#শ্যামারণ্য
#পর্বঃ২০
লেখনীতেঃ #ফাহমিদা_মেহেজাবীন
রাত আড়াইটা। নীলা আবার শোয়া থেকে উঠে ছুটে যায় বাথরুমে,তারপর হড়হড় করে বমি করতে থাকে।
এই নিয়ে কয়বার হলো জানেনা দিব্য। নীলাকে কি শান্তনা দিবে?তার নিজের চোখেও ঘুম নেই।
রাজ্যের ভীতি আর দুশ্চিন্তা ঝেঁকে ধরেছে তাকে।
আজ পুলিশের ফোন আসার পর তাদের আবিরের লা’শ শনাক্ত করতে যেতে হয়,লা’শের অবস্থা দেখে নীলা তো সেখানেই হড়হড়িয়ে বমি করে দেয়,এখনো সেই দৃশ্য মনে করে করে তার অবস্থা খারাপ। তার নিজের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। তার চোখেও ভাসছে সেই বিভৎস দৃশ্য।
চারটি লা’শের মধ্যে কারোই চেহারা দেখে শনাক্ত করার উপায় নেই,কেউ তাদের চোখ দুটি উপড়ে ফেলে মুখটা থেতলে দিয়েছে,আবিরের হাত দুটিই উপড়ে ফেলা হয়েছে।
অথচ পুলিশ নাকি কোনো অস্ত্র পায়নি ঘটনাস্থলে যার সাথে খু’নের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।
পুলিশ কোনো সুরাহা করতে না পেরে তাদের কেই প্রাথমিক সন্দেহের তালিকায় ধরে নিয়েছে যেহেতু শেষবার কথা নীলার সাথে হয়েছে,আর তাকে অনেকবার কল করা হয়েছে এতো রাতে নীলার নাম্বার থেকে।
তারপর শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ,অনেক কষ্টে উকিলদের সাহায্যে পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে বেজে যায় রাত দশটা। তারপর সোজা তাদের ভাড়া বাসায় চলে এসেছে,ওই বাড়িতে পা দেওয়ার সাহস আর করেনি।
নীলাও এখন অনেকটা বিশ্বাস করা শুরু করেছে দিব্যর কথা। অনেক ক্ষমতাধর কেউ আছে শ্যামার পিছনে যে তাকে রক্ষা করছে। আর তারা তাকে রাগিয়ে দিয়েছে।
নীলা বাথরুম থেকে টলতে টলতে এসে বসে দিব্যর পাশে,তাকে অনেক বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। ভাইয়ের মৃত্যুর শোক পালনের সুযোগ টুকু হয়নি তার,এখন নিজের জান নিয়েই চিন্তা করতে হচ্ছে। সে নিজের পেটে হাত রেখে কাঁপা কাঁপা গলায় দিব্যকে জিজ্ঞেস করে,
“ওরা আমার বাচ্চার কোনো ক্ষতি করবেনা তো?”
দিব্য পাশ ফিরে নীলার ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া চেহারার দিকে তাকায়,”আমি জানিনা নীলা,কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা কি করা উচিত আমার।”
“কিছুই করার নেই তোর আর,আগেই সাবধান করেছিলাম। তখনই যদি থেমে যেতি আজ তোর এই দিন আসতোনা।”
হঠাৎ অচেনা ভারী পুরুষালী কন্ঠের কথাগুলো শুনে ভয়ে জমে যায় নীলা আর দিব্য। তারা ধীরে ধীরে পাশ ফিরে তাকায় কন্ঠের উৎসের দিকে।
রুমে শুধু একটি ড্রিম লাইট জ্বলছে। সে ড্রিম লাইটের মৃদু আলোয় দেখতে পায় তারা,
দেওয়ালের কোণার আলো আধারির মাঝে দেওয়ালের সাথে টেশ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি অবয়ব। চোখেমুখে খেলা করছে তার কুঠিল হাসি,সে হাসতে হাসতেই বলে উঠে,
“জানিস তোদের কাল বাকি শয়তানদের সাথে শেষ করে দিইনি কেনো?কারণ আমি ভাবতে ব্যস্ত ছিলাম তোদের কি শাস্তি দেওয়া যায়,সহজ মৃ’ত্যু অনেক কম শাস্তি হবে তোদের জন্য।”
দিব্যর এই কন্ঠ চিনতে অসুবিধা হয়না,সে তার মস্তিষ্কে হাজারবার প্রতিধ্বনি শুনেছে এই কন্ঠের। সে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে,
“ক্ষমা করে দাও এই বারের মতো,আর কখনো এরকম কিছু হবেনা আমি কথা দিচ্ছি”
দিব্যর কথা শুনে নীলারও হুঁশ ফিরে,সে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় চেয়ে ছিলো এতোক্ষণ সেই যুবকের দিকে,সেও সুর মিলায় দিব্যর সাথে,
“আমি সন্তানসম্ভাবা,আমার সন্তান কোনো দোষ করেনি,প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও। আমরা সত্যি শ্যামা আপুর আর কোনো ক্ষতি করবোনা।”
অরণ্য এবার শব্দ করে হেসে ফেলে,”তোদের বলে বোঝাতে পারবোনা তোদের এভাবে আমার সামনে প্রাণভিক্ষা চাইতে দেখে কতটা শান্তি লাগছে আমার।
আর তোদের ক্ষমা করবো?অরণ্য তালুকদার কখনো ক্ষমা করেনা,সুযোগ দেয়। ভুল করার আগে সীমানা নির্ধারণ করে দেয়,সেই সীমানা লঙ্ঘন করলে শাস্তি পেতে হবে। তোকে তোর সীমানা জানিয়ে দিয়েছিলাম,আমার শ্যামা থেকে দূরে থাকতে বলেছিলাম। কিন্তু তুই কি করলি?তোর বউয়ের কথায় তুই নিজের বোনকে শকুনদের হাতে তুলে দিয়েছিস তাকে খু’ব’লে খাওয়ার জন্য”
“আমি শ্যামা আপুর কোনো ক্ষতি চাইনি…”
“চুপ!একদম চুপ! ওর নাম আরেকবার তোদের নষ্ট মুখ দিয়ে নিবি তো তোদের দুটোর এমন অবস্থা করবো যে মৃ’ত্যু কামনা করবি তোরা।”
অরণ্যের রাগে মাথার শিরা ধপধপ করে কাঁপছে,সে এগিয়ে এসে হাত দিয়ে দিব্যর থুতনি চেপে ধরে,কট করে হাঁড় ভাঙ্গার শব্দ শুনতে পাওয়া যায় সাথে সাথে,দিব্য যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠে, নীলা এই দৃশ্য দেখে ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে,অরণ্য আবার রাগী কন্ঠে বলে উঠে,
“আর কি বললি তুই?তুই তার কোনো ক্ষতি করতে চাস নি তাইতো?তোর কি মনে হয় শ্যামার মতো আত্মসম্মানী একজন মেয়ে যে তার সম্মানকে সবকিছুর উর্ধ্বে রাখে তার সম্মানহানি করবি তুই আর সে তার সম্মান বাঁচাতে তোদের প্ল্যান মতো বিয়ে করে নিবে?এইটুকুই চিনিস তুই তোর বোনকে? শ্যামা সবার আগে নিজের গলায় দড়ি দিতো যখন সে জানতে পারতো খারাপ কিছু হয়েছে তার সাথে,নিজেকে শেষ করে দিতো সে আমি তাকে রক্ষা না করলে সেই রাতে।”
দিব্যর হঠাৎ অনুশোচনা হয়,সে আসলেই এভাবে ভেবে দেখেনি। লোভে পড়ে বিবেকবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছিলো। কিন্তু অনেক দেরি করে ফেলেছে সে,সেই ভুল আর শোধরানোর উপায় নেই তার।
অরণ্য দিব্যকে ছেড়ে দিয়ে এবার নীলার দিকে তাকায়,
“আর তুই?তুই কি আসলেই নারী?তুই নাকি আবার মা হবি?
মেয়ে হয়ে জেনে শুনে আরেকটা মেয়েকে তোর বখাটে ভাই আর তার মাস্তান বন্ধুদের হাতে তুলে দিয়েছিস,সেদিন আমি আরেকটু দেরি করলে….”
কথাটি আর শেষ করতে পারেনা অরণ্য,তীব্র অনুশোচনায় চোখ বুজে আসে তার।
নীলা এদিকে কাতরকন্ঠে ক্ষমা চেয়ে চলেছে,বলে চলেছে সে এমনটা করতে চায়নি। অরণ্য চোখ খুলে ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে একবার তাকায় সামনের মানুষ দুটির দিকে। তাদের সাথে আর কথা বলে তার মন মেজাজ খারাপ করতে চায়না সে। সে উঠে দাঁড়ায় তার নির্ধারিত শাস্তি দেওয়ার জন্য।
অরণ্য তার কাজ শেষ করে রাস্তায় নেমে উদ্দেশ্যেহীনভাবে হাঁটতে থাকে,রাতের ঠান্ডা মৃদুমন্দ বাতাস তার এলোমেলো চুল আরও এলোমেলো করে দিতে থাকে। মনটা তার আরও এলোমেলো হয়ে আছে।
ভোর হতে এখনো অনেক দেরি। তার এখন ইচ্ছে করছে শ্যামার কাছে ফিরে গিয়ে তার ঘুমন্ত মুখটা একবার দেখতে। কিন্তু সে তার র’ক্ত ছিটা পড়া পোশাক আর হাতের দিকে তাকিয়ে সে ইচ্ছেটাকে দমন করে রাখে। এমন ঘৃ’ণ্য আর অপবিত্র অবস্থায় সে শ্যামার কাছে যেতে চায়না। তার সামনে সে সবসময় থাকবে তার স্বপ্নপুরুষ অরণ্য হিসেবে। শ্যামার কথা মনে পড়তেই এমন বিক্ষিপ্ত মনেও তার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।
তবে সে হাসি পুরোপুরি মিলিয়ে যায় যখন কেউ তার পথ অবরোধ করে দাঁড়ায়। সেই একি ছেঁড়া আলখেল্লা,মাথায় রংচটা গামছা বাধা,সেই আটপৌরে লাঠি,কাধে সেই একই পুটলি,আর এক গাল সাদা লম্বা দাঁড়ির মধ্যে সেই একই গা জ্বালানো হাসি। তাকে এতো বছর পর তার সামনে দেখে রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে যায় অরণ্যের,ছুটে গিয়ে গলা টিপে ধরে শূন্যে উঠিয়ে নেয় বৃদ্ধকে,তারপর দাঁতে দাঁত পিষে বলতে থাকে,
“তোর সাহস তো কম না!আমার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়ে আবার এতো বছর পর আমার সামনে এসেছিস! কি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিস এইবার?” রাগের মাঝেও গলা ধরে আসে অরণ্যের।
বৃদ্ধ ফকির অরণ্যের আঘাতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালোনা,যেনো অরণ্যের আঘাত তাকে বিন্দুমাত্র কষ্ট দিতে পারছেনা। অবশ্য তা মিথ্যে নয়,অরণ্য জানে সে তার সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেও এই লোকের কিচ্ছু করতে পারবেনা। অনেক ক্ষমতাধর জ্বিন সে,তার এই অবস্থার জন্য দায়ী একমাত্র এই জ্বিন। তার জীবনের এক মুহুর্তের একটা ভুল তার জীবনের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে।
বৃদ্ধ ফকির তার দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে অরণ্যের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাসতে হাসতেই বলে,
“তোর বউয়ের প্রতি তোর এতো ভালোবাসা দেখে তোর সাথে একবার দেখা করার লোভ সামলাতে পারলাম নারে জমিদার। ভারী মিষ্টি মেয়েটা,আজকাল এমন মেয়ে পাওয়া যায়না, সে সবাইকে অনায়াসে ভালোবাসতে পারে। কিন্তু তুইও যে কাউকে ভালোবাসতে পারিস তা দেখে ভালো লাগলো।”
বুক ধ্বক করে উঠে অরণ্যের জ্বিনের মুখে শ্যামার কথা শুনে,আতঙ্কে মুখের র’ক্ত সরে যায় তার চেহারা থেকে,
“শ্যামাকে এর মধ্যে আনিস না। তোর সাথে কোনো শত্রুতা থাকলে আমার আছে,এর সাথে ওর কোনো সম্পর্ক নেই। ও নির্দোষ। ওর কোনো ক্ষতি করিসনা তুই,আমি হাত জোর করে মিনতি করছি তোর কাছে”
বৃদ্ধের মুখের হাসি মিলিয়ে যায় এবার,সে রাশভারী গলায় বলে উঠে,”আমি এখানে কারোও ক্ষতি করতে আসিনি। আমিও মেয়েটার ভালো চাই,তাই তোকে সতর্ক করতে এসেছি। মনে করিয়ে দিতে এসেছি কি ভুলে যাচ্ছিস তুই।”
অরণ্য ধুরু ধুরু বুকে ভ্রু কুঁচকে তাকায় জ্বিনের দিকে,তার কথা বোধগম্য হয়না তার। কি ভুলে যাচ্ছে সে?
———————————–
সকাল নয়টা। বাড়িওয়ালা রশিদ মিয়া বিরক্তির সাথে সিড়ি বেয়ে উঠছে দোতলার উদ্দেশ্যে। দোতলার ভারাটিয়াদের উপর প্রচন্ড বিরক্ত সে। বাসা ছাড়বে বলে অগ্রিম বলে দিয়েছে,আজ মাসের এক তারিখ,এখনো জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার নাম গন্ধ তো নেই। তার উপর কাল নাকি ওরা আবার ফিরে এসেছে। মধ্যরাতে তাদের ঘর থেকে অনেক আওয়াজ আসছিলো। তাদের ঘরের একদম উপরের তলায় এসব আওয়াজ হওয়াতে রাতে ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে তাদের এসব আওয়াজ।
রশিদ মিয়া ঠিক করেছেন এমন ভাড়াটিয়া তিনি রাখবেন না। আজিই চলে যেতে বলবে। কিন্তু কখন থেকে কলিং বেল বাজিয়ে চলেছেন তিনি,এখনো কারো দড়জা খোলার নামগন্ধ নেই।
বিরক্ত হয়ে সে এবার দড়জায় বাড়ি দেয়,সাথে সাথে খানিকটা ফাঁক হয়ে যায় দড়জা। রশিদ মিয়া অবাক হয়ে যায়,এভাবে বাসাবাড়ির দড়জা খোলা রাখে কে?
সে অনেকবার বাইরে থেকে ডাকাডাকি করে কিন্তু কেউ সাড়া দেয়না তাতে। কি করবে বুঝতে না পেরে এবার দড়জা খুলে ঘরে প্রবেশ করে রশিদ মিয়া।
পুরো ঘরে পিনপতন নীরবতা,কোনো মানুষের কোলাহল শোনা যাচ্ছেনা। সে ডাকাডাকি করে ভেতরের রুমে যেতে যেতে হঠাৎ র’ক্তের ধাতব গন্ধ তার নাকে এসে বারি খায়।
রশিদ মিয়া দ্রুত কদমে রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়,তবে সেখানে যে দৃশ্য দেখলেন তিনি তা দেখে ভয়ে চিৎকার করে পালিয়ে যান সেখান থেকে।
রুমে দিব্যর লা’শ পড়ে আছে,শরীরে অসংখ্য ছুরিকাঘাতের দাগ,তার শরীর থেকে র’ক্ত গড়িয়ে চারপাশে র’ক্তের ছোটখাটো একটা পুলের সৃষ্টি হয়েছে। পাশে র’ক্তমাখা ছুড়ি হাতে ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নীলা। নীলার দৃষ্টি ঘোলাটে,সে সজাগ,কিন্তু তার আশেপাশে কি ঘটছে এবং ভবিষ্যতে তার সাথে কি কি ঘটবে তা বোঝার বিন্দুমাত্র কোনো বোধশক্তি নেই তার মাঝে।
(চলবে)
#শ্যামারণ্য
#পর্বঃ২১
লেখনীতেঃ #ফাহমিদা_মেহেজাবীন
বাড়িওয়ালা রশিদ মিয়ার চিতকার চেচামেচিতে আশেপাশের ভাড়াটিয়াসহ সকলে জেনে যায় এই বাড়িতে খু’ন হয়েছে।
পুলিশ আসার আগে উৎসুক জনতাদের ভীড় লেগে যায় বাড়ির সামনে। কেউ কেউ তো সাংবাদিকদেরও জানিয়ে দিয়েছেন। এসব খবর ছড়াতে সময় লাগেনা।
এক সময় শ্যামাদের বাড়িতেও পৌছায় সে খবর। হঠাৎ এমন একটা খবর আসবে সেটা তারা কস্মিনকালেও ভাবতে পারেননি।
খবরটা শুনে তার মা পুত্রশোকে দিশেহারা হয়ে যায়,বাবা স্তব্ধ হয়ে কাঁদতেও ভুলে গেছেন যেনো। হেনা তখনও কলেজে,সে এসবের কিছুই জানেনা।
আজ পাড়া প্রতিবেশী অনেকেই এসেছেন শ্যামাদের বাড়িতে,এমনকি সেসব আত্মীয় যারা এতোদিন তাঁদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখেনি শ্যামার মা বাবাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য।
শ্যামার মা বাবা যখন ছেলের বাসার সেখানে ছুটে যান ছেলেকে দেখতে,তখন নীলাকে পুলিশের গাড়িতে তোলা হচ্ছে,সে এখনো কেমন ঘোরের মধ্যে আছে।
শ্যামার মার তাকে দেখেই মাথায় রাগ উঠে যায়,এগিয়ে গিয়ে গালে সজোড়ে এক চ’ড় বসিয়ে দেন তিনি,পাশের মহিলা কনস্টেবল তাকে ধরে থামিয়ে রাখে,তিনি তবু চিতকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে,
“কালনাগিনী আমার সন্তান তোর কোন ক্ষতি করেছিলো যে তুই তাকে এভাবে খু’ন করলি?আমার সন্তান আমাকে ফেরত দে!”
নীলার তৎক্ষণাৎ হুঁশ ফিরে আসে যেনো,সে ভীত চোখে আশেপাশে নজর বোলাতে থাকে,
“এখানে কি হচ্ছে?আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো তোমরা?আমি কি করেছি?”
তার কথা শুনে শ্যামার মা বাবাসহ আশেপাশের সকলে হতভম্ব হয়ে যায়,নিজের স্বামীকে হ’ত্যা করেছে সে আর সে জিজ্ঞেস করছে কি করেছে সে।
নীলাকে পুলিশের গাড়িতে তোলার সময়ও সে বারবার একই কথা বারবার বলেছে,
“আমি কিচ্ছু করিনি,আমাকে অন্তত বলুন কি হয়েছে?আমাকে কেনো নিয়ে যাচ্ছেন?”
———————–
পুলিশের জবানবন্দি ও প্রতিবেশীদের মুখরোচক সমালোচনা থেকে অনেক কথাই বেড়িয়ে আসে। এই নীলা সুকৌশলে আগে পরিবারে ভাঙন সৃষ্টি করে পরিবারের ছেলে পরিবার থেকে আলাদা করে দেয়,পারিবারিক কলহ সৃষ্টি করে,কিছুদিন আগে নাকি ছেলে ফিরে আসে তা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিলো,এই নীলা আবার নিজের ভাই সহ আরও তিনজনের মা’র্ডা’র সাসপেক্ট,কালই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ডাকা হয়েছিলো,পুলিশ সন্দেহ করছেন স্বামী তার খু’ন করার কথা জানতে পেরে যাওয়ায় তা নিয়ে তর্কের সৃষ্টি হয় তাদের মধ্যে এবং তার জের ধরেই খু’নটা হয়েছে। এসব চাঞ্চল্যকর খবর সাংবাদিকরা বেশ তেল মশলা লাগিয়ে ফলাও করে প্রচার করেন।
মুহুর্তেই ছিঃ ছিঃ পড়ে যায় লোকমুখে। তাতে ষোলকলা পূর্ণ করার জন্যই হয়তো কেউ কেটে ছেঁটে এক মিনিটের একটি ভিডিও ছেড়ে দেয় ইন্টারনেটে যেখানে দেখা যায় একজন দুঃখিনী মা তার মৃ’ত সন্তান ফেরত চাইছে তার জবাবে নীলা বলছে সে কিছুই করেনি।
ভাইরাল হয়ে যায় সেই ভিডিও,বিক্ষোভে ফেঁটে পড়ে নেটজনতা। ‘সাইকো’ তকমা লাগিয়ে নীলাকে অঘোষিত দোষী সাব্যস্ত করেই তার কঠিন শাস্তির দাবি করতে থাকে পুরো দেশ থেকে।
এসবের কিছুই জানেনা শ্যামা তখনও। সে হাসিখুশি মনে ভেবে চলেছে অরণ্যের জন্য কি রাঁধবে সে,কোন শাড়ি পড়বে আজকে। তার সুখের ছোট্ট পৃথিবীটা পুরোপুরি খানখান হয়ে যায় একটা ফোন কলের মাধ্যমে।
হেনা দেড়টা বাজে কলেজ থেকে এসে দেখে বাড়িতে মানুষজন গিজগিজ করছে। সবাই উচ্চবাক্যে কি জানি বলাবলি করছে। সে আতঙ্কিত মনে এগিয়ে যেতেই তাকে ঘিরে ধরে কাঁদতে শুরু করে তার নামমাত্র আপনজনেরা।
তাঁদের থেকে সবটা জানতে পেরে সেও বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।
তার মনে সর্বপ্রথম যে ভাবনার উদয় হয়,তা হলো মা বাবার কাছে পৌছানো। তারা রয়েছে পুলিশ স্টেশনে,এলাকার কয়েকজনের সাহায্যে সে যখন পুলিশ স্টেশনে পৌছায় তখন মা পুরো নেতিয়ে পড়েছে আর সাংবাদিকরা তাকে ঝেঁকে ধরে একের পর এক প্রশ্ন করে চলেছে। এই দৃশ্য দেখে তার বুক হাহাকার করে উঠে।
এর পরেরটা তাকেই সামলাতে হয়েছিলো,অনেকেই আবার তাকে সাহায্য করেছে সাংবাদিকদের ভিডিওতে আসার লোভে। যাইহোক মা বাবাকে ধাতস্থ করা,পুলিশের জেরা,রিপোর্ট ধার্য করা এসব করতে করতে সময় খুব দ্রুতগতিতেই পার হয়ে যায়।
শ্যামার কাছে হেনার সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ফোন কলটি আসে সন্ধ্যাবেলায়,সূর্য মাত্র ডুবেছে তখন। শ্যামা আপনমনে তার ডায়েরি লেখায় ব্যস্ত ছিলো। শ্যামা ফোন রিসিভ করে কানে লাগাতেই ওপাশ থেকে হেনার ক্লান্ত গলার কান্নামিশ্রিত স্বর ভেসে আসে,
“আপু…..”
শ্যামা হেনার কান্না শুনে বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে বোন আমার?কাঁদছিস কেনো?মা বাবা ঠিক আছে?দিব্য কিছু করেছে তোর সাথে?”
হেনা ক্লান্ত স্বরে বলে,”কিচ্ছু ঠিক নেই আপু,কিচ্ছু ঠিক নেই….ভাবী ভাইয়াকে মে’রে ফেলেছে.. ”
কথাটি যেনো বজ্রের ন্যায় আঘা’ত করলো শ্যামাকে,দিব্যকে মে’রে ফেলেছে মানে?সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,
“কি যা তা বলছিস হেনা?তুই মজা করছিস তাইনা?নীলা কেনো মা’র’বে দিব্যকে?দিব্য ওর একমাত্র ঠিকানা,সে কেনো তাকে কিছু করবে…”
হেনার কান্না আরও তীব্র হয়,”আমি জানিনা আপু,কিচ্ছু জানিনা আমি। ভাবীকে ভাইয়ার লা’শের পাশে র’ক্তমাখা ছু’ড়ি হাতে পেয়েছে সবাই,অথচ ভাবীকে জিজ্ঞেস করা হলে সে এমন ভাবে কথা বলে যেনো সে জানেও না ভাইয়া আর নেই,যেনো সেই রাতের কিছুই তার মনে নেই। সে নাকি তার ভাই আর তার বন্ধুদের হ’ত্যার সাথেও জড়িত পুলিশ বলেছে…”
হেনার কথাগুলো তার মনের এক অদৃশ্য কোণে আঘাত করে যেনো,যেখানে সে তার মস্তিষ্ককে ইচ্ছে করেই বিচরণ করতে দেয়না। চোখ বেয়ে অনবরত অশ্রু গড়াতে থাকে শ্যামার।
হেনার কাতর কন্ঠ এখনো ফোনের অপর পাশ থেকে ভেসে আসছে,
“আপু তুই জলদি ফিরে আয়,আমি একা সামলাতে পারছিনা…”
এক সময় ফোন কেটেও যায়।
কিন্তু শ্যামার কানে হেনার বাকি কথাগুলো মোটেও পৌছায়নি।
সে বাকরুদ্ধ হয়ে শূন্যে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে,তার হাত থেকে ফোনটি অনেক আগেই পড়ে গিয়েছে,চোখ থেকে অবাধ্য অশ্রুগুলো গড়িয়ে পড়ছে। আর মাথায় শুধু সেই নিষিদ্ধ স্মৃতিগুলো বারি খাচ্ছে।
অপহরণের রাতে জ্ঞান হারানোর আগে অরণ্যের আতরের সুগন্ধ অনুভব করা,অরণ্যের কাল রাতে হঠাৎ চলে যাওয়া এবং সেই রাতেই দিব্যর খু’ন হওয়া,শপিং মলের সেই মেয়েটির মতো নীলার স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়া সবকিছুর মধ্যে একটা জিনিস কমন রয়েছে,সবকিছুর ইঙ্গিত একদিকে…..
শ্যামা আনমনেই বলে উঠে,
“অরণ্য…..”
অস্ফুট স্বরে অরণ্যের নাম তার মুখ দিয়ে বের হওয়ার পর এই প্রথমবার প্রশান্তির বদলে তার বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে শ্যামা।
তার মনে সে অনবরত আওড়ে চলেছে,
‘নাহ এটা হতে পারেনা…আমার অরণ্য আমার ভালোবাসা কাউকে খু’নের মতো কাজ করতে পারেনা। হতেই পারেনা এমন,আমার অরণ্য আমার প্রশান্তি আমার ভালোবাসার আরেক নাম,সে কখনো এমন গর্হিত কাজ করবেনা..কক্ষনো না’
সে কাঁপা কাঁপা পায়ে উঠে দাঁড়ায়,টলমলে পায়ে দাঁড়াতেই পড়ে যেতে যেতে খাটের কিনারে বসে পড়ে। সে কয়েকবার জোরে শ্বাস নিয়ে তার বিক্ষিপ্ত মনকে শান্ত করার এক ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে। তারপর ছুটে যায় ঘরের বাইরে,উদ্দেশ্যে তার অরণ্যের সেই নিষিদ্ধ কক্ষ।
অরণ্যের সাথে এক মাসের এই অস্বাভাবিক সংসারে সে তার নির্ধারিত সীমানা কক্ষনো লঙ্ঘন করেনি,সব চোখ মুখ বুজে মেনে নিয়েছে। তার কাছে অরণ্য তার সবটা জুড়ে ছিলো,তাকে হারানোর ভয়ে সে কখনো এই সীমানা লঙ্ঘন করার কথা চিন্তাও করেনি।
কিন্তু আজকে নয়,অরণ্যকে বলতে হবে সে এসব করেনি,সে এমন নয়। তাকে আজ জবাব দিতে হবে।
শ্যামা অরণ্যের করিডোরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলো,মস্তিষ্ক তাকে শেষবারের মতো সতর্ক করে দিলো
‘ভেবে নাও শ্যামা,এই সীমানা একবার লঙ্ঘন করেছো তো হতে পারে অরণ্যকে তুমি চিরতরে হারিয়ে ফেলবে”
কিন্তু শ্যামা আবেগের বশে কবে শুনেছে তার মস্তিষ্কের সতর্কতা?সে মন মস্তিষ্কের দন্ধে সবসময় তার মনকে প্রাধান্য দিয়েছে। আজও ব্যতিক্রম হয়নি তার।
শ্যামা সামনের কালিঘোলা অন্ধকার করিডোর ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে করিডোরের সেই শেষ প্রান্তের রুমটির দিকে। বুকে তার সকল অনুভূতির দন্ধ চলছে এই মুহুর্তে।
প্রত্যেক কদমে দড়জা আর তার মধ্যকার দূরত্ব কমতে থাকে। দড়জা থেকে কয়েক কদম দূরত্বেই সে একটি অস্পষ্ট শব্দের গোঙ্গানি শুনতে পায়,চলতে চলতে হঠাৎ থমকে যায় শ্যামা। আবার কান খাড়া করে শুনতে চেষ্টা করতে করতে নিশব্দে এগিয়ে যায় দড়জার কাছে। কিন্তু সে আওয়াজ আর শুনতে পেলোনা সে। শ্যামা দড়জায় হাত দিতে যাবে ঠিক সে সময় সামশের এসে দড়জা আর তার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায়,
“মালকিন,আপনি এখানে কেনো এসেছেন?এখানে আসা আপনার জন্য বারণ।”
হঠাৎ সামশেরকে দেখে ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে শ্যামা। সে নিজেকে সংযত করে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,
“সামনে থেকে সরুন চাচা,আমার অরণ্যের সাথে কথা বলা জরুরি”
“মনিবের সাথে কথা বলতে হলে আপনাকে নিয়ম মেনে আপনার ঘরে অপেক্ষা করতে হবে।”
ধৈর্যর বাধ ভেঙ্গে যায় শ্যামার,
“আমাকে দেখে মনে হয় আমি এখন নিয়ম মানার অবস্থায় আছি?!সামনে থেকে সরুন,আমি অরণ্যের সাথে কথা বলতে চাই,এই মুহুর্তে,এক্ষুনি!”
অরণ্য সবটা শুনেছে ভেতর থেকে,সে তার নিস্তেজ শরীর কোনো মতে টেনে নিয়ে যায় দড়জার কাছে,এটুকু আসতেই তাল সামলাতে না পেরে দরজার সাথে ধরাম করে পড়ে বসে যায় ফ্লোরে। জোরে জোরে হাঁপাতে থাকে অরণ্য।
হঠাৎ এমন আওয়াজে চমকে উঠে সামশের এবং শ্যামা দুজনেই।
তারপর ভেসে আসে অরণ্যের নিস্তেজ ক্ষীণ কন্ঠস্বর,
“সামশের, শ্যামা আর আমি কথা বলবো,তুমি যেতে পারো”
সামশের বিচলিত হয়ে বলে,”কিন্তু মনিব….”
“যেতে বলেছি তোমাকে!”, অরণ্যের গম্ভীর কণ্ঠধ্বনি শ্যামারও সারা শরীরে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়,অরণ্য এতো গম্ভীর রাশভারি কন্ঠে তার সাথে কখনো কথা বলেননি। এই প্রথম সে শুনলো তার সেই পিলে চমকে দেওয়া কন্ঠ।
সামশের আর কোনো দিরুক্তি না করে ভারাক্রান্ত মনে সেখান থেকে চলে যায়। শ্যামা সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে কিছুক্ষণ দড়জার দিকে তাকিয়ে ভাবে,
‘আজও আপনি আমাদের মাঝখানে একটা দেওয়াল রাখতে সক্ষম হয়েছেন অরণ্য,এখনো কি আমার সামনে আসার সময় আসেনি আপনার?’ ভাবতেই মনটা বিষিয়ে উঠে তার।
তবে এখন সেসবের সময় নয়,তার কাছে অন্য প্রশ্ন রয়েছে এই মুহুর্তে অরণ্যের জন্য। সে হাটু গেড়ে বসে পড়ে দড়জার সামনে। দড়জার সাথে মাথা হেলান দিয়ে ডাকে তাকে,
” অরণ্য….”
“শুনছি”
অরণ্যের কন্ঠের গম্ভীরতা আবার চমকে দেয় শ্যামাকে,এমনভাবে কথা বলছেন কেনো উনি?উনি কি রেগে আছেন তার উপর এখানে আসার কারণে?করুক রাগ,তার বুঝি রাগ হয়না?কেনো তাকে নিজের স্বামীর সাথে ঘড়ি ধরে কথা বলতে হবে? সে নিজের চোখের পানি নিয়ন্ত্রণ এর ব্যর্থ চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করে,
“দিব্যকে কেউ মে’রে ফেলেছে,আপনি জানেন?”
ওপাশ থেকে কোনো জবাব আসেনা,অরণ্যের নীরবতার পরেও শ্যামা বারবার প্রশ্ন করতেই থাকে,
“নীলার স্মৃতি হারিয়ে গেছে কেনো বলতে পারেন?”
“অরণ্য আপনি এসবের কিছুই জানেন না তাইনা?”
“অরণ্য প্লিজ একবার বলে দিন আপনি এসবের কিছুই জানেন না,আপনি আমাকে কখনো মিথ্যে বলবেননা আমি জানি”
শ্যামার প্রত্যেকটা প্রশ্নের পিছনে লুকানো কষ্টগুলো অরণ্যের বুক ছারখার করে দিতে থাকে,তার চোখ থেকেও গড়িয়ে পড়ে অশ্রু,তবু সে চুপ করে থাকে।
শ্যামার ধৈর্যের সীমা পার হয়ে যায়,সে এবার তেজি কন্ঠে বলে উঠে,
“আপনার এই চুপ থাকার অভ্যাসটা আমাকে কতটা কষ্ট দেয় জানেন আপনি?!কেনো আমার প্রশ্নের উত্তর আপনি দিবেন না?অরণ্য প্লিজ আমাকে খুলে বলুন সবকিছু,আমি জানি আমার অরণ্য কখনো খারাপ হতে পারেনা। আপনি এসব করেননি দয়া করে বলে দিন।”
“আমি কখনো তোমাকে বলিনি আমি খারাপ হতে পারিনা,নিজের ভাবনাগুলো আমার উপর চাপিয়ে দিওনা।” এই প্রথম অরণ্য কথা বললো।
অরণ্যের এমন জবাব শুনে স্তব্দ হয়ে যায় শ্যামা,সে কাঁপা কাঁপা গলায় অবিশ্বাসের সুরে প্রশ্ন করে,
“তাহলে আপনি বলছেন দিব্যকে আপনিই মে’রেছেন?”
“আমি যা ই করিনা কেনো তার জবাবদিহি আমার তোমাকে করতে হবেনা। সেই অধিকার আমি কখনও দিইনি তোমাকে। তুমি যেহেতু ভুলে যাচ্ছো তাই আমি তোমাকে মনে করিয়ে দিতে চাই শ্যামা, আমি তোমাকে ২৫লক্ষ টাকার বিনিময়ে কিছু অনিবার্য শর্ত রেখে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম,তার তুমি অনেকগুলোই ভঙ্গ করেছো আজকে।
শাস্তিস্বরূপ আজ এক্ষুনি আমার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাবে তুমি,আর কক্ষনো ফিরে আসবেনা এখানে। আজ থেকে আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই।”
(চলবে)