স্পর্শ পর্ব-১৬

0
1105

#স্পর্শ
#পর্ব_১৬
#writer_nahida_islam

-আল্লাহ আপনাকে কী দিয়া বানিয়েছেন বলেন তো। আপনার শরীরে মনে হয় গন্ডারের চামড়া তাই কথা গায়ে লাগে না। আপনাকে নিষেধ করি না আমার সামনে আসার জন্য। আর এসব আদিখ্যেতা আমার একদম পছন্দ নয়। হয় আপনি আমার সামনে আসবে না নয় আমি এ বাড়ি ছেড়ে কোথাও চলে যাবো।

ইফাজ অতসীর কথার কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। নীলু শিমু দুজন দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসছে। অতসী রেগে নিজের রুমে চলে গেলো।

-ইফাজ ভাইয়াকে আপু এতো কিছু বলে গেলো তাও একটু রাগ করেনি?

-আমি তো দোষ করেছি তাই যা ই বলুক, মাথা পেতে নিতে হবে।

-আচ্ছা ভাইয়া আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন, টেবিলে খাবার বেড়ে দিচ্ছি।

ইফাজ ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসে ই অতসীকে ডাকলো। কিন্তু অতসী কোনো সারাশব্দ নেই।

-শিমু যাও তো অতসীকে ডেকে নিয়ে এসো।

ইফাজ বলতে ই শিমু অতসীর রুমের দিকে যায়। বাহির থেকে কয়েকবার ডাকে। কিন্তু এবার ও অতসী কোনো সারা দিলো না। বেশ কিছুক্ষন ডাকার পর অতসীর মা এসে বললো,

– তুই যা আমি দেখছি।

-অতসী তুই দরজা খুলবি নাকি আমি ভেঙ্গে ফেলবো।

দরজা খুলে ই অতসী উওর দিলো,

-কোথাও কি আমাকে শান্তি দিবা না।

-ইফাজ ডাকলো শিমু ডাকলো তুই তো সারা দিলি না কেনো?

-ইচ্ছে করেনি তাই।

-দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস।

-কোনো বেয়াদবি করিনি মা শুধু যেটা প্রয়োজন সেটা ই বললাম।

– চল আমার সাথে।

-কোথায়?

অতসীর মা অতসীর হাতে ধরে খাবার টেবিলে নিয়ে যায়। অতসীর মা প্লেটে খাবার নিয়ে অতসীকে খাইয়ে দিতে লাগে। অতসী আর কথা বললো না। খেয়ে নিলো। ইফাজ আর চোখে অতসীকে দেখছে আর ভাবছে, কখনো কী মেনে নিবে আমাকে, ভুলিয়ে দিতে পারবো তো সব কষ্ট? এসব ভাবছে আর খাচ্ছিলো। অতসী খাবর হাফ রেখে ই পানি খেয়ে আবার নিজের রুমে চলে গেলো।

অতসী রুমে গিয়ে একটা বই হাতে নিয়ে বসে পড়লো। বরাবরই বই পড়তে ভালো লাগে এতো দিন এতো জামেলার কারনে পড়তে পারেনি।
ইফাজ খাবার খেয়ে ই অতসীর রুমে ডুকলো, অতসী বই পড়ছে দেখে চুপটি করে বিছানার সাইডে বসে পড়লো। কয়েকবার আস্তে করে ডাক ও দিলো। কিন্তু অতসী বই পড়ায় এতো টাই মগ্ন ছিলো যে ইফাজের কথা কান অব্ধি পৌছয়নি। এবার ইফাজ অতসীর কানের কাছে গিয়ে বললো,

-এই যে রানী ডাকছি আপনাকে শুনেন না কেনো?

-কতো বার বলবো আপনার ছায়া ও আমার সহ্য হয় না।আপনাকে দেখলে ই আমার থাপ্পড়, রুম থেকে বের করে দেওয়া আর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া কথা মনে পড়ে যায়।

-অতসী আমাকে কী একবার ক্ষমা করা যায় না।

-নাহ্, কখনো ই ক্ষমা করা যায় না। ধরে নিলাম আপনি তানিয়া বেগমের কথায় আমার সাথে এমন ব্যবহার করেছেন। কিন্তু একটা মানুষ কী করে এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে। আপনার ভেতরে মনুষ্যত্ব বলতে কিছু নাই। আপনি পশুর সমান। এমন একজন মানুষের সাথে কী করে সংসার করবো বলতে পারেন।

ইফাজ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দেখে টপটপ করে পানি নিচে পড়ছে। সত্য ই তো কতোটা হিংস্রতা ছিলে মনে। কীভাবে এমন করতে পারলো। কাউকে অন্ধবিশ্বাস করে তার কথায় মনুষ্যত্বহীন হয়ে গেলো।

-ভুল হয়েছে অতসী, আমি জানি আমি অনেক ভুল করেছি তাও যদি পারো তাহলে আমাকে মাফ করে দিয়ো।
কথাগুলো বলে ই ইফাজ রুম থেকে বের হয়ে যায়।
ইফাজ যাওয়ার সাথে সাথে অতসী আবার বই পড়ায় মনোযোগ দিলো। বইটা পড়া শেষ করতে করতে প্রায় রাত দশটার মতো বেজে গেলো। পড়ার ফাঁকে শিমুকে বলেছিলো খাবার টা রুমে দিয়ে যাওয়ার জন্য। শিমু খাবার রুমে রেখে গিয়েছে। অতসী উঠে খাবার খেয়ে ঘুমাতে যাবে ঠিক তখন ই ইফাজ এসে কিছু না বলে ই পাশে শুয়ে পড়লো। ইফাজকে দেখে ই অতসীর মেজাজটা বিগড়ে গেলো,

-আপনি এখানে আসলেন কেনো?

-তাহলে আমি কোথায় ঘুমাবো।

-আপনার নিজের বাসায় যান।

-আমার বউ রেখে আমি কোথাও যাবো না।

– আমার রুম থেকে বের হয়ে যান।

-বললাম তো আমার বউ বাচ্চা রেখে কোথাও যাবো না।

-তাহলে আমি রুম থেকে চলে যাচ্ছি।

-আচ্ছা আমি ফ্লোরে শুয়ে পড়ছি তাও রাতের বেলায় কাউকে জাগানোর প্রয়োজন নেই।

-হে এটা ই আপনার জন্য সঠিক জায়গা। আমাকে ও নিচে শুতে হয়েছিলো আপনার জন্য, এখন দেখেন কেমন লাগে।

অতসী এটুকু বলে উপরে থাকা একটা বলিশ নিচে ছুড়ে মারে। অতসী অতসীর ভাবে শুয়ে পড়ে।

সকাল বেলা, ফজরের আযান হতে ই অতসীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। অতসী অজু করে এসে নামাজে দাড়িয়ে যায়। অতসী দুই রাকাত সুন্নত নামজ শেষ করে পাশে তাকাতে ই দেখে ইফাজ ও নামাজে দাড়িয়েছে। এটা দেখে অতসীর মনে মনে একটা ভালো লাগা কাজ করে। অতসী দেরি নাকে আবার দুই রাকাত ফরজ নামাজের জন্য দাড়িয়ে পড়ে।

নাস্তায় প্রায় শেষ ঠিক সেই মুহুর্তে মা বলে উঠলো,

-অতসী রেডি হয়েনে তোকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো।

কোনো কিছু না ভেবে ই বলে দিলাম,
-যাবো না আমি।

-যেটা বলেছি ঐটা কর।

-যাবো না বলছি তো শরীরটা আমার ভালো লাগে না।

-তোর তো খাবার চাই না তাই না। তুই রেডি হয়েনে। নয়তো এভাবে ই নিয়ে যাবো।

খাবার শেষ করে রুমে আসতে ই ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে। কিন্তু মায়ের সাথে কোথাও যেতে হবে তাই আর ঘুমালাম না। মুখে এক রাজ্য বিরক্তি নিয়ে বোরকা টা পড়ে নিলাম।
বাড়ি থেকে বের হতে ই দেখলাম ইফাজের গাড়ি দাড়িয়ে আছে, এটা দেখে মাকে প্রশ্ন করলাম কোথায় যাচ্ছি।

-দেখতে ই তো পাবি।

-কোথায় নিয়ে যাচ্ছো বলতে প্রবলেম কী।

-গাড়িতে উঠে বস।

কিছুক্ষনের মধ্যে ই একটা হসপিটালের সামনে এসে গাড়ি থামলো। গাড়িতে থেকে নামতে ই দেখলাম ইফাজ সামনে দাড়িয়ে আছে। বুঝতে পারলাম হতো ডক্টর দেখানোর জন্য নিয়ে এসেছে। আমাকে এটা বললে ই পাড়তো এভাবে না বলে কেনো নিয়ে এসেছে।
ডক্টর দেখানোর পর পর ই চেকাপ করতে বললো। চেকাপ করো ডক্টর আবার দেখিয়ে গাড়িতে এসে বসলাম। ইফাজ ঔষধ কিনতে গেছে। ঔষধগুলো কিনে সোজা ইফাজদের বাসার সামনে এনে গাড়ি দাড় করায়। আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

-এটা জন্য ই কী নিয়ে এসেছিলে আমাকে।

-অতসী বিয়েটা কোনো ছেলে খেলা নয়, যে তোর মন চাইলে শ্বশুর বাড়িতে আসবি আর মন না চাইলে আসবি না। ইফাজ অনেক ক্ষমা চেয়েছে।

-আমি তো ক্ষমা করিনি।

-ক্ষমা করা মহৎ গুন।

-আর একটু ভুল হলে চড় থাপড় দেওয়া, কারো সাথে কথা বলার জন্য আগুন দিয়ে শরির পুড়িয়ে দেওয়া কী মা?

-এগুলো ভুল ছিলো?

-যে ভুল করেছে ঐ ভুলের ক্ষমা হয় না।

-মেয়েদের অনেক কষ্ট করে সহ্য করে স্বামীর বাড়িতে থাকতে হয়।

-আমি থাকবো না।

-তাহলে যা চলে যা। এসব আর আমার ভালো লাগছে না। মুক্তি দে এসব জামেলা থেকে আমাকে।

এটা বলে ই মা চলে গেলো।

আমি আর কোনো কথা বললাম না। সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে রাতে ই কোথাও চলে যাবো। কখনো থাকবো না এই কালপিটের সাথে। আমাকে যতটা কষ্ট দিয়েছে তা আমি কখনো ভুলতে পারবো না। এই মানুষটার সাথে একই ছাদের নিচে থাকা সম্ভব নয়।

চলবে,

[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]