শহর জুড়ে আলোর মেলা পর্ব-১২

0
380

#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১২

অতিরিক্ত ভয় আর আতঙ্কে আলোর শরীরে কাঁপুনি দিচ্ছে। শ্রাবণের তীক্ষ্ণ শাণিত নজর সরাসরি ওর মুখের উপরে নিবদ্ধ। এদিক থেকে ওদিক হলে যা ওকে পুড়িয়ে দিতে সক্ষম। দম বন্ধ করা পরিবেশ। মনে হচ্ছে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আপাতত রক্ষা পাওয়া যেতো। নির্জনতা কাটিয়ে শ্রাবণ মুখ খুললো,

> বিস্তারিত বলবে নাকি থা*প্প*ড় আরেকটা দিব? তোমার মুখটা মানুষের এতো প্রিয় কেন বুঝলাম না। যে পারছে এসে থা*প্প*র লাগিয়ে চলে যাচ্ছে। বিয়ের পর বউয়ের মুখে আজ অবধি একটা চুমু দিতে পারলাম না অথচ বাইরের মানুষ ঠিকই থা*প্প*ড় লাগিয়ে আনন্দ নিচ্ছে। সরকারি মাল পাইছে যখন যে পারছে এসে মেরে দিচ্ছে।

শ্রাবণের মাথা আউলে আছে। রাগে উল্টোপাল্টা বকছে। আলোর ঠোঁট পেচে বসে আছে। কিছু তিক্ত কথা শোনার জন্য প্রস্ততি নেওয়া প্রয়োজন। তবুও মিনমিন করে বলল,

> লোকটা ভীষণ খারাপ। লুবনাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল তাই বন্ধুরা মিলে ভেবেছিলাম উচিত জবাব দিব। চার বছর ওই প্রতিষ্ঠানে আছি।প্রতি সেমিস্টারে এসে ঝামেলা করবে তাই বুদ্ধি করলাম যদি গোটা ঝামেলাটাই গোড়া থেকে উপড়ে ফেলি তাহলে নিশ্চিন্তে ক্লাস করতে পারবো। আমি কিন্তু আপনাকে টেক্সট করেছিলাম দোষারোপ করতে পারবেন না। ভিডিও প্রুভ সবটাই আছে।

আলো কথাগুলো বলে ঢোক গিলে হাত গুটিয়ে নিলো। শ্রাবণের দৃষ্টি এখনো ওর মুখের দিকেই আছে। আলো কক্ষে প্রবেশের আগে ছোট্ট একটা টেক্সট করেছিলো,” আমি হয়তো বিপদে আছি। প্লিজ সেভ মি”।আলো জানতো ওকে খোঁজ করে শ্রাবণ ঠিক পৌঁছে যাবে। ও বাড়িতেই ছিল। হঠাৎ এমন টেক্সট পেয়ে অপেক্ষা করেনি। রাহিনকে নিয়ে দৌঁড়ে এসেছে। লোকেশন দেখে কুদরত স্যারের বাসার সামনে এসে মাথা খারাপ অবস্থা। কম বেশি এই লোকটার সম্পর্কে ওর ধারণা ছিল কিন্তু তাইবলে আলোকে ফাঁসাবে এটা কল্পনার বাইরে। ভালো মন্দ কিছু জিঞ্জাসা না করে দুমদাম ঘর ভেঙে আলোকে উঠিয়ে এনেছে। তাছাড়া আলোর সম্মানের একটা বিষয় আছে। ভদ্রলোক যথেষ্ট চালাক। নিজের কুকর্ম লুকানোর জন্য বাড়ি ফাঁকা করে রেখেছিল। বুঝতে পারেনি নিজের জালে নিজেই ফেঁসে যাবে। শ্রাবণ টিস্যু দিয়ে আলোর মাথা থেকে র*ক্ত মুছিয়ে দিয়ে বলল,

> বলেছিলাম সামান্য ঝামেলায় জড়াতে পারো আমি ঠিক সামলে নিব।কিন্তু এতো বড় ফাঁসাদে জড়াতে বলিনি। কুদরত স্যারের ক্ষমতা জানো? টুকটাক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। উপর মহল পযর্ন্ত হাত। নয়তো কি আর সরকারি কলেজে চার বছর একভাবে বদলি ছাড়া চাকরি করতে পারতো? আর তুমি বেকুব ছিলে জানতাম এতোবড় বেকুব জানা ছিল না। খালি হাতে কিভাবে ওখানে গিয়েছিলে? যদি আমি না যেতাম তোমার বন্ধুদের ক্ষমতা ছিল ভেতরে ঢোকার? আমার বদনাম করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছো তাইনা? শ্রাবণ মাহমুদের বউয়ের দিকে বাইরের পুরুষে খারাপ নজর দিচ্ছে। শুনতে কেমন লাগে?

শ্রাবণ কথা বলছে আর ফুলছে। ওর রাগে ডিজেল দেবার জন্য আলো বোকাবোকা দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,

> আপনি কবে থেকে সমাজের তোয়াক্কা করতে শুরু করলেন? মান সম্মান তো চুপ থাকলেও যেতো। আপনি না বলেন এসবের আপনার কিছু যায় আসে না?

শ্রাবণ শান্ত হলো। আলোর কপালে ব্যান্ডেজ করতে করতে বলল,

> আমার বউ বাচ্চা বা পরিবার নিয়ে কেউ কিছু বললে আমার রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ডেকে বিপদ ঘাড়ে নেওয়া আর দুর্ঘটনা ঘটার মধ্যে পার্থক্য আছে। ঠাটিয়ে একটা থা*প্প*ড় তোমার পাওনা আছে। সকলে বুদ্ধি করে মাঠে নেমেছো অথচ খালি হাতে। এই তোমাদের প্লান? মেয়েরা শুনি নিজেদের ব্যাগে ছু*রি, কাচি, মরিচের গুড়া রাখে অথচ আমার বউ হয়ে তুমি খালি হাতে যুদ্ধে নেমেছো কিভাবে ? লজ্জা করলোনা?

শ্রাবণের কথা শুনে আলো অবাক হলো। ভেবেছিল শ্রাবণ হয়তো ওর কাজের জন্য রেগে আছে অথচ লোকটা অন্য কারণে রাগ করছে। আলো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলোনা। কপালের ব্যাথা যেনো হাপুস করে গায়েব হয়ে গেলো। উত্তেজিত হয়ে মুখোমুখি ব্যান্ডেজে ব্যস্ত মানুষটার খোচা খোচা দাড়ি ভর্তি গালে টুপ করে চুমু বসিয়ে দিলো। শ্রাবণ তাতে ছিঁটকে গেলো। কি হলো বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগলো। আলো উৎসাহীত হয়ে বলল,

> আপনি দারুণ মানুষ। আমি কতকিছু ভেবে ভয়ে হার্ট এ্যাটাক করতে গিয়ে করলাম না। আত্মা শুকিয়ে আসছিলো। চুমুটা আপনার গিফট।

আলো ভীষণ খুশী। অন্যদিকে শ্রাবণ বেচারা থতমত। নিজেকে সামলে গম্ভীর কণ্ঠে ধমক দিয়ে বলল,

> আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছো তাইনা? কাজ হবে না। শ্রাবণ মাহমুদকে জালে ফেলা এতোটা সহজ না।

শ্রাবণ বেশ কঠোর কিন্তু আলো অবাক হয়ে বলল,

> অদ্ভুতকাণ্ড,আমি আপনাকে ইমপ্রেস কোন দুঃখে করবো? আপনি কি পর কেউ যে জালে ফেলবো? নিজের মানুষ। ইমপ্রেস করলেও বা না করলেও আপনি আমার।

আলোর সরল স্বীকারউক্তি। শ্রাবণ ঢোক গিললো। মেয়ে সুবিধা না। তাই তাড়াতাড়ি সবটা গুছিয়ে ফোন হাতে নিলো। কুদরত সাহেবকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। রাহিন টেক্সট করেছে। শ্রাবণ অপেক্ষা করলো না। আলোকে নিয়ে বের হলো। হাসপাতালে আসতে ওদের মিনিট দশেক পার হলো।ওদের নিজেদের ক্লিনিকে না এনে অন্য একটাতে আনা হয়েছে। এর মধ্যে থানায় কথা বলে নিয়েছে রাহিন। ওরা আসছে। কেবিনের বাইরে আলোর বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে। আলোকে দেখে ওরা ছুটে আসলো। শ্রাবণ সোজা কেবিনে ঢুকে পড়লো। ভদ্রলোকের জ্ঞান আছে তবে ভয়ে ঘাপটি মেরে পড়ে আছে। শ্রাবণের বন্ধু লিখন উনার চিকিৎসা করছে। ওকে দেখেই লিখন বলল,

> সমস্যা নেই সামান্য মা*রে কিছু হয়না। ব্যাথার ওষুধ দিয়েছি। এখানে না আনলেও সমস্যা ছিল না।

শ্রাবণ ভদ্রলোকের দিকে চেয়ে সোজাসুজি বলল,

> ওকে এখানে এনেছি এসির হাওয়া খাওয়ার জন্য না। অপারেশনের ব্যবস্থা কর। এমন হাল করবি যেনো লু*চ্চামি করার স্বাদ আজীবনের জন্য মিটে যায়। না থাবকে বাঁশ আর না বাজবে বাশঁরী। ঝটপট অটি রেডি কর। পুলিশ আসার আগেই সবটা করবি।

লিখন ওর ইঙ্গিত শুনে উত্তেজিত হয়ে উঠলো। চাপা কণ্ঠে বলল,

> পাগল হয়েছিস? এটা বেআইনী কাজ। কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে এমনটা করা যায়না। তাছাড়া ভদ্রলোকের বয়সের কিবা হয়েছে। তুই পাগলামি করিস না। আমাদের বদনাম হয়ে যাবে। আমি পারবো না অপারেশন করতে।

শ্রাবণের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে। রেগে গেলে ওর মুখ হড়বড় করে চলে। নিচে ঠোঁট দাঁত দিয়ে চেপে কিছু গালি দিয়ে বলল,

> অটি রেডি কর অপারেশন আমি করবো। তোর মতো বা*লের গরুর ডাক্তারের প্রয়োজন নেই।

লিখন লাফিয়ে উঠলো।

> মানে কি ? তুই কি ডাক্তার? পাগলামি করিস না। এই রাহিন ভেতরে আই। একে সামলা।

লিখন রাহিনকে গলা উঁচু করে ডাকলো। বেচারা বাইরে ঝামেলায় আটকে ছিল। হঠাৎ ডাক শুনে দৌঁড়ে আসলো। ওকে দেখে লিখন ছলছল চোখে বলল,

> দেখ ভাই ও কিসব ভুলভাল বকছে? অপারেশন করবে বলছে। সবকি ছেলেখেলা? পাগলামি করতে বন্ধ করতে বল। ওর মাথা সত্যি এবার খারাপ হয়ে গেছে।

রাহিন বোঝানোর চেষ্টা করলোনা কিন্তু শ্রাবণ অনড়। ট্রে থেকে ইনজেকশনটা তুলে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বলল,

> দুদিন পরে ক্ষমতার দাপটে ও ঠিকই বের হয়ে আসবে।তারপর আবারও শুরু করবে ওর লু*চ্চামি। শোন কোনো কথা হবে না। বা*লের ডাক্তার হয়েছিস এইটুকু করতে পারিস না? ছু*রি আন আমি শিখিয়ে দিচ্ছি কিভাবে কি করতে হবে। আমি যথেষ্ট ভদ্রছেলে হয়ে আছি আর পারছি না। এবার কিন্তু আমার মুখ চলবে।

লিখন বুঝে গেলো শ্রাবণ ভীষণ সিরিয়াস। কথা শুনবে না তাই ফিসফিস করে চাপা কণ্ঠে বলল,

> দেখ ভাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক উন্নতি হয়েছে। অপারেশন লাগবে না। ইনজেকশনে কাজ হয়ে যাবে। আমি লিখে দিচ্ছি ফার্মেসি থেকে আনতে হবে। কিন্তু প্লিজ বিষয়টা কাউকে বলিস না। আমাদের সুনাম নষ্ট হবে।

শ্রাবণ তাচ্ছিল্যপূর্ণ হেঁসে বলল,

> সমস্যা নেই গোপন থাকবে। তবে শোন ইনজেকশনটা কিন্তু আমি দিবো। যদিও আনাড়ি হাত তবে সমস্যা নেই। বুঝলি মনের শান্তির বড্ড প্রয়োজন। ওর সাহস দেখে আমি হতবাক। কোথায় হাত দিয়েছে ভাব?

সত্যি সত্যি রাহিন দৌড়ে গিয়ে নিচের ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে আসলো। শ্রাবণ বহুকাল আগে ইনজেকশন দেওয়া শিখেছিলো কিন্তু কখনও ট্রাই করেনি। আনাড়ি হাতে ইনজেকশন দিয়ে বিস্তার হেসে বলল,

> কাজ হবে তো?

লিখন গোমড়া মুখে বলল,

> তুই কি পরীক্ষা করে দেখতে চাইছিস?

> নাউজুবিল্লাহ। ছিঃ মার্কা কথাবার্তা বলিস কেন? বাইরে চল।

লিখন অবাক হলোনা। শ্রাবণের সম্পর্কে ওর যথেষ্ট ধারণা আছে। তাড়াতাড়ি করে ইনজেকশনসহ ওষুধের পাত্র লুকিয়ে ফেললো। আইন হাতে তুলে নেওয়া উচিত না। ভয় করছে। বিষয়টা পাবলিক হলে ক্লিনিকের লাইসেন্স সঙ্গে ওর ডাক্তারি লাইসেন্স জন্মের মতো যাবে। শ্রাবণ বেরিয়ে আসলো। পুলিশ এসেছে ওদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ছাত্রছাত্রীদের থেকে বিস্তারিত জেনে কেস লিখে নিলেন। কুদরত সাহেব ঘুমের ইনজেকশনের জন্য ঘুমিয়ে আছে বিধায় একদিন পর থানায় নেওয়া হবে বলে জানালো। শ্রাবণ কৌশলে আলোর নামটা পুলিশের থেকে গোপন করতে চাইছিলো। তাছাড়া আলো ওকে যে রেকর্ডিং গুলো দিয়েছিল ওগুলো পুলিশকে দিলো না। এগুলো ওর তুরুপের তাস। সঠিক সময়ে ঠিক হাজির করবে।
*********
কুকথা ঝড়ো হাওয়ায় আগুনের ফুলকির মতো ওড়ে। কুদরত সাহেবের কুকর্ম সারা শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। উনাকে থানায় নিয়ে জিঞ্জাসাবাদ করা হচ্ছে। ভদ্রলোক সবটা অস্বীকার করেছে। আলোর নামে বদনাম করে বানিয়ে বানিয়ে আজেবাজে কথা বলেছে। শ্রাবণ চেয়েছিলো এসবে আলোকে না জড়াতে কিন্তু তেমন কিছুই হলোনা। ভদ্রলোকের স্ত্রী রেশমা মজুমদার থানায় এসে চিৎকার চেচামেচি করছে। কলেজের ভিপি সঙ্গে আছে। প্রিন্সিপালের দুর সম্পর্কের ভাইজী হচ্ছেন রেশমা। ওরা উল্টো মার*পিট আর ভদ্রলোককে ফাঁসানোর জন্য কেস করেছে। চারদিকে হৈচৈ পড়ে গেছে। যখন একজন মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসে তখন আরও কিছু মানুষের বুকে বল হয়। কুদরত সাহেব কলেজের ছাত্রী নিবাসের দায়িত্বে আছেন বছর খানিকটা হচ্ছে। কলেজের বেশ কিছু শিক্ষার্থীদের কাছে উনার কুকর্মের ভিডিও ছিল ওরা সেগুলো নিজেদের ফেসবুক পেজে আর গ্রুপে ছেড়ে দিয়েছে। ফলে ছাত্র সমাজ উত্তাল হয়ে উঠলো। ওদের র*ক্ত গরম। পান থেকে চুন খসলে মিছিল আর ধর্মঘট ফ্রি। কলেজের সামনের রাজপথে সকলে নেমে এসেছে। তবে প্রিন্সিপালের খবর নেই। উনি আপাতত লাপাত্তা। শ্রাবণের চ্যানেলে শেষ থেকে শুরু পযর্ন্ত পুরোটা দেখাচ্ছে। বর্তমানের হট টপিক। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে থানা থেকে কয়েকজনসহ শ্রাবণের ডাক পড়লো মিমাংসা করার জন্য। ঘটনার সময় যারা ওখানে উপস্থিত ছিল আর নতুন করে বেশ কিছু মেয়ে অভিযোগ দিয়েছে ওদেরকে নিয়ে শ্রাবণ থানায় আসলো। আলো চুপচাপ লুবনার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ভয় লাগছে শ্রাবণের জন্য। লোকটা মাথা গরম মানুষ। কি বলতে কি বলবে তখন সমস্যা বেশি হবে। এমন হবে জানলে আলো কিছুতেই এই ঝামেলায় জড়াতো না। কুদরত সাহেবের স্ত্রী রেশমা চিৎকার করছেন,

> আমার স্বামীর মতো ভালো মানুষ এই শহরে নেই। ওকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের নামে বদনাম করতে মানুষ উঠেপড়ে লেগেছে। আমার অনুপস্থিতিতে আমার স্বামীর সঙ্গে ওই মেয়ে কেনো এসেছিল? নিশ্চয়ই টাকার জন্য এসেছে। আমার স্বামী নেহায়েত ভদ্রলোক তাই এসবে রাজি হয়নি বলে এমন অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। চরিত্রহীন মেয়ে। আমার স্বামী ইনোসেন্ট। সহজ সরল মানুষ।

পাশ থেকে অনেকে উনাকে চুপ থাকতে বলছে। রাহিন লাইভে আছে। শ্রাবণ একবার আলোর মুখের দিকে চাইলো। মেয়েটার মুখটা দেখার মতো হয়েছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত রেখে বলল,

> আপনার স্বামী তুলসী পাতা। কোলের বাবু, এখনো ফিটার ছাড়েনি। তো বাবুকে কোল থেকে নামিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন কেনো? আমার মুখ খোলাবেন না, আমি ভদ্রলোক না। স্বামীর চরিত্র সম্পর্কে আপনার যথেষ্ট ধারণা আছে তবুও গলাবাজি করছেন কেনো? স্বামীকে সাপোর্ট দিতে পারেন না আইছেন লেকচার দিতে। অন্য মেয়েদের কাছে কি মধু আছে? বা*লের মিমাংসা আমি করবো না। কেস কোর্টে উঠুক। যা প্রমাণ আমি সেখানেই দিবো।

শ্রাবণের কথা শুনে ওসি সাহেব ওকে শান্ত করলো। উনি দুপক্ষের মিল করাতে চাইছেন। শ্রাবণ ফোনে রাখা ভিডিও গুলো একে একে সবাইকে দেখিয়ে বলল,

> কুদরত সাহেবের ভিমরতি কিভাবে ছাড়াতে হয় আমার খুব ভালো করে জানা আছে। আর এখানে যদি আমি বিচার না পাই প্রমিজ আমার চ্যানেলে সবগুলোর মুখোশ আমি টেনে টেনে খুলবো। বাইরে হাঙ্গামা চলছে না? অবিরাম চলতে থাকবে। এখানে আমার কিছু বলার নেই। আরও ভিডিও দেখতে চাইলে আমাকে নক করবেন। এমন ভিডিও একটা না অহরহ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। সেটাও দেখে নিবেন। তবুও যদি প্রমাণ আর মিমাংসার দরকার হয় তবে বাংলাদেশ থেকে আইনের শাসন উঠিয়ে নেওয়া হোক। আমি প্রধানমন্ত্রীর নিকট চিঠি লিখবো। জানতে চাইবো মেয়েদের সম্মান নষ্ট করতে চাওয়া অপরাধীদেরকে কি ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা উচিত।

শ্রাবণের কথা শুনে উপস্থিত সকলের মুখে আর কথা নেই। সাক্ষী প্রমাণ সবটা উপস্থিত। এখানে মিমাংসার কোনো সুযোগ নেই। কুদরত সাহেবের নামে চার্চশির্ট তৈরী করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। আলোর পাশ থেকে লুবনা ফিসফিস করে বলল,

> এবার বুঝলাম তুই কিসের জোরে এসব করিস। মানে ঝামেলা যাইহোক একজন ঠিক তোকে বাঁচিয়ে নিবে। ভাইতো পুরোই আগুন। ক্রাশ খেয়ে ফেলেছি।

আলো চাপা কণ্ঠে বলল,

> মুখের ভাষা শুনলে ইন্নালিল্লাহ হয়ে যাবি। ক্রাশ ছুটে যাবে। মাথা গরম হলে মুখ দিয়ে মধু বর্ষণ হয়। কানের দফারফা ঘটে যাবে। তুই শহীদ হয়ে যাবি।

> ক্রাশের জন্য এইটুকু সহ্য করা কঠিন কিছু না। আলো তুই ভাইয়ার প্রেমে পড়িস না?ভাইয়া ঘরে আগুন সুন্দরী বউ রেখে ঠান্ডা মুডে কিভাবে চলে? আমার মনে হয় তুই পাত্তা দিসনা দেখে ভাইয়া এমন উগ্র মেজাজে থাকে।

আলোর মুখটা দেখার মতো হলো। ওকে কিভাবে বোঝাবে শ্রাবণ নামের ঘূর্ণিঝড় কোনো মেয়ের প্রেমে বশীভুত হয়না।লোকটা কারো রূপের ঝলকে মাতোয়ারা না বরং সৎ আর সাহসী ব্যক্তিত্বের প্রেমে আটকে যায়। আলো ওকে থামতে অনুরোধ করলো,

> চুপ যা বোন। এসব শুনলে আমার কপালে দুঃখ আছে। তাছাড়া বাড়িতে এক ঝামেলা এসে হাজির হয়েছে। টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছি।

আলোর চোখ ছলছল করছে। বড় চাচি শাশুড়ি এসেছে গ্রাম থেকে। ভদ্রমহিলার বেশ দাপট আছে বাড়িতে। আলোকে নিয়ে উনার বেশ সমস্যা। তাছাড়া এতোবড় একটা কাণ্ড ঘটিয়েছে কিছু আর গোপন নেই। নতুন অশান্তি এসে হাজির। কি হবে ভেবে ঘাম ছেড়ে যাচ্ছে।

চলবে