#স্পর্শ
#পর্ব_১৫
#writer_nahida_islam
-এই শুনেন, ডিভোর্স পেপারে নিয়ে আসেন, সাইন করে দিবো।আমি আপনাকে আমার চোখের সামনে দেখতে চাইনা।
-তোর কথা ই এখন ডিভোর্স হবে না। তারমানে তোমাকে এখন আমাকে সহ্য করতে ই হবে।
-আপনি নিজেকে কী মনে করেন বলুন তো?
-অতসীর বর।
এমন মুহুর্তে লোকটা আমার সাথে রসিকতা করছে। অসভ্য ও বটে আম্মু তো আশেপাশে ই আছে যদি শুনতে পায় তখন।
-এই রানী কী এতো ভাবছো শুনি।
-আপনি আমার চোখের সামনে থেকে ই চলে গেলে খুশি হবো।
-কিন্তু আমার খুশির জন্য যে তোমার সামনে আমার থাকতে হবে।
-সে আপনি যে স্বার্থপর, নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অনেক কিছু করতে পারেন তা আমি জানি।
ইফাজ কোনো কথা বললো না মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো,
-আমি বাসায় যাচ্ছি খুব শীগ্রই আসবো। খাবার গুলো খেয়ে নিও।
আমি কোনো কিছু বলার আগে ই ইফাজ চলে গেলো। এ খাবারগুলো আমি কখনো খাবো না। নিজেকে কী মনে করে উনি। আমি এক নিমিষেই সব ভুলে যাবো। একটু আদর করে ডাকলে ই সারা দিবো। এমনটা কখনো হবে না মিস্টার ইফাজ। আমি বরফ নই যে আপনার একটুখানি মিষ্টি কথায় আমি গলে পানি হয়ে যাবো।
-আপু তুই খাচ্ছিস না কেনো?
-তোর ইচ্ছে হয়েছে তুই খেয়েনে।
-ভাইয়া এতো কষ্ট করে আনলো আর তুই খাবি না।
-আমি কাউকে বলি নাই আমার জন্য কষ্ট করেন।
-আপু ভাইয়া তো এখন আগের মতো নাই সব ভুলে যা।
-বেশি পাকামো করতে আসিস না।
ইফাজ বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে ডুকলো।ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো।
-ইফাজ
ডাকটা শুনে ই ইফাজ পিছনে তাকালো। এমনি তে রেগে ছিলি সুমিকে দেখে আরো রেগে গেলো।
-এই মেয়ে সমস্যা কী অনুমতি ছাড়া কারো রুমে ডুকতে হয়না এটা তোমার মা বাবা শিক্ষা দেয়নি।
-ইফাজ তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো?
-বের হও আমার রুম থেকে।
-ইফাজ শুনো তানিয়া আন্টি বলেছে তোমাকে নিচে যেতে।
-এই মেয়ে তোকে বলেছি না বের হতে। এখন আমার রুম থেকে বের হয়ে যা।
ইফাজ এতো জোরে জোরে চিৎকার দিয়ে বলছিলো যে সুমি ভয় পেয়ে যায়। ভয় পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। সুমি সোজা তানিয়া বেগমের কাছে কী কান্না করে দেয়।
সুমিকে কান্না করতে দেখে তানিয়া বেগম এসে জিজ্ঞেস করলো,
-কী হয়েছে মা।
-আপনার জন্য আজকে ইফাজ আমার সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করতেছে।
-আমি কী করছি।
-আপনার পেটে তো কোনো কথা থাকে না। কী দরকার ছিলো নাচতে নাচতে ঐ মেয়েটাকে আমাদের সব প্লান বলে দেওয়ার।
– ঐ মেয়েকে বলেছি তাতে তো প্রবলেম হয়নি। ইফাজ যে সব শুনে ফেলবে তা তো জানতাম না।
-আপনার একটু অসাবধানতার জন্য আজ আমার এই পরিস্থিতিতে পড়তে হলো।
-সব জামেলার মূল ঐ মেয়েটা।
-এই যে শুনোন অতসী আমার বউ হয়। তাই ঐ মেয়েটা ঐ মেয়েটা না করে বউমা বলুন।
-ইফাজ বাবা তুই আর ভুল বুঝিস না।
-আপনার মতো অভিনেত্রী আর দুটো হয় না। নির্লজ্জের মতো আবার আমার সামনে কেনো এসেছেন বলুন তো।
-ইফাজ এটা তো তুই ভুলে যেতে পারবি না যে আমি তোকে মানুষ করেছি। তোর মা বাবা মরে যাওয়ার পর আমি ই তোর মা আমি ই তোর বাবা ছিলাম।
-এই জন্য ই এখনো আপনাকে কিছু বলিনি অন্য কেউ হলে এতোক্ষণে কবরে থাকতো।
-ইফাজ তুই বাবা আমার সাথে এমন করে কথা বলিস না।
-এখন থেকো এই বাড়ি সহ সকল স্থাবর অস্থাবর সকল সম্পত্তির মালিক আমি। তাই আপনার চৌদ্দ গুষ্টি যে যে আছে তাদেরকে এ বাসা থেকে চলে যেতে বলেন। আপনাকে ও চলে যেতে হবে। কিন্তু আপনার জন্য আমি আলাদা ব্যবস্থা করে রেখেছি। আপনাকে দামি ফ্ল্যাট, গাড়ি, টাকা পয়সা সব ই দিবো কিন্তু আমার সাথে রাখবো না। যত ই হক আপনি তো আমাকে একটু হলে ও মায়ের আদর দিয়েছেন।
-এসব দিয়ে কী মায়ের ঋণ সুদ করা যায়।
-আপনি তো আমার মা না। ঋণ সুদ করার কী ই বা আছে। আমাকে দিয়ে আপনি স্বার্থে উদ্ধারের চেষ্টা নিতান্ত ই ব্যস্ত ছিলেন।
-ইফাজ অন্তত তুই আমাকে এ বাসায় থাকতে দে।
-আপনাকে বাসায় থাকতে দিলে আমার সংসার দিকবে না।
কথাগুলো বলে ইফাজ বাসা থেকে বের হলো। বাসা থেকে বের হয়ে ই একটা হসপিটালে গেলো। হসপিটাল যাওয়ার উদ্দেশ্য হলো ইফাজ একটা বন্ধু আছে ডক্টর শুভ। অতসীর ব্যাপারে কথা বলতে ই মূলত শুভর কাছে আসা। ইফাজকে দেখে শুভ চেয়ার থেকে উঠে এসে জড়িয়ে ধরে।
– কী ব্যাপার তুই এ সময়।
-এসেছি একটা প্রয়োজনে।
-তাই নাকি। বিয়ে টিয়ে করলি একবারের জন্য বললি ও না। এটা তো তোর কাছে আশা করিনি। ট্রিট দিচ্ছিস কবে এটা বল।
-চাচা হয়েনে দুই ট্রিট একবারে দিয়ে দিবো।
-আরে বাহ্ তুই তো অনকে ফার্স্ট। আমি বিয়ে ই করলাম না আর তুই বাবা হয়ে যাচ্ছিস।
ইফাজ শুভ দুজন ই হেসে উঠলো। শুভ ইফাজকে বসতে বলে নিজে ও বসলো।
-চা না কফি খাবি বল।
-নাহ্ কিছু ই খাবো না। একটু তাড়া আছে।
-আচ্ছা ওয়েট চা ওর্ডার দিচ্ছি খেতে খেতে কথা বলবো।
-অতসী মানল তোর ভাবিকে কী এই মুহুর্ত ডক্টর দেখাতে হবে।
-নিয়ে আসিস একবার চেকাপ করিয়ে যাক।
ইফাজ আর শুভ অনেকক্ষণ কথা বললো। প্রেগ্ন্যাসির পর খাওয়া দাওয়াত ও স্বাস্থ্য ব্যাপারে ইফাজকে সাবধান থাকতে বললো।
ইফাজ শুভর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সোজা শপিং মলে চলে যায়। বিয়ের পর অতসীকে কিছু ই কিনে দেওয়া হয়নি। প্রথম একটা শাড়ির কিনে অতসীর জন্য তারপর কয়েকটা থ্রিপিস কিনে। ইফাজ বাচ্চার জন্য ও কিনেচে, বাচ্চার জামা, ডায়পার থেকে শুরু করে সকল কিছু।
অতসী উঠনে বসে বসে বাদাম খাচ্ছে। বাদাম খেতে খেতে মেইন গেইটের দিকে তাকাতে ই দেখে একটা লোক কয়েকটা ব্যাগ নিয়ে রুমের ভেতর যাচ্ছে। লোকটা এতো দ্রুত ব্যাগগুলল নিয়ে আসছে আার চলে যাচ্ছে, আবার ব্যাগগুলো নিয়ে এসে রেখে চলে গেলো। অতসী যে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার কোনো সুযোগ ই দেয়নি।
ইফাজ হাতে কয়েকটা শপিং ব্যাগ নিয়ে বাড়ির ভেতরে ডুকলো। অতসীর চোখে চোখ পড়তে ই ফ্লাইং কিস দিলো। অতসী এটা দেখে রেগে যায়। জোরে জোরে বলতে থাকে। এমন লুচু মার্কা লোক আমার বাপের জন্মে দেখিনি।
-তোমার জন্মে তো তুমি দেখে নিলে।
অতসী কোনো উওর না দিয়ে মুখ বাকিয়ে বসে রইলো।
-রুমে চলো।
-যাবো না।
-অতসী প্লিজ রুমে চলো না।
অতসী চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতে ই ইফাজ রুমে চলে গেলো। ইফাজ রুমে যাওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে অতসীর মা অতসীকে চিৎকার করে ডাকা শুরু করে। অতসী বেশ বিরক্তি নিয়ে রুমে ডুকলো,অতসী মুটে ও এসব দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। সারা রুমের মেঝেতে বাচ্চাদের সকল প্রয়োজনীয় জিনিস রাখা। অতসী ইফাজের দিকে তাকাতে ই ইফাজ অন্য দিকে ফিরে যায়।
-মা এসবের মানে কী। এসব কী এনেছে।
-তুই ই জিজ্ঞেস কর।
-আর এসব কী জামা কাপড় এনেছে। উনি কর জানে নাকি ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে।
-তাই তো ছেলেদের জামা ও এনেছি মেয়েদের জামা ও এনেছি।
-আল্লাহ আপনাকে কী দিয়া বানিয়েছেন বলেন তো। আপনার শরীরে মনে হয় গন্ডারের চামড়া তাই কথা গায়ে লাগে না। আপনাকে নিষেধ করি না আমার সামনে আসার জন্য। আর এসব আদিখ্যেতা আমার একদম পছন্দ নয়। হয় আপনি আমার সামনে আসবে না নয় আমি এ বাড়ি ছেড়ে কোথাও চলে যাবো।
চলবে,