একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব-৭+৮

0
355

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
৭.
#writer_Mousumi_Akter

কি অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে আমার বলার মত নয়।তরীর দিকে অগ্নিচোখে তাকিয়ে বললাম, ‘তরী তুমি না বললে যে এই ওয়াশ রুমে দাদা যায়।’
‘আমি তো তাই ই জানতাম,বাট আজ ভাইয়া গেলো কেনো?’
‘উনাকে তো যেতেই হবে,উনি না গেলে আমার সাথে অঘটন টা ঘটতো কিভাবে।বাই দ্যা ওয়ে তোমার ভাইয়ার কি টয়লেট ক্লিয়ার হয়েছে নাকি আমার ডাকাডাকিতে বেরিয়ে এসছে।’
‘ভাবি ভাইয়া যে লজ্জা আজ পেয়েছে তাতে টয়লেট চিরদিনের জন্য আটকে গিয়েছে কিনা কে জানে।এমন লজ্জা জীবনে পেয়েছে কিনা সন্দেহ আছে।আর আমিও লজ্জায় ভাইয়ার সামনে যেতে পারব না কোনদিন।’
‘ধুর! এ কি কোনো ঘটনা নাকি।উচিত ছিলো দরজা খুলে হাত ধরে বের করে আনা।’
তরী আবার ও হাসল আমার কথা শুনে।এই হাসিটা ওর ভেতর থেকে এসেছে।মানুষ মন থেকে হাসলে চেহারায় অন্যরকম সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।সেই সৌন্দর্য্যর কাছে পৃথিবীর সব সৌন্দর্য বেমানান।তরিকে হাসতে শেখাবো, বাঁচতে শেখাবো নিজের জন্য,অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শেখাবো,লেখাপড়া শেখাবো।তরীকে নারীর সম্পূর্ণ রুপে তৈরি করে ছাড়ব।এর জন্য আমাকে অনেক ছলনা আর মিথ্যার আশ্রয় ও নিতে হতে পারে কারণ ছলনা যারা করে তাদের সাথে ছলনা ই করতে হয়।ক্ষমা করো আল্লাহ তরীর জন্য আজ থেকে আমাকে নামতে হবে মিথ্যা আর ছলনার যুদ্ধে।
তরীর হাসি মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম,

‘তরী হাত ধুয়েছো এসো খেতে হবে।’

‘আমি খেয়ে নিবো আপনি যান।ভাইয়া অপেক্ষা করছে খাওয়ার জন্য।দাদার হুকুম আপনাদের একসাথে খেতে হবে।এক সাথে না খেলে প্রেম বাড়ে না।’

‘করুক অপেক্ষা,তোমার ভাইয়াকে একটা প্রেমের শহর বেটে গিলালেও তার মাঝে প্রেম ট্রেম ফিলিংস আসবেনা। আগে তোমার খেতে হবে।আজ আমি তোমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবো বেবি।’

‘আমাকে আপনি খাইয়ে দিবেন।’

‘হ্যাঁ দিবো তো!এক বোন কি আরেক বোন কে খাইতে দিতে পারেনা।’

‘আচ্ছা ভাবি পরে দিয়েন,আজ অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।’

‘আজ ই মানে এক্ষুনি, চলো রান্নাঘরে।’

দুজনে হাত ধুয়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করলাম।ডায়নিং থেকে রোশান স্যার আর আমার খাবার লুকিয়ে রান্নাঘরের ভেতরে নিলাম।খাবার দেখে তরী বলল,

‘ভাবি এসব তো আপনাদের দুজনের খাবার।’

‘চুপ তুমি এসব খাবে আর রোশান স্যারের জন্য তোমার জন্য রাখা খাবার নিয়ে যাবো।খাবার নিয়ে গিয়ে বলব উনার মা আমাদের জন্য এসব খাবার রেখেছে।’

‘কেনো ভাবি এমন করবেন?আম্মা তো আপনাকে ভালবাসেন।’

ভাত মাখিয়ে তরীর মুখে গুজে দিয়ে বললাম,

‘আমাকে ভালবাসে বলে আমি কি করব।না মানে আমাকে কি করতে বলছো।ওই মহিলার সাথে মিশে তোমাকে অত্যাচার করব।আমার কি জীবনের ভালবাসার অভাব পড়েছে যে ওই সুযোগ সন্ধ্যানি রওশন জামিল মহিলার ভালবাসায় গদগদ হয়ে যাবো।এসব খারাপ মানুষের ভালবাসা আমি চাইনা বুঝলে।তুমিতো শ্বাশুড়ি কে ভীষণ ভালবেসেও তার মন পেলে না।এবার শ্বাশুড়ি বুঝবে ভালবেসে মন না পেলে কেমন লাগে।শ্বাশুড়ি আমাকে পর্যাপ্ত ভালবেসেও যখন মন পাবেনা তখন উনার মন ডেকে বলবে এর চেয়ে তরী হাজার গুন ভাল ছিলো।এর পরেও যদি ভাবে না বেটার বউ দুইটাই খারাপ সে ওশানের প্রেমিকাকে এ বাড়িতে নিয়ে আসবে,দেখবে ওশানের প্রেমিকাকে আমি এর চেয়ে বেশী খারাপ তৈরি করব।উনাকে আমি বুঝিয়েই ছাড়ব উনি ভুল।উনার মুখে স্বীকার করিয়ে ছাড়ব তরী ই ভাল ছিলো। ‘

এরই মাঝে আমাদের ঘর থেকে এক মেয়ের হাসির বিকট শব্দ ভেষে আসছে।কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করছি মেয়েটা কি বলাবলি করছে।ভ্রু উঁচিয়ে তরীর কাছে জিজ্ঞেস করলাম,

‘তরী কে এসছে।’

‘ভাবি আম্মার ভাতিজি।ভাইয়াকে পছন্দ করে।আম্মার খুব ই ইচ্ছা ছিলো জিনাত আপুর সাথে ভাইয়ার বিয়ে দেওয়ার কিন্তু ভাইয়া রাজি হয়নি।আর দেখবেন এ বাড়িতে এসে নিজের ফুফুর দাপটে কি বাজে ব্যবহার করে আমাদের সাথে।কথায় ইংরেজি বলে শুধু।’

‘ওকে মাথায় রাখলাম।’

তরীর খাওয়া শেষ। ওর কেমন কাঁন্না পাচ্ছে।কাঁন্না আটকে বলল,

‘আজ কতবছর পর কেউ ভালবেসে খাইয়ে দিলো।আমার জীবনের আগন্তক হয়েই কি তুমি এসছো।’

‘এসব বলতে নেই।শোনো আমি তো নতুন বউ লজ্জা থাকা উচিত আমার নাহলে পাড়ার মানুষ সমালোচনা করবে।তুমি আমাদের এ খাবার গুলো আমাদের রুমে দিয়ে আসো।আমি একটু লজ্জা নিয়ে তোমার সাথে প্রবেশ করছি ভেতরে।’

তরীর সাথে নিজেদের রুমে প্রবেশ করেই চোখ গেলো জিনাত এর দিকে।পায়ের উপর পা তুলে বসে গল্প করছে রোশান স্যারের সাথে।আমি ঘরে ঢুকতেই রোশান স্যার আড়চোখে তাকালেন আমার দিকে।জিনাত কে বললেন,
‘ওর নাম সারাহ! তোমার ভাবি।’
জিনাত কেমন করে যেনো বিদ্রুপের দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে।আমার পা-থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে থেকে দেখে বলল,

‘সো বিউটিফুল, বাট।’

‘কি বাট।’

‘হাইট এ কম। ‘

‘কোথায় ঠিক ই তো আছে।এর থেকে আর কত হাইট লাগবে।’

‘লুক এট মি!’

এরই মাঝে তরী বলল, ‘ভাইয়া খাবার খেয়ে নিন, ‘

জিনাত আপু আসেন আমরা বাইরে যায়।ভাইয়া আর ভাবি এখন খাবার খাবে।’

‘দ্যাটস হুয়াই বাইরে যেতে হবে।’

‘হ্যাঁ দাদার হুকুম।’

‘আমি রোশান ভাইয়ার রুমেই থাকব।এই যে নতুন ভাবি আমাকে দেখে জেলাস ফিল করোনা।আমি তোমার বর কে কেড়ে নিবোনা।’

যাক এবার কথা বলার সুযোগ তো পেয়েছি অন্তত।অমায়িক হাসি দিয়ে বললাম,

‘আপনাকে দেখে হিংসা ফিলিংস হচ্ছেনা আমার।আর সে প্রশ্নই বা আসছে কেনো?’

‘না হতেই পারে,ভাবতে পারো আমার হাজবেন্ড এর রুমে এসে একান্তে হাজবেন্ড এর সাথে কথা বলছে কাহিনী কী?’

‘আপনার কি সেই ক্ষমতা আছে উনাকে কেড়ে নেওয়ার।যা বিয়ের আগে পারেন নি তা বিয়ের পরে কিভাবে সম্ভব।এত ওভার কনফিডেন্স কিভাবে আসে।’

‘বিয়ের আগে পারিনি মানে?’

‘কথাটা আপনি ই তুলেছেন তাই আমি বললাম।’

‘ওহ আমি তো ফান করেছি,বাট তুমি সরিয়াস হয়ে যাচ্ছো।’

‘আপনি আমার মাঝে সিরিয়াস এর কি দেখলেন,আপনি মজা করেছেন আমিও মজা করেছি।আল্লাহ ইংরেজি আপা আপনি মজা ও বোঝেন না। ‘

‘ইংরেজি আপা হুয়াই?’

‘আপনার প্রতি লাইনে লাইনে ইংরেজি বলার জন্য,আমি ভালবেসে নামটা দিলাম।’

‘ওহ তা তোমরা বেডে ঘুমোও নি কাল রাতে।’

‘খাটে না খাটের নিচে ঘুমিয়েছি।’

‘বাট হুয়াই।’

‘ফুলসজ্জার রাতে ক্রিকেট খেলতে।আপনি জানেন না, ফুলসজ্জার রাতে ক্রিকেট খেলতে হয়।আমরা সারারাত ক্রিকেট খেলেছি খাটের নিচে গিয়ে।’

রোশান স্যার চোখ বড় বড় করে তাকালেন আমার দিকে।উনাকে দেখে মনে হচ্ছে অস্বস্তি ফিল হচ্ছে ওনার।তরী মুখে চেপে হাসছে।জিনাত একটা শুকনো কাশি দিয়ে বলল,

‘অসভ্য মেয়ে একটা।ওয়াশ রুম টা কোনদিকে যেনো।’

‘এ ঘরে টয়লেট,বাথরুম সব আছে কিন্তু ওয়াশ রুম নেই।’

‘মানে?’

‘মানে এ কোনো শিল্পপতির ঘর নয় যে ওয়াশরুম থাকবে এখানে টয়লেট আছে।
টয়লেট কে ওয়াশরুম,ঘর কে রুম, খাট কে বেড, এগুলা আপনাদের মত শিক্ষিত আর বড়লোক রা বলে আমরা না।আমার আর তরীর সামনে এসে এসব বলবেন না।আর আমাকে অসভ্য বললেন কেনো?অন্যর ব্যাক্তিগত ওয়াশ রুম কেনো ইউজ করবেন শুনি।সভ্যতা নেই না।’

‘দেখলেন রোশান ভাইয়া আমাকে কিভাবে বলল অকারণে।’

‘আচ্ছা তোমরা বাইরে যাও আমি দেখছি।’

তরী আর জিনাত বাইরে চলে গেলো।রোশান স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘জিনাত তো খারাপ কিছু বলেনি।এরকম ইংলিশ তো টুকটাক তুমিও বলো।আর পা পাড়িয়ে ধরে ঝগড়া করলে কেনো?’

‘কেনো আপনার খুব লেগেছে তাইনা?’

‘কেনো আমার লাগবে কেনো?’

‘আপনার পুরণো প্রেমিকা বলে কথা।’

‘এটাও জেনে গিয়েছো।’

‘কিহ!সত্যি আপনার প্রেমিকা।’

‘না, ও আমাকে লাইক করে আরকি।’

‘ঠিক এ কারণেই ঝগড়া টা করলাম।যদি চুল ধরে টানতে পারতাম আরো শান্তি পেতাম।’

‘কিহ!এই মেয়ে তুমি এত সাংঘাতিক কেনো?আর তোমার প্রব্লেম ই বা কি?তুমি তো আর আমাকে ভালবাসো না।অন্য কেউ বাসলে প্রব্লেম কি?’

‘আমার কথা হলো আমি প্রেম করব না কিন্তু অন্য কারো সাথে করতেও দিবোনা।এর আগে যারা আমার পিছে ঘুরেছে না ও বলিনি হ্যাঁ বলিনি বিকজ অন্য কারো সাথে প্রেম করুক সেটা আমি হতে দেইনি।আপনার ব্যাপার টাও সেইম। আমি কাছে আসব না অন্য কাউকে আপনার পাশে ঘেষতেও দিবোনা।’

চলবে?..

(#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
৮.
#writer_Mousumi_Akter

আমার কথা হলো আমি প্রেম করব না কিন্তু অন্য কারো সাথে করতেও দিবোনা।এর আগে যারা আমার পিছে ঘুরেছে না ও বলিনি হ্যাঁ বলিনি বিকজ অন্য কারো সাথে প্রেম করুক সেটা আমি হতে দেইনি।আপনার ব্যাপার টাও সেইম। আমি কাছে আসব না অন্য কাউকে আপনার পাশে ঘেষতেও দিবোনা।’

রোশান স্যার ভ্রু কুচকে তাকালেন আমার দিকে।মনে হয় এমন কথা উনার জীবনে এর আগে কখনো শোনেন নি উনি।উনি কি আমাকে ভয়ংকর কোনো মহিলা ভাবছেন।কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বললেন,

‘মারাত্মক লেভেলের ওমেন তুমি।নাও খেয়ে নাও।যেভাবে কোমর বেঁধে ঝগড়া করতে লেগেছো না খেলে দূর্বল হয়ে যাবে বিরোধী পক্ষ জিতে যাবে।’

‘শোনেন স্যার আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এই সারাহ এর সাথে কেউ কোনদিন ঝগড়া করে পারবে না।আল্লাহ আমাকে এই বিশেষ গুন আপন হাতে দিয়েছেন।সামটাইমস এমন হয় যে আমি বুঝতে আমি ই ভুল তবুও নন স্টপ তর্ক করে যায় ঝগড়ায় জেতার জন্য।দেখেছেন চো’ র হলেও কিন্তু আমার স্বভাব ভাল আছে স্যার।আমি মিথ্যা কথা বলিনা।’

‘আচ্ছা তাহলে এই কাহিনী।ঝগড়াতেও অসৎ উপায় অবলম্বন।’

‘হ এটাও জীবনের একটা পার্ট, জিততে তো হবে। আচ্ছা, ওই জিনাত আর আমার যদি তুমুল ঝগড়া হয় আপনি কার পক্ষ নিবেন।মানে কাকে সাপোর্ট করবেন।’

ওশান স্যার আবার ও অবাকের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে আমার দিকে তাকালেন।মাত্রই শুকনো কাশি দিয়ে ওষ্টদ্বয় ফাঁকা করলেন কিছু একটা বলতে যাবেন সাথে সাথে হাত উচিয়ে বলে উঠলাম,

‘দাঁড়ান!আপনাকে কষ্ট করে ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবেনা।আপনি একজন শিক্ষক মানুষ নিঃসন্দেহে ভাল মানুষ। হালাল হারাম বোধ আপনার আছে।তাই আপনি থাকবেন আপনার হালাল বউ এর পক্ষে।নট হারাম জিএফ।’

‘ডিসিশন তো তুমিই দিয়ে দিলে আমাকে জিজ্ঞেস করার কি প্র‍য়োজন ছিলো।খেয়ে নাও কুইক।’

‘আমার হাত কেটে গিয়েছে কিভাবে খাবো।’

‘কিভাবে কাটল,দেখি কতটা কেটেছে।’

বলেই উনি আমার হাতের আঙুল স্পর্শ করলেন।অদ্ভুত এক কেয়ারিং ওনার মাঝে দেখছি।কাটা আঙুলে হাত বুলিয়েই যাচ্ছেন।একটু মোলায়েম কন্ঠে বললাম,

‘মাছ কাটতে গিয়ে।’

‘এ বাড়িতে কি তোমাকে মাছ কোটার জন্য আনা হয়েছে।কে তোমাকে মাছ কাটতে বলেছে।’

‘আম্মা বলল, তরী একা পারছে না তুমিও একটু হেল্প করো।’

‘আম্মা বলেছে,আম্মা নতুন বউকে মাছ কাটতে দিলো।আমি কতদিন বলেছি তরীকে একটা কাজের মেয়ে রেখে দিতে।তরী নাকি কিছুতেই রাজি নয়।সে এ বাড়ির কাজ অন্য কারো হাতে তুলে দিতে রাজি নয়।’

‘আপনি এবার একটা কাজের মেয়ে খুজে আনুন প্লিজ।’

‘সেটা তুমি না বললেও আনব।এইভাবে হাত কেটে নিলে,খেয়ে চলো ডাক্তারের কাছে ভেতরে কোনো ময়লা থাকলে প্রব্লেম হবে।’

‘এর জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে চাইনা আমি।এ এমনিতেও সেরে যাবে।’

‘নেক্সট এসব কাজ আর করতে যেওনা।আমি তরীকে ডেকে দিচ্ছি তোমাকে খাইয়ে দিবে।’

‘ওর ও হাত কেটে গিয়েছে।’

‘তাহলে আম্মাকে ডাকি।’

‘না না আপনি বরং আম্মাকে বলুন না মাছ গুলো ধুয়ে দিতে।তরীর হাত আমার থেকে বেশী কেটেছে।বাট তরী কাটা হাত নিয়ে মাছ ধুতে চাইছে।একদিনের ই তো ব্যাপার।আম্মা যদি একদিনের জন্য সাহায্য করত।’

‘আমার আম্মা অনেক ভাল মানুষ। এভাবে অনুনয় করতে হবেনা।তোমাদের হাত কেটেছে শুনলে আম্মার মাথা ই ঠিক থাকবেনা। আমি আম্মাকে বলছি।’

রোশান স্যার ওনার আম্মাকে ডেকে বললেন,

‘আম্মা সারাহ আর তরীর হাত কেটে গিয়েছে তুমি আজকের মত মাছ টা ধুয়ে দাও।কাল ই কাজের লোক চলে আসবে।’

‘না না বাবা দুই বউমা আর আমি মিলে টুকটাক কাজ করে নিতে পারব।এর জন্য কাজের লোক লাগবে না।ওদের হাত কেটেছে আগে বলবে না।’

রোশান স্যারের মা নাকি কুটোটি ও সরান না।ছেলের মুখে আজ কাজের কথা শুনে উনার মুখের যা অবস্থা। মুখে হাসি বুকে কাঁন্না।শ্বাশুড়ির অবস্থা যা না দেখার মত।আমি মনে মনে ভাবছি কখন যে তরীকে নিউজ টা দিতে পারব।ইয়া হু মিশিল দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।

উনি ঘরের ভেতরে এসে বললেন,

‘ ভাত মেখে দিলে চামচ দিয়ে খেতে পারবে।’

‘চেষ্টা করব। আমি ওয়াশ রুম যাচ্ছি আপনি খেয়ে নিন,আপনার খাওয়া শেষ হলে আমাকে ভাত মাখিয়ে দিয়েন।’

‘নো আগে তুমি এস।’

‘আমি গোসলে যাচ্ছি, এর মাঝে খেয়ে নিন আপনি।’

উনি খাবারে কষ্ট পাক এটা আমি মেনে নিতে পারব না।উনি হাবিজাবি খাবেন এটাও আমি মেনে নিতে পারব না।
মাছ, ডিম,রোস্ট,পোলাও এর প্লেট উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে আমি গোসলে ঢুকলাম।আমার এখন গোসলের ইচ্ছা ছিলোনা।কিন্তু এখন ই খাবার খেলে উনি ওনার খাবার আমাকে দিয়ে দিবেন নিজে না খেয়ে থাকবেন।আর আমি সেটা সহ্য করতে পারব।গোসল শেষ করে এসে উনাকে বললাম,

‘দিন ভাত মেখে দিন।’

উনি খাবারের ঢাকনা সরাতেই চমকে গেলাম আমি।মাছ,রোস্ট,ডিমের প্লেট জায়গা মত ই রয়েছে।যাকে খাওয়াবো বলে আমি এত খানি অভিনয় করলাম তার ই খাওয়া হলোনা।তারমানে রোশান স্যার খাবারের ঢাকনা সরিয়ে দেখেছিলেন।আমি চুপচাপ উনার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছি।কেমন যেনো অনুভূতি শূণ্য লাগছে সব কিছু।আমি উনার কথা ভাবলাম আর উনি আমার কথা ভাবলেন।ভাত মেখে আমার গালে তুলে দিতে দিতে বললেন,

‘চামচ দিয়ে তুমি খেতে পারতে না।’

‘আপনি কি কি খেয়েছেন?’

‘যা রেখে গিয়েছিলে।’

‘সত্যি তাই।’

বলেই আমি কেঁদে দিলাম।ক্যানো কাঁদলাম তা জানিনা আমি।উনি ভীষণ অবাক হয়ে গেলেন।আমার কাঁন্না দেখে বললেন,

‘মা -বাবার জন্য কষ্ট পাচ্ছো?আচ্ছা বিকালেই নিয়ে যাবো।’

আমি উত্তর না দিয়ে চুপ রইলাম।এরই মাঝে ওনার আম্মা চিৎকার দিয়ে উঠলেন।মাছ ধুতে গিয়ে কতগুলো জিওলের কাটা উনার হাতে ফুটেছে।আহারে ব্যাথা কি খুব লাগল।রোশান স্যার দ্রুত ছুটে গেলেন।বাড়ির বাকিরাও এগিয়ে এসছে।সবার আড়লে আমি বিষয় টা দারুণ ইনজয় করলাম।তরী নিশ্চয়ই এতটায় কষ্ট পেয়েছিলো।নিজে কষ্ট না পেলে অন্যর কষ্ট উপলব্ধি করা যায়না।সত্যি সরি শ্বাশুড়ি আম্মা।আপনি আমার মায়ের মত কখনো চাইনি এমন ভাবে কষ্ট দিতে।কিন্তু আপনাকে আপনার ভুল বোঝাতে হবে।তরী ও যে আপনার মেয়ের মতো সেটা আপনাকে বোঝাতেই আমার এই অন্যায় করা।রোশান স্যার যখন উনার মাকে নিয়ে বিজি আমি সেই ফাঁকে উনার ফোন নিয়ে মৃন্ময় এর নাম্বার সেভ করে মৃন্ময়কে ভিডিও কল দিলাম।

মৃন্ময় আমাকে দেখেই লাফিয়ে উঠে বলল,

‘কিরে সারাহ কই তুই।’

‘শ্বশুর বাড়ি।শোন এত কথা বলার সময় নেই।ছোয়া কই।বিশাল নিউজ আছে ভাই।’

মৃন্ময় ফোনের ব্যাক ক্যামেরা ধরে বলল দেখ লাইলি মজনু হেঁটে আসছে।

কলেজ ক্যাম্পাসে হাঁটছে ছোঁয়া আর তন্ময়।ছোঁয়া ক্রমাগত ফোনের উপর ফোন দিয়ে যাচ্ছে কেউ একজন কে।গতকাল থেকে আমার ফোন অফ।আজ ওশান ট্রিট দিবে, সাড়ে দশটায় ক্যাফেতে পৌছানোর কথা।আমি ছাড়া ছোঁয়া কিছুতেই কোথাও গিয়ে কমফোর্ট ফিল করতে পারেনা।আমি তার রোজ দিনকার অভ্যাসের মতো।ছোয়ার মুখের অদলে পিপাসিত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে তন্ময়।তন্ময় এর চোখ মাটিতে নেই ছোয়ার মুখের দিকে রয়েছে।ছোয়ার প্রতি তন্ময় এর গভীর এক টান রয়েছে।যেটাকে বলে একপাক্ষিক ভালবাসা।যেটা ছোয়া বুঝেও এড়িয়ে গিয়েছে বহুবার।কারণ ছোয়ার জীবনে রয়েছে ওশান।মাটিতে খেয়াল না করায় তন্ময় হোচট খেলো।ছোয়া সাথে সাথে তন্ময় এর হাত ধরে ফেলল, বিরক্ত চোখে তন্ময় এর দিকে তাকিয়ে একটা গালি দিয়ে বলল,

‘চোখ কোন দিকে তন্ময়।তোর নাম তন্ময় কে রেখেছিলো।তোর নাম রাখবে আছাড় আলি।তুই দিনে কয়বার আছাড় খেতে যাস বলতো।আমিই তো কম করে হলেও দশ বার তোকে ধরি।আল্লাহ জানে বাড়িতে কতবার আছাড় খাস তুই।’

‘আছাড় খেলে যদি সুন্দরীদের ছোয়া পাওয়া যায় তাহলে আছাড় ই ভালো।’

‘আমি যখন ওশানের সাথে বিদেশ চলে যাবো তোকে ধরবে কে?’

‘যে বদ দোয়া করেছি আলহামদুলিল্লাহ তোর ওশানের সাথে আর বিদেশ যাওয়া হচ্ছেনা।’

‘তন্ময় প্লিজ!বুকের মাঝে বাড়ি মেরে উঠেছে আমার।ভুলেও আর কোনদিন এমন অভশাপ দিবিনা।তুই জানিস না ওশান কে আমি কত ভালবাসি।’

‘আচ্ছা এত সিরিয়াস হয়ে যাস না।আমি মজা করেছি।’

‘তুই মজা নিয়ে আছিস,ওই দিকে সারাহ এর ব’চ্চার ফোন অফ।’

‘সে কি বিয়ে -শাদী করে নিলো নাকি।’

‘আমরা ছাড়া বিয়ে ওকে করাবো,খোজ লাগা ওর।’

মৃন্ময় হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে ছোয়ার সামনে ফোনটা ধরে বলল,

‘ছোয়া এইনে সারাহ কে খুজে পেয়েছি।’

ছোয়া আমাকে দেখে রাগান্বিত হয়ে বলল,

‘কি ব্যাপার আপা!আপনার ফোনে কি হয়েছে।জাস্ট দশ মিনিটে ক্যাম্পাসে উপস্হিত হন।’

‘শোন না ছোয়া বেবি।ঘটনা তো ঘইটা গ্যাসে।’

‘কি ঘটনা। ‘

‘হুট করে আমার দাদু বিয়ে করাই দিছে কাল রাতে।’

‘মানে কি হ্যাঁ, এই তন্ময় কি বলে শোন ওর নাকি বিয়ে হইছে।এইজন্য মাথায় কাপড় দিয়ে ঘোমটা টোমটা দিয়ে এক্কেরে বসে আছিস।’

‘হ ফিলিংস নতুন বউ ইয়ার।’

‘তোর বিয়ে আমরা ছাড়া কিভাবে হল,এই বিয়ে আমরা মানিনা বুঝলি।তোর জামাই কই তার কাছে ফোন দে।এক মিনিট দেখতে কেমন।’

‘খুব ই কিউট রে দেখতে আমার জামাই।’

“রোশান স্যারের থেকে কিউট নাকি রে।’

‘কোথাকার রোশান ফোশান। কি কইস এগুলান ছোয়া তুই।সে এমন কিউট আর হট দেখলেই প্রেম পায়।’

‘আচ্ছা তাই বাসর ঘরে কি কি হলো।’

সাথে সাথে বাসর ঘরের ভয়ানক ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো।আমি কিছুতেই ছোয়াকে ওই ভয়ানক ঘটনা বলতে পারব না।বরং কাহিনী ঘুরিয়ে বলি।একটি রোমান্টিক লাভ স্টোরি বলে ফেলি।একটু লজ্জামিশ্রিত ভাব নিয়ে বললাম,

‘আমি তো লজ্জায় গুটি সেটে মেরে বসে ছিলাম।উনি ভেতরে আসতেই বুকের মাঝে দুরুম দুরুম শুরু হলো।নিয়ম অনুযায়ী খাট থেকে নেমে উনাকে সালাম করতে গেলাম।উনি সাথে সাথে আমার দুই বাহু ধরে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললেন,তোমার স্হান আমার পায়ে নয় জা”ন, আমার বুকে।আমি লজ্জায় উনার বুক থেকে সরে এলাম।সাথে সাথে উনি আমার হাত টেনে ধরে একটা গান শুরু করলেন, ‘যেওনা সাথি, ওওও। চলেছো একেলা কোথায়।পথ খুজে পাবে নাকো তুমি।’এভাবেই অনেক রোমান্টিক সোমান্টিক ব্যাপার স্যাপার ঘটতে থাকে।আরো অনেক ফিলিংস এর ব্যাপার ই ছিলো।উনি খুব চুমু খেতে চাচ্ছিলেন আর আমি না না করছিলাম।এরই মাঝে কারেন্ট চলে যায়।এমন সময় কারো উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার ওষ্ঠে আচড়ে পড়ে।ঠিক তখন ই কারেন্ট চলে আসে আর আমি তাকিয়ে দেখি রোশান স্যার ওষ্টদ্বয় নিয়ে আমার ওষ্টের কাছাকাছি। উনি কারেন্ট যাওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছিলেন কিন্তু কারেন্ট আসাতে মারাত্মক লজ্জা পেয়ে যান।

‘এক মিনিট তুই এখানে রোশান স্যার কে কই পাইলি।’

‘আরে ধুর আমার ওই বরের কথা বলতে গিয়ে ওনার নাম বলে ফেলছি।’

এমন সময় আয়নায় তাকিয়ে দেখি রোশান স্যার দরজায় এক পা ভেঙে বুকে হাত বেঁধে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।কি অদ্ভুত সে চাহনি।অতঃপর আরেকটি বাঁশ খাওয়ার গল্প।

চলবে?….

(প্রিয় পাঠক মহল সকলেই রেসপন্স করবেন।)

যারা গল্প প্রেমিক তারা পেইজটা ফলো করুন তাহলে নেক্সট পার্ট গুলো পোস্ট করার সাথে সাথে আপনের নোটিফিকেশন চলে যাবে