#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা
পর্বঃ১৩
সবাই মিলে প্ল্যান করেছে গায়ের গলুদের আগের দিন মানে আজ একটু নাচ গান করবে।সে অনুযায়ী চাঁদদের ড্রয়িং রুমে আয়োজন করা হয়েছে।এখানে সব ভাই বোন থাকবে।
চাঁদের হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে তেজ।চাঁদের হাতে সবার আগে মেহেদী দেওয়ার অধিকার নাকি তাঁর। সবাই এর জন্য বেশ হাসি তামাশা করছে।চাঁদ লজ্জায় মাথা নুইয়ে রেখেছে।আর তেজ সযত্নে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে।তেজের বন্ধুরা অনেক ইয়ার্কি দিচ্ছে তেজও কম না লজ্জা পাবে দূরের কথা নিজেও তার ডাবল ইয়ার্কি দিচ্ছে আর সবার হাসি তামাশার মাঝে চাঁদ খালি মোচড়ামুচড়ি করছে।যার কারণে মেহেদী দিতে অসুবিধা হচ্ছে,তাই এক ধমক দিয়ে বলল,
–“কী হয়েছে তোর এমন নড়ছিস কেনো?দেখছিস না মেহেদী নষ্ট হচ্ছে?একটা থাপ্পড় লাগাবো।
চাঁদ মুখ ভেংচি দিয়ে বলল,,
–“আপনাদের লাজ শরম নাই তো আমি কি করবো আমার তো লাজ শরম আছে।আর তাই তো এমন মোচড়ামুচড়ি করছি।একটু চুপ করুন। ভাতের সাথে কি শরম লজ্জাও গিলে এসেছেন?
চাঁদের এমন কথায় হাসির ঢেউ উঠে যায় সবার মাঝে।তেজও হাসতে হাসতে বলে,
–“হ্যাঁ রে খেয়ে এসেছি লাজ শরম।এবার চুপ কর মেহেদী দেই।
চাঁদ মুখ ভেংচি দিয়ে চুপ করে গেলো।সবাই হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠল।তবে চাঁদ ততটাও মজা করছে না তার আজ মনটা বড্ড কু গাইছে। চাঁদকে মনমরা থাকতে দেখে হৃদি পাশে এসে ধাক্কা দিয়ে বলল,
–“কিরে কি এত ভাবসিস?বিয়ে তো আজ নয় এত চিন্তা করছিস কিসের জন্য? ”
–“যা সর মজা ভালো লাগে না সবসময়।”
–“আরে মহারানী দেখি সিরিয়াস মুডে আছে। তা কি নিয়ে এত সিরিয়াস শুনি?”
–“জানিনা রে আজ বড্ড মনটা কু ডাকছে খারাপ কিছু হবে না তো?” চাঁদ প্রশ্নবিদ্ধ নয়নে চাইলো হৃদির দিকে।
হৃদিও বুজেছে চাঁদ বেশিই চিন্তিত। তাই সে হালকা ভাবে এক হাতে চাঁদকে জড়িয়ে বলল,
–“আরে চিল ভাবিজান চিন্তা নেহি।কিছু হবে না “।
চাঁদ ও ভরসা পেয়ে হৃদির হাতের উপর নিজের হাতটা দিয়ে হ্যাঁ বোধক ইশারা করে।
এর মাঝেই তেজের বাবা হন্তদন্ত হয়ে আসে।সবাই তেজের বাবাকে দেখে বেশ অবাক হলো কারণ এ পার্টিতে তার আসার কথা না কিন্তু জিজ্ঞেস করার পর তেজের বাবা যা বলল তা শুনে সবার মাথা ঘুরে গিয়েছে কারণ রাহা নাকি আত্মহত্যা করেছে।
সবার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছে। আজ রাহা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে না জানালে কেউ আর তেমন জোড় করে নি।কারল সবাই জানে রাহার তেজের প্রতি কিছু ফিলিংস সত্যিই আছে।এখানে থাকলে কষ্ট পাবে তার চেয়ে বরং ঘরে থাকুক কিন্তু রাহা যে এমন করবে ভাবতেও পারে নি কেউ।
______________
একটু আগে রাহার বডিটা পোস্টমর্টেম করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আর চাঁদকে নেওয়া হয়েছে জেলে কারণ রাহার হাতে একটা চিঠি পাওয়া হয়েছে সেখানে লেখা ছিলো রাহার মৃত্যুর জন্য চাঁদ দ্বায়ী। আর চাঁদই নাকি রাহাকে মৃত্যুর পরোচনা দিয়েছে।আর সেই সুবাধেই পুলিশ চাঁদকে জেলো নিয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। এই ঘটনা জানার পরই চাঁদ চুপ হয়ে যায়। যখন পুলিশ তাদের সাথে যেতে বলছিলো তখনও কোনো প্রতিবাদ করে নি।তেজ অবশ্য চিৎকার চেঁচামেচি করেছে অতঃপর চাঁদের পিছু পিছু আহান আর আদিবকে নিয়ে গিয়েছে।
পুলিশ স্টেশনে চাঁদকে খুব জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। কিন্তু চাঁদ নিশ্চুপ হয়ে আছে।জেনো এ দুনিয়ায় সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।তার কানে শুধু চিঠির দু’লাইন বাজছে।আমার মৃত্যুর জন্য তুই দায়ী চাঁদ,তেজ ভাইয়া আমার হলে হয়তো আমি বেঁচে যেতাম কিন্তু আজ তোর কারণে আমার মরতে হলো।চাঁদ নিস্তব্ধ হয়ে গেছে সে ঘটনার পর।সেদিন রাতই জেল থেকে চাঁদকে ছাড়িয়ে আনা হয়।চাঁদ কাউকে কিছু না বলে তার রুম আটকে দেয়।প্রহেলিকাও সেদিন তার সাথে ঘুমাতে পারেনি।সবাই বুঝতে পেরেছিলো চাঁদ ভেঙ্গে পড়েছে।তাই আরো ভয় পেয়ে গেছিলো,,চাঁদ খারাপ কিছু করে না বসে।তেজ সারা রাত সেদিন চাঁদের ড্রয়িং রুমে বসে কাটায়।আর একটু পর পর চাঁদের দরজা টোকা দেয়।একসময় চাঁদ নির্লিপ্ত গলায় উত্তর দেয়,
–“আমি মরবো না আমাকে একা থাকতে দেও।”
এই কথাটাই যথেষ্ট ছিলো তেজকে আরো কাবু করতে।তেজের অবস্থা এখন পাগলপ্রায়। কীভাবে সামাল দেবে চাঁদকে?
সারাটা রাত তেজ এক ধ্যানে বসে ছিলো আর কিছু হিসেব মেলাতে ব্যস্ত। তেজের জানা মতে রাহা তাকে পছন্দ করে কিন্তু এতটাও না যে আত্মহত্যা করবে।কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয় সে তো কখনোই রাহার অনুভুতি টাকে তেমন মূল্য দেয় নি তাই ওর ভালোবাসা টা বুঝতে পারে নি।
______________
সকাল দশটা।খাবার টেবিলে সকালের খাবার যেমনের টা তেমন ভাবেই পরে আছে।ঘরে অসুস্থ হয়ে পরে আছে সবার আদরের মেয়ে চাঁদ।
অনেক ডাকাডাকির পরও যখন দরজা খুলছিলো না তখন দরজা ভেঙ্গে দেখে চাঁদের অসার দেহ পরে আছে মাটিতে।প্রথমে সবাই অন্য কিছু ভাবলেও পরে দেখে না সে জ্ঞান হারিয়েছে। তেজের তো এবার দম যায় যায়।
অতিরিক্ত টেনশনের থেকে প্রেশার ফল করেছে। ডাক্তার দেখে গেছে একটু আগে।আর বলেও গেছে রোগী বেশ ট্রমার মধ্যে আছে তাই যেভাবেই হোক তাকে ট্রমা থেকে বের করতে হবে।
সকালের খাবার আর কেউ খায় নি।সবাই বসে আছে চাঁদের জ্ঞান ফেরার আশায়। আর এতকিছুর মাঝে একজনের মুখেই কেবল রহস্যময় হাসি।
একটু আগেই চাঁদের জ্ঞান ফিরেছে।সে আগের ন্যায় নিশ্চুপ।সবাই অনেক কথা বললেও চাঁদ একটা টু শব্দও করে নি।তেজ সবাইকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলেছে কারল সে একা কথা বলবে এর মাঝেই কোথা থেকে তেজের দাদী ছুটে এসে সবাই কিছু বুঝে উঠার আগে ঠাস করে চড় লাগাল চাঁদের গালে।সবাই নির্বাক কী হলো এটা।এর মাঝেই তেজের দাদী বলে উঠলেন,
–“মুখপুরী,অলক্ষী,অপয়া মেয়ে।ঘরে না ঢুকতেই আমার নাতনিটাকে খেলি।তুই মরছিস না কেন এখনো?”
দাদী আরো কিছু বলতে চাইলেও হৃদি আর তুহা জোড় করে নিয়ে যান।এই কান্ডে সবাই বেশ বিরক্ত আর আহত হোন শুধু হেলদোল নেই একজনের সেটা হলো চাঁদ।আহানও এবার বেশ রেগে যায়।রেগে গিয়েই তেজকে বলে,
–“দেখেন আপনার পরিবারে না যেতেই আমার বোনটার কী হয়ে গেলো।হাসি ছাড়া যে মেয়েটা কথা বলতো না আজ সে একটা টু শব্দও উচ্চারণ করছে না।আর তাও আপনার দাদী ওরেই দোষারোপ করছে।”
–“দাদীর হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আসলে দাদী রাহাকে বেশি ভালোবাসতো তাই আর চাঁদকেও অপছন্দ করে সব মিলিয়ে চড় টা দিয়ে ফেলেছে।আমরা আর কি করবো।দাদী বড় মানুষ।তবুও এরকম কাজ আর রিপিট হবে না আমি কথা দিলাম তোমাকে আহান।” তেজ দৃঢ় কন্ঠে বলল।
সবাই চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।সবারই মনে হচ্ছে এবার তেজকে চাঁদের সাথে আলাদা কথা বলতে দেওয়া উচিত।
চলবে,,