অনুভবে তুমি পর্ব-০১ | Golpermohol

0
1519
golpermohol
Bangla romantic golpo.Bangla new golpo in golpermohol

#অনুভবে_তুমি
#সূচনা_পর্ব
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

খবরদার!আজ কিছুতেই ভার্সিটিতে যাবি না।
চুপচাপ ঘরে বসে থাকবি।
এমনকি বাসার বাহিরেও যাবি না।
–কেনো ভাইয়া?
কারন আজ ভার্সিটিতে শুধু বখাটে ছেলেরা ঘুরঘুর করবে।
ভালো স্টুডেন্ট রা আজ ভার্সিটিতে আসবে না।

সকাল থেকে ভাইয়া আমাকে শাসিয়ে যাচ্ছে।
আজ নাকি বখাটে ছেলেরা আনাচে কানাচে ওঁৎ পেতে বসে থাকবে।
রাস্তাঘাটে যে মেয়েকেই দেখবে তাকেই বিরক্ত করবে। সেজন্য আজ ভার্সিটিতে যাওয়া বারন আমার।
এমনকি ঘর থেকেও বের হওয়া নিষেধ।

কিন্তু আমি তো জানি আজ ভালোবাসা দিবস।
তাহলে ভাইয়া আমাকে এসব উল্টাপাল্টা বুঝাচ্ছে কেনো?

আমি সবেমাত্র ফাস্ট ইয়ারে উঠেছি।
এখন পর্যন্ত কোন ভালোবাসার মানুষ নাই।
আর হবেই বা কি করে?
ঘরের মধ্যে এমন একজন সি.আই.ডি অফিসার থাকলে কি করেই বা তা সম্ভব হবে?
উনি কোথায় কি করে বেড়াচ্ছেন তার কোনো কৈফিয়ত দিতে হয় না।
আর আমি এক সেকেন্ড লেট করে বাসায় ফিরলেই হাজার টা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।
সবসময় আমাকে কড়া পাহাড়ায় রাখেন তিনি।
এমনকি আমার রুমে এসে বার বার চেক করে যান।
আমি কারো সাথে ফোনে কথা বলছি কিনা?

আপনারাই বলুন?
আমার কাছে কোনো ফোনই নাই।
তাহলে আমি কিভাবে কথা বলবো?

ভাইয়া বলে ফোন আজকাল থাকা লাগে না।

কথাটার মানে বুঝলে কিছু?

আসলে ভাইয়া বুঝাতে চাইছে বয়ফ্রেন্ড রা গার্লফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলার জন্য নিজেরাই ফোন কিনে দেয়।

কথাটা কিন্তু আসলেই সত্যি।
আমার বান্ধুবীদের সবার কাছে ফোন আছে,যেটা তাদের বয়ফ্রেন্ড রা গিফট করেছে।
সেজন্য ওদের মুখে মুখে প্রেম ভালোবাসার গল্প শুনতে শুনতে আর ওদের প্রেম করা দেখে আমি নিজেও এখন ভালোবাসা অনুভব করি।
আমাকেও না কাউকে ভীষণ ভাবে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।
কিন্তু অনুভব করেই কি হবে?
আর ইচ্ছা করলেই কি হবে?
আমার কপালে যে নাই সেটা।
ওই যে সি,আই,ডি ভাইটা সব সময় চোখে চোখে রাখে।

আমার দৌঁড় শুধুমাত্র ভার্সিটি আর কোচিং পর্যন্ত।
বান্ধুবীরা কত জায়গায় বেড়াতে যায় বাট আমার আর যাওয়া হয় না।
আমি শুধু ঘরে বসে আফসোস করতে থাকি।
মন খারাপ করে বসে থাকি।
মাঝে মাঝে কাঁদিও।
কিন্তু আমার দাদী আমাকে নানাভাবে শান্ত্বনা দেয়।
দাদী মন ভালো করার জন্য সবসময় আমাকে নানা ধরনের উপদেশ দেয়।
–একদিন তুই অনেক সুখী হবি।
–ভালো একজন স্বামী পাবি।
যে তোকে অনেক ভালোবাসবে।
–বিয়ের পর স্বামীর সাথে বেড়াতে যাস।
তখন আর কেউ বারন করবে না।
দাদীর এই কথাগুলো শোনামাত্র আমার মুখে হাসি চলে আছে।
আমি লাজুক একটা হাসি দিয়ে বলি দাদী বাদ দাও তো এসব।
এক কথা রোজ রোজ শুনতে ভাল লাগে না আমার।

এদিকে অয়ন ভাইয়া আমাকে কড়া কড়া উপদেশ দিয়ে নিজে সুন্দর করে সেজেগুজে বের হচ্ছে।
কালো শার্ট,মেচিং করে আবার কালো সানগ্লাস।
আজ চুলের কাটিং টাও কেমন যেনো অন্যরকম মনে হচ্ছে।
ভাইয়ার ব্যাপারস্যাপার বুঝতে পারছি না কিছু।
আর বুঝেই বা কি করবো?
ও একদম ধোয়া তুলসিপাতা।
ও কোনো অপরাধ করতেই পারে না।
ওর কোন দোষ নাই এ বাড়িতে।
বাড়ির লোকেরা সবসময় ওকে মাথায় তুলে রাখে।
ও বড় দেখে ওর সব অপরাধ মাফ।

আমার না একটা ভীষণ বদ অভ্যাস আছে।
পেটে বেশিক্ষন কথা রাখতে পারি না।
হঠাৎ আমার মুখ ফসকে কথাটা বের হলো।
কারন আমি আর ভাইয়ার এই অহেতুক যুক্তি মেনে নিতে পারছিলাম না।
আমি বলেই ফেললাম,

ভাইয়া তুই তখন কি সব ভুলভাল বললি আমাকে?
আজ তো সুন্দর একটা দিন।
তুই কিসব বখাটে ছেলের দিন বললি?
আজ তো ভালোবাসা দিবস।

অয়ন ভাইয়া কথাটা শোনামাত্র তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।
কিসের ভালোবাসা দিবস রে?
কে বলেছে তোকে?

আমি তো ভাইয়ার এমন রাগ দেখে জোরে একটা ঢোক গিললাম।
কি বললাম এটা?
কেনো বললাম?
বলেই দুই হাত দিয়ে নিজের গালে নিজেই দুইটা চড় মারলাম।

ওদিকে ভাইয়া হুংকার দিয়ে বলছে,
–কি হলো চুপ করে আছিস কেনো?

আমি মনে মনে ভাবলাম আর ভুল করিস না অতশী।
ভুল করেও যেনো বান্ধুবীদের কথা মুখ ফসকে না বের হয়।
তাহলে তো ভাইয়া আর কিছুতেই তোকে তাদের সাথে মিশতে দেবে না।
আমি আর চুপ করে না থেকে বললাম,
কলেজের মেয়েগুলো বলাবলি করছিলো।
তখন শুনেছি।
আমি সত্যি এসব বিষয় এ কিছু জানি না।
(অথচ সেই হাইস্কুল লেভেল থেকে জেনে আসছি।এতোদিন এতো শাসন করেন নি ভাইয়া।বাট ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে কেমন যেনো শাসন টা তার বেড়ে গেছে)

অয়ন ভাইয়া সেই কথা শুনে মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগলো,
এইভাবেই তো ভালো মেয়েগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
একজনের জন্য দশজন খারাপ হয়।
এদের মনে হয় শাসন করার কোনো লোক নাই।
বেয়াদব মেয়েরা এই বয়সে ভালোবাসার কি বোঝে?

–কিছু বললি ভাইয়া?

–না বলি নি।
তবে শোন আজ কোনো ভালোবাসা দিবস না।
এসব একটা বানোয়াট দিন।
কারো কথায় খবরদার কান দিবি না।
প্রেম ভালোবাসা বলে কোন দিন নেই।

কথাগুলো বলেই অয়ন ভাইয়া চলে গেলো।

ভাইয়ার যাওয়া দেখে বললাম,
ভাইয়া দাঁড়া?
তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস?

ভাইয়া আমার কথা শুনে পিছন ফিরে তাকালো।
আর চোখ বড় বড় করে বললো,
তোকে কি এখন সেই কৈফিয়ত দিতে হবে?
তুই কি আমার গার্ডিয়ান নাকি?

ভাইয়ার কথাটা শুনে ভীষণ মন খারাপ হলো।
আর মনে মনে আফসোস করতে লাগলাম কেনো যে ছোট হলাম?
কেনো আমি এই রাক্ষস টার বড় হলাম না?
কারন ও আমাকে কথায় কথায় মাথায় একটা করে টোকা দেয়।
সেজন্যই দিন দিন আমার ব্রেন বুদ্ধি কমে যাচ্ছে।

শুধুমাত্র অয়ন ভাইয়ার চড় খেতে খেতে আজ আমার মেধা এতো কম।
তার উপর আবার পুরো পরিবার জোর করে সায়েন্স বিভাগ নিয়ে দিয়েছে।
আমি নাকি আর্সে নিলে সবার মানসম্মান নষ্ট হয়ে যাবে।
আমার এসব কঠিন কঠিন সাবজেক্ট পড়তে একদম ইচ্ছে করে না।

যাক এখন এসব পড়াশোনার কথা চিন্তা করে আমার মুড টা মোটেও নষ্ট করতে চাই না।
তবে সবসময় শুধু একটা কথাই ভাবি,
এসব কঠিন কঠিন সাবজেক্ট আবিষ্কার করে আমাদের চোখের ঘুম হারাম করার কি দরকার ছিলো?
সহজ কোনো সাবজেক্ট চোখে দেখেন নি এনারা?
আমার তো শুধু রোমান্টিক রোমান্টিক গল্প পড়তে মন চায়।
সেটাও পড়তে পারি না এই ভাইটার জন্য।
চুরি করে কি আর গল্প পড়া যায়?
তবে ভার্সিটিতে গেলে লিশার ফোন টা নিয়ে নীল ক্যাফের গল্প গ্রুপ এ ঢুকে সুন্দর সুন্দর গল্প পড়ি।

কিন্তু শান্তি মতো আর পড়া হয় না।
এই লিশার বয়ফ্রেন্ড কয়েক মিনিট পর পর ফোন দিতে থাকে।
দূর শান্তি নাই কোথাও।
নিজের একটা ফোন থাকলে রাত দিন গল্প পড়তাম।
কিন্তু আফসোস!
কেউ দিবে না ফোন কিনে।
যদিও নিজের জমানো টাকা দিয়ে ছোটো মোটো একটা ফোন কিনতে পারতাম,
কিন্তু রাখবো কই?
সেজন্য নিজস্ব একটা ফোনের স্বপ্ন আর দেখি না।

ভার্সিটিতে পড়ি অথচ কোনো ফোন নাই আমার।
এর চেয়ে বড় দুঃখ আর কি হতে পারে?

যাক এখন পরের কাহিনী তে যাই,
আমি এবার ভাইয়াকে বললাম,
ভাইয়া তুই এতো সেজেগুজে কই যাচ্ছিস?

কথাটা বলেই দাদীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
কারন এই জায়গাটা অনেক নিরাপদ।
দাদীর কাছে থাকলে আমাকে মারার সাহস কখনোই পাবে না সে।

অয়ন ভাইয়া সেই কথা শুনে আমার কাছে এগিয়ে এসে বললো,
কি বললি তুই?
আরেকবার বল।
শুনতে পাই নি আমি।

আমি জানি ভাইয়া সব শুনতে পেয়েছে।
মুখে মুখে তর্ক করায় সে ভীষণ রেগে গেছে।
রাগে চোখমুখ লাল হয়ে আছে।

আমি তখন সাহস করে বললাম,
না মানে তুই তো নিজেই বললি আজ বখাটে ছেলেরা শুধু ঘর থেকে বের হবে।
তাহলে তুই কেনো বের হচ্ছিস?

আমার কথা শোনামাত্র ভাইয়া রাগান্বিত হয়ে বললো,তুই আমাকে বখাটে বললি?

–ভাইয়া আমি কিন্তু তোকে বখাটে বলি নি।
বাট যে তোকে চেনে না সে তো বখাটে ভাবতেই পারে।
যেহেতু আজ রাস্তাঘাটে শুধু বখাটেদের দেখা যাবে।

ভাইয়া সেই কথা টা শুনে বললো,
আমি কেমন সেটা সবাই ভালো করেই জানে।
তোকে এ নিয়ে ভাবতে হবে না।
তুই চুপচাপ ঘরে বসে থাক।
আজ তুই ঘর থেকে বের হবি না।
এটাই আমার শেষ কথা।

আমি তখন শান্ত সুরে বললাম,
ঠিক আছে,বের হবো না ঘর থেকে।
তুই আমাকে নিয়ে অনেক ভাবিস তা আমি ভালো করেই জানি।
আমার ভাই আমার কত দেখাশোনা করে,খোঁজ খবর নেয়।
আমি যদিও ছোট তবুও আমারও তো কিছু দায়িত্ব কর্তব্য আছে।

ভাইয়া চোখের ভ্রু উঁচু করে মুখ ভেঁচকিয়ে বললো,তোর আবার কিসের দায়িত্ব কতর্ব্য?

আমি তখন বললাম,
আজ যদি রাস্তায় বখাটে ছেলেরা ঘোরাঘুরি করে তাহলে তো বখাটে মেয়েরাও ঘোরাঘুরি করবে।
তোর সাথেও তো তাহলে সেম কাহিনী ঘটতে পারে।
তোকেও তো কেউ জোর করে প্রপোজ করতে পারে।

কথাগুলো শুনে অয়নের মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।
বোন আমার বলে কি?
আমাকে প্রপোজ করবে কোনো মেয়ে?
এটাও কি সম্ভব?

অয়ন ভাইয়া আমার মুখে এতোবড় একটা কথা শুনেও কিছুই বললো না।
কারন তার এখন তর্ক করার সময় নেই।
ইতোমধ্যে তার অনেক দেরী হয়ে গেছে।
এদিকে ভাইয়ার বন্ধুরা বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।
ভাইয়ার আসতে দেরী হওয়াতে তারা বার বার হর্ণ দিচ্ছে।

ভাইয়া সেজন্য আর এক মুহুর্ত ও দেরী করলো না।
তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

আমি একটা জিনিস আজও বুঝলাম না।
ভাইয়ার ফ্রেন্ড রা বাসার ভিতর আসে না কেনো?
ভাইয়া না যাওয়া পর্যন্ত তারা বাসার বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাকে।
তবুও তারা ভিতরে আসে না।
এজন্য ভাইয়ার ফ্রেন্ডদের আমি একদিনও দেখি নি।

এদিকে ভাইয়া বাসা থেকে বের হতেই সোজা আম্মুর রুমে চলে গেলাম।
আর ভাইয়ার নামে নালিশ করা শুরু করে দিলাম।

–আজ আমার কোচিং এ পরীক্ষা আছে।
গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্লাসও আছে।
কিন্তু ভাইয়া কিছুতেই কলেজে যেতে দিচ্ছে না।
এসব অত্যাচার কি মানা যায় নাকি?

আমার কথা শুনে আম্মু বললো,
নিশ্চয় ঝগড়া করেছিস ওর সাথে।
তা না হলে ও এমন কথা বলবে কেনো?
ও অযথা কেনো তোকে কলেজে যেতে বারণ করবে?

আম্মুর কথা শুনে মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগলাম,
কারন আমি জানতাম শেষমেষ দোষ টা আমার ঘাড়েই আসবে।
সব দোষ আমার।
ওনার ছেলে দোষ করতেই পারে না।
তবুও নিজেকে সামলিয়ে নিলাম।
কারন এখন তর্ক করার সময় নেই আমার।
আমি তখন বললাম,
আম্মু এখন আমি কি করবো?
কলেজে যাবো কি যাবো না?
এক কথায় বলো।

আম্মু সাথে সাথে বললো যাবি না কেনো?
একশোবার যাবি।

কথাটা শোনামাত্র এক মুহুর্ত ও আর দেরী করলাম না।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

আমাদের ভার্সিটিতে যাওয়ার রাস্তা টা ছিলো ভীষণ নির্জন।
ভার্সিটির স্টুডেন্ট ছাড়া এই রাস্তা দিয়ে সচারাচর তেমন কোন লোক যাওয়া আসা করে না।
তবে নানাধরনের ছেলেকে রোজ দেখা যায়।
অযথায় ঘোরাঘুরি করে।
মেয়েদের দিকে তাকিয়ে তারা যে কি লাভ পায় তা আমি সত্যি বুঝি না।

আজ একা একা যেতে ভীষণ ভয় লাগছে আমার।
গা ছমছম করে উঠছে।
আমি কখনো একা যাই না কলেজে।
আমার বান্ধুবীরা সবাই এসে এই রাস্তার মোড়ে জড়ো হয়,তারপর আমরা সবাই একসাথে যাই।
সবাই একসাথে থাকলে নিজেকে ভীষণ সাহসী মেয়ে মনে হয়।
আজ যেহেতু আমার দেরী হয়েছে সেজন্য সবাই অনেক আগেই কলেজে চলে গেছে।

আমি সাহস নিয়ে একা একাই চলতে লাগলাম সেই রাস্তায়।
হঠাৎ কিছু ছেলে আমাকে ডাকতে লাগলো।
–এই যে ম্যাডাম!
একটু দাঁড়ান প্লিজ।

আমি তাদের ডাক শুনেও তাকালাম না,
না শোনার ভান করে আরো দ্রুত হাঁটা শুরু করে দিলাম।
কিন্তু ছেলেগুলো তবুও আমার পিছু পিছু আসতে লাগলো।
আর ম্যাডাম ম্যাডাম বলে ডাকতে লাগলো।

আমি ওদের কে এভাবে আসা দেখে হাঁটা বাদ দিয়ে দৌঁড়াতে লাগলাম।
আর ভাবতে লাগলাম ভাইয়ার কথাই তো ঠিক হলো।
আজ তো সত্যি সত্যি বখাটে ছেলেরা মেয়েদের ডিস্টার্ব করার জন্য বের হয়েছে।

আমি দৌঁড়াচ্ছি,,,দৌঁড়াচ্ছি,,,
হঠাৎ দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আমি পা মোচড় খেয়ে সবার সামনে পড়ে গেলাম।
একে তো লজ্জা লাগছে ভীষণ!
তার উপর পায়ে ভীষণ ব্যাথা হচ্ছিলো।
আমি কিছুতেই উঠতে পারছিলাম না।

এদিকে ছেলেগুলো হাসছে আর আমার কাছে এগিয়ে আসছে।
আমি তা দেখে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলাম।
গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করেই যাচ্ছি।
আমার চিৎকার শুনে বখাটে ছেলেগুলো কখন যে পালিয়ে গেছে তা আমি কিছুতেই টের পাই নি।
আমি চিৎকার করতেই আছি।

–এই মেয়ে কি হয়েছে?
এভাবে পাগলের মতো রাস্তায় বসে চিৎকার করছো কেনো?
উঠো বলছি।

একটি ছেলে এইভাবে বলায় আমি চিৎকার থামিয়ে দিয়ে বললাম,
দূরত্ব বজায় রাখুন।
খবরদার আমার কাছে আসবেন না।
আমার ভাইকে তো চেনেন না।
যদি জানে তার বোন কে কেউ ডিস্টার্ব করেছে একদম মেরে ফেলবে।

ছেলেটি সেই কথা শুনে বললো,
কি ভুলভাল বকছো?
সাইড দাও,না হলে গায়ের উপর দিয়ে বাইক নিয়ে যাবো কিন্তু।
এই বলে ছেলেটি অনবরত হর্ণ দিতে লাগলো।

আমি হর্ণ শুনে এতোক্ষনে ছেলেটার দিকে তাকালাম আর বললাম,ও,আপনি?
আমি তো ভেবেছিলাম বখাটে!

–বখাটে?
আমাকে তুমি বখাটে বললে?

–না মানে?
মানে?
আমি মানে মানে করতে করতেই ছেলেটি একদম আমার পাশ ঘেষে বাইক নিয়ে চলে গেলো।
আমি ভয়ে চুপসে গেলাম।
মনে হচ্ছিলো আমার গায়ের উপর দিয়েই যেনো গাড়িটা গেলো।
বুকে হাত দিয়ে দেখি সেই লেভেলের ধুকপুকানি!

মনে মনে ছেলেটিকে ইচ্ছামতো বকে দিলাম।
অসভ্য!
বেয়াদব ছেলে!
কই একটু সাহায্য করবে?
কি হয়েছে জিজ্ঞেস করবে?
তা না করে ভাব দেখিয়ে চলে গেলো।
ভার্সিটির বড় ভাইয়েরা মনে হয় এমনি হয়।
ছেলেটির নাম ছিলো ইভান।

আমি আশেপাশে আর কাউকে দেখতে পেলাম না।
সেজন্য চিৎকার করে বললাম, এই যে শুনছেন?
এই যে?
প্লিজ একটু হেল্প করুন।

ছেলেটি আমার কথার কোনো গুরুত্বই দিলো না।
হয় তো শুনতে পারে নি।
যে স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছে না শোনারই কথা।
তাছাড়া ছেলেরা এমনি।
মেয়েদের দেখলে বাইকের স্পীড এমনি বেড়ে দেয়।

আমি কোনো উপাই না দেখে একা একা উঠতে চেষ্টা করলাম।
কিন্তু পারলাম না।
হঠাৎ দেখি আমার অয়ন ভাইয়া!
হয় তো শুনেছে আমি ভার্সিটিতে এসেছি সেজন্যই মনে হয় আসছে।
ভাইয়া কে দেখামাত্র আমি আমার পায়ের ব্যাথার কথা সত্যি ভুলে গেলাম।
কিসের ব্যাথা?
আর কিসের যন্ত্রণা?
একহাতে ব্যাগ আর অন্য হাতে জুতা জোড়া নিয়ে দিলাম এক দৌঁড়।

#চলবে,,,,,,?