সন্ধ্যায় সন্ধি পর্ব-১১

0
396

#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা

পর্বঃ১১

চাঁদ দের ড্রয়িং রুমে বসে আছে সবাই।তেজ,তেজের বাবা,চাচা,ছোট মা,মা আর চাঁদের বাবা-মা, আহান।আর চাঁদ,প্রহেলিকা,তুহা,হৃদি ওরা সবাই একটু দূরে দাড়িয়ে আছে। চাঁদ আর বাবা ভাই বাদে সবার কলিজাই দুরুদুরু কাঁপছে। তেজ কয়েকবার চাঁদের দিকে তাকিয়েছিলো কিন্তু চাঁদের মুখ বেশ কঠিন করে রেখেছে।চাঁদ মুখ দেখেই সিদ্ধান্ত বেশ আন্দাজ করা যায়। আর সিদ্ধান্ত যে বেশ সুবিধাজনক না সেটাও কিছুটা ধারনা করা যায়।

নিরবতা ভেঙ্গে চাঁদের বাবা মহসিন সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,

–” আমরা জানি ছোট বেলা থেকেই তেজ চাঁদকে পছন্দ করে।আমাদের চোখে সেটা পড়েছে।ভেবেই রেখেছিলাম বড় হলে ছেলে মেয়ে দুজনের হাত এক করে দেবো।আর সেটা বাস্তবায়নেরও চেষ্টা করা হয়েছিলো কিন্তু কাল,,

চাঁদের বাবার মুখের কথা কেড়ে নিয়েই চাঁদের খালামনি জাহানারা বেগম বললেন,

–“কিন্তু কাল এই ঘটনার জন্য সিদ্ধান্ত বদলিয়েছেন তাই না ভাইজান?আমরা আন্তরিক ভাবে সত্যিই দুঃখিত তবুও এমনটা করবেন না।জানেনই তো আমার ছেলেটা চাঁদ বলতে পাগল।”

–“হ্যাঁ আমি জানি তেজ চাঁদ বলতে পাগল।আর সত্যিই কালকের ঘটনা আমাকে খুব নাড়িয়ে দিয়ে ছিলো।কিন্তু আজ সকালে চাঁদ মা বলার পর,

খালামনি আর না শুনে উঠে চাঁদের কাছে গেলো চাঁদের হাত ধরে বলল,

–“কোনো এমন করলি আম্মু আমরা তো তোকে খুব ভালোবাসতাম।তোর খালু তো তোকে নিজের মেয়েে চোখে দেখে।তোর ছোট মা,ছোট বাবা, হৃদি তুহা সবাই কত ভালোবাসে আর তেজ ওর কথা তো জানিসই তাহলে কেনো কষ্ট দিচ্ছিস ছেলেটাকে মা।”

তেজ এতক্ষণ মাথা নিচু করে চুপ করে ছিলো এবার বেশ উঁচু আর গম্ভীর স্বরে তার মাকে ডাক দিলো-

“আম্মু যা হচ্ছে হতে দেও কারো কাছে কৈফিয়ত চাইবে না প্লিজ আর কাউকে ফোর্সও করবে না”।

তেজ এবার ঘুরে চাঁদের বাবার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে,

–” আপনি যা সিদ্ধান্ত নিবেন তাই হবে আঙ্কেল। আপনার আর আহানের যদি মনে হয় চাঁদের জন্য আমি অযোগ্য তাহলে সেটাই “।

চাঁদের বাবা মহসিন সাহেব এবার গম্ভীর আর দৃঢ় কন্ঠে বললেন,

–” তেজ তোমাকে আমি বুদ্ধিমান ভেবেছিলাম কিন্তু তুমি যে এমন ভাবতেও পারি নি”।

উপস্থিত সবাই এবার বিস্মিত হলো।তেজ আবার কি করলো।।তেজও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-“আঙ্কেল আমি কি করেছি?”

মহসিন সাহেব এবার হো হো করে হেসে দিয়ে বললেন,

–“তুমি কখনো শুনিছো কাউকে শ্বশুরকে আঙ্কেল ডাকতে? ”

এবার সবাই বিষ্ময়ের চরম পর্যায়ে। কি হচ্ছে মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সবার।তেজ কৌতূহল মেটাতে বলল-“মানে বুঝলাম না”।

এবার আহান কথা কেড়ে নিয়ে বলল,

–“না বোঝার কী আছে ভাইয়া।আর চারদিন পর আব্বুর মেয়ে তোমার স্ত্রী হবে আর স্ত্রীর আব্বুাকে তো আব্বুই ডাকতে হয় তাই না?”

এবার উপস্থিত সবার একটু একটু বোধগম্য হলো।হাসি ফুটিলো সবার মুখে।তেজের খুশিতে চাঁদের বাবাকে বললেন,

–“তাহলে বিয়েটা হচ্ছে মহসিন?”
–“হ্যাঁ বিয়েটা হচ্ছে কারণ বিয়েটা না হওয়ার কোনো কারণ নেই।কাল আমরা হয়তো রেগে গিয়েছিলাম এ জন্য আমি আর আহান দুঃখিত কিন্তু কী করবো বলেন মেয়েটা তো কলিজা কিন্তু এ জন্য বিয়েটা ভেঙ্গে দিবো এতটাও খারাপ আমি নই,আর আমি জানি তেজ চাঁদকে খুব ভালোবাসে।যেখানে আমার মেয়ের জীবন সঙ্গী ঠিক সেখানে আর কাউকে গণনা করা উচিত না কি বলো তেজ।”

–“জ্বি আব্বু”।

তেজের এমন ডাকে এবার সবাই ফিক করে হেসে দিলো।চাঁদ তো হেসে কুটি কুটি। এবার চাঁদের খালামণি চাঁদের দিকে এগিয়ে গেল চাঁদের গাল দুটো টেনে বলল,,

–“এই মেয়ে তুই তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিছিলি পাকা বুড়ি,এখন হেসে এত কুটিকুটি হতে হবে না। বড় যখন হাসছো তোমাকেও তো এগুলো ডাকতে হবে।আর কতদিন খালা খালু বলে চালিয়ে দিবে। আজ থেকে শুরু করো তেজের মতন।”

এবার ড্রয়িং রুম জুড়ে আবারো হাসির কলরব পরলো।চাঁদের খালামনি সোফায় গিয়ে বসলেন।

আবারো বিয়ের ব্যাপারে কথা শুরু হল। চাঁদ, প্রহেলিকার, তুহা, হৃদি ওদের রুমে গিয়ে বসলো। সবার মুখে হাসি ঝলমল করছে।

তেজ সোফা থেকে উঠে চাঁদের রুমের দিকে গেল। তেজকে দেখেই চাঁদ বাদে সবাই বেরিয়ে গেল। চাঁদও উঠে আসতে নিলেই তেজ দরাজার ছিটকানি আটকিয়ে দেয়।চাঁদ আর না নড়েচড়ে নিজের জায়গায় বসে পরে।কিছু বলেও এখন লাভ নেই।তাই চুপ থাকাই শ্রেয়।তেজ চাঁদের দিকে এগিয়ে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে চাঁদের মুঠ করে রাখা হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।–“এবারের মতন আমাকে ক্ষমা করে দে চাঁদ।আর কখনোই আমি এমন কিছু করবো না। ”

–“দেখেন তেজ ভাইয়া এর পরের বার যদি এমন ঘটনা রিপিট হয়,আই মিন আপনার এই রাগের কারণে যদি উল্টা পাল্টা কিছু হয় তাহলে সত্যি বলছি পস্তাবেন”।চাঁদ গম্ভীর স্বরেই বললো।

–“আর কখনোই এমন কিছু হবে না চাঁদ বিশ্বাস রাখতে পারিস। ”

–“প্রমিজ”?

–“না চাঁদ এটা পারবো না।কারণ বুজিসই রাগ আমার নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।তবে চেষ্টা করবো।রাগের সময় প্রমিজ ও মনে থাকবে না।তাই আমি চেষ্টা করবো কিন্তু প্রমিজ দিবো না সরি”।

–“হ্যাঁ হ্যাঁ জানি তো আমার থেকে আপনার কাছে আপনার রাগই বড় হুম”.চাঁদ একটা ভেংচি দিলো।

তেজ হা হা করে হেসে ফেলল।হাসি থামিয়ে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে বসল।চাঁদের বাম গালে শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে বসল।চাঁদ তো আহম্মক হয়ে তাকিয়ে আছে।তেজ জীবনেও লাগামহীন কাজ করে না।চাঁদ বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে বলেই ফেলল,

–“এই এই আপনি কী করলেন এটা?এতটা লুচু হলেন কবে থেকে?আগে তো এমন ছিলেন না।”

তেজ চোখ ছোট ছোট করে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,

–“ওহ আগে করি নি এমন?তাহলে তুই কি চাইতি আমি এমন করি আগে? বলিস নি কেন সেটা।আয় আয় আরেকটু কাছে আয়।এবার তোর ডান গালে,কপালে,নাকটাতে,ঠোঁটে চুমু খাই।

চাঁদ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে ততক্ষনে।তেজ লজ্জা পেতে দেখে আবার বলল,

–“তুই চাইলো আরে জায়গাতেও খাবো। ভেবেছিলাম সব বিয়ের পর হবে।কিন্তু তুই যেহেতু চাচ্ছিস তাহলে চল এখনই,,

তেজকে আর কিছু বলতে না দিয়ে চাঁদ তেজের মুখ চেপে ধরলো তার ডান হাত দিয়ে।তেজ এবার আরেক কাজ করে বসলো।ঠাস করে হাতটায় পর পর তিন চারটে চুমু দিয়ে বসল।চাঁদ হাত দিয়েই রেখেছে।সে বুঝে উঠতে পারে নি।ততক্ষণে তেজ দরজার কাছ অব্দি গিয়ে দুষ্টমির সুরে বলল,

–“কিরে হাত দিযে রেখেছিস যে আরো চুমু খাবি?”

তেজের কথায় চাঁদ পারছে না মাটিতে মিশে যেতে আর তেজ হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

তেজ বের হয়ে যেতেই চাঁদের ঘরে হুড়মুড় করে সব বদের হাড্ডি ঢুকেছে। হৃদি তো ঢুকেই প্রশ্ন,

–“কিরে চাঁদুজান এমন লাল নীল বাত্তির মতন জ্বলিস কেনো? খুব তো বলতি আমার ভাই খারাপ তো এখন ভাই এত ভালো কী করে হলো যে তুমি সোনা লাল হয়ে যাচ্ছো?হুমম হুমম বলো।”

–“হ্যাঁ রে কী হয়েছে বল তো, তেজ ভাইয়া ও হাসিমুখে বের হলো তুইও লাল হয়ে আছিস কি হয়েছে?” প্রহেলিকাও দুষ্টমির সুরে বলল।

–“ছি ছি আপু তুই না আমার বোন তাও বড় বোন।লাজ লজ্জা সব খেয়েছো দেখি এক একজন।” তেজ মিন মিন সুরে বললো।

সবাই জেঁকে ধরলো আর ঠাট্টার স্বরে বললো-“বাহ্ রে তোমরা করতে পারো আমরা বললেই দোষ তাই না”

চাঁদের এবার লজ্জার থার্মোমিটার ফেটে যাবে বোধহয়।সে মুখ ঢেকে বসে পরলো খাটে আর সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিলো।চাঁদ মনে মনে বিরাট গালি দিলো তেজকে।

________________________

চারদিকে বিকেল নেমেছে আকাশের বুকে। সবাই শপিং মলে দাড়িয়ে আছে তেজের অপেক্ষায়। তুহার শ্বশুর বাড়ির লোকজন ও আছে।একটু পর হাজির হলো তেজ।

চলবে,,