শ্রাবনের মেঘ পর্ব-১২

0
359

গল্পের নাম : #শ্রাবনের_মেঘ
লেখিকা : ফারিয়া
পর্ব : ১২

আজ সকাল থেকে সবাই ব্যস্ত, কারণ আজ রিসিপশন অনুষ্ঠান রয়েছে। রিসিপশনের অনুষ্ঠানটি হওয়ার পর ওরা বাড়ি ফিরে যাবে। সবাই সবদিক সামলাচ্ছে, নিশিকে সাদনানের সাথে কথা বলতে দেখে অজানা কারণে ইফতির রাগ উঠলো। সাদনান চলে যেতেই, নিশির হাত ধরে টানতে টানতে একটি রুমে নিয়ে গিয়ে দেয়াল চেপে ধরল। আকস্মিক ঘটনা নিশি ভয় পেয়ে গেল, ইফতি বলা শুরু করল,
” এত কি কথা বলছিলে? এত মিষ্টি মিশে কথা বলার কি ছিল। কই আমার সাথে তো কথা বল না ”

নিশি রেগে বলল,
” আমি কার সাথে কথা বলবো সেটা আমার ব্যাপার, আপনাকে বলতে হবে কেন? কে আপনি, মেঘার ভাই। কিন্তু আমার কেউ না ”

ইফতি বলল,
” আমি তোমার কেউ না ,কিন্তু তুমি আমার কেউ। তোমার খুব সম্পূর্ণ অধিকার শুধু আমারই ”

নিশি বলল,
” লিমিট ক্র/স করা থেকে বিরত থাকুন, আমি আপনার কেউ না। আমার উপর অহেতুক অধিকার ফলানো থেকে বিরত থাকুন, আমি আপনাদের অতিথি মাত্র। তাই আমার উপর এতটা অধিকার দেখানোর কোন মানেই হয় না। আমি একজন মেয়ে, আমরা মেয়েরা কারো তাকানোর ভঙ্গি দেখলেই বুঝতে পারি। আমি আপনার তাকানো দেখেই বুঝি, আপনার চোখে ভালোলাগা দেখেছি। এটা কখনো সম্ভব নয় ”

এসব শুনে ইফতি নিশিকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
” হ্যাঁ, তুমি হয়তো ঠিকই বলেছ। আমারই ভুল, কাউকে ভালো লাগাটা অস্বাভাবিক নয়। তুমি থাকো তোমার মত ভালো থাকো ”

এই বলে ইফতি ওখান থেকে চলে এলো। খুব সুন্দর করে অনুষ্ঠান হয়ে গেল, পরশুদিন থেকে সবাই জয়েন করবে। কিন্তু শ্রাবণ ছুটিতেই থাকবে, কাল সকালে সব আত্মীয়রা চলে যাবে। এমনকি রাজ এবং নিশি ও।
🍂
সকাল হতে সবাই চলে গেল, শ্রাবনের কাজ আছে নাকি তাই সে একটু বাইরে গেল। এক ঘন্টা পর ফিরে এসে মেঘা কে বলল ব্যাগ গোছাতে, সে জিজ্ঞেস করতেই বলল,
” তোমাকে তোমার রাজ্যে নিয়ে যাবো ”

মেঘা চোখ ছোট করে বললো,
” আমার রাজ্য মানে? আমি কি রানী নাকি? যদিও আমার রাজ ভাইয়া আমাকে মেঘারানীই বলে। কিন্তু আপনি কি বলছেন হু? ”

শ্রাবন বললো,
” বাংলাদেশের মেঘের রাজ্য অর্থাৎ সাজেক ভ্যালিতে নিয়ে যাবো। ভেবোনা মধুচন্দ্রিমায় হয়ে যাচ্ছি, যখন তুমি আমায় ভালবাসবে এবং নিজে থেকে নিজের সব অধিকার আমায় দেবে, তখন আমরা যাব। আপাতত ফরমালিটি মেইনটেইন করতে চলো সাজেক থেকে ঘুরে আসি। সাজেক, নীলগিরি, টাঙ্গুয়ার হাওর সব জায়গায় যাবো। যাবে না? ”

প্রিয় স্থান গুলোর নাম শুনে, মেঘা আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। কারণে জায়গা গুলোতে যাওয়ার অনেক শখ তার, কথা না বলে কাপড় গোছাতে লাগলো। বিকালের বাসে তারা যাবে, প্রথমে খাগড়াছড়িতে যাবে। মেঘার বাসে উঠার অভ্যাস না থাকলেও, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখলো। তাপানুকুল বাসে তারা যাত্রা শুরু করল। সময়টা কিছুটা শীতকাল হওয়ায় অর্থাৎ নভেম্বর হওয়ায় কিছুটা শীতের ভাব করেছে। যাত্রার একপর্যায়ে মেঘার ঘুম ধরতেই শ্রাবন মেঘের মাথাটি নিজের কাঁধে রাখল। রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম থাকায় তারা ভোরের দিকে পৌঁছে গেল, পথের মধ্যে কুমিল্লায় বাস স্টপজ দেয় সেখানে তারা হালকা নাস্তা করেছে। খাগড়াছড়িতে নেমে তাদেরকে প্রথমেই যেতে হবে ” বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্পে “। আর্মিরা তাদের গাড়িতে করে গার্ড দিয়ে নিয়ে যায় পুরো রাস্তা, তাদের প্রয়োজনীয় কিছু প্রশ্ন করে। আর্মিদের গাড়ি সকাল ১০টা এবং বিকাল ৩টায় পাওয়া যায়। ওরা সকালেই পৌছে যাওয়ায়, ১০টার গাড়িতে পুনরায় যাত্রা শুরু করলো।
সাজেকে তারা ” মেঘ মাচাং ” রিসোর্টে থাকবে। রিসোর্টে গিয়ে রুমের চাবি নিয়ে ঘরে যেতেই মেঘা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। রুমটি খুব সুন্দর ছিলো, সাজেকে বেশিরভাগ রিসোর্টই বাশের তৈরি। বিছানাটি এমন অবস্থানে ছিলো যে, সকাল হলেই মিষ্টি রোদ চোখে পড়বে এবং চোখ খুললেই নয়নাভিরাম এক দৃশ্য চোখে পড়বে। লাগোয়া বেলকনিটাও বড় ছিলো, তাতে একপাশে সুইমিংপুল এবং দোলনাও ছিলো। শ্রাবন মেঘার চোখে আনন্দের ফু/ল/কি দেখে হেসে বললো,
” মেঘপরী, তোমার রাজ্যেই তোমায় নিয়ে এসেছি৷ এবার আগে ফ্রেশ হয়ে নাও, তারপর চোখ ভরে আরও দেখো ”

মেঘা এবং শ্রাবন দুজনে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নিলো। বিকেলে ওরা কাছাকাছিই ঘুরতে যাবে। কাল সকালে কংলাক পাহাড়, গোলাপ বাগানে যাবে। সকালে হ্যালিপেডে গিয়ে সূর্যদয় দেখবে।
🍂
রাজ কাল ঢাকায় স্যাটেল হবে, তাই প্রিয়তমার সাথে দেখা করতে এসেছে৷ কিছুদিন ঢাকায় সবকিছু স্যাটেল করার পর নিজের প্রিয়তমাকে নিজের করে নিয়ে যাবে। রুপসা নদীর তীরে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে প্রেয়সীর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করা দেখছে সে। বিকেলের এই সময়টা কিছুটা জনমানবহীন হওয়ায়, রাজ তার প্রেয়সীকে জড়িয়ে ধরলো। ভালোবাসা স্পর্শ পেয়ে সেও যেনো শান্তি পেলো। রাজ বলে উঠলো,
” এতো কান্না কেনো করছো রাত? আমি কি চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছি নাকি? আমি তো ছুটি পেলেই আসবো। তোমার রাজ তোমারই থাকবে৷ এতো কান্না করো না, বিদায়বেলায় তোমার হাসিমুখ না দেখলে যে আমি শান্তি পাবো না ”

মেয়েটি মলিন মুখে হাসলো। আরও কিছুক্ষন কথ বলে ওরা দুজনে বিদায় নিলো। রাজের চোখ জ্ব/লে উঠলো, একদিন না দেখে থাকতে পারতো না সে। আর আজ! বেশী কষ্ট হচ্ছে তার ” রাতের ” কথা ভেবে। মেয়েটি কে/দে
কে/দে নিজের কি অবস্থা বানাবে রাজ ভালো মতোই বুঝতে পারছে৷ কিন্তু, আমরা অনেকসময় ভাগ্যের কাছে নিরুপায়। রাজ একা একা বিড়বিড় করে বললো,
” খুব শীঘ্রই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে যাবো রাত ”
🍂
আহম্মেদ ভিলায় শান্ত রাতের খাবার খাওয়ার সময় হঠাৎ কল এলো। কথা বলে এসে হাসতে হাসতে শেষ শান্ত, কারণ জিজ্ঞেস করতেই সে বলে উঠলো,
” আচ্ছা তোমাদের কি মনে হয় নি যে বিয়েতে খালামনি বা রিশা আসলো না কেনো? ”

সিফাত সাহেব বললেন,
” তা তো ভেবে দেখিনি, এতো ব্যস্ততায় কি করে এসব ভাববো বল ”

শান্ত হেসে বললো,
” শ্রাবন যে এতো দু/ষ্টু জানতাম না। রিশার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে, খালামনি আর রিশার জন্য খাবার পাঠিয়েছিলো। কিন্তু, সেটাতে ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিলো। সেটা খেয়ে খালামনি আর রিশা বিয়েরদিন সকাল থেকে রাত অবধি শুধু ঘুমিয়েছে। তাই আসতে পারে নি, আর পরেরদিন খালু মশাই চলে আসায় কেউ বাসা থেকে বের হতে পারে নি। আর এদিকে সুষ্ঠুমতো বিয়েটা হয়ে গেছে, নয়তো কি যে হতো!”

শান্তর কথা শুনে সবাই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে, আজ আর শেফালী আহম্মেদের কষ্ট হচ্ছে না। কারন, মানুষের ধৈর্যের একটা সীমা থাকে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ আর কিছুই ভাবে না। সবাই মজা করলেও শ্রাবন মেঘাকে মিস করছে অনেক। তাই সবাই একসাথে বসে ভিডিও কল দিলো ওদের।
🍂
পরেরদিন ভোরেই শ্রাবন মেঘা হ্যালিপ্যাডে গিয়ে সূর্যদয় দেখলো, সূর্যের আলো মেঘার মুখে পড়তেই যেনো মেঘার মায়াবী ভাব দ্বিগুন বাড়িয়ে দিলো। শ্রাবন একনজরে তার প্রেয়সীকে দেখতে লাগল। সেখান থেকে রুমে যাবে তারা, নাস্তা করে একটু পরে বেড়োবে। বেড়োনোর আগে হুট করে মেঘার পেটে ব্যাথা শুরু হলো। ব্যাথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগলো। তারপর,

চলবে