অপ্রত্যাশিত সম্পর্ক পর্ব :- ১২ এবং শেষ

0
1653

গল্প :- অপ্রত্যাশিত সম্পর্ক
পর্ব :- ১২ এবং শেষ
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
.
-: ধুর….!
কি আর করা বাতিটা বন্ধ করে দিলাম। এবং দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মিরার পাশে গিয়ে শুয়ে পরলাম।
আর মিরা উল্টো দিকে ফিরে শুয়ে আছে। মন তো চাইছে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু পেরে উঠছি না। আবার ঘুমও আসছে না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার পরও মিরার কাছে যেতে পারছি না। এপাশ-ওপাশ করেই সময় পার করছি। তখন মিরা বলে উঠলো।

—নীলয় কিহলো? এভাবে নড়াচরা করছো কেন? আমিতো ঘুমাতে পারছি না।

কিন্তু আমি কোনো জবাব না দিয়ে শুয়ে রইলাম। তখন মিরা আবারো বললো।

—কি হলো নীলয় কথা বলছো না কেন?

কিন্তু তারপরেও আমার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে মিরাও চুপ করে গেলো। এর কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করেই মিরা বলে উঠলো।

—কেউ যদি আমাকে জড়িয়ে ধরতে চায় ধরতে পারে আমি কিছু বলবো না।

তো আর কি গ্রীন সিগনাল পেয়েতো আমি আর বসে থাকবো না তাই না…….
.
.
.
সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গলো কপালে মিরার উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়ায়। মিরা হয়তো ভাবেনি যে আমার ঘুম ভেঙ্গে যাবে। আমি চোখ খুলতেই মিরা লজ্জা পেয়ে উঠে যাচ্ছিলো। তখনি আমি মিরার হাত ধরে টান দিয়ে আবার আমার কাছে নিয়ে এলাম। তারপর জড়িয়ে ধরালাম আর মিরা এখন আমার এতোটা কাছে যে…
ওর প্রতিটা গরম নিশ্বাস আমার মুখের উপর পড়ছে। আর মিরা হয়তো এইমাত্র গোসল সেরে এসেছে।
ভেজা চুলে মিরাকে যা লাগছে না খুবই আকর্ষনীয় লাগছে। আমি আমার হাতটা মিরার কোমড়ে রাখতেই মিরা কিছুটা কেপে উঠে চোখ বন্ধ করে নেয়। আর ওর গোলাপী ঠোটজোড়া কাঁপতে থাকে। এখন আমি কি আর সহ্য করতে পারি বলেন.।
মিরার ঐ গোলাপী ঠোঁটগুলো যেন আমাকে চুম্বকের মতো টানছে। তাই আমি দেরী করতে চাচ্ছি না..
তাই আমি যেই মিরাকে কিস করতে যাবো এমনি মিরা আমার মুখে হাত দিয়ে নাকে একটা কামড় দিয়ে বললো।

—নীলয় জলদি উঠে ফ্রেস হয়ে নাও মিস্টার ডেভিল।আম্মু নিচে যাওয়ার জন্য ডেকে গিয়েছিলেন।

তারপর একটা মুচকি হাসি দিয়ে মিরা নিচে চলে গেলো। দূর এটা কোন কথা…..রোমান্সটাই হলো না..
এরপর আমি উঠে আরমোড়া ভেঙ্গে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৮টা বাজতে চলেছে।

এরে উঠতে অনেকটা দেরী হয়ে গেলো। তখনি আমার ফোনটা বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখলাম মিরার মায়ের ফোন। ফোন ধরে কোষল বিনিময় করারলাম শ্বাশুড়ি আম্মুর সাথে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন মিরা কোথায়? তখন আমি বললাম।

–মিরা এইমাত্র নিচে গেলো মা। আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি।

তারপর মিরাকে দুটো ডাক দিতেই চলে এলো। তারপর মিরাকে ফোনটা দিয়ে আমি ওয়াসরুমে চলে গেলাম।
তারপর ফ্রেস হয়ে নিচে নাস্তা করতে চলে গেলাম।
আর সবার সাথে নাস্তা করার পর আমি উপরে চলে এলাম। আর অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম।
তখন মিরাও ঘরে এসে বললো।

—নীলয় একটু আগে মা ফোনে বলছিলো বাড়িতে যাওয়ার জন্য। তুমিকি যেতে পারবে?(মিরা)

–যেতে তো হবেই।(আমি)
মিলি আর মুন্না ভাইয়ার ব্যাপারটা তোমার বাবাকে আজকেই জানাতে হবে। দেরী করলে জটিলতা বেড়ে যেতে পারে।
মিরা তখন সাথে সাথেই খুশি হয়ে বললো।

—তো কখন যাচ্ছি আমরা?

–এখনি যাবো।

—তাহলে তোমার অফিস ?

–তেমন কোনো চাপ নেই অফিসে। তুমি জলদি রেডি হয়ে নাও।

তারপর মিরা ঠিক আছে বলে রুমেই শাড়ি খুলা শুরু করলো।

–আরে আরে কি করছো?

—কেন? শাড়ি চেঞ্জ করবো না।

–হ্যাঁ করো..! কিন্তু ওয়াসরুমে তো যাও আগে।

তারপর মিরা মুখটা বাকিয়ে বললো..

—আমি এখানেই করবো। তোমার কোনো সমস্যা ?

–আরে আমার আবার কি সমস্যা হবে।
আমার চোখের সামনে এসব করলে যদি কিছু হয় তাহলে তো তোমার সাথেই হবে।

কথাটা শুনে মিরা মনে হয় কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেছে।
তারপর বললো..!

—যাহ্ শয়তান কোথাকার। যাও নিচে গিয়ে গাড়ি বের করো আমি আসছি।

তারপর আমি আর কথা না বাড়িয়ে নিচে চলে এলাম। গাড়িটা বের করে মিরার জন্য বসে রইলাম। একটু পর মিরাও চলে এলো।

আরে এই মেয়েটাকে যতোবার দেখি ততবারই তার প্রেমে পড়ে যাই। হলকা মেকাপে আজ মিরাকে যেন অদ্ভুত সুন্দরী লাগছে। একদম অপ্সরী মন চাই সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকতে.. মিরার ঐ মায়া ভরা চেহারার দিকে।

—ও হ্যালো মিস্টার ডেভিল! আমরা যাবো না।

মিরার ডাকে হঠাৎ সতর্ক হয়ে উঠলাম। তারপর বললাম..!

–হ্যাঁ হ্যাঁ যাচ্ছি।

তখন আমি মিরার দিকে তাকিয়ে দেখি ও মুচকি মুচকি হাসছে। যাইহোক তারপর আমরা মিরাদের বাড়িতে পৌছে গেলাম।
এখন আমি, মিরা,মুন্না ভাইয়া, আর মিরার বাবা-মা,
আমরা সবাই সামনা সামনি বসে আছি। ভাবছি মুন্না আর মিলির কথাটা বলে ফেলি। তখনি আমার শ্বশুড় মশাই বলে উঠলো।

—বাবা নীলয়! তোমাদের কাউকে না জানিয়েই আমি মুন্নার জন্য মেয়ে ঠিক করে ফেলেছি। মেয়ে দেখতে সুন্দরী, শিক্ষিত আর বেশ গুণীও। সবচেয়ে বড় কথা মেয়েটার বংশ ভালো। তোমরা মেয়েটাকে দেখলে তোমাদেরও পছন্দ হবে। আজকে আমি মেয়ের বাবা-মা আর মেয়েকে এখানে আসতে বলেছি। তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো এসে পড়বে।

এদিকে আমি মনে মনে ভাবলাম মেয়ের বাড়ির লোক এখানে আসার আগেই আসল কথাটা ওনাকে জানিয়ে দিতে হবে। তাই আমি বললাম।

–আসলে বাবা মুন্না ভাইয়া…

কথাটা বলার আগেই,,ঢং ঢং ঢং আওয়াজ করে কলিং বেল বাজতে লাগলো। শ্বশুড় মশাই হাসি মুখে উঠে দরজার দিকে এগুতে এগুতে বললো।

—এই ওনার হয়তো চলে এলেন।

ওনি উঠে যেতেই মুন্না ভাইয়া আমাদের বললো।

—নীলয় মিরা তোমরা কিছু বলছো না কেন?
কিছু একটা করো প্লিজ। এই বিয়েটা বন্ধ করো। এখন মেয়েটা যদি আমাকে বিয়ে করতে বলে। আমি কিন্তু বাবার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবো না।(মুন্না)

—ভাইয়া দাড়া..!
মেয়েটাকে আসতে দে। ওর সামনেই সবকিছু বলে দিবো। তাহলে সব ঝামেলা একেবারে শেষ হয়ে যাবে।(মিরা)

আর হঠাৎ তখনি আমার চোখ দরজার দিকে যেতেই দরজায় আমার চোখ আটকে গেলো। আমি দেখলাম পাত্রীসহ পাত্রীর বাড়ির লোকেরা দরজা দিয়ে ডুকে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
আর আমি পাত্রীর মুখের দিকে হায়ায়ায়ায়ায়া করে তাকিয়ে আছি।

তবে ইনি সত্যিই পাত্রী নাকি…?
ঠিক বুঝতে পারছি না। কিন্তু আংকেল আন্টির সাথে এনাকে ছাড়া তো আর কাউকেতো দেখতে পারছি না।
আমি এসব কিছু ভাবতে ভবতে তারা আমাদের সামনে এসে পড়লো। আমি আর থাকতে পারলাম না। তখন শ্বশুড় মশাইকে বলেই ফেললাম।

–বাবা পাত্রীর বয়স একটু বেশিই মনে হচ্ছে না?(আমি)

আমার কথা শুনে শ্বশুড় মশাই, এবং পাত্রীসহ তার বাড়ির লোক আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন আমি কি না কি বলে ফেলেছি। পরক্ষণেই সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না যে আমি এমনকি বললাম। আর এখানেতো হাসির কিছুই দেখছি না। তখন শ্বশুড় মশাই বলে উঠলো।

—জামাই তুমি পারোও বটে। ইনাকে দেখে তোমার পাত্রী মনে হচ্ছে.? আরে ইনিতো পাত্রীর খালা হন।

তারপর শ্বশুর বাবা সিরিয়াস চেহারা নিয়ে বললো।

—কি ভাই রিয়া মা’কি আসেনি। ও কোথায়?

কথাটা শুনে ওরা সবাই কিছুক্ষণ নিরব হয়ে রইলেন। তখন পাত্রীর খালা বলে উঠলো।

—আসলে কি করে যে আপনাদের কথাটা বলি?
আসলে রিয়া এই বিয়েটা করতে চাইছে না। ও আসলে অন্য কাউকে ভালোবাসে। আপনারা প্লিজ কিছু মনে করবেন না। বুঝতেই তো পারছেন আজকালকার ছেলেমেয়ে যেমন হয় আরকি।(পাত্রীর খালা)

কথাটা শুনে হঠাৎ আমার শ্বশুর মশাইয়ের মুখ থেকে হাসিটা চলে গেলো। তারপর বললো।

—কি বলছেন কি আপনারা..?
এতোটা এগিয়ে আসার পর এমন কথা বলছেন।

শ্বশুড় মশাইয়ের কথা শুনে মনে হচ্ছে শ্বশুড় মশাই কিছুটা অপমানিত বোধ করছেন। তাই ওনিও পাত্রীর বাড়ির লোকেদের কথা শুনাতে লাগলেন। তবে আমাদের জন্য তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। লোহা গরম আছে তাই আমিও সু্যোগ বুঝে কথাটা বলে দিলাম।

–বাবা আপনি এদের সাথে এতো কথা বলছেন কেন..? মুন্না ভাইয়ার জন্য ঐ মেয়ের চেয়ে ভালো মেয়ে নিয়ে আসবো আমরা। ছাড়ুন এসব।(আমি)

তারপর অযাচিত অতিথি বিদায় করার পর শ্বশুর মশাই আমার কাছে এসে বললো।

—বাবা নীলয় তোমার জানাশোনা কোনো মেয়ে আছে নাকি.?(শ্বশুড় মশাই)

তখন সাথে সাথে আমার মুখ থেকে মিরা কথাটা ছিনিয়ে নিয়ে বললো।

—আছে তো বাবা।
নীলয়ের একটা কাজিন আছে নাম মিলি। খুব ভালো মেয়ে। দেখবে তোমারও খুব ভালো লাগবে।(মিরা)

এরপর আরকি? মিলি-মুন্নার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো।
আর আজকে তাদের বিয়েটাও হয়ে গেলো। মিরা আর ওর কাজিনরা গেলো মিলি আর-মুন্না ভাইয়াকে বাসর ঘরে দিয়ে আসতে।
আর আমি মিরার ঘরে বসে বসে মিরার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষন পর দেখলাম মিরাও হাসি মুখে ঘরে ডুকলো। আর ঘরে ডুকেই খাটে বসে বলতে লাগলো…..!!

—ওফ বাবা!
এতোক্ষণে সব জামেলা শেষ হলো। কতোটা সহজভাবে মিলি আর ভাইয়ার বিয়েটা হয়ে গেলো। আমারা তো ভেবেছিলাম কতো না জামেলা হবে। কিন্তু কি হলো দেখো..! আর এই নীলয় জানো ভাইয়া বাসরঘরে ডুকতে এতোটাই লজ্জা পাচ্ছিলোনা কি যে বলবো তোমাকে।
আমরা একপ্রকার খুব জোরাজোরি করে তারপর ভাইয়াকে ডুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে এসেছি। হি হি…………………
যাক বাবা সব কিছু ভালোয় ভালোয় হয়ে গেছে।
আশাকরি তাদের বাসরটাও ভালো কাটবে।

—এই কিহলো? তুমি কিছু বলছো না যে।(মিরা)

তখন আমি একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললাম

–আর বাসর রাত.!(আমি)

মিরা তখন ভ্রুটা কুচকে বললো।

—কি হলো তুমি এভাবে বলছো কেন?

–না কিছুনা।

—কিছুনা মানে। বলো কি হয়েছে?

–আরে বললাম তো কিছু না।

—আচ্ছা ঠিক আছে

এরপর মিরা আমার কাছে এসে আমার বুকে মাথাটা রেখে বললো।

—নীলয় একটা কথা বলবো?

–হুম বলো।

—বলছি যে আমাদের বিয়ের দিন তো আমাদের বাসররাতটা নষ্ট হয়ে গেছিলো তাইনা।

–হ্যাঁ..! তো কি হয়েছে।

—তুমি ঐদিন আমার কথাগুলো শুনে অনেক কষ্ট পেয়েছিলে তাই না।

তারপর আমি আর কিছু বলার আগেই মিরা বলে উঠলো…..

—না করে লাভ নেই? ঐদিন তোমার মুখ দেখেই আমি সব বুঝতে পেরে গেছিলাম। আর তুমি যে আমাকে কতোটা ভালোবাসতে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারতাম।

–হুম ভালো..!! কিন্তু তুমি আজকে এসব বলছো কেন?

—বলছি চলো না আমরা ঐদিনের বাসররাতটা আজকে পালন করি।

–মানে কি বলছো তুমি?

—শুনতে পেলেনা আমরা আজকে বাসররাত পালন করবো।

তখন আমি মিরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম।

–ঠিক আছে। চলো তাহলে..

তারপর মিরা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো..

—জ্বী না এভাবে না। বাসররাত বাসর রাতের মতোই হবে।

–মানে?

তারপর মিরা আমার সামনে আসন পেতে বসে বললো।

—মানে হলো মিস্টার ডেভিল আমি নতুন বউয়ের মতো সেজে লাল শাড়ি পড়ে বিছানাতে বসে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। তারপর তুমি শেরওয়ানি পড়ে ঘরে ডুকবে। তখন আমি উঠে গিয়ে তোমাকে সালাম করতে যাবো। আর তুমি আমাকে ধরে বলবে মিরা তোমার জায়গা ওখনে নয়, আমার বুকে।

আমি মিরা কথাগুলো শুনে আমি বেশ মজা পাচ্ছি। তাই উৎসুক শ্রোতাদের মতো বললাম।

–হ্যাঁ হ্যাঁ তারপর তারপর।

—তারপর আমরা বিছানাতে যাবো। আর একে-অপরের সম্পর্কে নতুন করে জানবো। রাত যখন একটু গভীর হবে তখন আমরা ছাদে যাবো চাঁদ দেখতে। ছাদটা চাদের আলোয় আলোকিত হয়ে থাকবে। আমরা দোলনাতে বসবো। অনেক অনেক কথা বলবো। ঠিক তখনি আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়বে। আমরা দুজনে সেই বৃষ্টিতে একসাথে ভিজবো।

–আরে আরে মিরা থামো থামো।
সবকিছু তো ঠিকই আছে। কিন্তু চাঁদের আলো আর বৃষ্টি একসাথে কি করে থাকতে পারে? এখন একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না।

এরপর মিরা আমার দিকে এমনভাবে তাকলো যে আর কিছুই মুখ দিয়ে বেরুলো না। তারপর হঠাৎই মিরা আবেগে আপ্লুত হয়ে বললো.!

—এই জানো নীলয় ছোটবেলা থেকেই আমি এমন বাসররাতের স্বপ্ন দেখতাম।

–কিন্তু এখন এতোকিছুর এরেন্জমেন্ট কি করে করবো।

—আরে তোমাকে কিছু করতে হবে না। আমি সব করে রেখেছি।

তারপর মিরা আলমারি থেকে একটা প্যাকেট বের করে আমার হাতে দিয়ে বললো।

এটা পরে নাও। আর ঠিক ৪০ মিনিট পর সিড়ির পাশের ঘরটাতে চলে আসবে। ঠিক আছে? তারপর এটা বলে মিরা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
.
.
#প্রায়_চল্লিশ_মিনিট_পর–

আমি শেরওয়ানি পরে তৈরি হয়ে দ্বিতীয় বারের মতো বাসর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। যতই হোক বাসরঘর বলে কথা। আমার নার্ভাস লাগছে বৈকি। তারপর আস্তে করে দরজাটা ঠেলে ভিতরে ডুকলাম। ডুকেতো আমি অবাক। পুরো ঘর হরেক রকম ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। দেয়ালে ঝুলছে রঙ্গিন ডীমবাতি। আর সুসজ্জিত খাটের ঠিক মাঝখানে আমার সপ্নের পরীটা বসে আছে। বুকের ভেতর একটা চাপা উত্তেজনা ঢোল বাজাচ্ছে। আমি খাটের একটু কাছে আসতেই মিরা বড় গোমটা দিয়ে নিচে এসে আমাকে সালাম করলো। আমিও মিরাকে তুলে সেই ফিল্মি ডায়লগটা দিলাম। মানে মিরা যেমনটা চাইতো আরকি।

তারপর ওখনে দাঁড়িয়ে থেকেই মিরার ঘুমটা সরালাম। বাঃহ! আমার মিষ্টি বউটাকে তো আজকে অনেক সুন্দর লাগছে।
মিরা লজ্জা পেয়ে আমার বুকে একটা কিল বসিয়ে বুকেই মুখটা লুকালো। তারপর মিরাকে নিয়ে খাটের উপর বসলাম।
আমরা কি কথা বলবো এক-অপরের সম্পর্কেতো সবই জানি। আমি কি বলবো ঠিক বুজতে পারছি না।
এরপর মিরাই কথা বলা শুরু করলো। তখন আমিও তারসাথে যোগ দিলাম।
আচ্ছা এবারতো ছাদে যাওয়ার পালা। কিন্তু এবার মিরা বায়না ধরলো কোলে করে ছাদে নিয়ে যেতে হবে।

ওফ! মিরা যে এতোটা ভারি। আজকে কোলে না নিলে বুঝতেই পারতাম না। ছাদে উঠেই মিরাকে নামিয়ে দিলাম। আর বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছি। তখন মিরা বললো।

—কিহলো এইটুকু এসেই এই অবস্থা।

–তুমি কি করে বুঝবে আমার অবস্থা। আলুর বস্তা নিয়েতো আমি উপরে এসেছি।

(মনে মনে বললাম আরকি। না হলে আমার এবারের বাসরটিও মাটি হয়ে যাবে)

তারপ ছাদে দাঁড়িয়ে বললাম।

–আরে না না। আমি ঠিক আছি। কিন্তু আমরা একটা বিষয় ভুলেই গেছলাম যে এইবাড়িতে আরেরকটা বাসরও হচ্ছে।

তাকিয়ে দেখলাম মিলি আর মুন্না ভাইয়া আগে থেকেই দোলনা দখল করে বসে আছে। তারপর মিরা আমার দিকে তাকিয়ে বললো।

—দাঁড়াও ওদেরকে আমি এখনি বিদায় করছি।

বলে মিরা এগিয়ে যেতেই আমি ওর হাত ধরে ফেললাম। তারপর বললাম।

–ছাড়ো না মিরা ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দাও।

—কিন্তু দোলানা?

আমি সাথে সাথে মিরাকে কোলে তুলে নিয়ে বললাম.!

–এইবার ঠিক আছে।

মিরাও একটা হাসি দিয়ে বললো।

–হুম।

তারপর মিরাকে নিয়ে আমি ছাদের অন্য কোনায় বেন্জিটাতে গিয়ে বসলাম। মিরা আমার কোলে বসে আছে। আর চাঁদের জোসনা যেন পুরে ছাদটাতে চুইয়ে চুইয়ে পরছে। বাতাস যেন শরীরের প্রতেকটা লোমে শিহরণ জাগিয়ে তুলছে। এমন একটা মুহূর্তে নিজের প্রিয় মানুষটার সাথে থাকাটা সবারই কাম্য।
প্রেম করার মতো এর চেয়ে ভালো পরিবেশ আর হতেই পারে না। আজকে যেন আমরা একে-অপরকে আবার নতুন করে জানলাম। মিরাকে যেন আজকে ছাড়তেই ইচ্ছে করছে না।

ঠিক তখনি আমাদের ভালোবাসাকে পরিপূর্ণ করার জন্য প্রকৃতি আশীর্বাদ সরূপ বৃষ্টি ঝড়াতে লাগলো।মিরা আমার কাছ থেকে উঠে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আপন মনে নৃত্য করতে লাগলো। আমি অপলক দৃষ্টিতে মিরার দিকে তাকিয়ে আছি।

মিরাকে আজকে যেন আমি আবার নতুন করে অন্যরূপে দেখছি। কি অনন্য সৌন্দর্য যেন আজকে মিরার উপর ভর করেছে।

অনেক বাঁধা বিপত্তি পাড় করার পর মিরাকে আমি নিজের করে পেয়েছি।
কেউ হয়তো ঠিকই বলেছে ভালোবাসা সত্যি হলে,
সেটা পূর্ণতা অবশ্যই পাবে।
ঐ তো মিরা আমাকে তার কাছে যাওয়ার জন্য ডাকছে। আমি গেলাম…
.
.
এবার আপনারাও যেতে পারেন। কারণ গল্পটা এখনেই শেষ করছি…….♥

…………………♥সমাপ্ত♥…………………
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো)