#শান্তি_সমাবেশ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৮
বোকা। শুধু ই কি বোকা? একদম মাথা থেকে গোড়া বোকা মৃত্তিকা। সবাই ঠিক বলে। সেই থেকে সারা রুম জুড়ে পাইচারি করে যাচ্ছে ও। পূর্ণ ভাই অসুস্থ। তার সাথে এখন কিভাবে যোগাযোগ করবে ও? মানুষ ঠিক কতটা বোকা হলে এত মাসের পরিচয় থাকার পরও নাম্বার নেই তার। বিরক্তিতে মুখ তেঁতো হয়ে যাচ্ছে মৃত্তিকা’র। অসহায় চোখ তাকিয়ে রইলো ফোনটার দিকে। হিমু বা উজ্জ্বল থেকেই নাম্বার নেয়া যেত। কিছুটা আড়ষ্ঠতার কারণেই তা সম্ভব হলো না। এখন উপায়? মাথা কাজ করে না মৃত্তিকা’র। ভালোবাসাটা তার পূর্ণ’র প্রতি অসীম। সীমাহীন এই ভালোবাসা কাছে পূর্ণ’র ঐদিনের ব্যাবহার নিতান্ত তুচ্ছ ঠেকলো মৃত্তিকা’র কাছে। বাবা যা বলেছে সেটাও বুঝার চেষ্টা করেছে ও৷ আসলেই তো যেদিন ইশিতা নামক সিনিয়র আপু ওকে পূর্ণ থেকে দূরে থাকতে বলছিলো তখন মনের অন্তস্তলে চিনচিন ব্যাথা হয়েছিলো ওর। যতটা কষ্ট তার কটু বাক্যে পেয়েছিলো ঠিক তার দ্বিগুন পেয়েছিলো যখন ইশাতা বলেছিলো সে ভালোবাসে পূর্ণ’কে।
আশাহত হয় মৃত্তিকা। যেখানে কথা শুনা মাত্র ওর নতুন মনটা বিষিয়ে ছিলো সেখানে পরপর দুই দুইবার সাফারাতের বুকে দেখে ভুল ভাবাটাও স্বাভাবিক। আর এতদিনের অসহনীয় দূরত্বটা ও ইচ্ছাকৃত ছিলো না। সব শুনে এখন মৃত্তিকা’র নরম মনটা ফুলেফেঁপে উঠেছে। সিনিয়র ভাই পূর্ণ’কে একপলক দেখার জন্য উদগ্রীব তার চক্ষুদ্বয়।
লাজলজ্জার মাথা খেয়ে কল লাগায় হিমু’কে। এক দুইবার রিং হতেই কলটা ধরলো উজ্জ্বল। মৃত্তিকা কিছু বলার আগেই গলা খেঁকিয়ে বলে উঠলো,
— বলসিলাম না এই শ্যালা একটা হাঁদা। মিললো তো আমার কথা। আইসা দেখ ধেই ধেই কইরা ওর ***রুপার লগে গেসে। মোর কথা তো কানে তুলস না তুই। আই কি মিছা কই?
মৃত্তিকা পরপর দুইটা ঢোক গিললো। গলা ভেজালো ঠিকঠাক ভাবে। উজ্জ্বল রেগে গেলেই ওর ভাষা আহত নিহত হয়ে যায়৷ নোয়াখালী আর বরিশাল মিশিয়ে কোন এক স্বাদহীন খিচুড়ি বানিয়ে কথা বলে। মৃত্তিকা মিনমিন করে কিছু বলার চেষ্টা করলো কিন্তু সুযোগ পেলো না। উজ্জ্বল আরেক দফা কবিতা শুনালো ভিন্ন ভাষায় যার সবটা জুড়ে ছিলো রুপা’র দোষ। ছেলেটা চটপটে স্বাভাবেরই। হঠাৎ ই দারুণ করুন শুনালো ওর কন্ঠ,
— মৃত্তিকা ওরে বোঝা। ওর মা অনেক ভালো রে। ছেলেকে একা এই ভীরের শহরে পাঠিয়েছে জমি বিক্রি করে। আজ মা নেই বলে বুঝি মা কি জিনিস। ওর থাকতেও ও একটা *** এর পেছনে সময় অপচয় করছে।
মৃত্তিকা’র মনে হয় ও ইদানীং বেশ বড় হয়ে গিয়েছে। নাকি সঙ্গ দোষে লোহা ভাসছে? যেই মৃত্তিকা আদৌ কানে কখনো এসব গালি শুনেছে কি না সন্দেহ সে এখন সাচ্ছন্দ্যে পূর্ণ আর উজ্জ্বলের কঠিন কঠিন গালি শুনে। কি স্বাভাবিক ভাবে মানুষকে গালি দেয় তারা। মৃত্তিকা হতাশার সুর টেনে বললো,
— আচ্ছা কাল কথা বলব ওর সাথে ক্যাম্পাসে।
— হু।
চট করে কিছু মনে করার ভঙ্গিতে কিছুটা জোরেই উজ্জ্বল বলে উঠলো,
— কি রে তুই ক্যান কল দিলি সেটা তো বল।
— তুই সুযোগ দিলি কোথায়?
ভাবহীন ভাবেই উজ্জ্বলের সুর,
— দেশ তোকে জায়গা দিবে না। নিজের স্থান নিজের করে নিতে হবে। সেভাবেই নিজের কথা বলার জন্য গলার জোর বাড়াতে হবে।
মৃত্তিকা কুটকুট হয়ে হাসলো। মজার ছলে বললো,
— তুইও শেষ মেষ রাজনৈতি’তে যোগ দিলি?
— উহু। পূর্ণ ভাই এর অঘোষিত শীর্ষ আমি।
মৃত্তিকা’র হঠাৎ আসল কথা মনে পরলো। কেন কল দিলো সেটা মনে পরতেই দেনা মোনা করে জিজ্ঞেস করলো,
— তোর কাছে পূর্ণ ভাই এর নাম্বার আছে?
উজ্জ্বল জানপ্রাণ অবাক হয়ে বললো,
— আর ইউ কিডিং মৃত্তিকা? এত মাস রামলীলা খেইলা এখনও রামের নাম্বার জানস না! হায় আল্লাহ!
শব্দটা পছন্দ হলো না মৃত্তিকার। কিছুটা বিরক্ত ভঙ্গিতে বললো,
— এসব ওয়ার্ড ভালো লাগে না উজ্জ্বল।
উজ্জ্বল বুঝলো। নাদান মৃত্তিকা এত ডোজ একসাথে নিতে পারে না। তাই দাম্ভিকতা বজায় রেখে বললো,
— মেসেঞ্জারে ঢুক। নাম্বার পাঠাচ্ছি।
চাপা শ্বাস ফেলে কল কাটলো মৃত্তিকা।
_______________________
গত কালের সেই ঘটনা কারোই অজানা রইলো না। রাজনীতিক নেতা’র ছেলে হ*ত্যা হয়েছে। এতটা বিভৎস ভাবে কষ্ট দিয়ে মা’রার কারণ কারোই জানা নেই। পুলিশ অভিজান চালিয়ে দিলো। মন্ত্রীর ছেলে জুবায়ের। চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো যাতে অতিদ্রুত তথ্য বের করা যায় কিন্তু তেমন কিছুই পাওয়া গেলো না। অফিসার জোহানের ঘাড়েই দায়িত্ব পরলো। অফিসার জোহান ও কেসটার কোন কুল পাচ্ছেন না। ময়নাতদন্তের ফলাফলে এটা স্পষ্ট যে জুবায়ের ছিলো নেশায় বুদ। এছাড়াও তার বডি থেকে নেয়া স্যাম্পল থেকে জানা গিয়েছে সে ড্রাগস নিতো প্রতিনিয়ত। কিন্তু মা’রা যাওয়ার কারণ স্পষ্ট না। হাত কেটে তাকে ফেলে দেয়া হয়। তার আগে বা পরে কোন ক্ষত নেই।
শুধু মাত্র মন্ত্রীর ছেলে বলে এতটা জোরালো ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে নাহলে নেশাখোরদের কেস ততটাও গুরুত্ব দেন না তারা।
.
শোয়েব মির্জা’র ওমরাহ যাওয়ার ফ্লাইট পেছালেন। আপাতত এমন গরম পরিস্থিতিতে রেখে যাওয়া ঠিক হবে না। পাশ থেকে মাহিন মিয়া তার স্যারকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— স্যার আপনি কি সরাসরি যাবেন নাকি…..
— যাব।
মাহিন মিয়া’কে থামিয়ে কথাটা বলেন তিনি। কথা বাড়ালেন না মাহিন মিয়া। তার স্যারের বাধ্য ভৃত্যের ন্যায় মাথা ঝাকালেন।
শোয়েব মির্জা’র মুখ জুড়ে চিন্তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ভাবতেই তার মাথা ঝিমিয়ে উঠে। ছেলেটার এই দশা কে করলো?
__________________
আকাশে সাদা সাদা শুভ্র রঙা মেঘের বিচরণ। তারা যেন খুব করে বলছে হেমন্তের ছোয়া লেগেছে তাদের বদনে। আবহাওয়া গুমোট নয় আর নাই একদম ফকফকা। রোদ আজ কাল কম দেখা যাচ্ছে। সূর্যটা মেঘের আড়ালে থাকেই যেন সাচ্ছন্দ্য বোঁধ করে। নাতিশীতোষ্ণ একটা ভাব চারিদিকে। এত সুন্দর একটা মিঠা ঋতুতে মুখ তেঁতো হয়ে আছে পূর্ণ’র। দুই দিন প্রায় বেহুস ছিলো। হাজার বলেও হসপিটালাইজ করা যায় নি। বাড়িতেই স্যালাইন চলেছে যা আপাতত অফ। কোন কিছুতেই স্বাদ পাচ্ছে না ও। আজকে কিছুটা ভালো লাগছে। ভালো লাগা বলতে মাথা ঘুরানো থেমেছে। জ্বর তখনও ওকে আঁকড়ে।
বুক চিনচিন করে পূর্ণ’র।
পূর্ণ্যময়ী টা নারাজ। এই দূরত্ব কেন বাড়লো। বোকারাণীটা সবসময় ওকে সমিহ করলেও ঐ দিন কেন ওর মুখ ফসকে বেফাঁস কথাগুলো এতটা সিরিয়াস নিয়ে নিলো। পরক্ষণেই ভাবে পূর্ণ, কথাগুলো একটা মেয়ের জন্য বিশেষ করে মৃত্তিকা’র জন্য বিষাক্ত ছিলো যা তার কর্ণ ভেদ করে মস্তিষ্ক ছেদ করেছে। আঘাত হেনেছে হৃদকুঠুরিতে। মনটা চায় ছুটে যেতে। শরীরের দূর্বলতার তোয়াক্কা পূর্ণ করে না। তার মৃত্ত’র জন্য তো না ই। কিন্তু সমস্যা অন্যদিকে। হাজার চাইলেও দেখা করা মানে তার নিজের হাতে নিজের ক্ষতি করা। এতটা দিন তাহলে কেন এত লুকোচুরি খেললো পূর্ণ। ঐ মৃত্ত’র জন্য ই তো। শেষ মুহূর্তে কোন বোকামি করা যাবে না।
হাতে স্যুপের বাটি নিয়ে রুমে এলো ওর মা। পূর্ণ কিছু বলার আগেই ওর বাবা হুরমুর করে রুমে এসে বলে উঠলেন,
— পূর্ণ জুবায়েরের লা*শ পাওয়া গিয়েছে কাঁচা বাজারের ব্রিজের নীচে।
ভাবশালীন ভাব পূর্ণ’র। কিছুট্টি বললো না সে। ওর মা স্বামী’কে চোখ রাঙিয়ে বলে উঠলেন,
— ছেলে আমার জ্বরে ম’রে তুমি আছো লা*শ নিয়ে।
পূর্ণ মায়ের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা স্বর বের করলো গলা দিয়ে,
— খাব না আম্মু।
— বেশ তো এটা না খাও। অন্য কি খাবে বলো?
“তুমি” ডাকটা বুঝিয়ে দিলো পূর্ণ’কে মা রেগে আছে। বাবা’র দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় কিছু বললো। পরপর কয়েক চামুচ খেয়ে নিলো মায়ের হাতে।
অরুচি প্রকাশ করায় মা আর জোড় করলেন না। পূর্ণ মায়ের আঁচলে মুখ মুছে তার কোলেই মাথা রাখলো। জ্বরের প্রকোপে লাল হওয়া চোখ অথচ অধরে দুষ্ট হাসি ফুটিয়ে বললো,
— আম্মু দেখো আব্বু কেমন হিংসুটে চোখে তাকিয়ে আছে। তোমার কোলে আমাকে দেখলেই এমন ভাবে তাকায়।
আজ আর রাগ করলেন না পূর্ণ’র বাবা। ছেলের অবস্থা কিছুটা তার জানা। আলতো হেসে ছেলের শিয়রের কাছে বসে রইলেন।
.
না আর অপেক্ষা করা যাচ্ছে না। মৃত্তিকা অনবরত কল করে যাচ্ছে অথচ কল রিসিভ করছে না পূর্ণ। অধৈর্য হয়ে পার্স হাতে মিঠি’র মা’কে বিদায় জানিয়ে রিক্সার চলে বসলো। গন্তব্য পূর্ণ’র বাড়ী। লোকটাকে না দেখে থাকা যাচ্ছে না। বুকে ছটফটানি হয়। এক পলক দেখা দরকার। এতটা ভালোবাসা লুকিয়ে কেন লোকটা ওকে ঠেলে দিলো? এই রাজনৈতিকে তাদের মাঝে আসতে দিবে না মৃত্তিকা। একদমই না।
বেহায়ার মতো উজ্জ্বল থেকে আবার ঠিকানা নিয়েছে ও। অনেক ভেবেছে কোন অজুহাত খুৃঁজে না পাওয়াতে মৃত্তিকা ভাবলো সোজা বলে দিবে, দেখতে এসেছে ও পূর্ণ’কে। নিশ্চিত চমকাবে সিনিয়র ভাই।
ওর ভাবনার মাঝেই মৃত্তিকা পৌঁছালো নিদিষ্ট স্থানে। বিল্ডিংটার দিকে তাকিয়ে নিলো দুই একবার। বেশ সুন্দর গোছালো একটা ছোট্ট বাগান সম্মুখে এরপরই বাড়ী। যদিও মৃত্তিকাদের বাসার বাগান আরো বড় তবে ওর ভালো লাগলো এই ছোট্ট বাগানটা।
রিক্সা ওয়ালা ডাকতেই মৃত্তিকা নেমে গেলো। লোকটাকে ভারা বেশি দিয়ে সরস গলায় বললো,
— চাচা দোয়া করবেন আমার জন্য।
লোকটা পান খাওয়া দাঁত কেলিয়ে হেসে বললেন,
— পরিক্ষা নি মামুনি?
মিনমিন করে মৃত্তিকা বলে উঠলো,
— অনেক বড় পরিক্ষা চাচা।
.
ধীর পায়ে এগিয়ে কলিং বেল চাপার মিনিট দুই পরই মাঝ বয়সী সুন্দরী এক নারী এগিয়ে এলেন। মৃত্তিকা মাস্ক আর হিজাব পরিধান করাতে ওর চেহারা বুঝা গেলো না।
সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মৃত্তিকা’কে না চিনতে পেরে জিজ্ঞেস করলেন,
— কে তুমি?
— আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
পূর্ণ’র মা মিষ্টি হাসলেন। মেয়েটার গলার স্বর বেশ নমনীয়। সালামের জবাব দেয়ার পরই মৃত্তিকা কথা গুছিয়ে নিলো,
— আসলে আমি পূর্ণ ভাইয়ার ভার্সিটিতে পড়ি। তিনি অসুস্থ তাই একটু দেখা করতাম আরকি যদি অনুমতি দেন তো।
ইতিমধ্যে অনেকেই দেখা করে গিয়েছে পূর্ণ’র সাথে তাই অতশত না ভেবে দুই তলার রুমটা দেখিয়ে বললেন,
— ডানপাশের রুমেই আছে।
মৃত্তিকা’কে ভেতরে নিয়ে কি খাবে জিজ্ঞেস করলেই মৃত্তিকা অল্প হেসে বললো,
— অন্য দিন খাব আন্টি। আজ দেখা করে চলে যাব। বাবা’কে বলে আসিনি।
পূর্ণ’র মায়ের চমৎকার লাগলো মেয়েটাকে। এতটা নরম, সরল মেয়ে এই যুগে দেখা দুষ্কর। হাতে থাকা খুন্তি দেখিয়ে বললেন,
— পূর্ণ’র পছন্দের চপ বানাচ্ছি। রুমে যাও। খেয়ে যাবে।
মাথা দুলিয়ে পা বাড়ালো মৃত্তিকা। এক একটা সিঁড়ির ধাপ যেন তার আড়ষ্টতা বাড়িয়ে তুলছে। এতক্ষণের সাহস গুলো লজ্জায় পরিণত হচ্ছে। পা ঠেলেঠুলে উঠলো সিঁড়ি ভেঙে। দরজাটা আধ খোলা৷ ভদ্রতা সহিত নক করতেই ভেতর থেকেই গম্ভীর ও ভাঙা স্বর ভেসে উঠলো,
— আসো।
ধ্বক করে উঠলো মৃত্তিকা’র বুক। হৃদপিণ্ড লাফাতে লাগলো। মুখের মাস্কটা খুলে দরজা ঠেলে ঢুকতেই হতবাক হলো দুইজনই। পূর্ণ’র লাল চোখ,ভাঙা চোয়াল আর দূর্বল শরীরটা দেখে কেঁপে উঠে মৃত্তিকা’র চড়ুই সমান মন। কেঁদে উঠে তার অক্ষিকোটর। এদিকে হতভম্ব হয়ে বসে আছে পূর্ণ। চোখ ঝাপটে আবারও বুঝার চেষ্টা চালালো। না সঠিক দেখছে ও। তার প্রাণনাশী মৃত্ত দাঁড়িয়ে। মৃত্তিকা ছুটন্ত পায়ে এগিয়ে এলো। চোখ উপচে পড়া পানি। ভাঙা স্বরে শুধু বলে উঠলো,
— আপনাকে এমন দেখাচ্ছে…..
আর কিছু বলা হলো না। গলায় আটকে যায় কথা। পূর্ণ নিজেকে ধাতস্থ করলো। না গলা যাবে না। এই নারী এতটা এগিয়ে আসবে তা তার ভাবনার অতীত। কিভাবে চলে এলো এতদূর? রাশভারি গলায় পূর্ণ বলে উঠলো,
— এখানে কিভাবে এলেন আপনি?
জিজ্ঞেস করলো না ধমকালো বুঝলোনা মৃত্তিকা। কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো পূর্ণ’র রাগী দৃষ্টি দেখে। লোকটা রেগে কিন্তু কেন? পূর্ণ গমগমে গলায় আবারও জিজ্ঞেস করলো,
— কি কাজ? একা এসেছেন?
— হু।
— কেন?
— আ..আপনাকে দেখতে।
— হয়েছে দেখা? যান এবার। জাস্ট গো মৃত্ত।
মৃত্তিকা’র আটকানো পানি বেরিয়ে এলো। ধরা গলায় আকুল আবেদন করলো,
— আপনি রেগে কেন? আ’ম সরি। আরেকটু থাকি? আপনি এত অসুস্থ কিভাবে হলেন? আমি ঐ দিন ইচ্ছে করে ওনার উপর পরি নি। বিশ্বাস করুন।
এত আবেগ ও দমাতে পারলো না পূর্ণ’কে। জোরে এক ধমক দিয়ে বললো,
— জিজ্ঞেস করেছি আমি? হ্যাঁ? যান এখান থেকে। আর কখনো যেন না দেখি। বলিনি দূরে থাকতে? কেন আসলেন?
ধমক গুলো ছিলো ঘর কাঁপানো সেখানে ছোট্ট শরীরটা ও মৃত্তিকা’র কেঁপে উঠা স্বাভাবিক। এতটা অপমান কি না বাসায় একটু দেখতে আসাতে। দৌড়ে বেরিয়ে গেল গেলো মৃত্তিকা। পূর্ণ উঠে দাঁড়ানোর আগেই জোরে শব্দ হলো। মুখ থুবড়ে হুমরি খেয়ে ফ্লোরে পড়েছে মৃত্তিকা। চোটটা লাগলো একদম চেহারাতে। সাদা মেঝেতে লেগে গেলো নাক থেকে পড়া র*ক্ত। দূর্বল শরীরটা টেনে দাঁড় করিয়ে ডেকে উঠলো পূর্ণ,
— মৃত্ত? মৃত্ত? ঠিক আছেন? কথা বলুন! মৃত্ত!
বহু কষ্টে উঠে দেয়ালে ভর দিয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখলো মৃত্তিকা নেই। ফ্লোরে র*ক্ত দেখেই বুঝে গেলো মৃত্তিকা পড়েছে এখানে। ঝুঁকে হাত দিলো র*ক্ত’তে।
বুক ক্ষতবিক্ষত হলো পূর্ণ’র। তখনই ওর মা দৌড়ে এসে ছেলেকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
— এই পূর্ণ, তোকে দেখতে মেয়েটা এলো। কি হয়েছে ওর? মুখে ভরা র*ক্ত নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো?
পূর্ণ চোখ বুঁজে নিলো। মাথা ঘুরাচ্ছে তার। আস্তে করে রুমে ঢুকে বিছানায় বসে কাঁপা হাতে ফোনটা নিলো। কল লাগালো এক নাম্বারে।
মৃত্তিকা আসার ঠিক আগ মুহূর্তে কল এসেছিলো অপরিচিত এক নাম্বার থেকে। পূর্ণ’র ক্ষতি করার জন্য ওত পেতে আছে কিছুজন। তাদের থেকে মৃত্ত’টাকে লুকাতেই তো এতকিছু। এক ঝামেলা মিটলো সেখানে আরেকটার উৎপত্তি। মৃত্তিকা’কে ওর বাসায় যদি ওদের কেউ ঢুকতে দেখে তাহলে নিশ্চিত এবার পূর্ণ’কে হটাতে মৃত্তিকা’র ক্ষতি করবে। মাথা কাজ করে না পূর্ণ’র।
ওর মা ছেলেকে এতটা ভেঙে পড়তে দেখায় পাশে বসে কাঁধে হাত রাখলেন। পূর্ণ মাথা রাখলো মায়ের কাঁধে। শুধু বললো,
— সব এত জটিল কেন আম্মু? ও কেন এলো?
— কে কেন এলো? মেয়েটা কে ছিলো পূর্ণ?
পূর্ণ’র মনে পরলো মা তো চিনে না মৃত্তিকা’র চেহারা।
— তুমি চেনো না কে?
— না তো। মুখে মাস্ক পড়া ছিলো যখন এলো। আর যখন গেলো তখন তো মুখে র*ক্ত লাগা দেখলাম। বুঝলাম না চেহারাটা তবে ভারি মিষ্টি মেয়েটা।
দীর্ঘ শ্বাস ফেললো পূর্ণ। শুকরিয়া আদায় করলো। তাহলে কেউ দেখে নি ওর মৃত্ত’কে।
মায়ের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললো,
— আব্বু’কে ডাকো।
ওর বাবা আসতেই পূর্ণ ওর মা-বাবা’র দিকে একপলক তাকিয়ে সহজ সরল গলায় বললো,
— আমি বিয়ে করব। ব্যাবস্থা করো।
হতভম্ব, হতবাক হয়ে পরলেন দুইজন। পূর্ণ তাদের চাহনি উপেক্ষা করে বললো,
— কিচ্ছু লাগবে না। জাস্ট যা আছে তা নিয়ে তৈরী থাক৷ আজই বিয়ে করব আমি।
ওর বাবা হতভম্ব ভাব কাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন,
— পাগল তুই? কাকে বিয়ে করবি? শরীর ভালো না তোর? আর এখন বিয়ের সময়?
পূর্ণ ঠান্ডা গলায় প্রতিত্তোরে বললো,
— পাগল না উন্মাদ আমি। শরীর বউ পেলেই ভালো হবে। শরীর তার সেবা চায়। নিজের তো বউ আছে তুমি তো বুঝো নাকি? আর বিয়ে, জন্ম, মৃত্যু এর আবার সময় লাগে নাকি। মৃত্ত’র বাবা’কে ফোন লাগাও। আর চিন্তা করো না। বউ পালার বয়স, সামর্থ্য দুটোই আছে আমার।
ছেলের কথা বার্তা লাগামহীনতায় ওর মা আলত মারলো বলিষ্ঠ বাহুতে। পূর্ণ অসহায় চাহনি দিলো। মুখ ফুটে আবারও বললো,
— বউ লাগবে আম্মু।
— এনে দিব।
— এখনই লাগবে। আজকেই।
— আগে ঠিক হ।
— ওকে এনে দাও তাহলেই ঠিক হয়ে যাব।
উঠে দাঁড়ালেন পূর্ণ’র মা। স্বামী’র দিকে তাকিয়ে শুধু বললেন,
— আমি গোছগাছ করি চলো আমার সাথে।
বাবা ধাতস্থ করলেন নিজেকে। অসহায় লাগে মাঝে মধ্যে নিজেকে। একটা মাত্র ছেলে এভাবে বিয়ে করবে?
#চলবে……