অস্তিত্বের খোজে পর্বঃ ১১-১২

0
3714

অস্তিত্বের খোজে
পর্বঃ ১১-১২

নাফিসা মুনতাহা পরী



– ভোরের দিকে আমার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে দেখি আমি শুভ্র কে আষ্টে পিষ্টে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে এতক্ষন ঘুমাচ্ছিলাম। আর শুভ্র পাশ ফিরে ঘুমিয়ে আছে। আমি বেশ লজ্জা পেলাম। আর তাছাড়া আমি এভাবে কেন! আমি কি আদৌ বেঁচে আছি না স্বপ্ন দেখছি। নাহ্ সব ঠিক আছেতো তাহলে ও আমার কাছে কেন?



– আমি হাতটা সরাতেই শুভ্রর ঘুম ভেঙ্গে যায়।
– কি ব্যাপার পরী তুমি কখন উঠলা।
– তুমি আমার রুমে কি করছো?(আমি)
– আমাকে জড়িয়ে ধরে সারা রাত এভাবেই ঘুমাইছো। আমাকে এদিক ওদিক পাশ ফিরতে দাও নি। এখন একটু ঘুমাইছি তাও তোমার সহ্য হচ্ছে না! আমাকে ঘুমাতে দাও তো বলে আবার চোখ বন্ধ করল।



– তুমি ঘুমাবা ঠিকি কিন্তু এখানে না তোমার রুমে গিয়ে বলে বেড থেকে উঠে দাড়ালাম।
– শুভ্র সাথে সাথে আমার দিকে তাকিয়ে বলল পরী বুকে কাপড় নেই আগে ওটা ঠিক করে আমায় বলতে আস বলে পাশ ফিরে আবার শুইল।


– আমি ধড়পড় করে ওর গা থেকে কম্বল টেনে নিয়ে নিজেকে ঢাকলাম। আমার শাড়ি যে কই গেছে আল্লাহ মালুম।
– এই তোমার লজ্জা করেনা ওভাবে কথা বলতে।
– কিসের লজ্জা! আজ কি নতুন দেখছি তাই লজ্জা করবে…….


– এই ছেলে জিবনে শুধরানোর না বলে ওকে হাত ধরে টেনে বললাম এই তুমি এক্ষুনি ওঠে যাবা আমার রুম থেকে মানে এক্ষুনি।
– ও একটানে আমাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে ওর মুখটা আমার মুখের কাছে এনে বলল জানো যখন তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরলে আমার যে তখন কি ভাল লাগছিল বলে বোঝাতে পারবনা। চলনা আমরা স্বাভাবিক ভাবে সংসার করি।



– আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে উঠে বসলাম। রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে ওর কথা শুনে।
– আমি একটানে বুকের উপর থেকে কাপড় সড়িয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে আমার মুখ ওর মুখের সামনে নিয়ে গেলাম…….. ও আমার দিকে অলপলক ভাবে তাকিয়ে আছে। তারপর ওকে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিয়ে বললাম যদি কখনও আমার ধর্মে আসেন এবং মুসলিম রিতিতে বিয়ে করেন আমি পরী তখন আমার এই উন্মুক্ত বক্ষে আপনাকে এভাবেই জড়িয়ে ধরব। পারবেন! সব ত্যাগ করে আমার কাছে আসতে। যেদিন পারবেন সেদিন এই কথাগুলো বলেন বলে ওয়াস রুমে চলে গেলাম। পাইছেটা কী! সব সময় গাঁ ঘেষার চেষ্টা করবে আর আমি মেনে নিব!



– শুভ্র পরীর চলে যাওয়া দেখল চুপ করে। ওর কথা যেন বন্ধ হয়ে গেছে। পরী এধরনের কথা বলবে শুভ্র কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি। শুভ্র রুম থেকে বের হয়ে গেল।



– পলা খাবার নিয়ে পরীর রুমে ঢুকে দেখে ও বিছানা ঝাড়ছে। পরী খাবার গুলো খেয়ে নাও দেখি। আর তোমাকে এগুলো কাজ করতে কে বলেছে।
– পলা আন্টি এত্ত সকালে খাবারের কথা কে বলল।
– শুভ্র বলল তুমি নাকি ঘুম থেকে উঠে গেছ তাই জলদি খাবার পাঠিয়ে দিতে বলল। তুমি কাল ও রকম কাজ করতে গেলে পরী! শুভ্র পাগলের মত হয়ে গেছিলো। কাল সারাদিন রাতে একটা দানাও মুখে তোলে নি। তুমি না খেয়ে পড়ে আছো বলে।



– সবাই কে মুক্তি দিতে চাইছিলাম কিন্তু দিতে পারলাম কই। যাও শুভ্রকে খাবার দাও আমি এগুলো খেয়ে নিচ্ছি বলে ওর হাত থেকে খাবার নিলাম।

– পলা বেশ খুশি হল শুভ্রের খাবারের কথা পরী বলাতে। পলা চলে আসল রুম থেকে।



– একটু বেলা হতেই সবাই আমার রুমে আসল শুধু বিমলা আর শুভ্র বাঁদে।
– অনিতা এসে পরীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল তুমি এটা কেন করতে গেলে!
– তুমি যেভাবে থাকবে আমরা কিছু বলবনা( কৌশিক)
– পরী তোমাকে আজ থেকে কেউ কিছু বলবে না। তুমি তোমার মত জিবন যাপন কর( নিতাই সেন)
– সবাই সবার মত ঙ্গান দিতেই আছে আর আমি সেগুলো গিলছি।



– সেদিনের পর থেকে শুভ্র একবারও আমার কাছে আসেনি। এভাবে ৫ মাস কেটে যায়। শুভ্র বাসায় থাকলে আমি বের হইনা। ও চলে গেলে বের হই। খাবার রুমেই খাই। এই ২ মাসে ওর সাথে একবারও দেখা হয়নি। ও হয়ত নিজেকে আমার কাছ থেকে গুটিয়ে নিয়েছে। এতে আমার খুব ভাল হয়েছে। ইচ্ছা মত চলতে পারি। এতে আমি খুব খুশি।




– এর মধ্য নীল স্বপ্নের আইডির ছেলে মৃদুলের সাথে খুব ভাল একটা বন্ধুত্ব তৈরী হয় আমার। এতদিনে একে অপরের পরিপূরক হয়ে গেছি। দিনে ক্লাস করা…. ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দেওয়া…. বাসায় ফিরে পড়াশুনা আর ফেসবুকে মৃদুলের সাথে চ্যাট করা। ওকে আমি দেখিনি। কিন্তু ও আমাকে দেখেছে। এভাবেই দিন গুলো কাটছিল। বিমলা দিদুন আমার সাথে একদম কথা বলেন না। তাছাড়া মোটামুটি সবার সাথে ভাল সম্পর্ক শুধু শুভ্র ছাড়া।



– এভাবে আরও কিছু দিন কেটে যায়। আমি ভাবি একটা জব নিব আর এখান থেকে চলে যাব। কত আর মানুষের ঘাড়ে খাব।
– একদিন ক্লাস শেষে আমরা ৭ ফ্রেন্ড মিলে একটা বড় রেস্টুরেন্ট এ যাই। আমাদের ফ্রেন্ড বিদ্যুৎ এর জন্মদিন বলে টিপস্ দিচ্ছে। সবাই মিলে হইহই করে গেলাম।



– আগে কখনও এতো বড় রেস্টুরেন্টে আমি আসিনি। সবাই বসে গল্প করছি। খাওয়ার অর্ডার দেওয়া হয়েছে। just wait করছি। এমন সময় দেখি দুরে একটা টেবিলে শুভ্র সহ কয়েক জন বসে কথা বলছে এবং কফি খাচ্ছে। সাথে ২ টা মেয়েও আছে।



– ওকে দেখে আমি জাষ্ট ফ্রীজ হয়ে গেছি। আমার যে এখানে আসা ঠিক হয়নি বেশ বুঝতে পারছি। চট করে মাথায় কাপড় দিয়ে ফেলি। মনে হয় শুভ্র এখনো আমাকে দেখতে পায়নি।


– এমন সময় খাবার চলে আসে। সবার খাবার খোলা শুধু আমার টা ঢাকা।
-এই বিদ্যুৎ সবাইকে খাবার দিছে আর আমাকে এভাবে কেন।



হুম হুম হুম সারপ্রাইজ আছে তোর জন্য তাই। ওর কথা শুনে সবাই হেঁসে উঠল।
– ওদের হাঁসি দেখে বুঝলাম ওরা সবাই প্লান করে আসছে আমাকে কিছু না জানিয়ে।
– বিদ্যুৎ যে এমন একটা কাজ করে ফেলবে আমার কল্পনাতেও আসেনি।



– পুরো রেস্টুরেন্ট মানুষের সামনে হাটু গেড়ে ২৩ টা কালো গোলাপ দিয়ে আমায় প্রপোজ করে বসে। ওর আজ ২৩ তম জন্মদিন।
পরী.. পরী…পরী…পরী… শুধু আমার পরী…….
I Love You pari……..
তোকে খুব ভালবাসিরে। তুই কি আমার বৃদ্ধ বয়সে চলার সাথী হবি!



– ওর কথা শুনে আমার পুরো শরীর ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগল। যদি একবার শুভ্র বুঝতে পারে তো বিদ্যুৎ আজ শেষ।


– আমি কাঁপা কাঁপা গলায় ওকে থামতে বললাম। এই কি শুরু করেছিস। সবাই দেখছে তো।
চল এখান থেকে বলে আমি উঠতেই ও আমার হাত ধরে বলল ওহ এখানে হয়নি তাহলে চল বাহিরে আরও মানুষের সামনে গিয়ে প্রপোজ করি। বিদ্যুৎতের কথা শুনে আবিদা হেঁসে উঠল।




– পরীর নাম শুনে শুভ্র সে দিকে তাকায়। দেখল একটি মেয়ে মাথায় বড়সড় ঘোমটা টেনে বসে আছে। কিন্তু ঘোমটা টা বেশিক্ষণ থাকলনা। সবাই পরীকে নিয়ে হাসাহাসি করতে ওদের কারো হাত লেগে ঘোমটা পড়ে গেল। শুভ্র পরীকে দেখে একদম ক্ষেপে গেল। চড়চড় করে মাথায় রক্ত উঠে গেল। চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে।



– আমি এবার শুভ্রকে ঐ অবস্থায় দেখে চট করে উঠে পড়ি। ওখান থেকে বের হতেই বিদ্যুৎ সহ ওরা বলে উঠল কিরে কিছু না খেয়ে কই যাস! মানুষের কথার দাম দিস না কেন। বস এখানে বলে জোড় করে বসাল।




– বিদ্যুৎ কেক কাটল আর প্রথমে আমার মুখে কেক ধরল। আর গলা দিয়ে কেক নামে। সামনে আজরাঈল বসে আছে।



– দেখছেন মি. শুভ্র সেন এই বাচ্চাদের পাগলামো। মানুষ জনও এরা দেখে না। একদম পাবলিক প্লেসে সব কথা গড় গড় করে বলে দিল। আর কতকি জিবনে দেখতে হবে বলেই মুচকি হেসে দিল একজন।

– শুভ্র শুধু হুম বলে চুপ করে থাকল। ৫ মাস পর পরীকে দেখছে তাও আবার এই অবস্থায়। মাথা কার ঠিক থাকে। একি বাসায় থাকা হয় তবুও এদের দেখা হয়না বা করেনা ২ টাই। আর ও এখানে এগুলো করে বেরাচ্ছে। কতটা অধঃপতন হলে এতটা নিচে নামে কেউ।




– আমাদের আগেই শুভ্ররা চলে গেল। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম কিন্তু ও একবারও তাকালো না আমার দিকে।
– দেখ বিদ্যুৎ পাগলামি করিস না। আমার এগুলো ভাল লাগেনা বলে উঠে বাহিরে চলে আসলাম।
– শুভ্র কারে উঠে দ্রুত গতিতে আমার সামনে দিয়ে চলে গেল। আমিও সঙ্গে সঙ্গে একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় এলাম।



– আল্লাহ্ আজ যে কি কপালে আছে তুমিই ভাল যানো বলে রুমে ঢুকে ফ্রেস হলাম।
আজ বই নিয়ে বসে আছি ভয়ের ঠেলায়। নাহ্ মাথা থেকে টেনশান যাচ্ছেনা। শুভ্রতো রাতে ফেরে বাসায়। এসে কি সবাই কে বলে দিবে?



– অর্পিতা সন্ধার দিকে আসল আমার রুমে। গল্পের মাঝে এক পর্যায়ে বলেই ফেলনাম অর্পিতা তোমার শুভ্রদা বাসায় এসেছে!
– অর্পিতা কিছুটা অবাক হয়ে বলল কেন পরী দিদি… দাদাকে কিছু বলতে হবে?
– আরেহ না এমনি জিগাসা করলাম আর কি!
-অহ… দাদাতো আজকাল অনেক রাতে ফেরে পরী দিদি।
-কেন?
– জানিনা দিদি অনেক দিন থেকেই বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল।




– রাত ১০ টার দিকে একটা কাজের লোক এসে আমায় খাবার দিয়ে গেল।
– খাবার খেয়ে ফেসবুকে ঢুকলাম। দেখি মৃদুল অনেক গুলো মাসেজ দিয়েছে। দেখে বেশ ভাল লাগল।
– মৃদুল শুভ্র আর আমার বিষয়ে সব জানে। তাই ওকে সব কথা শেয়ারও করি আমি।




– Hmm Sir তোহ কি করছেন?
– পরী তুমিতো আমায় ভুলে গেছ….
– কখনও না। আজ একটু বিজি ছিলাম বলে সব খুলে বললাম।
– বেশ ঝামেলায় পড়ে গেছ দেখছি। সাবধানে থেক।
– মৃদুল আমার সাথে একটু ফোনে কথা বলবে! আমার কিছু ভাল লাগছেনা।
…………………………….?
– কি হলো চুপ কেন! কোনদিনও কিছু চাইনি আজ প্রথম কথা বলতে চাইলাম তবুও কথা বলবা না!
……………………………..?
– মৃদুল কথা বলবানা! ওকে না বল। যাও তোমাকে আমার দরকার নেই বলে অফ লাইনে চলে আসলাম।




– খুব কাঁদতে ইচ্ছা করছে আমার। জিবনে কোন ছেলের সাথে নিজ থেকে কথা বলতে চাইলাম আর সে এই ব্যবহার করল?



– আমি কাঁদতে লাগলাম। আমি মনে হয় মৃদুল কে ভাল বেসে ফেলেছি। ওর মন ভুলানো কবিতা, কথা বলার বচন ভঙ্গি, কেয়ার সব যেন দিন দিন পাগল বানিয়ে দিচ্ছে আমায়। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পগলাম।



– ফোনে কলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। ফোনের স্কীনে দেখলাম আননোন নাম্বার। এই রাত ৩ টার সময় কে ফোন দিল!
– ফোন কেটে দিলাম। আবার কল দিল। আবার কেটে দিলাম। এভাবে ১০ বার হওয়ার পর শেষে রিসিভ করলাম।




– ফোনের ওপাশে থেকে আমাকে সালাম দিল। মিষ্টি কন্ঠের একটা পুরুষ কন্ঠ।
– সালাম নিয়ে বললাম কে আপনি?
– বাহ্ রে এত জলদি ভুলে গেলে আমায়?
– মৃদুল……..!
– তোমার সিক্স সেন্স দেখছি বেশ ভাল।



– এতো লেট করে কেন কল দিলা!
– কেন এতে মহারানী নাকফুলে কাঁদতে কাঁদতে বুঝি ঘুমিয়ে গেছে।
– উমমমমমহ্ একদম বাজে কথা বলবা না।
– আমি বাজে কথা বলিনা পরী সেটা তুমি ভাল করেই জানো।
– কি করছিলা মৃদুল?
– আমি তো আমার পরীর কথা ভাবছিলাম।
– যাহ্ কি বল সব।



– পরী আমাকে ভালবাস?
– জানিনা…..
– তোহ কে জানে!
– জানিনা জানিনা জানিনা…..
– আস্তে বল শুনতে পাবে কেউ। শেষে তোমার প্রবলেম হবে পরী।
– তাই!
– হুম (মৃদুল)



– কথা বলতে বলতে আমি ছাদের উঠতে লাগলাম।
– পরী কই যাচ্ছো?(মৃদুল)
””

– বাহ্ বুঝে গেছ দেখছি! ছাদে যাচ্ছি।(আমি)
””””
– আস্তে হাটো। হাটার শব্দে দেখছি বাসার সবাইকে জাগিয়ে ছাড়বে।(মৃদুল)
”””’
-আরেহ্ না কিছু হবেনা।(আমি)
””””
– এতো রাতে ছাদে তোমার যেতে হবেনা। রাত জিনিস টা ভাল নয়। এখুনি নিচে নামো বলছি।(মৃদুল)
””””
– না নামবোনা বলে উঠে গেলাম।(আমি)




– আবছা দুরে কাউকে ছাদের কিনারায় দারিয়ে থাকতে দেখলাম।
– আজ আর ভয় লাগল না। কথায় আছেনা প্রেমে পড়লে মানুষের সাহস বেড়ে যায় তেমনটা আমার বেলায় হয়েছে।
– আমি জলদি ছাদের লাইটটা জ্বালালাম। শুভ্রকে দেখে রিতিমত ভুত দেখার মত দেখলাম। চট করে ফোন কেটে দিলাম।




– লাইট জ্বালাতেই শুভ্র পিছন দিকে ফিরে তাকালো। ও সিগারেট খাচ্ছিল। ওর চোখ ২ টি প্রচুর লাল দেখাচ্ছে। তার মানে ও কাঁদছিল।


– আমাকে দেখে ও হন হন করে আমার সামনে দিয়ে নিচে নেমে গেল। লাইটের আলোয় অনেক দিন পর কাছ থেকে শুভ্র কে দেখলাম। আমি এই কোন শুভ্রকে দেখলাম। অনেকটা শুকিয়ে গেছে। যার গায়ের রং শুভ্রর মতই উজ্জল ছিল সেটা যেন নির্মল হয়ে গেছে।



– ও যেখানে দাড়িয়ে ছিল সেখানে গিয়ে দেখলাম অনেক গুলো সিগারেটের ফিল্টার পড়ে আছে। তারমানে ও এতগুলো সিগারেট খেয়েছে?



– আমি নিচে নেমে আসলাম। মৃদুল কল দিচ্ছে বার বার সেদিকে খেয়াল নেই আমার। এত রাত অবদি শুভ্র কেন জেগে আছে। সকালে তো ওর অফিস আছে। ওর রুমের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লাম। সাহস হচ্ছেনা ভিতরে যাওয়ার। যদি এই রাতে সিনক্রিয়েট করে তাহলে সবাই জেগে যাবে। যে ওর মাথার তার ছেড়া। আমি ওখান থেকে চলে আসলাম।



– এসে মৃদুলকে কল দিলাম। ও কেটে দিয়ে কল ব্যাক দিল। আমি রিসিভ করতেই বলল কি ব্যাপার কল কেন ধরছোনা। কেউ কি এসেছিল!
– হুম বলেই অন্য কথায় চলে গেলাম। আরও। কিছুক্ষণ কথা বলতেই ফযরের আযান দিতেই ২ জন ২ জনকে আল্লাহ হাফেয বলে ফোন রেখে দিলাম।




– নামায পড়ে ঘুমালাম। খুব সকালে আবার অর্পিতা এসে আমায় ডেকে তুলল। ধুর কেবল একটু ঘুমালাম আর ও এসে ডাক দিল। কি করা রেডী হয়ে দাদুর সাথে জগিং এ বের হলাম। আমিতো বার বার ঘুমে ভেঙ্গে পড়ছিলাম।




– কি ব্যাপার পরী রাতে ঘুমাও নি?
– ওনার কথা শুনে কি বলব ভেবে পেলাম না। না মানে আজ ঘুম হয়নি দাদু।
– অহ তাহলে তুমি আর অর্পিতা এখানে থাকো আমি একটু দৌড়ে আসছি।



– পরী দিদি আমার একটা কাজ করে দিবা আমায়?
– হুম বলো।
– আজ বিকেলে তোমাকে নিয়ে আমার এক বান্ধবীর বাসায় যাব। মাকে বললে যেতে দিবে না একটু তুমি বলবা যে তোমার সাথে যাচ্ছি বাহিরে। তাহলে যেতে দিবে।
– ওকে বলবনি।
– উম্মাহ্ দিদি তুমি না খুব ভাল।
– ওকে আর পাম দিতে হবেনা।



– আমরা চলে আসলাম।এসে ফ্রেস হয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। ১১ টার সময় আবিদা কল দিয়ে বলল কিরে ক্লাসে কখন আসবি। ১৫ মিনিট আছে। জলদি আয়। আরিফ স্যারের ক্লাস নো মিস। তাহলে স্যার জিন্দা কেটে লাশ বানাবে।




– জলদি বিছানা ছেড়ে উঠতেই দেখলাম টেবিলে খাবার রাখা। হয়ত ঘুমিয়ে ছিলাম তাই ডাকে নি কেউ। কিন্তু খাওয়ার একদম সময় নেই। জলদি ফ্রেস হয়ে কোন মতে রেডী হয়েই নিচে নামতেই দেখলাম অনেক গুলো মেহমান। এরা কারা আবার…. সেদিকে না তাকিয়ে যেতেই অনিতা আন্টি আমায় ডেকে ওনাদের সামনে এনে বলল এটাও আমার আর একটা মেয়ে। আমি সবাই কে সালাম দিলাম। কিন্তু কেউ নিলনা। শেষে আমার বয়সী একটা ছেলে সালাম নিল। আমি ওখানে আর না থেকে আন্টিকে বলে বাসা থেকে বের হলাম।



– ক্লাসে যেতে ১০ মিনিট লেট। স্যার আসতে পারি!
– আরিফ স্যার ওনার ক্লাস নেওয়ার সময় কথা বলা একদম পছন্দ করেন না। তার মধ্য আমার লেট আর কথা বলায় তিনি বেশ রেগে গেল।
– কটা বাজে?
– Sir আসলে বাসায় মেহমান এসেছেতো তাই একটু দেরী হলো।
– চুপ দেখে তো মনে হচ্ছে ঘুম থেকেই উঠে আসছেন।
– ধমক খেয়ে চুপ করে গেলাম। এবং গিয়ে আবিদার কাছে বসলাম। পুরো ক্লাসে বেইজ্জতি। কপালে যে আর কি আছে আল্লাহ্ ভাল জানে।



– ক্লাস শেষে বাসায় চলে আসলাম। বিদ্যুৎ কিছু বলতে এসেছিল কিন্তু ওকে আর সুযোগ দেইনি। বাসায় এসে খাবার খেয়ে আবার একটা ঘুম। বিকেলের দিকে অর্পিতা এসে ডেকে বলল ও পরী দিদি চলনা মা কে একটু বলো। কি আর করা আমি গিয়ে অনিতা আন্টিকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে অর্পিতা কে নিয়ে বের হতেই নিদ্রা আপুর সাথে ধাক্কা খেয়ে গেলাম।


– এই তোমার চোখ কোথায় রেখে হাট?(নিদ্রা)
– দুঃখিত আপু…..
– নিদ্রা আপু বলল কই যাচ্ছো তোমরা?
– অর্পিতা বলে উঠল আমার বান্ধবীর বাসায় বৌদি। সন্ধার আগেই ফিরে আসব। বলেই চলে আসলাম আমরা।
– কিন্তু অর্পিতা আমাকে এখানে কেন আনল। একটা পার্কে নিয়ে আসল। অর্পিতা এখানে কেন তোমার না বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার কথা।
– দিদি আমার এখানেই বান্ধবী আছে। তুমি এখানে বসে থাক আমি আসছি একটু বলেই সবার সামনে আমাকে একা রেখে চলে গেল।




– প্রায় ২০ মিনিট হতে গেল অর্পিতার আসার কথা নেই। কি করছে মেয়েটা!

– মেয়েটা প্রেম করছে আর এর ব্যবস্থা তুমি করে দিলা এভাবে বলেই সবার সামনে ১ টা থাপ্পড় বসিয়ে দিল আমার গালে। শুভ্রর জিবন নষ্ট তো করেছো এখন অর্পিতার পিছে লেগেছো বলেই আরও একটা থাপ্পড় মাড়ল নিদ্রা আপু। সামনে অনিতা আন্টি অর্পিতাকে নিয়ে এসে দাড়াল। আমার এত খারাপ লগল যে মনে হচ্ছে এখান থেকে ছুটে চলে যাই। সবার সামনে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে গেলাম।
– দাড়াও তোমার কি হালটায় করি তোমার কল্পনাতে সেটা ভেবে পারবানা বলেই আমার হাত ধরে হির হির করে টেনে নিয়ে গেল গাড়ির কাছে।

চলবে——///
অস্তিত্বের খোজে
নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ১২



– নিদ্রা আপু আমাকে হাত ধরে টেনে কারে উঠাইলো। আমি বুঝতে ছিলাম না আসলে আমার সাথে কি ঘটছিল। এরা কই থেকে আসল। সব কি আগেই প্লান ছিল! আর্পিতা কি আমার সাথে ইচ্ছা করে এসব কাজ করল।




– আমায় বাসায় এসে দাড় করিয়ে বাসার সবাই কে জোড়ে জোড়ে ডাকতে লাগল নিদ্রা আপু।
– কি হয়েছে রে নিদ্রা ষাঁড়ের মত চিল্লাচিল্লি করছিস কেন?(বিমলা)


– দিদুন তুমিই ঠিক। এই মেয়ে যে কত্ত বড় খারাপ আজ যদি আমি ফলো না করতাম তাহলে কোনদিনই জানতে পারতাম না।
– কি হয়েছে বলবি তো? (বিমলা)



– ও অর্পিতাকে নিয়ে গিয়ে প্রেমলীলা করার সুযোগ করে দিছে একটি ছেলের সাথে। অর্পিতা না হয় কিন্তু এ! এতবড় মেয়ে হয়ে কিভাবে এ কাজ করল।(নিদ্রা)
– স্বাধে আর বলি ওরে বাসা থেকে বের করে দাও। তা না করে ওকে দেবী সাজিয়ে মন্দিরে রেখে পুজা দেয় তোর দাদু আর শুভ্র। আমার সংসার টাকে শেষ করে দিল।



– অনিতা পরীর সামনে এসে জোড়ে একটা চড় মেরে বলল তোকে বিশ্বাস করে নিজের মেয়েকে তোর হাতে তুলে দিছি…. নিজের মেয়ের মত দেখেছি আর তুই কি করলি আমার মেয়েটার সর্বনাশ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিস। শুভ্র কে তো শেষ করেছিস এবার মেয়েটার দিকে নজর দিয়েছিস! তোর কি ক্ষতি করেছি যে আমাদের নিয়ে এভাবে সর্বনাশা খেলায় মেতে উঠেছিস?




– আমি অর্পিতার দিকে একবার তাকাতেই ও মাথা নিচু করল। এটা অন্তত ওর কাছে আশা করিনি। সত্যটা বলতে পারত। আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ফ্লোরে পরে যাচ্ছে।



– নিতাই সেন সব শুনে গম্ভীর হয়ে বলল অনিতা আমি কখনও মানব না যে পরী এই কাজ করতে পারে। দেখ আমাদের অর্পিতার ঘাপলা আছে। আমি মানুষ চড়িয়ে খাই। তাই অন্তত আমাকে বুঝ দিতে এসো না। পরী যাও তোমার রুমে এখানে নাটক তোমাকে দেখতে হবেনা।




– অনিতা এবার প্রথম শশুরের কথার উপর কথা বলল। বাবা একটা পরের মেয়ের জন্য আপনি আমার মেয়েটাকে দোষ দিচ্ছেন! এতটা প্রিয় হয়ে গেল সে আপনার।



– অনিতা যা যানোনা তা নিয়ে তোমায় তর্ক করতে যেওনা। এর ভুল যেদিন বুঝবা সেদিন মাফ চাওয়ার মত সময় পাবানা। আগে নিজের মেয়েকে সামলাও তারপর পরের মেয়েকে নিয়ে টানা টানি কর। কি হল! পরী এখনও দাড়িয়ে আছো? যাও আর নাটক দেখতে হবে না বলে নিতাই সেন চলে গেল।




– আমি কান্না করতে করতে উপরে এসে দরজা বন্ধ করে খাটে বসে কাঁদতে লাগলাম। আমি এখানে থাকতে চাইনা কেন এরা বোঝেনা!



– জিবনে অনেক মেয়ে দেখেছি ওর মত বেয়াদপ মেয়ে কখনও দেখিনি। সবার মুখের উপর দরজা ওভাবে লাগিয়ে দিবে তাই বলে!
আর হ্যাঁ অর্পিতা তোমায় যদি দেখছি পরীর সাথে মিশতে তাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন বলেই নিদ্রা চলে গেল।



– আমি বার বার মৃদুলকে কল দিয়েই যাচ্ছি। কিন্তু ও রিসিভ করছেনা। প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে কল দিয়েই যাচ্ছি রিসিভ করছেনা। কতবার যে মাসেজ করলাম কোন রিপ্লাই নেই।



– মানুষের বিপদে কাউকে পাশে পাওয়া যায়না। আমি চাপা কাঁন্না করছি। শেষে রেগে গিয়ে ফোনটা একটা আছাড় মারলাম গায়ের জোরে। যার ফলাফল ফোনটা ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেল।



– আমি সন্ধার পর দাদুর রুমে গিয়ে উকি দিলাম। উনি বসে আছেন। আমি ওনাকে ডাকতেই বিমলা দিদুন বলে উঠল এই মেয়ে তোমার লজ্জা নেই তুমি আবার এখানে এসেছো?



– দাদু রুম থেকে বের হয়ে আমাকে বাসা থেকে বের করে আনলেন। উনি একটা রিক্সা নিয়ে আমাকে উঠতে বলেই উনি উঠে গেলেন। আমি অবাক হয়ে ওনার সাথে উঠলাম রিক্সাই ।



– পরী আমরা আজ রিক্সা ভ্রমন করব চলো। ( নিতাই)
– আমি শুধু মাথা নাড়ালাম।
– পরী কি হয়েছিল সেখানে আমাকে খুলে বল বলে উনি গম্ভীর হয়ে গেল।
– আমি জগিং এর থেকে সব ঘটনা খুলে বললাম এবং আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিলাম।
– দাদু সব বুঝতে পেরে বলল কেঁদনা পরী। অর্পিতার এধরনের কাজ করা ঠিক হয়নি একদম।



– দাদু আমাকে নিয়ে একটা ফুসকার দোকানে নামল। পরী আজ আমার পক্ষ থেকে তোমাকে খাওয়ার টিপস্ দিচ্ছি। কি কি খাবা বল।
– আমি ওনার দিকে চেয়ে একটা হাসি দিয়ে বললাম হাফ প্লেট ফুসকা হাফ প্লেট চটপটি। তারপর বিরিয়ানি, আইসক্রিম আর ২ হাত ভরে চকলেট। কি পারবেন তো খাওয়াতে?



– কি বলো তুমি এই নিতাই সেন পারবেনা এটা কি হয় বলেই অর্ডার দিল খাবার।
– আমার সাথে উনিও খেলেন। যানো পরী আমিও রেনুর সাথে এভাবে শেষ রাস্তায় খেয়েছি। আর আজ বলে একটা মুচকি হেসে দিলেন।



-আমি খাবার শুরু করে দিছি। কষ্টময় দিন শেষে এরকম সারপ্রাইজ জাষ্ট অসাধারণ।
অনেক মজা করলাম। রেস্টুরেন্টে আবার নিয়ে গেল। বিরিয়ানির অর্ডার দিতেই একজন বলে উঠল স্যার মেয়েটি কে?
– উনি হেঁসে বললেন খুব স্পেশাল কেউ।
– আমি হাঁসতে লাগলাম ওনার কথায়।
– খেয়ে আমরা আবার রিক্সাই উঠে পড়লাম। পুরো শহর ঘুরে বেড়ালাম। প্রায় রাত ১১ টার দিকে বাসায় ফিরলাম। আসার সময় অনেকগুলো চকলেট অর্পিতার জন্য দাদু নিয়ে আসলাম।




– বাসায় এসে দেখলাম সবাই যার যার রুমে তাই সোজা আমার রুমে গেলাম। গিয়ে দেখলাম ফোনটা ফ্লোরে পড়ে ছিল ভাঙ্গা অবস্থায় কিন্তু এখন সেটা আমার বেডে পড়ে আছে। হয়ত পলা আন্টি গুছিয়ে তুলে রাখছে।



– আমি ফ্রেস হয়ে এসে শুয়ে পড়লাম। ঘুম আসছেনা। কেন যে ফোনের উপর রাগ ঝাড়লাম এখন মৃদুলের সাথে কেমনে কথা বলব। বেশ ছট পট করতে লাগলাম। এভাবেই প্রায় ৭/৮ দিন কেটে গেল। মৃদুলের সাথেও আর কথা হয়না।



-একদিন ভার্সিটি থেকে রুমে এসে দেখি আমার বেডে একটা গিফট্ পেপারে মোড়ানো একটা ছোট বক্স। আমি ওটা হাতে নিয়ে এদিক ওদিক তাকালাম। কাউকে না পেয়ে বক্সটি খুলে দেখি একটা অনেক দামী ফোন। নিচে একটা চিরকুঠ তাতে লেখা গিফট্। দাদু দিয়েছে? কিন্তু উনি জানলো কি করে আমার ফোন নেই। ধুর যা মনে তাই হোক বলে ফোনে আমার সিম উঠায়ে চার্জে দিলাম।



– সন্ধার পর আমি নামাযে দাড়াবো এমন সময় অর্পিতা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল পরী দিদি স্যরি। আমি সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলাম।



– আমি অর্পিতাকে এক ধাক্কায় দুরে সরে দেই। এই Don’t tach me and don’t talk me……
-একদম আমাকে ছুবেনা। দেখছো না আমি নামাযে দাড়িয়েছি। তোমার ঘাম আমার গায়ে লাগলে অযু নষ্ট হয়ে যাবে। আর তুমি এখানে কেন এসেছো। আমার ইচ্ছা নেই তোমার চেহারাও না দেখা বলেই নামাযে দাড়িয়ে যাই।



– অর্পিতা অপমান হয়ে কেঁদে ফেলে এবং চোখ মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
– যাওয়ার সময় শুভ্রর সাথে ধাক্কা খেল অর্পিতা।
– এই কি হয়েছে তোর কাঁদছিস কেন!
– অর্পিতা A to Z সব বলল শুভ্রকে।
– অর্পিতার কথা শুনে শুভ্র ক্ষেপে গিয়ে পরীর রুমে গিয়ে দাড়িয়ে পড়ল। কারন পরী নামায পরছিল।



– নামায পড়া শেষ করে উঠে শুভ্রকে দেখে আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম। এই তুমি আবার আমার রুমে আসছো? সমস্যা কি তোমার!



– শুভ্র কোন কথার জবাব না দিয়ে নিজের শার্টের বোতাম খুলতে লাগল।
– আমি ভয় পেয়ে বললাম শার্ট কেন খুলছো?
– শুভ্র শার্ট খুলে কোন কথা না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে ফেলে অনেক জোড়ে।
– আমি ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করি বার বার কিন্তু উনি এবার আমার হাত মুচরিয়ে ধরে বলল বেশ অহংকার তোমার বেড়ে গেছে না! দেখি তুমি কেমনে অপবিত্র হয়ে যাও বলে শুভ্র ওর গাল আমার গালের সাথে ঘষিয়ে দিল আর ওর পুরো শরীর আমার সাথে।
– আমি চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম শুভ্র কি করছ। তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ছাড়ো আমায় বলতেই ও আমাকে কষিয়ে ২ টা চড় মেরে আমায় খাটে ফেলে দিল ধাক্কা মেরে।
– শুভ্র শার্ট গায়ে জড়িয়ে বলল যদি অর্পিতার সাথে আবার এরকম ব্যবহার করেছো তাহলে এর থেকেও বেশি খারাপ অবস্হার রুপ নিবে।



– আমি খাট থেকে উঠে শুভ্রকে ধাক্কা দিয়ে বললাম তোমার সাহস কি করে হয় আমার গায়ে হাত তুলা?
– পরীর চিৎকারে নিদ্রা, অনিতা সহ পলা অর্পিতা চলে আসে।
– শুভ্র এবার আমার সামনে এসে আঙ্গুল তুলে বলল যা বলেছি তা মাইন্ডে রাখবা এতে তোমার ই মঙ্গল। তাছাড়া……….



– শুভ্র কি করছিস আর কি হয়েছে ওর সাথে এমন ব্যবহার করছিস কেন বলে অনিতা ছেলের কাছে আসল।
– গালে ২ টা থাপ্পড় লাগাও শুভ্র। বেয়াদপ মেয়ের গলার ঝাজ দেখছো?




– বৌদি বউটা আমার তাই অপরাধ করলে আমি ওকে শাসন করব এখানে তৃতীয় পক্ষের কথা বলা আমি একদম পছন্দ করিনা। আর এখানে কি সার্কাস দেখতে আসছো তোমরা! বলেই শুভ্র রুম থেকে বের হয়ে গেল।



– আমি অর্পিতার দিকে ঘৃনার চোখে একবার তাকালাম। অর্পিতা বুঝতে পেরে রুম থেকে বের হয়ে গেল।



– এই তুমি কি শুরু করে দিছো বলতো আমাদের কি শান্তিতে থাকতে দিবেনা। তোমাকে না পারছি গিলতে না পারছি ফেলে দিতে।



– আমি থাকতে চাইনা এই বাসায় সেটা আপনার ছেলেকে জানিয়ে দিবেন। আমার ইচ্ছাও নেই এভাবে কথা শুনে থাকার। ভাগ্য বোঝেন! আমার ভাগ্য খারাপ না হলে আমি এত কথা শোনার পরও এভাবে পরি থাকি?
– আর নিজের মেয়ের কাছে সত্যিটা দয়া করে শুনে দেখবেন সেদিনের ঘটনাটি কি। আমি চুপ করে আছি বলে এই না যে আমি দোষী বলে অন্য দিকে মুখ করে দাড়ালাম।



– ওরা চলে গেল সবাই রুম থেকে। আমি দরজা বন্ধ করে দিয়ে বাথরুমে রাগে আর কান্নায় ফেটে পড়ি।



– রাত সাড়ে নয়টার দিকে পলা খাবার নিয়ে দরজায় নক করল কয়েকবার তার পরী দরজা খুলে দিল।
– শুভ্র কি তোমায় মেরেছে পরী!
– না আন্টি একটু বকা দিছে এ আর নতুন কি?
– জানো পরী আজ অনিতা বৌদি অর্পিতাকে খুব মেরেছে। আর বলছে এতবড় খেল কেমনে খেললি তুই। একটা পরের মেয়ের কাছে আমাকে ছোট করলি।



– এটা আরোও আগে করা উচিত ছিল আন্টি। আর আমি খাব না আমার ভাল লাগছেনা। আপনি এগুলো নিয়ে যান।
– পালা কিছু না বলে খাবার গুলা রেখে দিয়ে বলল শুভ্র বলেছে তুমি না খেতে চেলেও যেন রুমে রেখে যাই।
– ও পেয়েছেটা কি। ওর কথা মত আমায় চলতে হবে!
– পলা কিছু না বলে চলে গেল।




– রাত ১২ টার দিকে ফোন অন করতেই একের পর এক মেসেজ আসতেই লাগল। জলদি সাইলেন্ট করে ফেললাম। মৃদুলের সব মাসেজ। পড়ার আর সময় পেলাম না তার মধ্যই কল আসল।
– রিসিভ করতেই মৃদুল বলে উঠল পরী?
– উমমমম
– মৃদুল শুনেই কিস করতে লাগল পাগলের মত ফোনে। আমি কাঁদছি আর ওর কিস গুলো গুনছি।
– পুরো হাজার টা কিস করে বলল কই ছিলা তুমি। কতবার কল দিছি। নাম্বার বন্ধ তোমার।
– আমি কোন কথা না বলে শুধু বললাম তোমার কিস করা শেষ!
– বলতে দেরি কিস করতে ওর দেরি নেই। সাথে সাথে আবার পাগলের মত কিস করতে শুরু করল। এবার আর গুনি নাই।



– পরী আমি বিজি ছিলাম সোনা তাই রিসিভ করতে পারিনি বলে এত কষ্ট দেওয়ার অধিকার তোমায় দেই নি। কেন এতটা কষ্ট আমায় দিলা!
– মৃদুল যানতো আমি কি অবস্থায় থাকি বলে সব ঘটনা ওকে খুলে বললাম এবং কেঁদে উঠলাম।
– মৃদুল কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। পরী চলে আসো আমার কাছে। আসতে পারবা না!
– দাদুর জন্য কোথাও যেতে পারিনা মৃদুল।



– পরী কেঁদনা প্লিজ আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি তোমার কতটা কষ্ট হচ্ছে। তুমি যদি আগেই ওদের সত্যটা বলতে তাহলে আজ জল এত দুর গড়াতো না। ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হয়। জেদটাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করবা।



– মৃদুল আমার সাথে দেখা করবে?
– মৃদুল কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল তোমার পরীক্ষা না কিছুদিন পর। শেষ পরীক্ষায় তোমার সাথে দেখা করব।
– এবার খুশিতো ম্যাম!
– উমমমম খুব খুশি বলে একটা মুচকি হাঁসি দিলাম।
– পরী আর রাত জেগো না ঘুমিয়ে পড়। কিছু খেয়েছো!
– না…….
– জলদি খেয়ে নাও। খাবারের উপর রাগ করতে নেই। আমরা দেখা করছি তোমার শেষ পরীক্ষায় that’s final…..
-হুম….
– খেয়ে ঘুমিয়ে পড় আমা প্রিয়। I love you pari…♥
– I love you toooo Mredul….



– খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
– সকালে দরজায় জোড়ে জোড়ে ধাক্কায় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। পলা জোড়ে জোগে চিৎকার করে পরীকে ডাকছে।
– আমি ধরপড়িয়ে উঠে দরজা খুলে পলা আন্টিকে দেখে চুপসে গেলাম।
চলবে……….
গল্পটি ভাল লাগলে আশা করি শেয়ার করবেন।