আড়ালে কে পর্ব-০২

0
186

. #আড়ালে_কে [ #পর্ব- ০২ ] ( ১৮+ এলার্ট )
লেখক – #সালাহউদ্দিন_তারিক

ঘরে ঢুকেই অকথ্য ভাষায় চিৎকার করতে লাগে সিয়াম, “ঐ মা**গী, ঘড়িতে কয়ডা বাসে দেখস না। এখনো রান্না ঘরে কি করস? রান্না ঘরে কি নতুন ভা*তা*র জুটাইছস! ‘
কোনো উত্তর দিতে পারে না সাইফা। রক্ত*স্রাবে ভেজা পায়জামা পরে সোজা দাঁড়িয়ে থাকে। কতক্ষণ নিচের ঠোঁটটা দাঁতের ফাঁকে দিয়ে স্বজোরে চেপে ধরে রাখে। রান্না এখনো পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি সে। স্রাব চলা অবস্থাতে সে শারীরিক ভাবে অনেক দূর্বল হয়ে যায়। কিন্তু সিয়াম যে এসব শুনবে না, সময় মতো রান্না না পেলে একটা লা*থিও মাটিতে পড়বে না। এদিকে ডাল এখনো ফুটছে না।

চুলাতে আগুন যেন আসে যায়, লাইনের গ্যাসের অবস্থা খুব করুণ। যদি একটু তাড়াতাড়ি রান্না টুকু শেষ করা যায় তবেই মাইর থেকে বাঁচতে পারবে সে। এই ভেবে দ্রুত হাতে ডালের পাতিলে ঘুঁটনি নাড়তে থাকল সাইফা। গ্যাসের আগুন, মসুর ডাল দুটোই আজকে শত্রুতা করছে তার সাথে। ডাল প্রায় হয়ে আসছে, এমন সময়েই রান্না ঘরের দরজায় শব্দ পেলো সাইফা। বুকের ভিতরে ধুকধুক করে উঠল তার। ভূূত দেখার মতো পিছনে ফিরে তাকালো সে। সিয়াম তখন দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁত কিরকির করছে। ভয়ে ঢোকর গিলতে শুরু করল সাইফা। ভয়ার্ত চেহারা দিয়ে সিয়ামকে বুঝানোর চেষ্টা করল, ” প্লিজ এমন করো না একটু সময় দাও।”

সাইফার এই আকুতি সিয়ামের কাছে কোনো পাত্তাই পেলো না। বিদ্যুৎ গতিতে লাফিয়ে এসে সাইফার চুলগুলো মুঠ করে ধরল সে। শক্ত করে চুুলের মুঠি ধরে নিজের মুখের দিকে ফিরালো তাকে। ভয়ানক সৃষ্টিতে চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোকে কতবার বলেছি রান্নায় দেরি করলে আমার সহ্য হয় না?”

সাইফা দ্রুত নিজের নাক মুখ চেপে ধরল। সিয়ামের মুখ থেকে কেমন জঘন্য গন্ধ বেরুচ্ছে। গন্ধে বমি হওয়ার উপক্রম হয় তার। নাক-মুখ চেপেই উত্তর দেয়, “প্লিজ আর ৫ টা মিনিট অপেক্ষা কর শুধু।”

সিয়ামের মন গলে না এতে। চিৎকার করে বলে, “চুপ, একদম চুপ। কোনো অযুহাত শুনতে চাই না আমি।”
চুলের মুঠি ধরেই এক ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দেয় সাইফাকে।

— “আহ্ ” করে ব্যাথায় চিৎকার ছুঁড়ে সাইফা।
সিয়ামের মাথা যেন আরো গরম হয়ে যায়। চুল ধরেই টেনে উঠায় সাইফাকে। চুলের ডগায় ধরে তার কোমড়ে একের পর এক লা*থি মারতে থাকে। হঠাৎই একটা লা*থি পিছনে না লেগে পেটের দিকে লাগতেই বেশ খানিকটা র*ক্ত বেরিয়ে এলো তার লজ্জাস্থান হয়ে।

পায়জামায় রক্তের ছাপ দেখা দিতেই সিয়াম অস*ভ্যের মতো খেঁকখেঁক করে হাসতে লাগল। রক্তাক্ত পায়জামার দিকে হাতে বাড়াতে নিতেই পাতিলে ডাল উপচে পরে যাওয়ার শব্দ হলো। এটা দেখে সিয়াম আর সাইফার দিকে হাত বানালো না। হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিল, “কান্নাকাটি রেখে তাড়াতাড়ি পাতিল উঠিয়ে নিয়ে আয়।”

সাইফা উঠে এমন ভাবে রান্না গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল যেন কিছুই হয়নি। তাড়াতাড়ি পাতিল নামিয়ে অন্যসব জিনিসপত্র ও গুছিয়ে নিয়ে একটার পর একটা ঘরে আনতে লাগল সে। তখন ভেজা পায়জামা বেয়ে রক্তের ফোঁটা ফ্লোরে পরার উপক্রম। এই অবস্থাতেই সিয়ামকে খাবার গুছিয়ে দিয়ে, তারপর অন্য কাপড় নিয়ে পরনের কাপড় পাল্টাতে গেল। খাবার সম্পূর্ণ টেবিলে রাখার আগ পর্যন্ত সাইফার সাহস হয়নি পরনের কাপড় পাল্টানোর মতো ও।
.
.
.
প্রেমিকের হাতে দিনের পর দিন এভাবেই নির্যাতিত হচ্ছে সাইফা। প্রেমিক বলছি এই কারণেই যে তাদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হয়নি। বরং নিজেরাই একা একা পালিয়ে বিয়ে করেছে। বিয়ের আগেই এই বাসাটা ঠিক করে রেখেছিল সিয়াম। তাই কোর্ট থেকে বিয়ের পর্ব সেড়ে আর বাড়ি মুখো হয়নি তারা। এখানেই তাদের দিন অতিবাহিত হতে থাকে। সাইফার বাড়ি থেকে কল দিলে সে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, “আমি আমার পছন্দ মতো বিয়ে করেছি। তোমাদের পছন্দ করা ঐ বুড়া বেডাকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে আমার ছিল না। আমি আমাকে নিজের মতো গুছিয়ে নিচ্ছি। তোমরা অযথাই আমাকে খোঁজার চেষ্টা করো না। আর আমার স্বামীর নামে কোনো প্রকারের মিথ্যা মামলা দেওয়ার চেষ্টা করো না।”

সাইফা নিখোঁজ হওয়ার পাশাপাশি যখন পাশের এলাকার ছেলে সিয়ামও নিখোঁজ হয়ে যায় তখন সবাই তাদের সমবয়সী ছেলে মেয়েদের থেকে জানতে পারে তাদের প্রেমের কথা। সাইফার বড় ভাই আজিজ হন্ন হয়ে খুঁজে বেড়ায় তাদের। কিন্তু সিয়াম এতোটাই ধুরন্ধর ছিল যে, বাড়ির কারো সাহায্যই নেয়নি সে। পাছে কেউ তাদের অবস্থান বাড়িতে জানিয়ে দেয় এই ভয়ে। অবশেষে তাদের খুঁজে না পেয়ে সাইফার পরিবারের পক্ষ থেকে সিয়ামের নামে অপহরণের মামলা করা হয়। পুলিশ সবকিছু জেনেও অপহরণের মামলা গ্রহন করে। কিন্তু পরদিনই সাইফার ফোনে কল ঢুকলে সে সোজাসাপটা বলে দেয় মামলা উঠিয়ে নিয়ে তাদের শান্তিতে থাকতে দেওয়ার জন্য।

সাইফার বাবা কি করবেন তা বুঝতে পারেন না। শেষে একপ্রকার রাগ হয়েই মামলাও তুলে নেয়। আর মেয়েকেও সাফ জানিয়ে দেয়, “আজ থেকে তুই আমার মেয়ে না। আমার বাড়িতেও তোর আর কোনো অংশ নেই। কোনো দিন আর আমার বাড়িতে পা রাখার সাহস করিস না।

রাগ অভিমানে দুই পরিবার দুই জায়গা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যায়। তাদের মধ্যে আর কোনো প্রকারের যোগাযোগ থাকে না। সিয়াম একটা ফুড প্রোডাক্ট কোম্পানিতে কাজ করত নিয়মিত। সেখান থেকে তার যা বেতন আসত সেটা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলতে থাকে। যদিও অনেকটা অভাব অনটন ছিল কিন্তু বাড়ি থেকে বেরুনোর সময়ে যে টাকা নিয়ে এসেছিল তা দিয়ে ১ বছরের বাড়ি ভাড়া চলে যাবে এজন্যই অল্প খরচ করে করে সুন্দর ভাবেই তাদের দিন কাটছিল। চলতে ফিরতে কষ্ট হলেও সাইফা এটা মানিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু এই সুখ বেশিদিন টিকেনি।

একদিন রাতে দেরি করে বাসায় ফিরে সিয়াম। সাইফা দরজা খুলে দিতেই পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকতে নেয় সে। কিন্তু তার শরীর থেকে উড়ে আসা বাজে গন্ধ সাইফার নাক অবদি পৌঁছাতে দেরি করে না। দরজা লাগিয়েই সিয়ামকে জিজ্ঞেস করে , ” তোমার গায়ে এসব কি বাজে গন্ধ, কি খাইছ তুমি?”

সিয়াম আমতা আমতা করে। কোনো উত্তর দিতে না পেরে সাইফার হাত ধরে ফেলে। কাচুমাচু করে বলে, “স্যরি জান আর কোনোদিন খাব না।”

সাইফা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে, “এক্ষুনি গোসল করতে যাও। শরীরে এমন গন্ধ থাকলে আমার পাশে ঘুমাতে পারবে না।”

সিয়াম মুচকি হাসে, খাটে পাশ থেকে একটা লুঙ্গি নিয়েই দৌড়ে যায় গোসল খানার দিকে। তাড়াতাড়ি গোসল শেষ করে এসে দেখে সাইফা খাবার নিয়ে বসে আছে। পুটিমাছের ঝোল আর ভাজি করা আলু ভর্তা দিয়ে রাতের খাবার শেষ করে দু’জন। খাওয়া শেষে সাইফা সব গুছিয়ে এসে বিছানার এক কোণে বসে। সিয়ামও তার পাশে বসে অনেকক্ষণ গল্প করে। রাত তখন ১২ টা পেরুতে শুরু করেছে। সিয়াম তার দুইহাতে সাইফার গালদুটো চেপে ধরে। ঠোঁট চুমু দেওয়ার চেষ্টা করতেই সিয়ামকে দূরে ঠেলে দেয় সাইফা, “কি বিশ্রী গন্ধ তোমার মুখে, ছাড়ো আমাকে। ”

সিয়াম মুখ গোমড়া করে বলে, “স্যরি জান। ‘

সাইফার গলার আওয়াজ বেড়ে যায়, ” স্যরি টরি বলে কোনো লাভ নেই। দূরে থাকো আমার থেকে। আজকে একবারও আর আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবে না। ”

সিয়াম কানে ধরে বলে, “বলছি তো আর খাব না। ”

সাইফার একই কথা,”বললেই লাভ হবে না। আজকে তুমি দূরে থাকবা এটাই শেষ কথা। আর আককের পর থেকে যদি এসব খাও তবে কোনো দিনও আমাকে টাচ করতে পারবা না।”

সিয়াম ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়।

সেদিনের মতো বিছানার দুই পাশে ঘুমালো দু’জন। সাইফা ভেবেছিল সিয়াম হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। কখনো আর এসব ছাইপাঁশ খাবে না। কিন্তু সে ভুল প্রমানিত হয়। সিয়াম কয়দিন পর আবার খায় ওসব নেশা জাতীয় জিনিস। কিন্তু তখন বাড়িতে ফেরার অনেক আগে খেতো। পরে ভালো মতো মুখ ফ্রেশ করে বাড়িতে আসত। শুরুতে সাইফা বুঝতে পারেনি, কিন্তু ঠোঁট ও দাঁতের দাগ দেখে আস্তে আস্তে বুঝতে পারে সেও। ঝগড়া শুরু হয় দু’জনের। শুরুর দিকে সিয়াম নিজেকে অপরাধী ধরে নিয়ে বেশ কয়েকবার স্যরি বলে। ছেড়ে দেওয়ার অঙ্গিকার করে বারবার। কিন্তু প্রতিবারই সে ওয়াদা ভঙ্গ করে। আস্তে আস্তে গাঁজার নেশাটা সিয়ামকে অনেক বেশি আক্রান্ত করে ফেলে। গাঁজার সাথে সাথে অন্য কিছু নেশাতেও হাত লাগায় সে।

ধীরে ধীরে তার মস্তিষ্ক বিগড়ে যেতে থাকে। নেশার টাকা যোগাতে গিয়ে সংসারে পুরোদমে অভাব দেখা দেয়। এখন সে অল্পতেই মারধর করে সাইফাকে। আগের “জান” শব্দটা এখন অকথ্য নোংরা গালিতে পাল্টে গেছে।

ঝগড়ার সময় সাইফার শরীরের এমন কোনো অংশ বাদ থাকে না যেখানে লা*থি-ঘু*ষি না লাগে। সিয়াম যখন স্ব-জোরে তার লজ্জা স্থানে লা*থি দেয় তখন দুই সেকেন্ডের বেশি চিৎকার করতে পারে না সে। চিৎকার মুহূর্তের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়, অজ্ঞান হয়ে একপাশে ঢলে পরে সে। সিয়াম তখন তার পাশেই পায়ের উপরে পা তুলে সিগারেট ফুঁকতে থাকে। ডার্বি সিগারেটের বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে যায় পুরো ঘরে।

বিকৃত মস্তিষ্কের খুনির মতো সিয়াম তখন অজ্ঞান হয়ে পরে থাকা সাইফার মুখে পানি দিতে থাকে। জ্ঞান ফিরতে ফিরতে যদি সিয়ামের সিগারেট শেষ হয়ে যায় তবে তো ভালো। কিন্তু সিগারেট শেষ হওয়ার আগেই যদি সাইফার জ্ঞান ফিরে। তবে শুরু হয় আরো অকথ্য নির্যাতন। সিয়াম তখন তার মুখ চেপে ধরে। ঠোঁট ফাঁক করে মুখের ভিতরে সিগারেট ধুঁয়া দেয। আর হাসতে হাসতে বলে, “এবার বল মুখে গন্ধ থাকলে আমার কাছে আসবা না। বলস না কেন! বল!”

সাইফার মস্তিষ্ক কাজ করে না। কাশতে কাশতে হাঁপিয়ে উঠে সে। এমন অকথ্য নির্যাতনের জন্যই কী পালিয়ে বিয়ে করেছিল সে! নিজেকেই নিজেকে ধিক্কার দিতে দিতে কাঁদতে থাকে….।

( চলবে ইন শা আল্লাহ