অপ্রত্যাশিত পর্ব ৫+৬

0
1675

অপ্রত্যাশিত
পর্ব ৫+৬
#মুন_তাহা
.
রাতে খাওয়া শেষে আবির রুমে চলে গেল আর আমি মায়ের সাথে গল্প করছি আর রান্না ঘরের জিনিস গুলো পরিষ্কার করছি। সব কাজ শেষ করে রুমে আসার পর দেখি আবির ঘুমিয়ে গেছে..
আমি : ঘরে আসতে না আসতেই ঘুম। কি ঘুম রে বাবা। ( কথাটা একটু জোরে বললাম )
আমি : নাহ কোনো শব্দ নেই। সত্যি ঘুমিয়ে গেছে খচ্চরটা..
রুমের লাইট অফ করে বেডে আসলাম। জানালা দিয়ে আসা চাঁদের আলো আবিরের মুখে পড়ছে। আমি দেখছি ওকে, কতটা নিষ্পাপ লাগছে। কখনো ভাবিনি আমার চাওয়া টা পূরণ হবে। সব সময় চাইতাম আবির যেন আমার হয় কিন্তু ওর ব্যবহার কষ্ট দিতো আমাকে। এসব ভাবতে ভাবতে..
আমি : ভালোবাসি ( ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বললাম )
আবার ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। এই মানুষটারে দেখলে আমি সব ভূলে যায়। হঠাৎ করে..
আবির : দেখা শেষ হলে এবার ঘুমাও..
আল্লাহ এইটা কি হলো? ঘুমের ভান করে ছিল?
আমি : আপনি ঘুমান নি? ( অবাক হয়ে )
আবির : হাহাহা
আমি : ধ্যাত ( বলেই আমি অন্য দিকে মুখ করে নিলাম। কোনো কাজ হয় না আমার দ্বারা। )
হঠাৎ আবির আমাকে ঘুরিয়ে ওর বুকের মধ্যে টেনে নিলো। আমি কোনো কথা বলতে পারছি না। ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার শক্তি আমার নেই। চুপ করে ওর বুকে শুয়ে আছি..
আবির : ময়না পাখি..
আমি : ___
আবির : ওও ময়না পাখি..
আমি : হু ( আস্তে করে )
আবির : তখন কি যেন বলছিলা?
আমি : কখন?
আবির : একটু আগে। আমার কানে কানে কি যেন বললে।
আমি : ( চুপ। হায় আল্লাহ এইবার কি বলব??)
আবির : বলো
আমি : কিছু বলিনি। আপনি স্বপ্ন দেখছিলেন।
আবির : আচ্ছা বিয়ের দুইদিন আগে ফোন দিয়ে কি বলছিলে?
আমি : ঘুমের ঘোরে কি সব বলছিলাম।
আবির : বলো ( একটু রেগে )
আমি : বলতেছি..
আবির : হুম..
আমি : ছাড়েন প্লিজ
আবির : কেন
আমি : জানিনা ছাড়েন আপনি।
আবির : আচ্ছা জোর করে তো ধরে রাখা যায়না। পাশের বাসার কথা আমাকে যেতে বলছিলো। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো কেমন?
( আমি শক্ত করে ওর টিশার্ট ধরলাম )
আবির : আআআআ
আমি : কিচ্ছে চিল্লান ক্যান?
আবির : ওই এতো বড় নখ রাখছো ক্যান? কালই নখ কাটবে নাহলে…
আমি : নাহলে কি…
আবির : যা বলছি শুনবা। আল্লাহ গো কার পাল্লায় পড়লাম। নখ দিয়ে বর কে খুন করতে চায়। ডাকাত মেয়ে।
আমি : ( আর ও শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম )
আবির : ময়না পাখি..
আমি : হু
আবির : সাহস বেড়েছে মনে হচ্ছে। আগে তো ভয়ে কথা বলতে না
আমি : আগে ছোট ছিলাম। আর এখন বাড়ির বউ ( একটু ভাব নিয়ে )
আবির আর কিছু না বলে আমার কপালে ওর ঠোঁট রেখে ঘুমিয়ে গেল। আজ নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে….
সকালে..
আমি : অরিন
অরিন : হ্যাঁ ভাবি আসো। বসো
আমি : আচ্ছা সত্যি করে বলো তো তোমার ভাইয়া তোমাকে কি বলছিলো?
অরিন : ক..কি আবার বলবে
আমি : বলবা না?
অরিন : আচ্ছা শোনো
আমি : হুম
অরিন : সেদিন তোমার বাড়ি থেকে যখন বলল যে মিতু আপু পালিয়ে গেছে তখন সবাই তো খুব রাগ। সবাই একেক রকম কথা বলছে কিন্তু ভাইয়া চুপ। এরপর ভাইয়া আমাকে ওর রুমে ডাক দিলো..
আমি : তারপর
অরিন : ভাইয়া বললো..
আমি : কি বললো? ( অধিক আগ্রহে)
অরিন : তোমার সাথে ভাইয়ার অনেক দিনের রিলেশন। ভাইয়ার যে বন্ধু বাবাকে তোমাদের বাড়ির ঠিকানা দেয় সে মিতুর কথা বলে বাবাকে। আর বাবাও সেই অনুযায়ী বিয়ের কথা বলে।
আমি : কোন বন্ধু?
অরিন : আরে ওই যে সোহেল ভাইয়া.. এরপর ভাইয়া আমাকে হেল্প করতে বলে।
আমি : কি
অরিন : ভাইয়া বলে যে সবাইকে বলতে যে এইটা আমাদের সম্মান এর ব্যাপার, সো আজই ওই বাড়ির মেয়ের সাথেই ওর বিয়ে হবে। আর সবাই যখন জানতে চাইবে ওই বাড়ির কোন মেয়ে তখন যেন আমি তোমার কথা বলি..
আমি : এ্যাআআ
অরিন : জ্বী হ্যাঁ। আর প্লান মতো কাজ করলাম যার ফল আজ তুমি আমার ভাবি.. হিহিহি
আমি : ( কথা শুনে পুরো হা)
অরিন : পরে ভাইয়া বললো যে সোহেল ভাইয়া নাকি তোমাকে পছন্দ করে তাই এমন করেছে।
আমি : ( চুপ)
অরিন : ভাবি… ওওও ভাবি কি ভাবছো?
আমি : নাহ কিছু না। আচ্ছা থাকো।
অরিন : আচ্ছা
.
কি শুনলাম এইটা? তার মানে আবির জানে যে মিতু কোথায় আছে।
আবির : কি ব্যাপার কই ছিলে? জানোনা আমি অফিসে যাব?
আমি : মিতু কোথায়?
আবির : আমি কিভাবে জানবো পাখি?
আমি: মিথ্যা বলবেন না কিন্তু
আবির আমাকে বেডে বসিয়ে একটা চেয়ার টেনে আমার সামনে বসলো.. ওর দুইহাত আমার মুখে রেখে বললো..
আবির : টেনশন করোনা মিতু ভালো আছে।
আমি : আপনি…
আবির : আমি কোনো ভুল করিনি পাখি। মিতু সত্যি অন্য একজনকে ভালোবাসতো। ও আমাকে হেল্প করেছে আর আমি ওকে হেল্প করেছি।
আমি : কিন্তু ও এখন কোথায়?
আবির : হানিমুন করছে.. হাহাহা
আমি : কিন্তু আপনি তো আমাকে পছন্দই করতেন না ( মন খারাপ করে )
আবির : আমি তো দেখতাম যে কষ্ট দিলে দূরে যাও কিনা। কিন্তু বিয়ে করে মনে হলো…
আমি : কি মনে হলো??
আবির : কোনো ভুল করিনি। আর এতো ভালোবাসা অবহেলা করাও ঠিক না।

কথাটা বলেই আবির আমার ফোনটা আমার হাতে দিয়ে উঠে গেলো। এমা, আমার ফোনের লক খুলছে কে? গ্যালারী ও লক করা ছিল সেটাও নেই। তার মানে আবির?? ফোনে ওর অনেক ছবি আছে সব দেখেছে। কি ভাবলো??
আমি : ধ্যাত কবে যে আমার বুদ্ধি হবে
আবির : আমার এমন বোকা বউই পছন্দ
আমি: আবার কখন আসলেন? গেলেন তো মাত্রই
আবির: একটা জিনিস ভুলে গেছিলাম
আমি : তা তো যাবেনই। আজ তো আমি গুছিয়ে দেইনি। আমি না হলে তো…
কথা শেষ করার আগেই আবির আমার হাত ধরে কাছে টেনে কপালে একটা কিস করলো..
আবির : হুম এবার কাজটা কমপ্লিট হলো। আর হ্যাঁ তুমি ছাড়া আমার চলেই না পাখি।
কথাটা বলেই অফিসে চলে গেল…

এই মানুষটাকে যত দেখছি ততই অবাক হয়ে যাচ্ছি। আবার ভয়ও করছে, এত ভালোবাসা আমার ভাগ্যে থাকবে তো? যে আমাকে তার সবটা দিয়ে আগলে রাখছে তাকে আমি আগলে রাখতে পারব তো? এসব কথা ভাবলেই সব এলোমেলো হয়ে যায়। বিয়ের আগের পাঁচ বছরের কষ্ট গুলো এই পনের দিনে মুছে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে খেয়াল করিনি।
হঠাৎ অরিন আসলো..
অরিন : ভাবিইইইইই..
আমি : ( চুপ)
অরিন : ওওও ভাবিইই কি ভাবছো
আমি : ওহ তুমি.. বলো
অরিন : কাঁদছো কেন? ( একটু অবাক হয়ে )
আমি : কই কাঁদছি?
অরিন : এই যে ( বলেই এক ফোটা চোখের পানি হাতে নিলো)
আমি : কখন পানি পড়লো খেয়াল করিনি
অরিন : কিছু হয়েছে ভাবি? বলোনা। তুমি তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তাইনা?
আমি : ভাবছি কতটা লাকি হলে এমন একটা পরিবার পাওয়া যায়।
অরিন : বাব্বাহ। পরিবার নাকি শুধু বর?
আমি : তোমার মতো ননদ। হাহাহা
অরিন : হাহাহা। আচ্ছা চলো তো
আমি : কোথায়?
অরিন : ফাহাদ ভাইয়া এসেছে?
আমি : সেটা আবার কে?
অরিন : আরে ভাইয়ার বন্ধু। চলো চলো
আমি : ফাহাদ ভাইয়া এসেছে তো তোমার মুখটা আনন্দ লেগে আছে ক্যান?
অরিন : আমার মুখটাই এমন..
আমি : বুঝি বুঝি
অরিন : ধ্যাত চলো তো
আমি : চলো
ফাহাদ ভাইয়ার সাথে কথা বলার সময় অরিন আর ভাইয়াকে খেয়াল করলাম। কিছু তো একটা ব্যাপার আছেই। ভাইয়া চলে যাওয়ার পর অরিনের মনটাও খারাপ হয়ে গেল। ফাহাদ ভাইয়া ছেলে হিসাবে অনেক ভালো। অনেক চুপচাপ, গম্ভীর প্রকৃতির। অন্য দিকে অরিন খুব অশান্ত, অনেক কথা বলে।
দুপুরে আবির কে ফোন দিলাম…
আবির: হুম পাখি বলো
আমি : পাখি কে? ( রেগে )
আবির : এখনই এতো সন্দেহ? আমার দেওয়া নাম টাও ভুলে গেছো?
আমি : না মানে… সরি
আবির : তো এই কয়দিন তো একবার ও ফোন দাওনি। আজ কি মনে করে
আমি : ধ্যাত। এই কয়দিন তো সব সময় সামনে থাকতেন।
আবির : ওওও হ্যাঁ তাই তো। আচ্ছা খাওনি কেন এখনো?
আমি : আমি বলেছি যে আমি খাইনি?
আবির : বেশি পাকনামি করো না পাখি। আমি জানি তুমি খাওনি। খেয়ে নাও। আর শোনো..
আমি : হু
আবির : আজ আসতে একটু লেইট হবে। টেনশন কইরোনা।
আমি : আচ্ছা।
আবির : বায়
খাওয়া শেষে…
আমি : বাবা আসবো?
বাবা: হ্যাঁ এসো মা
আমি : আপনার ওষুধ টা..
বাবা: কি জানো তো মা সারাদিন ঘরে বসে থেকেই শরীরটা আরও খারাপ হচ্ছে। আবিরের বয়সে আমরা দেশ ঘুরেছি আর এখন সব ঘর থেকেই বের হয় না।
আমি : মানুষ তো এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে
বাবা : তা যা বলেছো। আমরা তো রাতে ভুত খুজতে বের হতাম। হাহাহা
আমি : বাবা বলেন না গল্প গুলো
মা আসলো…
মা: কি গল্প হচ্ছে দুইজন?
বাবা: বউমা ভুতের গল্প শুনবে। তুমি শুনবা?
মা: না না আমার ভয় লাগে। আমি বরং অরিনের ঘরে যায়
মা চলে গেল। আমি আর বাবা একসাথে হেসে উঠলাম..
আমি : আচ্ছা বাবা এবার বলেন
বাবা:…………..
বাবার সাথে গল্প করতে করতে বিকাল হয়ে গেল। হঠাৎ মা এসে বলল
মা: বউমা তোমার মামা হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে গেছে। আমাদের এখনই যেতে হবে। তুমি একা থাকতে পারবে? সবাই একসাথে গেলে..
আমি : সমস্যা নেই মা। আপনারা সাবধানে যান
মা: আচ্ছা সাবধানে থেকো। আর আমি আবির কে বলে দিয়েছি তাড়াতাড়ি আসতে
আমি: আচ্ছা মা। মামার কি অবস্থা জানাবেন ।

সবাই চলে যাওয়ার পর পুরো বাড়িতে আমি একা। ভয় লাগছে। সাহস করে বলে তো দিলাম থাকতে পারবো কিন্তু এখন কি করবো?? তার উপর আবার বাবার কাছে ভুতের গল্প শুনলাম। হায় আল্লাহ এবার কি হবে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আবির বলল আসতে লেইট হবে। কি করব এবার?
হঠাৎ লোডশেডিং। যেটার ভয় পাচ্ছিলাম সেটাও হয়ে গেল। ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি। ঘরের এককোণে বসে কান্না করছি। কিসের শব্দ হলো? তাহলে কি ওই ভুত গুলো?? আল্লাহ বাচাও…
কেউ ডাকছে আমাকে। হঠাৎ হাত ধরে কেউ টান দিলো…
চলবে….