিরে আসবে, তার আগেই আমরা চলে যাবো,
করুণার মৃদু গলায় বলা কথার উত্তরে আলোকের গলা ভেসে এলো। মৃণাল চমকে উঠলো, তাদের কলকাতায় বড়ো মা কে নিয়ে চলে যাবার সুযোগে আলোক করুণা কে নিয়ে টাকা পয়সা, জমির দলিল সহ এখান থেকে পালাতে চাইছে!
জমির দলিল বা টাকা পয়সা নিয়ে মৃণালিনীর চিন্তা ছিলো না, সেসব এখন তার হেফাজতেই ছিলো। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়, করুণা জানে সেগুলো হারুর কাছে আছে। বউ দিদি বেরিয়ে যাবার পরেই সেগুলো হারুর কাছ থেকে চাইবে করুণা, তখন হারু বিপদে পড়তে পারে। বেচারা নিরীহ ছেলেটি কে বিপদে ফেলতে একটুও ইচ্ছে ছিলো না মৃণালের। ইতিমধ্যেই বউ দিদি কে বিশ্বাস করে অনেক কিছুই বলে ফেলেছে হারু, তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা মৃণাল কিছুতেই করতে পারবে না। কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করলো মৃণালিনী, তারপরে আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে নিচে নেমে এলো।
নিচে সৌম্য অপেক্ষা করছিলো, মৃণাল কে দোতলা থেকে নেমে আসতে দেখেই বিরক্তির গলায় বললো,
করুণা কোথায়? তাকে বড়ো মার জিনিস পত্র গুছিয়ে দিতে বলেছো? প্রত্যেকটা মুহুর্ত মূল্যবান মৃণাল, তাড়াতাড়ি করো, আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে!
মৃণাল মাথা হেলালো,
আমার তো হয়ে গেছে, বড়ো মার জিনিসপত্র গোছানো হয়ে গেলেই বেরিয়ে পড়বো। করুণা কে খোঁজার আর সময় নেই এখন, বউ তুমিই একটু গুছিয়ে নাও বরং,
হারুর মা তার পোঁটলা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলো কলকাতা যাবার জন্যে, বউমা তাকেই এখন কত্তা মা র জিনিস গোছাতে পাঠাচ্ছে দেখে সে যথেষ্টই বিরক্ত হলো। কিন্তু মুখে সে কথা প্রকাশ করার সাহস তার না থাকায় মনে মনে করুণার মুন্ডুপাত করতে করতেই সে পারুল বালার ঘরের দিকে এগোলো। ইতিমধ্যেই মৃণালের তোরঙ্গ হারু নিচে নামিয়ে এনেছিলো, সেসব সৌম্যর তত্ত্বাবধানে সাবধানে গাড়িতে তোলা হচ্ছিলো।
ওখানে বাড়ির প্রায় সবাই উপস্থিত ছিল, এমনকি গৃহকর্তা শ্যাম সুন্দর নিজেও উদ্বিগ্ন মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখানে আলোক এবং করুণার অনুপস্থিতি সকলেরই নজর কাড়ছিলো। হারুর মা কে পারুল বালার জিনিস পত্র গোছাতে যেতে দেখে এবার কুমুদ একটু অবাক গলায় বললেন,
ওমা, বামুন মেয়ে! করুণা এই মাজ রাত্তিরে গেলো কোতা! বাড়িতে এতো কিচু হয়ে গেলো, তারে তো একবারের জন্যেও চোকে দেখলুম নে!
বামুন দিদি তাড়াতাড়ি তাঁর ভাই ঝির উদ্যেশ্যে হাঁক পাড়লেন, মৃণাল এবং সৌম্যর মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় হলো। পিসির চিৎকারের কিছুক্ষন পরেই আলোক এবং করুণা আলাদা আলাদা ভাবে ওখানে এসে উপস্থিত হলো, আলোক সিঁড়ি দিয়ে এলো, করুণা সম্ভবত দোতলার পেছনের লোহার ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো।
হারুর মা ততোক্ষনে পারুল বালার জিনিস পত্র গুছিয়ে এনে গাড়ির সামনে রাখছিলো, করুণার কাজ তার ঘাড়ে এসে পড়ায় মনে মনেই সে বিরক্ত হয়ে ছিলো। সে অনেক পুরনো কাজের লোক, এ বাড়িতে তার অবস্থান প্রায় বাড়ির লোকের মতোই, তাই করুণার মতন নতুন আশ্রিতা কে সে ধর্তব্যের মধ্যেই আনে না। তাছাড়া তার ছেলে কে দিয়ে বিভিন্ন রকম কাজ কর্ম করানোর জন্যে করুণার ওপরে রেগে ছিলো সে। সব কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে করুণা কে ঢুকতে দেখেই সে মেজাজ হারালো,
এতক্ষনে যেই সব কাজ শেষ হয়ে গেল অমনি রানী মা এলেন! এতো যে সবাই চেঁচিয়ে মোলো, তকন কি শুনতে পাসনি তুই! কোতা ছিলিস?
করুণা এতদিনে এখানে থাকতে থাকতে যথেষ্টই সাহস অর্জন করেছিলো, হারুর মায়ের কথায় চুপ করে থাকার কোনো ইচ্ছাই তার ছিলো না, সে চোখ মুখ ঘুরিয়ে হাত নেড়ে হারুর মার উদ্যেশ্যে বলে উঠলো,
কেনে? দু একখান শাড়ি, কাপড় গুইছে দেতে গতর কি পড়ে গেছে তুমার? সারা দিন তো বইসেই থাকো! সেই ভোর সকালে জলের ছড়াটুক দেওয়া ছাড়া, আর কুটটিও তো নাড়নি গো!
হারুর মা পারুল বালার খাস লোক, তাকে করুণা কথা শুনিয়ে পার পেয়ে যাবে, সে ক্ষমতা করুণার ছিলো না। হারুর মা প্রায় তেড়ে উঠলো,
কি কইলি তুই! আমি সারাদিন বইসে তাকি! দু দিনের মেয়ে, কদিন আগেই তোর পিসি কত্তা মা র পায়ে ধরে তোরে ঘরে নে এলো, আর এর ভিতরেই তোর মুকে এতো বোল ফুটে গেলো! কত্তা মা বাড়ি ফিরুক, তারপর তোরে ঘাড় ধরে ঘর তে বের করে দিই কিনা দ্যাক!
দুজনের কেউই থামার পাত্র নয় বুঝেই এবার কুমুদ এগিয়ে এলেন,
এই কি তোমাদের ঝগড়ার সময় হলো হারুর মা! একটা মানুষ জ্বরে বেঁহুশ হয়ে পড়ে রয়েছে, তাকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত, আর তোমরা তার মধ্যেই এসব শুরু করে দিয়েছো! আর তোমাকেও বলিহারি যাই বামুন মেয়ে! তোমার ভাইঝি যে মুক টি বন্দ করছে নে সে কি তুমি চোকে দেখতে পাও নে?
শেষের কথাগুলো বামুন দিদির উদ্যেশ্যে বলা বুঝেই এবার তিনি তাড়াতাড়ি এগিয়ে এলেন,
সব সময় এতো কতা কিসের তোর? মুক টুকু একটু বন্দ রাখতে পারিস নি? যা কত্তা মার মাতায় একটু হাত বুলিয়ে দিগে,
করুণা এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো, কত্তা মার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবার অজুহাতে জিনিসপত্র আর গাড়িতে না তুলেই তাড়াতাড়ি পারুল বালার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। সে চলে যেতেই হারুর মা কুমুদ এর দিকে ঘুরলো,
দেখলে মা? সাহস দেখলে মেয়ের? এতো কতা কৈলুম, তাও তারে দে একটা জিনিসও তোলা তে পারুলুম নি।
কুমুদ নিজেও এবার যথেষ্টই বিরক্ত হচ্ছিলেন, বামুন দিদির দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললেন,
সত্যি বামুন মেয়ে! তোমার ভাইঝি যেনো কেমন ধারা! একটা কতাও কানে তোলে নে গো! আমারও তো এক খান মেয়ে আচে! এতো অবাধ্য তো নয় সে!
বামুন দিদি মনে মনে প্রমাদ গুনলেন, তিনি যতোই করুণা কে এ বাড়িতে রাখার চেষ্টা করেন ততোই যেনো সে আরো বেশি উদ্ধত আচরণ করে। মুখে বললেন,
কি করি মা গো! কতো বোজাই, কতা সে একদম কানে নেয়নি কো! এ বার তারে বাড়ি থুয়েই আসতে হবে বোধ করি!!
তিনি আরো কিছু বলতেই যাচ্ছিলেন, ইতিমধ্যেই মৃণাল এবং সৌম্য সেখানে এসে দাঁড়ালো। এতক্ষন ধরে চলা কথোপকথন সমস্তই তাদের কানে এলেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করে নি। এ বার খানিকটা বিরক্ত গলায় বললো সৌম্য,
এ বার এসব বন্ধ করো বামুন দিদি! বড়ো মা কে গাড়িতে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে।
সৌম্যর গলায় বিরক্তির স্বর ওখানে উপস্থিত সকলকেই থামিয়ে দিলো। মৃণাল বড়ো মার ঘরের দিকে দ্রুত পা চালালো, বাকিরাও তার পেছন পেছন পারুল বালার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন। করুণা পারুল বালার মাথার কাছে বসে ছিলো তাদের দেখে উঠে দাঁড়ালো।
সৌম্য, আলোক এবং হারুর সহায়তায় প্রায় বেঁহুশ পারুল বালা কে আস্তে আস্তে গাড়িতে তোলা হলো, হারুর মা কে বড়ো মার পাশে বসার জন্যে সৌম্য নির্দেশ করলো। সৌম্যর নির্দেশ মেনে সবে মাত্র হারুর মা পেছনের দরজা খুলে কত্তা মার পাশে বসতেই যাচ্ছিলো, মৃণালিনীর গম্ভীর স্বর তাকে থামিয়ে দিলো।
বউ তুমি গাড়িতে উঠ না, তোমাকে ছাড়া মায়ের অসুবিধা হবে। তাছাড়া তোমার বয়স হয়েছে, ওখানে বড়ো মার জন্যে অনেক বেশি ছোটা ছুটি করতে হতে পারে, অতো কিছু তুমি এই বয়সে পারবে না। করুণা তুই আমাদের সঙ্গে যাবি, ছোটো মেয়ে, তোর এসব করতে অসুবিধা হবেনা,
কথাটা এতোই অপ্রত্যাশিত ছিলো যে সবাই চমকে উঠলো, সৌম্য মুখে কিছু না বলেই মৃণালের মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। মুহূর্তে করুণার মুখ শুকিয়ে গেলো, সে অসহায় ভঙ্গিতে আলোকের মুখের দিকে তাকালো। আলোক যথেষ্টই চালাক চতুর, করুণা কে সকলের সামনে বোকার মতো তার দিকে তাকাতে দেখেই সে না বোঝার ভান করে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। কোনো উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত শেষ চেষ্টা হিসেবে মৃণালের দিকে তাকালো করুণা,
বউ দিদি আমার তো কিছুই গোছানো নেই গো! আমি কেমনে যাই!
কলকাতায় সব পাওয়া যায় করুণা, আমি ওখানে গিয়ে সব কিনে দেবো তোকে, কিছু নিতে হবে না, তুই গাড়িতে ওঠ,
করুণা কে এক মুহূর্তের জন্যেও চোখের আড়াল করতে চাইলো না মৃণাল, জিনিস গোছানোর অজুহাতে বউ দিদি তাকে চোখের আড়াল হতে দেবে না এটা বুঝেই তার মুখ শুকিয়ে গেলো। সৌম্য এতক্ষন চুপ করেই দাঁড়িয়েছিলো, বউয়ের ওপর তার যথেষ্টই আস্থা ছিলো, মৃণালের করুণা কে সঙ্গে নিয়ে যাবার পেছনে যে নিশ্চিত ভাবেই কোনো কারণ আছে সেটা সে বুঝতে পারছিলো।
আর কোনো উপায় নেই বুঝেই শেষ অস্ত্র হিসেবে সে তার পিসির দিকে তাকালো, বামুন দিদিও ওখানেই দাঁড়িয়েছিলেন। ভাইঝির সেবায় যদি পারুল বালা সুস্থ হয়ে ওঠেন তাহলে যে তার চৌধুরী বাড়িতে থেকেই বিয়ে দেওয়ার অনেকটাই সুবিধা হবে সেটা বুঝেই তিনি তাড়াতাড়ি মাথা নাড়লেন,
যাও মা যাও, কত্তা মা কে দেখে রেকো! উনি তো আমাদের মাতার উপরের ছাদ গো! তাঁর সেবায় একটুও ঢিলে দিও নি কিন্তু! তাঁর সেবা করার সুযোগ পাওয়া বড়ো ভাগ্যের কতা!
বামুন দিদি বুঝতেও পারলেন না তিনি তার ভাই ঝি কে কতটা হতাশ করলেন, পিসির কথায় মনে মনেই আরও বিরক্ত হলো করুণা। সে আর কিছু বলার আগেই সৌম্য গম্ভীর গলায় বললো,
আপনি উঠে পড়ুন, দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের। যা যা আপনার প্রয়োজন কলকাতায় গিয়ে বউ দিদি কে বলবেন, কিনে দেবে,
এরপর আর কিছু করার ছিলো না, কোনো কথা আর না বলেই বাধ্য হয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো করুণা, এরপর মৃণাল এবং সৌম্য গাড়িতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ি পারুল বালা কে নিয়ে কলকাতার উদ্যেশ্যে রওনা হলো।
কুমুদ মাথায় হাত ঠেকালেন, শ্যাম সুন্দর দোতলায় নিজের ঘরে রওনা দিলেন। কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে আলোক আস্তে আস্তে নিজের ঘরে ফিরে গেলো। বামুন দিদি মনে মনেই গর্বিত হচ্ছিলেন, তাঁর ভাই ঝি কে হারুর মায়ের থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় তিনি মৃণালিনীর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে পড়লেন। একমাত্র হারুর মা পোঁটলা হাতে ওখানেই বসে রইলো, প্রথম বার তার কলকাতা দেখার সুযোগ করুণার জন্যে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মনে মনেই সে করুণার শাপ শাপান্ত করতে লাগলো।
ক্রমশ
#মৃণালিনী
#পর্ব ৩৩
কলকাতায় চিকিৎসার পরে ক্রমশ সুস্থ হচ্ছিলেন পারুল বালা, জ্ঞান আসার পর মৃণাল তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,
এটা আমার বাপের বাড়ি বড়ো মা, আপনি কলকাতায় আছেন।
মুখে বিস্ময়ের ছাপ পড়লেও মুখে কোনো কথা বললেন না পারুল বালা, পাশে বসে মৃণাল কপালে হাত রাখলো তাঁর, দাপুটে মানুষটার এই চেহারা তাকেও দুঃখ দিচ্ছিলো। বড়ো মা কে ঘুম থেকে উঠতে দেখে সৌম্য ঘরে এসে ঢুকলো,
বাড়ি যেতে হবে তো বড়ো মা! অনেক দিন তো হলো!
হাসলেন পারুল বালা, তার স্মিত মুখের হাসি সবাইকেই স্বস্তি দিচ্ছিলো। ইতিমধ্যেই সরমা এবং বিমল অষ্ট মঙ্গলা থেকে ফিরে তাঁকে দেখতে এলো। তারা আসায় অনেকদিন পরে বাড়ি তে আনন্দের জোয়ার বইছিল। রমণী বাবুও এসে পারুল বালা কে প্রতিদিন দেখে যাচ্ছিলেন। স্যারের সঙ্গে দেখা করে এসে বিমল বড়ো মার কাছে বসলো।
কেমন আছেন বড়ো মা?
জামাই কে দেখেই তাড়াতাড়ি মাথার ঘোমটা টেনে উঠে বসার চেষ্টা করছিলেন পারুল বালা, সৌম্য তাঁকে ধরে বসিয়ে দিলো।
আহ! বড়ো মা! বিমল আমাদের ঘরের ছেলে, তার কাছে আবার লজ্জা কি!
আপনি শুয়ে থাকুন বড়ো মা, আপনাকে উঠে বসতে হবে না,
শশব্যস্ত হয়ে বললো বিমল, ইতিমধ্যেই সরমা সেখানে ঢুকে এসেছিলো, সে লজ্জা জড়ানো মুখে বড়ো মার পাশে বসলো।
নিজের সংসার গুছিয়ে নিয়েছো তো বাছা?
সরমা মাথা নাড়লো,
আস্তে আস্তে করছি বড়ো মা,
পারুল বালা ব্যস্ত হলেন,
আহা! আবার আস্তে আস্তে কেনো? একা সব কিচু পারচো নে নাকি! তালে বউ দিদি কে না হয় সঙ্গে নে যাও!
তারপরেই ওখানে বসে থাকা মৃণালের দিকে তাকালেন পারুল বালা,
যাও মা, একটু ননদের সংসার গুচিয়ে দে এসো, সে ছোটো মেয়ে, একা একা এতো কিচু পারবে নে।
মৃণাল ঘাড় নাড়লো, সে মুখে কিছু বলার আগেই সৌম্য এগিয়ে এলো,
আমরা সারাদিন না থাকলে তোমার অসুবিধা হবে না তো বড়ো মা?
করুণা আচে তো! আর বউমার বাড়ির নোকেরাও আচে! আমার কোনো অসুবিধে হবে নে,
প্রায় জোর করেই সৌম্য এবং মৃণাল কে পাঠিয়ে দিলেন পারুল বালা, যাবার সময় করুণা কে সমস্ত কিছু পই পই করে বুঝিয়ে দিলো মৃণাল। এখানে এসেই তাকে নতুন শাড়ি থেকে প্রসাধন সামগ্রী সব কিছুই কিনে দিয়েছিলো মৃণাল, তাও তার মুখের হাসি ফেরেনি। তার দুঃখের কারণ মৃণালের অজানা ছিল না, সে করুণা কে সঙ্গে করে নিয়ে এসে খানিকটা হলেও নিশ্চিন্তে ছিলো।
সরমা র নতুন বাড়ি খুবই পছন্দ হলো মৃণালের, দুই ননদ বৌদির হাতে হাত মিলিয়ে ঘর গোছানো শুরু হলো। সদ্য সংসারী সরমা র তুলনায় মৃণাল এখন অনেকটাই বেশি পটু, তার বিভিন্ন রকম জিনিসের ফরমায়েশি তে সৌম্য এবং বিমল ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লো। সারা দিনের পরিশ্রমে ননদের নতুন বাসস্থান মোটামুটি বাসযোগ্য করে তুললো মৃণালিনী। দিনের শেষে তাদের মৃণালের বাড়িতে গিয়ে রাতে থাকার ব্যবস্থা হলো, সারাদিন কাজের পর নতুন উদ্যমে হেঁসেল ঠেলার উৎসাহ তাদের কারোরই আর ছিলো না।
পরের দিন ঘুম থেকে উঠে চায়ের টেবিলে বসে বিমল কে কলকাতা ঘুরে দেখানোর আবদার করলো সরমা, আগের বার বৌদির সঙ্গে কলকাতা ঘুরলেও দাদার আপত্তিতে বিমলের সঙ্গে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। চা পর্ব মেটার বেশ কিছুক্ষন পরেই এক এক করে বিমল, সরমা এবং তার পরেই সৌম্য বেরিয়ে গেলো। সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পরে বড়ো মার ঘরে উপস্থিত হলো মৃণালিনী, পারুল বালা ঘুমিয়ে ছিলেন, করুণা সেখানে ছিলো না।
এখানে এসে থেকেই বড়ো মার পেছনে ব্যস্ততায় আলাদা ভাবে করুণার খেয়াল রাখা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি, তার খুব বেশি প্রয়োজনীয়তাও ছিলো না। আজ অনেকদিন পরে ব্যস্ততা কম থাকায় করুণার কথা মনে পড়লো মৃণালের, তাকে খুঁজতে খুঁজতে সে ছাদে এসে উপস্থিত হলো। করুণা ছাদের আলসে তে হেলান দিয়ে নিচের রাস্তার দিকে তাকিয়ে অন্য মনস্ক ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো, বউ দিদি কে আসতে দেখে ফিরে তাকালো।
কিরে! কলকাতা ভালো লাগছে?
করুণা কোনো উত্তর দিলো না, তার চোখে মুখে বিরক্তি প্রকাশ পাচ্ছিলো। তার মুখের অভিব্যক্তির কারণ মৃণালের অজানা ছিলো না, সে নিজে থেকেই বললো,
বাড়ি ছেড়ে মন খারাপ? চিন্তা করিস না, আর কদিনের মধ্যেই ফিরে যাবো।
চিন্তে কেনে করবো বউ দিদি! আমি তোমাদের বাড়ির কাজের নোক, যা কইবে তাই করতে হবে নি বলো? আমার কতার কি দাম আচে!
এতক্ষনে কাটা কাটা গলায় উত্তর দিলো করুণা, মৃণাল মনে মনে চমকে উঠলেও মুখে হাসি ধরে রেখেই বললো,
সে আবার কি কথা! তোকে আমরা কোনোদিনও কাজের লোক বলে ভেবেছি করুণা? বাড়িতে সবাই তোকে ভালোবাসে, আর বড়ো মা তো তোকে নিজের মেয়ের মতোই দেখেন। তাই জন্যেই তো বউ কে না নিয়ে এসে তোকে সঙ্গে করে নিয়ে এলাম। তুই যা যা চেয়েছিস সব তোকে কিনে দিয়েছি, আর কোনো কিছু দরকার লাগলে বল?
আর কিছু লাগবে নি বউ দিদি, আমারে বাড়ি নে চলো! এখেনে তাখতি আমার মন চায় নে আর!
প্রায় ধরে আসা গলায় এবার বললো করুণা, মৃণালের সত্যিই খারাপ লাগলো,
জানি তোর মন খারাপ হচ্ছে, কিন্তু উপায় কি বল? আমরা তো ইচ্ছে করে এখানে বসে নেই! বড়ো মা সুস্থ হয়ে গেলেই ফিরে যাবো, কটা দিন একটু ধৈর্য্য ধর,
নরম গলায় বললো মৃণাল, বউ দিদির নরম গলা বোধ হয় করুণা কে একটু খুশি করলো, সে চুপ করে রইলো।
সরমার তো হয়ে গেলো, এবার তো তোর পালা! বড়ো মা একটু সুস্থ হয়ে গেলেই তোর বিয়ের কথা বলবো ভেবেছি, আমরা আবার খুব আনন্দ করবো, বুঝলি তো!
মুচকি হেসে করুণার দিকে তাকিয়ে বললো মৃণালিনী, করুণা চমকে উঠে বিস্ফারিত দৃষ্টিতে বউ দিদির মুখের দিকে তাকালো, তারপর নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললো,
আমার বে নিয়ে ভেবো নি বউ দিদি, আমি তোমাদের কেউ নই গো!
তাই নাকি! তবে সেটা তুই ভাবিস, আমরা তো তোকে বাড়ির মেয়েই ভাবি! দ্যাখনা, বাড়ি ফিরেই সব ব্যবস্থা করে ফেলি কিনা! বউ দিদির ওপর না হয় একটু ভরসাই রাখ!
বলতে বলতেই নিচের থেকে বাবার ডাক কানে এলো মৃণালিনীর, সে হাসতে হাসতে সিঁড়ির দিকে এগোলো। বউ দিদির কথা যে শুধুই কথার কথা নয় তা করুণা মনে মনেই জানে, তাই বাড়িতে ফিরে তার বিয়ের চেষ্টা শুরু হবে ভেবেই তার মুখ শুকিয়ে গেলো। সে করুন মুখে মৃণালিনীর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
বিকেলে প্রায় ফাঁকা বাড়িতে বড়ো মার কাছে বসেছিলো মৃণাল, অনেকদিন পরে আজ সৌম্য তার কলেজে গিয়েছিলো। এমন সময় নিচের থেকে কড়া নাড়ার আওয়াজ ভেসে এলো, ব্রজ দরজা খুলতে গিয়েছিলো, মৃণাল কে এসেছে দেখার জন্যে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিলো। নিচে আসা আগন্তুক কে দেখে সে প্রায় চমকে উঠলো, সহপাঠী সুভাষ কে দেখেই তার বড়ো মার আগের বারের করা অশান্তির কথা মনে পড়লো। বড়মা আবার বিরক্ত হন কিনা ভাবতে ভাবতেই সুভাষ ওপরে উঠে এলো,
তোমাকে অফিস যাওয়ার পথে,কদিন ধরেই লক্ষ্য করছিলাম, আজ ভাবলাম একবার ঘুরে যাই,
বললো সুভাষ, তার গলায় অস্বস্তির ভাব মৃণালিনীর নজর এড়ালো না,
আরে! খুব ভালো করেছো! এসো এসো, ভেতরে এসো, কেমন আছো বলো?
শশব্যস্ত হয়ে সুভাষ কে বসার ঘরে নিয়ে যেতে যেতে বললো মৃণালিনী। ব্রজ দা কে চায়ের কথা বলে এসে তার উল্টোদিকের চেয়ারে বসলো মৃণাল,
তোমাকে আসলে একটু অন্য কথা বলতে চেয়েছিলাম, তাই তুমি কলকাতায় এসেছো দেখেই সাহস করে চলে এলাম,
একটু কুণ্ঠিত গলায় বললো সুভাষ, মৃণালিনী অবাক হলো, মুখে কিছু না বলে কৌতূহলী দৃষ্টিতে সুভাষের মুখের দিকে তাকালো,
ওই যে তোমার ননদ, মানে বিভার কথা বলছি, মেয়েটির কি বিয়ে হয়ে গিয়েছে?
না, হয়নি এখনও, তবে হয়ে যাবে নিশ্চয়ই!
একটু বিরক্তির গলায় বললো মৃণালিনী, সুভাষের বিভা কে দেখতে গিয়ে পছন্দ না হওয়ায় সে সুভাষের উপর মনে মনেই ক্ষুব্ধ হয়েছিলো। মৃণাল এর গলার বিরক্তি সুভাষের নজর এড়ালো না,
আমি আসলে ওই ব্যাপারেই একটু কথা বলতে চেয়েছিলাম, তোমাকে বলেছিলাম তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই, বাবার সঙ্গে পণ নেওয়া নিয়ে আমার একটু বিরোধ হয়েছিলো, তাই আমি পিছিয়ে গিয়েছিলাম তখন। কিন্তু এখন বাবা আর আপত্তি করছেন না আমার কথায়, তাই নতুন করে ওর প্রসঙ্গেই ভাবছিলাম। তুমি বলেছিলে না, আমিও পরে ভেবেছি, বিয়ের পরে আমি নিজেই ওকে পড়াশুনা শিখিয়ে নিতে পারি, তাই যদি ওনাদের কোনো আপত্তি না থাকে তবে তুমি একবার কথা বলে দেখতে পারো।
মনে মনে এতটাই পুলকিত হলো মৃণালিনী, যে আর ধৈর্য্য রাখতে না পেরেই তাকে নিয়ে বড়ো মার ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালো। পারুল বালা খাটে বসেছিলেন, তাদের দুজনকে দেখে একটু অবাক চোখে তাকালেন।
বড়ো মা, ও সুভাষ, মনে আছে ও বিভাকে দেখতে গিয়েছিলো,
পারুল বালা মনে মনেই একটু লজ্জিত হলেন, মুখে কিছু না বলেই সুভাষের দিকে তাকালেন, সুভাষ তাঁকে নিচু হয়ে প্রণাম করলো।
ও বিভার ব্যাপারে কথা বলতে এসেছে, আপনি একটু অবনি কাকা কে বললে বিরোধ মিটিয়ে বিয়েটা হয়ে যেতে পারে,
খানিকক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন, তারপর ধীরে ধীরে মাথা নাড়লেন পারুল বালা,
এ ব্যাপারে তুমি তোমার সোয়ামি র সঙ্গেই কতা কও বাছা! এমনিতেই তো বিমলের সঙ্গে সম্বন্ধ না হওয়ায় অবনী একটু রেগেই আচে!
পারুল বালার কথা কিছু বোধগম্য হচ্ছিলো না সুভাষের, সে অবাক দৃষ্টিতে মৃণালিনীর দিকে চাইলো। মৃণাল একটু অপ্রস্তুতে পড়লো, সে একদম ভুলেই গিয়েছিলো যে সরমার বিয়ের জন্যে সৌম্য বড়ো মার কাছে কি কথা বলেছিলো সেদিন। তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিলো মৃণাল, সুভাষের দিকে ফিরে বললো,
চলো তোমাকে সব টা বুঝিয়ে বলছি।
বাইরে এসে সে সবে মাত্র সুভাষ কে সব কিছু খুলে বলতেই শুরু করেছিলো, সৌম্য কলেজ থেকে ফিরে সিঁড়ি দিয়ে উঠে এলো। সুভাষ কে সে আগে কখনো দেখেনি, তাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বউয়ের দিকে তাকালো। মৃণাল তাড়াতাড়ি এগিয়ে এলো, সুভাষের সঙ্গে সৌম্যর পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার এখানে আসার কারণ বুঝিয়ে বললো। সব কিছু শুনে সৌম্য মাথা নাড়লো,
ঠিক আছে, আমি অবনী কাকার সঙ্গে কথা বলবো, উনি সবটা শুনলে আর আপত্তি করবেন না নিশ্চয়ই। কিন্তু আপনিও আপনার বাড়ির দিকটা দেখে রাখুন, ভবিষ্যতে আবার আপনার বাবার সঙ্গে নতুন কোনো সমস্যা তৈরি হলে আমি আমার কাকার কাছে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবো না কিন্তু।
সুভাষ লজ্জিত হলো, সে সৌম্য কে কোনো বিপাকে ফেলবে না বলে কথা দিলো। সুভাষ চলে যাবার পরে সৌম্য কে নিয়ে ঘরে ঢুকে এলো মৃণাল। সে যে একটু আগেই বড়ো মার সামনে ভুল করেই বিভার কথা বলে ফেলেছে, সেটা সৌম্য কে হাসতে হাসতে জানালো।
এবার অবনী কাকা এমনই রাজি হয়ে যাবেন, বিভার পাত্র পাওয়া যাচ্ছে না এমনিতেই তাই সুভাষের কথায় তিনি এমনিতেই উৎসাহ দেখাবেন,
মুচকি হেসে বললো সৌম্য।
যাবার দিন ক্রমশই এগিয়ে আসছিলো, অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন পারুল বালা, সৌম্য তাঁর ঘরে ঢুকে বললো,
চলো বড়ো মা, এবার বাড়ি যাই,
মুখে হাসি ফুটে উঠলো তাঁর, অনেকদিন ধরেই বাড়িতে ফেরার জন্যে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। করুণার মুখেও হাসি ফুটলো, সে তাড়াতাড়ি নিজের এবং পারুল বালার জিনিসপত্র গোছ গাছ করতে শুরু করলো। ফেরার দিন গাড়িতে ওঠার আগে নমস্কার করলেন রমণী বাবু,
এবার অসুস্থ হয়ে এসেছিলেন বেয়ান, পরের বার কিন্তু এমনই আসতে হবে,
হাত জোড় করলেন পারুল বালা,
চারিদিকে কতো আলো! সব আঁধার সরিয়ে দেয়! মন ভালো হয়ে যায়! নিশ্চয়ই আবার আসবো খনে বেয়াই মশাই!
বাড়িতে ফিরে এসেও কিন্তু খুব বেশি সুস্থ হলেন না তিনি, করুণা কে তাঁর সারাদিনের সেবার জন্যে রাখা হলো। এতদিন পরে বাড়িতে ফিরে কিছুটা হলেও শান্তি পেলেন পারুল বালা, করুণার মুখেও খুশি উপছে পড়ছিলো।
কলকেতা ফিরে যাবার আগে অবনীর সঙ্গে একটু কতা পেড়ে যেও বাছা! সে বোধ করি একটু কষ্টই পেয়েছে মনে মনে,
সৌম্য কে একা পেয়ে বললেন পারুল বালা,
হ্যাঁ, বড়ো মা তুমি চিন্তা কোরো না, সে আমি ইতিমধ্যেই বলেছি। তোমার শরীর খারাপ তাই তোমাকে বলি নি আর, অবনী কাকা একটুও রেগে নেই, উনি আমাকে সুভাষের সম্পর্কে খবর নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি কিছুদিনের মধ্যেই সব টা ওনা কে জানিয়ে দেবো, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।
পারুল বালা খুশি হলেন, সৌম্য কলকাতায় ফিরে গেলো, যাবার আগে মৃণাল কে পই পই করে বুঝিয়ে দিয়ে গেলো করুণা কে বড়ো মার সেবায় আটকে রাখার জন্যে, যাতে সে আলোকের সঙ্গে খুব বেশি যোগাযোগ রাখতে না পারে।
ক্রমশ