অপ্রত্যাশিত সম্পর্ক পর্ব :- ০৩

0
615

গল্প :- অপ্রত্যাশিত সম্পর্ক
পর্ব :- ০৩
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
.
-: আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অনেক রাত হয়ে গেলো। নাহ্ এবার ঘুমানো দরকার সকালে আবার অফিসে যেতে হবে। তাই সিগারেটা ফেলে দিয়ে ঘরে ডুকতে যাবো। কিন্তু ঘরে ডুকেই আমি অবাক হয়ে গেলাম কারন ঘরে ডুকতেই হঠাৎ কারো কান্নার আওয়াজ পেলাম।

কিন্তু ঘরে তো মিরা ছাড়া আর কেউ নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৩টার উপর। খুবই অবাক হলাম এতো রাতেও মিরা না ঘুমিয়ে কান্না করছে..?
আমি আর দেরি না করে ঘরের বাতিটা জ্বালালাম।
ঘর আলো হতেই দেখলাম মিরা খাটে বালিশে মুখ গুজে কান্না করছে। ঘরের আলো জ্বলতেই মিরা নড়েচড়ে উঠে বসে পড়লো। আর আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ও হয়তো ভাবেনি আমি এখনো জেগে আছি।

তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম।

–কি হলো মিরা এতো রাতে না ঘুমিয়ে কান্নাকাটি করছো কেন.?

মিরা নিশ্চুপ… (আর চোখ বেয়ে বেয়ে জল পড়ছে শুধু)

—কি হলো কথা বলছো না কেন.? (আবারো প্রশ্ন করলাম)

মিরা এবার চোখ মুছতে মুছতে বললো।

—না কিছুনা এমনিই।

আমিতো জানিই মিরা কেন কাঁদছিলো। তাই আর কথা না বাড়িয়ে বললাম।

–দেখ রাত না জেগে এখন শুয়ে পরো। না হলে আবার শরীর খারাপ করবে।

আমার কথা শুনে মিরা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো।

—তুমি এখনো ঘুমাওনি কেন.?

–আরে আমি ঐ একটু বেলকানিতে ছিলাম। তুমি শুয়ে পরো আমি আলো নিভিয়ে দিচ্ছি।

তারপর আমি বাতি নিভিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভাঙ্গে একটা মিষ্টি কন্ঠে। চোখ খুলতেই দেখি মিরা আমাকে ডাকছে। আমি তো মিরার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। ও হয়তো সদ্ধ গোসল করে এসেছে। চেহারাটা খুবই মায়াবী লাগছিলো।
ওর চুল হতে ভেসে আসছিলো মন মাতাল করা গ্রাণ। আমি যেন মুহুর্তে মিরার মুখের দিকে তাকিয়ে কোথাও হারিয়ে গেছি।
হঠাৎ তখন মিরার ডাকে আমার ঘোর কাটলো। মিরা বলতে লাগলো।

—নীলয় জলদি ওঠে রেডি হয়ে নাও। একটু আগে মা ডেকে গেছিলো।

কিন্তু মিরাকে এখনো মন মরা লাগছে। মুখে কোনো হাসি নেই। আমি উঠে বসতেই মিরা নিচে চলে যায়। আমিও ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলাম।
তারপর নিচে আসলাম। বাবা ডাইনিং টেবিলে বসে খবরের কাগজটাতে চোখ বুলাচ্ছে। মা আছে রান্নাঘরে আর মিরা তাকে সাহায্য করছে। আমার খুব ভালো লাগলো। কারণ এই প্রথম মিরা মায়ের সাথে রান্না ঘরে এসেছে। এতোদিন তো মিরা নিচেই বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া নামতো না। তারমানে মিরাও নিজেকে একটু সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি মুখে একটা হাসি নিয়ে বাবার পাশের চেয়ারটাতে বসে পড়লাম।

ভাইয়া চলে যাওয়ার পর আমাদের বাড়িতে কেমন যেন একটা গুমোট ভাব চলে এসেছে। কারো মুখে হাসি থাকে না। যেটা থাকে সেটা অনেক কষ্ট চাপা হাসি। যাই-হোক কোনোমতে নাস্তাটা শেষ করে আমি অফিসে চলে গেলাম।

অফিসে এসেই দরকারী কাজগুলো সেরে নিলাম। তারপর একটু রিলেক্স হওয়ার জন্য চেয়ারটাতে গা এলিয়ে দিয়ে চোখটা বন্ধ করলাম। তখনিই অনিকের ফোন। ফোন রিসিভ করার পর ওপাশ থেকে অনিক বলে উঠলো।

—কিরে নীলয় কি অবস্থা? বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো..? আসলে ভাই এতো বড়ো একটা দুঃসংবাদ শুনেও আমি আসতে পারিনি। কিছু মনে করিস না।
আর তুই তো জানিসই যে মা অসুস্থ। তাকে নিয়ে আমাকে সিঙ্গাপুর চলে আসতে হয়েছে।

–আরে না। এখানে মনে করার কিছুই নেই। আচ্ছা বল আন্টি কেমন আছে..?

—হুমম। আগের থেকে বেটার। আর তোর বাড়ির অবস্থা. ?

–আর বলিসনা। সবাই মন মরা হয়ে আছে। কারো মুখে কোনো হাসি নেই। আমি যে কি করি??

—হুমম। আচ্ছা নীলয় তুই একটা কাজ করতে পারিস। সবাইকে নিয়ে দূরে কোথাও একটা ঘুরে আয়।
যদি পারিস দেশের বাইরে যা সবাইকে নিয়ে। দেখবি সবার মন কিছুটা হলেও ভালো হবে।

–তুই বলছিস!

—হুমম। চেষ্টা করতে তো কোন ক্ষতি নেই। আমার মনে হয় এটা করাই ভালো হবে। বাকি তুই যা ভালো মনে করিস।

–হুমম দেখছি।

বলে ফোনটা রেখে দিলাম। আর ভাবতে লাগলাম অনিক হয়তো ঠিকই বলেছে। সবাইকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া উচিত। তাহলে নতুন জায়গা দেখে কিছুটা হলেও আনন্দে থাকবে সবাই। তাছাড়া বাড়িতে থাকলে সবাই ভাইয়ার সৃতিগুলো মনে করে করে কষ্ট পাবে। এই মুহুর্তে সবাই ভাইয়ার সৃতিগুলো থেকে যতদুরে থাকবে তাদের কষ্টটাও তত কম হবে।

এসব ভাবতে ভাবতে টিফিন ব্রেক হয়ে গেলো। আমি তখন মিরা খেয়েছে কিনা সেটা জানার জন্য তাকে ফোন দিলাম। ফোনটা কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর মিরা ফোন ধরলো।

—হ্যালো!

মিরার কন্ঠটা আমার কাছ কেমন যেন অদ্ভুত হয়ে ঠেকলো। হয়তো মিরা আবারও একা একা বসে কান্না করছিলো। তখন আমি বললাম,,

–কি হলো তোমার কন্ঠটা এমন লাগছে কেন?

মিরা হয়তো এই সময় আমার ফোন পেয়ে কিছুটা হলেও বিরক্ত হয়েছে। তাই বিরক্তি নিয়ে বললো,,

—কি হলো তুমি আমাকে এই সময়ে ফোন দিলে কেন?

–না মানে তুমি খেয়েছো কিনা, সেটা জানার জন্যই ফোন দিলাম আরকি।

—দেখো নীলয় আমার জন্য তোমাকে এতোটা চিন্তা করতে হবে না। আর আমায় নিয়ে এতোটা না ভাবলেই খুশি হবো। প্লিজ আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।

কথাগুলো বলেই মিরা ফোনটা রেখে দিলো। আমিতো শুধু ও খেয়েছে কিনা সেটাই জানতে চেয়েছিলাম। হয়তো আমারই ভুল হয়েছে মিরাকে এই মুহূর্তে ডিস্টার্ব করা ঠিক হয়নি। তাছাড়া মা তো ওর খেয়াল নিশ্চই রেখেছে। আমি খালি খালি চিন্তা করি। তারপর কেন্টিনে গিয়ে কিছু খেয়ে নিয়ে। আবারও নিজের কাজ করতে লাগলাম।

রাত্রে বাড়ি ফিরেই বাবার ঘরে গিয়ে বসলাম আর সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়ার কথাটা বলে ফেললাম। কিন্তু কথাটা বলে হয়তো ভুলই করেছি। কারণ বাবা বললেন।

—দেখ ইদানিং আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। আর তোর মাও হয়তো যেতে রাজি হবে না।

তখন আমি বললাম।

–ঠিক আছে। আমি তাহলে এখন আসি।

কিন্তু বাবা আমাকে আটকিয়ে দিয়ে বললো।

—আমরা যাচ্ছি নাতো কি হয়েছে। তুই আর বউমা যা গিয়ে কিছুদিন ঘুরে আায়।

–না বাবা সেটা কি করে হয়।

—না না তুই বউমাকে নিয়ে ঘুরতে যা। আমি অলরেডি তোদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছি।

–কিন্তু বাবা!

–কোন কিন্তু নয়। দেখ মিরা মেয়েটা সারাদিন মুখ গেমড়া করে ঘরে পরে থাকে। বাইরে কোথাও ঘুরতে গেলে ওর মনটা ভালো হয়ে যাবে। তুই আর না করিস না বাবা।

আমি কি আর বলবো আমি মাথা নাড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। বাবাতো কথা বলেই শেষ।
কিন্তু মিরা যদি হানিমুনে যাওয়ার কথাটা শুনতে পায় তাহলে আমায় নিয়ে কি ভাব্বে। ও তো প্রথম দিনই আমাকে না করে দিয়েছে। সে আমাকে স্বামী হিসেবে মানে না। শুধু বাবা-মার চাপে পরে আমাকে বিয়ে করছে।

দূর যা হওয়ার হবে। সেটা নিয়ে এখন টেনশন করে লাভ নেই। ঘরে গিয়ে দেখি মিরা ঘরে নেই। হয়তো নিচে গেছে। এতো সাতপাঁচ না ভেবে আমি ওয়াসরুমে গিয়ে আগে ফ্রেস হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিচে এলাম। কিন্তু মিরা তো এখানেও নেই। তাহলে মেয়েটা গেলো কৈ..?
তখন মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,

–আম্মু মিরা কোথায়?

উত্তরে আম্মু বললো।

—মিরা একটু ওর বাপের বাড়ি গেছে। আমিও আর না করিনি। সারাদিন ঘরে পড়ে থাকে। একটু বাইরে গেলো মনটা ভালো হবে। আর আমি বলে দিয়েছি যে তুইও রাতে ওদের বাড়ি চলে যাবি। আর রাতটা ওখানে কাটিয়ে পরেরদিন মিরাকে নিয়ে ফিরে আসবি।

–আরে আম্মু আমি আবার শুধু শুধু ওদের বাড়ি যাবো কেন.?

—শুনো ছেলের কথা। আরে মেয়েটা একা একা ঐ বাড়ি যাবে। আবার একা একা ফিরবে। ওর বাড়ির লোকেরা কি মনে করবে.?

আমি আর আম্মুকে কিছু বললাম না। সোজা রুমে চলে এলাম। আর এসে মিরাকে ফোন দিলাম। কিন্তু ফোন রিং হচ্ছে ফোন কেউ ধরছে না।

তারপর আমি সন্ধায় প্রায় ৮টার দিকে মিরাদের বাড়িতে উপস্থিত হলাম। (অবশ্য এখন আমার শ্বশুড় বাড়ি) গিয়ে হাজির হই। শ্বশুড়-শাশুড়ি আমাকে দেখে বেজায় খুশি। সবার সাথে আমি কূশলবিনিময়টা সেরে নিলাম। তখন শ্বাশুড়ি বললেন।

—যাও বাবা মিরা রুমেই আছে। ওখানে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে আসো। আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।

আমিও বাধ্য ছেলের মতো উপরে মিরার রুমের দিকে পা বাড়ালাম। মিরার ঘরের দরজার সামনে যেতেই ভেতর থেকে কয়েকটা মেয়ের হাসির আওয়াজ আসছে। কিন্তু তাদের মিলিতো হাসির মাঝে মিরার হাসিটা আমি ভালো করেই ধরতে পেরেছি।
সত্যি মিরার হাসিটা সবার থেকে আলাদা। মনটা ভালো হয়ে গেলো মুহুর্তে। অনেকদিন পর মিরার হাসিটা শুনতে পেলাম। কিন্তু এখন যে তার হাসি মুখটাও দেখতে ইচ্ছে করছে। তাই আমি দরজার ভেতরে মুখ বাড়ালাম। তাকিয়ে দেখি মিরার সাথে তার কিছু কাজিন বসে খুব গল্প করছে। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষন করার পর বুঝলাম,, ওর কাজিনরা প্রায় জোর করেই মিরাকে হাঁসাচ্ছে। একটা মানুষ কতক্ষণ মুখ ভার করে বসে থাকতে পারে। যদি সামনে কেউ একেরপর এক হাসির কথা বলে যায়। আর তাছারা নিজের বন্ধুদের সামনে বেশিক্ষণ মুখ ভার করে থাকাও যায় না।

তখন হঠাৎ করে মিরার এক কাজিন আমাকে দেখে ফেলে। আর সাথে সাথেই বলে উঠলো।

—আরে দুলাভাই আপনি এসে পরেছেন.? আমরা তো এতোক্ষন আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আমিও মুখে একটা হাসি নিয়ে ভিতরে ডুকলাম। ওদের সাথে বসে কিছুক্ষণ গল্প করলাম। তারপর ওরা চলে যায়। সবাই চলে যেতেই মিরা আমাকে বলে উঠলো।

—তুমি এখানে কেন এসেছো..?

–মানে কি? আম্মু ই তো বললো এখানে আসতে। আর কালকে তোমাকে নিয়ে যেতে।

কথাটা শুনে মিরার মুখটাতে বিরক্তির একটা ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠলো। আর যখনি আমাকে কিছু বলতে যাবে তখন নিচে থেকে ডাক পড়লো, নিচে যাওয়ার জন্য। তাই আমি ওয়াসরুমে ডুকে যাই ফ্রেস হতে। আমি ভেবে পাইনা মিরা আমাকে সহ্য করতে পারেনা কেন.?
আমি আজ পর্যন্ত ওর সাথে কোনো খারাপ আচরণ করিনি। তাহলে কেন এমন করে..? কি জানি…?

তারপর ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে দেখি মিরা আমার জন্য ওয়েট করছিলো। আমি বের হতেই বললো।

—জলদি চলো। সবাই আমাদের জন্য খাবার টেবিলে ওয়েট করছে। আমিও সাথে সাথে মিরার পিছন পিছন নিচে গেলাম।

খাবার টেবিলে বসে তো আমি অবাক। খাবারের আয়োজন তো মাশা,আল্লাহ বিশাল। আর সব কিছুই আমার পছন্দের। তারপর ওদের জামাই আদরে খাবার শেষ করে রুমে চলে এলাম। হয়তো একটু বেশিই খাওয়া হয়ে গেছে। তাই এসেই বিছানায় শুয়ে পরলাম। কিছুক্ষণ পর মিরাও রুমে আসলো।

আর এসেই চেঁচিয়ে উঠে বললো।

—একি তুমি আমার বিছানায় কি করছো? নামো বলছি..?

আমি শুয়ে থেকেই বললাম।

–কি আশ্চর্য। তাহলে আমি ঘুমাবোটা কোথায়। তোমার ঘরেতো সোফাও নেই।

—নেই তো কি হয়েছে। নিচে ফ্লোরে চাদর বিছিয়ে শুয়ে পড়ো। আমি তোমার সাথে একই বিছানায় ঘুমাতে পারবো না।

–আমার সাথে এক বিছানায় শুতে প্রবলেমটা কোথায়? দেখো বিয়েটা যেভাবেই হোক আমি এখন তোমার স্বামী। আর ভয় পেওনা আমিতো তোমাকে আর কিছু করছি না। যদি তারপরও তোমার সমস্যা হয় তাহলে তুমি নিচেই বিছানা করে শুয়ে পরো। আমার ফ্লোরে তেমন ঘুম আসেনা।

(এখন বিরক্ত লাগছে আমার এই মেয়েটার ব্যবহার দেখে?)
.
.
(গল্পের মধ্যখানে ডিস্টার্ব করার জন্য দুঃখীত.! আমার Height মাশা’আল্লাহ্ 5 ফিট 7 ইঞ্চি.. সো আর লম্বা হওয়ার কোন ইচ্ছা নাই..!! এজন্য একটা রিকুয়েস্ট যারা আমার Friend Request পেয়েছেন কষ্ট করে সবাই নিজ দায়িত্বে Accept করে নিয়েন, ঝুলাইয়েন না প্লিজ। নতুন আইডি..)
.
.
তখন মিরা বলে উঠলো।

—এইটা আমার রুম। আর বিছানাটাও আমার। তাই ভালোয় ভালোয় বলছি নেমে পড়ো। নয়তো..

–নয়তো কি হুম। গতকাল তো আমার ঘরে আমার বিছানাতে ঘুমিয়েছিলে আর আমি সোফায় ঘুমিয়েছিলাম। তখন কিছু বলে ছিলাম তোমাকে..? আমার ফ্লোরে শুতে প্রবলেম হয় সেইজন্যই এমনটা করছি। এতোটা স্বার্থপর কেনো তুমি হুম?

—কি আমি স্বার্থপর। মনে নেই কালকে তুমিই আমাকে বিছানায় শুতে বলেছিলে।?

আমি আর কি বলবো। কথাতো ঠিকই গতকালকে আবেগের ঠেলায় ওকে বিছানাতে ঘুমাতে বলেছিলাম। তাই এখনও আমাকে নিচেই শুতে হবে। বিছানা থেকে একটা চাদর আর বালিশ নিয়ে নিচেই শুয়ে পড়লাম। আর মহারানী বিজয়িনীর হাসি নিয়ে বিছানাতে।

তবে যাই হোক। মিরা আস্তে আস্তে আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। ওর মধ্যে আগের সেই চঞ্চলাতা ফিরে আসছে। কিন্তু আমি চিন্তা করছি আগামীকাল বাড়ি গিয়ে যখন শুনতে পারবে যে বাবা আমাদের হানিমুনে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। তখন মিরার রিএকশন কি হবে??

রাতে আর আমার ভালো ঘুম হলো না। শুয়া থেকে উঠতেই বুঝতে পারলাম, পিঠটা ব্যাথায় টনটন করে উঠছে। মারে.. কি ব্যাথা!?
অবশ্য ব্যাথা হওয়ারই কথা। কারণ সারা রাত খটখটে শক্ত জায়গায় ঘুমিয়েছিলাম। তারপর বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। উঠে দাঁড়াতেই চোখ গেলো খাটের দিকে মিরার উপর। কি নিশ্পাপ শিশুর মতো চেহারা। ইচ্ছে করে সারাজীবন ঐ চেহারার মায়ায় ডুবে থাকি। খুব ভালোবাসি মেয়েটাকে। কিন্তু মিরা আমার পবিত্র ভালোবাসাকে কখনো বুঝারই চেষ্টাও করেনি।

তখন হঠাৎ ই মিরা একটু নড়ে উঠলো। আর তার কানের কাছের চুলগুলো এসে তার মুখটা ঢেকে দিলো। আজ পর্যন্ত ওকে টাচ করারও সাহস করিনি।
কিন্তু আজকে খুব ইচ্ছে করছে ওর গাল বেয়ে আসা চুলগুলোকে আবার কানে গুজে দিতে।
আমি আর নিজের ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখতে পারলাম না। তাই ধীরেধীরে খাটে গিয়ে মিরার পাশে বসলাম। এরপর হাত দিয়ে আস্তে করে ওর চুলগুলোকে আবার কানে গুজে দিলাম। কিন্তু চুলগুলো গুজতে দেরি হয়েছে, মিরার ঘুম ভাঙ্গতে দেরি হয়নি।
চোখ খুলে মিরা আমাকে তার এতো কাছে দেখে চমকে উঠে। সাথে সাথে উঠে বসে পরে। আর রাগে চোখ লাল করে আমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো। আর বলতে লাগলো।

—ছিঃ নীলয় ছিঃ! আমি তোমাকে ভালো মনে করেছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে ঘুমের মধ্যে পেয়ে..ছিঃ! তোমার চরিত্র যে এতোটা খারাপ আমি ভাবতেও পারছি না।

মিরা আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই কথাগুলো বলে গেলো। যখন আমি কিছু বলতে যাবো, তখনি দরজার বাইরে থেকে মিরার মা ডাকতে লাগলো। আর মিরা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। তারপর শ্বাশুড়ি আম্মু এসে বলতে লাগলেন।

—মিরা জামাই বাবাকে নিয়ে নিচে আয়। আমি নাস্তা লাগাচ্ছি।

উনি চলে যাওয়ার পর মিরা আমার কাছে এসে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললো।

—যাও গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসো।

আমি বললাম।

–মিরা তুমি যেটা ভাবছো তেমন কিছুই…

কিন্তু মিরা আমাকে থামিয়ে দিয়ে মিরা বললো।

—আর বলতে হবে না। তোমাকে আমার চেনা হয়ে গেছে।? যাও গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসো। নিচে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।

তারপর আমি নিরাশ হয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলাম।
আমি বেরিয়ে আসতেই মিরাও ওয়াসরুমে ডুকলো। আমি হাত-মুখ মুছে বিছানার উপর গিয়ে বসলাম। ভাবছি কতো সহজে মানুষের মনে অবিশ্বাস তৈরি হয়ে যায়। এভাবে জোড় করে কিছু পেতে চাইলে তো আমি প্রথম দিনই নিয়ে নিতাম। আমিতো মিরাকে ভালোবাসি। আর আমি চাই মিরাও আমাকে ভালোবাসুক। এভাবে জোর করে আমি কিছুই চাই না।
বলতে বলতেই মিরা বাইরে বেরিয়ে এলো। আর বললো।

—চলো নিচে চলো।

এরপর নিচে গিয়ে নাস্তাটা সেরে নিলাম। তারপর আমি একটু বাইরে হাঁটতে বের হলাম। কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক হাঁটাহাঁটি করে আবার ফেরত চলে এলাম। তারপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মিরাকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।

মিরাকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে আমি অফিসে চলে গেলাম। আজকে অফিসে কাজের চাপ একটু বেশি। তাই কাজ করতে করতে কখন যে সময় পার হয়ে গেলো টেরই পাইনি। গুরত্বপূর্ণ কাজগুলো শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি,, ১:৩০. নাহ্ এখন আর কাজ করতে ভালো লাগছে না। খাওয়া-দাওয়ার পর যা কাজ আছে করবো। যেই ভাবা সেই কাজ। কেন্টিনে এগুতেই ফোনটা বেজে উঠলো। ধরতেই ওপাশ থেকে আম্মু বললেন।

—নীলয় বাবা আজকে লাঞ্চটা বাড়িতে কর,,

–কেন মা?

—বললাম করতে তাই করবি সারপ্রাইজ আছে!!

–আচ্ছা আম্মু আমি আসছি,

তারপর বাড়িতে গিয়ে লাঞ্চটা করার জন্য আমিও সাথে সাথেই রওনা দিলাম। বাড়িতে পৌছে দেখি সবাই খাবার খাওয়ার জন্যই টেবিলে বসে আছে। হয়তো আমার জন্যই অপেক্ষা করছে। আমি গিয়ে বাবার পাশে বসে পরলাম। তখন খাওয়া-দাওয়ার এক মুহূর্তে বাবা আমার দিকে একটা খাম এগিয়ে দিলেন। আমি তার দিকে তাকাতেই বললেন। এতে নাকি আমাদের হানিমুনে যাওয়ার টিকিট আছে। তখন আমি খামটা না নিয়েই মিরার দিকে তাকালাম। দেখালম ও একেবারে স্বাভাবিক। কি হলো. ? এতো বড় একটা কথা শুনার পরও মিরার চোখে-চেহারায় কোনো-রকম পরিবর্তন নেই! তখন মা বললেন।

—ঐভাবে বৌমার দিকে কেন তাকিয়ে আছিস. ?
মিরাকে আমি আগেই সবটা বলেছি।

আম্মুর কথাটা শুনে খুব অবাক লাগছে, তাহলে মিরা.?
তখন আর কি.? পরে ভাবা যাবে,,
তারপর আমি খাবারটা ধীরে-সুস্থে শেষ করে নিজের রুমের দিকে গেলাম। মিরা আগেই রুমে চলে এসেছে। আমি রুমে ডুকতেই মিরা তড়িৎ গতিতে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

–দরজা কেন বন্ধ করলে…?
.
.
চলবে…………………………♥
.
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টতে দেখার অনুরোধ রইলো)