আড়ালে কে পর্ব-০৫

0
126

#গল্প – #আড়ালে_কে [ #পর্ব -০৫ ] [ ১৮+ এলার্ট ]
লেখক – #সালাহউদ্দিন_তারিক

নিজের স্ত্রী অন্য কারো সাথে ঘুরে, অন্য কারো সাথে রেস্টুরেন্টে যায়। এমন কথা শুনলে কারোরই মাাথা ঠিক থাকার কথা নয়। এমনিতেই রাতে হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ দেখার পর থেকেই মাথা গরম হয়ে আছে এখনতো রাগে নাজমুল সাহেবের মাথার রক্ত টগবগ করতে শুরু করছে। চোখ বন্ধ করে কতক্ষণ কি যেন ভাবলেন, তারপর স্বজোরে এক ঘু*ষি মারলেন ছাদের পিঠে।

ছাদের উপরের দিকে তেমন কোনো শব্দ না হলেও নিচের ঘরে দ্রিম করে প্রচন্ড শব্দ হলো। নাজমুল সাহেবের বাবা-মা আধ সজাগ থেকে লাফিয়ে উঠৈ পরলেন। সোহানারও ঘুম ভেঙে গেল। সোহানা ভয়ে এদিক ওদিক থেকে দেখতে লাগল। নাজমুল সাহেবকে কোথাও দেখতে না পেয়ে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।
ঘু*ষি দেওয়ার পরপরই উনি বুঝে গেলেন যে নিচে কি পরিমাণ শব্দ হয়েছে। তাড়াতাড়ি বসা থেকে উঠে পরলেন, পাশেই একটা কাঠের টুকরো দেখতে পেলে সেটা নিয়ে ছাদে ঠকঠক করতে লাগলেন। ওনার ছোট বোন নাদিয়া আবারও দৌড়ে ছাদে আসে শব্দ শুনে। এসে দেখে তার ভাই একটা কাঠের টুকরো নিয়ে ছাদে ঘসছে। তবুও ভাইকে জিজ্ঞেস করে, ‘কি হয়েছে ভাইয়া? ‘

নাজমুল সাহেব স্বাভাবিক গলায় উত্তর দেয়, ‘কাঠটা উপর থেকে নিতে গিয়ে পরে গেছিল।’

‘ ওহ্, নিচে কি জোরে শব্দ হয়েছে, আব্বু-আম্মু ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠেছে। ‘

‘ আল্লাহ্ আম্মু ভয় পাইছে! ইশ্ যা যা, নিচে যা তাড়াতাড়ি। আম্মু যেন রাগারাগি না করে।’

নাদিয়া আর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি নিচে চলে গেল।।

ঘড়িতে তখন সময় সকাল ৬:২২ মিনিট।
এখন সকালের রান্না বসানোর সময় হয়ে এসেছে। তারমধ্যে রাতে যা হয়েছে সেটা নিয়েও ভয়ে আছে সোহানা। তাই নাজমুল সাহেব সামনে পরার আগে আগেই রান্নার সরঞ্জাম গোছাতে শুরু করল রান্না ঘরে চলে যাওয়ার জন্য। অমনি ঘরে ঢুকল নাদিয়া। পায়ের শব্দ পেতেই ভূত দেখার মতো পিছনে তাকালো সোহানা। নাদিয়ার চেহারা দেখে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘ওহ্ নাদিয়া তুমি! আসো ভিতরে আসো।’

নাদিয়া ঘরে ঢুকে আয়নার সামনে থাকা সাজসজ্জার জিনিস একটার পর একটা ধরতে লাগল। সোহানা কখনো এটা পছন্দ করে না যে কেউ তার সাজের জিনিস ধরুক। সে মাত্র ঘাড় ঘুরিয়ে বলতে যাবে ‘এগুলা ধরো না নাদিয়া।’ অমনি আবারও রাতের কথা মনে হয়। ভাবে নাজমুল সাহেবের আদরের বোনের সাথে ঝগড়া করার সাহস এখন করা যাবে না। ওর মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হয় না। কেবল দ্রুত হাতে ফ্রিজে থাকা তরকারি বের করে একটা পাতিলে নেয়।
নিজের দুই হাতে সব আঁটছে না দেখে নাদিয়াকেও কিছু নিতে বলে। নাদিয়া বিনা বাক্যে ভাবির কাজে সাহায্য করে। সোহানা নিজের হাতের সব রান্না ঘরে রেখে আবার ঘরে আসতেই দেখে নাজমুল সাহেব ঘরে চলে এসেছে। ভয়ে ভয়ে ঘরে ঢুকে সে। আড় চোখে ওনার দিকে তাকাতেই দেখে ডান হাতের পিঠে অনেকটা র*ক্ত। আঙুলের কর গুলোর পিছনে র*ক্তের ফোঁটা গুলো উঁচু হয়ে আছে। সোহানা প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে ধারণা করতে পারে একটু আগের ঐ শব্দের কারণেই তবে এই র*ক্ত। কোনো কারণে ওয়ালে ঘু-ষি দিয়েই তবে হাত ছিলেছে। নাজমুল সাহেব সোহানার উপস্থিতি টের পেতেই নিজের হাত সামলে নিলেন। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকালেন সোহানার দিকে। সোহানার ভয় কমে না, ঘন ঘন ঢোকর গিলতে থাকে সে। নাজমুল সাহেব নিজের দৃষ্টি পরিবর্তন করেন, ঠোঁট দু’টো শক্ত করে একে অপরের সাথে চেপে ধরে নিজের রাগের বহিঃপ্রকাশ করেন। সোহানায় মুখটা আরো মলিন হয়ে যায় মাথা নিচু করে ফ্রিজের দিকে হাঁটা দেয়। তাড়াতাড়ি নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

নাজমুল সাহেব একা একা-ই হাসতে থাকেন। মনে মনে বলেন, ‘তোর চেহারায় আরো কত ভঙ্গিমা দেখা বাকি তা আমি নিজেও জানি না।’

হাত ধুয়ে মুছে অল্প হ্যাক্সিসল লাগিয়ে আবারও বিছানায় একটু পিঠ ঠেকান তিনি।
অফিসে দ্বায়িত্ব বেড়ে গেছে, কাজ বেড়ে গেছে, অতিরিক্ত সময়ও দিতে হবে সেখানে। বাসা থেকে আসা যাওয়া করে অফিস করার সুযোগ আর নেই। অফিসের আসে পাশে একটা বাসা নিতে পারলে মন্দ হয় না। সেই সাথে সোহানাকে যদি সেখানে নিয়ে যাওয়া যায়, তবে হাড়ে হাড়ে বুঝানো যাবে তার এই দুঃসাহস কতটা ক্ষতির কারণ হতে পারে। ভাবতেই শয়তানি হাসি ফুটে উঠে নাজমুল সাহেবের মুখে।

এসব ভাবতে ভাবতে আবার কখন ঘুমিয়ে গেলেন তিনি নিজেও বুঝতে পারলেন না। নাদিয়া এসে যতক্ষণে খাওয়ার জন্য ডাকল ততক্ষণে অনেক সময় হয়ে গেছে। অফিসে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে, তাড়াতাড়ি কয় লোকমা মুখে দিয়ে অফিসের জন্য তৈরী হলেন তিনি। অন্যদিন যা-ও এই সময়টাতে সোহানা ওনার কাছে আসত, কোনো জিনিসের প্রয়োজন থাকলে সেটার কথা বলত, আজকে আর তার সাহস পায়নি সে। যতক্ষণ নাজমুল সাহেব অফিসে রওনা দেননি ততক্ষণ সে একপ্রকার লুকিয়ে লুকিয়ে ছিল। নাজমুল সাহেব অফিসে রওনা হতেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল সে। বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে মোবাইলটা হাতে নিল সবার আগে। হোয়াটসঅ্যাপের সব মেসেজ চেক করল একে একে। কোথাও তার প্রেমিকের মেসেজ নেই। তার সব মেসেজ ডিলেট করা। সোহানার স্পষ্ট মনে আছে যখন সে মোবাইল রেখে শুয়ে পরেছিল তখন মেসেজ ডিলেট করতে খেয়াল ছিল না তার। এরপর যখন নাজমুল সাহেব ঘরের দরজায় টোকা দিলেন, তখনও সে উঠে সবার আগে মোবাইলের মেসেজ চেক করে। সেখানেও প্রেমিকের একটা মেসেজও ছিল না। ঘুমানোর সময় সে দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়েছিল। কারণ নাজমুল সাহেবের বাবা-মা এবং ছোট বোন আলাদা ইউনিটের রুমে থাকে আর ওনাদের নবদম্পতির ঘর আর রান্নাঘর হচ্ছে আলাদা ইউনিটে। এজন্য সব সময়ই দরজায় লক দেওয়া থাকে ভিতর থেকে।

ভিতর থেকে দরজা দেওয়া, ঘরে অন্য কেউ ছিল না। তবে মেসেজ কে ডিলেট করতে পারে! মোবাইল কে জায়গা থেকে সরাতে পারে! কোনো ভাবেই এসব বুঝে আসে না সোহানার। সে একবার ভাবে হয়তো সে নিজেই মেসেজ ডিলেট করে ঘুমিয়েছিল কিন্তু সেটা তার খেয়াল নেই। কিন্তু পরবর্তী আবার যখন রাতের জঘন্য আক্রমণের কথা মনে পরে তখনই আবার সে মনে করে নাজমুল সাহেব হয়তো তার মেসেজ গুলো দেখে ফেলেছে। মেসেজ যদি না-ই দেখে তবে হঠাৎ এভাবে আক্রমণাত্মক কেন হয়ে যাবে! আবারও ভাবে দরজা তো ভিতর থেকে লক করা ছিল, তিনি কিভাবে দেখবেন!

বার বার সোহানার চিন্তাগুলো একটা আরেকটার সাথে প্যারাডক্স তথা আপাতবিরোধী হয়ে যাচ্ছে। কোনো বিষয়ই তার মাথায় খেলছে না। শেষে সিদ্ধান্ত নিল এইসব কিছু তার প্রেমিককে জানাবে।

দেরি না করে, ফোনে কল দিয়ে রাতের সব কথাই তাকে জানালো সে। তাগাদা দিল যত দ্রুত সম্ভব তাকে যেন বিয়ে করে নেয়। সে তার বর্তমান স্বামীকে তালাক দিয়ে দিবে। ওপাশ থেকে অনুরোধ আসল, “দয়া করে আর কিছুদিন অপেক্ষা করো। আমি বাড়িতে জানাতে পারব না এখন। তাই কিছু টাকা পয়সা হাতে নিয়ে নিই।”

সোহানা তার রাগ ঝাড়তে থাকে, “হ্যাঁ তুমি ঐ টাকা জোগাড় করতে করতে আমিই মরে যাব। আমার লাশ নিয়ে গিয়ে বিয়ে কর তখন।”

ওপাাশ থেকে আবারও অনুরোধ আসে, “সত্যি বলছি, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। একটু এই সপ্তাহ টা সময় দাও আমি সব ব্যবস্থা করতেছি, তুমিই বলো আমার কি তোমার কষ্ট সহ্য হয়?”

ইমোশনাল কথায় মন গলে সোহানার। মিষ্টি গলায় বলে, “আচ্ছা জানটা খুব তাড়াতাড়ি করো। আমিও তোমার সাথে এক ছাদের নিচে থাকার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি।”

– ‘শুধু কি এক ছাদের নিচে?’ রোমান্টিক ইঙ্গিত আসে ওপাশ থেকে।

সোহানাও সাড়া দিয়ে বলে, “জি না, আরো অনেক কাছে প্রিয়তম। খুব কাছে থাকব, তোমার শরীরের সবচেয়ে কাছে।”

ওপাশের ছেলেটা হেসে হেসে বলে, “হ্যাঁ প্রিয়তমা অনেক কাছে আসবে তুমি। এখন আর এসব বলো না। এসব কথা রাতে বলব আমি রাস্তায় আছি, বাজারে যাব। ”

‘ আচ্ছা তবে বাজারে যাও। রাতে সুযোগ পেলে কথা বলব, অনেক কাছে আসব, অনেক কথা বলব। ‘

‘ আচ্ছা ঠিক আছে জান, আমিও তোমাকে কাছে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। এখন ফোন রাখি!’

সোহানা ছোট্ট করে উত্তর দেয়, “আচ্ছা।’

ফোনকল কেটেই মুচকি মুচকি হাসতে থাকে সোহানা। মুহুর্তেই যেন সে ভুলে যায় নাজমুল সাহেবের কথা। গতরাতে সাথে এতো কিছু হওয়ার পরেও আজ রাতে প্রেমিকের সাথে একান্ত আলাপের ইচ্ছে পোষণ করে।
এবার মোবাইল ফোন রেখে আয়নার সামনে দাঁড়ায় সে। গলায় পেঁচানো ওরনাটা খুুলে নিখুঁত ভাবে দেখে নিজেকে। গলাতে এখনো কয়েকটা দাগ রয়ে গেছে আঙুলের। রাতের কথাগুলো মনে করে নাজমুল সাহেবের প্রতি ঘৃণার নিঃশ্বাস ফেলে সে। মনে মনে চিন্তা করে, ‘এহ্ তিন লাখ টাকা দেনমোহর দিয়ে আমার শরীরটা যেমন কিনে নিয়েছে। আমার তোকে পছন্দ না, তোকে দিব না আমার শরীরে টাচ করতে। আমার শরীর শুধু আমার কলিজার জন্য।”

ক্রোধে লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস নেয় আর গলার দাগ গুলো দূর করার চেষ্টা করে যায়। কিন্তু কিছুতেই যেন যেতে চায় না। কেমন একটা নীলচে ছাপ পরে আছে গলাতে। হঠাৎই মাথায় আরো জঘন্য একটা চিন্তা আসে সোহানার। মোবাইল ফোনে ভালো করে কয়েকটি ছবি তুলে নেয় গলার দাগের। অতঃপর খেঁকখেঁক করে শয়তানি হাসি দেয় আর ভাবে, “এবার একটা নারী নির্যাতনের মামলা করে দিলে তোকে কে বাঁচাবে রে নাজমুল!”

নতুন এই কু-ধারণা নিয়ে আর নিজের প্রেমিকের সাথেও পরামর্শ করার কথা ভাবে না সোহানা। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নেয়। শাশুড়ীকে মার্কেটে যাওয়ার কথা বলে সোজা চলে যায় থানায়। নিজের মন মতো সত্য মিথ্যা বেশ কিছু অভিযোগ এক করে নাজমুল সাহেবের নামে নারী নির্যাতনের একটা সাধারণ ডায়েরি করে ফেলে সে। তার সাথে নিজের মোবাইলে তোলা ঐ ছবি গুলো প্রিন্টআউড করে হার্ডকপিও জমা দিয়ে আসে।

নাজমুল সাহেবের অজান্তেই এমন এক ভয়ানক মামলা ঝুলে যায় ওনার গলাতে……।

( চলবে ইন শা আল্লাহ)