#স্পর্শ
#পর্ব_২৫
#writer_nahida_islam
আমি আপনার টাকা শোধ করে দিতে চাই।
স্পর্শ হেসে বললো,
-তাই নাকি।
-হে।
-আচ্ছা তাহলে আমি ই তোমাকে একটা কাজ দেই।
– আপনার কাজ করতে আমার বয়ে ই গেছে।
-এমা টাকা শোধ করতে হলে তো তোমাকে কাজ করতে হবে।
-ঐটা নিয়ে আপনার মাথা ব্যাথা না হলে ও চলবে।
-এইজন্য ই কারো উপকার করতে হয় না।
-প্রয়োজন নেই আপনার উপকারের।
স্পর্শ আর কোনো কথা বললো না, ক্লাসে চলে গেলো। ক্লাসে যেতে স্যার এসে পিকনিকের কথা বললো। ক্লাসের সবাই তো খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। কিন্তু স্পর্শিয়ার মুখে হাসি নেই ক্লাসের সবাই সবাই যেতে পারলে ও স্পর্শিয়া যেতে পারবে না এটা শিউর। কারণ ছয়শত টাকা কেনো চারআনা পয়সাটা ও নেই এখন স্পর্শিয়ার কাছে। আর বাসায় গিয়ে এসব বললে মা আরো ভেঙ্গে পড়বে।
-এই যে চুইংগাম যাচ্ছো তো।
-সেটা আপনাকে বলতে হবে।
-সব সময় তেলে বেগুনে জ্বলে না উঠে কথা বলা যায় না, বেয়াদ্দব মেয়ে।
-নিজে খুব আদবের বুঝি।
-তোমার থেকে আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট নিবো না।
-আমি একেবারে উঠে পড়ে লেগেছি আপনাকে সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য।
-এর থেকে পান বেচে খালার সাথে কথা বলা ভালো।
-তো নিষেধ করছে কে।
-আরে তোরা দুজন কী শুরু করলি, স্যারকে বলে দিবো কিন্তু।
রুহিত কথাটা বলতে ই স্পর্শ আড়চোখে রুহিতের দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেলো।
ক্লাস শেষ করে স্পর্শ বাসায় চলে গেলো। কিন্তু বার বার আশ্রমের কথা মনে হলো। আর ঐখানে গেলে মায়ের আদর ও পাওয়া হয়ে যায়। তাই আর লেইট করলো না, বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লো আশ্রমের উদ্দেশ্য। বাইক বাহিরে রেখে দারোয়ানের সাথে গল্প করে ভেতরে ডুকে মা বলে ডাকতে ই অতসী দৌড়ে বের হয়ে আসলো।
এই ছেলেটার মধ্যে এতো কী মায়া যে এতো আদর করতে ইচ্ছে করে। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। ছেলেটাকে পেয়ে নিজের অস্তিত্ব পেয়েছে মনে হচ্ছে।
-মা রান্না করেছো?কালকে বলে গিয়েছিলাম , তুমি রান্না করলে আমি খাবো।
অতসী অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-আমার মনে ছিলো না।
অতসীর মুখটা মলিন করে ফেললো, বুঝা যাচ্ছে বেশ মন খারাপ করেছে। স্পর্শ হেসে বলে উঠলো,
-মা চলো আজকে আমি আর তুমি এক সাথে রান্না করবো।
-না বাবা তুমি বসো আর কী খাবে বলো আমি রান্না করে নিয়ে আসছি।
-সবজি খিচুড়ি খাবো মা কিন্তু আমি ও রান্না করবো তোমার সাথে।
অতসী হেসে বললো,
-আচ্ছা চলো।
স্পর্শ আর অতসী রান্নাঘরের দিকে গেলো। অতসী সব কিছু রেডি করছে আর স্পর্শ দাড়িয়ে দাড়িয়ে গল্প জুড়ে দিয়েছে। হঠাৎ অতসী বলে উঠলো,
-আচ্ছা বাবা তোমার বাসায় কে কে আছে।
-আমার বাবা, চাচা, চাচিমা, চাচাতো বোন তনু। আর দাদিমা।
হঠাৎ অতসী অসুস্থ হয়ে পড়ে, দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বসে পড়েছে। স্পর্শ এভাবে দেখে ভয় পেয়ে যায়। সাথে সাথে সবাইকে ডাকতে থাকে। সুমা এসে অতসীকে রুমে নিয়ে যায়। স্পর্শিয়া ও এসেছে। স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আপনি আসলে অসুস্থ হয়ে যায় দেখেন না তারপর ও কেনো আসেন।
-গাধার মতো কথা বলো না। আমি আসলে কেনো অসুস্থ হবে, উনার সমস্যা আছে তার জন্য তো ডক্টর দেখাতে পারোনি। আমাকে দোষারোপ করছো।
-আপনি না আসলে ই ভালো আন্টি ঠিক থাকে।
-আজকে তো রাত হয়ে গিয়েছে, কালকে আমি এসে মাকে ডক্টর দেখাতে নিয়ে যাবো।
স্পর্শ অতসীর সাথে কিছুক্ষন কথা বলে বাসায় চলে আসে। ব্যপারটা খুব ভাবাচ্ছে। স্পর্শ কয়েকবার খেয়াল করেছে অতসী প্রায় সময় ই মাথা চেপে ধরে। হয়তো মাথায় কোনো প্রবলেম তাই প্রায়শই এমন হয়।
ইফাজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ই স্পর্শের রুমে যায়। ছেলেকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে কপালে চুমু খেয়ে চলে আসে। অতসী থাকলে আজ হয়তো অন্যরকম একটা সকাল দেখতো। মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে নিজের কাছে আটকে রাখতে হয়, ইফাজ যখন ভালোবাসা শিখেছে তখন ই অতসীকে হারিয়েছে।
স্পর্শ সকালে ঘুম থেকে উঠে, দ্রুত ব্রাশ করে নিলো। প্রায় সাড়ে ন’টা মতো বাজে। অনেকটা লেইট হয়ে গিয়েছে।
-স্পর্শ কোথায় যাবে এতো তারাহুরো করছো যে।
-কাজ আছে, মামনি।
নীলু ব্যাপারটা বুঝতে পারলো না, যাকে ডেকে উঠানো দায় সে নিজ থেকে উঠে রেডি হয়ে কোথাও যাচ্ছে।
-খাবার নিয়ে আসবো বাবা।
-না মামনি খাবো না।
-সকালে না খেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাবে।
-সে কিছু না এসে খেয়ে নিবো।
স্পর্শ দ্রুত বের হয়ে গেলো। বাইকটা স্টার্ট দিয়ে সোজা আশ্রমে চলে গেলো।আশ্রমে ডুকে অতসীর অনুমতি নিয়ে রুমে ডুকলো,
-মা তুমি এখন ঠিক আছো।
অতসী হাসি মুখে উওর দিলো,
-হে বাবা
-চলো তোমাকে ডক্টর দেখাবো।
-আরে না বাবা এসব এমনি ঠিক হয়ে যাবে।
-মা যা বলছি তা করো।
-আমার কিছু হয়নি সব ঠিক হয়ে যাবে।
-আমি সকালের খাবার খাইনি, যদি তুমি এমন করো তাহলে আমি কিন্তু খাবো না।
স্পর্শের হাজার চেষ্টার পরে অতসী বাহিরে যেতে রাজি হলো। বিশ বছর পর, আজ প্রথম প্রথম আশ্রমের বাহিরে পা রাখছে। সুমা অনেকবার হসপিটাল নিয়ে যেতে চাইলে ও অতসী রাজি হয়নি। কিন্তু আজ স্পর্শের কথা কোনে ভাবে ই ফেলতে পারেনি।
স্পর্শিয়া ক্লাসে বসে আছে, বার বার পুরো ক্লাস রুমে চোখ ভুলাচ্ছে। বাহিরে ও কয়েকবার দেখলো কিন্তু স্পর্শ তো এলো না। তাহলে কী সত্যি ই স্পর্শ ভালো আন্টিকে নিয়ে ডক্টর দেখাতে গেছে। ভালো আন্টি স্পর্শের সাথে হসপিটাল যাবে তা কেনো জানি বিশ্বাস হচ্ছে না। হবে ই বা কীভাবে বিশ বছরে তো একবার ও মা আশ্রমের বাহিরে বের করতে পারেনি।
-কী এতো ভাবছিস স্পর্শিয়া।
-কিছু না।
-আজকে স্পর্শ এলো না দেখলি?
-এসব দেখে আমি কী করবো।
-নাহ্ এমনি বললাম। আর আমি জানি তুমি স্পর্শকে ই খুজছো।
-স্পর্শকে আমি খুজতে যাবো কেনো।
-তাহলে এদিক ওদিক এভাবে তাকাচ্ছো কেনো।
-এমা এখন আমি এদিন ওদিক তাকাতে ও পারবো না।
স্পর্শিয়া নৌশিনের থেকে অন্য দিকে তাকিয়ে বসে আছে, নৌশিন এখন নানা প্রশ্নের ঝর তুলবে এটা বুঝা ই যাচ্ছে।
ইফাজ বারান্দায় বসে বসে পত্রিকা পড়ছে, হঠাৎ কল আসলো ইফাজের ফোনো। ইফাজ একমুহূর্তে ও দেরি না করে হসপিটাল চলে গেলো।
বাসায় এসে ব্যাগটা রাখতে ই স্পর্শিয়ার মা দৌড়ে এসে খবর দেয় স্পর্শ এক্সিডেন্টে করেছে।
সুমা স্পর্শিয়া দুজন ই বেরিয়ে পড়ে হসপিটালের উদ্দ্যেশে। সুমা গাড়িতে বসে বসে বলছে,
-এই ছেলেকে ভরসা করে আমি অতসীকে দিয়েছিলাম কিন্তু ছেলেটা এক্সিডেন্ট করে ফেললো। এই ছেলেকে ভরসা করা আমার ঠিক হয়নি।
-মা চুপ করো তো এমনি ভয়ের মধ্যে আছি তারউপর তোমার এসব হাঁকডাক ভালো লাগছে না।
-তুই কী বুঝবি অতসী এমনি অসুস্থ। তারউপর কতোটা ব্যাথা পেয়েছে কে জানে।
ইফাজ হসপিটালে পৌছনো সাথে সাথে একটা নার্স এসে বলে, আপনি কী এই পেসেন্টে কেউ হন।
ইফাজের কথা বলার শক্তি নেই। কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে। স্পর্শ ই তো তার পৃথিবী এখন তাও বললো,
-বাবা হই আমি।
পেসেন্ট এর অবস্থা মোটামুটি ভালো ই কিন্তু সাথের মহিলটা আপনার কে হয় উনার অবস্থা ভালো নয়। মহিলাটার অবস্থা খুব খাবার।
ইফাজ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে কোন মহিলা।
-আপনার ছেলের সাথে একজন মহিলা ও ছিলো চলুন আপনাকে দেখাচ্ছি চিন্তে পারেন কী না। পেসেন্টের অভিভাবক আমাদের প্রয়োজন..
চলবে,
[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]