অদ্ভুত পূর্ণতা Part-07(শেষ পর্ব)

0
1300

#অদ্ভুত_পূর্ণতা
writer – তানিশা
part – 7 ( শেষ পর্ব )

— তানিশার মা কাব্যর সামনে দাড়িয়ে তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,,,

তানিশার মা : আমার মেয়ের পাগলামি গুলো সহ্য করতে পারবে??

কাব্য : আন্টি আপনি, নীলা সবাই যেহেতু পারেন, আমিও ভালবেসে পারবো। ইনশাআল্লাহ।

তানিশার মা : ভেবে বলছো তো??

কাব্য : অনেক আগেই ভেবে নিয়েছি। ( মাথা নিচু করে )

— তানিশার মা এগিয়ে গিয়ে কাব্যর মায়ের হাত ধরে বললেন,,,

তানিশার মা : আপা কাব্যর বিষয়টা আমি জানিনা। তবে নীলা যেখানে আছে, তানিশা সেখানে নির্দ্বিধায় সুখী হবে। এটা আমার বিশ্বাস। আর আমি জানি যে,,

— তানিশার মা ওনার কথা শেষ করার আগেই তানিশা বলে উঠলো,,,

তানিশা : মা তুমি একদম টেনশন করোনা, দেখবা আমি নীলার সাথে অনেক সুখী হবো। ( অনেক খুশি হয়ে )

— কথাটা শুনে তানিশার মা চোখ রাঙ্গিয়ে তাকে বলল,,,

তানিশার মা : বিয়েটা কি তুই কাব্যকে করবি? নাকি নীলাকে?

তানিশা : কাব্য ভাইয়াকে। ( মাথা নিচু করে )

তানিশার মা : তাহলে নীলার সাথে সুখী হওয়ার মানে কি?

তানিশা : মানে,, নীলা আমার ননদিনী হবে। আর বিয়ের পর ভাইয়া তো সারাক্ষণ আমার সাথে থাকবেনা। আমি সারাক্ষণ নীলার সাথে থাকবো। তারমানে আমি নীলার সাথেই সুখী হবো। তাইনা??

— তানিশার মা বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়ে কি কখনো মানুষ হবে? নাকি হবেনা? তানিশার মা কাব্যর মাকে আবারও বলতে লাগলো,,,

তানিশার মা : আপা আমার কোনো আপত্তি নেই। আপনি বিয়ের আয়োজন শুধু করেন। তানিশার বাবা বিয়ের কাজটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলতে চায়।

কাব্যর মা : আমিও তাড়াতাড়ি করতে চাই। কাব্য তানিশার বিয়েটা শেষ করেই, ভালো পাত্র দেখে নীলাকেও বিয়ে দিয়ে দিবো।

— তানিশা আর নীলা একে অপরের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কাব্যকে বিয়ে করে কি হবে যদি নীলাই তার সাথে না থাকে। তানিশার চেহারা দেখে কাব্যর প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। বেচারি তানিশা কাব্যকে বিয়ে করে নীলার সাথে থাকতে চেয়েছে। অথচ নীলাকে বিয়ে দিয়ে বিদায় করার জন্যই তানিশাকে বৌ করে নিয়ে যাচ্ছে কাব্যর মা।

রাত প্রায় ১১ টা বাজে, তানিশার মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো। ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে কাব্য কল দিয়েছে। অনেকটা বিরক্ত নিয়ে কল রিসিভ করে বলল,,,

তানিশা : ভাইয়া এতো রাতে কল দিছেন কেন?

কাব্য : তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে তাই।

তানিশা : এতো রাতে কি কথা বলবেন?

কাব্য : তোমার সাথে কথা বলবো বলে, সেই কবে থেকে হৃদয়ে অনেক কথা জমিয়ে রেখেছি।

তানিশা : ওহহ,, আচ্ছা ভাইয়া আপনার কথা অন্য একদিন সময় নিয়ে শুনবো। আমার এখন অনেক ঘুম পাচ্ছে।

কাব্য : ঘুমানোর জন্য তোমার এতো তাড়া কিসের?

তানিশা : তাড়াতাড়ি ঘুমালে শরীর ঠিক থাকে, মাথাও ঠান্ডা থাকে। তাই আমি প্রতি দিন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরি। এই জন্য আমার মাথা সবসময় ঠান্ডা থাকে। আর আমি কথাও কম বলি।

— তানিশার কথা শুনে কাব্যর অনেক হাসি পাচ্ছে। কাব্য নিজের হাসি চেপে রেখে বলল,,,

কাব্য : তুমি কথা কম বলো? কই আগে জানতাম না,,তো

তানিশা : এখন তো জেনে গেছেন, তাহলে নিজেও ঘুমিয়ে পরেন, আমাকেও ঘুমাতে দেন।

কাব্য : ঘুমাবো তার আগে একটা কথা জানার ছিল?

তানিশা : কি কথা? ( বিরক্ত নিয়ে )

কাব্য : ভালবাসো আমাকে? ( অনেক আশা নিয়ে )

তানিশা : ভাইয়া আপনাকে ভালবাসতে যাবো কোন দুঃখে??

কাব্য : তাহলে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলে কেন? ( নিরাশ হয়ে )

তানিশা : ঐ মুখ পুরা আবিরকে যেন বিয়ে করতে না হয়। বেটা গরিলা আস্ত একটা লুচুর হাড্ডি আমাকে বলেছে আপনার সাথে বিয়ের পরে যেন কোনো যোগাযোগ না রাখি। ভাইয়া এটা কি কখনো সম্ভব বলেন?? তাই আপনাকে বিয়ে করে ঐ মুখ পুরা হনুমান, ঠোঁট পুরা বানরকে দেখিয়ে দিবো, আপনাকে ছাড়া আমার চলেই না। আর আপনি তো আমাকে ভালবাসেন। তাহলে আপনাকে বিয়ে না করে কি ঐ ডাইনোসরটাকে কেন করবো? যদিও আমি আপনাকে ভালবাসি না। তাতে কোনো সমস্যা নাই, বিয়ের পরেও বাসতে পারবো। তাইনা ভাইয়া??

— তানিশার কথা গুলো কাব্যর কাছে শুনতে ভালো লাগলেও, বারবার ভাইয়া ডাকটা তার কাছে মোটেও ভালো লাগছে না। কাব্য কিছুটা রাগী গলায় বলল,,,

কাব্য : সেই কখন থেকে ভাইয়া ভাইয়া করছো কেন?

তানিশা : তাহলে কি করবো?

কাব্য : কিছু করতে হবেনা। ( বিরক্ত নিয়ে )

তানিশা : তাহলে আমি কি ঘুমিয়ে পরবো?

কাব্য : না, ঘুমাবে কেন? ভালোই তো লাগছে কথা বলতে। আরও কিছুক্ষণ গল্প করি তারপর ঘুমাবা।

— কাব্য কল কাটছেই না, সেই কখন থেকে কথা বলেই যাচ্ছে। তানিশা প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে তার উপর। ইচ্ছে করছে একটা লাঠি নিয়ে গন্ডারটার মাথায় ঠাস ঠাস করে কয়েকটা বারি দিয়ে তাকে বেহুশ করে দিতে। গন্ডারটা বেহুশ হয়ে গেলে তার মোবাইলটা হাতে নিয়ে ইচ্ছে মতো ফ্লোরে কিছুক্ষণ ঠুস ঠাস করে কয়েকটা আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলতে। তারপর নিজের মোবাইলটা সযত্নে বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরতে।
.
এভাবেই প্রতি রাতে কথা বলতে বলতে, কাব্য এখন তানিশার অভ্যাস হয়ে গেছে। আগের মতো কাব্যর প্রতি তানিশা আর বিরক্ত হয়না। কাব্যর মুখ থেকে প্রতিদিন ভালবাসি কথাটা শুনতে ভাললাগে তার। মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে কাব্যর সাথে একান্তে কিছুটা সময় কাটাতে। কাব্যর সাথে কথা না বললে এখন তার ঘুমই আসেনা। কাব্যর জন্য তানিশার মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে। এই অদ্ভুত অনুভূতি কি কাব্যর প্রতি ভাললাগা? নাকি ভালবাসা?? সেটা তানিশা নিজেই জানে না।
.
দেখতে দেখতে বেশকিছু দিনের মধ্যে ধুমধাম করে তাদের বিয়ে হয়ে গেলো। কাব্য অনেক খুশি, ফাইনালি তানিশাকে নিজের করে পেয়ে গেছে। বাসরঘরে দরজা খোলে দেখে তানিশা মুখ গোমরা করে বিছানায় বসে আছে। কাব্য রুমে ঢুকে পরনের শেরওয়ানিটা চেঞ্জ করে তানিশার পাশে এসে বসে পরলো। তার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলল,,,

কাব্য : মন খারাপ?

তানিশা : হুম ( মাথা নাড়িয়ে )

কাব্য : প্রিয় জনদের ছেড়ে আসলে একটুআধটু মন খারাপ সবারই হয়। যাইহোক,, বৌ সাজে কিন্তু তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। একদম অপ্সরীদের মতো। ( মুগ্ধ হয়ে )

তানিশা : সত্যি ভাইয়া?? ( অনেক খুশি হয়ে )

— তানিশার মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনার সাথে সাথে কাব্যর মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেছে। বাসররাতে বরকে কেউ ভাই ডাকে নাকি? এটা শুধু তানিশার ধারাই সম্ভব। কাব্য রেগে গিয়ে বলল,,,

কাব্য : তানিশা please… তোমাকে কতবার বলবো? আমাকে ভাইয়া ডাকবা না।

তানিশা : ভুলে গেছি। ( করুণ গলায় )

কাব্য : কবে মনে থাকবে তো এই কথাটা? আদৌ কি তোমার কখনো মনে থাকবে? নাকি সারাজীবন আমি তোমার ভাইয়া হয়েই থেকে যাবো?

— কাব্য ধমক দিয়ে কথা বলতেই, তানিশা মন খারাপ করে কাব্যর থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে, চোখদুটি বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পরলো। কাব্য তানিশার দিকে তাকিয়ে ভাবছে, ম্যাডাম রেগে গেছে এখন তার রাগ ভাঙ্গাতে হবে। কাব্য তানিশার সামনে দাড়িয়ে ডাকতে লাগলো,,,

কাব্য : তানিশা উঠো,,

— তানিশা চোখদুটি খোলে কাব্যর দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু বলছেনা। কাব্য আবারও বলল,,,

কাব্য : কি হলো? উঠো,,

তানিশা : না, আমি ঘুমাবো। ( মুখ গোমরা করে )

কাব্য : আমি তোমাকে উঠতে বলছি,,

— বলেই কাব্য তানিশার হাত ধরে টেনে তুলে নিজেও তার পাশে বসে পরলো। অনেক গুলো লাল কাঁচের চুড়ি তানিশার সামনে এগিয়ে দিয়ে কাব্য মুচকি হেসে বলল,,,

কাব্য : তোমার জন্য।

— কাঁচের চুড়ি গুলো দেখেই তানিশার মনটা অনেক খুশি হয়ে গেলো। কাঁচের চুড়ি তানিশার কাছে একটু বেশিই ভাললাগে। কাব্য একটা একটা করে নিজেই তানিশার দুহাতে চুড়ি গুলো পরিয়ে দিতে লাগলো। তানিশা তার দুহাতের চুড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বলল,,,

তানিশা : চুড়ি গুলো অনেক সুন্দর।

— কাব্য নিশ্চুপ হয়ে তানিশার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা অল্পতেই অনেক খুশি হয়ে যায়। তানিশাকে যতো দেখে কাব্যর যেন ততোই তাকে ভালবাসতে ইচ্ছে করে। মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে তাকে নিজের বাহুডোরে খুব শক্ত করে জড়িয়ে নিতে। কাব্য তার দুহাত দিয়ে তানিশার দুগালে হাত দিয়ে তার কপালে একটা ভালবাসার পরশ এঁকে দিলো। তানিশা কিছু বলল না, তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।
.
ভালই যাচ্ছে তাদের সংসার। ইতিমধ্যে তানিশাও ভালবাসতে শুরু করেছে কাব্যকে। একদিন বিকেলে কাব্য অফিস থেকে বাসায় ফিরে দেখে তানিশা রুমে বসে কান্না করছে। কাব্য কিছুটা অবাক হয়ে জিঙ্গেসা করলো,,,

কাব্য : কি হলো? তুমি কান্না করছো কেন??

— তানিশা কাব্যর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,,,

তানিশা : নীলাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে।

কাব্য : তো এখানে কান্নার কি আছে?

তানিশা : নীলার বিয়ে হয়ে গেলে আমি কার সাথে থাকবো?

— কথাটা শুনার সাথে সাথে কাব্য হা করে তানিশার দিকে তাকিয়ে আছে। কার সাথে থাকবে মানে কি? কাব্য কি মরে গেছে নাকি তার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে? কাব্য চুপ করে তাকিয়ে আছে, এই মুহূর্তে কিছু বলতে ইচ্ছে করছেনা তার। তানিশা আবারও বলতে লাগলো,,,

তানিশা : আপনি তো সারাক্ষণ অফিসে থাকেন। নীলার বিয়ে হয়ে গেলে আমি কার সাথে থাকবো? বলেন?

কাব্য : একটা কাজ করা যায়, আমি নাহয় আরেকটা বিয়ে করে নিবো। হয় তুমি আমার নতুন বৌয়ের সাথে থাকবা, নাহয় আমাকে ডিবোর্স দিয়ে নীলার শশুড় বাড়ি চলে যাবা। ঠিক আছে?? ( দাঁতে দাঁত চেপে )

— তানিশা কান্না বন্ধ করে কাব্যর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কাব্য এটা কি বললো? আবার বিয়ে করবে মানে কি? নাকি কাব্য তাকে আগের মতো আর ভালবাসে না? পরক্ষনে তানিশা আবারও কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,,,

তানিশা : আপনি এখন আর আমাকে ভালবাসেন না?

কাব্য : কে বলল? ( ভ্রু কুচকে )

তানিশা : আপনি এখন বলছেন।

কাব্য : আমি আবার কখন বললাম? ( হা হয়ে )

তানিশা : আপনি এখন বলছেন। আমাকে ডিবোর্স দিয়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিবেন। আর আমি যেন নীলার শশুড় বাড়ি চলে যাই।

কাব্য : তুমি তো নীলাকে ভালবাসো, আমাকে না। তাহলে তুমি বরং নীলার সাথেই থাকো। আমার সাথে থেকে কি করবে??

তানিশা : কে বল?ল আমি আপনাকে ভালবাসি না? আমি নীলার থেকেও বেশি আপনাকে ভালবাসি। ( করুণ দৃষ্টিতে )

কাব্য : সত্যি?

তানিশা : তিন সত্যি।

কাব্য : আর কখনো নীলার কথা বলবা? ( তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে )

তানিশা : না। ( মাথা নাড়িয়ে ) শাঁকচুন্নিটার বিয়ে হয়ে যাক এটাই ভালো হবে। ( নাক টেনে )

— কাব্য তানিশাকে কাছে টেনে নিয়ে তার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,,,

কাব্য : কান্না করে তো নাকের পানি চোখের পানি সব একাকার করে ফেলেছো।

তানিশা : কেন কান্না করবো না? আপনি তো আমাকে ছেড়ে থাকার পরিকল্পনাও করে ফেলেছেন। সত্যি করে বলেন তো? আপনি কি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন?

কাব্য : কখনোই না। তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি তো তাই।

— কাব্য একগাল হেসে তানিশাকে নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে ধরলো। তানিশার মাঝে কাব্য যেন নিজের অস্তিত্বর এক #অদ্ভুতা_পূর্ণতা খোঁজে পায়।

( সমাপ্ত )

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)