অর্ধাঙ্গিনী(An Ideal Wife) পার্ট১৫+১৬

0
1544

#অর্ধাঙ্গিনী(An Ideal Wife)
#পার্ট১৫+১৬
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া

.
.
-কোথায় ছিলে বৃষ্টি?
আমাকে সোফায় বসে থাকতে দেখে বৃষ্টি কিছুটা ঘাবড়ে গেল।নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠল
-তুমি আজ তাড়াতাড়ি যে?
-কেন খুশি হও নি?
-আরে আজব খুশি হব না কেন?তুমি ফ্রেস হয়ে আসো আমি নাস্তা দিচ্ছি।
-আমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর এখনো পাইনি বৃষ্টি।
-আমার কলেজ ফ্রেন্ড দিয়া মনে আছে?ওর বাসায় গিয়েছিলাম।
-তোমার ফ্রেন্ড ঢাকায় থাকে আগে বল নি তো।
-তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছ মেঘ?
-এখানে সন্দেহ কোথা থেকে আসছে বৃষ্টি।আমি জাস্ট জানতে চাচ্ছি।
-মেঘ তুমি জানতে না কৈফিয়ত চাচ্ছ।মেঘ আমাদের মধ্যে জবাবদিহিতার বিষয়টা কবে থেকে প্রযোজ্য হলো?
-বৃষ্টি কথা ঘুরাইও না ড্যাম আই জাস্ট নিড এন এন্সার।
.
.
বৃষ্টি খানিকক্ষন আমাকে চেয়ে মোবাইলে কাউকে কল দিল।ওপাশ থেকে কেউ এখন বলে উঠল
-বৃশ তুই ঠিকভাবে পৌছে গেছিস?কতদিন পর বাসায় এলি। আরেকটু থাকলেই পারতি।আমি মেঘ ভাইয়ার সাথে কথা বলতাম।বাট যাই বলিস না কেন ভাইয়া কিন্তু অনেক লাকি।তুই যে পরিমান ভাইয়াকে ভালোবাসিস না আমারি হিংসা লাগে মাঝে মধ্যে।হা হা হা।
-দিয়া আসলে তোর ভাইয়া…..
-আমি জানি বৃশ ভাইয়া এখনো বাসায় আসে নি।তুই আরেকটু থাকলেই পারতি।
-দিয়া মেঘ বাসায় চলে এসেছে।আমি তোর সাথে পরে কথা বলব।
-ওকে বেবস। লাভ ইউ।
-মি টু।বাই।
বৃষ্টি ফোনটা কেটেই সেখান থেকে হনহন করে চলে গেল।বৃষ্টি আমার দিকে একবারও ফিরে তাকায় নি। কারন ওর চোখ সেই মুহুর্তে টলটল করছিল।তবে একটা বিষয় তখনো আমার মাথায় তখনো ঘুরুঘুর করছিল বৃষ্টি যদি তার ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিল তবে ক্যাফেতে আয়াজ চৌধুরীর সাথে কি করছিল?
-কাম অন মেঘ। আর ইউ ডাম্ব?ভাবী গেছে এটার গ্যারান্টি কি?আয়াজও তো তার কাছে যেতে পারে।লাইক সে ভাবীকে ফলো করছিল।
.
.

-রেওয়াজ এটা ভেবেই আমি নিজেকে শান্তা দিয়েছিলাম। তোর মতো এক মুহুর্তে আমারো মনে হয়েছিল একটা বাইরের মানুষের জন্য আমি কিভাবে আমার ভালবাসার উপর প্রশ্ন তুলতে পারি।কিন্তু ভাগ্য হয়তো আমাকে কিছু অন্য ইশারাই করছিল।
-মানে???
-সেদিনের পর থেকে বৃষ্টি আর আমার মধ্যে দুরুত্ব বাড়তে লাগল।বৃষ্টির ইগনোর গুলো যতটা না আমাকে ভাবাচ্ছিল তার চেয়েও বেশি কষ্ট দিচ্ছিল।কারন আমি জানে অজান্তে বৃষ্টির সেল্ফ রেসপেক্ট এ আঘাত করেছিলাম।বৃষ্টি সব কিছু সহ্য করতে পারলেও কেউ তার সেল্ফ রেস্পেক্ট এ আঘাত হানলে সে কখনোই তাকে ছেড়ে কথা বলে না।
-মেঘ এটা কোন মেয়েই সহ্য করবে না।
-না রেওয়াজ বৃষ্টির মধ্যে সেবার এই ইগোটা একটু বেশিই কাজ করেছিল।
রেওয়াজ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে।মেঘ উদাস দৃষ্টিতে বাকা হাসছে।
.
.
প্রতিটা সম্পর্কের ভিত থাকে বিশ্বাস।স্থাপনা ভেঙে পরার প্রথম লক্ষন হলো ফাটল ধরা।ফাটল থেকে যেমন ভাঙন ধরে তেমঞ্জ বিশ্বাসে ফাটল ধরলে সম্পর্ক ভাঙতে সময় লাগে না৷ মেঘ আর বৃষ্টির সম্পর্কে এই ফাটল ধরাতে সফল হয়েছিল আয়াজ চৌধুরী।মেঘের মনে সন্দেহ আর বৃষ্টির মধ্যে অভিমানের বীজ বপন করে আয়াজ তাদের সম্পর্ককে ভাঙনের পথে ঠেলে দিয়েছিল।বাকিটাতে অবশ্য তাকে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় নি।সবটুকুই ছিল সময়ের খেলা।
মেঘ যতটা বৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তিত ছিল ঠিক ততোটাই চিন্তিত ছিল আকীজ ইন্ডাস্ট্রিজের ডিল নিয়ে।সময় আগাচ্ছে কিন্তু মেঘ শত খুজেও কোন উপায় খুজে পাচ্ছে না।
.
.
-নিজের কেবিনে আনমনে বসে কলম চাবাচ্ছে মেঘ।ফোনের টুংটাং শব্দে ঘোর ভাঙল তার।আয়াজ চৌধুরীর নাম্বার থেকে একটা ম্যাসেজ এসেছে।
-Mr.Megh ur wife is now in my arms. Soon she is gonna……u know. Stop me if u can.
ম্যাসেজটা পরে মেজাজ পুরাই গরম হয়ে গেল মেঘের।হাতের ফোনটা ছুরে মারল সে।অনেক সহ্য করেছে সে। আর না। আজকে এর শেষ দেখেই ছাড়বে সে।……
চলবে

#অর্ধাঙ্গিনী (An Ideal Wife)
#পার্ট১৬
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
-ওয়েট এ মিনিট।তুই শেষ দেখবি ঠিক আছে বাট শুরুটা কই থেকে করবি?
-মানে?
-মেঘ এটা কোন মুভি না যে ডিরেক্টর তোকে আগে থেকে বলে দিবে আর তুই লোকেশনে হিরোর মতো এন্ট্রি মারবি।এটা রিয়েল লাইফ মেঘ।তুই কিভাবে জানলি আয়াজ চৌধুরী কোথায় আছে?
-রেওয়াজ আমাদের অফিসের সিকিউরিটি থেকে শুরু করে এমডি পর্যন্ত প্রতিজন কর্মচারীর কাছে একটা অফিশিয়াল ফোন থাকে যেটাতে জিপিএস সেট করা আছে।অফিসের সেন্ট্রাল পিসি থেকে যে কেউ আরেকজনের লোকেশন সহজেই ট্রেস করতে পারবে।
-নাইস এক্ট।বাট তুই…..।এক সেকেন্ড।
ফোনের শব্দে কথায় ছেদ পড়ল রেওয়াজের।লাল রঙের হার্টের ছবি দেখে হালকা হাসল মেঘের বুঝতে বাকি রইল না কে ফোন করেছে।মেঘ হালকা মাথা নাড়াল।
-সি ইউ ব্রো।
রেওয়াজ উঠে চলে গেল।বন্ধু বন্ধুর জায়গায়।কিন্তু ভালোবাসার স্থান সবসময় মনের কোনায়।হাজার দূরে সরালেও বন্ধু কখনো চলে যায় না।কিন্তু ভালোবাসা কখনো অবহেলা সহ্য করে না।তাই ভালোবাসার বাধনটাকে হালকা হাতে সামলাতে হয়।যত্নের সাথে অনুভূতি দিয়ে।
.
.
-গত একমাসে একবারও আমার চেহারা দেখোনি। এতোটা খারাপ লাগে আগে বললেই হতো।
এতটুকু বলেই ওপাশটা নিরব হয়ে গেল।রেওয়াজ বেশ বুঝতে পারছে কায়া অভিমান করেছে।
-আসলে বেবি আমার নাকের উপর তরমুজ সাইজের একটা পিম্পল উঠছে এই জন্যে শরমে তোমাকে চেহারা দেখাইনি…
ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শুনে রেওয়াজের ঠোট দুটোও প্রসারিত হলো।কায়া তার প্রোজেক্টের কাজে আমেরিকাতে আছে।গত দুই মাসে মেঘ প্রতি সপ্তাহে একবার গিয়ে কায়ার সাথে সময় কাটিয়ে এসেছে।কিন্তু লাস্ট একটা মাসে সে মেঘকে নিয়ে প্রচুর ডিপ্রেসড ছিল।কায়াকেও সে সবটা খুলে বলেছে।এমনকি কায়াই তাকে বলেছিল মেঘের পাশে থাকতে।কিন্তু এখন বুঝতে পারছে সে মেয়েটার সাথে বড় অন্যায় হয়ে গেছে।
-আসছ কবে?
-তুমি যখন বলবে।
-রেওয়াজ আমি সিরিয়াস। সত্যি করে বলো কবে আসছ?
-আমিও সিরিয়াস জানেমন। তুমি বল আমি হাজির হয়ে যাব।
-তাই না?ওকে দেন। কালকের মধ্যে তোমাকে আমি শিকাগোতে হাজির চাই।
-ইওর উইশ ইজ মাই কমান্ড লাভ।লাভ ইউ বাই।
-বাই।
কল কেটে রেওয়াজ একটা টেক্সট পাঠালো মেঘের নাম্বারে।
.
.
-পাসপোর্ট আর ভিসা রেডি?এই নে তোর টিকিট
এয়ারপোর্টে মেঘকে দেখে রেওয়াজ তার হাতে টিকিট ধরিয়ে দিল।ইমিগ্রেশন করে মেঘ আর রেওয়াজ বসে আছে।একটা এনাউন্সমেন্ট শুনে রেওয়াজ মেঘকে টানতে টানতে বিমানে গিয়ে চড়ল।মেঘের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। কি হচ্ছে মেঘ তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।শুধু জরুরি ভিত্তিক একটা ম্যাসেজ দিয়ে তাকে বাসা থেকে টেনে এনেছে।টিকিটটা খুলে দেখল ডেস্টিনেশনে শিকাগো লিখা।কিন্তু এভাবে হুটহাট করে শিকাগো যাওয়ার মানেটা কি?কায়া ভাবীর কিছু হলো নাকি?
-রেওয়াজ.. এই রেওয়াজ??এই রেওয়াজ?
মেঘের চেচামেচি শুনে পেছন থেকে একজন চেচিয়ে উঠল
-Hey man. What are you shouting?
-সরি।
রেওয়াজ কানে হেডফোন লাগিয়ে ফুল ভলিউমে কমেডি মুভি দেখছে। মেঘ রেওয়াজের কান থেকে হেডফোনটা টেনে খুলে নিল।
-কি সমস্যা তোর?তুই নিজেও মুভি দেখবি না আমাকেও দেখতে দিবি না?
-রেওয়াজ তুই শিকাগো যাচ্ছিস ফ্লাইটে কমেডি মুভি দেখার জন্যে?সত্যি করে বলতো তুই শিকাগো কেন যাচ্ছিস? আর আমাকেই কেনো নিয়ে যাচ্ছিস?কায়া ভাবীর কিছু…..?
-তোর ভাবী আমকে বলেছে কালকের মধ্যে উনার সামনে হাজির হতে।বেচারি আমকে মিস করছে খুব।
-আলহামদুলিল্লাহ।তার জন্যে তুই এভাবে আমাকে বাসা থেকে টেনে নিয়ে যাবি?
.
.

-মেঘ…আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড।তোকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি।আমি যদি তোকে বলতাম আমি কায়ার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি তুই অফিস মিটিং কোন না কোন বাহানা দিয়ে প্লান ক্যান্সেল করে দিতি।আর তোকে তেল লাগানোর মতো টাইম আমার কাছে নাই। বুঝলি?এখন চুপচাপ মুভি দেখ।
রেওয়াজ আবার মুভি দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল।মেঘ আনমনে বাইরে তাকালো।শুধু মেঘ ভাসছে চারদিকে। সাদা মেঘের ফাকে দু একটা কালো মেঘ ভেসে যাচ্ছে।বেশ কয়েকটা কালো মেঘ জড়ো হয়ে বৃষ্টি নামবে।শীতল হবে পরিবেশ।কিন্তু বৃষ্টি তার বুকে যে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে সেটা কোনদিনও নিভবে না।……
চলবে