হৃদয়ের একাংশ তুই পর্ব-০৩

0
399

#হৃদয়ের একাংশ তুই
#Part_03
#Writer_NOVA

বর্ষা চোখ রাঙিয়ে তাকালো। সাকিব হো হো করে হেসে উঠলো। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ ডেকে উঠলো,

‘বর্ষা!’

বর্ষা হিজাবের সামনের দিকটা ঠিক করতে করতে পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। নাম ধরে ডাকা মানুষটাকে দেখেই চট করে ওর রাগ উঠে গেলো। হৃদয় খুশিমনে সামনে গিয়ে বললো,

‘আরে রাফি তুই? হঠাৎ কি মনে করে?’

রাফি বর্ষার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে হৃদয়ের সাথে কোলাকুলি করলো। হৃদয়ের আরেক জানে জিগার দোস্ত রাফি। রাফির জন্য হৃদয় সব করতে পারে। বর্ষা আর রাফিকে সে কখনো আলাদা চোখে দেখে না। দুজনি তার ভালো বন্ধু।রাফি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

‘তোর কাছে আসতে কোন সময় লাগে?’

‘তা লাগে না। কিন্তু এই অসময়ে তোকে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হয়েছি।’

হৃদয় রাফির এক হাত মুষ্টি করে ধরে হেসে হেসে কথাটা বললো। রাফি হৃদয়ের থেকে চোখ সরিয়ে বর্ষার দিকে দৃষ্টি দিলো। বর্ষা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। রাফি ধীর পায়ে বর্ষার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,

‘কেমন আছো বর্ষা?’

‘হুম ভালো।’

মুখ গোমড়া করে বর্ষা উত্তর দিলো। রাফিকে কুশলাদি জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলো না।এই ছেলেটাকে সে দুচোখে সহ্য করতে পারে না। তার অবশ্য একটা কারণ আছে। কারণ হলো রাফি ওকে পছন্দ করে। ইনিয়েবিনিয়ে বহুবার রাফি বোঝাতে গিয়েছে। কিন্তু বর্ষা সব বুঝেও না বোঝার ভান করে রয়েছে। রাফিকে তার ভালো লাগে না। ভালো না লাগার কারণটা সে উদ্ধার করতে পারেনি। ক্লাশ ওয়ানের থেকে এইচএসসি অব্দি রাফি আর বর্ষা একই প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মহা বিদ্যালয়ে পড়েছে। এমনকি একই ক্লাশে। তবুও রাফি বর্ষার সাথে সখ্যতা জমাতে পারেনি। যতবার জমাতে গিয়েছে বর্ষা দূরে দূরে থেকেছে। বর্তমানে রাফি পড়াশোনা করে না। জাপানে যাবে। তাই ভাষার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

রাফি মুখে হাত দিয়ে গলা ঝেড়ে বললো,
‘আমায় জিজ্ঞেস করলে না কেমন আছি?’

‘দেখতেই তো পাচ্ছি ভালো আছেন। আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে? ভালো না থাকলে নিশ্চয়ই এখানে আসতে পারতেন না।’

বর্ষার ঠাটবাট জবাব। রাফি কিছু মনে করলো না। তার কাছে এসব সয়ে গেছে। স্মিত হাসলো। মাথা নাড়িয়ে বললো,

‘তা ঠিক।’

হৃদয় হেচকা টানে বর্ষাকে অন্য দিকে নিয়ে গিয়ে চোখ সরু করে জিজ্ঞেস করলো,

‘তুই রাফির সাথে এমন করিস কেন?’

‘ওকে আমার সহ্য হয় না।’

‘কেনো?’

‘আমি নিজেও জানি না।’

‘কারণ তো অবশ্যই আছে।’

বর্ষা হাত ঝাড়া মেরে হৃদয়ের চোখে চোখ মিলিয়ে বললো,

‘তোর এত কারণ খুজতে হবে না। শুধু এতটুকু জেনে রাখ একটা মেয়ে সব ছেলেকে সহ্য করতে পারে না। যাকে সহ্য করতে পারে সে হলো স্পেশাল মানুষ।’

হৃদয় কপাল সংকুচিত করে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘তাহলে আমিও কি তোর কাছে স্পেশাল?’

বর্ষা জোর দিয়ে বললো,
‘অবশ্যই, তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড। আর বেস্টফ্রেন্ড সর্বদাই স্পেশাল হয়।’

‘রাফিও তো আমার বেস্টফ্রেন্ড।’

বর্ষা ডান হাতের তর্জনী উঁচু করে বললো,
‘লিসেন হৃদ, রাফি তোর বেস্টফ্রেন্ড আমার নয়।’

মুখ ঝামটা মেরে বর্ষা সরে গেলো। রাফি ততক্ষণে চেয়ার টেনে বসেছে। বর্ষা, হৃদয় ফিরতেই ওদের দিকে সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকালো। হৃদয় তা বুঝতে পেরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাফির পাশের চেয়ার টেনে উল্টো হয়ে বসে বললো,

‘কোন দরকার দোস্ত?’

‘আসলে একটা দরকারেই এসেছিলাম।’

‘কি দরকার?’

বর্ষা পাশে এসে কান খাড়া করে রেখেছিলো। দরকারের কথা শুনে হৃদয়ের হাত ধরলো। তারপর ওকে চেয়ার থেকে উঠানোর জন্য টানতে লাগলো। হৃদয় নাক ফুলিয়ে কড়া সুরে বললো,

‘কি হইছে টানছিস কেন?’

বর্ষা ওর হাত ধরেই উত্তর দিলো,
‘উঠ, আমাদের এক জায়গায় যেতে হবে।’

তারপর রাফির দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
‘আপনার কোন দরকার থাকলে, হৃদের কাছে পরে আসবেন। আমাদের একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। সেখানে যেতে হবে।’

হনহন করে হৃদয়কে টানতে টানতে বর্ষা বাইরের দিকে হাঁটা দিলো। হৃদয় বারবার বলছে,

‘বর্ষু হাত ছাড়।রাফির কথাটা একটু শুনি।’

বর্ষা রাগী গলায় উত্তর দিলো,
‘পরে শুনিস।এখন তুই আমার সাথে যাবি।’

রাফি এক দৃষ্টিতে ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। চোখ দুটো ক্রমশ লাল হয়ে যাচ্ছে। নজরটা ছিলো হৃদয় আর বর্ষার হাতের দিকে। বর্ষা ওর সামনে হৃদয়ের হাত ধরেছে যা রাফির কিছুতেই পছন্দ হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। গত দশ বছর ধরে যাকে মনপ্রাণ সব দিয়ে রেখেছে তাকে অন্য ছেলের হাত ধরতে দেখলে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। আর ছেলেটা যদি হয় নিজের প্রাণপ্রিয় বন্ধু। তাহলে তো কথাই নেই।

রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিলো বর্ষা। হৃদয় সামনে তাকিয়ে চারতলা একটা দালান দেখতে পেলো। সন্দেহের চোখে বর্ষাকে বললো,

‘কোথায় নিয়ে এলি?’

‘ভেতরে গেলেই দেখতে পাবি।’

‘আমি এই ওয়েটারের ড্রেসে ভেতরে যাবো?’

হৃদয় এক লাফে পিছনে সরে গিয়ে কথাটা বললো। বর্ষা তীক্ষ্ণ নজর দিয়ে বললো,

‘কেন ওয়াটেরর ড্রেসটা কি খারাপ?’

হৃদয় মুখ কুচোমুচো করে বললো,
‘না তা নয়। স্টাইলের একটা বিষয় আছে না?’

বর্ষা ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বললো,
‘তোর স্টাইলের নিকুচি করি। ভেতরে চল।’

ইতস্তত ভঙ্গিতে হৃদয় বর্ষার পিছু যেতে লাগলো।বর্ষার মেজাজ তুঙ্গে উঠে আছে। বেশি কথা বললে জুতা ছুঁড়ে মারবে। তাই সে কথা বাড়ালো না। বর্ষা কলেজ ব্যাগ থেকে একটা মাস্ক বের করে নিজে পরে নিলো।আরেকটা হৃদয়ের দিকে বাড়িয়ে দিলো। হৃদয় জিজ্ঞেস করলো,

‘মাস্ক কেন?’

‘চুপচাপ পর। বেশি প্রশ্ন করবি না।’

হৃদয় মাস্ক নিয়ে পরে নিলো।তারপর বললো,
‘আচ্ছা শুধু এতটুকু বল আমরা এসেছি কোথায়?’

বর্ষা সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে উঠতে অকপটে উত্তর দিলো,

‘অনিকের হবু শ্বশুর বাড়ি।’

হৃদয় থমকে গেলো। চিৎকার করে বললো,
‘আবার এখানে কেন?’

বর্ষা এক গালে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
‘দ্বিতীয় মিশন কমপ্লিট করতে। অনিককে আমি এভাবেই ছেড়ে দিবো ভাবলি কিভাবে? তুই জানিস না বেইমানদের আমি কতটা ঘৃণা করি। আমার কাছে বেইমানির কোন মাফ নেই।’

হৃদয় কোমড়ে হাত দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। বর্ষা এখানে আসবে জানলে সে কিছুতেই আসতো না।আর বর্ষাকেও আসতে দিতো না।বর্ষা আপনমনে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। হৃদয় দৌড়ে উপরে উঠে বর্ষার পাশে চলতে চলতে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘এখানে তুই কি করবি?’

‘দেখতে থাক কি করি। তোকে দেখানোর জন্য তো আনলাম।’

‘কার কাছে এসেছিস তুই?’

‘অনিকের হবু বউ হিমার কাছে। মেয়েটা আমাদের কলেজে পড়তো। বিজ্ঞান বিভাগে। আমরা একই বছর এইচএসসি দিয়েছি।’

তিনতলায় এসে কোলিং বেল চাপতেই এক মহিলা দরজা খুললো। পুরান ঢাকাইয়া ভাষায় টেনে টেনে জিজ্ঞেস করলো,

‘কারে চাই?’

বর্ষা সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘হিমা আছে?’

মহিলা এক নজর বর্ষা আর হৃদয়ের দিকে চোখ বুলালো। হৃদয়ের গায়ে ওয়েটারের পোশাক দেখে কিরকম করে কপাল কুঁচকে ফেললো। হৃদয়ের অস্বস্তি লাগছে। মহিলা কড়া গলায় বললো,

‘আমরা কিছু অর্ডার করিনি।’

হৃদয় বর্ষা পরস্পরের মুখের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলো। হৃদয়ের পোশাক দেখে নিশ্চয়ই ওদের হোম ডেলিভারিম্যান ভেবেছে। বর্ষা ঠোঁট চেপে হাসতেই হৃদয় চোখ রাঙিয়ে তাকালো। বর্ষা হাসি আটকে বললো,

‘আমরা কোনকিছু ডেলিভারি দিতে আসিনি। আমরা এসেছিলাম হিমার কাছে। ওর ফ্রেন্ড।’

মহিলার আগের থেকে বেশি সুক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বললো,

‘তোমাদের তো আগে দেখিনি।’

‘আমারা হিমার সাথে এক কলেজে পড়তাম। কখনো আপনাদের বাসায় আসিনি তাই দেখেননি।’

হৃদয় মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে কথাগুলো বললো। মহিলার বোধহয় এবার বিশ্বাস হলো। দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ভেতরে এসো।’

ওরা দুজন ভেতরে ঢুকলো। মহিলা ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘তোমারা কি বিয়ে উপলক্ষে এসেছিলে?’

বর্ষা চোখ ঘুরিয়ে বাসাটা পর্যবেক্ষণ করছিলো। মহিলার প্রশ্ন শুনে থতমত খেয়ে বললো,

‘জ্বি আন্টি।’

‘কিন্তু বিয়ে তো এক সপ্তাহ পেছানো হয়েছে।’

বর্ষা অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
‘কেন আন্টি?’

‘ছেলেপক্ষ হঠাৎ কাল রাতে কেন ডেট পিছালো তা তারাই ভালো জানে। তোমরা হিমার রুমে যাও।’

বাসার মানুষ বেশি নেই। বিয়ের অনুষ্ঠান কমিউনিটি সেন্টারে হওয়ার কথা ছিলো।মহিলা রুম দেখিয়ে রান্নাঘরে ছুটলো।বর্ষা হাফ ছাড়লো। হৃদয় বিরবির করে বলে উঠলো,

‘মহিলা চরম ব্রিটিশ। একেবারে তোর বাপের মতো।’

বর্ষা হৃদয়ের বাহুতে জোরে এক কিল বসিয়ে বললো,
‘সব কিছুতে আমার বাপকে টানবি না।’

বর্তমানে বর্ষা,হৃদয় বসে আছে হিমার মুখোমুখি। হিমা অবাক হয়ে বললো,

‘আন্টি বললো তোমরা আমার ফ্রেন্ড। কিন্তু আমি তো তোমাদের চিনি না। তোমরা আসলে কে বলো তো?’

হৃদয় হে হে করে হেসে বললো,
‘আমরা আসলে অনিকের ফ্রেন্ড।’

‘কোন অনিক?’

হিমার প্রশ্ন শুনে বর্ষার রাগ হলো। আজ যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। তাকে নাকি চিনে না। বর্ষা দাঁত কিড়মিড় করে কৃত্রিম হাসি ঠোঁটের কোণায় এনে বললো,

‘তোমার আজ যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।’

‘ওহ আমার হবু বরের কথা বলছো। আসলে এতশত ঝামেলায় আমার বরের নামই ভুলতে বসেছি।দেখেছো কান্ড! ওর ফ্রেন্ড তোমরা। আগে বলবে না।’

হৃদয় মিনমিন করে বললো,
‘ঢং দেখে বাঁচি না। আসলেই মাইয়া জাত ঢংগী জাত। নিজের হবু বরের নাম ভুলে গেছে। আরো কত কি যে শুনতে হইবো।’

বর্ষা হৃদয়কে মিনমিন করতে দেখে হাতে একটা চিমটি কাটলো। হৃদয় আউচ করে চেচিয়ে উঠলো। হিমা চমকে জিজ্ঞেস করলো,

‘কি হয়েছে?’

বর্ষা হৃদয়কে চোখ রাঙিয়ে হিমাকে বললো,
‘কিছু না।’

‘তোমরা কি মনে করে এলে বললে না?নিশ্চয়ই শুনেছো বিয়েটা এক সপ্তাহ পেছানো হয়েছে।’

হিমা কিছুটা আফসোসের সুরে বললো।বর্ষা এদিক সেদিক সাবধানি চোখে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,

‘তোমায় একটা সত্যি জানাতে।’

হিমা চোখ ছোট করে বললো,
‘কি সত্যি?’

‘তোমার বিয়েটা কেনো এক সপ্তাহ পিছিয়েছে তা জানো কি?’

‘হ্যাঁ, জানি তো। অনিক নাকি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেছে। হসপিটালে ভর্তি। বাড়ির বড়রা ওকে আজ দেখতে গিয়েছে। আমি যাইনি। বিয়ে হয়নি কিভাবে যাই?তাই আমাকে নেয়নি।’

বর্ষা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। মেয়েটা বড্ড সহজ সরল। মনে কোন প্যাচ নেই। নিজেকে সামলে হিমাকে কাছে ডেকে বললো,

‘তুমি যা জানো তা ভুল। অনেক বড় একটা সত্যি তোমার থেকে লুকানো হচ্ছে। তোমাকে তো ঠকাবে এরা। আমি একটা মেয়ে হয় কখনো অন্য একটা মেয়ের এতবড় ক্ষতি হতে দিতে পারি না।’

হিমা অবাক চোখে জিজ্ঞেস করলো,
‘কি ক্ষতি?’

হৃদয় চোখ কপালে তুলে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা আসলেই ডেঞ্জারাস। কি সুন্দর করে অভিনয় করছে। মনে মনে বাহবা দিয়ে বললো,

‘মাইয়া জাত জিন্দাবাদ।’

বর্ষা হিমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফুসফাস করে কি বললো তা আর হৃদয়ের কর্ণগোচর হলো না। জহুরির নজরে খেয়াল করে দেখলো হিমার মুখটা ধীরে ধীরে বিস্ময়ে ঘিরে ধরছে। চোখ দুটো বড় হয়ে যাচ্ছে। হৃদয় বুঝলো বর্ষা কানে বিষটা মারাত্মক বিষাক্তই ঢালছে।

‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে…….’

দালান থেকে বের হওয়ার পর থেকে বর্ষা পা বাঁকিয়ে বাঁকিয়ে হাত দুটো উপরে তুলে খুশিমনে গান গাইতে গাইতে নেচে নেচে হাঁটছে। হৃদয় কিছুই বুঝতে পারছে না। বর্ষার কান্ড দেখে দু-চারজন পথচারীও মুখ টিপে হাসছে। সেদিকে বর্ষার খেয়াল নেই। সে আজ মহাখুশি। দ্বিতীয় মিশনটাও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

হৃদয় ধমকে বলে উঠলো,
‘ঐ ছেমরি এমন পাগলের মতো নাচতাছিস কেন?’

বর্ষা চোখ টিপে গানের সুরে বললো,
‘আমি পাগল হয়ে যাবো, পাগল হয়ে যাবো।’

হৃদয় মাথায় চাপর মেরে বললো,
‘কাহিনি কি বলবি? মেয়েটার কানে কি ফুসমন্তর দিয়ে এলি? তুই যে ভালো কিছু করিস নি তা আমি জানি।’

বর্ষা হৃদয়ের কথার উত্তর দিলো না। সে গান গাইতে ব্যস্ত।

‘বাবা, তোমার দরবারে তো সব পাগলের খেলা।
হরেক রকম পাগল দিয়া মিলাইছে মেলা।’

হৃদয়ের এবার প্রচুর রাগ উঠছে। বর্ষার দুই কাধ ধরে থামিয়ে রাগত্ব স্বরে বললো,

‘কিরে বলবি হিমাকে তুই কি বলেছিস?’

বর্ষা একগালে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
‘আগুনে ঘি ঢালছি। এমন ঘি ঢালছি এই মেয়ে এখন অনিককে বিয়ে করতে মানা করে দিবে।’

‘কি বলছিস তুই?’

হৃদয়ের চোখে, মুখে উৎকন্ঠা ঝরে পরছে।বর্ষা মুখ টিপে হেসে বললো

‘হিমাকে বলছি, তোমার হবু বরের মেশিন তো অকেজো হয়ে গেছে।অকেজো মেশিনে কোন কাজকর্ম করতে পারবো না।মাঠে টেস্ট ম্যাচ তো দূরেই থাক টি-টোয়েন্টিও খেলতে পারবে না। সে এখন পুরাই বাতিল মাল। এমন বাতিল মাল বিয়ে করে কি করবা? তার চেয়ে সারাজীবন কুমারী থাকো তাও ভালো।’

বর্ষার এমন লাগামহীন বেশরম কথাবার্তা শুনে হৃদয় বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে জিহ্বায় কামড় দিলো। লজ্জায় মাথায় হাত দিয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললো। বর্ষা ওর অঙ্গিভঙ্গি দেখে উচ্চস্বরে হাসছে। হৃদয় এবার নিজেই জোরে বেসুরো গলায় গেয়ে উঠলো,

‘বাবা, তোমার দরবারে তো সব পাগলের খেলা।
হরেক রকম পাগল দিয়া মিলাইছে মেলা।’

#চলবে