স্পর্শ পর্ব-১৮

0
1131

#স্পর্শ
#পর্ব_১৮
#writer_nahida_islam

ইফাজ অনেক ভেবে ও কূল পাচ্ছে না যে অতসী কোথায় যাবে। অতসীর বাবার বাড়িতে কল দিলো কিন্তু অতসী সেখানে ও যায়নি। হঠাৎ মনে হলো মেইন গেইটের সিসিটিভির কথা। ইফাজ দৌড়ে গিয়ে লেপটপ নিয়ে এসে ফুটেজ বের করতে ই দেখে। অতসী চারটা আটের দিকে মেইন গেইট ক্রস করে। তখন দারোয়ান নামাজ পড়ছিলো। মেইন গেইট ক্রস করে দক্ষিণে দিকে যাচ্ছে। এর পর আর অতসীকে দেখা যায়নি। ইফাজ আর দেরি করলো না গাড়ির চাবিটা নিয়ে বের হয়ে পড়ে।

সাতটার ট্রেন আজকে ছ’টায় ই চলে এসেছে। অতসী এতে খুব খুশি হয়েছে, ভিড়টা ও কম। উফফ আল্লাহ দোয়া কবুল করেছে এতোক্ষণ বসে থাকতে খুব ই বিরক্ত লাগছিলো।

ইফাজ ভালো ই বুঝতে পারছে অতসী স্টেশনের দিকে আছে, এতো সকালে তো গাড়ি পাবে না তারউপর অতসী কাছে টাকা ও নাই। এ জন্য ই স্টেশনে আসা। ইফাজ গাড়ি থেকে নেমে দেখে ট্রেন চলে এসেছে। ইফাজ ভয় পাচ্ছে যদি অতসী ট্রেনে উঠে যায় তাহলে খুজে পাওয়া খুব কষ্টকর হবে। ইফাজ চারপাশে একবার ভালো করে চোখ ভুলালো কিন্তু অতসীকে কোথায় খুজে পেলো না। ট্রেন ও ছেড়ে দিচ্ছে।

ইফাজ আর কিছু না ভেবে ট্রেনে উঠে পড়লো। এখন যেখানে ই হক এই ট্রেনে থাকলে আস্তে আস্তে খুজে পাবো। ইফাজ ভিড়ের মধ্যে দিয়ে আস্তে আস্তে খুজতে থাকে। যদি জানতো অতসী এভাবে পালিয়ে যেতে পারে তাহলে হয়তো রাতে ঘুমাতো ই না।

ট্রেনে উঠে শান্তিতে একটা নিশ্বাস নিলাম। এখন আট কেউ আমাকে খুজে পাবে না।কিন্তু কোথায় যাবো কিছু ই জানিনা। অজানা গন্তব্যে পথ পাড়ি দিচ্ছি। সারা রাত ঘুমাতে পারিনি এখন ঘুমে দুচোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন তো ঘুমানো যাবে না।

-আপনি কোথায় যাবেন জানতে পারি।

চোখ তুলে উপরে তাকাতে ই দেখলাম একটা ছেলে কথাটা জিজ্ঞেস করছে,

-আপনাকে বলতে হবে।

-কেনো আমাকে বললে কী তুলে নিয়ে যাবো।

-এক থাপ্পড় দিয়া সবগুলো দাত ফেলে দিবো। মেয়ে মানুষ দেখলে ই কথা বলার জন্য উঠে পড়ে লাগেন।

-আমাদের পছন্দ হয়নি বুঝি তাই অমন করছো সুন্দরী।

পাশ থেকে অন্য একটা ছেলে বলে উঠলো। ইচ্ছে করছিলো লাথি মেরে ট্রেন থেকে ফেলে দেই। কিন্তু লাথি না মারলে কেউ একজন তার গালে থাপ্পড় ঠিক ই মেরেছে। পাশে ফিরে তাকাতে ই দেখলাম ইফাজ।

আমি সাথে সাথে ওরনা দিয়ে মুখ ডেকে নেই। এ কী হলো ইফাজ কীভাবে জানলো আমি এখানে। আর শেষ রক্ষা হলো নাহ্। ঐদিকে আর কী হলো সেটা আর দেখেনি। বোরকা পড়ে বের হওয়া দরকার ছিলো তাহলে আর ইফাজ আমাকে চিন্ততে পারতো না।

-থাকনা অতসী মুখ ডাকতে হবে না। জানো যদি আমার কোনো অপরাধ না থাকতো তাহলে এখন থাপ্পড় টা তোমার গালে পড়তো।

-ঐ মিয়া ঐ ছেলেদের কে এখান থেকে ভাগিয়ে এখন তো আপনি মেয়েটার সাথে লুচুগিরি শুরু করছেন।

দাড়িয়ে থাকা একটা লোক ইফাজকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললো, ইফাজ রেগে উওর দিলো,

-ভাই যেটা বুঝেন না ঐটা নিয়ে কথা বলবেন না।

-সব বুঝি এখন মেয়েটাকে নিজের হাতে নেওয়ার ধান্দা।

-এইটা আমার বউ, হাতে নিবো মানে।

লোকটা আর কোনো কথা বললো না। ইফাজ অতসীকে বললো,

-তোমার জন্য আজকে এসব কথাগুলো শুনতে হলো। তাতে আমার কোনো দুঃখ নেই তোমাকে এসে পেয়েছি এটা ই অনেক।

-পরে যে স্টেশনে ট্রেন থামবে ঐখানে আমারা নামবো।

-বাসায় যাওয়ার জন্য বাসা ছাড়িনি।

-অতসী ভালোবাসাটা না জোর করে হয়না। আমি তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসবো। যখন আমাকে ক্ষমা করতে পারবে তখন ই আমার কাছে এসো। আর কোনো জোর করবো না তোমাকে।

-বিয়ে করে নিন অন্য কাউকে আমি হাজার চেষ্টা করে ও আপনার দেওয়া অত্যাচারগুলো ভুলতে পারছি না। আপনাকে দেখলে ই আমার সব মনে পড়ে যায়।

-বললাম তো জোর করবো না। আমার বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে প্লিজ এমন করো না। তুমি যে বের হয়েছো এভাবে যদি তোমার বা বাচ্চাটার কোনো ক্ষতি হয়ে যেতো তখন আমি কী করতাম বলো।

বাচ্চা কথাটা বলায় চুপ হয়ে যাই। এখন আমার জীবন থেকে ও অনেক অনেক বেশি দামি বাচ্চাটাকে পৃথিবীর মুখ দেখানো। মা ডাক শোনার, ছোট ছোট হাত পা গুলো স্পর্শ করা, তাকে বুকে নিয়ে ঘুমানো। এসব অনুভূতি আর যে চাই ই চাই। এসব ভেবে বললাম,

-যাবো আপনার সাথে একটা শর্তে আমাকে বাবার বাসায় রেখে আসতে হবে।

-তুমি যা বলবে তাই ই হবে শুধু আর কখনো এমন কিছু করবে না।

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। ট্রেন থেমে গেছে। ইফাজ আর আমি ট্রেন থেকে নেমে বাসে উঠে পড়ি কারণ আবার ট্রেন আসতে সময় লাগবে। বাসে উঠে আবার স্টেশনে পৌছে ইফাজের গাড়িতে উঠি। ইফাজ এবার কোনো কথার খেলাপ করেনি সোজা আমাদের বাসায় নিয়ে আসে।

আমাকে দেখে মা কিছু বলতে যাবে তার আগে ইফাজ বলে ফেললো,

-মা অতসী এখন থেকে এখানে থাকবে। আমি টাকা দিয়ে যাচ্ছি প্লাস বাজার ও করে দিয়ে যাচ্ছি। অতসীকে মুখের কথাটা ও বলবেন না। কাজ ও করাবেন না। আমি কাজের লোক ও দিয়ে যাবো।

আমি রুমে চলে আসলাম। ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। রাতে ঘুমাইনি ঘুমের জন্য আমি আর চোখ খুলতে পারছি না।

-অতসী নাস্তা করেনি তো, এভাবে ঘুমাচ্ছো যে।

-ধূর মাত্র একটু ঘুম আসলো এমনি তো ডাকটা দিলেন। ঘুমালাম কোথায়।

ইফাজ এক গাল হেসে বললো,

-তুমি ঘুমাও আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

-খাবো না বললাম তো।

-না করলে কিন্তু এখন আমার বাসায় নিয়ে যাবো।

হাজার ও বিরক্তি নিয়ে খাবার মুখে নিলাম। ক্ষুধা ও লেগেছিলো কিন্তু ঘুমার জন্য খেতে যাইনি।

ইফাজ অতসীকে খাইয়ে দিয়ে। আবার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। কয়েকদিন যাবৎ অফিসে যাওয়া হয় না। অফিসে কী হচ্ছে না হচ্ছে কোনো কিছুর খোজ ই নাই। বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে ইফাজ অফিসে চলে গেলো।

ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির তাকে তাকাতে ই দেখলাম চারটা পনেরো বাজে। এতো ক্ষন ঘুমালাম কী করে। দেখলাম আমার পাশে একটা নতুন ফোন। হাতে নিয়ে দেখলাম ফোনটা।

-এটা ইফাজ ভাইয়া দিয়ে গেছে আপু।

আমি আরচোখে তাকিয়ে বললাম,

-কেনো।

শিমু কিছু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-তোর হাসবেন্ড তোকে ফোন দিয়েছে এটাতে আবার কারণ লাগে নাকি।

-কারন তো আছে কই এতোদিন তো ফোন দেয়নি।

-আচ্ছা ইফাজ ভাইয়া আবার আসলে জিজ্ঞেস করে নিস।

শিমুকে দেখে বুঝলাম আমার কথায় বেশ বিরক্ত, বিরক্ত হবে ই না কেনো ও তো আর সব জানেনা। আমার প্রশ্নগুলো অদ্ভুত ই লাগবে ওর কাছে।

আমি ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার খেয়ে বাহিরে গিয়ে বসতে ই ইফাজ কল দেয়।

-কখন ঘুম থেকে উঠলেন রানী।

-একটু আগে।

-খাবার খেয়েছেন, না খেলে কিন্তু আমি আসবো। পরে আবার আমাকে সহ্য করতে হবে। আমাকে সহ্য করার থেকে আগে খাবার খেয়ে নেও।

-খেয়েছি আমি।

-বাহ্ ভালো তো, ডক্টর কি বলেছে শুনেছো। বেশি করে খেতে হবে, একটু সাবধানে চলাফেরা করতে হবে বুঝলে।

ইফাজ আরো কিছুক্ষন কথা বলে কল কেটে দেয়।
_____________________________

এভাবে ই কেটে যায় সাতমাস। অতসী এখন ও বাবার বাড়িতে আছে। ইফাজ অনেক কেয়ার করেছে দূর থেকে ই। অবশ্যই দেখতে এসেছে দুদিন পর পর। অতসী প্রয়োজনীয় সব কিছু দিয়েছে। অতসীর মনটা অনেকটা পাথর। ইফাজের সাথে ভালোভাবে কথা বলে ঠিকই কিন্তু ভালোবেসে না শুধু কথা বলা প্রয়োজন তাই বলে। প্রয়োজন ছাড়া একটা কথাও বলে নাহ্।
হঠাৎ অতসীর লেবার পেইন উঠে…..

চলবে,

[ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন