#শ্যামারণ্য
#পর্বঃ১৪
লেখনীতেঃ #ফাহমিদা_মেহেজাবীন
হেনার সাথে কথা বলার পর আরও কিছুক্ষণ পুকুর পাড়ে বসে থাকে শ্যামা। মায়ের সাথে কথা বলে বিচলিত মনটাকে শান্ত করবে ভেবেছিলো শ্যামা,উল্টো দিব্যর ব্যপারে শুনে মনটা আরও অস্থির হয়ে উঠেছে।
দিব্য মূলত বউ নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলো কারণ বাবা বাড়ি বিক্রি করে তাকে ব্যবসা করার টাকা দেয়নি তাই।
দিব্যর মতে সে যেহেতু চাকরি করছে,সংসারের খরচ চালাচ্ছে,তাহলে বাড়িটা তারই পাওয়া উচিত। আর এই সুবুদ্ধি তার কানে যে নীলা ই ঢেলেছে তা বুঝতে তার বাকি নেই।
কিন্তু বাবার এক কথা,যত যা ই হয়ে যাক বাড়ি বিক্রি হবেনা। এই বাড়ি তিনি মায়ের জন্য রেখেছেন,যাতে বাবা মা’রা গেলেও মাকে কারো উপর নির্ভর করতে না হয়।
দিব্য বাবা আর তার সাথে ঝ’গড়া করে বাড়ি ছেড়েছিলো,
সেই সাথে বাড়িতে যে বেতনের কিছু টাকা দিতো তা দেওয়া ও বন্ধ করে দেয়।
সে হয়তো ভেবেছিলো সে সংসারে খরচ দেওয়া বন্ধ করে দিলে বাবা তার কাছে নতি স্বীকার করে বাড়ি বিক্রি করে দিবে। কিন্তু শ্যামা না নিজে ঝুকেছে না বাবাকে ঝুকতে দিয়েছে।
দিনরাত চাকরি আর টিউশন করে সংসার চালিয়েছে কিন্তু দিব্যর কাছে হাত পাতেনি কখনো। কিন্তু এখন সে জানে শ্যামার ভালো বেতনে চাকরি হয়েছে,তার উপর নির্ভরশীলতার ভাবনাটি পুরোপুরি উবে গেছে হয়তো এতোক্ষণে তার মন থেকে।
সে সবটা মেনে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকার পাত্র নয়,সে নিশ্চয়ই নতুন কোনো ঝামেলা পাকাবে।
বাবার মাত্র এতো বড় একটা অপারেশন হয়েছে,সে চায়না এসব পারিবারিক ঝামেলার কারণে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হোক।
এছাড়াও অরণ্যের চিন্তা তো রয়েছেই।
পুকুর ঘাটে বসে থেকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে বাড়ির বাম দিকের শেষ প্রান্তের জানালার দিকে শ্যামা,হাতে তার অরণ্যের দেওয়া জবাফুল। জানালা দিয়ে বাইরে থেকে কিছু দেখার সুযোগ নেই। জানালাটি এঁটে বন্ধ করা এবং মোটা কালো পর্দা টানানো। বাইরের আলো সেখানে পৌছায় কিনা সন্দেহ আছে তার,মানুষের দৃষ্টি তো দূরের কথা।
ওই ঘরটাতেই কি অরণ্য রয়েছে?সে কি অনেক কষ্টে আছে এই মুহুর্তে?
এসব খাপছাড়া ভাবনাগুলো ভাবতে ভাবতে অচিরেই বুক চিড়ে একটি দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে তার।
সে হাতের জবাফুলটি নিয়ে কানের একপাশে গুঁজে দেয় যেমনটা অরণ্য বলেছিলো।
র’ক্তজবার বিশাল গাছ দুটো পুকুরের ধার ঘেঁষেই ডালপালা মেলে বেড়ে উঠেছে। সেখানে ফুটেছে অসংখ্য জবা ফুল। অরণ্য হয়তো এখান থেকেই ফুল পেড়ে এনেছে তার জন্য।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই উঠে দাঁড়ায় শ্যামা।
বেলা অনেক হয়েছে,রিমু থাকতে থাকতে রাতের রান্নাটা এখনি সেরে ফেলতে চায় সে।
——————–
রান্নাঘরের কাজ শেষ করে তার কালো ডায়েরিটা নিয়ে বসে শ্যামা। ডায়েরি লেখা পুরনো অভ্যাস তার।
যখনি সে একাকিত্ব বোধ করে,মনের এলোমেলো ভাবনাগুলো নিজের মধ্যে লাগাম টেনে রাখতে পারেনা,
তখনি ডায়েরি নিয়ে বসে সে,ফুটিয়ে তুলে মনের সব অকথ্য কথাগুলি ডায়েরির সাদা পাতায়।
অরণ্যর সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে এই প্রথম ডায়েরিটা হাতে নেয় সে। আজ সে অরণ্যকে নিয়ে লিখবে শুধু।
ডায়েরি লেখা শেষ করে অরণ্যের দেওয়া জবাফুলটি ডায়েরি পাতায় গুঁজে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় শ্যামা।
সময়ের দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১১টা বাজে এখন, ডায়েরি লেখায় এতটাই মগ্ন হয়ে গিয়েছিলো যে সময়ের প্রতি খেয়ালই ছিলোনা তার। তার এখনো অনেক কাজ বাকি।
ডায়েরিটা ব্যাগে গুঁজে রান্নাঘরে ফিরে যায়,খাবারগুলো গরম করে সাজিয়ে রাখে খাবারের ট্রে তে। সামশের সাহায্য করতে চাইলেও করতে দিলোনা সে। অরণ্যের জন্য এইটুকু অন্তত নিজ হাতে করতে চায় সে।
খাবারের ট্রে নিয়ে রুমে ফিরে যায় শ্যামা,খাবারগুলো খাটের উপর রেখে সময়ের দিকে চোখ বুলায় একবার। বারোটা বাজতে মাত্র দু মিনিট রয়েছে। এদিকে সে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে আছে। চটজলদি আয়না দেখে চুলগুলো আঁচড়ে নেয় সে কোনোমতে,অভ্যাস না থাকায় সকালের পর থেকে একবারও নিজের বেশভূষা ঠিক করার কথা মাথায় আসেনি,খোলা চুল গুলো জট পাকিয়ে গেছে একেবারে।
কোনোমতে চুলগুলো ঠিক করে চোখে বেধে ফেলে সে।
অরণ্যের আগমন ঘটতে বেশি সময় লাগেনা,বারোটা বেজে গিয়েছে। অরণ্য এসেই সবার আগে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শ্যামাকে। শ্যামার ঘাড়ের চুল সরিয়ে মুখ গুঁজে দেয় তাতে। শ্যামার সর্বাঙ্গে শিহরণ বয়ে যায় অরণ্যের অন্তরঙ্গ স্পর্শে। আবেশে চোখ বন্ধ করে শ্যামা তার এক স্বভাববিরুদ্ধ কাজ করে বসে।
শ্যামা কোমরের কাছে অরণ্যের বাহুবন্ধনী আলগা করে তার দিকে ফিরে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আজকে সারাদিন কতবার তার মনে এইভাবে অরণ্যকে আলিঙ্গন করার ইচ্ছে জেগেছে শুধু সে জানে।
অরণ্য নিজেও খানিকটা কেঁপে উঠে,সেও এমন হবে আশা করেনি। সে শ্যামাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে শ্যামা? এমন দেখাচ্ছে কেনো তোমাকে?”
“কিচ্ছু ভালো লাগছেনা আমার অরণ্য,একদম ঠিক নেই আমি”
“এতোক্ষণ না খেয়ে থাকলে কি করে ভালো লাগবে বলো তো? দুপুরে খাওনি কেনো?”
“আপনি আমাকে বলবেন আপনাকে না খেয়ে থাকতে হয় কেনো?”
অরণ্য নিশ্চুপ,কোনো জবাব দেয়না তার প্রশ্নের। এই নীরবতা তাকে কারো তিক্ত বাক্যবাণ থেকেও বেশি পীড়া দেয়।
অরণ্য তখনি উত্তর দেয়না যখন সত্যিটা তিনি তাকে বলবেন না,মিথ্যা বলে মিথ্যে সান্তনা দেওয়াও উনার স্বভাববিরোধী। তিনি কি কখনো ভেবেছেন সে ত মনটাকে কি বলে বুঝ দিবে?কেনো বলবেন না তিনি তাকে কিছু?
মনের অভিমানে চোখের কর্ণিশ বেয়ে অবাধ্য জলগুলি নেমে আসে শ্যামার।
সে অরণ্যকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়।
“চলুন খাবেন এখন। আমার অনেক ক্ষিধে পেয়েছে।”
শ্যামার চোখের জল দেখে বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে অরণ্য,শ্যামাকে কিছুক্ষণ আগে জড়িয়ে রাখা হাতগুলো এখনো শূন্যে ঝুলছে তার।
অরণ্য দু কদম এগিয়ে গিয়ে তাদের মাঝের দূরত্ব কমিয়ে আনে আবার।
শ্যামার দুই গালে হাত রেখে কপালে চুমু এঁকে দেয় অরণ্য।
তারপর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে উঠে,
“আমি সত্যি অপারগ এই মুহুর্তে শ্যামা,দয়া করে আমার কারণে নিজেকে কষ্ট দিওনা। তুমি জানোনা তোমাকে এভাবে দেখতে কতটা কষ্ট হয় আমার।”
শ্যামা অরণ্যের হাতে হাত রেখে বলে,”আমার কষ্টগুলো আপনার কারণে নয় অরণ্য। আমার কষ্টগুলোর কারণ আমার নিজের ব্যর্থতা। রাগ হয় নিজের উপর, আপনার অর্ধাঙ্গিনী হওয়ার সত্ত্বেও আমি আপনার জন্য কিছুই করতে পারিনা,কোনো কাজে আসিনা আমি আপনার,আপনার কষ্টগুলো ভাগ করে নিতে পারিনা আমি। তাহলে আমি কি জীবনসঙ্গী হিসেবে ব্যর্থ নই?”
অরণ্য তার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়,
“এই কথা আজ বলেছো,ফের কখনো বলোনা শ্যামা।
তুমি আমার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা তোমাকে বোঝাতে পারবোনা আমি। সময় হলে একদিন তুমি সব জানতে পারবে,ধৈর্য ধরো সময় হওয়া পর্যন্ত”
শ্যামা চমকে উঠে জিজ্ঞেস করে,”আপনি একদিন সব জানাবেন আমাকে?”
অরণ্য শ্যামার দিকে দুঃখ ভারাক্রান্ত চোখে এক পলক তাকায়,তারপর একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“হ্যাঁ সময় হলে একদিন তোমাকে আমি সব বলবো শ্যামা। ততোদিন একটু ধৈর্য ধরো।”
শ্যামা যেনো ঘন কালো অন্ধকারে এক ফালি আশার আলোর দেখা পায়,সে মৃদু হাসার চেষ্টা করে বলে,
“বেশ তাহলে,আমি যতদিন লাগে ততোদিন অপেক্ষা করবো অরণ্য। এবার খাবেন চলুন। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে সবটা।”
অরণ্য শ্যামাকে কোলে তুলে নিয়ে যায় খাটের উপর। মনে তার তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে সেইদিনটার কথা ভেবে যেদিন সে শ্যামাকে সবটা খুলে বলবে। তার এমন অনুভূতি হচ্ছে কেনো জানেনা সে, তার তো সেদিনটার কথা ভেবে খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু শ্যামার মুখের দিকে তাকালেই কেমন যেনো সব এলোমেলো হয়ে যায়।
অরণ্য শ্যামাকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও তার পাশে গিয়ে বসে।
সে স্মিত হাসার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করে,
“আজকের রান্না নাকি তুমি করেছো?তা কি রেধেছো বলো তো?”
“সবার আগে স্যুপের বাটিটা নিন”
অরণ্য ভ্রুঁ কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,”তুমি ওই ডালের মধ্যে ভেসে থাকা কাঁচা সবজিগুলোর কথা বলছোনা তো?”
অরণ্যের এমন বর্ণনা শুনে হেসে ফেলে শ্যামা,”ওটা ডাল না,মশলাপাতি দেওয়ার পর এমন কালার এসেছে,আর কাঁচা সবজি না ওগুলো,সিদ্ধ করা হয়েছে”
“সে যা ই হোক,তুমি এখন নিশ্চয়ই আমাকে এগুলো খেতে বলবেনা তাইনা?”
“অবশ্যই খেতে বলবো আপনাকে,এমনি এমনি নিশ্চয়ই বানাইনি? সারাদিন না খেয়ে থেকে সাথে সাথে ভারী খাবার খাবার খাওয়া ভালোনা,গ্রেস্টিকের সমস্যা হয় তাতে। এখন থেকে রোজ আগে এমন হালকা পাতলা স্যুপ খাবেন তারপর অন্য খাবার খাবেন”
অরণ্য চোখ মুখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে স্যুপের বাটির দিকে,তার কন্ঠের বিতৃষ্ণা স্পষ্ট বিদ্যমান যখন সে বলে উঠে,
“আমি শাক-সবজি পছন্দ করিনা”
শ্যামা তার কন্ঠের বিতৃষ্ণার সুর শুনে হাসতে হাসতে বলে,”আপনি কি বাচ্চা নাকি?আজকাল তো বাচ্চারাও সবজির স্যুপ বানিয়ে দিলে খেয়ে ফেলে।”
“খাক ওরা,আমি খাবোনা ঘাস পাতা এগুলো”
“খেতে তো আপনাকে হবেই,আমি এতো কষ্ট করে বানিয়েছি,আপনি তাহলে খাবেন না বলছেন?”
“আচ্ছা একটু খাবো তাহলে,পুরোটা খেতে বলবেনা কিন্তু”
“আচ্ছা বাবা ঠিক আছে,অল্প করে খেলেই হবে বাকিটা নাহয় আমি খেয়ে নিব। এবার খেয়ে বলুন তো কেমন হয়েছে।”
অরণ্য স্যুপের বাটিটা চামচ দিয়ে বেশ খানিক্ষণ নাড়াচাড়া করে নাক বন্ধ করে এক চামচ মুখে দিলো।
শ্যামা উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করে,”কেমন হয়েছে খেতে?”
“উমম যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততোটা খারাপ না অন্তত।” বলতে বলতে এক চামচ শ্যামাকেও খাইয়ে দেয়।
“হুমম দেখেছেন,বলেছি না খারাপ না।”
গল্প করতে করতে রাতের খাওয়ার পর্ব শেষ করে তারা।
বিছানা থেকে খাবারের ট্রে টা সরিয়ে রেখে অরণ্য শ্যামার কাছে ফিরে আসে আবার। তার পাশে শুয়ে তাকে বুকে মিশিয়ে নেয় অরণ্য। শ্যামাও আবেশে চোখ বন্ধ করে অরণ্যের হৃদস্পন্দন শুনতে থাকে।
“অরণ্য..…..”, নীরবতা ভেঙে শ্যামা বলে উঠে।
” হুমম বলো…”
“আমি আমার কালকের আবদারটা ফিরিয়ে নিচ্ছি। আপনার রাতের খাবার আমার সাথে খাওয়ার দরকার নেই। আপনি সারাদিন কিছু খান না,আবার আমার জন্য এতো রাত পর্যন্ত অভুক্ত থাকতে হচ্ছে শুধু শুধু”
“এটা কোনো ব্যাপার না শ্যামা। তাছাড়া তোমার সাথে এভাবে একসাথে বসে খাবার খেতে আমার অনেক ভালো লাগছে। এতোগুলো বছর তো একা ই খেয়ে আসছি। সে খাবারে পেট ভরলেও মন ভরেনা। তাই আমি তোমার এই আবদার টা বহাল রাখতে চাই।”
“কিন্তু আপনার কষ্ট হবেনা?”
“আমার কথা বাদ দাও,আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। তুমি এভাবে আমার সাথে খাবে বলে না খেয়ে থাকতে চাইছো,তোমার কষ্ট হবেনা?”
“একদম না,আমারও অভ্যাস আছে।”
অরণ্য ভ্রু কুঁচকে তাকায় তার দিকে,”সেটা কিভাবে?”
“এভাবে কারণ আমাকে চাকরির কারণে অনেক সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে হতো,তখন ঘরে রাতের ভাত থাকলে তা পান্তা বানিয়ে খেয়ে বের হতাম মাঝে মাঝে,বেশির ভাগই কিছু না খেয়েই বেড়িয়ে যেতাম। আমি আবার বাইরের খাবার খেতে পারিনা তাই সারাদিন বিস্কিট কলা কিছু খেলে খেতাম এই যা,চাকরির পর থাকতো টানা দুটো টিউশনি, টিউশন শেষ করে বাড়ি আসতাম তখন রাত ৯টা বেজে যেতো,এসে এতো ক্লান্ত থাকতাম যে মাঝে মাঝে বসার ঘরেই ঘুমিয়ে পড়তাম,মা আমাকে রাতে কোনোমতে তুলে খাইয়ে দিতেন। তাই না খেয়ে থাকার অভ্যাস আমার আগে থেকেই আছে,এটা কোনো ব্যাপারই না আমার জন্য।”
অরণ্য ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর গলায় বলে উঠে,”তোমার এই অভ্যাসটা কোনো ভালো অভ্যাস নয়। আমি তোমাকে আবার বলছি নিজেকে না খাইয়ে রেখে কষ্ট দিওনা।”
“আপনি যদি চান আমি না খেয়ে কষ্ট না পাই তাহলে আপনার আমাকে নিজের না খেয়ে থাকার কারণ বলতে হবে। যতদিন না বলেন,ততোদিন এমনটাই চলবে।”
অরণ্য আবার নীরব হয়ে যায়,এর বিপরীতে আর কোনো কোনো কথা হয়না তাদের।
(চলবে)
#শ্যামারণ্য
#পর্বঃ১৫
লেখনীতেঃ #ফাহমিদা_মেহেজাবীন
এর মাঝে একটা মাস কেটে গেছে। এই এক মাসে দুটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে শ্যামার জীবনে।
এক, সে আর অরণ্য মনের দিক থেকে আরো কাছাকাছি চলে এসেছে, তাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি অনুভূতি প্রকাশে আগের মতো জড়তা কাজ করেনা। শ্যামা মন থেকে অরণ্যকে ভালোবেসে ফেলেছে।
আর দ্বিতীয় পরিবর্তনটি অনেক অদ্ভুত, এই এক মাসে শুরুতে সুক্ষ্ম পরিবর্তনটা ভালোভাবে লক্ষ্য না করলেও,বর্তমান ও এক মাসের আগের তফাৎ তুলনা করলে শ্যামা স্পষ্ট বুঝতে পারছে তার গায়ের কালো রঙ ধীরে ধীরে হালকা হয়ে আসছে। তাকে আগের থেকে রূপসী দেখাচ্ছে। আর রিমু আর হেনা দুজনেই তার ধারণার প্রতি সম্মতি প্রকাশ করেছে। কিন্তু এমন অলৌকিক কান্ডের ব্যাখ্যা শত চেষ্টা করেও খুঁজে পায়নি সে। এই ব্যপারে অরণ্যকে কিছু জিজ্ঞেস করলেও সে কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছে। তার মতে সে এসব মেয়েলি ব্যাপারে মাথা ঘামাতে চায়না। তাই এই রহস্যটা অমিমাংসিত ই থেকে গেছে তার কাছে।
এছাড়া বিশেষ কিছু ঘটেনি এই এক মাসে। মা,বাবা,হেনার সাথে প্রায়ই ফোনে কথা হয়,তারাও ভালো আছে। দিব্য আশ্চর্যজনকভাবে এখনো কিছু করেনি। এমন শান্তিপূর্ণ জীবনে প্রায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো শ্যামা কিন্তু তার শান্তিপূর্ণ জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে তার ফোনটি বেজে উঠে।
ফোন হাতে নিয়ে দেখে শ্যামা,হেনা কল দিয়েছে তাকে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে রাত ৮টা বাজে এখন। উৎকন্ঠায় ভ্রু কুঁচকে ফেলে শ্যামা। হেনা এই সময় কখনো কল দেয়না,কিছু কি হয়েছে তাহলে? সে ফোনটা রিসিভ করে কানে লাগায়,
“হ্যাঁ হেনা বল,এতো রাতে ফোন দিলি যে?”
ফোনের ওপাশ থেকে হেনার ফিসফিসিয়ে কথা বলার শব্দ ভেসে আসে,যেনো সে কারো থেকে লুকিয়ে তার সাথে কথা বলছে,
“আপু এখানে একটা সমস্যা হয়ে গেছে।”
শ্যামা বিচলিত হয়ে বলে উঠে,”কি হয়েছে?বাবার কি আবার শরীর খারাপ করেছে?”
“আরে না আপু,বাবা একদম ঠিক আছে। আমাকে বলতে দাও পুরোটা,আমি লুকিয়ে ফোন করেছি তোমাকে”
“আচ্ছা বল শুনছি।”
“আপু বিকেলের দিকে ভাইয়া ভাবী দুজনেই ব্যাগপত্র সহ এসে হাজির হয়েছে বাড়িতে। এসেই মায়ের পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়েছে,বারবার ক্ষমা চাইছে,সে নাকি তার ব্যবহারের জন্য অনুতপ্ত। মা তো সেদিন ভাইয়াকে চড় মারার পর থেকে তার নাম সহ মুখে আনেনি,প্রচন্ড রেগে ছিল তার উপর। কিন্তু ভাবী তার গর্ভাবস্থায় একা থাকতে হচ্ছে,আপনাদের নাতি দাদা দাদির ভালোবাসা ছাড়া বড় হবে,বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে মাফ করে দিন এইসব ইমোশনাল ব্ল্যাক’মেইল করে মাকে পটিয়ে ফেলেছে একেবারে। বাবা আর আমি ছিলাম পুরোপুরি নীরব দর্শক। এখন থেকে ওরা নাকি এখানেই থাকবে।
মা তাদের পুরোপুরি মাফ করে দিয়েছেন।
আমার এসব কেমন জানি লাগছে,এখন আমার কি করা উচিত?”
“তোকে কিছু করতে হবেনা,আমি পারলে কালই আসছি।
আমি এসে দেখছি ওরা কি করতে চাইছে।”
শ্যামা ফোনটি রেখে দিয়ে গভীর চিন্তায় পড়ে যায়। দিব্য তাহলে অবশেষে কিছু করতে চলেছে। বাড়ি ফিরে কোন উদ্দেশ্যে পূরণ করতে চাইছে সে?কাল ই বাড়ি যাবে সে। অরণ্যকে জানাতে হবে আজ।
————————
রাতে খাওয়ার পর অরণ্যকে জানায় সে,
“আমি কাল কিছুদিনের জন্য বাড়ি যেতে চাই অরণ্য।
তোমাকে তো দিব্যর কথা বলেছি আমি। সে নতুন কোনো ঝামেলা পাকাতে চলেছে। আমার সেখানে গিয়ে একবার দেখা দরকার,তাছাড়া সবাইকে কতোদিন দেখিনা তাদেরও দেখা হয়ে যাবে।”
অরণ্য অবশ্য শ্যামার ফোনে বলা কথাগুলো আগেই শুনেছে,তাই সে মোটেও অবাক হয়নি শ্যামার বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে। সে শ্যামার চুলে বিলি কাটতে কাটতে চিন্তামিশ্রিত স্বরে বলে উঠে,
“তোমার ভাইটাকে আমার তেমন সুবিধার বলে মনে হয়না। তুমি সত্যি যেতে চাও।”
“চিন্তা করোনা অরণ্য, দিব্য আর নীলাকে আমি অনেক ভালো করেই সামলে নিতে পারি,আগেও করেছি। ওদেরকে কখনো আমি বাড়ি বিক্রি করতে সফল হতে দিবোনা।”
অরণ্য এবার বিরক্তির সাথে বলে,”তুমি বাড়ির চিন্তা করছো?আমি তোমার কথা বলছি,সে তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারে।”
শ্যামা মৃদু হেসে বলে,”তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো অরণ্য, দিব্য আর আমার মাঝে যতি রেশারেশি হোক,আমি তার মায়ের পেটের বোন। সে এতটা নীচেও নামেনি যে আমার ক্ষতি করবে।”
“মানুষ কিছু পাওয়ার লোভে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তুমি কল্পনাও করতে পারোনা শ্যামা। যাচ্ছো যাও,কিন্তু সাবধানে থেকো,কাউকে বিশ্বাস করোনা। নিজের ভাইকেও না।”
জবাবে শ্যামার পক্ষ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে শ্যামার চেহারার দিকে তাকায় সে, দেখে শ্যামা ঘুমিয়ে পড়েছে ইতিমধ্যে।
অরণ্য তার চেহারার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আনমনেই বলে উঠে,
“কাল আমাকে রেখে এতোটা দূরে চলে যাচ্ছো,তবু এতো শান্তিতে ঘুমাতে পারছো কিভাবে তুমি?”
সে মুচকি হেসে শ্যামার কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে আবার বলে উঠে,
“সুস্থ শরীরে তাড়াতাড়ি ফিরে এসো শ্যামা,অরণ্য তোমার অপেক্ষা করবে।”
———————–
স্টেশন থেকে নেমে সোজা শপিং মলে চলে এসেছে শ্যামা।
এতোদিন পর বাড়ি যাচ্ছে,সবার জন্য কিছু উপহার নিয়ে যেতে চায় সে। শপিং মল ঘুরে বাবার জন্য একটা পাঞ্জাবি, হেনার জন্য একটা জামা কিনে তিন তলায় এসেছে মায়ের জন্য শাড়ী কিনতে।
শাড়ী কেনার জন্য এক দোকানের সামনে দিয়ে যেতেই এক নারী কন্ঠস্বরের ডাক তার কানে ভেসে আসে,যা তার কাছে একটু পরিচিত শোনালো,
“এইদিকে আসেন আপু, কি লাগবে দেখেন”
শ্যামা সেদিকে তাকিয়ে দেখে তার বয়সী কৃষ্ণবর্ণের এক মেয়ে শাড়ীর দোকানের ভেতর থেকে তাকে ডাকছে,মেয়েটা হয়তো এই দোকানেই কাজ করে। কিন্তু তাকে কোথায় যেনো দেখেছে মনে হলো শ্যামার।
কিছুক্ষণ মস্তিষ্কের উপর চাপ প্রয়োগ করতেই হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় এই মেয়েটি তো সেই মেয়েটি যার সাথে নির্জনা কুঠিতে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে দেখা হয়েছিলো শ্যামার।
কথাটি মনে পড়তেই সে দোকানে ঢুকে মেয়েটার দিকে এগিয়ে যায়,
“আরে আপু আপনি?আপনি এখানে কাজ করেন?”
মেয়েটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে শ্যামার দিকে,কিছুক্ষণ পর সৌজন্যতামূলক একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“দুঃখিত আপু,আপনি আমাকে চিনেন?আমাদের দেখা হয়েছে বলে আমি ঠিক মনে করতে পারছিনা।”
শ্যামা ভাবলো হয়তো তার গায়ের রঙ আগে থেকে উজ্জ্বল হয়ে যাওয়ার কারণে মেয়েটি তাকে চিনতে পারছে না,সে আরেকটু খোলসা করে বললো,
“আপু এক মাস আগে নির্জনা কুঠিতে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলেন,সেখানে দড়জার সামনে আমাদের দেখা হয়েছিলো,মনে আছে?”
মেয়েটা শ্যামার কথা শুনে কনফিউজড হয়ে বলে,”স্যরি আপু আপনার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি গত ৫বছর ধরে এখানেই চাকরি করি,আমি এই ৫বছরে কোথাও ইন্টারভিউ দিইনি। টেনে টুনে ম্যাট্রিক পাশ করেছি। আমাকে কে চাকরি দিবে আবার।”
মেয়েটির কথা শুনে শ্যামা চমকে যায়,তার কোথাও ভুল হচ্ছেনা। এই মেয়ে সেই মেয়েটাই যার সাথে তার দেখা হয়েছিলো। কিন্তু মেয়েটার সেই এক মাস আগের কথা একটুও মনে নেই,এমনকি সে যে ইন্টারভিউ দিয়েছিলো সেই কথাটিও মনে নেই।
শ্যামাকে এভাবে একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অস্বস্তিতে পড়ে যায় মেয়েটি,সে কোনোমতে আমতা আমতা করে বলে,
“আপু আপনার কি শাড়ী লাগবে?”
শ্যামা ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এসে বলে,”জ্বি আমার মায়ের জন্য একটি শাড়ী লাগবে। আমাকে কিছু শাড়ী দেখান ভালো থেকে।”
—————————-
শাড়ী কিনে দোকান থেকে বের হওয়ার পরেও আনমনে মেয়েটির কথা ভাবছিলো শ্যামা। মেয়েটাকে দেখে যেনো মনে হলো এক মাস আগের সেই দিনটার স্মৃতি পুরোপুরি মুছে গেছে তার মন থেকে। কিন্তু আদোও তা হতে পারে নাকি সে একটু বেশিই ভাবছে। এমনো তো হতে পারে মেয়েটির স্মৃতিশক্তি সত্যি দুর্বল।
এসব ভাবতে ভাবতেই সিড়ি ডিঙিয়ে নীচে নামছিলো সে,তখন অন্যমনস্কভাবে কারো সাথে ধা’ক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নেয় সে। কিন্তু পড়ে যাওয়ায় আগেই একটি পুরুষালী হাত তার কোমর জড়িয়ে ধরে তাকে রক্ষা করে।
সে কোনো মতে তাল সামলে দাঁড়িয়ে স্যরি বলতে যাবে,কিন্তু লোকটির মুখের দিকে তাকাতেই থমকে যায় শ্যামা। তড়িঘড়ি করে লোকটির থেকে ছিঁটকে দূরে সরে দাঁড়ায়,মাথা নীচু করে বলে,
“সৌরভ ভাইয়া,আপনি এখানে? স্যরি আমি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম,বুঝতে পারিনি তাই ধাক্কা লেগে গিয়েছে।”
লোকটি তার নাম শুনে চমকে উঠে,সে কতক্ষণ সামনের মেয়েটিকে উপর নীচ পর্যবেক্ষণ করে অবাক হয়ে বলে,
“শ্যামা?তুমি শ্যামা না?”
শ্যামা মৃদু হেসে বলে,”জ্বি ভাইয়া,অনেকদিন পর দেখা। কেমন আছেন আপনি?”
“ভালো,তুমি কেমন আছো?তোমাকে তো চেনায় যাচ্ছেনা দেখছি।”
“আমিও ভালো আছি ভাইয়া,আমি আসি। বাড়ি যেতে হবে, একটু তাড়া আছে।”
“ওমা সে কি,এতোদিন পরে দেখা,চলো কোথাও বসে কথা বলি।”
“না ভাইয়া,হাতে একদম সময় নেই। আমি আসি।”
এই বলে শ্যামা সৌরভকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সেখান থেকে দ্রুতকদমে বেরিয়ে আসে।
এভাবে এতো বছর পর এই লোকটির সাথে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেও পারেনি শ্যামা। সৌরভ তার প্রথম ভালোবাসা।
সৌরভের সাথে তার প্রথম দেখা হয় ভার্সিটিতে। ভার্সিটির উঠতি ছাত্রনেতা হিসেবে সবার পরিচিত মুখ ছিলেন তিনি। সবার সাথেই তিনি হাসিমুখে মিষ্টি করে কথা বলতেন। তাই সবার কাছে একজন প্রিয় মুখ ছিলেন সৌরভ ভাইয়া।
তার সুমিষ্ট কথা বার্তা আর নম্র আচরণের কারণে ভার্সিটির অনেক মেয়েই তার প্রতি মোহিত ছিলো।
শ্যামাও এর ব্যতিক্রম ছিলোনা,কিন্তু সে অন্য মেয়েদের মতো রূপসী ছিলোনা তাই সে তার মনের অনুভূতি গুলো কখনো প্রকাশ করতো না তার কাছে।
কিন্তু মনের উপর কার জোর চলে? সৌরভ ভাইয়া আর তাদের এলাকা পাশাপাশি হওয়ার সুবাদে সৌরভ ভাইয়া প্রায়ই তার বাইকে তাকে লিফট দিতেন। এভাবে একসাথে যাতায়াত করতে গিয়ে শ্যামা সৌরভকে ভালোবেসে ফেলে।
কিন্তু তাকে হারানোর ভয়ে সে কখনো বলতে পারেনি সে কথা।
কিন্তু সে তার এক ক্লাসমেইটকে একদিন কথায় কথায় বলে দিয়েছিলো যে সে সৌরভকে পছন্দ করে। আর এটিই তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
সুপ্তি আপু সৌরভ ভাইয়ার ব্যাচমেট ছিলো,তারা ভালো বন্ধু ছিলো এটুকুই জানতো সে। কিন্তু তিনি যে সৌরভ ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড ছিলেন সে জানতো না। উনার কানে কিভাবে যেনো পৌছে যায় এই কথা যে শ্যামা সৌরভকে ভালোবাসে।
শ্যামা আর সৌরভ প্রায় একসাথে যাতায়াত করতো দেখে তাদের সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলে তখন।
এই ব্যাপারটির রেশ ধরে সুপ্তি আপু তাকে ভার্সিটির মাঠে সবার সামনে অপ’মান করে,সে নাকি বামন হয়ে চাঁদে হাত দিতে চায়।
সৌরভ ভাইয়া সবটা দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখেছিলেন। একবারের জন্যও থামানোর চেষ্টা করেননি।
সেদিন সে বুঝতে পেরেছিলো যে ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিলো সে।
সেদিনের অপ’মান ভুলতে অনেক সময় লাগে তার,এরপর থেকে কখনো সৌরভ ভাইয়ার সাথে কথা বলেনি সে।
পরে একদিন শুনে সুপ্তি আপুকে নাকি কে বা কারা ধ’র্ষ’ণ করে রাস্তায় ফেলে চলে গিয়েছিলো। এই নিয়ে সৌরভকে পুলিশি ঝামেলায়ও পড়তে হয়েছিলো।
শ্যামা চাকরি শুরু করার পর থেকে ভার্সিটি যাওয়া একদম কমে যায় তার,তাই এতোবছর সৌরভের সাথে দেখা পর্যন্ত হয়নি তার।
আজ এতোদিন পরে সেই লোকটির সাথে এভাবে দেখা হবে ভাবতে পারেনি শ্যামা। লোকটি তাকে স্পর্শ করেছে ভাবতেই ঘে’ন্নায় শরীর রি রি করে উঠে তার। সে যত জলদি পারে লোকটার সামনে থেকে চলে যেতে চায়।
এদিকে সৌরভ লো’ভা’তুর দৃষ্টিতে শ্যামার গমনরত অবয়ব এর দিকে তাকিয়ে আছে। শ্যামা যে তাকে পছন্দ করতো সে তা আগে থেকেই জানতো কিন্তু কখনো সে তাকে সেই চোখে দেখেনি। মেয়েটি দেখতে সুন্দর ছিলোনা,তার উপর বেশভূষা ছিলো খ্যাতের মতো। শুধুমাত্র নিজের ইমেজ মহান হিসেবে পাকাপোক্ত করার জন্য এই মেয়েটি যাকে কেউ পাত্তা দিতোনা,তার সাথেও ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছিলো।
কিন্তু মেয়েটা এখন পুরোপুরি বদলে গেছে যেনো। কলাপাতা রঙের কামিজে এক পাশে বিনুনি করে রাখা উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের মেয়েটিকে মেকআপ আর মডার্ণ ফ্যাশন ছাড়াও বেশ রূপসী লাগছে। বড় বড় নেতাদের কাছে সে মেয়ে সাপ্লাই করে পার্টিতে নিজের পাকাপোক্ত পজিশন তৈরি করার জন্য,তাদের মধ্যে অনেকের আবার শ্যাম বর্ণের মেয়েদের শখও রাখে। এই মেয়েটাকে এতোদিন খেয়াল করেনি কেনো সে।
সে আনমনেই বলে উঠে,
“বাহ মেয়েটার ফি’গারটাও তো বেশ জোস,আগে খেয়াল করিনি কেনো? আগে খেয়াল করলে একবার চেখে দেখা যেতো”
এই বলে ঠোঁট কা’ম’ড়ে শয়তানি এক হাসি দিয়ে সে নিজের কাজে চলে যায়।
(চলবে)