একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব-৯+১০

0
388

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
৯.
#writer_Mousumi_Akter

রোশান স্যার গম্ভীর আর থমথমে মুডে স্হির হয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।ভ্রুযুগল কুচকানো।মুখের অদলে অদ্ভুত এক ভঙ্গি।এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন যেনো পৃথিবীর সব থেকে আশ্চর্যজনক কিছু দেখছেন, চোখ দুটো স্হির আমার দিকে রয়েছে।আমি দ্রুত ফোনটা কেটে বেআক্কেলের মত উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কারো সম্পর্কে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলার পর যখন দেখা হয় সে সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার মতো লজ্জা দুনিয়াতে আর দ্বীরীয় টি নেই।শাড়ির আঁচলের কোনা দু’ হাতের মুঠোয় নিয়ে কচলাচ্ছি, কেমন যেনো অস্হিরতা অনুভব করছি।

উনি গম্ভীর মুডে স্হির থেকে কপাল টানটান করে হাতে তালি দিয়ে বলে উঠলেন,

‘ওয়াই নাইস!’

উনি গম্ভীরতা ভেদ করে কথা বলে উঠতেই বুকের মাঝি বাড়ি মেরে উঠল আমার।আমি ভেবেছিলাম উনি হয়ত এবার ও এড়িয়ে যাবেন।কেননা উনার স্বভাব ই ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে এড়িয়ে যাওয়া।এর আগেও বহুবার উনি এসব ব্যাপার এড়িয়ে গিয়েছেন।গম্ভীরতা ভেঙে যে আজ কথা বলে উঠবেন আমি ভাবতেই পারিনি।আমার এমন বিশ্রি ফিলিংস হচ্ছে তা বলার মত নয়।আমি যে কি বলব,কি উত্তর দিবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।ইয়া মাবুদ কি সমস্যায় ফেললে আমাকে। নিচের ঠোঁট কামড়ে বোকার মত উনার দিকে তাকিয়ে আছি।চোখে মুখে করুণ অসহায়ত্ত্ব আমার।এইভাবে কেউ ধরা খায়,উনার আমার সম্পর্কে কি কি ধারণা হয়েছে তার ঠিক নেই।আমাকে ওইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার ও থমথমে মুডে চোয়াল শক্ত করে বললেন,

‘জাস্ট চমৎকার। ‘

আবার ও বুকের মাঝে বাড়ি মেরে উঠল আমার।উনার ওই গম্ভীরতা ভেদ করে বেরিয়ে আসা প্রতিটা কথা আমার হৃদয়ে সূচের মত ধারালো হয়ে ফুটছে।কলেজেও আমার এমন হত।ঘন্টায় দুই’একটা কথা বলতেন উনি আর আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কখন উনার মুখ দিয়ে কথা বেরোবে।উনার এক একটা কথা হৃদস্পন্দনে তুফান তুলত আমার।আজ ও হঠাত তাই হচ্ছে।দুরুদুরু করা বুক নিয়ে মিহি কন্ঠে বললাম,

‘কি স্যার।’

‘তোমার বাসর ঘরের গল্প।ফোনে গল্প শোনাচ্ছিলে ওটা তোমারই বাসর ঘরের গল্প ছিলো তো তাইনা?’

‘ইয়ে মানে, না মানে স্যার আসলে।’

‘ইয়ে মানে টা কি?’

বলেই রোশান স্যার এক’ পা দু’পা করে আমার দিকে থমথমে মেজাজেই এগোতে লাগলেন।আমি উনার মতি গতি বুঝতে পারছিনা আমিও এক পা দু’পা করে পিছিয়ে যাচ্ছি।আর উনি আমার দিকেই এগোচ্ছেন।কাল থেকে এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনার শাস্তি কি উনি আমাকে একবারে দিতে চান নাকি।ওভাবে এগিয়ে আসছেন কেনো?উনি আমাকে ধরলে তো নড়তেও পারব না।যে শশক্তপোক্ত হাতের হাত উনার।এই কচি হাত ধরলেই তো তুষ তুষ হয়ে যাবে।এখন কি করব আমি।জানালার গ্রিল খুলে দৌড় মারব নাকি।সে উপায় ও তো নেই।আস্তে আস্তে পিছিয়ে যেতে যেতে ওয়াশরুমের দরজায় গিয়ে পিঠ ঠেকল আমার।উনিও এসে দরজায় হাত ঠেকিয়ে ঝুঁকে দাঁড়ালেন আমার দিকে।
আমাদের মাঝে কোনো দূরত্ত্ব নেই এখন কিঞ্চিত পরিমান ফাঁকা।দুজনের উষ্ণ নিঃশ্বাস দু’জনের চোখে, মুখে আচড়ে পড়ছে।আমি বার বার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছি আর বড় বড় চোখ করে উনার দিকে তাকাচ্ছি।উপর উপর যতই ঝগড়া করি মুখ চলিয়ে জিততে পারলেও গায়ের শক্তিতে তো আর পারব না।উনি এবার আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখে ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,

‘অপূর্ব।’

হঠাত উনার মুখের প্রশংসায় বেশ খানিকটা অবাক হলাম আমি, লজ্জা ও পেলাম।লজ্জামিশ্রিত চোখে,মুখে ওনার দিকে তাকালাম।

উনি আবার ও বললেন,

‘বিউটিফুল।’

লজ্জার মাত্রা আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেলো।লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলাম।উনি যে কখনো এইভাবে আমাকে অপূর্ব বা বিউটিফুল বলবেন আমি ভাবতেও পারিনি।লজ্জায় শাড়ির আঁচল আরো ঘন ঘন কচলাতে কচলাতে বললাম,

‘আমি অতটাও বিউটিফুল নয়।’

‘তোমাকে বলিনি, তোমার ফুলসজ্জার কথা বলেছি।’

উনি যে এমন কিছু বলবেন আমি ভাবতেও পারিনি।সারাহ! সব সময় বেশী বুঝিস বলে আজ এই জঘন্য লজ্জাটায় না পেতে হলো।কি দরকার ছিলো এই এক লাইন বেশী বোঝার।যা বুঝেছিস বুঝেছিস ভালো কথা একটু ধৈর্য ধর।সে ব্যাক্তি কেনো বলেছে কি উদ্দেশ্য বলেছে ক্লিয়ার করুক তার আগেই তোর অস্হির মন তা প্রকাশ করে লজ্জা পেয়ে গেলো।বেশী বোঝা ছেড়ে দে সারাহ। উনি বা কি বলতে চাইছেন আর তুই বা কি ভেবেছিস।রোশান সিদ্দিকী এতটা রোমান্টিক হবেন নিজের বউ এর রুপে মুগ্ধ হয়ে তার প্রশংসা করবেন এসব ভাবিস কিভাবে।এরই মাঝে রোশান স্যার বলে উঠলেন,

‘তো মিসেস সারাহ সিদ্দিকী তারপর কি হলো তোমার ফুলসজ্জার। তোমার জামাই কি চুমু খেতে সক্ষম হল।আই আম ভেরি ইন্টারেস্টেড দ্যাট সাব্জেক্ট। ‘

ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা কি বলব এখন।কিছু একটা করে এখান থেকে পালাতে হবে আমাকে।পেছনে হাত বাড়িয়ে আস্তে করে ওয়াশ রুমের দরজা খুলে দ্রুত ভেতরে প্রবেশ করতেই উনি দরজা হাত দিয়ে ঠেলে নিজেও ভেতরে প্রবেশ করলেন।ভেবেছিলাম ওয়াশ রুমের দরজা অফ করে বলব, ‘স্যার আমি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে এসেছি।’ কিন্তু কি হলো উল্টো বিপদ বাড়ল।তাড়াহুড়ো তে ভেতরে প্রবেশ করতেই তাল না সামলাতে পেরে পড়ে গেলাম। নিজেকে রক্ষা করতে উনার শার্ট খামছে ধরতেই উনিও পড়ে গেলেন আমার উপর।ট্যাবের নিচে বালতি ভর্তি পানি ধাক্কা লেগে কাত হয়ে পড়ে যেতেই ভিজে গেলাম দুজনেই।ইস কি লজ্জা।এমন পরিস্হিতি আগে কখনো হয়নি আমার।লজ্জায় চোখ বন্ধ করে রইলাম।কি বাজে পরিস্হিতি।এই প্রথম কেউ আমার উপর এসে এভাবে পড়েছে।উনিও বোধহয় খুব লজ্জা পেয়ে গিয়েছেন।দ্রুত উঠে পড়লেন।গায়ের পানি ঝাড়তে ঝাড়তে বললেন,

‘অঘটন ছাড়া ঘটাতে পারো না তাইনা?ওভাবে হুড়মুড় করে ভেতরে প্রবেশ করার কি প্রয়োজন ছিলো।’

আচমকা পড়তেই মেরুদন্ডে খুব জোরে আঘাত পেলাম।চেষ্টা করেও উঠতে পারছিনা।আমার মুখে যন্ত্রনার অবয়ব দেখে উনি বুঝতে পারলেন আমি হয়ত ব্যাথা পেয়েছি।ঝুকে এসে আমাকে পাজা কোলে তুলে বললেন,

‘এভাবে জ্বালাতে চাও আমাকে?এমনি পুড়ছি আর পুড়িওনা।’

‘আপনাকে কিভাবে জ্বালালাম, ব্যাথা তো আমি পেয়েছি।আপনি তো পাননি।’

‘কোলে তুলতে হলো কাকে?’

‘তুলেছেন কেনো?অন্য কাউকে ডাকতেন।’

‘বউ আমার অন্য কেউ কোলে তুলবে।’

উনার মুখে বউ কথাটা শুনে আবার ও লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি।এরই মাঝে জিনাত নক না করেই আমাদের রুমে প্রবেশ করল।আমাদের এইভাবে দেখে জিনাতের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।জিনাতের সামনে এই অবস্হায় ভীষণ লজ্জা পেলাম আমি।রোশান স্যার ও খুব লজ্জা পেলেন বোধহয়।উনি আমাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে জিনাত কে বললেন,

‘জিনাত এসো বসো।’

রোশান স্যার আলমারি থেকে একটা পাঞ্জাবি বের করে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলেন।জিনাত আপু আমার সামনে এসে বললেন,

‘এইভাবে দরজা খোলা রেখে বেহায়াপানা করছো।বাড়িভর্তি মানুষ লজ্জা থাকা উচিত।’

‘আপনি নক না করে কেনো ঢুকেছেন?’

‘আমি কি জানতাম দিনে দুপুরে লীলা চলছে।কিভাবে পারো অপরিচিত একটা পুরুষের সাথে একদিনে এত ক্লোজ হতে।’

‘আপনি বাড়ি যাননি এখনো।’

‘এখনো বাড়ি যায় নি মানে?এটা আমার ফুপির বাড়ি।এখানে যখন ইচ্ছা আসি -যায় আমি।তুমি কোন রাইটে একথা বললে।’

‘অপরাধ হয়েছে আমার, কারণ আমি ভাড়াটিয়া এ বাড়ির।এ বাড়ি ভাড়া থাকতে এসছি আমি।’

‘সারাহ! তোমার মাঝে ভদ্রতার অভাব আছে অনেক।কে বলবে তুমি নতুন বউ।’

‘ভদ্রতা শেখাবেন প্লিজ।অন্যর বেডরুমে নক না করে ঢোকার ভদ্রতা, অন্যর জামাই এর দিকে নজর দেওয়ার।’

‘রোশান ভাইয়া এটা কি বিয়ে করেছেন আপনি।এ কোনো মেয়ে।এর মাঝে টোটাল কোনো ভদ্রতা নেই।অসভ্যদের মত তর্ক করে।ঘরে দরজা খোলা রেখে নোংরামো করে।’

‘জিনাত উই আর ম্যারেড।দিন আর রাত বলে কথা নেই।নাউ ইউ গেট লস্ট।আর হ্যাঁ ও আমার ওয়াইফ।এখন আর শুধু সারাহ নয়।সারা সিদ্দিকী।সো ওকে রেস্পেক্ট করতে না পারলে আমার মুখোমুখি হতে হবে।ও এখন সিক ওকে রাগিও না।’

জিনাত এর মাথায় যেনো আকাশ যেনো ভেঙে পড়ল।হনহন করে বেরিয়ে গেলো।আমার মুখে মুহুর্তের মাঝে হাসি ফুটল।অদ্ভুত এক ভাল লাগা দোলা দিলো মনের মাঝে।

পরেরদিন খুব ভোরে হাই তুলতে তুলতে ঘুম থেকে উঠলাম আমি।ওশান কে ফাঁকা জায়গা পাচ্ছিনা।ওশানের সাথে বোঝাপড়া আছে আমার।বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে এসে ওশান কে দেখব।আজ নাকি যেতে হবে।ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার দাদু আর রোশান স্যারের দাদু দুজনে মসজিদ থেকে ফিরছেন গল্প করতে করতে।তরী উঠান ঝাড়ু দিচ্ছে।তরীর থেকে ঝাড়ু টা নিয়ে বললাম,

‘ওয়াও বেবি এগুলা কাজ আমার দারুণ লাগে।দাওনা আমি করি।

‘না ভাবি প্লিজ।কাল রাতে আম্মা আমাকে গালি দিয়েছে খুব।বলেছে আপনাকে আমি কেনো কাজে দিয়েছি।রোশান ভাইয়া মাছ ধুতে বললে আমি কেনো এগিয়ে গেলাম না এসব।আরো অনেক কথা।ভাবি আরো অনেক কথা আছে।কাল আপনার দেবর আর ছোয়া সারাদিন ঘুরাঘুরি করে এসেছে।কেমন লাগে ভাবি বলুন তো আমার পাশে সুয়ে যদি বলে তোমার সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো ভীষণ মিস করছি।রাতে একা ঘুমোতে ভাল লাগেনা।ছোয়া কাল রান্না করে পাঠিয়েছে।শ্বাশুড়ি ভীষণ খুশি জানেন।তার ছেলে পাপ করে এসে মায়ের কাছে বলে আর তার মা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়।’

‘তরী আমি আছিনা।ছোয়া আর ওশানের রিলেশন দেখবা নেই।’

‘কিভাবে?’

‘ছু মন্তর ছু, ইরিবিরিছিরি এই মন্ত্র ছুড়ে মারব।’

‘কাল আম্মার ভাতিজির মুখ টা দেখার মত ছিলো।জীবনে প্রথম আমি খুশি হয়েছি।আমাকে খুব জালিয়েছে জিনাত।’

‘ও নেক্সট এ বাড়িতে আসুক।ওর জন্য এই ওঠান ঝা”ড়ু দেওয়া ঝা” টা ওর জন্য রেখে দিলাম।জানো তরী আমি অন্যায় দেখতে পারিনা।একটুও পারিনা।আমার খুব প্রতিবাদ করতে ইচ্ছা করে।বিশেষ করে ওইসব মানুষ দের বেশী অপছন্দ যারা পরকিয়াতে লিপ্ত।নিজের ওয়াইফ রেখে অন্য নারীতে আসক্ত এরা এক সাথে কয়েকটা জীবন নষ্ট করে।এদের অন্ডকোষ কর্তন করা উচিত আমি মনে করি।এদের মায়েরা কি আসলেই মা।কিভাবে ছেলেদের এই অন্যায় সাপোর্ট করে।এইসব মায়েদের ও শিক্ষা হওয়া উচিত।আমি যদি প্রধানমন্ত্রী হতাম এদের জন্য আলাদা আইন চালু করতাম।আনম্যারেড মেয়েদের কাছে নিজেকে অবিবাহিত বলে পরিচয় দিয়ে তাদের মন নিয়ে খেলার জন্য উপযুক্ত শাস্তি দিতাম।আমি জানিনা তরী কেনো এসব আমি সহ্য করতে পারিনা।আর জানো তোমার দিকে তাকালেই আমার কষ্ট হয়।আমার মনে হয় যদি তোমার সবটুকু কষ্ট আমি নিয়ে নিতে পারতাম ওই যন্ত্রণা যদি আমি সহ্য করে তোমাকে সুখি করতে পারতাম আমি শান্তি পেতাম।’

‘আমার জীবনের কোনো পূণ্যর ফলে আপনার সাথে পরিচয় ভাবি।আপনার মত মেয়ে প্রতিটা ঘরে ঘরে লাগবে ভাবি।ওশান,জিনাত,আম্মা,ছোয়া এদের শাস্তির জন্য।আর রোশান ভাইয়া খুব লাকি ভাবি।’

‘উনাকে তো ভালই বাসিনা।কিভাবে লাকি হল।’

‘ভালবাসেন না তাহলে জিনাত এর উপর ক্ষেপলেন কেনো?’

‘আমিও ভালবাসব না কাউকে বাসতেও দিবোনা বুঝলে।’

চলবে?

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
১০.
#writer_Mousumi_Akter

দরজা জোরে বাড়ি লাগল ওয়ালের সাথে।প্রকট শব্দে ফিরে তাকালাম তরী আর আমি।ওশান ব্রাশ হাতে নিয়ে মেজাজের সাথে বেরিয়ে এলো নিজের ঘর থেকে। গলায় একটা গামছা ঝুলানো রয়েছে।আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে তরীর দিকে তাকিয়ে চাপা কন্ঠে বলল,
‘তোর ছেলে উঠেছে,যা গিয়ে তোল।আর তোরে বলছি না ছেলেকে নিয়ে অন্যঘরে ঘুমোবি।সারাদিন খাটা-খাটনি করে এসে বাচ্চার বিরক্তিতে ঘুমোতে পারিনা ঠিকভাবে।লাইফ টা হেল করে ছাড়লি আমার।’
‘নিজের বাচ্চাকেও বিরক্ত লাগে আমার।ছেলে বড় হলে কিভাবে মুখ দেখাবে ওর সামনে।’
‘খা**ন**কি**র বা’চ্চা মুখে মুখে তর্ক করিস,জ্ঞান দেস তুই আমারে।’
‘তা তুমি কি খাটা-খাটনি করো সারাদিন।ছোয়ার পেছনে ঘুরাটায় তো তোমার আসল খাটনি।’
‘কি বললি কু** ত্তা**র বাচ্চা।ছোয়ার নাম উচ্চারণ করার যোগ্যতা আছে তোর।ওর পা ধুয়ে পানি খাওয়ার যোগ্যতা ও নেই।’
বলেই ওশান এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে তরীকে মা’রা’র জন্য লাঠি খুজছে।আমি তরীকে বললাম,
‘তরী তুমি যাও রোহানের কাছে।আমার দেবরের সাথে আমার কথা আছে।’
তরী ওশানের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ভাবি শুধু ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে আছি।না হলে এসব সহ্য করতাম না।কবেই গলাই ফাঁস দিতাম।ছেলেটার জন্য পারিনা।’
‘ওহে পা’গ’লি জীবন একটা যুদ্ধ ক্ষেত্র।এখানে মরে গিয়ে হেরে যেতে নেই।যেমন কু’কু’র তেমন মুগুর না মা’র’লে এখানে টিকে থাকা মুশকিল।’
তরী অশ্রুভেজা চোখ নিয়ে মাথা নিচু করে চলে গেলো নিজের রুমে।ওশান পেছন থেকে ডেকে আরো কয়েকটা বিশ্রি গালি দিয়ে বলল,
‘তোর সময় ফুরিয়ে এসছে অপেক্ষা কর।তোর চ্যাপ্টার এবার পুরোপুরি ক্লোজ করার সময় হয়ে গিয়েছে।তোকে তো মুখে মুখে আমি বহুবার ই তালাক দিয়ে দিয়েছি নির্লজ্জের মত পড়ে আছিস কেনো?কাবিনে যা আছে ডাবল দিয়ে দিবো, ছেলে রেখে বিদায় হ।’
এরই মাঝে শ্বাশুড়ি এসে বললেন,
‘তা যাবে কেনো?এত ঘন ভাত পৃথিবীর কোথাও নেই।এত মাগনা খাবার সহজ না।’
ওশান মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আম্মা আমি কিন্তু আর সহ্য করতে পারছিনা।শুধু ভাইয়ার জন্য অনেক সহ্য করেছি।ভাইয়া তো ঠিক ই নিজের জন্য এক নাম্বার মেয়ে চয়েজ করেছে আমার বেলায় যত জ্ঞান।’
‘আমি এবার রোশান কে সবটা বুঝিয়ে বলব।ওই আপদ -বিপদ দূর কর বাড়ি থেকে।কাল আমাকে দিয়ে মাছ ধুইয়েছে।মাছের ভেতর শিং মাছের কাটা রেখে দিয়েছিলো।প্রতিশোধ নিতেই এমন করেছে।’
আমি আশ্চর্যজনকভাবে তাকিয়ে আছি ওশানের মায়ের দিকে।ছিঃমায়েরা বুঝি এমন ও হয়।আমার দিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসি দিয়ে বলল,
‘মা সারাহ ওর থেকে দূরে থেকো।আর তুমি রোশান কে বুঝিও এই মেয়ের কথা যেনো বিশ্বাস না করে।দেখলে না কাল তুমি আসতে না আসতেই তোমাকে দিয়ে মাছ কোটালো আবার আজ হাতে ঝা’ড়ু তুলে দিয়েছে।দেখেছো কিভাবে পাল্লা দিচ্ছে।’
‘তরী আমাকে কিছুই বলেনি আম্মা।আপনারা তরীর সাথে এমন করছেন কেনো?’
‘তুমি তরীর ব্যাপারে কিছুই জানোনা তাই।তোমার মাথা ও খে’য়ে নিয়েছে।’
‘আমি সারাহ আম্মা।কেউ আমার মাথা খে’তে পারবে সেটা সম্ভব নয়।’
শ্বশুর শ্বাশুড়িকে ডাকছেন।আম্মা চলে গেলো।

আমি অগ্নিচোখে ওশানের দিকে তাকালাম
।আম্মা চলে যেতেই ওশান আমাকে বলল,

‘আমার সাথে গেস্ট রুমে এসো কথা আছে সারাহ।’
‘কথা তো আমার ও আছে চলুন।’
গেস্ট রুমে যেতেই ওশান বলল,
‘সারাহ কাল থেকে বহুবার তোমার সাথে কথা বলার সুযোগ খুজেছি।কিন্তু পারিনি।তোমার সাথে আমার কথা আছে।আর তুমি যা ভাবছো তা নয় সারাহ।তরী,বাচ্চা এসব কিছুই আমার বলে আমি স্বীকার করিনা।এসব আমার জীবনের একটা এক্সিডেন্ট।আমি তোমাদের সব বলতাম।’
ওশানের মুখে খানিকটা থুথু ছুড়ে মেরে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়ালাম।গুরুগম্ভীর ভাবে প্রশ্ন করলাম,
‘কি বলতি তুই?বল কি বলতি।’
‘সারাহ তুমি আমাকে তুই বলছো?’
‘এর থেকে নিচের কিছু আছে।জানা আছে তোর থাকলে বল।না মানে তোর কাছে তো নিকৃষ্ট ভাষার শেষ নেই।তরীকে যে ভাষা গুলো ইউজ করিস ওগুলো বলব।প্রব্লেম নেই সব ধরনের গালিই আমার মুখস্থ আছে কিন্তু পারিবারিক শিক্ষা আমার যথেষ্ট ভালো তাই ইউজ করিনা।তবে সেরকম হলে ইউজ করব।তুই আর তোর মা যে ভাষায় বুঝবি আমিও সেই ভাষাতেই বুঝাব।’
‘সারাহ তুমি আমাকে ভুল বুঝছো,আমি জানি আমি মিথ্যা বলেছি কিন্তু কেনো বলেছি বলার সুযোগ দাও।’
‘তুই যে কাজ করেছিস তা সঠিক প্রমাণ করার জন্য পৃথিবীতে এমন কোনো দলিল তৈরি হয়নি।এতটা নিকৃষ্ট আর জঘন্য কাজের পক্ষে কোনো যৌক্তিকতা থাকতেই পারেনা।তুই তো বিয়ের মত পবিত্র সম্পর্কের সমস্ত নিয়ম ভেঙেছিস।না কারো বাবা হওয়ার যোগ্য তুই না কারো স্বামি না কারো প্রেমিক।তুই মানুষ হিসাবে আস্ত বড় একটা শুণ্য।আমার ছোয়ার লাইফ আমি তরীর মত হতে দিবোনা ওশান।তোর মত লম্পটের সাথে ছোয়ার জীবন আমি বাঁধতে দিবোনা।তোর জন্য ছোয়াকে তরী রোজ অভিশাপ দিচ্ছে।অথচ এখানে ছোয়ার কোনো দোষ ই নেই।’

‘দেখো সারাহ আমি মানছি আমি মিথ্যা বলেছি।কিন্তু আমি ছোয়াকে ভালবাসি ভীষণ ভালবাসি।তুমি দেখো তরীর মত বস্তিমার্কা মেয়ের সাথে কি থাকা যায়।না আছে কোনো স্মার্টনেস,না জানে লেখাপড়া,না আছে পারিবারিক কোনো অবস্থান।একেবারেই যাতা টাইপ মেয়ে।আমি জাস্ট এই মেয়েকে সহ্য করতে পারিনা।আমি এই সপ্তাহেই তরীকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।ছোয়াকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবো।প্লিজ সারাহ ছোয়া কে কিছুই বলোনা।’

ওশানের গালে ঠাসসস করে থাপ্পড় মেরে বললাম,

‘কিহ! তুই তরীকে ডিভোর্স দিবি।সেই সৌভাগ্য তোর হবেনা। তরী লেখাপড়া কম জানতে পারে তোর মতো চরিত্রহীন নয়।তরী কেনো আজ লেখাপড়া জানেনা সবটায় তোর জন্য।ওশান যে তরীকে তোরা এত অপমান করিস,অবহেলা করিস দিনে পাঁচবার ডিভোর্স এর খোটা দিস।দিন এভাবে যাবেনা ওশান।একদিন তরীর অবস্থানের পরিবর্তন হবে।তরীর সাথে থাকার জন্য তুই রিকুয়েষ্ট করবি কিন্তু তরী তোকে ডিভোর্স দিবে।আর রইলো ছোয়া , ছোয়া তোর এসব জানলে কোনদিন তোর হবেনা।আমি ছোয়াকে সব জানাবো।’

‘ছোয়া আমাকে ভালবাসে। কখনোই আমাকে ছাড়বে না।শুধু শুধু তুমি এসব বলে অশান্তি করো না।তার থেকে দুই বান্ধবী মিলে মিশে সংসার করার কথা ভাবো।তোমার বেষ্টফ্রেন্ড তোমার সাথে থাকতে পারবে এর থেকে আনন্দ পৃথিবীতে থাকতে পারেনা।’

‘এর থেকে নিকৃষ্ট কিছুও হতে পারেনা।তোর স্বপ্ন স্বপ্ন থেকে যাবে।’

‘ছোয়াকে আমি আমার করে নিবো। ‘

আমি তোকে চ্যালেঞ্জ করলাম ছোয়া কোনদিন এ বাড়িতে আসবে না।’

‘আমার সাথে শত্রুতা করোনা সারাহ।আমার আর ছোয়ার মাঝে এসোনা, ভাল হবেনা।’

‘তুই এমনিতেও আমার শত্রু ওশান।তোকে ধ্বংস করে ফেলব আমি।’

রাগে ফুঁশতে ফুঁশতে বেরিয়ে এলাম। ওশান কে ফাঁ’সিতে ঝুলাতে ইচ্ছা করছে।যদি ছোয়া আমার কথা বিশ্বাস না করে কি হবে।কিভাবে সামলাবো আমি সবটা।টেনশনে কেমন অস্হির লাগছে আমার।কি করব বুঝতে পারছিনা।আজ বাবার বাড়ি যেতে হবে।নিয়ম অনুযায়ী আজ যাবার কথা।সব কিছু গোছানোই আছে।কিন্তু এখানে তরীকে রেখে যাবো যদি তরীকে কিছু করে।এখন ওশান জেনে গিয়েছে আমি সবটা জেনে গিয়েছি।তরীর ক্ষতি করার কথা ভাবতে পারে।আমাকে এখানে তরীকে রেখে গেলে চলবে না।তরীকে আমার সাথে নিয়ে যাবো।

সাড়ে সাতটা বাজে।কিচেনে তরীর সাথে রান্নায় হেল্প করছি আমি।তরী দাঁড়িয়ে আছে আর আমি খুন্তি নাড়াতে নাড়াতে বললাম, ‘যাওতো বেবি রেডি হয়ে নাও।’
‘কেনো ভাবি?’
‘তুমি আমার সাথে যাচ্ছো।’
‘কোথায়?’
‘আমার বাবার বাড়ি।’
‘না ভাবি আমি যাবো না।অশান্তি হবে বাড়িতে।’
‘যেতে চাওনা তাইনা?’
‘চাই তবে যেতে দিবেনা।’
‘তোমার রোশান ভাইয়া দেখবে সেটা।তোমার এত চাপ নেওয়ার দরকার নেই।আর তুমি শাড়ি পরো কেনো সব সময়।’
‘শাড়ি ছাড়া পরতে দেইনা আম্মা।’
‘তাই নাকি, বাবার বাড়ি থেকে আসার সময় জিন্স গুলো নিয়ে আসব।জিন্স পরে ঘুরে বেড়াবো দেখি কিভাবে আটকায় আমাকে।’
‘ভাবি সর্বনাশ হয়ে যাবে।’
‘হিহিহি আরে আরে বেবি দেখো সর্বনাশ যা ঘটাবার ঘটিয়ে ফেলেছি। ডিম ভুনা তো পুড়্র কালি হয়ে গিয়েছে।’
‘আজ আমার কপালে দুঃখ আছে।’
‘দুঃখজনিত ঘটনা এ বাড়ির মানুষের কপালে আছে।অপচয় নিষিদ্ধ বলে এই পোড়া ডিম খাইয়ে দিবো। ‘
এরই মাঝে শ্বাশুড়ি তরীকে ডাকছে।তরী চলে গেলো।আমার মনে পড়ল গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি আছে।যায় গিয়ে রোশান স্যার এর ফোন নিয়ে তন্ময় অথবা মৃন্ময় কে ফোন দিয়ে আইডির পাস দিয়ে বলি আমার আইডি টা নষ্ট করে দিতে।আইডি ভরা হাবি জাবি স্টাটাস। আরো কত মানুষের সাথে চ্যাটিং করেছি সেসব দেখলে ঝামেলা হতে পারে।অকাম-কুকাম এর প্রুভ গুলা বিলীন করে আসি।রুমে প্রবেশ করে দেখি কোল বালিশ জড়িয়ে ধরে রোশান স্যার ঘুমোচ্ছেন।ভাব খানা এমন যেনো সদ্য বিবাহিত পুরুষ সারারাত বউ এর সাথে রোমান্সে বিজি থেকে ভাল একটা ঘুমোতে পারেনি।বেলা অবধি ঘুমিয়ে তো মানুষ কে এসব ই বোঝাবে।আমি কি এসব বলে গায়ে টেনে ঝগড়া শুরু করব।তার আগে উনার ফোনটা লাগবে।আস্তে করে বসে উনার ফোন খোজার চেষ্টা করছি।ফোন উনার পিঠের নিচে রয়েছে।ঝুঁকে বসাতে গলার চেইন উনার বোতামে আটকে গেলো।এই হলো আরেক বিপদ।আমি এমন ভাবে ঝুঁকে রয়েছি উনার দিকে উনার ঘুম ভাঙলেই ভাববে আমি চুমু দেওয়ার চেষ্টা করছি।কিছুই চেইন বোতাম থেকে খুলতে পারছি।আস্তে করে উনার শার্টের বোতাম খোলার চেষ্টা করলাম আর তখন ই রোশান স্যারের ঘুম ভেঙে গেলো।উনি পিটপিট করে তাকালেন।একবার উনার বোতামের দিকে তাকিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালেন।কপালের চামড়ায় ভাজ পড়ে গেলো উনার।লজ্জা পেয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়াতে যেতেই উনি হাত টেনে ধরলেন।সাথে সাথে সম্পূর্ণভাবে পড়ে গেলাম উনার উপরে।আচমকা আমার ওষ্ট গিয়ে উনার ওষ্ট স্পর্শ করল।শরীরে কেমন এক তরঙ্গের মত কিছু প্রবাহিত হল।উনি উনার সাথে শক্তভাবে চেপে ধরে রেখেছেন আমাকে।লজ্জায় কি যাতা অবস্থা আমার।উঠার জন্য ছটফট করছি আমি।উনি এবার নিরবতা ভেঙে বললেন,
‘এভাবে ছটফট করছো কেনো?’
‘উঠব আমি।’
‘আমার বস্ত্রহরন করছিলে কেনো?’
‘ দেখুন যা ভাবছেন তা নয়।আমার কিন্তু ওসব উদ্দেশ্য ছিলোনা।’
‘তাহলে কি উদ্দেশ্য ছিলো।আমার বডি দেখবে।’
‘না, সেসব কিছুই না।আমার চেইন আটকে গিয়েছিলো আপনার বোতামে।’
‘কিভাবে আটকালো হুম।’
ঘুম ঘুম কন্ঠ কি দারুণ লাগছে শুনতে।যেনো আফিমের মতো নেশালো।এই লোকটা তো এইভাবে আমাকে ফাঁসিয়ে দিবে দেখছি।আমি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললাম,
‘জানিনা কিভাবে আটকে গিয়েছে।’
‘বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজাও কেনো?আমার সামনে এগুলো করবেনা।’
‘আচ্ছা করব না ছাড়ুন।’
‘না ছাড়লে।’
‘না ছাড়লে কলেজে গিয়ে সবাই কে বলে দিবো আপনার আমার সাথে বিয়ে হয়েছে।আপনি আমাকে যখন তখন জড়িয়ে ধরেন,রাতে ঘুমোতে দেন না,আরো ব্লা ব্লা।’
‘আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ চাই।তুমি যে মেয়ে মাইকিং ও করতে পারো।সে বিশ্বাস আমার আছে।’
বলেই রোশান স্যার আমাকে ছেড়ে দিলেন।আমি ঠোঁট কামড়ে ধরে হেসে দিলাম।সারাহ কি বুদ্ধিতোর।উনার ফোনটা নিয়ে তন্ময় কে ফোন দিয়ে জানালার কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম,

‘তন্ময় আমার জামাই টা খুব জেলস ফিল করেরে।আমি জীবনে বহু পোলাগে লগে ফ্লার্টিং করেছি।সেসব চ্যাটিং দেখলে আমার মান ইজ্জত চলে যাবে।আর ও খুব কষ্ট পাবে। তুই আমার আইডি টা ডিজেবল করে দে।পাস নে saraektavodromeye.আর নাম্বার তো জানিস ই।লগিন দিয়ে ডিজেবল করে দে।কুইক কুইক কুইক।আমার বর জানবে তার বউ অতি ভদ্র মেয়ে বুঝলি।’

পেছন থেকে রোশান স্যার বলে উঠলেন,

‘ইন্টারেস্টিং স্টোরি।ভাল লাগল শুনে।’

চলবে?