অর্ধাঙ্গিনী(An Ideal Wife) পার্ট১১+১২

0
1598

#অর্ধাঙ্গিনী(An Ideal Wife)
#পার্ট১১+১২
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
প্রতিটা সম্পর্কের বাধন থাকে সম্পর্কের সাথে যুক্ত মানুষগুলোর হাতে।ঘুড়ির সুতোয় বেশি ঢিল দিলে ঘুড়ি কেটে যায় আর বেশি টান দিলে হাত কেটে যায়।সম্পর্কটাগুলোও ঠিক তেমনি।সন্দেহ সম্পর্কের ভীত নড়বড়ে করে দেয়।আর অতিরিক্ত ভালবাসা দূরে সড়িয়ে দেয়।মেঘ বর্তমানে সম্পর্কের এই গোলক ধাধায় আটকে আছে।একদিকে আয়াজ চৌধুরীর লক্ষন তার কাছে ভাল লাগছে না।অন্যদিকে বৃষ্টিকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই।তারচেয়েও বেশি তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে বৃষ্টির প্রতি তার ব্যবহার।কিভাবে পারল সে বৃষ্টির সাথে এতোটা জঘন্য ব্যবহার করতে?নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার।বাসার সামনে এসে এক ঘন্টা থেকে ঘুরঘুর করছে সে।বৃষ্টিকে কিভাবে ফেস করবে সে?মাকেই বা কি বলবে?হঠাত মনে হল তার কাছে বাসার ডুপলিকেট চাবি আছে।চুপ করে চোরের মত নিজের বাড়িতে ঢুকছে। মনে মনে ভাবছে
-কী দিন আইলো রে মেঘ!নিজের বাড়িতে নিজেকেই চোর লাগে।
.
.
এপাশ ওপাশ উকি দিয়ে রুমের দিকে আগাচ্ছে সে।
-ডিনার রেডি আছে। হাত মুখ ধুয়ে আসো।
পেছন থেকে বৃষ্টির গলা শুনে থমকে দাড়ালো মেঘ।সেখানেই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে গেল।বৃষ্টি এগিয়ে এসে বলল
-একটা কথা কি একবার কানে যায় না?হাজার বার তোমাকে বলেছি জুতো জোড়া দরজার পাশে খুলে রাখবা।কেউ শুনেই না আমার কথা।
-বৃষ্টি আই এম সরি।
মেঘ মাথা নিচু করে বলল কথাটা।
বৃষ্টির চোখ জোড়া ভিজে আসছে।কোন রকমে নিজেকে সামলে বলে উঠল
-খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে মেঘ।এসব কথা পরে হবে।
কোনরকমে চোখের পানি লুকিয়ে সেখান থেকে চলে আসল সে।মেঘ হাত ধুয়ে খেতে বসল। ভাতের লোকমা মুখে দিতেই মনে হল বৃষ্টি ও তো এখনো কিছু খায় নি। মেঘকে ছাড়া কখনোই সে খায় না। রিলেশনে থাকাকালীন সময়েও বৃষ্টি এই নিয়ে মেঘকে খুব প্যারা দিত। ক্লাস,প্রোজেক্ট আর গ্রুপ স্টাডির কারনে কখনো কখনো মেঘের লাঞ্চ বা ডিনার মিস যেত। বৃষ্টিও সুন্দর ভাবে সে সময়টা উপোস করেই কাটিয়ে দিত।মাঝে মাঝে মেঘ খুব বিরক্ত হতো এই ব্যবহারে।কিন্তু অবসরে ঠোটের কোনে হালকা একটা হাসি ফুটে উঠত এটা ভেবেই যে কেউ তার কেয়ার করে। খুব করে তার কথা চিন্তা করে।
.
.
মাথা তুলে দেখল বৃষ্টি তার পাশের চেয়ারে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। মুখ থেকে ভাতের লোকমাটা নামিয়ে ফেলল মেঘ।
-কি হল?থামলে কেন?রান্না ভালো হয় নি?অন্য কিছু করে আনব কি?
মেঘ কিছু না বলে ভাতের লোকমাটা বৃষ্টির সামনে ধরল।বৃষ্টি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না।চোখ দিয়ে নোনা স্রোত বয়ে যেতে লাগল।সব অভিমান সব রাগ ঝরে যাচ্ছে এই স্রোত বেয়ে।
.
.
অফিসের ডেস্কে বসে আছে মেঘ।মাথায় একটাই চিন্তা কিভাবে আয়াজ চৌধুরী নামক কাটাটা তাদের জীবন থেকে সরাবে।পিয়ন এসে বলে গেল আয়াজ চৌধুরী নাকি মেঘকে তার রুমে ডাকছেন।
-স্যার আমাকে ডেকেছেন?
মেঘকে দেখেই আয়াজ চৌধুরী ঠোটে সেই নোংরা হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠল
.
.
-মেঘ বাবা খাবেন না?
জ্যাক আংকেলের ডাকে স্মৃতির পাতা থেকে বেরিয়ে আসল মেঘ।অ্যালবামটা বিছানার পাশের ড্যয়ারে রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেল।হালকা লাঞ্চ শেষে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল The Baxter Inn এর উদ্দেশ্যে।…….
চলবে

#অর্ধাঙ্গিনী(An Ideal Wife)
#পার্ট১২
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
-Hey darling.You are sooo hot.I just wanna kiss you hard.Come with me. It will be a great fun.
.
উইস্কির গ্লাসটা খালি করে৷ চোখ তুলে তাকাল মেঘ।রেওয়াজ এক কোনে সোফায় বসে সফট ড্রিংক খাচ্ছে আর ভিডিও কলে কায়ার সাথে প্রেম করছে।
The Baxter Inn. সিডনীর এক দুর্গম এলাকায় এর অবস্থান।কিন্তু পথের দূরত্ব আর দুর্গমতা অস্ট্রেলিয়াবাসীকে বিরত রাখতে পারে না।ককটেল আর উইসকির জন্যে খ্যাত এই বার এ প্রতিদিন আগমন ঘটে নানা রকমের সুন্দরী তরুন তরূনীর।কেউ বা আসে কষ্ট ভুলতে কেউ বা রাত রঙীন করতে।
মেঘকে একের পর এক শট খেতে দেখে এগিয়ে আসে এক সুন্দরী তরুনী।মিনি জিন্স প্যান্ট আর স্লিভ লেস শর্ট টি শার্ট।সাদা কার্ল করা চুল আর ব্রাউন আইজ যেকোন ছেলেকেই পাগল করতে যথেষ্ট।বারের সবাই তারদিকে চেয়ে আছে।কিন্তু মেঘ একমনেই ড্রিংক করে যাচ্ছে।ব্যাপারটা হজম হয় নি তার।মেয়েটা প্রথমে মেঘকে ড্রিংক অফার করে।কিন্তু মেঘ নেশাতে এতোটাই বুদ হয়ে আছে যে তার আশেপাশে কি হচ্ছে সেটা দেখার অবকাশ তার নেই।
.
.
মেঘকে ড্রিংক করতে দেখে এগিয়ে এলো মেয়েটা। অনেকটা আবেদনময়ী ভঙ্গিতে বলে ঊঠল কথাগুলো।মেঘ কথাগুলো শুনে হালকা হাসল।আরেক পেগ শেষ করে হাসি মুখে বলল
-I am not interested.You can find someone else.
বলেই আবার পেগ নিতে ব্যস্ত হয়ে গেল।
সেই সুন্দরী তরুনী হয়তো না এর আশা করে নি।কেউ তাকে মুখের উপরে না বলবে এটা হয়তো সে আশা করেনি কখনো দাতে দাত খিচে বলে উঠল
-You are saying a no to me?Who the hell are you?Just wait and watch I’ll get a better one than you. Just wait.
বলেই মেয়েটা গজরাতে গজরাতে চলে গেল।মেঘ আর কোন পাশে না তাকিয়ে ড্রিংকে মনোনিবেশ করল।হঠাত এক ফাকে চোখ গেল ডান্স ফ্লোরের দিকে।সেখানে সেই সুন্দরী তরুনী আরেকজন ছেলের সাথে ডান্স করছে। মেঘের চোখে চোখ পরতেই বেশ ক্লোজভাবে আবেদনময়ী ভঙিতে নাচতে লাগল সে।ছেলেটাও কম যায় কিসে।সে যেন সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সেও মেয়েটির কোমড়ে হাত দিয়ে বিন্দাস ভাবে নাচছে।
.
.
মেঘ প্রথমে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ড্রিংক এ ব্যস্ত হয়ে গেল।গ্লাসে ড্রিংক ঢালতে গিয়ে হঠাত করে তার চেহেরা শক্ত হয়ে গেল।প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার।শ্যাম্পেইনের বোতলটা সজোরে টেবিলে রেখে উঠে চলে গেল ডান্স ফ্লোরের দিকে।সেখানে গিয়ে সেই সুন্দরী তরুনীর গালে কষিয়ে এক চড় মারল।মেয়েটি কিছু বুঝে উঠার আগেই তার গালে আরেকটা চড়ের অস্তিত্ব টের পেল।বারের সবাই থ বনে গেছে।ডিজে মিউজিক থামিয়ে ঘটনা উদ্ধারের চেস্টা করছে।মেঘের থাপ্পড় খেয়ে সেই তরুনী তাল সামলাতে না পেরে আছড়ে পরে ডান্স ফ্লোরে।মেঘকে প্রচন্ড রাগান্বিত দেখাচ্ছে। চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে আছে।আচমকা গর্জে উঠল সে
-এক পুরষে হয় না তোর তাই না?হাজারটা লাগবে?একজনে তোর চাহিদা মিটে না।আরে তোরা সব মেয়েরাই এরকম।মুখে যতই বল টাকার গন্ধ পেলেই কুত্তার মত ছুটে যাস।তোর সাহস কিভাবে হয় আমাকে ছাড়ে ওর কাছে যাওয়ার?You bloddy bitch.I Won’t leave you Brishty.I hate you.
.
.
কথাগুলো বলেই আবার মেয়েটিকে মারতে উদ্ধুদ্ধ হল মেঘ।রেওয়াজ হঠাত চেচামিচি শুনে ভীড় ঠেলে দেখে মেঘ উল্টা পাল্টা বকছে।মেঘ এগিয়ে যেতে লাগলে রেওয়াজ তাকে গিয়ে থামানোর চেস্টা করল।বারের সিকিউরিটিরাও মেঘকে থামানোর চেস্টা করছে।কিন্তু মেঘ প্রচন্ড রেগে আছে।তাকে সামাল দেওয়া খুব কষ্ট হচ্ছে।রেওয়াজ অনেক কষ্টে মেঘকে গাড়িতে বসিয়ে বারের সিকিউরিটি ফির্মালিটি পূরন করে মেঘ কে নিয়ে চলে এল।
পুরো রাস্তা মেঘ একটা কথাই বলেছে-“বৃষ্টি তুমি কেন ছেড়ে গেলে আমাকে?কি দোষ ছিল আমার?বৃষ্টি আই হেইট ইউ”
.
.
ঘড়িতে বেলা ১২টা বাজে।মেঘের চোখের পাতার উপরের রগগুলো ফুলে আছে।হাতে পায়ে কালশিটে দাগ পড়েছে।অনেক কষ্ট হচ্ছে তার।ভোরের আলো খুব করে চোখে লাগছে।চোখ খুলতে সমস্যা হচ্ছে তার। মানে ধীরে ধীরে সে অন্ধকারের দিকে আগাচ্ছে।মাথাটা চেপে ধরে উঠে বসল সে।
চোখ খুলে সামনে তাকাতেই হচকচিয়ে গেল মেঘ।তার সামনে রেওয়াজ বসে আছে।এখন কি করবে সে?কীভাবে ফেস করবে সে রেওয়াজকে? দুনিয়ার সবার কাছে কথা লুকাতে পারলেও সে তো রেওয়াজকে কিছুই গোপন করতে পারবে না।
মেঘ উঠে ওয়াশরুমের দিকে যেতে লাগলেই রেওয়াজ পেছন থেকে ডেকে উঠল
.

.
-Baxter Inn থেকে তোকে ব্যান করা হয়েছে।তোর মেম্বারশিপ বাতিল করা হয়েছে।এমনকি আগামী ছয়মাস বারের আশেপাশে তোকে দেখলেও ওরা স্ট্রীক একশন নিবে।
মেঘ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে আগালো।
-মেঘ তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
-তুই বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
-বাট…..
ফোনের রিংটনে থেমে যায় রেওয়াজ।স্ক্রিনে হার্ট এর ইমোজি ভাসছে।মেঘ আস্তে করে
-Enjoy বলে ওয়াশরুমে চলে গেল।
.
.
-মেঘ রহস্য দিয়ে কখনো রহস্য সমাধান করা যায় না।রহস্য সমাধানের জন্য জট খুলতে হয়।তুই তো নতুন করে জট লাগাচ্ছিস।প্লিজ ভাই আমাকে বল তোর সমস্যা টা কি?এভাবে আমি তোকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে পারি না।নিজের জন্য না আমার জন্য অন্তত।
-জট খুলতে চাস না তুই?জট থাকলে তবে না তুই খুলবি?সবটাই যখন পানির মতো পরিষ্কার সেখানে তুই ঘোলাটে কিছু কিভাবে সরাবি?
-মানে?
-সেদিন আয়াজ চৌধুরী আমাকে তার কেবিনে ডাকলেন।আমি রুমে ঢুকতেই উনি বলে উঠলেন
.
.
-মি.মেঘ আকিজ এন্ড সন্সের ডিলে যে ঊনারা কিছু শর্ত দিয়েছিলেন সেটা কি আপনি পড়ে সাইন করেছেন নাকি না পরে?
-স্যার আমি কোন কাগজ না পড়ে সাইন করি না।
-মি.মেঘ তাহলে সেখানে যে লিখা ছিল টাইম অনুযায়ী ডেলিভারি না পেলে উনাদের ক্ষতিপূরন কম্পানি দিবে।Can I ask you কম্পানির এমডির পারমিশন ছাড়া আপনি ডিল সাইন করার রাইট পান কিভাবে?
-এক্সিউজমি স্যার কোম্পানির এমডির অনুপস্থিতিতে যাবতীয় সব সিদ্ধান্ত আমাকে নেওয়ার পাওয়ার আই মিন পাওয়ার অফ এটার্নি আমার কাছে ছিল।এটা কোম্পানির উপর মহল থেকে স্ট্যাম্প কাগজে আমাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।ইভেন আমার কাছে সেই কাগজ এখনো আছে।
নিমিষেই আয়াজ চৌধুরীর মুখটা কালো হয়ে গেল।
-আই সি মি.মেঘ।বাট আপনার হয়তো জানা নেই অই সাইটের ওয়ার্কাররা ধর্মঘট করছে। কবে নাগাদ এটা শেষ হবে কেউ জানে না।আর ডিল অনুযায়ী আমাদের হাতে আছে জাস্ট তিন মাস।Do you really think within only 3 months এতো গুলো প্রোডাক্ট ডিকেভারী দেওয়া পসিবল?
আমি যেন থমকে গেলাম।কারন হঠাত করেই সাইটের ওয়ার্কারা ধর্মঘট শুরু করেছে।
-মি মেঘ এখন আপনার কাছে দুইটা অপশন আছে।হয় তিন মাসের মধ্যে ডেলিভারি অথবা দুই কোটি টাকা ক্ষতি পূরন……….
চলবে