আমি তোমার গল্প হবো পর্ব-২৭

0
642

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::২৭

অধরা সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আশ্বিন রুমে নেই।
” আশ্বিন কোথায় গেলো? আজ তো শুক্রবার, অফিসে তো যাওয়ার কথা না। ”

অধরা কথাটা ভেবে ধীরে ধীরে নিচে নেমে দেখে আশ্বিন কোথাও নেই। অধরা কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভেবে ছাদে উঠে দেখে আশ্বিন একে একে তার ফুল গাছগুলোর যত্ন নিচ্ছে। মুহূর্তেই অধরার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। অধরা ধীরে ধীরে যেয়ে আশ্বিনের পাশের দোলনায় বসে পড়ে।

আশ্বিন একনজর অধরার দিকে তাকিয়ে, ” গুড মর্নিং ”
অধরা মুচকি হেসে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে, ” গুড মর্নিং ”

আজকে আকাশটা খুব সুন্দর, চারদিকে কোমল একটা বাতাস বয়ে বেড়াচ্ছে। অধরা চোখ বন্ধ করে দোলনায় দোল খেতে খেতে বাতাসের স্নিগ্ধতা অনুভব করছে। আশ্বিন একবার পাশে ফিরে অধরার দিকে তাকিয়ে দেখে বাতাসে তার খোলা চুলগুলো উঠছে আর অধরা তা অনুভব করছে। আশ্বিন মুচকি হেসে ধীরে ধীরে অধরার পাশে এসে বসে। কারো উপস্থিত বুঝতে পেরে অধরা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে আশ্বিন তার পাশে বসে আছে।

আশ্বিন মুচকি হেসে অধরার কপালে পরে থাকা চুলগুলো কানে পিঠে গুজে দিয়ে একটা হলুদ অলকানন্দা ফুল গুজে দেয়। আশ্বিনের কান্ড দেখে অধরা মুচকি হাসি দেয়। আশ্বিন মুচকি হেসে অধরার কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে। অধরা আশ্বিনের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে গান গাইতে শুরু করে…

🎶 হাওয়ায় হাওয়ায় দোলনা দোলে..
সুরের ডানা মেলে।
তোমার মনের উঠান, লেপে দিবো..
সাজিয়ে দিবো ফুলে।
তুমি এসো, তবু এসো, ভালোবেসে। 🎶

অধরার গান শুনে আশ্বিন মুচকি হেসে দুহাত দিয়ে আলতো করে অধরাকে জড়িয়ে ধরে।
এদিকে, দাদি ধীরে ধীরে ছাদে উঠে এসে অধরা আর আশ্বিনকে একসাথে দোলনায় বসে থাকতে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিচে নেমে আসে।

🌻🌻

শাহিন ডাইনিং টেবিলে বসে চুপচাপ নাস্তা করছে। তার পাশে বসে আছে অনুরিমা আর সাহিল।
শাহিন খেতে খেতে, ” সাহিল, আজ বিকেলে ব্যাস্ত না থাকলে একবার আমার অফিসে এসো। ”
সাহিল শাহিনের দিকে তাকিয়ে, ” ঠিক আছে ড্যাড। ”

অনুরিমা এতোক্ষণ চুপচাপ তাদের কথাগুলো শুনছিলো। সাহিল খাবার টেবিল থেকে চলে যেতেই সে শাহিনের দিকে তাকিয়ে, ” শুনেছি আপনার বিজনেস ডিল সব বাতিল হয়ে যাচ্ছে? ”
” শুনে খুশি হয়েছো মনে হচ্ছে? এতো বেশি খুশি হয়ো না, আমি আশ্বিনকে বেশিদিন এই সাফল্যে থাকতে দিবো না। ”
অনুরিমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে শাহিনের কথা শুনে, ” একটা উপদেশ দেই আপনাকে। আশ্বিনকে বিপদে ফেলার চিন্তা বাদ দিয়ে আগে নিজের বিজনেস ডিল সেইফ করার চেষ্টা করুন। এটাই আপনার জন্য ভালো হবে। ”

অনুরিমা কথাগুলো বলে চলে যেতেই শাহিন রাগে খাবারের প্লেট সব ফেলে দেয়। তারপর মাথায় হাত রেখে বসে থাকে।

🌻🌻

আশ্বিন ফোন হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নানাভাইকে কল দেয়। কয়েকবার রিং হতেই নানাভাই ফোন রিসিভ করে।
” হ্যালো নানাভাই। কেমন আছো? ”
” আমি ভালো আছি আশ্বিন। তোমরা সবাই কেমন আছো? ”
” আমরাও ভালো আছি। তোমার সেখানে থাকতে কোন সমস্যা হচ্ছে না তো? ”
” আরে না। আমি একদম ঠিক আছি। যাই হোক, তারপর বলো কি খবর? আমার কথামত কাজ হয়েছে? ”
আশ্বিন মুচকি হেসে, ” হ্যা। তোমার কথামত শাহিনের দুটো বিজনেস ডিল এখন আমার অধীনে আছে। তাদের সামনে শাহিনের বিপক্ষে কিছু প্রমাণ দেখানো হয়েছে যার কারণে সহজেই তারা শাহিনের সাথে ডিল বাতিল করেছে। ”
” গুড। আশ্বিন যা করার সাবধানে করতে হবে। শাহিন কিন্তু তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। ”
” জানি নানাভাই। আমি সবকিছু সামলে রাখছি। আর কোন দরকার হলে তোমাকে অবশ্যই জানাবো। ”

নানাভাই কিছু একটা ভেবে, ” আশ্বিন, আমার কি মনে হয় জানো? শাহিন যখন তার এতোগুলো বড় বড় ডিল হারিয়ে ফেলবে, তখন সে তার বিজনেসকে ঠিক রাখতে গোপনে অনেক ঝামেলা সৃষ্টি করবে। অনেক ভাবেই অন্যায় কাজ করবে। তখনই আমাদের তার ভুলগুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। ”
আশ্বিন মন দিয়ে কথাগুলো শুনে, ” ঠিক বলেছো নানাভাই। আমি সবসময় তার উপর নজর রাখবো। ”
” হুম। আচ্ছা, এখন তাহলে রাখছি। পরে আবার ফোন দিবো। ”
” ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেজ। ”

আশ্বিন ফোন রেখে কিছুক্ষণ নানাভাইয়ের কথাগুলো ভাবলো। আসলেই তো নানাভাই ঠিক বলেছে। কথাগুলো ভাবতেই হঠাত তার ফোনে একটা মেসেজ আসে। আশ্বিন ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে।

বিকেলে…

সাহিল তার বন্ধুদের কাছে বিদায় নিয়ে শাহিনের অফিসে এসে দেখে শাহিন টেবিলের উপর হাত রেখে মাথা ভর দিয়ে বসে আছে। সাহিল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে,
” কি হয়েছে ড্যাড? ”
শাহিন ধীরে ধীরে মাথা তুলে, ” আজও দুজন ক্লায়েন্ট আমার ডিল ক্যান্সেল করেছে। ”
” কিহ? এসব কি হচ্ছে ড্যাড? তারা হঠাত করেই এমন করছে কেনো? ”
” আমি জানি না, সাহিল। কোন একভাবে তারা আমার ভুল কাজের প্রমাণ পেয়েছে। ”
সাহিল কিছু একটা ভেবে, ” আমার মনে হয় এসব আশ্বিনের কাজ। সে ইচ্ছে করেই এমন করছে। ”
” আমারও তাই মনে হয়। ”
” তাহলে এখন কি করবে ড্যাড? আমি কি কোন ভাবে তোমাকে সাহায্য করবো? ”
” কি করবে তুমি? ”
সাহিল কিছুক্ষণ চুপ থেকে পর মূহুর্তে একটা বাঁকা হাসি দেয়, ” শুধু দেখতে থাকো। ”

সাহিল শাহিনের অফিস থেকে বেরিয়ে একজনকে ফোন করে দেখা করতে বলে। তারপর গাড়ি নিয়ে রওনা দেয়।

এদিকে…

আশ্বিন অফিস থেকে বের হবে ঠিক তখনই দেখে সাহিল গাড়ি করে কোথায় যাচ্ছে। হঠাত তাকে দেখে গাড়ি থামিয়ে তার কাছে এসে,
” কি খবর আশ্বিন? আজ কাল তো দেখাই যাচ্ছে না তোমাকে। ”
আশ্বিন মুচকি হেসে, ” বিশেষ কোন খবর নেই। তুমি হঠাত এদিকে কি করছো? ”
” একটা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলাম। যাই হোক, শুনলাম ইতালি গিয়েছিলে অধরাকে নিয়ে? ”

সাহিল কথাটা বলে একটা বাঁকা হাসি দেয়। আশ্বিন শান্ত ভাবে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে,
” হুমম। নতুন বিয়ে হয়েছে, এখনি তো ঘুরাঘুরি করবো। ”
সাহিল একটা হাসি দিয়ে, ” হুম। বউকে অনেক কষ্টে নিজের কাছে আটকে রাখার চেষ্টা করছো। বুঝতে পারছি আগের বার তোমার বাবা তো…। একটা করুন অভিজ্ঞতা আছে…। ”
আশ্বিন একটা হাসি দিয়ে, ” চিন্তা করো না সাহিল। আমার অধরাকে নিয়ে ভয় নেই। আমি জানি অধরা কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না। ”
” এতো আত্যবিশ্বাস! গুড। তবুও বলবো আগলে রেখো। ”
” বিশ্বাস আছে বলেই তো বলছি সাহিল। কি ভেবেছো? আমি জানি না? তুমি অধরার পিছু পিছু কতো ঘুরঘুর করেছো, ইনফ্যাক্ট এখনো করছো। তাই না? ”

আশ্বিনের কথা শুনে সাহিল চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। তা দেখে আশ্বিন মুচকি হেসে,
” যাই হোক, এটা হয়তো তোমাদের বংশগত প্রথা, অন্যের জিনিসের দিকে নজর দেওয়া। তোমার এতে কোন দোষ নেই। ”
” আশ্বিন, মুখ সামলে কথা বলো। রিসেন্ট যে তুমি আমাদের সব বিজনেস ক্লায়েন্টদের চোখে রুমাল বেধে নিজের কাছে নিয়ে যাচ্ছো…কি ভেবেছো আমরা জানি না? ”

আশ্বিন একটা হাসি দিয়ে, ” সাহিল, একটা কথা কি জানো? তোমরা কিছু পারো আর না পারো, নিজের দোষ অন্যের কাধে চাপিয়ে দিতে ঠিকই পারো। একে তো নিজেরা ক্লায়েক্টদের বিজনেস ডিল ভঙ্গ করে টাকা মেরে দিবে আর ক্লায়েন্টরা ডিল বাদ দিলেই দোষ হবে আমার। তাই না? ”
সাহিল রেগে, ” তুমি…। ”
আশ্বিন তাকে থামিয়ে দিয়ে, ” আরে, থামো থামো। এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোমার সাথে ঝগড়া করার সময় আমার নেই। একদিন সময় করে অফিসে চলে এসো, দুজন মিলে এই নিয়ে আলোচনা করবো। ”

আশ্বিন কথাটা বলে মুচকি হাসি দেয়। সাহিল তার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে, ” তোকে আমি দেখে নিবো। ”
কথাটা বলে সেখান থেকে চলে যায়। আশ্বিন তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে গাড়িতে উঠে বসে।

সাহিল রাগ দেখিয়ে গজগজ করে রেস্টুরেন্টে ঢুকে ধপ করে সোফায় বসে পড়ে। সাহিলের সামনে বসা মানুষটা রাগী কণ্ঠে,
” এতোক্ষণে আসলি? সেই কখন থেকে বসে আছি। এভাবে ডাকিয়ে এনে বসিয়ে রাখার মানে কি? ”
সাহিল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ” সরি একটু দেরি হয়ে গেলো। কেমন আছিস? ”
” আমি ভালোই আছি। জানিস তো..। ”
” হুমম। আমার তোর একটা হেল্প চাই। আশ্বিনকে একটা শিক্ষা দিতে চাই। আমি জানি তুই আমাকে হেল্প করবি না। তবুও বলবো প্লিজ, আর এখানে তোরও কিন্তু স্বার্থ আছে। এসবটা শুনে তারপর নাহয় সিদ্ধান্ত নিবি। ”
” আগে আমাকে তোর প্ল্যান সবটা খুলে বল। ”
সাহিল তাকে একে একে সব খুলে বলে। সাহিলের কথা শুনে সে মুচকি হেসে, ” প্ল্যান খাবার না। সঠিক ভাবে কাজ করলেই হবে। ওকে, আমাদের বন্ধুত্বের জন্য হলেও আমি তোকে হেল্প করবো। ”
সাহিল মুচকি হেসে, ” থ্যাংকস, মারিয়া। তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ”

মারিয়া তার কথা শুনে মুচকি হাসি দেয়।

—চলবে❤