অপ্রত্যাশিত সম্পর্ক পর্ব :- ০৯

0
696

গল্প :- অপ্রত্যাশিত সম্পর্ক
পর্ব :- ০৯
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
.
:- এরপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে খালামনি তার কাজে বের হয়ে গেলো। আর আমিও মিরাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। তারপর রাসেলদের সাথে দেখা করলাম। এবং ডলির শ্বশুর বাড়ি গিয়ে ওখানেই লাঞ্চ সেরে আবার ফিরে এলাম।

এখন আমারা সবাই বিমানবন্দরে আছি। খালমনি আর আলিশা দুজন এসেছে আমাদের বিদায় দেওয়ার জন্য।
তারপর বিদায় নিয়ে নিজের দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

(সুইজারল্যান্ড টু বাংলাদেশ)

বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে প্লেন ল্যান্ড করার পর মিরাকে নিয়ে এয়ারপোর্টের বাহিরে চলে আসলাম, আমাদের জন্য অবশ্য আগেই গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।

তারপর আমরা বাড়িতে পৌঁছালাম। বাড়িতে বলতে আমার শ্বশুড় বাড়িতে। আসলে অনেকদিন পর মিরার ভাই মুন্না আবার বাড়িতে ফিরে এসেছে।

আপনারা হয়তো ভবছেন মিরার আবার ভাই কোথা থেকে এলো?

এতোদিন মিরার বাবা মুন্নার উপর খুব রেগে ছিলো।
(মুন্না হচ্ছে মিরার ভাইয়া)

সেই জন্যই এতোদিন বাড়িতে আসতে দেননি। এমনকি কোনোরকম যোগাযোগও রাখেননি। রাগের কারণটা হলো মিরার বাবা চেয়েছিলো তার ছেলেও তারমতো পুলিশ অফিসার হবে। কিন্তু মুন্না ভাইয়ার ইচ্ছা ছিলো নাকি অন্যকিছু। এজন্য মুন্না ভাইয়া দেশের বাইরে গিয়ে ইন্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করে। এতে তার বাবার কথা অমান্য করায় মুন্নাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় মিরার আব্বু।

পরে মুন্না অবশ্য অনেকবার ক্ষমা চাওয়ার পরও তাকে ক্ষমা করেননি। তবে মুন্না এখন নিজের সপ্ন পুরন করে।আর নিজের চেষ্টায় আজ বিশাল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি দাড় করায়। সে আজ সফল। এখন ছেলের এতো সফলতা দেখে বাবা নিজের ভুলটা বুঝতে পারে। আর ছেলেকে ফিরিয়ে আনে।

মিরা এতোদিন পর নিজের ভাইকে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। সাথে আমিও মুন্নার সাথে পরিচিত হলাম। তারপর একে একে সবার সাথে দেখা করা হলো। আমি বাবা-মাকেও ফোন করে জানিয়ে দিলাম যে আমার এসে পড়ছি। আর খালামনিকেও একটা টেক্সট করে দিলাম।

রাতে খাবার খাওয়ার পর ছাদে গিয়ে আমি অনেকক্ষণ
শালা-শালিদের সাথে আড্ডা দেওয়ার পর রাতে গিয়ে মিরার ঘরে ডুকলাম। আমার সাথে সাথে মিরাও রুমে ডুকলো। তারপর মিরা ওয়াসরুমে ডুকে পড়ে।

হঠাৎ আমার মনে হলো গতবার যখন আমি শ্বশুড় বাড়ি এসেছিলাম তখন আমাকে মাটিতে ঘুমাতে হয়েছিলো।
তো এবারো তাই করলাম দেরী না করে একটা চাদর আর বালিশ নিয়ে নিচেই বিছানা পেতে নিলাম।
তখনি মিরা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।আর বললো।

—কি হলো? তুমি নিচে বিছানা করছো কেনো??

–কেন? আমি কি ঘুমাবো না নাকি।

—হুম তাতো ঘুমাবেই। কিন্তু নিচে কেনো?

–ওমা আগেরবার তো নিচেই ঘুমিয়েছিলাম।

—নীলয় তোমাকে এখন আর কষ্ট করতে হবে না। এখন তুমি আমার সাথে খাটেই শুবে চলো।

তখন আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম।

–মিরা তুমি কি আমাকে দয়া দেখাচ্ছো নাকি?

—এই তুমি এমন করছো কেন হুম..?
আমি তো আমার ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইলাম তোমার কাছে।

আমি চুপচাপ। তারপর মিরা এসে আমার হাত ধরে টানতে টানতে বললো।

—চলো নীলয়..! শুবে চলো।

তখন আমি হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম।

–না দরকার নেই। আমি এখনেই ঠিক আছি। আমি আর কোনোরকম চড়-থাপ্পড় আমি খেতে চাই না।

তারপর মিরা করুন সুরে বললো।

—আমি তো আমার কাজের জন্য সরি বলছি। ঠিক আছে আমি থাপ্পড় মারছিলাম তো নাও আমাকেও থাপ্পড় মেরে সমান সমান করে ফেলো। তারপরও ঘুমাতে চলো প্লিজ।

এই বলে মিরা গালটা এগিয়ে দিলো। মিরার এমন আচরণে আমি রীতিমত একটু অবাক হলাম। তারপর বললাম।

–থাক আমি মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না।

তখন মিরা আবারও আমার হাতটা ধরে বললো।

—ঠিক আছে। তাহলে বিছানায় চলো।

আমি হতাটা আস্তে করে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম।

–না। তোমার সাথে আমি এক বিছানায় ঘুমাতে পারবো না।

(আসলে মিরার সাথে আমিও এক খাটে ঘুমাতে চাই। কিন্তু আমার যে মিরার ঐ কথাগুলো বার বার মনে পড়ে যায়। বিনা করণে কি না বলেছিলো আমাকে। এতো সহজে মাফ করে দিবো?)

তারপর মিরা মনে হয় এবার একটু রেগেই গেছে।
আর রেগে গিয়ে বললো।

—দেখো নীলয় এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। শেষবারের মতো বলছি, তুমি বিছানায় আসবে কি না বলো।

–বললাম তো না।

—ঠিক আছে। তুমি আমার সাথে শুবে নাতো। তাহলে তোমাকে এই ঘরেও ঘুমাতে হবে না। যাও বের হও আমার ঘর থেকে।

তখন আমি অবাক হয়ে বললাম।

–মানে কি!

—বাংলা বুঝো না? ঘর থেকে বের হতে বলছি।

কি মুসকিল..! এখন যদি সত্যি সত্যি আমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। তাহলে আমার তো মান-সম্মান সব যাবে। কেউ দেখে ফেললে কি হবে! তারপর নিজের মনের ভয়কে মনেই বালি চাপা দিয়ে বললাম।

–কিহ!
তুমি তোমার নিজের স্বামীকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলছো! আমি কিন্তু এখন তোমাদের বাড়ি থেকেই চলো যাবো।

এবার মিরার রাগী মুখে মুহূর্তেই ভয়ের ছাপ ফোটে উঠলো। যাক ঔষুধটা ভালোই কাজে দিছে?।

মিরা সাথে সাথে আমার কাছে এসে বললো।

—স্যরি স্যরি আর কখনো বলবো না। আচ্ছা ঠিক আছে! তোমাকে আমার সাথে শুতে হবে না।
তুমি খাটে শুয়ে পড়ো।

তারপর মাথাটা নিচু করে বললো।

আমিই বরং নিচে শুয়ে পড়ছি। তারপর মিরা আর কিছু না বলে নিচে বিছানা পেতে শুয়ে পড়লো।

আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে। এতোদিন এই মেয়েটার জন্য আমাকে সোফায় নয়তো ফ্লোরে ঘুমাতে হয়েছে। এবার দেখ কেমন লাগে??

আহ!
অনেকদিন পর আরাম করে বিছানায় শুলাম। তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম ভাঙ্গলো নাকের উপর কিছু একটা পড়ার কারণে। বেশ জোড়েই ব্যাথা লেগেছে। আমি মা’রে… বলে নাকে হাত দিয়ে উঠে বসে পড়লাম।

আর যেটা হয়েছে সেটা হলো একটা হাত ঠিক আমার নাক বরাবর এসে লেগেছে। আল্লাহ এই মেয়েতো দেখছি ঘুমের মধ্যে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে। কিন্তু মিরা বিছানাতে এলো কি করে? আমার কোঁকানি শুনে মিরাও উঠে পড়েছে। আর চোখ কচলাতে কচলাতে বললো।

—কি হয়েছে।

তারপর হঠাৎই চোখ বড় বড় করে বললো।

—নীলয় একি! তোমার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে কেন??

–কিহ্! রক্ত!

হাত দিয়ে দেখলাম সত্যিই রক্ত বেরিয়ে গেছে। কি মারাটাই না মারছে।

—কি হয়েছে তোমার নাকে? রক্ত এলো কি করে?

তখন আমি নাকের আগাটা চেক করে নিলাম ঠিক আছে কি না। তারপর বললাম।

–কি হয়েছে মানে?
তুমিই তো করলে। এতো জোড়ে কেউ করো নাকে মারে?

মিরা অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকি বললো।

—আমি আবার কখন..

–কখন মানে?
ঘুমের মধ্যে এতো জোড়ে হাতটা আমার নাক বড়াবড় ছোড়েছো যে……
এক মিনিট! আর তুমি বিছানাতে কেনো?

—ইয়ে মানে আসলে আমার ফ্লোরে শুয়ে অভ্যাস নেই। ঘুৃম আসছিলো না। তাই বিছানাতে চলে এসেছি☺। তুমি বেশি ব্যাথা পাওনি তো?

–আরে না না ব্যাথা পাব কেন?
শুধু রক্তই তো বেরিয়ে গেছে। তারপর চেঁচিয়ে বললোম। আরে এতো জোড়ে লেগেছে ব্যাথা তো পাবই। আজবতো।

—নীলয় বিশ্বাস করো আমি আসলে ইচ্ছা করে করিনি। তুমি বসো আমি বরফ নিয়ে আসছি।

–দরকার নেই।
তোমার আমাকে নিয়ে এতো ভাবতো হবে না। অনেক হইছে। সড়ো!

এরপর আমি ওয়াসরুমে চলে এলাম। ফ্রেস হয়ে বের হতেই মিরা সামনে এসে হাজির। আমার দিকে একটা চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বললো।

—নাও!

আমি ওকে পাশ কাটিয়ে এসে। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললাম।

–লাগবে না?

—কেন? আমি এনেছি বলে।

–ধরে নাও তাই।

তখন আমি মিরার দিকে তাকিয়ে দেখলাম। ওর চোখ জোড়া ছলছল করছে। চোখের কোণে মেঘ জমে গেছে।
মিরা কিছুক্ষণ ঐভাবে দাঁড়িয়ে থেকে আর কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
আমি হাত থেকে তোয়ালেটা রেখে যেই বিছানাতে বসেছি। এমনি মিরা আবারও এসে হাজির। আশ্চর্য এইমাত্র বেরিয়ে গেলো। আবার ফিরে এলো কেনো??
.
.
চলবে………………♥♥
.
.
বিঃদ্রঃ পাঠাক/পাঠিকাদের উদ্দেশ্য কিছু বলছি।
প্লিজ আমার কথায় আপনাদের খারাপ লেগে থাকলে আগেই সরি বলে নিচ্ছি।???

কথাটা হলো লেখক বা লিখিকারা অনেক কষ্ট করে একটা গল্প ফুটিয়ে তাদের মনের ভাষা গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করে।
একটা গল্পের এক পার্ট লিখতেই ২/৩ ঘন্টা সময় লেগে যায়। এতো ঘন্টার লেখা গুলো আপনাদের পড়তে ৫ মিনিটও সময় লাগেনা। আর ওই ৫ মিনিট পড়ে আপনারা কি করেন..
Next,,
Nice,,
Thanks,,
কমেন্ট করেন। আবার কেউ কেউ N, অথবা T দিয়ে থাকেন।

আচ্ছা এই একটামাত্র শব্দ দিয়ে আপনা কি বুজাতে চাইছেন.? সেটা আমার জানা নেই। হ্যাঁ হয়তো আপনারা বলবেন লেখক/লেখিকা কি এতোই বকা পাঠকরা কি বুজাতে চাইছে সেটা বুজেনা।
তারা হয়তো সবি বুজে।
কিন্তু তারা যদি এতো কষ্ট করে লিখে আপনাদের হাঁসি,, কান্না,, আনন্দ দিয়ে থাকতে পারে তাহলে পাঠকরা কেনো তাদের মনের ভাষা গুলো প্রকাশ করতে পারেনা।

তাই পাঠক দের বলছি শুধু nice, next, thanks N,T লিখে নয়, দুই একটি লাইন আপনাদের ভালোবাসা জড়িয়ে লিখেন, তাহলে দেখবেন লেখক/লেখিকারা আরো ভালো ভালো গল্প আপনাদের উপহার দিবে।
এতক্ষণ ভালোবেসে কথা গুলো পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি কথা গুলো সবাই একটু হলেও মানার চেষ্টা করবেন।

:- নিছের কথাগুলো লিখেছেন আমার প্রিয় লেখিকা :
___রাবেয়া
সুলতানা___

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টতে দেখার অনুরোধ রইলো)