যদি তুমি চাও পর্ব-১৮+১৯

0
311

#যদি_তুমি_চাও
লেখনীতেঃ অনামিকা

১৮.
বখতিয়ার ব্যস্ত তখন নিজের কাজে তবে শত ব্যস্ততা থাকলেও তার কাজে মন নেই আর এমন সময় আবিরের ফোন কল যেনো তাকে আরও বেশী ভাবনায় ফেলে দিলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে চিন্তিত স্বরে আবির বললো,
-অন্তরাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
কথাটা শোনা মাত্রই তার চোখ-মুখ জুড়ে রাগের ছাপ স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। সে কণ্ঠে রাগ রেখেই বলে,
-পাওয়া যাচ্ছে না মানে? তুমি কোথায় ছিলে? একটা দ্বায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারো না তবে পারোটা কী তুমি! লিসেন আবির যে করেই হোক মেয়েটাকে খুঁজে বের করো নয়তো তোমার জন্য খুব খারাপ হয়ে যাবে ব্যপারটা। আন্ডারস্ট্যান্ড?
আবির আবারও বলে,
-আমি অনেক খুঁজেছি ভার্সিটি, বাড়ি সব জায়গায় খুঁজেছি কোথাও পায়নি ফোন ট্রেস করবো সেটারও উপায় রাখেনি সে। ফোন বন্ধ করে দিয়েছে। আমি অনেক চেষ্টার পরেও না পেরে তারপর আপনাকে জানাতে বাধ্য হলাম।
এতে তার রাগ আরও বাড়লো সে বললো,
-তোমার দ্বায়িত্ব ছিল ওর ক্লাস টাইম শেষ হওয়ার আগেই গিয়ে উপস্থিত থাকা এমনকি আমি এরজন্য তোমার অফিসিয়াল কাজও কমিয়ে দিয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে তোমায় দ্বায়িত্ব দেওয়াটাই ভুল হয়েছে আমার।
-আমি সঠিক সময়েই গিয়েছিলাম তবে সে সময়ের আগে বেরিয়েছে সেখান থেকে।
বখতিয়ার টেবিলের উপরে থাকা পেপার ওয়েটটা ছুঁড়ে মারলো মেঝেতে। টেবিলে ধাক্কা দিয়ে বললো,
-ড্যাম।
তারপর ফোন কানে রেখেছেই সেখানটাতেই পায়চারি শুরু করে দিলো মাথায় আঙুল দিয়ে খোঁচাতে খোঁচাতে বললো,
-তোমার শাশুড়ী মা’কে এই ব্যপারে জানিয়েছ?
-শাশুড়ী কীসের শাশুড়ী!
-অন্তরার মা, মিসেস রুবি খান। তুমি এই মুহুর্তে তার বাড়িতে যাবে যদি আমার ধারণা ঠিক হয়ে থাকে তবে ওকে ওখানেই পাবে।
-আমি একা যাবো?
-ভয় পেল?
-অন্তরা যদি আসতে না চায় তখন তো ওর মা সাথে তার বাড়ির কর্মরত লোকগুলো এসে আমাকে বাধা দেবে। তাই…
-এসব স্টাফ শুধু একটা ধমক খেলেই চুপ করে যায় আর মিসেস খানের কথা বলছো!
এইটুকু বলে বখতিয়ার হাসে তারপর আবার বলে,
-নিশ্চিন্তে যাও সে তোমায় আটকাবে না। আর রইলো অন্তরার কথা, তবে সে তোমার বিয়ে করা বউ। আসতে না চাইলে ঘাড় ধরে টেনে আনবে তাও বেশী জিদ দেখালে দু চারটে থাপ্পড় লাগিয়ে নিয়ে আসবে।
-আপনি বলছেন এসব!
-হ্যা বলছি। কেনো কী হয়েছে তাতে? এসব বিষয়ে চিন্তা না করে নিজের বউকে নিজের বাড়িতে এনে রাখার ব্যবস্থা করো। নইলে তুমি জানো আমার একটা ফোন কলে তোমার কতো বড়ো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
-ইয়েস স্যার।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আবির। বখতিয়ার ফোন রেখে দেয় কিন্তু সাথে সাথেই তাকে আবারও ফোনটা হাতে নিতে হয়। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে তার মেজাজটা খিটখিটে হয়ে আসে। সাথে সাথে ফোনটা ভেঙে ফেলে সে। আর চেঁচিয়ে বলতে থাকে,
-আর কতো? আর কতো দিক সামলাবো আমি? মিসেস রুবি খান তোমার এন্ড টাইম ঘনিয়ে এসেছে।
এই বলে অফিসের ল্যান্ডলাইন থেকে আবিরকে ফোন দেয় সে। আবির রিংটোন শুনে রাস্তার সাইডে বাইক থামিয়ে ফোনটা বের করে স্ক্রিনে নম্বরটা দেখে অবাক হয়। একটু আগেই না কথা হলো আবার কী? সে ফোন রিসিভ করে কথা বলতে থাকে।

এইদিকে রুবি ব্যস্ত সেও চিন্তিত। রাফিদকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না এদিকে তার একাউন্ট থেকে দশ লাখ টাকা সরানো হয়েছে তাও সেটা রাফিদ করেছে। একজন স্টুডেন্ট হয়ে এতো টাকা রাফিদের কোন কাজে লাগে সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না রুবি। ছেলে যদি তার আগে থেকেই খরচটা বেশী করতো তবে এসব নিয়ে ভাবার কোনো কারণ ছিল না তার। আশাদুজ্জামান খানের ছেলে হয়েও তার চলাফেরা ছিল সাদাসিদে তাই দেখে কারো কাছে তার বাবার নাম নিলে বিশ্বাসই করতো না যে ও সত্যি বলছে। এমনকি তার বাবা যাওয়ার পরেও সে একই রকম জীবন যাপন করে আসছিল। সেই ছেলে এক রাতে এতোগুলো টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেল সেই বিষয়টা এবং তার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে সেটা রুবিরমাথায় কিছুতেই ঢুকতে চাইছে না।

রুবি যখন ছেলের চিন্তায় মগ্ন তখন তার কাছে একটা কল আসে বাড়ি থেকে কেউ ফোন দিয়েছে এখন আবার কার কী হলো তারপর হঠাৎই রুবির মাথায় আসে হয়তো রাফিদ হবে তাই চট করে ফোন রিসিভ করেন তিনি তবে নিরাশ হোন ওপাশ থেকে অন্তির আওয়াজ শুনে। অন্তি বলে,
-মা তুমি কোথায়?
-কী হয়েছে অন্তি?
-মা তুমি একবার বাড়িতে এসো প্লিজ।
-অন্তি আমি ব্যস্ত আছি এসে কথা বলছি।
রুবি আর কথা শোনার প্রয়োজন মনে করলেন না তার মাথায় এখন রাফিদের চিন্তা ঘুরছে।

মা ফোন রেখে দেওয়ার অন্তি মনে মনে আহত হয়। তার মা তার কথা শোনার প্রয়োজনটুকুও বোধ করলেন না। ফোন রেখে দিয়ে পেছন ফিরে সে আর তখন আবির বলে,
-কী হলো কোথায় তোমার মা?
-মা ব্যস্ত আছে বললো।
-এখন আর অপেক্ষা করে লাভ নেই এবার জেদ না করে আমার সাথে চলো তো।
অন্তি আবিরের দিকে তাকায় দেখতে পায় আবির তার দিকেই এগিয়ে আসছে। দুজন মহিলা স্টাফ ছিল এখানে তারা আবিরকে অন্তির খুব কাছে যেতে দেখে মাথা নিচু করে সরে যায় সেখান থেকে অন্তি সেটা দেখতে পায় কিন্তু তার এই মুহুর্তে বলার মতো কিছুই নেই। সে বললেই যে আবির শুনবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই তবুও সে আবিরের বুকে হাত রেখে তার এগোনোর পথে বাধা দেয় আর বলে,
-আর এগোবেন না প্লিজ এখানে অনেকেই আছে দেখে চলে গেলেও আমি জানি তারা আড়াল থেকে ঠিকই দেখছে।
আবির এগিয়ে যেতে বাধা পায় তবে মাথাটা ঠিকই এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সে। মুখটা অন্তির কানের কাছে নিয়ে বলে,
-যদি তুমি চাও আমি সবার সামনে তামাশা না করি তবে আমার সাথে যাবে নইলে আমি কী কী করতে পারি তার ধারণাও নেই তোমার।
অন্তির গলা শুকিয়ে আসে কিছু বলতে চেয়েও পারে না বলতে। আবির তার চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলে,
-আর কতো পুরোনো প্রেমিকের কথা ভেবে কষ্ট পাবে সাথে আমাকেও কষ্ট দেবে বলো? তুমি মানো আর না মানো তুমি আমার বউ আর আমি তোমার স্বামী সেখান থেকে দেখলে ওই ছেলেটা তোমার কাছে পরপুরুষ যাকে দেখা দূরে থাক যার কথা চিন্তা করাটাও তোমার কাছে হারাম।
-আপনি কী চান বলুন তো! আপনি নিজেই বলেছিলেন আমার মতো আপনাকেও জোর করে এই বন্ধনে বেঁধে দেওয়া হয়েছে তাহলে?
-জোর করে বেঁধে দেওয়া সম্পর্কটার প্রতি এখন আমার মনের মাঝে অনুভূতি জন্মেছে, সম্মান জন্মেছে এই মনে আমাদের সম্পর্কের প্রতি আর তোমার প্রতি….
অন্তি অবাক চোখে তাকায় আবিরের দিকে। আবিরের দৃষ্টি আজ অন্যরকম, কেমন ঘোর লেগে আছে ওই চোখ দু’টোতে। অন্তি নিজেকে সামলে নিয়ে চোখ নামিয়ে বলে,
-কিন্তু আমার মনে যে এখনও এই সম্পর্কের প্রতি দ্বিধা ছাড়া কিছুই নেই সেটার কী হবে আবির?
আবির চোখ বুঁজে তারপর বলে,
-তোমাকে কিছু ভাবতে হবে না যা ভাবার এরপর থেকে সব আমার উপর ছেড়ে দাও।
অন্তি তাও বলে,
-আপনি চলে যান, আমি আর সেখানে ফিরতে চাই না।
আবিরের এবার বিরক্ত লাগছে। আর আটকে রাখতে পারছে না নিজের ভেতরের রাগটা। সে ভেবেছিলো ভালোভাবে কথা বললে মেয়েটা হয়তো তার কথার মায়ায় জড়িয়ে তার সাথে যেতে রাজি হবে কিন্তু এখন তো… নাহ, আর ধৈর্য্য ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সে হাসার চেষ্টা করে বললো,
-অন্তরা আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না। ফল ভালো হবে না।
আবিরের কথার মাঝে হুমকি ছিল নাকি অন্যকিছু তা বুঝতে পারে না অন্তি কিন্তু এখন তার কোনো পথ নেই। মাও নেই উপস্থিত। সে কী চলে যাবে?
ভাবনার মাঝেই হাতে টান অনুভব করে অন্তি। আবির তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। হাতে ব্যথা পাচ্ছে সে এমনই শক্ত করে ধরেছে হাতটা। একবার থামলো আবির তারপর প্রশ্ন করলো,
-তোমার ব্যাগ আর মোবাইল কোথায়?
অন্তি ভেজা গলায় বলে,
-আমার ঘরে।
-উফফফফ, অন্তরা। আমার ঘর আমার ঘর বলো না। এখানে তোমার বলতে আর কিছুই নেই। এখন যা আছে সবটাই আমি বুঝেছ? তোমার বলতে শুধু আমি এই আবির আছি বাকি সব ভুলে যাও। এবার লক্ষী বউয়ের মতো স্বামীর কথা শোনো দেখি।
অন্তি চোখ তুলে আবিরের দিকে তাকায়। আবির বলে,
-কাউকে ডেকে বলো ব্যাগটা এনে দিতে। জানি তুমি ভাবছো তোমায় পাঠালেই পারি কিন্তু আমি এতোটাও গাধা নই ডিয়ার ওয়াইফ। আমি তোমাকে ছেড়ে পালানোর সুযোগ করে দিচ্ছি না আর।
অন্তির খুব খারাপ লাগে, কষ্ট হয়, ব্যথা হয় তবুও সে চোখের পানি ফেলতে পারে না। এই লোকটা আদিখ্যেতা দেখিয়ে তার চোখের পানি মুছিয়ে দিতে আসবে সেটা সে চায় না। একেবারেই না।

চলবে…….

#যদি_তুমি_চাও
লেখনীতেঃ অনামিকা

১৯.
একটা অসম্পূর্ণ বিল্ডিং যার কাজ চলছে এখনও। আজ সব শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে কোনো কারণ ছাড়াই। সন্ধ্যে নেমে এসেছে ঠিক এমন সময়ে বিল্ডিং এর সামনে একটা গাড়ি এসে থামে। সেই গাড়ি থেকে নামে কেউ একজন। নামার পরে নিজের কয়েকজন বিশ্বস্ত লোকেদের সাথে কথা বলে নেয় সে। তাদের মধ্যে একজন বললো,
-স্যার এইভাবে তাকে আটকে রাখাটা কী ঠিক হচ্ছে?
-আপনাকে কাজ দেওয়া হয়েছে সেটা মন দিয়ে করুন এসব ইমোশন দিয়ে পেট চলবে না।
-জি স্যার।
-এবার যান গিয়ে তাকে ঘুম থেকে তুলুন আমি আসছি।
-ওকে স্যার।
ওদের মাঝে থেকে দু’জন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। বিল্ডিং এ এখনো ইলেক্ট্রিসিটি কানেকশন কমপ্লিট করা হয়নি আবার লিফটের মেকানিক্যাল পার্টসের পরীক্ষা করা এখনও বাকি তাই সিঁড়ি বেয়েই ওঠা লাগছে তাদের।

আরও দু’জন লোক নিচেই রয়ে যায় তাদের মধ্যেই একজন বলে,
-স্যার আসুন।
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় সে তারপর কয়েক কদম এগিয়ে যায় আর আশপাশটা ভালো করে দেখে নেয় সে। একপর্যায়ে তার চোখ গিয়ে আটকে যায় পাশের পার্কের ভেতরে রাখা বেঞ্চে বসে থাকা এক কন্যার উপর। সে বিল্ডিং এর দিকে না এগিয়ে পথ পরিবর্তন করে পার্কের দিকে যেতে থাকে। কিছুদূর যাওয়ার পরে বুঝতে পারে তার সাথে আরও দু’জন যে ছিল তারাও পেছন পেছন আসছে। সে থামে, পেছনে না ফিরেই হাত তুলে ইশা করে আর না এগোতে তারপর আবারও হাঁটতে থাকে। সামনের বিশাল রোডটা পার করে পার্কে গিয়ে ঢোকে সে। এগিয়ে গিয়েই বসে পড়ে মেয়েটির পাশে। মেয়েটি হয়তো বুঝতে পারে তার পাশে এসে কেউ বলেছে তাই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে আর সাথে সাথে তার চেহারার মলিন ভাবটা কেটে যায়। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে,
-মেঘ!
মেঘও সাথে সেই সাথে তারপর বলে,
-হ্যা আমিই।
-আপনি এইখানে?
-তুমি এইখানে?
-প্রশ্ন আগে আমি করেছি, মেঘ।
-আমি পরে করেছি।
-তাহলে উত্তর কে আগে দেবে?
-অবশ্যই তুমি।
ছায়ার চেহারায় রাগী ভাব সাথে হাসি, মেঘও হাসে। সে বলে,
-আচ্ছা আচ্ছা আমিই উত্তর দিচ্ছি। আসলে ওই যে ওপাশের বিল্ডিং টা দেখছো?
ছায়া মেঘের হাতের ইশারা অনুসরণ করে তারপর সামনে দেখে মাথা নাড়িয়ে ছোট্ট করে উত্তর দেয়,
-হু।
মেঘ হাত নামিয়ে ছায়ার দিকে ফিরে বলে,
-সেই তোমায় এই জায়গার সম্পর্কেই বলেছিলাম। তোমার মনে থাকলেও থাকতে পারে।
-হুম, আছে।
-আমার আসার কারণ জানলে এবার তোমারটা বলো।
-আপনি তো আপনার কাজ কতদূর এগোলো সেটা দেখতে এসেছিলেন তাই পার্কে আসার কারণা এখনও অজানা আমার কাছে।
-তোমায় দেখতে পেয়ে এসেছি।
মেঘের সোজা উত্তর। ছায়া কিছুটা অবাক হয় আবার তার ভালোও লাগে। সে বলে,
-আমায় দেখে!
-কেনো? সমস্যা হলো বুঝি?
-উহু, আমি তো একা বোর হচ্ছিলাম এখন বেশ ভালো লাগছে।
-একা একা এখানে আসার মানে ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না আমি!
মেঘ কিছু একটা বলতে চাইছে। আসলে সে কিছু জানতে চায় এই এক সুযোগ কৌশলে জেনে নেওয়া যাবে ভেবেই প্রশ্ন করে,
-কোথাও বয়ফ্রেন্ডের অপেক্ষা করছো না তো!
ছায়া ভ্রু-কুঁচকে তাকায় তারপর বলে,
-হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলেন? আপনি আসলে কী জানতে চাইছেন বলুন তো?
মেঘ বলে,
-সত্যি বলবো?
-অবশ্যই বলবেন। আমি সত্য বলাটাই বেশি পছন্দ করি।
-আমি আসলে জানতে চাইছিলাম বলটা হাওয়ায় ভাসছে কিনা। এমন হলে ক্যাচ ধরার একটা চেষ্টা করতাম।
ছায়া মেঘের কথার মানেটা ঠিক বুঝলো না সে প্রশ্ন করার জন্য মেঘের দিকে ঝুঁকতেই তার কাছে একটা কল আসে। রিসিভ করে হু, হা, আচ্ছা বলেই রেখে দেয়। ফোন রেখে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,
-আমাকে যেতে হবে মেঘ। আমি ভীষণ দুঃখিত আপনাকে এইভাবে একা রেখে যেতে হচ্ছে যেখানে কিনা আপনি আমার জন্যই পার্কে ঢুকেছেন…
-হেয়েই, টেক আ ডীপ ব্রিথ এন্ড টেল মি হোয়াট ইজ দ্য একচুয়াল প্রবলেম?
ছায়া দাঁড়িয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
-আমি আসলে আমার বড় বোন আর দুলাভাইয়ের সাথে এসেছিলাম এখানে। ওদের মাঝে কাবাবের হাড্ডি হতে চাইনি বলে একা এখানে বলেছিলাম। এখনই আপু ফোন দিয়ে জানালো ওরা ব্যাক সাইডের গেইটে পৌঁছে গেছে তারপর ঠিক করেছেন ওই গেইট দিয়েই বেরিয়ে যাবে। এই দেখুন না আযানের সময়ও হয়ে এলো তাই আমাকে ফোন দিয়ে ডেকে পাঠালো।
-ওকে ওকে। এতে এতোটা খারাপ লাগার কোনো কারণ নেই ছায়া। তুমি আসতে পারো।
-বাই।
ছায়া আর অপেক্ষা করলো না চলে গেল। মেঘ সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। মেয়েটাকে দেখলে তার অন্য সবকিছু কেমন বেরিয়ে যায় মাথা থেকে সে নিজেই বুঝে উঠতে পারে। আজ হঠাৎ এমন একটা প্রশ্ন করলো কে জানে ছায়া বুঝতে পেরে কী মনে করবে তাকে। মেঘের কাছেও একটা কল আসে, তাকে এখনি যেতে হবে বিল্ডিং এর ভেতরে।

ছায়া হাঁটছে আর ভাবছে মেঘের প্রশ্নের মানে কী হতে পারে আর তখনই তার খেয়াল হয় মেঘ তাকে তুমি বলে সম্বোধন করেছে আজ। আসলেই কী তাই? এমন একটা পরিবর্তন সে আগে কেনো লক্ষ্য করলো না! ছায়ার মাথায় প্রশ্ন ঘোরে আর ভাবতে ভাবতেই এসে যায় তার বোনের কাছে। তারপর ওরা হাঁটতে শুরু করে। বাড়ি থেকে হেঁটে আসা যাওয়া করলে মাত্র কুড়ি মিনিট সময় লাগে তাই আর কোনো যানবাহনের প্রয়োজন বোধ করে না ওরা। সামনে তার আপু হাঁটছে দুলাভাই মাঝেমধ্যে আপুর হাত ধরতে আর সে সেটা ছাড়িয়ে নিচ্ছে। ছায়া পেছন পেছন হাঁটছে আর সেটা দেখছে। তার ভীষণ ভালো লাগছে আজ এমনটা দেখতে। বোনের সাথে তার সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয় তবুও আজ বোনকে এমন একজন জীবনসঙ্গীর সাথে দেখে তার মাঝে ভালোলাগা কাজ করছে। এরই মাঝে সে নিজের হাতে কারো হাত অনুভব করতে পারে। পাশে তাকায়। অস্পষ্ট স্বরে উচ্চারণ করে একটা নাম। ‘মেঘ’। তখনই তার বোনের ডাক কানে ভেসে আসে।
-ছায়া দ্রুত পা চালিয়ে আয়।
ছায়া সামনে দেখে ওরা অনেকটা এগিয়ে গেছে তারপর পাশ ফিরে তাকায় কিন্তু এখন তো কেউ নেই! এই একটু আগেই তো মেঘ ছিল এখানটাই। ওর পাশে হাঁটছিল সে। তবে কী সবটা ভ্রম ছিল? ঠিক যেমন মরিচিকা! হ্যা তাই তো। সে মেঘকে পেছনে ফেলে এসেছে সেই পার্কের মধ্যে আর এতক্ষণে মেঘ নিশ্চয়ই আর সেখানে দাঁড়িয়ে নেই। ছায়া নিজের হাতটা ছুঁয়ে দেয় সেই হাতের দিকে অবাক চোখে চেয়ে রয়।

মেঘ উঠে যায় সিঁড়ি বেয়ে। ষষ্ঠ তলায় তার কাজ। গিয়েই দেখে ছেলেটা নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সে এগিয়ে যায় ছেলেটার কাছে আর তখন উপস্থিত আরও চার জনের মাঝে একজন বলে,
-বেহুঁশ হওয়ার নাটক করছিল স্যার আমরা ঘাবড়ে গিয়ে বাঁধন খুলে দিয়েছিলাম আর তখনই ধাক্কা দিয়ে পালাতে চাইলো। ওরা দু’জন বাইরে না থাকলে এতোক্ষণ হয়তো পালিয়েও যেতো।
-কেউ দেখেনিতো?
-না, খুব সাবধানে ওকে আবারও ধরে আনা হয়েছে রাস্তার মানুষ কেনো কাক পক্ষীও টের পায়নি।
-গুড। এবার তোমরা যাও বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করো।
-ওকে স্যার।
ওরা চারজন বেরিয়ে গেল। ওরা জানে এখন ওদের কাজ বাইরে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দেওয়া। মেঘ তখন এগিয়ে যায় চেয়ারে বেঁধে রাখা ছেলেটির দিকে। তার মাথা তুলে একবার দেখে ছেড়ে দিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায়। রাগে তার শরীর কাঁপছে। এই ছেলেটাকে দেখে এখনই পিটিয়ে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার। আর ঠিক সেই সময়ই ছেলেটি বলে,
-ছায়াকে পটিয়ে ফেলেছেন দেখছি।
মেঘের কপালে ভাঁজ পড়ে চেহারায় চিন্তার ছাপ ফুটে ওঠে। তার চিন্তিত মুখ দেখে ছেলেটি হাসে,
-কেনো অন্তরার ফ্রেন্ডের কথা আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন এখন বুঝতে পারছি।
মেঘ তখন হা করে রয় এগিয়ে এসে প্রশ্ন করে,
-এই ছায়াই সেই ছায়া?
-কেনো এমন বোকামোর ভান ধরছেন মিস্টার বখতিয়ারুজ্জামান খান।
-রাফিদ, কথা ঘুরিও না উত্তর দাও। এই ছায়াই কী অন্তরার বেস্ট ফ্রেন্ড ছায়া?
রাফিদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। আর মেঘ সে উঠে দাঁড়ায়। তার চেহারায় এই মুহুর্তে অবাক হওয়ার ছাপ স্পষ্ট।

চলবে…..