অবশেষে তুমি আমার পর্বঃ১০

0
4767

অবশেষে তুমি আমার
তাসনিম রাইসা
পবঃ১০

অধরা ভেবেছিল রাজ ত্রিযামিনীকে বাঁধা দিবে। কিন্তু না কথাগুলো রাজ আরো মজা নিলো।

– এদিকে কিছুদিন পর অধরার কোন কিছুই ভাললাগে না। খাবারে কেমন যেন অনিহা ভাব এসে গেছে। খেতেও ভালো লাগে না। মাথাটা কেমন কেমন করে ঘুরে! অধরার বু্ঝতে পারে না তার কি হয়েছে। একদিন হঠাৎ কাপড় কাঁচতে গিয়ে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়। ফ্লরে পড়ার কারণে কপালের ডান সাইটে অনেকটা কেটে যায়। অধরা কপালে হাত দিয়ে দেখে কপাল থেকে ব্লেডিং হচ্ছে! খুব ব্যাথা করছে। কোন রকম উড়না ছিড়ে মাথায় প্যাঁচিয়ে কাপড় কাঁচা শেষ করে কাপড় গুলো বেলকণিতে শুকাতে দেওয়ার সময় রাজের রুমের দিকে চোখ যেতেই দেখতে পেল, গুটি গুটি পায়ে ত্রিযামিনী রাজের রুমে যাচ্ছে। রাজ বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। অধরা জানালা কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।

– ত্রিযামিনী রাজকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই রাজ বললো,’ এ দিনে দুপুরে ভূত কই থেকে আসলো?
– এই আমি কি ভূত নাকি?
– আরে না না তুই তো পেত্নী!

– কি বললি? আমাকে দেখতে কি তোর পেত্নী মনে হয়?’

– না তুই অনেক সুন্দর। এখন রুম থেকে বের হ। আন্টি দেখলে উল্টা-পাল্টা ভাববে। ‘

-তুরে বলছে। মা কিছু বললে বলব তুকে আমি ভালোবাসি। তখন বিয়ে দিয়ে দিবে।
– ত্রিযামিনী তুই এখান থেকে যাবি? নাকি আমি আন্টিকে ডাক দিবো?
– রাজ তুমি এমন কেন? আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বলি?
– হ্যাঁ বল।
– আমার বুকে একটা নীল রঙের তিল আছে দেখবা?
– হাহা, নীল রঙের তিল হয় নাকি?
– কে বলছে হয় না? আচ্ছা তোমাকে দেখায়? এই বলে ত্রিযামিনী তার উড়নাটা সরিয়ে ফেলল! রাজ তার দু’হাতে আখি জোড়া সংগোপনে লুকিয়ে রাখতে ব্যস্ত!

– ত্রিযামিনী রাজের দিকে চেয়ে হেসে দিল। আর বললো,’ কি হলো নীল রঙের তিল দেখবে না? জানো যাদের নাকি নীল রঙের তিল থাকে বুকে তাদের স্বামী নাকি তাদের অনেক ভালোবাসে। আচ্ছা তুমিও কি আমাকে ভালোবাসবে?

– ত্রিযামিনী উড়না গায়ে দিবি তাড়াতাড়ি? নয়তো কিন্তু তোকে একটা থাপ্পরই দিবো বেশি কিছু করবো না।

– রাজ তুমি এতো আন রোমান্টিক কেন?
– দরজার ওপাশ থেকে অধরা মনে মনে বলছে,’ রাজ যদি আনরোমান্টিক হয় তাহলে দুনিয়াতে রোমান্টিক কে? কাল রাতে যা করছে। ‘ অধরার কাছে কেমন যেন লজ্জা লাগছে আবার প্রচন্ড ঘৃণা আর রাগ হচ্ছে।

– এই রাজ কথা বলছো না কেন? আমি তোমাকে ভালোবাসি। কি নেই আমার মধ্যে? কত ছেলে আমার পিছনে ঘুরে জানো? আমার ফেসবুকে ফলোয়ার কতো জানো?
– আচ্ছা এসব বাদ দাও। আমাকে তুমি বিয়ে করবে?তোমার বেবির মা বানাবে? কথাটা বলে ত্রিযামিনী তার চোখ নিচে নামিয়ে ফেলল। ”

– রাজ কিছু বলছে না চুপ করে আছে।

– কি হলো তোমার বেবীর মা বানাবে আমায়? কথাটা বলে ত্রিযামিনীর রাজকে জড়িয়ে ধরলো। ‘

‘ রাজ ত্রিযামিনীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে, ঠাস করে তার গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,’ তুমি না বললে তোমার এমন কী নেই? যার জন্য তোমাকে ভালোবাসি না? তোমার ভূষণ নেই! ভূষণ কি জানো? একটা মেয়ের ভূষণ মানে পোশাক হচ্ছে তার লজ্জা! যা তোমার মাঝে নেই। আর হ্যাঁ একটা মেয়ে নিজের স্বামী ছাড়া তার গোপন অঙ্গ অন্য কোন ছেলেকে দেখাতে পারে না। আর তুমি? আরেকটা কথা মনে রাখবে পঁচা জিনিসে মাছি ভনভন করে! নিজেকে সস্তা বানিয়ো না। তোমার ফেসবুকে প্রায় লাখ খানেক ফলোয়ার। প্রতিদিন ডজন খানেক পিক আপলোড করো। অনেক ছেলেই কমেন্ট করে, কি হট! নাইস! সেক্সি। এসব শুনে তোমার মজা লাগে। শোন ছেলেরা সেক্সি বলা মেয়েকে গার্লফেন্ড বানাতে চাইলেও বউ বানাতে চাই না। ফলোয়ার অপূর্বরও ছিল, ছিল তাহসান মিথিলার। কিন্তু তারা একসাথে সংসার করতে পারেনি। আশা করি বুঝছ। নেক্সট টাইম শরীর দেখাতে আমার কাছে আসবে না। আর হ্যাঁ মনে রাখবে আমার হৃদয়ে ভালোবাসার জায়গাটা শৈশব থেকেই পূর্ণ হয়ে আছে। সেখানে সহস্রবার চেষ্টা করলেও আর কাউকে বসাতে পারবো না। আরেকটা কথা, যত তাড়াতাড়ি আন্টিকে বলে তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করছি।

– ত্রিযামিনী রাজের কথা শুনে চোখের পানি মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

– অধরা মনে মনে ভাবলো, ‘ লোকটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ তিনি নয়। ‘

– এদিকে হঠাৎ করে রাজের চোখ রাস্তার দিকে যায়। রাস্তায় তিয়াস দাঁড়িয়ে কাকে যেন হাতের ইশারা দিচ্ছে। অধরা বেলকণীতে দাড়িয়ে কাপড়গুলো দঁড়িতে শুকাতে দিচ্ছে। অধরা বুঝতে পারলো তার পিছনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। সে আর পিছন দিকে তাকালো না। কিন্তু বেলকণী থেকে রাস্তার দিকে তাকাতেই দেখে তিয়াস দাঁড়িয়ে তাকে হাই দিচ্ছে!

অধরা তিয়াসকে দেখে অনেকটা চমকে যায়! অধরা বুঝতে পারে তার পিছনে রাজ দাঁড়িয়ে আছে। অধরার খু্ব ভয় করছে। তবুও তিয়াসের দিকে হাত উঁচিয়ে অধরা হাই দিতেই। পিছন থেকে হেঁচকা টান দিয়ে অধরাকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিল রাজ। রাজেরর একটা হাত অধরার কোমড় স্পর্শ করে আছে আর অন্য হাতটা অধরার পিঠে! অধরাকে একদম কাছে টেনে নিয়েছে। রাজ রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখলো তিয়াস হা করে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে।

– রাজ আে একমুহূর্ত দেরী করলো না।অধরার ঠোঁটের সাথে রাজ তার ঠোঁট জোড়া মিলিয়ে দিল। অধরা নিজেকে ছাড়াতে চাচ্ছে। কিন্তু এটা অরণ্যে রোদনের মতোই! ব্যর্থ চেষ্টা! তাই অধরা চোখ দু’টি বন্ধ করে ফেললো। তিয়াস রাগে সাপের মতো ফুঁসছে! তারই চোখের সামনে রাজ তার ভালোবাসার মানুষের সাথে অসভ্যতামি করছে।

– এদিকে রাজ অধরার কপালে কাটা দাগ দেখে শিউরে উঠলো!

– অধরা কুলে তুলে নিল। কুলে করে একদম বিছানায় এনে শুইয়ে দিলো। অধরা খুব ভালো লাগছে। রাজ অধরার বুকের উপর শুয়ে পড়লো। অধরা বাঁধা দিতে গিয়েও দিল না। তার তো আর কিছু নেই, সব তো নিয়ে নিয়েছে। দেহটা তো সে কভেই নিয়ে নিয়েছে! রাজ অধরার বুকে শুয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,’ আমাকে দিয়ে তোর হয় না? একটা প্রস্টিটিউট ভাড়া করলেও হয়তো তোর মতো বেলকণীতে দাঁড়িয়ে হ্যায়, হ্যালো করতো না। একটা কথা মনে রাখবি আগামী তিন মাস তুই আমার রক্ষিতা! এ তিনমাস আমি ছাড়া যদি অন্য কারো সাথে কিছু করিস তাহলে তোর খবর আছে। কথাটা বলে অধরার উপর থেকে উঠে পড়লো। অধরা গায়ের সাথে শাড়ির আচলটা বুক অবধি টেনে নিলো। চোখ থেকে নিরবে সযত্নে কয়েক ফোটা জল বিছানার উপর গড়িয়ে পড়লো। বালিশটা অধরার কতো কান্নার সাক্ষী!

– এদিকে রাজ, গোসল করে ব্রেকফাসর্ট করে অফিসে চলে গেল। অধরা এখনো শুয়ে আছে।

– অধরাকে শুয়ে থাকতে দেখে ত্রিযামিনী বললো,’ এই তুর কোন কাজ নেই? বাসায় কতো কাজ। তুই শুয়ে থাকলে ওসব কে করবে? যা প্লেটগুলো পরিষ্কার কর।

– অধরা ত্রিযামিনীকে কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে গেল।

– সন্ধায় রাজ অফিস থেকে ফিরে, যখন শার্ট খুলবে এমন সময় বুঝতে পারলো বেলকণীতে দাঁড়িয়ে কে যেন ফিসফিসিরে কথা বলছে।

– রাজ শার্ট খুলতে খুলতে বেলকণীতে গিয়ে দাঁড়ালো। বেলকণীতে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখতে পেল, অধরা ফোনে কথা বলছে। রাজ কান পেতে শুনার ট্রায় করছে। রাজ স্পর্ষ্ট শুনতে পেল,’অধরা তিয়াসকে বললো বাবু তুমি চিন্তা করো না। আমি তোমাকেই ভালোবাসব। আর বিয়ে করতে হয় তোমাকেই বিয়ে করবো। পৃথিবীর কোন শক্তি আমাদের আলাদা করতে পারবে না। তুমি শুধু আমাকে ভুল বুঝো না।’ অধরা কথা শেষ করে পিছন দিকে তাকাতেই দেখতে পেল রাজ দাঁড়িয়ে আছে।

– অধরা রাজকে দেখেই মোবাইল থেকে কার যেন নাম্বার ডিলিট করলো। ‘

– এই কার সাথে কথা বললি?
– কেন আবার আমার বোনের সাথে।

– রাজ আর কিছু বললো না। অধরাকে রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। ‘

– দরজা লাগালেন কেন?
– কেন লাগিয়েছি বুঝো না? আজ তোমাকে ভালোবাসা শেখাবো। তোর লজ্জা করে না, তিয়াসের সাথে কথা বলতে?
-তুমি সব শুনেছো! কথাটা বলে অধরা কাঁপতে লাগল।
– রাজ অধরাকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিল। পরদিন সকালে অধরার ঘুম ভাঙতেই বুঝতে পারলো রাজ বিছানায় নেই। তার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। শাড়ি ঠিক নেই। কাল রাতে কি হয়েছিল সেটাও মনে করতে পারছে না। ‘ শরীরটাও ম্যাচম্যাচ করছে!

– অধরা কোনরকম শাড়িটা গায়ে প্যাঁচিয়ে নিচে নামতেই দেখতে পেল রাজ ব্রেকফাস্ট করছে।

– ত্রিযামিনীর মা মিস রাহেলা বেগম অধরাকে দেখেই বললো,’ রাজ দেখ রাজরাণী আসছে। এতোক্ষণে ঘুম থেকে উঠার সময় হলো তার? এটা কি তুই কাজের মেয়ে এনেছিস? নাকি অন্যকিছু?
– অধরা ফ্রেশ হয়ে যখন টেবিলে বসে খেতে যাবে, তখন ত্রিযামিনী বললো,’ রাজ তুমি কিছু বলছো না? কি দিনকাল আসলো এতিম – কাজের মেয়েদের সাথে একটেবিলে বসে খেতে হয়?
– অধরা খাবার প্লেটটা নিয়ে ফ্লরে বসে পড়ল। রাহেলা বানুকে উদ্দেশ্য করে বললো,’ আপনিই তো সেদিন বলেছিলেন আপনাকে মা বলে ডাকতে আর এটাও বলেছিলেন আমি যেন কখনো নিচে বসে না খায়। আপনার মেয়ের মতো আমিও আপনার মেয়ে। আর আজ আপনি আর ত্রিযামিনী দু’জনে কি বলছেন এসব? আমি আর কোনদিন আপু তোমাদের সাথে বসবো না তুমি খেয়ে নাও। অধরা খাবার মুখে দিতেই, ওয়াশরুমে গিয়ে হরহর করে বমি করে দিল। অধরা বুঝতে পারছে না তারসাথে কি হতে যাচ্ছে।

– পরেরদিন অধরা রান্না করতে করতে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়! বাড়ির কাজের মহিলা, ‘ ফুলবানু রাজকে গিয়ে বলে, ‘ স্যার আপনি যে মেয়েটা নিয়ে আসছেন না সে মেয়ে কিচেনে পড়ে আছে। রাজ অধরাকে নিয়ে হসপিটালে যায় সাথে ত্রিযামিনী আর তার মাও ছিল।

– ডাক্তার অধরাকে দেখে বললো,’ মিঃ রাজ মেয়েটা কি বিবাহিত?.
– না ডাক্তার সাহেব।
– ওহ্ আচ্ছা আমি কিছু টেস্ট দিচ্ছি, কাল রির্পোটটা নিয়ে যাবেন। আর রোগীকে নিয়ে যেতে পারেন এখন।

– অধরা কিছুটা আঁচ করতে পারছে। প্রায় অনেকদিন থেকেই তার পিরিয়ড অফ হয়ে গেছে। সত্যি কি সে! না কিছু ভাবতে পারছে না।
– রাজ অধরাকে রেখেই ত্রিযামিনী আর তার মাকে নিয়ে বাসায় এসে পড়ে। বাসার আসার সময় অধরার দিকে একটা পাঁচশত টাকার নোট ছুঁড়ে দিয়ে বলে,’ এরপর মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার নাটক করবি না। ভয়ে পেয়েছিলাম মরে-টরে গেলি নাকি তাই হসপিটালে নিয়ে আসছিলাম।

– অধরা কোনরকম অসুস্থ শরীর নিয়েই বাসে করে বাসায় আসে।

– পরের দিন, রাজের বাসার নাম্বারে ফোন আসে।
– ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে, মেয়েলী কন্ঠে কেউ একজন বলে,’ আপনারা কাল যে টেস্ট দিয়েছিলেন সেটার রির্পোটটা নিয়ে যান। ত্রিযামিনী ফোনটা রেখেই, ‘ হসপিটাল থেকে রির্পোট নিয়ে আসে। ‘

– রির্পোট নিয়ে এসে দেখে অধরা আসরের নামায পড়ছে। নামায পড়ে সালাম ফিরিয়ে জায়নামায থেকে উঠতেই, ‘ ত্রিযামিনী অধরার পেটে লাথি মারে! অধরা আল্লাহ বলে চিৎকার দিয়ে জায়নামায থেকে ছিটকে পড়ে যায়।

– অধরার চিৎকার শুনে রাজ, কাজের মেয়ে আর ত্রিযামিনীর মা এসে বলে কি হয়েছে?
– ত্রিযামিনী রাজের হাতে রির্পোটের কাজটা দিয়ে বলে,’ রাজ তুমি এটা কাকে আশ্রয় দিয়েছো? কার না জানি পাপের সন্তান তার পেটে ধারণ করছে। জানো তোমার হাতের রির্পোটটা কিসের? রির্পোটটা হচ্ছে এ নস্টা মেয়েটার পাপের ফসল। এর পরেও তুমি এটাকে বাড়িতে রাখবা? আর আপনারা দেখছেন? নস্টা মেয়ে বিয়ে ছাড়া সন্তান গর্ভে ধারণ করে নামায পড়ছে।

চলবে”””””””