আমার আসক্তি যে তুমি Part-9+10

0
4107

পর্ব ৯+১০
#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_9
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
আমি আর আবির সামনে কিছুদূর যেতেই কেউ আমায় ডেকে উঠে। আমি পিছে ফিরে তাকিয়ে মি খারুস। আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই আবির বলে উঠে।
.
–” রিয়ান!!”
.
কথাটা মৃদু ভাবে বললেও আমার কান পর্যন্ত পৌঁছায়। আমি ভ্রু কুচকিয়ে আবিরের দিকে একবার তাকিয়ে আবার মি. খারুসের দিকে তাকালাম। বুঝার চেষ্টা করি দুইজন কি আদো চেনা নাকি?
এর মধ্যে মি খারুস মানে ড. রিয়ান আমার সামনে আসে। তারপর একটু বিরক্তিকর গলায় বলে।
.
রিয়ানঃ এত কেয়ারলেস কেন তুমি??এসাইনমেন্ট করেছ ভালো কথা নাম আর আইডি কার্ড এর নাম্বার কে লিখবে??
.
রিয়ানাঃ উপস!! ভুলে গেসি। সরি।
.
রিয়ানঃ জাস্ট রিডিকুলাস!! এই নাও ধরো আর সব কিছু পূরণ করে দ্যান জমা দাও! এই বলে হাতে এসাইনমেন্টটা ধরিয়ে দিয়ে পিছে ফিরে যেতে নিলে আবিরের ডাকে দাড়িয়ে যায়।
.
আবিরঃ কেমন আছো রিয়ান?? উপস সরি ড. সাদাত খান রিয়ান।
.
রিয়ান আবিরের কথা ঘুরে দাড়ায় আর তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আবিরের উপর নিক্ষেপ করে। বুঝার চেষ্টা করে সে কে? অতঃপর চিনতে পেরে মুখের মধ্যে গম্ভীরতা ছড়িয়ে পড়ে। চোখ মুখ পাল্টে যায়। কিন্তু তাও অনাইচ্ছা সত্তেও মুখে এক হাসি ফুটিয়ে তুলে আর বলে।
.
রিয়ানঃ আ’ম এবসুলুটলি ফাইন মি. আবির আরহাম। তা অনেক দিন পর সাক্ষাৎ হলো আমাদের।
.
আবিরঃ Yeah. After a age!
.
রিয়ানঃ তা এইখান কেন? আমাকে খোঁজ করছিলে বুঝি? নাকি আবার..
.
আবিরঃ তেমন কিছুই নয়। জাস্ট কালকে একটা মাইনোর এক্সিডেন্ট হয়েছিল তাই আজকে একটু পরিক্ষা করাতে আসলাম সব ঠিক আছে কিনা! ইউ নো না আমার ফিট থাকা কতটা প্রয়োজন?
.
রিয়ানঃ ইয়াহ বাট দেখে শুনে গাড়ি চালানো ভালো। তা না হলে কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না। By the way it was nice to meet you again.
.
আবিরঃ Same here. বলে হাত বাড়িয়ে দেয়।
.
রিয়ান না চাওয়া সত্তেও হাত আগে বাড়ালো। দুইজন হ্যান্ডশেক করতে গিয়ে দুইজনই দুইজনের হাত জোরে চেপে ধরে আর চোয়াল শক্ত করে ফেলে। চোখ মুখে এক আলাদা রাগ আর ক্ষোভ৷ কিছু সময় পর তারা হাত ছেড়ে দেয় তখন রিয়ান বলে উঠে।
.
রিয়ানঃ মিস রিয়ানা এসাইনমেন্টটা ঠিক করে আমার কেবিনে দিয়ে আসবেন। আমার এখন ওটিতে যেতে হবে সো এক্সকিউজ মি! বলে তিনি চলে যায়।
.
আমি এতক্ষন হাবলার মত দুইজনের কথা বার্তা শুনছিলাম আর ভাবছিলাম এরা কি বাই এনি চান্স ফ্রেন্ড নাকি চিনা পরিচিত নাকি রিলেটিভ?? যখন আমি এইসবের হিসাব কষছিলাম তখন মি খারুসের কথায় বাস্তবে ফিরে আসি। আর তার যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকি। তখন আবার আবির বলে উঠে।
.
আবিরঃ এই মিস কোথায় হারিয়ে গেলেন?
.
রিয়ানাঃ অহহ না কোথাও না!! আচ্ছা আপনারা দুইজন কি দুইজনকে চিনেন?? আপনারা কি বন্ধু??
.
আবিরঃ হ্যাঁ চিনি। একটু ভালো করেই চিনি কিন্তু আমরা বন্ধু না। আমরা যে কি তা আমরাও জানি না। শেষে কথাটা আস্তেই বললো সে। যার ফলে আমি কথা অস্পষ্ট শুনতে পাই। তাই জিজ্ঞেস করি।
.
রিয়ানাঃ মানে?
.
আবিরঃ তেমন কিছু! That is a long story. বাদ দেন এইসব আমাকে রুমটা দেখিয়ে দেন প্লিজ। আমাত লেট হচ্ছে।
.
রিয়ানাঃ আব হ্যাঁ চলুন। বলেই হাটা ধরলাম।
.
.
??
.
লাঞ্চ টাইমে কেন্টিনে বসে আছি। সাথে রিংকি আর আরিশাও আছে। তাদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেই যাচ্ছি। আসলে বন্ধুত্ব এমন এই হয়। এই ঝগড়া এই মিল। আর এমনেও আমাদের মধ্যে মান অভিমান বেশিক্ষন থাকে না।
তখন মি. আবিরকে এক্সামিনেশন রুম দেখিয়ে আমি চলে আসি। এসাইনমেন্টটা ঠিকঠাক করে মি. খারুসকে দিয়ে আসি আর এসেই মেতে উঠি এই দুই বান্দরনীদের সাথে।
.
রিংকিঃ রিয়ানু আজ না আমার ক্রাশ লাইভে আসছে ওর ফ্যানদের সাথে আড্ডা দিতে। ইশ ভাবতেই খুশিতে Disco dance দিতে ইচ্ছা করতাসে।
.
রিয়ানাঃ মি খারুস থুরি ড. রিয়ান গান কবে থেকে গাওয়া শুরু করলো রে?? তাও আবার লাইভে!! আর ফ্যানের পাইলো কই? কনফিউজড হয়ে।
.
রিংকিঃ তুই ড. রিয়ান রে কই থেকে আনলি?? আর সেই বা কোন দুঃখে গান গাইতে যাইব??
.
রিয়ানাঃ ওইদিন না তুই বললি তোর ক্রাশ ড. রিয়ান। তহ তোর ক্রাশ গান গাইবো মানে ড. রিয়ান গান গাইবো।
.
আরিশাঃ আরেহ গাধী ওই আবিরের কথা বলতাসে। দ্যা রকস্টার আবির আরহামের।
.
রিয়ানাঃ নামটা এত চিনা চিনা কেন রে ভাই??
.
রিংকিঃ ওর এত ফ্যান ফলোয়ার, এত বড় সেলেব্রিটি নাম তহ শুনারই কথা। আর আমিও তহ একদিন ওর কথা বললাম না। তাই হয়তো চিনা চিনা লাগছে।
.
রিয়ানাঃ আচ্ছা ওই এক্সিডেন্ট করা পোলা মানে আবিরের ফুল নাম জানি কি ছিল?? উফফ মনে পড়ে না কেন? আবির আয়রন ছিল নাকি আয়ডিন? উফফ রিয়ানা তোর মাথা গেসে!! এইটি কাউরো নাম হয়নি। মেডিক্যাল তোরে আধপাগল বানাইয়া দিসে বইন। ধুর!! মনে মনে।
.
রিংকি আমার কাধে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বলে।
রিংকিঃ কিরে কই হারাইয়া গেলি??
.
রিংকির ধাক্কায় ধ্যান ফিরে আমার। আমি স্মিত হেসে বলি।
.
রিয়ানাঃ আব কোথাও না।
.
আরিশাঃ আরেহ রিংকু আবিরের লাইভ কয়টায় রে??
.
রিংকিঃ ৩ টাই।
.
আরিশাঃ এখন তহ ২. ৫৮ বাজে মানে আর ২ মিনিট পর!!
.
রিংকিঃ আহ আল্লাহ এত তারাতারি এত বেজে গেল। ওর লাইভ শুরু হয়ে যাবে তহ!! কই আমার মোবাইল কই??
.
রিংকি তারাতারি তার মোবাইল খুঁজতে থাকে তারপর মোবাইল বের করে ফেসবুকে আবিরের ফ্যান পেজে যায়। এখনো লাইভ শুরু হয়নি।
.
রিংকিঃ যাহ এখনো লাইভ শুরু হয়নি। তা আজ কিন্তু তোদের কেউ আমার সাথে ওর লাইভ দেখতে হবে ওকে। আমি কোন কথা শুনবো আমি!!
.
আমরা আর কিছু বলতে পারলাম না রাজি হয়ে গেলাম। ৫ মিনিট পর লাইভ শুরু হয়। আমিও দেখতে থাকি। কিন্তু যা দেখি তাতে আমার মুখ ইয়ায়া বড় হা হয়ে যায়।
কেন না এই আবিরই ওই আবির। তার মানে সে একজন রকস্টার প্লাস সেলিব্রিটি। বাট তাতে আমার কি!! হুহ!!
এইসব ভাবা শেষে আবার লাইভে মনোযোগ দিলাম।
.
— ” হেই গাইস হোয়াটস আপ? আশা করি ভালো আছেন।।”
.
সাথে সাথে দেখি হাজার কমেন্ট। রিংকিও কমেন্ট করছে। আমি কয়েকটা কমেন্ট দেখলাম। আমি কয়েকটা কমেন্ট দেখলাম, মেক্সিমাম সবার কুয়েশ্চন আবিরের মাথায় বেন্ডেজ কেন??
.
–” রিলেক্স গাইস আমার কিছু হয়নি। কালকে জাস্ট মাইনোর একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল নাথিং এলস্। ঠিক টাইমে একজন এসে আমায় হেল্প করে যার জন্য now i am absolutely fine.”
.
বলার সাথে সাথে কান্নার ইমুজিতে ভরে গেল কমেন্ট বক্স। এ কি এইখানে দেখি রিংকি একবারে কান্নায় শুরু করে দিসে। বুঝলাম কাহিনি।
তারপর দেখি সকলেই লিখছে ” Get well soon”. সেলেব্রিটি বলে এত কেয়ার আর এত ভালবাসা?? ভাবা যায়!!!
.
— ” Thanks a lot guys for all of your well wishes. আমার প্রতি আপনাদের এত ভালবাসা দেখে আমি মুগ্ধ। আমার মত এত ছোট গায়ককে এত ভালবাসা দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ৷ তা চলুন আড্ডা শুরু করা যাক।”
.
এইভাবে অনেকক্ষণ আড্ডা চলার পর সকলেই আবিরকে গান গাওয়ার জন্য রিকুয়েষ্ট করে। তখন বাধ্য হয়ে সে রাজি হয় আর গিটার নিয়ে এসে বসে।
.
— ” আজকের গানটি.. উহু! বলবো না। আজ শুধু গানটা ফিল করেন সবাই।” এই গান গাওয়া শুরু করলো।
.
” ?Hua hai aaj pehli baar
Joh aaise muskuraya hoon
Tumhe dekha toh jaana yeh
Ke kyun duniya mein aaya hoon.?”
.
[ বাকিটা নিজ দ্বায়িত্বে শুনে নিবেন]
.
আমি মন দিয়ে গানটা শুনছিলাম। সত্যি তার গলার আওয়াজ ইজ জাস্ট ওয়াম। গান শেষে একটু কথা বলে সে লাইভ শেষ করে।


??


টিউশন শেষ করে বাসায় ফিরছি। কালকে দেরি হয়ে যাওয়ার জন্য যেতে পারি নি। তাই আজকে একটু বেশি টাইম পড়িয়ে আসতে হয়েছে আমার। সব দোষ ওই মি. খারুস বেটার। তার জন্য আমার মত বাচ্চা মাইয়াকে কত কষ্ট করতে আজকে। আল্লাহ এই অবিচার সইতো না আমি জানি।
এইসব বলতে বলতে বাসায় এসে পড়ি আর এসে যা দেখি তাতে আমি ৮২০ ভোল্টেজের ঝাটকা খাই। কেন না সামনে….
[ বলুম না? আজকের পর্বেই সব জানবেন নাকি? পরের পার্টের জন্যও কিছু রাখেন?]
.

#Part_10
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
??
টিউশন শেষ করে বাসায় ফিরছি। কালকে দেরি হয়ে যাওয়ার জন্য যেতে পারি নি। তাই আজকে একটু বেশি টাইম পড়িয়ে আসতে হয়েছে আমার। সব দোষ ওই মি. খারুস বেটার। তার জন্য আমার মত বাচ্চা মাইয়াকে কত কষ্ট করতে আজকে। আল্লাহ এই অবিচার সইতো না আমি জানি।
এইসব বলতে বলতে বাসার সামনে এসে পড়ি আর এসে যা দেখি তাতে আমি ৮২০ ভোল্টেজের ঝাটকা খাই। কেন না বাসার দরজার সামনে অনেক বড় এক ঝুড়ি আর সেখান থেকে এক মনোমুগ্ধকর সুবাস চারদিকদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আমার আর বুঝতে দেড়ি নেই এই ঝুড়ি কে পাঠায়েছে আর এতে কিবাই হতে পারে।
আমি দৌড়ে দরজার সামনে যাই আর ঝুড়িটা তুলে নেই। দ্রুত দরজার খুলে বাসায় ঢুকে পড়ি।
রুমে গিয়ে খাটের উপর ঝুড়িটা রাখি।
ঝুড়িটা ৫ অংশে বিভক্ত। আর তাতে রয়েছে ৫ রকমের ফুল। আর একেক ফুলের উপর ১,২,৩ এমন করে নাম্বারও দেয়া আছে। তহ আমি প্রথম থেজকেই শুরু করি।
১ম ভাগে আছে সন্ধ্যামালতি ফুল। সেগুলো হাতরে দেখতে থাকি আমি। এর মূল উদ্দেশ্য চিঠি খুঁজে বের করা। অবশেষে আমার উদ্দেশ্যটা সফল হলো। চিঠি পেরকের চিঠি আমি পেলাম। উৎসাহ নিয়ে পড়া শুরু করি।
.
” পড়ন্ত বিকেলের শেষ ফুল হয়ে
এসেছি আমি তোমার আঙ্গিনায়?
ফোটাতে তোমার মুখে
এই স্নিগ্ধ হাসিটা? ”
.
.
পড়ার সাথে সাথে সত্যি আমার মুখে হাসি ফুটে উঠে। অতঃপর ২য় চিঠি পড়ার উদ্যেগ নিয়ে ২য় ভাগের দিকে হাত বাড়াই।
২য় ভাগে হচ্ছে বকুল ফুল। দ্রুত হাত চালিয়ে খুঁজে বের করি ২য় চিঠিটাকে।
.
” তোমার অস্থিরতা, তোমার এই বেকুলতা
সবই পাগল করে যে মোরে। ?
কথা দিয়েও কথা রাখতে না পেরে
বিষন্নতা যে কুড়ে খেয়েছে যে মোরে। ?
ভালবাসি যে তোমায় খুব প্রিয়❤ ”
.
.
৩য় ভাগে গন্ধরাজ। যার সুভাস আমায় আরও উগ্র করে তুলেছে পরবর্তী চিঠিটা পড়তে। আমি দ্রুত তা বের করে পড়তে শুরু করি।
.
” হ্যাঁ ভালবাসি
কিন্তু তা যে অপ্রকাশ্য।?
থাক না কিছু ভালবাসা অপ্রকাশ্য
দূর থেকেই না হয় ভালবেসে যাব তোমায়।❤
শুধু এতটুকু অনুরোধ রইলো
ঠাই দিও তোমার হৃয়দের এক কোনে?”
.
.
৪র্থ ভাগে শিউলি ফুলের মেলা আর আমার মনের মধ্যে এক অজানা ভয়ের খেলা। কাঁপা কাঁপা হাতে তুলে নিলাম সেই চিঠিটি। ভয় নামক এক ভয়ংকর প্রানী ঘিরে ধরে আমাকে। আর তা নিয়ে পড়তে থাকি ৪র্থ ভাগের চিঠিটি।
.
” ঠিক ধরেছ প্রিয়,
হারিয়ে যাচ্ছি এই অতুল অন্ধকারে।
যে অপ্রকাশিত ভালবাসা নিয়ে এসেছিলাম
তা নিয়ে ফেরত যাচ্ছি?
কিন্তু তুমি তাতে কষ্ট পেয়েও না প্রিয়।
আমি সবসময় ছায়া হয়ে থাকবো তোমার পাশে,
এই ফুলের বেশে। ? ”
.
.
এইটা পড়েই কেন যেন বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেল। চোখ দুটোতে কেন জানি অশ্রু জমা হতে শুরু করলো। গলা ধরে আসতে চাইলো। কিছুটা সাহস যুগিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে ৫ম ভাগে হাত দিলাম। ৫ম ভাগে হচ্ছে কাঠগোলাপ। এইটা বরাবরি আমার প্রিয় কিন্তু আজ কেন জানি এই ফুলকেও অপ্রিয় মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এর মধ্যেই চাঁপা পড়ে আছে আমার সেই না বলা অনুভূতি গুলো। মনের সাথে যুদ্ধ করে তুললাম হাতে সেই অন্তিম চিঠিটা। পড়তে শুরু করলাম সেই চিঠিটা।
.
” জানো এই কাঠগোলাপের স্নিগ্ধতা
ঠিক যেন তোমার হাসির অবিকল।?
আমি জানি তোমার মনে এখন আমার জন্য
পাহাড় ন্যায় অভিমান জমবে,
ভিড় জমবে না বলা হাজারো অনুভূতির।
কিন্তু তার মধ্যেও সত্যিটা তোমায় মানতে হবে প্রিয়❤
কিছু ভালবাসা অপ্রকাশিতই ভালো,
তাই থাকতে দাও না তাকে অপ্রকাশিত প্রিয়।
হয়তো কখনো শেষ বিকেলের শেষ ফুল হয়ে আবার আসবো তোমার আঙ্গিনায়,
ফুটাতে তোমার মুখে সেই হাসিটাকে।?
অবশেষে এটাই বলবো
সবসময় থাকবো তোমার
মনের গহীনে।❤ ”
.
.
চিঠিটা পড়ার সাথে সাথে চোখ দিয়ে দুইফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো। যতটা না উৎসুক নিয়ে চিঠিগুলো পড়া শুরু করেছিলাম ততটাই বিষন্নতার সাথে শেষ করলাম।
ভালবাসা যে এমনও হয় তা যে আমার ভাবনার বাইরে ছিল। না দেখে, না ছুঁয়ে, কোন কথা না বলেও ভালবাসার মানে বুঝিয়ে দিয়ে গেল সে। জানি সকল ভালবাসা প্রকাশিত হয় না কিন্তু তাও যে আজ এই বেহাইয়া মনটা আমার মানছে না। বার বার মন চাইছে তার এই অপ্রকাশিত ভালবাসাকে প্রকাশিত করতে।
কেন জানি এইটা ভেবে অনেক কষ্ট হচ্ছে যে আমার জন্য আর ফুল আসবে না। আসবে না আর কোন মনকারা চিঠিগুলা। কেন হারিয়ে গেল সে? কেন?
মনের সাথে অনেক যুদ্ধ করেও যখন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলাম না তখন হার মেনে নিলাম। ভেবে নিলাম যে সে হয়তো আমার ভাগ্যে নেই আর না আছে এমন ভালবাসা।
চিঠিগুলো আলতো হাতে ভাঁজ করে যত্ন সহকারে তুলে রাখলাম স্মৃতি হিসাবে। প্রত্যেকটা ভাগ থেকে একটা করে ফুল নিয়ে আমার ডাইরির ভাজে রেখে দিলাম। ইতি টেনে দিলাম এই অপ্রকাশিত ভালবাসাকে।
.
.
???
.
.
— ” ভালবাসায় যেমন সুখ আছে তেমন বেদনাও আছে। কোন ভালবাসা বেদনা ছাড়া পুরিপূর্ণ নয়। তেমনি আমার ভালবাসায়ও বেদনা ছাড়া পরিপূর্ণ নয়। জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু বিশ্বাস করো তার চেয়ে দ্বিগুণ কষ্ট আমার হচ্ছে। তোমার চোখের পানি যে আমার ভিতরটাকে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিচ্ছে। কিন্তু আমিও যে বাধ্য।
হারিয়ে যাচ্ছি ঠিকই কিন্তু তা চিরতরের জন্য নয়। তোমার আশেপাশেই থাকবো কিন্তু তাও তোমার থেকে দূরে। এইটা আমার ভালবাসার ইতি নয় বরং শুরু। ” বলেই মুচকি হাসে সে।
.
সামনে এগিয়ে আসে টিভির স্ক্রিনটির দিকে যেখানে রিয়ানার কান্নামিশ্রিত মুখটি ফুটে উঠেছে।
.
[ রিয়ানার পুরো বাসায় স্পাই ক্যামেরা আর স্পিকার লাগানো। যা রিয়ানার প্রত্যেকটা কর্মকান্ডের খবর এই সাইকোকে জানান দেই। আর এখন টিভির স্ক্রিনে রিয়ানার রুমের ফুটেজটিই চলছে।]
.
সে রিয়ানার মুখটির উপর হাত রেখে বলে।
.
— ” ভালবাসি রিয়ুপাখি! বড্ড বেশি ভালবাসি!! ”
.
[ এইযে পাঠকগন শুনছেন!!
সাইকো তহ নিজ থেকেই হারিয়ে যেতে যাচ্ছে তহ তাকে বরং আমরা হারিয়ে যেতে দেই ওকে!! সবাই তাকে বাই বাই বলে দাও কেমন!! আবার একবারে গুড বাই বলার দরকার নাই সাইকো একবারের জন্য হারিয়ে যাচ্ছে না।
সে একদম পার্ফেক্ট টাইমে পার্ফেক্ট এন্ট্রি নিবে আর হয়তো তার আগেই তার আসল পরিচয়ও অনেকে বুঝে যেতে পারবেন। ]
.
.
.
???
.
.
দেখতে দেখতে এক মাস কেটে গেল। সেইদিনের পর থেকে আমার কাছে আর কোন ফুল বা চিঠি আসে নি। প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হলেও এখন খানিকটা খাঁপ খাইয়ে নিয়েছে। ইন্টারসিপের উপর ফুল ফোকাস করছি। কিন্তু এর মধ্যেও মি. খারুসের সাথে আমার ঝগড়া লেগেই থাকেই। মাঝে মধ্যে ঠিক হলেও নিয়তি আমাদের আবার সেই ঝগড়াতেই টেনে নিয়ে আসে। অবশ্য এখন তার সাথে ঝগড়া করাটা আমি বেশ উপভোগ করি।
আবার অন্যদিকে,
দেখতে দেখতে কিভাবে যেন আবিরের সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে৷ বেশ ভালোই বন্ধু হয়ে উঠি আমরা।
আমি তার সাথে রিংকি আর আরিশারও পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। রিংকি তহ আবিরকে সামনাসামনি দেখে অজ্ঞান হওয়ার অতিক্রম তার উপর আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব বিষয়টা জেনে সে হার্ট ফিল করার মত অবস্থা। আবিরকে পেয়ে রিংকির খুশি আর ধরে কে??
সেই থেকে আরিশা আর রিংকি এর সাথেও আবিরের ভাব হয়ে যায়। ব্যস এইভাবেই চলছে জীবন।
.
.
??
.
.
মেডিক্যালের কনফারেন্স রুমে দাড়িয়ে আছি আমরা সবাই। সকলের চোখ মুখে এক কৌতূহলি ভাব। হুট করেই সকল ইন্টারসিপ স্টুডেন্টদের এইখানে একত্রিত হতে বলা হয়েছে। সকলেই কিছুটা চিন্তিত হুট করে এইভাবে ডাকার মানে কি? সকল চিন্তার অবসান ঘটিয়ে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে ড. সিয়াম আর ড. রিয়ান। তারা রুমে এসে চেয়ারে বসে। তারপর সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ড. সিয়াম বলে উঠে।
.
— ” তোমরা সকলেই নিশ্চয়ই ভাবছো হুট করে তোমাদের এইভাবে কেন ডাকা হলো তাই তহ?”
.
সকলেই মাথা নাড়াই।
.
— ” তোমাদের এইখানে একসাথে ডাকার কারণটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমার প্রত্যেকটা কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনবে।
তোমরা নিশ্চয়ই জানো এইবারের দেশের অবস্থা এতটা ভালো নয়। বন্যার জন্য এইবার অনেক ক্ষতি হয়েছে এমন কি অনেক রোগও ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনও ছড়াচ্ছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি গ্রাম্য এলাকায় ছড়িয়েছে। কয়েকটি গ্রামের অবস্থা একদমই খারাপ। অনেক গ্রামবাসী চিকিৎসার অভাবে মারাও যাচ্ছে।
তাই আমাদের কর্তৃপক্ষ এর জন্য তাদের চিকিৎসা দানের জন্য একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত করেছে। যার মধ্যে তোমাদেরকে অংশগ্রহণ করতে হবে। ”
.
কথা শুনার সাথে সাথে সকলের মাঝে এক উৎফুল্ল কাজ করা শুরু করে দিল। কেন না আমরা কেউ আজ পর্যন্ত মেডিক্যাল ক্যাম্পের জন্য যাই নি৷ এইটি সকলের জন্যই নতুন অভিজ্ঞতা। এমনি আমার জন্যও।
.
— ” ক্যাম্পটি মোট ২০ দিনের জন্য অনুষ্ঠিত হবে। আর এইখানে আজ মোট দুইটি গ্রুপ তৈরি হবে। এক গ্রুপ যাবে আমার সাথে, আরেক গ্রুপ ড. রিয়ানের সাথে। একেক গ্রুপে মোট ১০ জন করে মেম্বার নেওয়া হবে। আর আমাদের এই দুইটি গ্রুপ দুই জায়গায় প্রস্থান করবে।অল দ্যাট ইজ ক্লিয়ার নাও। ”
.
সকলেই আবার মাথা নাড়াই। তখন ড. রিয়ান বলে উঠে।
.
— ” দ্যান আমরা সিলেকশন করে নিচ্ছি কে কার গ্রুপে যাচ্ছে। ”
.
অতঃপর তারা সকলকে ২টি গ্রুপে ভাগ করে দিলেন। আমি ড. রিয়ানের গ্রুপে পড়ি। আর আরিশা আর রিংকি ড. সিয়ামের গ্রুপে। আমি আমার গ্রুপে একা হয়ে যাই।
সকলকে জানিয়ে দেওয়া হয় পরশু সকাল সকাল মেডিক্যাল ক্যাম্পের জন্য সকলেই রওনা হবে। তাই সকলেই যাতে তার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দেয়। এই বলে তারা বেড়িয়ে যায়। আর আমরাও নিজ নিজ কাজে লেগে পড়ি।
.
.
???
.
.
কিছুক্ষণ আগেই সূর্যমামা তার কিরন চারদিকে ছড়িয়ে দিয়ে নিজের অস্তিত্ব সবাইকে জানান দিচ্ছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ কানে এসে বারি খাচ্ছে। সকালের দমকা হাওয়ায় গায়ে এক শীতলতা সৃষ্টি করছে।
সকলেই মেডিক্যালের সামনে দাড়িয়ে আছি আর জন্য ড. সিয়াম আর ড. রিয়ান ওয়েট করছি। সামনেই দুইটি মিনি বাস দাড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ড. সিয়াম আর ড. রিয়ান এসে হাজির হয়।
দুইজনকে দেখে সকল মেয়ে একদম হা হয়ে যায়।
ড. সিয়ামের পড়নে রেড টি-শার্ট আর ব্ল্যাক ডেনিম প্যান্ট। পায়ে রেড কেডস্। চুলগুলো ব্রাশ করা। পিছে Travelling Bag ঝুলানো। ড. সিয়ামকে সকলে সবসময় ফরমাল ড্রেসআপই দেখেছে তাই তার এমন লুকে আজ সকলেই অবাক। আরিশা তহ দেখে যেন বড়সড় একটা ক্রাশ খেল।
এইদিকে ড. রিয়ানের পড়নে ব্রাউন কালারের জেকেট। ভিতরে ব্ল্যাক টি- শার্ট সাথে ব্ল্যাক ডেনিম প্যান্ট পড়া। পায়ে ব্ল্যাক কেডস্। চুলগুলো সিল্কি হওয়ার কারনে চোখের সামনে আসা। পিছে Travelling Bag ঝুলানো। মুখে এক এটিটিউড। তাকে কখনো এমন লুকে দেখা হয়নি আমার। আজ আমি নিজেও তার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছি। সে শ্যামবর্ণের হলেও তার এটিটিউড যেকোনো ফর্সা ছেলেকে হার মানাতে সক্ষম।
অতঃপর সকলেই তার গ্রুপ অনুযায়ী দুই ভাগ হয়ে যাই। বাসে উঠতে বলা হলে সকলেই তোরজোর করে উঠে পড়ে। আমি সর্বশেষে উঠি। উঠে দেখি সব সিট বুক। সামনের দুটো সিটই খালি। আমি আর কিছু না ভেবে সেখানে বসে পড়ি আর জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকি। এমন সময় কেউ আমার পাশে বসেছে বলে মনে হলো। পাশে তাকিয়ে দেখি মি খারুস মানে ড. রিয়ান। সে আমার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। আমিও আর কিছু না বলে জানালার বাইরে তাকাই।
গাড়ি ছুটতে শুরু করে আপন গতিতে। উদ্দেশ্য রাঙামাটি। কেন জানি মনের মধ্যে এক আকুলতা কাজ করতে শুরু করে। মনটা কেন যেন খচখচ করতে থাকে। মনে হচ্ছে যেন সেখানে কিছু একটা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। যা পরক্ষণেই আমার জীবন সম্পূর্ণ বদলে যাবে। হয়তো এইটি হবে সুখময় নাহলে হবে বিষাদময়।
আদো কি আমার জীবন সুখময় হবে?? নাকি বিষাদ থেকেও বিষাদময় হবে আমার জীবন?? এর কোনটারই উত্তর আমার জানা নেই।
কি হতে চলেছে সামনে তা কে জানে??


#চলবে