একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব-৫+৬

0
372

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
৫.
#writer_Mousumi_Akter

রোশান স্যার কে দেখেই জানালার নিচে বসে পড়লাম আমি।উনি জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে বললেন,

‘শেষ পর্যন্ত এখানেও অত্যাচার শুরু করলে?’

বলেই ওটা আমার গায়ের উপর ছুড়ে ফেলে চলে গেলেন।কি সাংঘাতিক লজ্জা দিয়ে গেলেন আমাকে।বার বার কি হচ্ছে এসব আমার সাথে।আমাকে কি জ্বী”নে ধরছে নাকি।বাইরে থেকে তরী ডাকছে,

‘ভাবী কাজ হয়েছে আসুন।’

‘হ্যাঁ আসছি।’

ঘর থেকে বেরিয়ে তরীর সাথে রান্নাঘরের দিকে গেলাম।আমাকে দেখেই রোশান স্যারের মা এগিয়ে এসে বললেন,

‘কি ব্যাপার মা তোমার ঘুম ভাঙল।এসো তোমাকে দেখতে সকাল থেকে মানুষ এসে বসে আছে।’

আমি স্বভাবসুলভ হাসলাম। এরই মাঝে আরেকজন ভদ্রমহিলা বয়স ৫০+ হবে সেও আমাকে দেখে এগিয়ে এলো।উনি রোশান স্যারের ফুফু হন।আমার গালে হাত বুলিয়ে বলল,

‘তরীর মতো মিষ্টি হয়েছে আমাদের বড় বৌমা।’

শ্বাশুড়ি মা কথাটা শোনার সাথে সাথে বলল,

‘আপা কিসের সাথে কিসের তুলনা করেন আপনি।তরী নতুন বউ এর বা’পায়ের ধোয়া পানি খাওয়ার যোগ্য ও না।কোথায় তরী আর কোথায় সারাহ।’

ফুফু শ্বাশুড়ি চট করে রেগে গেলেন।তরীর মুখের দিকে তাকালেন।আমিও তরীর মুখের দিকে তাকালাম।তরীর মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো। তরী মাথা নিচু করে চলে গেলো।শ্বাশুড়ি তরীর সাথে এমন ব্যবহার করল কেনো?এই ভাবে কারো সাথে কারো তুলনা করে কেউ।

ফুফু শ্বাশুড়ি রাগান্বিত হয়ে বলল, ‘ তরী তরীর জায়গায় সুন্দর আর সারাহ তার জায়গায় সুন্দর। বাড়িতে নতুন বউ নতুন আত্মীয় তোমার সাথে ঝ’গ’ড়া করতে চাইছি না।’

আমাকে নিয়ে একটা চেয়ারে বসানো হলো।মানুষ জন আসছে আর রিতীমত জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে তোমার নাম,কয়ভাই বোন,কোন ক্লাসে পড়ো,একটু উঠে দাঁড়াও,চুল গুলো দেখি।এক ঘন্টা ধরে অন্তত ৪০ জনের কাছে ইন্টারভিউ দিলাম।ভীষণ বিরক্ত লাগছে আমার।রোহান ছুটে এসে আমার কোলে উঠল।আমি রোহান কে কানে কানে বললাম, ‘তোমার আম্মুকে একটু ডেকে আনবে। ‘
রোহান কোল থেকে নেমে দ্রুত ছুটে গেলো।এক মিনিটের মাঝে তরী ছাই মাখা দু ‘হাত নিয়ে এসে আমার কাছে ঝুঁকে প্রশ্ন করল, ‘কি হয়েছে ভাবি?’
তরীর কানে কানে ফিসফিস করে বললাম,
‘আমায় একটা উপকার করবে বোন প্লিজ।’
‘কি উপকার।’
‘আমার একটা ছবিসহ আমার রুপ-চেহারার যাবতীয় বিবরণ দিয়ে এ বাড়ির মেইন গেটে সুপার গ্লু দিয়ে লাগিয়ে রাখবা।প্রথমে লিখবা এই অ-সুন্দ্রী মহিলা এ বাড়ির বড় ছেলের নব্য বউ।তার গায়ের রং ফর্সা হলেও ফেস খুব একটা ভালো নয়।হাইট ৫ ফিট সাড়ে ৩”। মাথার চুল বড় ও না ছোট ও না,সামনে লেয়ার কাটিং, পেছনে ইউ।ভ্রু প্লাগ করা আছে,বাম হাতের নখ ও রাখা আছে।আর নতুন বউকে হেসে দেখাতে বলবেন না।কারণ হাসলে তাকে ভাকো দেখায় না।আরো একটা সমস্যা আছে শীতকালে মোটেও হাসতে বলবেন না, হাসলে ঠোঁট ফেঁটে যায় তাই ঠোঁট চেপে ধরে হাসতে হয়।’

তরী আমার কথা শুনে ভীষণ জোরে হেসে দিলো।যে হাসিকে বলে প্রাণখোলা হাসি।তরী হাসলে এত সুন্দর লাগে আগে তো বুঝতে পারিনি।শ্বাশুড়ি আমাকে পাম দিলেন কেনো বুঝলাম না।তরীর চেহারা এতটায় সুন্দর যার কাছে আমি কিছুই না।অথচ শ্বাশুড়ি প্রশংসা টা আমার ই করে গেলেন। কি আশ্চর্য!তরী হাসতে হাসতে আবার চলে গেলো।মেয়েটাকে এভাবেই হাসি খুশিতে রাখার চেষ্টা করতে হবে।আর কতক্ষণ বসে থাকতে এভাবে কে জানে।আমার আবার ধৈর্য খুব কম।এক জায়গা অনেক্ষণ বসে থাকতে পারিনা,অস্হির টাইপের মেয়ে আমি।আর জনে জনে একই কথা বলতেও ভাল লাগেনা।আমি যার আলসেমির জন্য মেসেজের রিপ্লাই তাই করিনা ঠিকভাবে।ফ্রেন্ডরা আমার পোস্টে গিয়ে কমেন্ট করে ইনবক্স চেক কর,পব্লিক প্লেসে গা’লি খাওয়ার আগে।বন্ধু জাতির পক্ষে অসম্ভব কিছুই নেই।পাব্লিক প্লেসে ইজ্জত যাবার আগে ছুটে যায় ইনবক্সে।আর সেখানে রিপ্লাই করি।আমার জীবনে আলসেমির শেষ নেই।পড়তে বসি পরীক্ষার আগের দিন রাতে।দু এক লাইন এর ধারণা নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে পৃষ্টার পর পৃষ্টা লিখে ফেলি।ভাজ্ঞিস যা লিখি সব স্যার রা তা আমাকে পড়ে শোনান না।তবে একবার রোশান স্যার ই আমাকে এই লজ্জা দিয়েছিলেন। অন্য স্যার রা বানিয়ে লিখলেও মার্ক দেন কিন্তু রোশান স্যার তা দেন না।এইতো কিছুদিন আগে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের টেস্ট পরীক্ষায় রেজাল্ট এর দিন আমি একটা সাব্জেক্ট এ বারো পেয়েছিলাম।রোশান স্যার সবার মাঝে আমার খাতা পড়ে শোনাতে বলেছিলেন।প্রশ্নটা ছিলো ব্যবসায়ের নীতি আলোচনা করো।আমি লিখেছিলাম ব্যবসায়ে নিতী অনেক গুরুত্বপূর্ণ।এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করতেই হবে।এর গুরুত্ব বলে শেষ করা সম্ভব নয়।এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করতে পারলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব সাথে উন্নতি ও সম্ভব।তাই ব্যবসায়ের নিতী অত্যান্ত জরুরী।ক্লাসের সবাই হাসছিলো আর রোশান স্যার অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে।এইভাবে অনেকের সাথেই স্যার এমন করেছিলো।
লুকা প্যাসিওলির জন্ম কত সালে এটা ভুল করে ১৯৭১ সাল দিয়ে ফেলছিলাম।রোশান স্যার বলেছিলেন, ‘কি ভেবে তুমি ১৯৭১ সাল দিলে।’
আমিও মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে স্যার কে সত্য কথাটা বলেই দিলাম স্যার আমার ১৯৭১ সাল ছাড়া আর কোনো সাল ই মনে থাকেনা।সকাল দশ টা বেজে গিয়েছে মানুষের দেখাদেখি শেষ হতে।এরপর আমাকে ডায়নিং নিয়ে যাওয়া হলো।
ডায়নিং এ সবাই সকালের নাস্তা খাচ্ছি।ওশান নাকি এখনো ঘুম থেকে ওঠে নি আর রোশান স্যার কি কাজে গিয়েছে।আমার দাদু, রোশান স্যারের দাদু,শ্বশুর,শ্বাশুড়ি,ফুফু শ্বাশুড়ি সবাই একসাথেই বসেছি।রোশান স্যারের দাদু আর আমার দাদুর খোশ গল্প শেষ হচ্ছেনা।দুই বুড়োর যেনো ইদ লেগেছে।এই বিয়ে দিতে পেরে তারা ভীষণ আনন্দিত।রোশান স্যারের দাদু আমাকে বললেন, ‘সারাহ তোমার সে লোক কোথায়?’
মিহি কন্ঠে বললাম, ‘জানিনা দাদু।’
‘ফোন করো,নতুন নতুন এক সাথেই খেতে হয়।’
এরই মাঝে আমার দাদু বলল, ‘সারাহ পরে খাবে রোশান আসুক আগে।’
এই আমার দাদু কি অশান্তিতে ফেলল।এমনি খুদা লেগেছে আমার।
রোহান বলল, ‘আমি নতুন বউ এর হাতে খাবো।’
ওর প্রস্তাব টা শুনে আমার খুব ভাল লাগল।বাচ্চা আমার খুব ভাল লাগে।আমি রোহান কে আদর করছি আর খাইয়ে দিচ্ছি।মনে মনে তরী কে খুজছি।শ্বাশুড়ি কে জিজ্ঞেস করলাম,

‘আচ্ছা আম্মা তরী কোথায় ও খাবেনা?’

‘সে কি আর তোমার মতো শিক্ষিত মেয়ে যে ভদ্রতা শিখবে।মানুষ কে ডেকে যে একসাথে খেতে হয় সেই ভদ্রতা টুকু ও তার নেই।শুধু শুধু কি আর আমার ছেলে ওকে দেখতে পারেনা।রান্না এক পাশ দিয়ে হয় আর আরেক পাশ দিয়ে ভাল ভাল টা নিয়ে আগে খেয়ে নেয়।’

‘ওহ তরী তাহলে খেয়েছে আমাকে ছাড়াই।’

‘ হ্যাঁ, খেয়েছে সে।’

সবার খাওয়া শেষ আমাকে বসিয়ে রেখে গিয়েছে রোশান স্যারের জন্য।সে না আসলে নাকি খাওয়া যাবেনা।দাদুর কথা মহব্বত বাড়ার ব্যাপার স্যাপার আছে এখানে।ডায়নিং ছেড়ে উঠে রান্নাঘরের দিকে উঁকি দিতে গেলাম।গিয়ে দেখি ঘরের পেছনে তরী মাছ কুটছে।মাবুদ এত মাছ একা একা কখনো কোটা যায়।তরীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে শ্বাশুড়ি মা।তরী অনুনয় করে বলছে,

‘আম্মা আমার না কোমর লেগে গিয়েছে।এত ছোট মাছ একা হাতে কুটতে পারছিনা আর।কিছু মাছ ফ্রিজে রেখে দেই পরে কুটে নিবো।’

‘নবাবের বেটি।ফ্রিজ কি বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছো।একটু সুতো ও তো আনোনি সাথে করে।এত নবাবী চাল কিভাবে আসে।’

‘আমি কি সে কথা বলেছি।আমার কি কেউ আছে দেওয়ার মতো।বাবা গরিব তার দেওয়ার সামর্থ নেই আপনারা তো জানেন ই।সে কি বেঁচে আছে যে দিবে।’

‘তাহলে চুপচাপ মাছ কোটো,সবার খাওয়া হয়ে গিয়েছে থালা বাটি সব ধুয়ে যা আছে খেয়ে নিও।আর নতুন বউ এর কাছে যেনো কিছু বলতে যেওনা।’

তরীর জন্য তো অবশিষ্ট কোনো ভালো খাবার নেই।শ্বাশুড়ি মিথ্যা বলল কেনো যে তরী আগে খেয়ে নিয়েছে।তরীর অবস্থাটা বুঝতে পারছি আমি।আমি তরীকে এইভাবে নির্যাতিত হতে দিতে পারিনা।

এরই মাঝে পেছন থেকে কেউ আমাকে ডেকে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম ভাবি।আসলে ব্যস্ততার জন্য ভাইয়ার বিয়েতে উপস্হিত হতে পারিনি।’

আমি পেছন ফিরে তাকিয়েই ওশানের মুখোমুখি হলাম।আমাকে দেখেই চমকে গেলো ওশান।ওর মুখটা চুপসে এতটুকু হয়ে গিয়েছে।কখনো কি ভেবেছিলো এইভাবে ধরাটা খাবে।ওশান দেখে মনে হচ্ছে ভয়ানক কোনো বজ্রপাত ওর মাথায় হয়েছে।ভীষণ অবাক হয়ে বলল,

‘সারাহ তুমি!’

এরই মাঝে পেছন থেকে রোশান স্যার বললেন,

‘ও ভাবি হয় তোর। ভুলেও নাম ধরে ডাকবি না।লাস্ট বারের মত বলে রাখলাম।’

ওশানের থেকে চোখ সরিয়ে রোশান স্যারের দিকে তাকালাম।কথাটার মাঝে কত সিরিয়াসনেস ছিলো।হঠাত এক অদ্ভুত ভাল লাগা কাজ করল মনের মাঝে।

রোশান স্যার আমার দিকে তাকাতে তাকাতে ঘরে প্রবেশ করলেন।

চলবে?..

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
৬.
#writer_Mousumi_Akter

মনের মাঝে একটা সুপ্ত প্রশ্ন বার বার উঁকি দিচ্ছে সেটা হলো রোশান স্যার থাকতেও এ বাড়িতে তরী এতটা অত্যাচারিত কেনো?উনি তো তরীকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট করেন কাল রাতেই দেখলাম।তাহলে কাহিনী টা কি?কোনো তো ব্যাপার আছেই এ বাড়িতে।কিছু একটা যেটা আমি বুঝতে পারছিনা হঠাত করে।শ্বাশুড়ি তরীর কাছ থেকে আসার পর পর ই আমি রান্নাঘর থেকে আরেকটা বটি নিয়ে তরীর সাথে বসে পড়লাম।তরী আমাকে দেখেই ভীষণ অবাক হলো।সাথে সাথে বলল,

‘আরে ভাবি এ আপনি কি করছেন।উঠুন উঠুন আপনাকে মাছে হাত দিতে হবেনা।’

আমি তরির দিকে তাকালাম দেখলাম মেয়েটার মুখের অদল ভর্তি যন্ত্রণা।তরীর নিষেধ ভঙ্গ করে ছাইয়ের গাদায় হাত ঢুকিয়ে দিলাম।মাছ কুটতে কুটতে বললাম,
‘আচ্ছা তরী তুমি ঘুম থেকে কখন উঠেছো?’
‘আপনি আগে মাছ রেখে উঠুন,আপনার হাতে গন্ধ হবে।’
‘আর তোমার হবেনা?’
‘আমি আর আপনি কি এক।আপনি হলেন শিক্ষিত মেয়ে।’
‘তা তোমাকে শিক্ষিত হতে কে আটকেছিলো।’
‘সব ই কপাল ভাবি।’
‘স্টুডেন্ট কি খারাপ ছিলে?মানে আমার থেকেও খারাপ ছিলে।’
‘না সেসব কিছু নয়।’
খেয়াল করলাম তরীর হাতে গলায় পুরণো কিছু দাগ।দাগ গুলোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
‘এসব দাগ কিসের?’
‘না কিছুনা ভাবি।’
‘তরী আমার কাছ থেকে তুমি কিছুই লুকোতে পারবেনা।এ বাড়িতে তোমার সাথে কিছুই স্বাভাবিক হচ্ছেনা।আমাকে তোমার বোন ভাবো তরী। আমি অন্য জা দের মতো তোমার সাথে কম্পিটিশন করব না কিছু নিয়ে।অন্য ফ্যামিলিতে যেমন হয় এ ফ্যামিলিতে তেমন হবেনা।আমি তোমার জা নই তোমার বোন হতে চাই।তোমার কষ্ট গুলো নিজের করে নিতে চাই।আমি এক মেয়ে তরী শ্বাশুড়ি তোমাকে ছোট করে যে আমাকে প্রশংসা করলো কি ভেবেছো আমি খুশি হয়েছি।না আমি খুশি না তাতে।’

তরী মাছ কোটা রেখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ওর চোখ ভর্তি পানি।মেয়েটা বোধহয় এক্ষণি খুব জোরে কেঁদে দিবে।ওর প্রবল কাঁন্না পাচ্ছে।এই কাঁন্না খুব কাছের কারো কাছেই করা যায়।তরীর দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘কি হলো তরী কিছু বলো।’
‘যার স্বামি ঠিক তার দুনিয়া ঠিক ভাবি।এক চাঁদ সুখ দিলে হাজার তারা কিছু করতে পারেনা।যার জন্য এ বাড়িতে আছি সেই যদি দেখতে না পারে বাকিরা আর কি করবে?’
‘ওশানের সাথে কি নিয়ে ঝামেলা তোমার?’
‘ছোঁয়া।’
‘ছোঁয়া? ‘
‘হ্যাঁ! আমার জীবনের সব হাসি-আনন্দ কেড়ে নেওয়ার পেছনে একমাত্র ছোঁয়ার হাত রয়েছে।ওই একটা মেয়ে জীবন টা তছনছ করে দিয়েছে আমার।’
‘কি করেছে ছোঁয়া।’
‘ওশান ছোঁয়ার সাথে রিলেশন করে।ছোঁয়া নাকি সব জেনে শুনেই ওশান কে ভালবাসে।একটা মেয়ে হয়ে কিভাবে অন্য মেয়ের সংসার ভাঙতে পারে।আমি জীবনে একবার হলেও ছোঁয়ার সাথে দেখা করব।জিজ্ঞেস করব অন্যর স্বামি কেড়ে নিয়ে কেমন লাগছে। দুনিয়াতে কি আর ছেলে পায় নি সে।সে তো ভীষণ সুন্দরী দেখতে।তাহলেও কেনো আমার সংসার টা এভাবে ভাঙছে।’
‘তোমার বাড়িতে জানাওনি। ‘
‘কাকে জানাবো।বাবা-মা দুজন ই মারা গিয়েছে।নিজের একটা ভাই ও নেই।আরো তিনটা বোন আছে।তাদের ও পারিবারিক অবস্থা খুব একটা ভাল নয়।চাচারা যেমন তেমন পেয়ে বিয়ে দিয়েছে।আমি একটু দেখতে শুনতে ভালো।তাই ওশান আমাকে দেখে পা’গ-ল হয়ে যায়।ওর মা-বাবা কেউ রাজি ছিলো না।একাই বিয়ে করে এনেছিলো।’
‘তুমি সিওর ছোঁয়া সব জানে?’
‘জানে?’
‘তুমি কিভাবে জানলে ছোঁয়ার ব্যাপারে।’
‘ওর ফোনের ওয়াল পেপারে ছবি আছে।তাছাড়া আমার পাশে সুয়ে অব্ধি কথা বলে।’
‘আর শ্বাশুড়ি।’
‘শ্বাশুড়ির ইচ্ছা ছোঁয়ার সাথে ওশানের বিয়ে দেওয়ার।তাহলে অনেক কিছু পাবে।বড়লোকের মেয়ে।’
‘অনেক কিছু পাওয়ার লোভে ওশানের আবার বিয়ে দিবে।এত লোভী উনি।’
‘ হ্যাঁ,আমার তো পরিবার বলে কিচ্ছুই নেই।তারা কিছু দিতে পারলে হয়ত উনি কদর করত।’
‘এই দাগ গুলো কিসের বললে না।’
‘এমন অসংখ্য দাগ আছে শরীরে ভাবি।’
‘ওশান এত অত্যাচার করে।’
‘শুধু ওশান নয়।ওর মা ও।ওর মা আমাকে দু’চোখে দেখতে পারেন না।আমাকে বিয়ে করে ওষান কোনো সম্পত্তি পায়নি এইজন্য।’
‘কি কি করেন উনি তোমার সাথে।’
‘আমাকে অত্যাচার করে তাড়াতে জিওল মাছের কাটা পর্যন্ত শরীরে ফুটিয়েছে।আমার শ্বাশুড়ি আমার গায়ে যতবার হাত তুলেছে ওশান ও অতবার হাত তোলেনি।উনি চাই আমি যে কোনো ভাবে যেনো এ বাড়ি থেকে চলে যায়।কাজ করি তাতে কষ্ট নেই কিন্তু অত্যাচার গুলো মেনে নিতে কষ্ট হয় খুব।কত না খেয়ে থেকেছি।একবার গরম তেল ও আমার পায়ের উপর ফেলেছেন।ওনার ইচ্ছা ওশান কে যৌতুক দিয়ে আবার বিয়ে করাবেন।শুনেছি তোমাদের দু’বোনের নামে শহরে বাড়ি আছে।তাছাড়া অনেক ফার্নিচার ও পাঠাবে,টিভি,ফ্রিজ সহ।তোমাকে যে গহনা দিয়েছে দেখবে চেয়ে নিয়ে যাবে।’
‘রোশান স্যার এসব জানেন?’
‘কিছুই জানেন না।কিভাবে জানবেন। বাড়ির বাইরে থেকে লেখাপড়া শেষ করেছেন।জব হয়েছে কলেজের ওখানে থাকেন।রোশান ভাইয়ার কাছে তার মা ফেরেশতা।শুধু জানেন ওশান আর আমার ঝামেলা।আমার লেখাপড়া অফ করে দিয়ে বলেছে আমি নাকি লেখাপড়া করতে চাইনি।এসব ব্যাপারে রোশান ভাইয়া বা বাইরে কাউকে কিছু বললে আমাকে ছেলে সহ বাড়ি থেকে বের করে দিবে।অপেক্ষায় আছি ছেলে বড় হলে যদি মায়ের কষ্ট বোঝে।’

তরীর কথা শুনে চোখে পানি চলে এলো আমার।এক অজানা ব্যাথায় বুক চিন চিন করে জ্বলছে আমার।ছোঁয়ার কি হবে তাহলে।ছোঁয়ার জীবন টা ওশান এভাবে শেষ করে দিলো।ছোঁয়া এসব জানতে পারে কিছুতেই সহ্য করতে পারবেনা।সে ওশান কে নিজের থেকেও বেশী ভালবাসে।

ছোঁয়া আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।আমি ছোঁয়া,তন্ময়,মৃন্ময় সেই ছোট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়েছি।ছোয়াকে মিথ্যা বলে ওশান এভাবে ঠকালো।আর তরী মেয়েটার জীবনে এত কষ্ট।ওশান এক সাথে দুটো মেয়েকে ঠকাচ্ছে।ওশান কে আমি উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে ছাড়ব।

তরী মাছ কেটেই যাচ্ছে।এত গুড়ো মাছ একা একা কিভাবে কুটবে।এভাবেই তরীকে নির্যাতন করে এরা।
তরীকে বললাম,

‘তরী এই বাইন মাছের কাটা কেটোনা,জিওল মাছের মাথা কেটে মাছের মাঝে মিশিয়ে দাও।সো কলড শ্বাশুড়ি মাকে দেখোনা কি করি।’
‘কি করবেন ভাবি।’
‘আজ থেকে আমি যা করব, তুমি চুপচাপ দেখে যাও।’
আগের কোটা মাছের মধ্য কতগুলো জিওলের কাটা সহ মাথা কেটে রেখে দিলাম।আর বাকি মাছ গুলো গুছিয়ে বাড়ির পেছনের গর্তে ফেলে দিলাম।তরী মাছ ফেলে দিতে দেখে বলল,
‘আল্লাহ ভাবি আপনি এটা কি করলেন।’
‘তরী চুপচাপ জিওল মাছ গুলো কাটো।’

সমস্ত গুড়ো মাছ গুলো ফেলে দিয়ে বাকি জিওল মাছে হাত দিলাম।এর ই মাঝে আমার হাত কেটে গেলো।তরী তাড়াহুড়ো করে বলল,
‘ভাবি আম্মা আমাকে আস্ত রাখবেনা।এইজন্য আপনাকে নিষেধ করেছিলাম।’
‘চুপ করো তরী।এ মারাত্মক কিছুই না।রান্নাঘরের কোনা থেকে পুরণো কাপড় একটু ছিড়ে আনোতো।’
তরী দ্রুত গিয়ে পুরণো কাপড় ছিড়ে নিয়ে এলো।আমার হাত বেঁধে দিতে দিতে বলল,
‘আর মাছের কাছে আসতে হবেনা ভাবি।’
আমি অবশিষ্ট কাপড় নিয়ে তরীর একটা আঙুল বাঁধতে লাগলাম।
তরী বলল,
‘ভাবি আমার হাত তো কাটেনি।’
‘চুপ করো এই মুহুর্তে কেটেছে।
উনার আদুরে ছেলের সামনে বলব আমাদের হাত কেটে গিয়েছে মাছ গুলো ধুয়ে দিন তো আম্মা।দেখব কিভাবে না ধুয়ে পারে।তোমাকে জিওলের কাটা ফুটানো।শোনো তরী আমি অত ভালো মেয়ে না বুঝলে।”
‘এসব করতে গিয়ে ঝামেলা হবে ভাবি।’
‘আমি নিজেই তো ঝামেলা।চলো শ্বাশুমার কাছে যায়।’
বাড়ির বাইরে এক্সট্রা গোসলখানা সহ ওয়াশরুম আছে।আমার ও একটু ওয়াশ রুম যাওয়ার দরকার।তরীকে বললাম ভেতরে কে আছে তরী।
ভাবি এইটায় দাদা ছাড়া আর কেউ যায়না।
ওয়েট দাদার সাথে একটু মজা করি দাঁড়াও।

ওয়াশ রুমের দরজায় টোকা মেরে বললাম,

‘ আচ্ছা ওয়াশরুমে কে?আমি সেই এক ঘন্টা ধরে ওয়েট করছি।ভেতরে কি ঘুমিয়ে পড়া হয়েছে।বালিশ -কাথা এগিয়ে দিবো।বছরের তা কি একবারে করছেন বুইড়া।বছরে কি একদিন বাথরুমে যাওয়া হয় না।এত বিশ্রি গন্ধ কেনো?আমি কিন্তু খুঁতখুতে স্বভাবের মেয়ে।ভাল করে যেনো পানি ঢালা হয়।বাইরে থেকে তাই আমি দূর্গন্ধে টিকতে পারছি না।না জানি ভেতরে কি অবস্থা। মানুষ টয়লেটে গেলে এত বিশ্রি দূর্গন্ধ কিভাবে ছড়াতে পারে।এই এলাকা আজ বায়ুদূষণে পরিণত হবে।’

তরী আর আমি দুজনেই মুখ চেপে হাসছি।এরই দরজা খট করে দরজা খোলার শব্দ হলো।আর ভেতর থেকে যে বেরিয়ে এলো তা দেখে আরেকবার ভড়কে গেলাম।রোশান স্যার যে কি যা তা ভাবে তাকাতে তাকাতে বেরোলেন আমার দিকে তাকিয়ে।অদ্ভুত সে চাহনি।

চলবে?..