আসক্তি২ পর্ব-০৩

0
2657

#আসক্তি২ (আ জার্নি অব্ এডিকশান)
পর্বঃ০৩
লেখায়ঃআফিয়া আজাদ নিঝুম

পাখি ইনায়াহ্’র ঘরে গিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পরে।পরমূহূর্তে কি হবে বা কি করবে সে নিজেও জানে না।দূঃচিন্তায় মাথা যেন ফেটে যাবার উপক্রম।অন্যদিকে শানের বাজে ব্যবহার তাকে আরো দ্বিগুন ভাবাচ্ছে।
“এই নতুন বউ, তুমি ফ্রেশ হও।চলো নাস্তা করবে।আমার সান সাইন আমার জন্যে অনেক অনেক রান্না করে। জানো?….. ”
“ইনায়াহ্”
“হুমম”,গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে জবাব দেয় ইনায়াহ্।পাখির হাতের আঙ্গুল নিয়ে খেলছে সে।
“তোমার মা কোথায়?”
“জানি নাহ।সান সাইন বলেছে মা নাকি আমাদেরকে রেখে কোথাও বেড়াতে গেছে।আর যারা নাকি সেখানে যায় তারা আর কখনো ফেরে না।”,মুখটা গম্ভীর করে জবাব দেয় ইনায়াহ্।

পাখির বড্ডো মায়া হয় ইনায়াহ্’র কথা শুনে।হাত টেনে নিজের একদম কাছে টেনে নেয়।
“মন খারাপ করে না বাবু”,বলেই ইনায়াহ্’র কপালে চুমু এঁকে দেয়।
“মে আই কল ইউ মুন সাইন!”
ভ্রুকুচকে পাখি হেসে ফেলে।
“মুন সাইন!”
“হুমমম”
“আচ্ছা বলিও”
“এবারে তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও”
পাখি ভাবনায় পরে যায়।
“ফ্রেশ তো হওয়া দরকার কিন্তু গায়ে দিবো কি?কোন ড্রেসই তো নাই আমার?”
“এই মুন সাইন, কি ভাবছো তুমি?”,পাখির গা ঝাকিয়ে বলে ইনায়াহ্
ইনায়াহ্’র ডাকে চমকে ফিরে পাখি বলে,”কি পরব?”
মুখে আঙ্গুল ঠেকিয়ে ইনায়াহ্ ভাবনার ভঙ্গিতে বলে,”তাই তো!”
কিছু একটা ভেবে ইনায়াহ্ বলে,”ওয়েট হেয়ার।আমি আসছি”
মুচকি হাসি দিয়ে পাখি ঠাঁয় বসে থাকে।ইনায়াহ্ দ্রুত সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে।
“আস্তে মাম”,বলতে বলতে শান টেবিলে নাস্তা রেডি করতে থাকে।
“সান সাইন, মুন সাইনের ড্রেস লাগবে”
শান ভ্রুকুচকে বলে,”মুন সাইন!”
“হুমম ঐ নতুন বউ।ওর ড্রেস লাগবে।আমার গুলো তো ওর গায়ে হবে না।তাই না?”
শানের কুচকানো ভ্রু জোড়া সোজা হয়ে যায় মূহূর্তেই।
চাপা রাগ ভেসে ওঠে চোখে মুখে।

🌸🌸
“তোমার মুন সাইনকে দিয়ে দাও মাম “,দরজার আড়াল থেকে ডেকে ইনায়াহ্’র দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দেয়।ততোক্ষনে পাখি চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে পূনারায় বিছানায় এসে বসে।ইনায়াহ্ দ্রুত সেটা এনে পাখির হাতে ধরিয়ে দেয়।হাত বাড়িয়ে পাখি সেটা নিয়ে খুলে বুঝতে পারে ভিতরে একটা শাড়ি।উল্টেপাল্টে বুঝতে পারে এটা কারো ব্যবহৃত ;যা এখন অব্যবহৃত অবস্থায় হয়ত কাবার্ডের এককোণে পরে ছিলো।উপয়ান্তর না পেয়ে পাখি ইনায়াহ্’র থেকে টাওয়াল নিয়ে গোসলের উদ্দেশ্যে ওয়াশরুমে চলে যায়।

🌸
শান ইনায়াহ্ সহ ডায়নিং এ নাস্তা করছে। আপনমনে রুটির টুকরো মুখে পুরছে শান। আর টেবিলের উপর রাখা ফোনটা স্ক্রল করছে।
“সান সাইন,আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।তুমি খাইয়ে দাও”,টেনে টেনে বলে ইনায়াহ্।
“আমি একটু কাজ করছি মা। কষ্ট করে খেয়ে নাও”,ফোনের দিকে চেয়ে অনুনয়ের স্বরে বলে শান।
“আসো আমি খাইয়ে দিই”,গলা নামিয়ে বলতে বলতে পাখি সিঁড়ি দিয়ে নেমে টেবিলের কাছে চলে আসে।
পাখির কথায় শান মাথা তুলে তাকায়।

সদ্য গোসল নেয়া চুল গুলো টাওয়ালে প্যাঁচানো। সামনে ঝুঁকে পরেছে কয়েকটা অবাধ্য চুল।যার আগায় পানির ফোটা আটকে আছে নির্দ্বিধায়।হালকা পাতলা গড়নে চাপা গায়ের রংটা যেন বেশ মানিয়েছে। পরিচিত শাড়ি পরিহিত অপরিচিত স্নিগ্ধ রমনি।শানের চোখ আটকে যায়। অপলক চেয়ে থাকে সেদিকে।শাড়ির দিকে ভালো করে নজর পরতেই চোখ দুটো মূহুর্তেই বন্ধ করে নেয় শান।রাগে চোয়াল শক্ত করে পূনরায় তাকায় পাখির দিকে।

শানের দিকে একবার চেয়ে পাখি অপ্রস্তুত হয়ে যায়।এদিক সেদিক নজর বুলিয়ে আঁচল টা ঠিক করে নিয়ে ইনায়াহ্’র দিকে হাত বাড়ায়।ইনায়াহ্’র চোখে মুখে ফুটে ওঠে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো খুশি।প্লেট টা বাড়িয়ে দেয় পাখির দিকে।পাখি হাস্যোজ্বল মুখে প্লেটটা নিয়ে খাওয়াতে শুরু করে।ইনায়াহ্ দৌড়ে ছুটে যায় বাহিরে।
“ইনায়াহ্”,বলেই পাখি পিছনে যেতে শানের ডাকে থমকে যায়।
“দাঁড়াও ”
“না জানি আবার কি অপমান করে বসিয়ে রাখে”,বিড়িবিড় করে বলে পাখি।
শান চেয়ার ছেড়ে পাখির পিছনে এসে দাঁড়ায়।
“টার্ণ ব্যাক”
শানের কথায় এবার পিছনে ফিরে পাখি।চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে হাতে রাখা প্লেটের দিকে তাকায়।
“কারো ব্যাকসাইড দেখে কথা বলার কোন ইন্টারেস্ট আমার নাই।বাই দ্য ওয়ে,যা করছি আমার সব ইনায়াহ্’র জন্যে করছি।একটু পরে ড্রেস আসবে। শাড়িটা রিটার্ণ চাই এন্ড ফাস্ট।আর নিজের থাকার ব্যবস্থা করো”,বলেই শান পাখির উত্তরের অপেক্ষায় চেয়ে থাকে।
“আমি ককোথায় যযাবো?”,আমতা আমতা করে বলে পাখি।
শান রেগে গিয়ে বলে, “হোয়াট??তুমি কি এখানে পার্মানেন্টলি থাকতে চাইছো?”
মাথা তুলে অসহায় হয়ে তাকায় পাখি।শান আবার বলে,”নো ওয়ে।তোমাকে এখানে কখনো এলাও করব না আমি।”
“আমায় কয়টা দিন একটু হেল্প করুন।আমি রানি মাসির থেকে যোগাযোগ করে ঠিকানাটা যোগার করে চলে যাবো”,বেশ অসহায় ভঙ্গিতে শানের দিকে চেয়ে বলে পাখি।
টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে পাখির দিকে এগিয়ে বলে,”কল হার”
“এই মূহূর্তে তাকে কল করাও সম্ভব না।আমি জানি ঐ বাড়ির সবার ফোন এখন আয়ানের হাতে”
মুখে জগৎের বিরক্তি এনে শান বলে,”হে লিসেন, আই ডোন্ট ওয়ান্না হেয়ার ওব ইওর কক এন্ড বুল স্টোরি। ওকে?তাড়াতাড়ি দূর হবে বাড়ির থেকে”
বলেই শান টেবিল থেকে খাবার গুলো উঠিয়ে কিচেনে রেখে আসে।পাখি অবাক হয়ে যায়, তাকে সৌজন্যতার খাতিরেও একবার খেতে বললো না।

🌸🌸
ইনায়াহ্কে খাইয়ে পাখি বেসিনে প্লেটটা রাখতে যায়।কলিং বেলের শব্দে দরজার দিকে তাকায়।
“দরজা তো খোলাই!”,ভাবতে দ্বিধায় পরে যায়।
“এগিয়ে দেখব নাকি না?আমি তো কেউ না, দেখা টা উচিত হবে?”
চট করে শান কোথাও থেকে এসে পার্সেল নিয়ে আবার ঘরে ঢোকে।
সোফায় বসে ডোরিমন দেখতে থাকা ইনায়াহ্কে উদ্দেশ্য করে শান বলে,”মাম এগুলো ধরো”
“কি এগুলো?”
“ওকে দাও”,গম্ভীর মুখভঙ্গিতে থমথমে স্বরে পাখিকে দেখিয়ে বলে শান।
ইনায়াহ্ পার্সলটা পাখিকে দিয়ে দৌড়ে ছুটে আসে আবার সোফার দিকে।

পাখি পার্সেল খুলে বুঝতে পারে কয়েকটা সালওয়ার কামিজের সেট।ঘরে গিয়ে সংকোচে সেগুলো বের করে শাড়িটা পাল্টিয়ে নেয়।এরপর শাড়িটা ভাঁজ করে নিচে নেমে এগিয়ে দেয় শানের দিকে।
“মিনিমাম সেন্সটুকুও কি নেই?”
পাখি চমকে যায়।বুঝতে পারে না কি করলো সে!
শান আবার বলে,”পরনের জিনিস ওয়াশ করে দিতে হয়।”
ভীষণ অপমানিত বোধ করে পাখি।লজ্জায় চোখের কোণে জল জমে যায়।চিকচিকে জলের কণা গুলো গাল বেয়ে নিচে পরতেই চট করে মুছে নেয় পাখি।
“একটা মানুষ এতো বাজে কিভাবে আচরন করতে পারে!”
শান কটাক্ষের চোখে চেয়ে পাখির পা থেকে মাথা অবধি দেখে শাড়িটা নিয়ে চলে যায়।

🌸🌸
বিকেল হয়ে যায়।শান ল্যাপটপে কাজ করছে বাহিরে বাগানে বসে।ইনায়াহ্ এগিয়ে গিয়ে বলে,”তুমি না আজ অনেক এনজয় করতে চাইলা আর এখন কাজ নিয়ে বসে পরলা?”
শান ইনায়াহ্’র পেটে মাথাটা ঠেকিয়ে বলে, “একটা কাজ পরে গেছে গো মা।তুমি কোথায় ছিলা এতোসময়?”
“মুন সাইনের কাছে”
শান মাথা তুলে আবার কাজে মন দেয়।
“মুন সাইন খায় না কেন? ওর কি ক্ষিদে লাগে না?”
ইনায়াহ্’র কথায় টাইপিং স্টপ রেখে শান চমকে যায়।
“খায় নি?”
“নাহহহ”
পাখির জন্যে সামান্য মানবতাবোধ জাগ্রত হয় শানের। ইনায়াহকে বলে,”তুমি খাইয়ে দিলে খাবে”

ক্ষিদের চোটে চোখ মুখ চুপসে গেছে পাখির।ইনায়াহ্’র ঘরে চুপটি মেরে বসে নিচে শান আর ইনায়াহ্কে দেখছে জানালা দিয়ে।খানিক পরে দৌড়ে এসে ইনায়াহ্ এক প্রকার জোড় করে পাখিকে নিচে নামিয়ে আনে।ছোট ছোট হাতে খাবার বেড়ে প্লেটে সাজিয়ে দেয়।এরপর নিজ হাতে মেখে খাবারের লোকমা পাখির মুখের সামনে ধরে। এতোক্ষন ইনায়াহ্’র কাজ অবাক বিষ্ময়ে দেখে চলছে পাখি।এবার জোড়ে হেসে দিয়ে জড়িয়ে নেয় ওকে।
“হা করো মুন সাইন”
“হাআআ”

🌸🌸
রাত্রেবেলা ইনায়াহ্ শানের কাছে ঘুমাতে চলে যায়।খানিক পর ফিরে এসে পাখির হাত টানতে টানতে তাকেও নিয়ে দাঁড় করায় শানের ঘরের মেঝেতে।
“আজ আমরা একসাথে ঘুমাব”,খুশির রেখা মুখে রেখে বলে ইনায়াহ্
ইনায়াহ্’র কথায় চোখ কপালে উঠে যায় পাখির।শান ওয়াশরুম থেকে বেরোতে বেরোতে ওদের দেখে ভ্রুকুচকে ফেলে।রাগে উঠে যায় চরমে।
“তুমি আমার বেডরুমে….”,চাপাস্বরে পাখিকে ধমক দিতেই ইনায়াহ্ শানের দিকে এগিয়ে হাত টেনে বলে “আজ আমরা একসাথে থাকব সান সাইন”

শান কিছু বলতে পারে না। মুচকি হাসি উপহার দিয়ে ইনায়াহ্কে বলে,”হুমম।তো এবার যাও তো মাম তোমার টেডি টা নিয়ে আসো”
“ওকে”,বলেই ইনায়াহ্ ঘর ছেড়ে চলে আসে।

“দেখলে তো নিজেদের ফর্মে চলে আসতেছো মূহূর্তে মূহূর্তে!”,শানের তেড়ছা কথায় পাখি চমকে তাকায়।
শান পূনারায় বলে,”তোমাদের মতো মেয়েরা বেডরুমেই আসতে চায় ;কারণে -অকারণে।তাই বলে প্রথম দিনেই!হাউ লেইম!”
চোখ মুখ কুচকে দুই পা পিছিয়ে যায় পাখি।ডিকিতে ওঠার মতো ভুলটার জন্যে বার বার নিজেকে দোষারোপ করে চলে।

শান একটু এগিয়ে পাখির ঠোঁটের নিচের তিলটার দিকে আঙ্গুল তাক করে বলে,”প্রমান? এই তিল।সাথে তোমার আচরন।আই হেইট দিজ টাইপ অব পার্সন।ক্যারেক্টারলেস!”,বলেই শান পিছু ফিরে চলে আসতেই পাখি বলে ওঠে,”আমি এখানে আসতে চাই নি।ইনায়াহ্…..”
“হুসসস!একদম ইনায়াহ্’র অজুহাত দেবে না”
“আপনি ওকে তো জিজ্ঞেসা করতে পারেন আমার কথা বিশ্বাস না করতে চাইলে!”
“ও ছোট্ট একটা বাচ্চা।বললো আর চলে এলে?শিখাও আমাকে?লিসেন এই ব্যপারে ইনায়াহ্কে কিচ্ছু বলবে না তুমি।গট ইট!”
পাখি চোখ নামিয়ে নেয় শানের থেকে।
“ও ঘুমানোর সাথে সাথে ঘর থেকে বের হয়ে যাবে।মাথায় রেখো”,বলেই শান ফোন হাতে বিছানার একপ্রান্তে আধশোয়া হয়ে বসে থাকে।

একটু পর ইনায়াহ্ টেডি সমেত ঘরে ঢুকে পাখির কোমড় জড়িয়ে ধরে।শান সেদিকে একবার চেয়ে আবার ফোনের দিকে দৃষ্টি রাখে।
পাখি ইনায়াহকে কোলে নিয়ে শুইয়ে দেয়।
“মুন সাইন,তুমি গল্প পারো?প্লিজ গল্প শুনাও।সান সাইন তো প্রতিদিন শুনায়”
ইনায়াহ্’র কথায় কটাক্ষের চোখে শানের দিকে চেয়ে পাখি ভাবে,”যা বদরাগী লোক সে আবার শুনায় গল্প। হুহহ”

শানের সাথে চোখে চোখ পড়তেই দৃষ্টি সরিয়ে পাখি গল্প বলতে শুরু করে।

“তোমাদের নারীরা এতোটাই নোংড়া যে পুরো জাতটাকেই ঘৃনা লাগে।সবাই এক তোমরা।নিজের শরীর বিলাতে দ্বিতীয়বার ভাবো না তোমরা।টাকার লোভে সব করতে পারো,সব। ইভেন ঘর-সংসার, সন্তান-সন্তোতি, ভালোবাসার মানুষ সবকিছুকে পিছনে ফেলতে পারো”,দাঁতে দাঁত চিপে শান আপনমনে বলে কথা গুলো।

🌸🌸
ইনায়াহ্ ঘুমিয়েছে কিনা শিওর হতে শান এগিয়ে এসে দেখে।এএরপর ইনায়াহ্কে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিতে নিতে বলে,”আউট”
পাখি লজ্জায়, অপমানে দৌড়ে ঘর ছেড়ে বাহিরে চলে আসে।

চলবে….