অসমাপ্ত গল্প অন্তিম পর্ব

0
899

#অসমাপ্ত_গল্প
#অন্তিম_পর্ব
#নিহিন_ইলিয়ানা

দিশা না পেয়ে সরাসরি আমার বরকে শট টা সেন্ড করে মেসেজ দিলাম।
কিন্তু তার এমন রিপ্লাইয়ের জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
তিনি রিপ্লাই দিলেন,তুই যখন আমাকে ফেলে চলে গেলি তখন ও এসে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে।
তুই যেই কবর বানিয়ে গেছিস,সেই কবরে ও নিয়ম করে প্রতিদিন মোম বাতি জ্বালায়।
আর সেই সুযোগ আমিই ওকে দিয়েছি।
ও আমাকে অসম্ভব ভালবাসে।

কথা গুলো শুনে একজন স্ত্রীর বুকের ভেতর তখন কি পরিমাণ যন্ত্রণা হতে পারে শুধু একটা বার ভেবে দেখুন।

মেয়েটার সাথে অনেক আগে থেকেই ওর চেনা জানা।
মেয়েটা ওকে অনেক লাভ করে এটা আমি আমার বরের মুখেই শুনেছি।
আর এও শুনেছি ও খুব খারাপ মেয়ে।অনেক ছেলেদের সাথেই ওর রিলেশন।

একদিন আমার বরের পোস্টে ওই মেয়ের কমেন্ট দেখে আমি ওই মেয়ের প্রোফাইলে ঢুকেছিলাম।
সেটা অবশ্য অনেক দিন আগের কথা।
ঢুকে দেখি ওই মেয়ে আমার বরকে ইন্ডিকেট করে কিছু পোস্ট করে রেখেছে।
পরে আমার বরকে আমি জানানোর পর আমার বর বলে,ও একটা খারাপ মেয়ে।
আমি ওকে সব ডিলিট দিতে বলতেছি।

পরে মেয়েটার আইডি থেকে সব ডিলিট দেয় ওই মেয়ে।

মেয়ে আমাকে নকও দিয়েছিলো তখন,
বলেছিলো আপনি রুদ্রাক্ষের কি হোন?
আমি বলেছিলাম ওয়াইফ।
সে আমাকে বলে,খুব ভালবাসেন ওকে?
উত্তর দিয়েছিলাম,নিজের বরকে কেউ কি না ভালবাসে?

সে বলেছিলো আমিও ভালবাসি রুদ্রাক্ষকে।
আমি বলেছিলাম,কিন্তু সে তো বাসেনা।সেতো শুধু আমাকেই ভালবাসে।

সেদিন ওই মেয়ে আমাকে বলেছিলো,সময়ই সব বলে দিবে।

আমিও বলেছিলাম,দেখা যাবে।

কিন্তু আমি তখনও বুঝিনি আমার বরের সাথে ওই মেয়ের যে কথা হয় নিয়মিত।

এরপর অনেক গুলো মাস কেটে যায়।ওই মেয়ের কথাও আমি ভুলে যাই।
কিন্তু সেদিন হুট করে আবার যখন ওই মেয়ের নিউ প্রোফাইল দেখি,আর প্রোফাইল পিকে আমার বরের ফটো দেখি সেদিন মাথায় আগুন ধরে যায়।
বুকের ভেতর রক্তক্ষরণ হতে থাকে।

আর এত ক্ষণে আমার বরকে জিজ্ঞেস করে সব উত্তর পেয়েও যাই আমি।

সে এই মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে।

আমি শুধু তাকে বলেছিলাম,একটা মাসে তোমার জীবনে অন্য কেউ আমার জায়গা নিয়ে নিলো।
আমার দুই বছরের সংসার তোমার কাছে কিছুই না?
আমার দুই বছরের সংসারের কাছে, আমার দুই বছরের ভালবাসার কাছে ওই মেয়ের এক মাসের ভালবাসা বেশি হয়ে গেলো?
আমার ভালবাসা কম পড়ে গেলো?

আমার বর বার কথা কাটাচ্ছিলো।
পরে একজনের কাছ থেকে জানতে পারলাম,রুদ্রাক্ষ আর ওই মেয়ের সম্পর্ক অনেক আগে থেকেই।
আমি ওর জীবনে আসার আগেই ওই মেয়ে ওর জীবনে আসে।আর ওরা প্রতিনিয়ত কথা বলে।
এখন ওদের মাঝে রিলেশন চলছে।
কোন এক ভুলবুঝাবুঝির কারণে ওদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিলো।
যা এখন মিটে গেছে।
আর যেহেতু ওই মানুষটা আমার বরের খুবই কাছের একজন সেহেতু সব সত্যি তা প্রমাণিত।

তাছাড়া আমার বরের মুখের কথাও তো মিলে যায় সব।
আমি অন্য জেলার মেয়ে হলে কি হবে,
আমার বর আর ওই মেয়ে তারা একই জেলা আর একই গ্রামের।
বাসাও পাশাপাশি।

আমার বর আমাকে হাত জোর করে বল্লো,আমি যেন ওই মেয়েকে আর নক না দেই।মুখে যদিও বলতে পারছিলোনা যে আমাদের মাঝে প্লিজ কাঁটা হয়ে আর এসোনা।
কিন্তু ওর ভাবে কথা গুলো আমি ঠিক বুঝে নিয়েছিলাম।

সেদিন নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিলো,
মনে হচ্ছিলো,দুনিয়াতে আসলে ভালবাসা বলতে কিছুই নেই।
ভালবাসা আসলেই রঙ বদলায়।
যেই মানুষটা দুই বছর আগে আমাকে পাগল হয়ে বিয়ে করেছিলো।
সেই মানুষ টা আজ আমার জায়গাটা এত সহজেই অন্য কাউকে দিয়ে দিলো।

আমি ওকে দিনের পর দিন,রাতের পর রাত মেসেজ দেই,কল দেই।
-কলিজারে একটা বার মেসেজ সীন করনা।
আমি না তোর বউ?এইভাবে আমাকে কষ্ট দিবি?

আমার অধিকার টুকু কেড়ে নিস না তোর পায়ে ধরি কলিজা।
আমি তোকে ছাড়া কি নিয়ে বাঁচবো?

কলিজারে,আমি তোরে খুব বেশি ভালবাসি,আমার জীবনের চেয়েও বেশি।
আমার দম না বন্ধ হয়ে আসছে।
প্লিজ একটু কথা বল।

আরো শত শত বার্তা।

কিন্তু ওপাশ থেকে কোন রিপ্লাই আসেনি।

তারপর একদিন অনেক আকুতি মিনতি করে আমার বরকে শেষ বারের মত বললাম,কলিজা।আমি না তোমায় অনেক ভালবাসি অনেক।
তুমি চিন্তা করোনা,আমি তোমার আর তোমার ভালবাসার মাঝ খানে কোন দিন আসবোনা।
কোন দিন তোমাদের পথের কাঁটা হবোনা।
আমি যে তোমার ভালো চাই।
আমি তোমাকে পরিপূর্ণ সুখ আর ভালবাসা দিতে পারিনি বলেই তো তুমি আজ ওকে বেছে নিলে।
সমস্যা নেই আমি নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিবো যে তুমি সুখে আছো।
তুমি তোমার ভালবাসার মানুষকে নিয়ে ভালো আছো।
চিন্তা করোনা,আর কোন দিন আমি তোমার ভালবাসার মানুষটাকে নক দিবোনা।
কোন ক্ষতি করবোনা তোমাদের।
ভালো থেকো।

কিন্তু আফসোস সে আমাকে আটকায়নি।
আর যেখানে আমার জন্য কোন ভালবাসাই নেই,সেখানে থেকেই বা কি করবো আমি।

এরপর চলে এলাম ওর জীবন থেকে চিরদিনের মত।
বুক ভরে দোয়া করে এলাম ও যেন ভালো থাকে ওর ভালবাসার মানুষকে নিয়ে।

এখনো প্রতি মোনাজাতে আমি ওর জন্য সবার আগে দোয়া করি।

ভালো থাকুক সে।
ভালো থাকুক আমার ভালবাসা,
অন্য কাউকে ভালবেসে।

সমাপ্ত

(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)